গৌড়ানন্দ কবি ভনে

লণ্ঠন ও হাত-পাখা মন্ত্রীর আশা

লণ্ঠন ও হাত-পাখা মন্ত্রীর আশা

পশ্চিমবঙ্গের লণ্ঠন ও হাত-পাখা মন্ত্রী জনাব আবু বরকত আতাউর গণিখান চৌধুরী সম্প্রতি এই আশা প্রকাশ করেছেন যে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এই রাজ্যের গ্রামে ও শহরের প্রতিটি ঘরে অন্তত একটি করে লণ্ঠন ও একখানি করে হাত-পাখা তিনি পৌঁছে দিতে সমর্থ হবেন।

জনাব খান চৌধুরী সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হাত পাখা প্রসার সমিতির নয়-সদস্য বিশিষ্ট এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এক গোপন বৈঠকে মিলিত হন এবং কী ভাবে লুপ্তপ্রায় হাত-পাখা শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করা যায় সে সম্পর্কে আলোচনা করেন।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হাত পাখা প্রসার সমিতির মুখপাত্র এক একান্ত সাক্ষাৎকারে আমাকে জানান, তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের লণ্ঠন ও হাত-পাখা মন্ত্রী জনাব আবু বরকত আতাউর গণি খান চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনা করে খুবই আনন্দিত হয়েছেন।

উক্ত মুখপাত্র বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের লণ্ঠন ও হাত-পাখা মন্ত্রী জনাব গণি সাহেব আগামী পাঁচ বছরে এই রাজ্যের ঘরে ঘরে একটি করে লণ্ঠন এবং একখানি করে হাত পাখা পৌঁছে দেবার যে লক্ষ্য মাত্রা স্থির করেছেন, ওঁর সঙ্গে কথা বলে আমাদের ধারণা হয়েছে যে, সেই লক্ষ্যে আমরা নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই পৌঁছে যেতে পারব।’

প্রশ্ন : আপনারা কী একটু অতিরিক্ত আশাবাদী হয়ে পড়ছেন না?

উক্ত মুখপাত্র : আমাদের এই আশাবাদের বাস্তব ভিত্তি আছে যে।

প্রশ্ন : আপনারা কি কোনও কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন?

উক্ত মুখপাত্র : নিশ্চয়ই। আমরা একটা হিসেব করে দেখেছি যে পশ্চিমবঙ্গের শহরে ও গ্রামের প্রতি ঘরে একখানি করে হাত-পাখা দিতে হলে ৮০ লক্ষ হাত-পাখা দরকার। ঘর বলতে এখানে আমরা গ্রাম ও শহরের প্রতিটি বাড়ির কামরাই মিন করেছি। বাসস্থান এবং অফিস-কাছারি সব এই হিসেবের মধ্যে ধরা আছে। স্কুল কলেজের ডরমিটারি এবং হাসপাতালের প্রতিটি বেডকেও কামরা হিসাবে ধরা হয়েছে। হাসপাতালের রোগী ও চিকিৎসক এবং স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষক, রাজনৈতিক ও ট্রেড ইউনিয়ন দলের নেতা ও সদস্য এবং মন্ত্রী মহোদয়দিগকে জরুরি ভিত্তিতে হাত পাখা সরবরাহ করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রশ্ন : এখন কথা হচ্ছে, পাঁচ বছরের মধ্যে ৮০ লক্ষ হাত-পাখা উৎপাদন করা যাবে কি না সে বিষয়ে

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হাত-পাখা প্রসার সমিতির মুখপাত্র উৎসাহ ভরে বলে উঠলেন, ‘সন্দেহের কোনও কারণ নেই। আমাদের লণ্ঠন ও হাত-পাখা মন্ত্রী নিজে এ দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন, মন্ত্রিত্বের লোভে তিনি গদি আঁকড়ে বসে নেই। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তিনি যদি পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি ঘরে একটি করে লণ্ঠন এবং একখানি করে হাত-পাখা পৌঁছে দিতে না পারেন তবে নিশ্চয়ই পদত্যাগ করবেন। আমি বলছি মশাই, জনাব গণি খান চৌধুরীর মত সিরিয়াস মন্ত্রী পশ্চিমবাংলায় আর দুটো নেই। উনি আমাদের প্রতিটি ঘরে লণ্ঠন ও হাত-পাখা যে পৌঁছে দিতে পারবেন, সে-বিষয়ে আমাদের মনে অন্তত কোনও সন্দেহ নেই।’

‘আমরা তো ভাবছি’, একটু থেমে উক্ত মুখপাত্র বললেন, ‘আমাদের হাত-পাখা প্রসার সমিতির উদ্যোগে আমরা ওঁর একটা সম্বর্ধনার আয়োজন করব। এবং সেই নাগরিক সম্বর্ধনা সভায় প্রকাশ্যে ওঁকে হাত-পাখা বন্ধু টাইটেল দেওয়া হবে।’

‘কাজের লোককে স্বীকৃতি দিলে কাজের উৎসাহই বাড়িয়ে দেওয়া হয়। লণ্ঠন এবং হাত-পাখার প্রবর্তনে আমাদের লণ্ঠন ও হাত-পাখা মন্ত্রীর অবদান, কে অস্বীকার করবে?’

আমাদের লণ্ঠন ও হাত পাখা দফতরের ঘনিষ্ঠ মহল জানান, গ্রাম অপেক্ষা শহরাঞ্চলেই লণ্ঠন ও হাত-পাখা ব্যবহারে নাগরিকদিগকে অভ্যস্ত করতে সময় বেশি লাগছে। লণ্ঠন সম্পর্কে শহুরে লোকেদের মনে এক কুসংস্কার আছে। শহুরে লোকেদের ধারণা লন্ঠনের আলোয় নাকি চোখ খারাপ হয়। এই সব প্রেজুডিস লণ্ঠন চালু করার পক্ষে একটা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের লণ্ঠন ও হাত-পাখা দফতরের অনারেবল মিনিস্টার তাই ঠিক করেছেন, একটা প্রচার চিত্র তৈরি করবেন। তার থিমটা হবে লন্ঠনের আলোতেই চোখ ভালো থাকে।

প্রশ্ন : এতে শহরের লোক লন্ঠনের আলো সম্পর্কে আগ্রহী হবে বলে আপনার মনে হয়? পশ্চিমবঙ্গের লণ্ঠন ও হাত-পাখা দফতরের মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের অনারেবল মিনিস্টারের তাই ধারণা। অনারেবল মিনিস্টার অবিশ্যি এইখানেই ক্ষান্ত দেবেন না। কলকাতার অভিজাত সম্প্রদায়ের মধ্যে লণ্ঠনের ব্যবহার বাড়াবার জন্য তিনি বড় বড় হোটেলে ফ্লোর শো-এর ব্যবস্থাও করবেন। সুন্দরী মডেলরা মনোরম লণ্ঠনের আলোয় তাঁদের মোহিনী মূর্তি প্রকাশ করতে থাকলে ড্রয়িং রুমে লণ্ঠন জ্বালার রেওয়াজ চালু হয়ে যাবে বসে আমরা আশা করছি।’

প্রশ্ন : আর হাত-পাখা?

রাজ্য হাত-পাখা পর্ষদের চেয়ারম্যান এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘যদিও হাত-পাখার চল দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, আর এর জন্য বিদ্যুৎ শক্তির একচেটিয়া প্রভাবকেই আমি দায়ী করি, হাত-পাখা চালাবার কৌশল কলকাতার লোকেরা একেবারে ভুলে গিয়েছিলেন, তথাপি হাত-পাখা পর্ষদের অবিরাম প্রচেষ্টার ফলে আমরা অল্পদিনের মধ্যেই এই লুপ্তপ্রায় আর্টটিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সমর্থ হয়েছি। হাত-পাখা এখন কলকাতার সমাজে নিজের আসনে আবার প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। রাজ্য হাত পাখা পর্ষৎ এখন হাত-পাখা ব্যবহারকারীগণকে নানা ইনসেনসিভ দিচ্ছেন।’

প্রশ্ন : হাত-পাখা ব্যবহারে উৎসাহ দানের ব্যাপারে আপনারা কী কী ব্যবস্থা করেছেন?

সরকারি মুখপাত্র : আমরা আটানব্বই লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটা ইন্ডোর স্টেডিয়াম তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

প্রশ্ন : ইনডোর স্টেডিয়াম! তাতে হাত- পাখা ব্যবহারকারীদের কি সুবিধে হবে? সেখানে তো টেবিল টেনিস খেলা হবে!

সরকারী মুখপাত্র : টেবিল টেনিস খেলা আর হাত পাখা চালানো, দুই-ই তো মশায় হাতের কসরৎ। হাত-পাখা চালানোর তো একটাই অসুবিধা— আনাড়ি লোকের হাত একটুতেই টন টন করে ওঠে। আন্তর্জাতিক টেবিল টেনিস খেলা যারা দেখবেন তাঁরা কী ভাবে হাত চালালে হাতে টান ধরবে না, এটা তো শিখতে পারবেন। ব্যস্, তারপর ওই কৌশল অ্যাপলাই করলেই তাঁরা সারাজীবন ধরে সারা দিন রাত হাত-পাখা চালিয়ে হাওয়া খেতে পারবেন। একটুও কষ্ট হবে না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *