লাখ টাকার পাথর – সমরেশ মজুমদার
এই শহরের বিখ্যাত শিল্পপতি অমলেন্দু রায় পরলোকগমন করেছেন। খবরটা শুনে শহরের মানুষ খুবই দুঃখিত হয়েছিল। অমলেন্দুবাবুকে সবাই খুব ভালবাসত। নিজের বিশাল ব্যাবসায় তরুণদের চাকরি দেওয়া ছাড়াও জেলার বিভিন্ন ক্রীড়াপ্রতিযোগিতার সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। বিশেষ করে ফুটবল তাঁর প্রিয় খেলা ছিল। শহরের সবচেয়ে নামী ক্লাবের তিনি আজীবন সভাপতি ছিলেন।
খবরটা অর্জুন পেয়েছিল কদমতলায় চায়ের দোকানে বসে। তখন রাত আটটা। অমলেন্দু রায়ের সঙ্গে তার সরাসরি আলাপ ছিল না। কিন্তু কেউ মারা গেছেন শুনলে মন ভাল থাকে না। বাড়ি ফেরার পর মা বললেন, তিনটে টেলিফোন এসেছিল। তারা আবার করবে। আধঘণ্টার মধ্যেই সেই টেলিফোন আবার এল। দু’জন মানুষ পৃথক পৃথকভাবে টেলিফোন করছেন।
প্রথমজন অমলেন্দু রায়ের বড় ছেলে বিমলেন্দু। তিনি একটু ভূমিকা করে বললেন, আজই অর্জুনের সঙ্গে দেখা করতে চান। অর্জুন তাঁকে আসতে বলল। কারও বাবা সন্ধেবেলায় মারা গেলে যে পরিস্থিতি হয়, তাতে টেলিফোন করে একজন অপরিচিতের সঙ্গে দেখা করতে চাওয়া মানায় না। বেশ অবাক হয়েছিল অর্জুন। খুব সিরিয়াস কিছু ওই পরিবারে ঘটেছে বলে সে অনুমান করেছিল। দ্বিতীয় ফোনটি করেছিল অমলেন্দুবাবুর মেজোছেলে কমলেন্দু। সে কোনও ভূমিকা করেনি। বলল, “আপনি আমার কিছু বন্ধুবান্ধবকে চেনেন। আমার বাবা আজ মারা গিয়েছেন। বিষয়সম্পত্তি নিয়ে আমি ভাবছি না। বাবার কোমরে একটা রুপোর চেনে দামি পাথর ছিল। শুনতাম পাথরটার দাম এক লাখ টাকা। হাসপাতাল থেকে যখন বাবাকে নিয়ে আসা হয়, তখনও সেটা আমি দেখেছি। বাড়ি ফিরে এসে বাবার পোশাক পরিবর্তন করিয়ে দেওয়ার পর দেখি রুপোর চেনটা রয়ে গেছে, পাথরটা নেই। আপনি যদি রহস্য উদ্ধার করে দেন তা হলে পাঁচ হাজার টাকা পারিশ্রমিক দেব।”
“ভেবে দেখছি,” বলে টেলিফোন নামিয়ে রেখেছিল অর্জুন।
বিমলেন্দুবাবু এসেছিলেন দশটার মধ্যে। নিজেই গাড়ি চালিয়ে এসেছেন। শোকের ছাপ ওঁর চোখে মুখে। বাইরের ঘরে বসে মোটামুটি একই কাহিনি শোনালেন।
অর্জুন তাঁকে বলল, “আপনারা মৃতদেহের পোশাক পরিবর্তনের পর পাথরটা পাচ্ছেন না। পোশাক পরিবর্তনের সময় কে ওঁর সঙ্গে ছিলেন?”
“মা এবং আমার ছোট ভাই তপেন্দু। ঘরের দরজা বন্ধ করে ওরা চেঞ্জ করিয়ে দিয়েছিল।”
“স্বাভাবিক। তাঁরা কী বলেন?”
“মায়ের সঙ্গে তো কথা বলাই যাচ্ছে না। তিনি প্রায়ই জ্ঞান হারাচ্ছেন। তপেন্দু বলল, বাবার মৃত শরীরে হাত পড়ায় সে এমন নার্ভাস হয়ে পড়েছিল। যে, পাথরটার কথা খেয়ালই করেনি। অর্জুনবাবু, পাথরটা শুধু দামি নয়, এ আমাদের পরিবারে আছে কয়েক পুরুষ ধরে।”
“আপনি কি এখনও আছে বলে ভাবছেন?”
“আমার বিশ্বাস বাড়িতেই আছে।”
“আপনার কথা অনুযায়ী মা এবং তপেন্দুবাবুকে সন্দেহ করতে হয়।”
“আমি কী বলব? মা এমন কাজ করলে আমাকে বলতেন। তপেন্দু… না না, বিশ্বাস হয় না। ওর এসব অভ্যেস ছিল না। তা ছাড়া ও পরেছিল পাজামা আর গেঞ্জি। ওই অবস্থায় কিছু লুকিয়ে রাখা যায় না। রাখতে গেলে মা দেখতে পেতেন।”
“পুলিশকে জানিয়েছেন?”
“না। আমরা থানা-পুলিশ করতে চাই না। লোকে বলবে, বাবা মারা যাওয়ামাত্র গোলমাল শুরু হয়ে গেল। আমাদের পারিবারিক সম্মান কিছু থাকবে না।”
“আপনার মেজোভাইকে সন্দেহ হয়?”
“ঠিক সন্দেহ বলতে যা বোঝায়, তা হয় না। তবে ওর টাকা-পয়সার খুব টান। বাবা খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন ওর বাজে খরচের বহর দেখে। হাসপাতাল থেকে আসার সময় ও-ই দেখেছিল পাথরটা বাবার কোমরের চেনের সঙ্গে ঠিক আছে।”
“হাসপাতালে ভরতি করার সময় শরীরের গয়না খুলে রাখার কথা। আপনারা অত দামি জিনিসসুদ্ধ ভরতি করেছিলেন, ওখান থেকেও তো চুরি হয়ে যেতে পারত!”
“দুপুরে বাবার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর ওসব ভাবার সময় ছিল না। হাসপাতাল থেকেও কিছু বলেনি। মেজোভাই না বললে এখনও আমার মনে পড়ত না।”
“আপনার মেজোভাই ছাড়া কেউ হাসপাতাল থেকে আসার সময় পাথরটাকে দেখেনি, তাই তো? একটু ভেবে বলুন।”
“হ্যাঁ, একমাত্র ওই দেখেছিল।”
“তা হলে তো এমনও হতে পারে ওটা হাসপাতাল থেকেই খোয়া গিয়েছে। আপনার মেজোভাই মিথ্যে বলছেন, যাতে লোকে ভাবে বাড়ি আসার পর কেউ সরিয়েছে।”
‘আাঁ, তা কি সম্ভব?”
“কিছুই অসম্ভব নয়, আবার ঠিক এইটেই ঘটেছে এমন কথাও আমি বলছি না। আমি সম্ভাবনাগুলো তুলে ধরছি। আচ্ছা, পোশাক পালটে দেওয়ার পর ওই ঘরের ভেতর থেকে কে বেরিয়ে এসেছিল প্রথমে? আপনারা কোথায় ছিলেন?”
“বাড়িসুদ্ধ সবাই কাঁদছিল। কারও মাথা কাজ করছিল না। তপেন্দু ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদল। আমি ওকে কোনওমতে ছাড়িয়ে ঘরে গিয়ে দেখলাম মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। মাকে জড়িয়ে ধরে অনেক ডাকাডাকির পর ওঁর জ্ঞান এল।”
“তখন ঘরে কে কে ছিলেন?”
“তখন? তপেন্দু বেরিয়ে যাওয়ার পর ওই ঘরে মা ছিলেন এবং আমি ঢুকেছিলাম।”
“আপনার পর?”
“আমি চেঁচিয়ে মাকে ডাকাডাকি করার সময় সবাই এসে পড়ল।”
“ততক্ষণ আপনি একা আর আপনার মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলেন?”
“হ্যাঁ। কিন্তু সেটা আধ মিনিটও নয়।”
“ওই সময়েই ইচ্ছে করলে আপনি পাথরটা সরাতে পারেন।”
বিমলেন্দুবাবু চমকে উঠলেন, “এ আপনি কী বলছেন? আমি চোর? আমি চুরি করলে আপনার কাছে আসব কেন? ছি ছি ছি।”
“বিমলেন্দুবাবু, আমি আপনাকে একটা সম্ভাবনার কথা বলছি। আপনি চুরি করতেও পারেন আবার নাও পারেন। দেখা যাচ্ছে আপনাদের তিন ভাইয়ের কেউ সন্দেহের বাইরে থাকার মতো কাজ করেননি। কিন্তু এ-ব্যাপারে এখনই তদন্ত করতে গেলে জানাজানি হয়ে যাবে যে!”
না। শ্রাদ্ধের আগে ব্যাপারটাকে গোপন রাখতেই হবে।”
“তা হলে?”
“আপনি আজ একবার আমাদের বাড়িতে আসুন?”
“গিয়ে কী করব? কাউকে জেরা করতে না পারলে,” কথাটা বলেই মত পালটাল অর্জুন, “ঠিক আছে, আপনি যান, আমি আসছি।”
বিমলেন্দুবাবু ওর হাত জড়িয়ে ধরলেন, মুখে কিছু বললেন না।
ভদ্রলোক চলে যাওয়ার পর ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছিল অর্জুন। এরকম পরিস্থিতিতে সে কখনও পড়েনি। কাউকে জেরা করা চলবে না, কেউ জানতে পারবে না অথচ তদন্ত করে বের করতে হবে সেই মূল্যবান পাথরটা কোথায় গেল! এ কি সম্ভব? অমলেন্দুবাবুর তিন ছেলে এবং তিনজনের যে-কেউ ওটাকে সরাতে পারে এবং সেই সুযোগও তারা পেয়েছিল।
মোটরবাইক নিয়ে সোজা হাসপাতালে চলে এল অর্জুন। খোঁজখবর নিয়ে সেই নার্সের সামনে উপস্থিত হল, যিনি অমলেন্দুবাবুর সেবায় ছিলেন। অর্জুন তাঁকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি মাথা নাড়লেন, “হ্যাঁ, দেখেছি। রুপোর চেনে পাথরটা ছিল। ওঁর মেজো ছেলে বারবার ওটার খবর নিচ্ছিলেন।”
“কখন? মারা যাওয়ার আগে না পরে?”
“ভরতি হওয়ার পর বলেছিলেন একবার। মারা যাওয়ার পর কয়েক বার। আমি বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম, অতই যখন চিন্তা খুলে নিজের কাছে রাখুন না। তাতে উনি জবাব দিয়েছিলেন, না, মা দুঃখ পাবে।”
“হাসপাতাল থেকে বডি নিয়ে যাওয়ার সময় ওটা ঠিক ছিল?”
“হ্যাঁ। এ-ব্যাপারে আমি নিঃসন্দেহ। কেন বলুন তো এসব জিজ্ঞেস করছেন।”
“পরে বলব।” অর্জুন আর দাঁড়ায়নি। নার্সের বক্তব্য যদি সঠিক হয় তা হলে মেজোভাই কমলেন্দু পাথরটা সরায়নি।
রায়বাড়িতে চলে এল অর্জুন। শোকের বাড়ি। এখনও লোকজন আসছে। খুঁজে খুঁজে তপেন্দুকে বের করল সে। ছাদের ঘরে একা বসে সিগারেট খাচ্ছে। পরনে এখনও পাজামা আর গেঞ্জি। অর্জুনকে সে চেনার চেষ্টা করল। বয়স কুড়ি-একুশের মধ্যে।
অর্জুন বলল, “আপনার বাবা আমার শ্রদ্ধেয় মানুষ। খবরটা পেয়ে এসেছিলাম। এখানে সবাই আমার গুরুজন। সিগারেট খেতে পারছি না ওঁদের সামনে। তাই চলে এলাম ওপরে। দেশলাই আছে?”
তপেন্দু বিরক্ত হয়ে কোমরে হাত দিয়ে পাজামার দড়ির ভেতরে ওলটানো কাপড়ের মধ্যে থেকে দেশলাই বের করে এগিয়ে ধরল। সিগারেট ধরাল অর্জুন।
“এই দেশলাইটা কতক্ষণ কোমরে রেখেছেন?”
“দুপুর থেকে। কেন?”
“ওভাবে তো কেউ রাখে না।
“আমার আজ পেট খারাপ। ক’বার বাথরুমে গিয়েছি। হাসপাতালেও যেতে পারিনি তাই। পাঞ্জাবি পরিনি, রাখব কোথায়?”
“পেট খারাপ অবস্থায় বাবার পোশাক পরিবর্তন করলেন?”
“মা আমাকে ডেকেছিলেন বলেই করতে হল। আপনি কেন এসব প্রশ্ন করছেন?”
“এমনি।” অর্জুন হেসে নেমে এল। পাজামা পরে কোমরে দেশলাই গুঁজে রাখলে কেউ অন্য কিছু লুকিয়ে রাখতে পারে না। তপেন্দুর পকেটের বালাই নেই। হাতে করে নিশ্চয়ই পাথর নিয়ে বের হয়নি। মা অজ্ঞান হয়ে গেছেন দেখে যদিও সেই সুযোগ ছিল। এক যদি সে ডেডবডির নীচে ওটা লুকিয়ে রাখে তা হলে আলাদা কথা, না হলে ছোট ভাই তপেন্দু পাথর সরায়নি।
রাত এখন বারোটা। মৃতদেহ এখনই শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হবে কি না এ-ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। বিমলেন্দু অর্জুনকে দেখে এগিয়ে এলেন, “বাবাকে দেখবেন?”
“হ্যাঁ।”
“আসুন।”
ঘরের দরজা ভেজানো ছিল। কোণের দিকে খাটে অমলেন্দুবাবু শুয়ে আছেন। দরজা থেকে সেটা বেশ দূরে। তাঁর মাথার কাছে একজন মহিলা বসে। আছেন। পায়ের কাছে কয়েকজন। ঘরে ঢুকেই অর্জুন চাপা গলায় জিজ্ঞেস করল, “ভেতরে ঢোকার কত পরে আপনি মাকে ডেকেছিলেন?”
“বড়জোর আধ মিনিট। তাও হবে না হয়তো।”
“উনি অজ্ঞান হয়ে ছিলেন?”
“হ্যাঁ। মাথার পাশে মা বসে আছেন।”
“ঠিক আছে। আপনি পায়ের কাছে যাঁরা বসে আছেন তাঁদের একটু বাইরে নিয়ে যান।”
আধ মিনিটের মধ্যে এই ঘরে ঢুকে খাটের কাছে পৌঁছে কোমর থেকে চেন বের করে পাথর খুলে নেওয়া কোনও মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় বলেই বড় ছেলে বিমলেন্দু সেটা সরাতে পারেন না। অবশ্য সময়টা যদি আধ মিনিটের অনেক বেশি হয় তা হলে আলাদা কথা।
ঘরে এখন কেউ নেই, শুধু তারা দু’জন ছাড়া। অর্জুন বৃদ্ধার কাছে গিয়ে বিনীত গলায় বলল, “মাসিমা, মেলোমশাই আমাকে ভালবাসতেন।”
বৃদ্ধা বললেন, “তুমি কে বাবা?”
“আমি অর্জুন। সত্য অন্বেষণ করি। পাথরটা ঠিক জায়গায় রেখেছেন তো?”
সঙ্গে সঙ্গে কেঁদে উঠলেন বৃদ্ধা। চাপা গলায় কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “ভস্ম হয়ে যাক, সব ভস্ম হয়ে যাক।”
অর্জুন অমলেন্দুবাবুর দিকে তাকাল। মনে হল গলার একটা দিক যেন সামান্য উঁচু টিউমারের মতো।
অত রাত্রে শ্মশানে একা আসতে এখনও অস্বস্তি হয়। যে মানুষেরা মৃতদেহ সৎকারের দায়িত্ব নেয়, তাদের একজনের নাম মহাদেব। এর সঙ্গে আলাপ ছিল অর্জুনের। মহাদেব তখন চুপচাপ বসে ছিল। শ্মশানে ইতিমধ্যেই দুটো চিতা জ্বলছে। মহাদেবকে আলাদা ডেকে নিচু গলায় কিছু বলল অর্জুন। তারপর পকেট থেকে কুড়িটা টাকা বের করে দিল।
অমলেন্দু রায়ের মৃতদেহ এসে গেল শ্মশানে। মফস্সল শহরের শ্মশানে আধুনিক ব্যবস্থা নেই। দেহ চিতায় তুলতে সময় লাগল। আগুন জ্বলে গেলে দেখা গেল মহাদেবরা দাহের কাজে তদারকি করছে। অর্জুন চুপচাপ দেখছিল। সব ছাই হয়ে যাবে। কাঠ, শরীর। শুধু অস্থিটুকু থেকে যাবে। আর… সন্দেহটা এখনও মনে আঁচড় কাটছে।
ক্রমশ চিতা ছাই হয়ে মাটিতে মিলিয়ে গেল। মহাদেব আগুন নিভিয়ে মাটির সরায় চিমটি দিয়ে অস্থি তুলতে লাগল। তারপর হঠাৎ হাত তুলে অর্জুনকে ডাকল। চিতার অনেক দূরে নদীর ধারে বসে ছিল শ্মশানযাত্রীরা। ভোর হতে দেরি নেই।
অর্জুন এগিয়ে যেতেই মহাদেব নির্লিপ্তভাবে একটা পাথরের ছোট টুকরো তুলে ধরল, “এইটে বডিতে ছিল, পোড়েনি।”
“দাও।” রুমাল বের করে জিনিসটা নিয়ে নিল অর্জুন। মহাদেব গেল ছেলেদের হাতে অস্থি তুলে দিতে। অর্জুন উঠল মোটরবাইকে।
শূন্য বাড়ি। অমলেন্দুবাবুর ঘরে প্রদীপ জ্বলছে। মেঝেতে চুপচাপ বসে ছিলেন ওঁর স্ত্রী। পায়ের শব্দে মুখ তুললেন। অর্জুন বলল, “আবার বিরক্ত করছি।”
“কে তুমি?”
“আমি অর্জুন। রাত্রে কথা বলেছিলাম।”
“কী চাও?”
“আমি কিছু চাই না। আপনি বলেছিলেন সব ভস্ম হয়ে যাক। কিন্তু কিছু জিনিস আছে যা ভস্ম হয়ে যায় না। আগুন পোড়াতে পারে না।” একটা খালি প্রদীপের খোল নিয়ে রুমাল থেকে পাথরটা বের করে রাখল তাতে অর্জুন। তারপর খোলটা বসিয়ে দিল প্রদীপের পাশে।
“এটা আপনাদের পারিবারিক সম্পত্তি। মনে হয় আপনি ছোট ছেলে বেরিয়ে যাওয়ার পর আপনার স্বামীর কোমর থেকে খুলে ওঁর মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। জিভের নীচে ওটার যাওয়ার কথা নয়। কী করে গলার ভেতরে গেল সেটা আপনি জানেন। বড় ছেলে ঘরে ঢোকার আগেই কাজটা করেছিলেন আপনি। আপনার একটাই স্বার্থ ছিল, জিনিসটা ছেলেদের হাতে পড়ুক আপনি চাননি। কিন্তু এটা ভস্ম হয়নি। এখন কী করবেন তা নতুন করে ভাবুন। ওরা দাহ শেষ করেছে, এখনই ফিরে আসবে। এলাম।”
সারারাত জাগার ক্লান্তি নিয়ে ভোরের রাস্তায় বাইক ছুটিয়ে যাচ্ছিল অর্জুন। এখন একটু ঘুমনো দরকার।
২৬ মে ১৯৯৩
অলংকরণ: সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়