1 of 2

রেলগাড়ি ঝিক ঝিক

রেলগাড়ি ঝিক ঝিক

সে সিঁড়ি ধরে নেমে এল। টিপ টিপ বৃষ্টি, এলোমেলা হাওয়া। জুলাই মাসের আকাশ জল ভরা মেঘে ছেয়ে আছে কদিন থেকে। একটা প্যাঁচপেচে ভাব সবসময়। সে রাস্তায় নেমে বুঝল বর্ষাতিটা না এনে খুব ভুল করেছে। বিকেলের দিকে বৃষ্টি ছিল না। দিনটা আবার ভালো হয়ে যাবে, সে ভেবেছিল। মা বলেছিল, নিয়ে যা। সে গা করেনি। সুন্দর বাসন্তীরঙের শাড়িটা সদ্য কেনা। ওটা পরে সে গানের স্কুলে আসতেই সবাই হাঁ করে তাকিয়েছিল। বন্ধুরা বলেছিল, খুব সুন্দর লাগছে দেখতে। এবং এ-জন্য আজ সব গানেরই ঠিক ঠিক সুর তুলে নিতে পেরেছে। অজিত মাস্টারমশাই দুবার ওকে চুরি করে দেখেছে, এটাও সে টের পেয়েছে। আর রাস্তায় নেমেই মনে হল, সে বড়ো একা। যত বড়ো হয়ে যাচ্ছে, তত অদ্ভুত এক নির্জনতা গড়ে উঠছে ভেতরে। কী যেন নেই। কী থাকলে যেন এত সে নির্জনতাবয় ডুবে যেত না। সে বুঝতে পারে, আসলে বড়ো হওয়া মানেই কোন যুবকের জন্য শুধু অপেক্ষা করে থাকা। কত সুন্দর সব যুবকেরা তার চারপাশে বেহালা বাজিয়ে যাচ্ছে। সে যেন কিছুই শুনছে না। বড়ো অবহেলা অথবা নিদারুণ অন্যমনস্ক সে। সে যখন হাঁটে, চোখ তুলে হাঁটে না। কারণ সে টের পায়

যুবকেরা যে যেখানেই থাক ঠিক ঠিক তাকে দেখে যাচ্ছে। সে ভেতরে ভেতরে কতটা বড়ো হয়েছে সবাই বুঝতে পারে বলে লজ্জায় ভালো করে তাকাতে পারে না। এবং এ-সময় সেই ছেলেটার কথা ভেবে সে ফিক করে নিজের মনে হেসে দিল। মাঝে মাঝে বাড়ি ফেরার সময় তার সঙ্গে দেখা হয়। তখন বুকের মধ্যে কেউ যেন নিশব্দে হেঁটে যায়। মনে হয় সে কোন বিকেলে, রাস্তায় দেখা হলে বলবে, আরে আপনি! কোথায় গেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে বুকের মধ্যে একটা রেলগাড়ি ঝিক ঝিক শব্দ তুলে চলে গেল।

বৃষ্টিটা বোধ হয় আজ আর থামবে না। সে মাথায় সামান্য আচল টেনে দিল। সর্দির ধাত আছে। পাশের থিয়েটার হলটা পর্যন্ত সে নির্বিঘ্নে হেঁটে এসেছিল। তারপরই অবাক। ঠিক সেই সুন্দর মতো ছেলেটা, হল থেকে বেরিয়ে আসছে। যেন এতক্ষণ ঠিক ওরই অপেক্ষায় এখানে দাঁড়িয়েছিল।

ওর বুকে আবার কে যেন হেঁটে যেতে থাকে। রেলগাড়ি চলতে থাকে। এতটুকু চোখ তুলে তাকায় না। কারণ সে সব কিছু সকলের আগে ঠিকঠাক দেখে নিতে পারে। তাকে কেউ দেখার আগেই সে তার সব কিছু দেখে ফেলে। সুন্দর মতো ছেলেটা হয়তো জানেই না, তাকে আগেই লক্ষ করেছে। এবং ওর যা আশা এখন, সে হয় তো আজই এমন সুন্দর একটা অপরিচিত জায়গা পেয়ে বলবে, আরে আপনি? কোথায় গেছিলেন?

-গানের স্কুলে।

–কোথায় ওটা।

–ওদিকে।

–আমি তো এক পয়সার পালা দেখে ফিরছি। আপনি দেখেছেন?

—না।

—দেখুন না। ভালো বই।

–কার সঙ্গে দেখব। কে আমাকে নিয়ে আসবে। কেমন অভিমান-অভিমান গলা।

–কেউ বুঝি আপনাকে নিয়ে যায় না কোথাও?

–কে নিয়ে যাবে। বাবা তো কাজ কাজ করে সারাটা দিন অফিসে কাটিয়ে দেয়। বাবা বুঝতেই পারে না, আমার আজকাল কোথাও কেবল যেতে ইচ্ছে করে। মাঝে মাঝে বাড়িটা কী যে এক ঘেয়ে লাগে। নতুনদা এলে অবশ্য বাড়িটা অন্যরকমের হয়ে যায়। অদ্ভুত ছেলে। জানেন, সারাটা দিন আমার পেছনে লেগে থাকে। আচ্ছা আপনাকে আমি যদি বিজু বলে ডাকি।

-তা হলে তো আপনার একজন আছে দেখছি। সে বিজু কথাটার জবাব দিল না।

–ও মা সে তো আমার দাদা। বড়ো মাসির ছেলে।

–অঃ।

সে আরও কিছুটা পথ এগোতেই আবার কেউ যেন তাকে বলল, পাহাড়ে গেছেন কখনো।

-পূজার ছুটিতে যাই। দেওঘর গেছি। ঝাড়গ্রাম গেছি। খুব দূরে গেছি হাজারিবাগে। জানেন আমার বাবাটা খুব ভীত। বাইরে গিয়ে সব সময় কিছু খোয়া যাবে ভয়ে বড়ো বেশি সতর্ক থাকে। কোনো আনন্দই করা যায় না। একবার রামগড়ে ভারি মজা হয়েছিল, জানেন।

—কেউ ছিল বুঝি সঙ্গে।

-আরে না না। আমি তেমন মেয়েই নই। তবু কি জানেন, আমরা যে হোটেলটায় উঠেছিলাম, তার নীচে দুটো বাউন্ডুলে ছেলে কদিন থেকে খুব মদদ

খেয়ে পড়ে থাকত। বিকেল হলেই ওরা বের হয়ে যেত গাড়িতে। ঘুরে ফিরে আসতে অনেক রাত করে ফেলত। আমি চুপচাপ বারান্দায় বসে থাকতাম।

—এদের আপনার ভালো লেগে গেছিল।

–একদিন আমাদের তিনজনকে নিয়ে ওরা রাঁচির দিকে রওনা হয়ে গেছিল। ভারি সুন্দর স্বভাব। সেদিন ওরা এত ভালো হয়ে গেছিল, যে বোঝাই যায়নি, ওরা মদো মাতাল। আমারও পাহাড়ে উঠে যাই ওদের সঙ্গে। ফিরি রাত করে। ওরা কখনো বলবে, কি সুন্দর আকাশ। নক্ষত্র উঠলে আমার বলতে ইচ্ছে হত, জীবন এ-ভাবেই বুঝি মানুষের শুরু হয়। আমার কেন জানি নিরিবিলি গাছের ছায়ায় ওদের সঙ্গে কত রকমের কথা বলতে ইচ্ছে হত। তবে কি জানেন, আমি পারি না। ঠিক জমিয়ে গল্প করতে পারি না। ভেতরে কত রকমের ইচ্ছে হয়, সব কী বলা যায়। আর বললে ওরাই কী ভাববে বলুন, দুদিনের পরিচয়ে মানুষ তো আর সব তার খুলে দিতে পারে না। আচ্ছা আপনিই বলুন, পারে?

সুন্দর মতো যুবকটি খুক খুক করে হাসল।

-আপনি হাসছেন।

–আহা একটু দেখে হাঁটুন।

সত্যি সে ভারি অন্যমনস্ক হয়ে গেছিল। যুবকেরা চারপাশে কেন যে কেবল এ ভাবে আজকাল ক্রমে ভিড় বাড়াচ্ছে। এক পয়সার পালা দেখে যারা বের হয়েছিল, তাদের অনেককে হতাশ করে হালসিবাগানের মোড় থেকে সে বাসে উঠে গেল।

বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি তেমনি পড়ছে। কনডাকটার হাঁকছে, পরেশনাথ গেট। একজন যুবক ওর পেছন থেকে ঠেলে বের হয়ে গেল। হাতটা ঠিক জায়গায় একবার চুঁইয়ে গেছে। ঘাড়ের ওপরে নিঃশ্বাস পড়তেই বুঝল, আবার কেউ এসে তার শরীর ঘেঁসে দাঁড়িয়েছে। সে বুজতে পারে এই বয়সে কেউ কখনও খালি থাকে না। সে তার খাতাটা বুকের কাছে আর তুলে রাখার দরকার মনে করেনি। নেমে যাবার সময় খুব ভিড় থাকলে খাতাটা আবার দরকার পড়বে। সে এখন বেশ সোজা হয়ে দাঁড়াতে পেয়েছে।

মানিকতলায় আসতেই মোটা মতো বুড়িটা উঠে গেল। এতক্ষণ প্রায় দুজনের মতো জায়গা জুড়ে বসেছিল। শ্রাবণী টুপ করে জায়গায় বসে পড়ল।

বেশ আরাম। চোখ বুজে আসতে চাইল আরামে! ভিড়ের বাসে এই একটুখানি বসার জায়গা কত যে দুর্লভ না বসতে পারলে ঠিক বোঝা যায় না। কেন আর তার শরীর ছুঁয়ে পুরুষেরা কাঁঠাল পাকার মতো টিপে টিপে কিছু আর পরখ করার সুযোগ পাবে না। শ্রাবণীর ভিড়ের বাসে উঠলেই এমন মনে হয়। সব বজ্জাত হয়ে যায়। তখন বোঝাই যায় না এরা কেউ সংসারে বাবা, দাদা, কাকা। যেন সবই তখন ভিড়ের মধ্যে নানারকম অছিলায় মেয়েদের শরীরের যেটুকু ঘ্রাণ পাওয়া যায় চুরি করে নিতে পছন্দ করে।

বাসটা চলতে আরম্ভ করলেই রাস্তার মানুষ-জন চোখে পড়তে থাকে। ছাতা মাথায়, কাদা মাড়িয়ে তারা যাচ্ছে। বৃষ্টিটা বোধ হয় আজ আর থামছে না। এই বৃষ্টির দিনে আর বসে তার রেয়াজ করতে ভালো লাগে, কবিতার বই পড়তে ভালো লাগে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যত প্রসাধন আছে সব শরীরে মুখে মেখে কারও জন্য অপেক্ষা করতে ভালো লাগে। তখন যে যুবকই যাক না রাস্তা ধরে, সুন্দর সুপুরুষ যুবা হলে মনে মনে তার কাছে আত্মসমর্পণ করতে ইচ্ছে হয়।

এ-সব কেউ বুঝি তার বুঝতে পারে না। না বাবা, না মা। বরং বাবা মা-তো ওর কথাবার্তা শুনে মনে করে সে ভারি বালিকা। তার এখনও কত কাজ পড়ে আছে। কলেজের পড়া শেষ করাটা তার এখন সবচেয়ে বেশি দরকার। গান বাজনার শখ আছে। মা তাকে শৈশবে একটা নাচের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিল- এখনও সে সেই এক নৃত্যনাট্য যখন কেউ বাড়ি থাকে না, আয়নার সামনে গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে দুই হাতে যাবতীয় মুদ্রা ফুটিয়ে পা তুলে, অথবা ফাঁক করে মন মোর মেঘের সঙ্গী’…উড়ে যেতে ভালোবাসে। কেউ বোঝে না কেন এটা হয়। ভেতরে কে এই অপরূপ? যার জন্য সে কেবল ফুটে উঠতে চায়। সেই সুন্দরমতো ছেলেটার জন্য, না নিজের শরীরের রক্তে ক্রমে কূট খেলায় মত্ত হবার বাসনাতে কেউ ভেতরের আগুনটা উসকে দিচ্ছে।

তখনই কেউ যেন বলল, হে যুবতী আমি এখানে।

–তুমি কোথায়।

—আমি এখন রেলে চলে যাচ্ছি।

–আমাকে নিয়ে যাবে না।

—তোমাকে সবাই নিয়ে যেতে চায়। আমিও চাই।

–তবে নাও না। আর ভালো লাগছে না।

তবে চলে এস না। রেলগাড়ি ঝিক ঝিক-গ্রাম মাঠ পার হয়ে চলে যাচ্ছে। কোথাও সবুজ দিগন্ত, কোথাও শুধু আকাশ, কোথাও নক্ষত্রের বর্ণমালা রেলগাড়ি ঝিক ঝিক

—সে এর সে। দুজন সে। মুখোমুখি। মুখোমুখি বসে বসে কত কথা।

–আমার আজকাল মরে যেতে ইচ্ছে করে।

–কেন, কেন।

–জানি না যাও।

-তুমি মরে গেলে আমিও মরে যাব।

–এই।

–কী।

—আমার পাশে এসে বোস না। সুন্দরমতো যুবকটি শ্রাবণীর পাশে বসে গেল।

—শরীরে তোমার সুন্দর গন্ধ।

–তোমারও।

–আমি একটু ঘ্রাণ নেব? সুন্দরমতো যুবকটি বলল।

-না।

–কেন না?

–লজ্জা করে।

–এই যে বললে দরজা বন্ধ করে দিতে। রেলগাড়ি ঝিক ঝিক।

–এমনি বললাম।

–আর রেলগাড়িতে বেড়াতে যাওয়া কেন।

-দেশ দেখব। ঘুরে বেড়াব। গাছের ছায়ায় দু-জনে বসব। কোন নদীর পাড়ে বসে থাকব। হা হা করে বাতাস ছুটে আসবে। চুল উড়বে দু-জনার।

-আর কিছু করার ইচ্ছে নেই তবে?

–আছে।

—সেটা কী?

–সোনালী যব গমের খেতে ঢুকে যাব। দু-জনে। তারপর টুপ করে ডুব দেব। কেউ দেখবে না।

শ্রাবণী ধরফর করে ঠিক-ঠাক হয়ে বসল। রাজাবাজার এসে গেছে। সে ব্যাগ থেকে কুড়িটা পয়সা বের করে টিকিট কাটল। টিকিটটা নিয়ে ঘড়ির ব্যান্ডে খুঁজে রাখার সময় দেখল বুকের আঁচল সামান্য আলগা। একটা মধ্যবয়সী লোক আড়চোখে বেশ গোপনে কিছুটা মজা পাচছে।

পাশের মেয়েটা নোংরা পোষাকে বসে আছে। সে যতটা পারছে আলগা হয়ে বসার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ভিড়ের বাসে তা হয় না। একজন বেটে মতো যুবক কখন ঠেলে আরও ভেতরে ঢুকে গেছে। আগের মানুষটাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে তার শরীরের গন্ধ নেবার জন্য কেমন ঝুঁকে দাঁড়িয়েছে। ভিড়ের অছিলায় সে তার একটা পা ওর পায়ের ভাঁজের মধ্যে কোন এক ফাঁকে ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাত্র পাঁচ ইঞ্চির মতো ব্যবধান। ওর রেলগাড়ি ঝিক ঝিক আর তার নিজের রেলগাড়ির ঝিক-ঝিকের মধ্যে ব্যবধান ফুট ইঞ্চিতে মাপলে এত কম দূরত্ব যে শরীরে সামান্য উষ্ণতা না জেগে পারে না।

একবার তো সে আর সুজয় সারা বিকেল একটু নিরিবিলি জায়গায় বসে প্রেম প্রেম খেলা খেলতে চেয়েছিল।

রেস্তোরাঁয় ওরা ভেবেছিল পর্দা টেনে খেলাটা খেলবে। আশ্চর্য বেয়ারাগুলো, এট ওটা, আর কি লাগবে, চা, তারপর কাটলেট, জল, এবং এতবার পর্দা ফাঁক করে ওদের লক্ষ রাখছিল যে দু-পায়ে ছুঁয়ে বসে থাকা বাদে আর বেশি কিছু করা যায়নি। অথচ ভিড়ের বাসে ইচ্ছে থাকলে কত কিছু হয়ে যেতে পারে। সে ভাবল সেই সুন্দরমতো যুবককে নিয়ে একদিন ভিড়ের বাসে ঘুরে বেড়াবে। ভিড়ের বাসে, তার মনে হল, কিছুই আটকায় না। শিয়ালদায় শ্রাবণী নেমে গেল। টুকিটাকি দুটো একটা জিনিস কিনতে হবে। একটা পেস্ট, এক কৌটো ফেশ-পাউডার, কুড়ি পয়সার চিনেবাদাম, বাবার জন্য দুটো গেঞ্জি, পছন্দমতো ব্রেসিয়ার পেলে একটা কিনে নেবে। অথচ টিপ টিপ বৃষ্টিটা থামছে না। এরই মধ্যে গল গল করে ট্রেনগুলো উগড়ে দিয়ে যাচ্ছে লোকজন। গায়ে গায়ে ঠোকাঠুকি সতর্ক না থাকলে হবেই। সে ভেবেছিল বড়ো মাসির ছেলেকে নিয়ে একদিন ভি আই পি রাস্তাটা হেঁটে পার হবে। একবার ট্যাকসিতে সে ছোটো মাসি আর তার দেওর অময়কাকুর সঙ্গে দমদম এয়ারপোর্টে গিয়েছিল। তখনই সেই সুন্দরমতো ভারি প্রশস্ত রাস্তাটা দেখে অবাক। কত সব গাছপালা, ফুল ফলের গাছ, বোগেনভেলিয়ার ঝাড়। পিংক কালারের ফুলে একেবারে সারা রাস্তাটা উজ্জ্বল হয়ে আছে। বড়ো বড়ো পুকুর প্রায় হ্রদের সামিল। ছই দেওয়া একটা নৌকাও সে দেখেছিল। নৌকাটার মধ্যে তার ইচ্ছে হয়েছিল সেই সুন্দর মতো ছেলেটাকে নিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকবে।

—এই।

–কী।

—বসবে একটু।

–বসে কি হবে। এস না হাঁটি।

–দেখব।

–কী দেখবে বলবে তো?

—এই মানে।

–আচ্ছা মুসকিল তোমাকে নিয়ে। সোজা কথা সহজভাবে বলতে পার না।

–তুমি রাগ করবে।

-রাগ করার কথা হলে রাগ করব না?

–ওটা রাগ করার কথাই।

—তা হলে বল না।

–ঠিক আছে। ওঠ।

–এই হল মুখ গোমড়া করে ফেললে তো।

–না, মুখ গোমড়ার কি আছে। এমন সুন্দর নিরিবিলি জায়গা তো পাওয়া যায় কোথাও।

-সত্যি নিরিবিলি। গাছপালা পার হয়ে খালের ধারে দু-জনে বসে, কেউ দেখতে পাচ্ছে না, এর চেয়ে নিরিবিলি জায়গা কলকাতায় আর কোথায় আছে।

—সেই তো। কত ফুল। ওগুলো কী ফুল?

–চিনি না। বেশ ফুলগুলি। গুচ্ছ গুচ্ছ, কদম ফুলের মতো।

—সত্যি কদম ফুলের মতো। তারপরই কেমন সুন্দরমতো ছেলেটা বলল, বয়স বাড়লেই মানুষের কী যে হয়। কদম ফুল দেখার সখ হয়।

শ্রাবণীর মুখটা কেমন লাল হয়ে গেল। মনের মধ্যে এই বয়সে এই এক খেলা। কখনো কদম ফুল, কখনো বাবুইর বাসার মতো নরম সবুজ শুকনো ঘ্রাণ, আর যেন কি একটা কিনতে হবে—ও দুটো গেঞ্জি। কত মাপের? ছত্রিশ। ছত্রিশে বাবার আজকাল হয় না। আটত্রিশ দরকার। শ্রাবণী বলল, আটত্রিশ আছে?

দোকানি বলল, আছে। বলে বাক্স টেনে বের করল।

শ্রাবণী বলল, দুটো দাও।

দোকানি গেঞ্জী দুটো দিলে সবটা ভাঁজ খুলে দেখল কোথাও টুটা-ফাটা আছে কিনা। সে ব্রেসিয়ার চাইল একটা। খুব হাল ফ্যাসানের একটা বাকস। ওপরে জাঙ্গিয়া আর ব্রেসিয়ার পরা একটা মেয়ের ছবি। সে ছবিটার দিকে তাকিয়ে ভাবল, আজকাল মেয়েরা শাড়ি শায়ার নীচে কেউ কেউ জাঙ্গিয়া পরে। সে অবশ্য এখনও পরে দেখেনি। কলেজে পেনু বলে একটা মেয়ের সঙ্গে ওর খুব সখ্যতা। ওর অনেক পুরুষ বন্ধু। ওদের সঙ্গে সে বেশ ঘুরে বেড়ায়। ওর কথা শুনলে মনে হয়, সে কাউকে বিশ্বাস করে না।

প্যাকেট হয়ে গেলে শ্রাবণী বলল, কত দাম।

দোকানি বলল, আঠারো টাকা আশি পয়সা।

কিছু কম হবে না।

–দুটো দোকানে জিজ্ঞেস করতে পারেন। এখানে এক দাম।

আর বাকি থাকল কুড়ি পয়সার চিনাবাদাম। ওটা কেনা হলেই তার হয়ে যায়। ঘড়িতে দেখল আটটা বেজে গেছে। বাসে ওঠার জন্য তাকে আরও পনেরো মিনিট। দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। সে দেখেছে, তার বাসটাই বেশি দেরি করে আসে। বাসস্ট্যান্ডে গরম বাদাম ভাজা পাওয়া যায়। টিপটিপ বৃষ্টিতে বাদাম ভাজা চানাচুর ভাজা খেতে শ্রাবণীর বেশ লাগে। শ্রাবণী এমনিতেই লম্বা, শরীরে মাসে আরও একটু হলে সে খুবই সুন্দরী হতে পারত। এই মাংস লাগাবার জন্য আজকাল কলেজ থেকে ফিরে একটু দিবানিদ্রার অভ্যাস করেছে। আগে বড়ো গল্পের বই পড়ার নেশা ছিল।

বাসটা এসে গেল যা হোক। কুড়ি পয়সার চিনাবাদাম শেষ পর্যন্ত কেনা হল না। বাদাম কিনতে গেলে বাসটা ধরা যেত না।

সে দুজন যাত্রীকে ঠেলে প্রায় আগে উঠে গেল। এ-বাসটায় একটা পিন পড়ার জায়গা নেই। ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগান খেলা কাল। পাশে দু-জন যুবক খুব হই-চই করছে। ওরা দুজনই টিকিট সংগ্রহ করে ফিরেছে। দুনিয়াতে ওরা এখন এমন ভালো কাজ নেই যা করতে পারে না। ওরাই ওকে মাঝখানটায় চ্যাপ্টা হয়ে যেতে দেখে খুব ভালো মানুষের মতো ঠেলে একটু এগিয়ে যাবার রাস্তা করে দিল। বলল, দেখুন ওদিকে লেডিস সিট খালি থাকতে পারে। কিন্তু শ্রাবণীর এই সাতফুট রাস্তা অতিক্রম করা এ-জীবনে সম্ভব নয় বলে ভিড়ের মধ্যে ক্রমে চ্যাপ্টা হয়ে যেতে থাকল। সামনে চাপ, পেছনে চাপ ডাইনে চাপ বাঁয়ে চাপ।

বাস থেকে নেমে শ্রাবণী হতবাক। লোড শেডিং। চারপাশে গভীর আচ্ছন্ন অন্ধকার। বাস থেকে নেমে এতটা পথ অন্ধকারে যাবে কী করে, ভাবতেই কেমন মুষড়ে পড়ল।

সামনের রাস্তাটা হঁট সুড়কির। ডানদিকে বড়ো একটা মাঠ। মরশুমে ফুটবল খেলে পাড়ার ছেলেরা। বাঁদিকে কিছুটা বস্তি অঞ্চল পার হয়ে একটা টিনের কারখানা। রাস্তা বরাবর অনেকটা দূর পর্যন্ত লোনাধরা হঁটের দেয়াল। তারপর বেশ ফাঁকা মতো জায়গা কিছুটা—একটা ভাঙা শ্যাওলাধরা বাড়ি। কবেকার কে জানে। দিনের বেলাতেই বাড়িটা ভূতুড়ে বাড়ি বলে মনে হয়। একজন বুড়োমতো মানুষ থাকে বাড়িটাতে। সারারাত জানালায় সে দেখেছে কেউ একটি হ্যারিকেন জ্বালিয়ে রাখে। সব বাড়িতেই বিদ্যুতের আলো—কেবল ও-বাড়িটাতে এখনও কেরোসিনের বাতি জ্বলে। ও-বাড়িটা পার হলে সূর্যদের বাড়ি। নমিতার দাদা সূর্য বেকার যুবক। দুবারের পর বি-এ পাস করেছে। এখন পাড়ার বেশ ডাকসাইটে মাস্তান। দুবার চাকু খেয়েও প্রাণে বেঁচে আছে। চায়ের দোকানি গোবিন্দ এখন ওর একমাত্র সঙ্গী। গত শীতেও একবার ওকে দেখে শিস দিয়েছিল। সে এ-রকম সময়ে খুব সাহসী হয়ে যায়। কাছে গিয়ে বলেছিল, কী, কিছু বলবেন? সূর্যদা খুব ভালোমানুষ সেজে গেছিল তখন। বলেছিল, কোথায় গেছিলে। শ্রাবণী বলেছিল, সিনেমা দেখতে।

কী বই?

–সোলে।

-বাপস। আমি তো তেরোবার দেখলাম। আবার দেখব।

শ্রাবণী বলেছিল, আমি একবারই দেখেছি। আর দেখব না।

তারপরই সে রাস্তার অন্ধকারে পা বাড়াল। সেই চায়ের দোকানটায় সুন্দরমতো ছেলেটাকে দেখল না। অথবা হ্যারিকেন জ্বালিয়ে রেখেছে বলে স্পষ্ট বোঝাও যায় না, কারা ওখানে আছে। এই রাস্তাটুকু যদি সে এসে পার করে দিয়ে যেত।

এমনিতে সামান্য রাত হলে রাস্তাটা খালি হয়ে যায়। দু-একজন উঠতি বয়সের ছোকরা হিন্দি সিনেমার গান গেয়ে এ জিন্দাগি লুট গেয়া বলে চেঁচায়, শ্রাবণী ওদের ভয় পায় না। কিন্তু সূর্যটা খুবই বেপরোয়া। ওর কেমন ঘাম দেখা দিল শরীরে। আশ্চর্য, সারাটা রাস্তা কতভাবে যে এতক্ষণ নৈনিতাল উটি হাজারিবাগে ঘুরে এল। সঙ্গে সেই সুর্যের মতো কেউ সারাক্ষণ পাশে পাশে হেঁটেছে।

টিপ টিপ বৃষ্টিটা আর নেই।

সুনীলদা টিউশান সেরে এ সময়ই ফেরেন। ওর সঙ্গে দেখা হয়ে গেলেও এতটা ভয় থাকত না। ওর খুবই ইচ্ছে হচ্ছিল, সুনীলদা এখন সঙ্গে থাকুক। টিউশান সেরে যদি ঠিক এই সময়ে ম্যাজিকের মতো সামনে এসে উপস্থিত হত। এতে তার কয়েক প্রকার সুবিধা ছিল। প্রথমত সুনীলদা খুব বেশি একটা চায় না। সে যতটা দেবে সুনীলদা ততটাই নেবে। একবার অদ্ভুত কাণ্ড ঘটেছিল সনীলদার ঘরে। এবং সেই দাদাটির ঘরে পড়ার নাম করে কিছুক্ষণ থাকতে পারলে শরীরের মার্জিনেল ইউটিলিটির মানেটা স্পষ্ট বোঝা যেত তখন।

কী কাণ্ড। এটা কী করছ সুনীলদা!

দরজা বন্ধ করে দিলে শ্রাবণী বলেছিল।

সুনীলদা বলেছিল, কেউ নেই। দাদা বৌদি অন্নপ্রাশনের নেমন্তন্ন খেতে গেছে।

শ্রাবণী বলেছিল, তাই বলে দরজা বন্ধ করে দেবে।

সুনীলদা কেমন অপরাধীর গলায় বলেছিল, আমি একটু দেখব। এই বলে তস্করের মতো তার দিকে তাকিয়েছিল কিছুক্ষণ।

সুনীলদা অবশ্য ডিম্যান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই-এর টোট্যাল ইউটিলিটির দিক থেকে কিছুটা কমতি ছিল। বাবা-মা ওর জন্য যা টাকা সঞ্চয় করেছে, তাতে করে ডাক্তার এঞ্জিনিয়ার পাত্র সহজেই সাপ্লাই পাওয়া যাবে। তবে সে তো আরও কিছুদিন প্রতীক্ষা করার পর। অনার্স নিয়ে বি.এটা পাস, গানের স্কুল থেকে ডিপ্লোমা—এতসব হবার পর। দীর্ঘসময় কিন্তু ভেতরটাতে বরাবরই আগুনের ফুলকি উঠছে। পুরুষ মানুষের কাছে থাকলে কেমন বাতাসটা আরও বেড়ে যায়। ফুলকিরা শরীরের আনাচে-কানাচে ঘোরে। খুব নির্বোধই মনে হয়েছে সুনীলদাকে। বড়ো বেশি ভালো মানুষ। মেয়েদের শরীরে কিছু আছে, কথাবার্তায় এতটুকু বোঝ যেত না তার। এক বিকেলে সিঁড়ি ধরে নেমে যাচ্ছে সুনীলদা, শ্রাবণী বাথরুম থেকে বের হয়েছে। বালতিতে সামান্য জল। কেউ কাছেপিঠে নেই—কী যে ইচ্ছে হল তার—একটু জল নিয়ে সুনীলদার শরীরে ছিটিয়ে দিতেই কেমন চোখ মুখ জ্বলে উঠল মানুষটার। বলল, এদিকে এস।

-না না। আমি পারব না।

–তবে যাও। বলে সুনীলদা চলে গেল।

বাসে যেতে আসতে, কলেজে গানের স্কুলে আত্মীয়ের বাড়ি, রানার মামার বাড়ি যখন যেখানে শ্রাবণী থাকে যখন যেখানে যে-ভাবে থাকে শীতে গ্রীষ্মে, শরতে বসন্তে সব সময় শরীর তার মার্জিনেল ইউটিলিটির আওতায়। কিন্তু এখন সে কী করবে। গানের স্কুল থেকে ফিরতে এমনিতেই একটু বেশি দেরি হয়ে গেছে। বাড়িঘর তেমন খুব ঘন নয় এখানে। মাঝে মাঝে ছোটোছোটো ঝোপ জঙ্গলও আছে খালের পাড়টাতে। দু-একবার ছিনতাইটিনতাইও হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বাস থেকে নেমে সেডের নীচে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েছিল। মানুষজন আছে কথাবার্তা বলছে সবাই—অথচ এতবড়ো কলকাতায় তার যে কত বড়ো সমস্যা ওই রাস্তাটুকু পার হয়ে যাওয়া কেউ বুজছে না। সে আরও দাঁড়িয়েছিল, পাড়ার পরিচিত কাউকে বাস থেকে নামতে দেখলে তার সঙ্গে হেঁটে চলে যাবে। দুটো তিনটে বাস এল। কারু মুখই এ-সময় চেনা মনে হল না। শুধু একবার দেখল দু তিনজন যুবক রাস্তাটার অন্ধকারে নেমে গেল। শ্রাবণীর কেমন যেন রাগ হল মা বাবার ওপর। বাড়ি ফিরতে দেরি হচ্ছে কেউ একটু ভাববে না। বড়ো রাস্তায় এসে কারও দাঁড়িয়ে থাকা উচিত না! সে যেন বাবা-মার ওপর রাগ করেই অন্ধকার নির্জন পথটার নেমে গেল। তে যে ভালো হয়ে আছি, সেটা কার মুখের দিকে চেয়ে! আর তোমরা নিশ্চিন্তে বসে আছ বাড়ি। টেলিভিশন দেখছ। তারপরই মনে হল লোডশেডিং, টেলিভিশন দেখবে কী করে। আবার মনে হল, ওদের দিকটায় লোডশেডিং নাও হতে পারে। খুব মজা। যাকগে কিছু হয়ে গেলে আমি কিচ্ছু জানি না। আমার কোনো দোষ নেই। তোমরা মা-বাবা, তোমরা যদি না বোঝ এই অন্ধকার রাস্তায় হাঁটা আমার অনুচিত, তবে আমি কী করব।

আর ঠিক রাস্তার অন্ধকারে ঢুকে যেতেই মনে হল গায়ে কারও নিশ্বাস পড়ছে। শ্রাবণী আর্ত গলায় পেছনে তাকিয়ে বলল, কে!

-আমি সুন্দর মতো ছেলেটা।

–উঃ কী ভয় পেয়ে গেছিলাম।

—এত ভয় কেন?

—জানি না।

—আসুন এই অন্ধকারে একটু ঘুরে বেড়াই।

–কেন?

—এই দুজনে ঘুরব, কথা বলব।

—আর কিছু না?

—আর আর আর…

–তোতলাচ্ছেন কেন?

–মানে, আপনার চুলে এত সুগন্ধ থাকে কী করে?

–কই আমি তো পাই না।

–আমি পাই।

–আপনি পান যখন তখন প্রাণভরে নিন।

–বলছেন নিতে?

-বড়ো হতে গিয়ে বার বার মনে হয়েছে কেউ আমার মাথায় মুখ রাখুক, চুলের গন্ধ নিক।

–তবে আসুন—একটু এদিকে।

-ভয়, করে।

—আমি তো আছি।

—তবু ভয় করে।

—এত ভয় নিয়ে বেঁচে থাকেন কী করে?

—এই ভয় নিয়ে বেঁচে থাকতে কেমন মজা পাই।

—পাহাড়ে সমুদ্রে সূর্যাস্তে কোন বালিয়াড়িতে আপনি কতবার তো আমার সঙ্গে একা হেঁটে গেছেন। দুজনে কখনো ক্লান্ত হয়ে হাত-পা ছড়িয়ে বালিয়াড়িতে শুয়ে পড়েছি। কখনো দুজনে হাত ধরাধরি করে ছুটেছি। কত চড়াই উত্রাইয়ে উঠতে নামতে বলেছেন, তুমি আমার হাত ধর।

রাস্তাটার বাদিকে নোনা ধরা পাঁচিল। ভয় এখানটাতেই পেল। শ্রাবণী খুব দ্রুত পায়ে হাঁটছে।

-এত জোরে হাঁটছেন।

–তিনটে ছেলে কিছুক্ষণ আগে এখান দিয়ে গেছে।

–তার জন্য জোরে হাঁটার কী হল?

–ওরা ভালো না।

–ওরা কিছু ছিনতাই করে নিয়ে গেছে।

–না ওদের একজন আমাকে দেখলেই কেমন বোকার মতো তাকিয়ে থাকে।

–বোধহয় ভালোবাসে।

—ভালোবাসা এত সোজা।

–কেন, এই তো সময় সবাইকে ভালোবাসার।

–সত্যি। সুন্দর মতো ছেলে দেখলেই আমার কেন জানি তার সঙ্গে কোনো ডাকবাংলোয় রাত কাটাতে ইচ্ছে করে।

-মুরগির ঝোল, গরম ভাত।

খুব শীত। র‍্যাপার গায়। আকাশে কিছু নক্ষত্র, ঝাউগাছগুলির শন-শন শব্দ।

তারপর ব্যালকনিতে বসে কত কথা। কথা ফুরোয় না। ব্যালকনিতে শীতের ঠান্ডা হাত-পা জমে যাচ্ছে। তখন খুব ইচ্ছে করে দুজনে আরও একটু ঘনিষ্ঠ হতে। তারপর নরম বিছানায় কত ব্যস্ত তুমি আর আমি। জীবন কী সুন্দর লাগে তখন।

-তুমি বুঝি তাই চাওয়?

–তুমি চাও না।

—না।

 —কেন মিছে কথা বল। এস না, খেলার মাঠটার ওদিকে আমরা যাই।

—চুলের সুগন্ধ নিই।

—আর কিছু নেবে না, বল।

–না চাইলে কিছুই নেব না। শ্রা

বণী উত্তেজিত হয়ে পড়ল, না না, তুমি আমার সব নিয়ে নাও।

শুধু কদমফুলটা অক্ষত রাখ।

–ওটাই তো সব। ওটা আমি নেব।

শ্রাবণীর ভেতরটা আরও বেশি ধুকপুক করছে। এই বুঝি সেই তিনটে ছেলে ওরা যদি এই নির্জন পথটায় সত্যি ছিনতাইকারী হয়ে যায়? শ্রাবণী প্রায় দৌড়ে সেই খাল পাড়ের রাস্তার দিকে ছুটে যেতে থাকল।

এ ছাড়া সে সব সময় মুখে হালকা প্রসাধন রাখতে ভালোবাসে। সে জানে মেয়েরা অনেকক্ষণ বাইরে থাকলে কিছু উটকো গন্ধ শরীরে গজাতে থাকে।

এ-সব গন্ধ থেকে আপাতত রেহাই পাবার জন্য সে সেন্ট পাউডার মেখে ঘরে ঢুকতেই বুঝল—এদের কাউকে সে চেনে না। বাবা-মার সঙ্গে এদের কবে পরিচয়! বাবা-মার সঙ্গে পরিচয় থাকলে তার সঙ্গে থাকবে না, সে হয় না। বাবার অফিসের প্রায় অনেককেই সে চেনে। দিদির বিয়েতে ছাড়াও কোনো কোনো কাজে উৎসবে তারা আসেই। সুতরাং এ-ক্ষেত্রে যতটা বিনয়ী নয়, তার চেয়েও বেশি বিনয়ী—অন্তত চোখে মুখে। কারণ এরা কেউ জানে না, মেয়েটা পড়ার ফাঁকে, রাস্তার অথবা নির্জনে, কখনো জানালায়, কতটা পর্যন্ত এলিয়ে ভাবতে পারে। সুন্দর মতো ছেলেটার সঙ্গে সে অন্ধকার রাস্তায় মনে মনে যে খেলা খেলে এল তার বিন্দুমাত্র আঁচ এখন ওরা কেন স্বয়ং ঈশ্বর দেখেও বিশ্বাস করবে না। সে প্রায় বালিকার মতো, (না তার বয়স আরও কম, কে জানে) বড়ো বেশি নিবিষ্ট হয়ে দেখছে সেই সুদূর উষর মরুভূমির মতো একটা রাস্তা ধরে নায়ক তার নায়িকাকে নিয়ে চলে যাচ্ছে। ভাঙা সেই মোটর গাড়িটির অ্যাসিস্টান্ট রবি ঘোষ মজার কথা বললেই বালিকার মতো হেসে ফেলছে সে। যখন শো শেষ হল, বাবা দেরি করলে না আর। মেয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। প্রণাম করতে বললেন। প্রণাম করার সময় ভীষণ রাগ হচ্ছিল বাবার ওপর। তারপর বাবা-মা ওদের নিয়ে বৈঠকখানা ঘরে চলে গেলেন। শ্যামলাল খুব হাসিখুশি এবং দিদিমণির সঙ্গে খুশিতে বেশ দুটো একটা রসের কথাও বলে ফেলল। আর কী এবার তুমিও চললে। খুব মজা। কেমন সুন্দর ছেলে, কত বড়ো চাকরি। তোমাকে ওরা আগেই দেখেছে। কোথায় সেটা? সে প্রশ্ন করলে বলল, ওই যে গড়ের মাঠে বড়ো একটা হলঘরে তুমি গান গেয়েছিলে—ওর মনে পড়ল, সত্যি সে একবার সবার সঙ্গে একটা গান গেয়েছিল—আর তারই জের

সেই সুন্দর মতো ছেলেটাকে সে বলল, হল তো। সব যাবে। আমার আর কোনো অহংকারই থাকবে না। তুমি যে কী একটা বোকা না। পারলে না, কিছুই পারলে না।

ওরা চলে গেলে বাবা-মাকে ভীষণ খুশি দেখাল। অথচ কেন এরা এসেছে, কী ব্যাপার কিছুই তাকে বলছে না। মেয়েটা বিয়ের নাম করলেই চটে যায়। মুখ গোমড়া করে শুয়ে থাকে—বাবা-মার জন্য মেয়েটার কষ্টের শেষ নেই, এ-সব ভেবেই হয়তো বাবা-মা বলল, এই কী, তুই এখন পড়তে বসলি। খাওয়া-দাওয়া সেরে নে।

শ্রাবণী বলল, তোমরা খেয়ে নাও। ঘণ্টা খানেক পড়াশোনা করে গা ধোব। তারপর খাব।

আজ আর পড়তে হবে না।

শ্রাবণী বলল, আবার তোমাদের পাগলামি শুরু হয়েছে।

–পাগলামির কী। মেয়েদের বিয়ে একদিন করতেই হয়।

শ্রাবণীর বলার ইচ্ছে হল, বিয়ের ইচ্ছে আমার বারো পার না হতেই। কিন্তু বিয়ে করলে সব পৃথিবীটা একজনের হয়ে যায় বাবা। সেটা কেন বোঝ না। শ্রাবণীকে চুপ করে থাকতে দেখে মা বলল, ছেলের মতো ছেলে।

-সব ছেলেই ছেলের মতো ছেলে।

মা কী ভেবে বলল, তোর কী অন্য কাউকে পছন্দ। তবে সেটা বল।

শ্রাবণী বলতে পারত, যখন যেখানে যত সুন্দর ছেলে দেখি সব আমার পছন্দ। তাই বলে তারা একজন কেউ আমার সব অহংকার লুটে পুটে খাবে। আর আমি একটা মরুভূমির বাঘের পাল্লায় পড়ে যাব। আর শ্রাবণীর এটা হয়, অপছন্দের কিছু হলেই সেটা তার কাছে মরুভূমির বাঘের মতো মনে হয়। সুনীলদা, সূর্য, সমীরণ, বিজু এরাও সেই চেয়ে এসেছে। কাউকে আমি কিছু দিইনি। দিলেও ফুলটি অক্ষত রেখেছি। আর সেই লোকটা তাই এখন মজা করে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে।

শ্ৰবণী বলল, কাউকে পছন্দ করতে আমার বয়েই গেছে। তারপরই কেমন ভার ভার গলায় বলল, আচ্ছা মা, আমার কী বয়েস, পড়াশোনাটাও তোমরা শেষ করতে দেবে না।

বাবা খুব উঁচু লম্বা মানুষ। খুব সুপুরুষ। বাবার মতোই সে দেখতে হয়েছে। বাবার মতো মেয়ে দেখতে হলে খুবই পয়মন্ত হয়। সুতরাং মেয়েটার সব কিছুতেই সুখ হবে—এবং তিনি সব সময়ই ভাবেন, খুব আদুরে মেয়ে বলে সামান্য বোকা। নিজের ভালোমন্দ বোঝার বয়স হয়নি। তিনি কাছে বসে মাথায় হাত রেখে বললেন, সব সময় তো ভালো ছেলে পাওয়া যায় না।

শ্রাবণী কিছু বলল না। এ-সময় কিছু বলাও যায় না। এক মাস ধরে শুধু তার কথাই ভেবেছে। বিয়ের বছর খানেক তার কথাই ভাববে। তারপর বাসের সেই কাকা বাবা মেসো হয়ে যাবে। শ্রাবণী ফিক করে নিজের মনেই গোপনে হেসে দিল। এই হচ্ছে জীবনের মজা।

বাবা বলল, আমি ওদের কথা দিয়েছি।

শ্রাবণী বলল, আমাকে এত কেন বলছ বুঝি না।

শ্রাবণী আর দাঁড়াল না। সে ভাবল, এত সব সুন্দর গাছপালা বৃক্ষের মধ্যে এতদিন সে বেশ বেঁচে ছিল, এখন একটা গাছের সঙ্গে তাকে বেঁধে দেওয়া হবে। সে হেসে দিল কথাটা ভেবে। শরীরের রক্ত টগবগ করছে। ভেতরে কেউ যেন ঘোড়ায় চড়ে ছুটছে। এটা কিছুতেই থামছে না।

সে তার বাবা-মার সঙ্গে চুপচাপ খেয়ে নিল।

সে শোবার আগে খুব সুন্দর করে সাজল। তারপর আলাদা। বৈঠকখানার আগের ঘরটা তার। বাঁদিকে ব্যালকনি, ভেতরে বাবা-মার ঘর। রান্নাঘর স্টোর রুম। সে তার ঘরে ঢুকলে বুঝতে পারে এখন আর তার সঙ্গে তার বাবা-মার ঘরের কোনো সম্পর্ক নেই। সে খিল তুলে আয়নায় দাঁড়াল। স্নান করেছে। চুলে শুকনো তোয়ালে। সে তোয়ালে খুলে আয়নায় সামনে দাঁড়াল। শরীরে ঘোড়সওয়ার তেমনি টগবগিয়ে ছুটছে। সারাটা রাস্তায় সে গাছপালা বৃক্ষের ছিল। এখন সে একটা গাছের সঙ্গে বন্দি হয়ে যাবে। সে তার নখে নেলপালিশ লাগাল। চোখে আইগ্লাস ছিল। সে তার সব চেয়ে দামি বেনারসি বের করল। তার যা কিছু অলংকার ছিল এক এক করে পরল। পায়ে আলতা দিল। আয়নায় দাঁড়িয়ে দেখল, তার আর কি বাকি রয়েছে সঠিক সৌরভে ফুটে উঠতে। পায়ের আঙুলে সে অনেক দিন পর রুপোর ফুল পরল। আর কি বাকি আছে। বাকি, বাকি কি বাকি–কিছু নেই—তবে সে এই। এটুকু হলেই সে যুবতী, মায়াবী, মরীচিকা সব। তারপর সে তার যাবতীয় গাছপালা বৃক্ষ,—যেমন নন্তু, রমেন, সমীর, বলু, গজা, সূর্য, সাধন—যত মুখ যত প্রিয় মুখ, সবার কথা ভাবতে লাগল। এরা সবাই সেই একই আশা নিয়ে পৃথিবীতে তার পাশাপাশি বড়ো হচ্ছিল। তারা তাকে পেল না। কোথাকার একটা উটকো লোক এসে তুলে নিয়ে যাবে তাকে। সবার জন্য শ্রাবণীর কষ্ট হল। মায়া হল। বেচারা। আর এক বেচারা এখন মাথার ওপরের ঘরটায় রাত জেগে পরীক্ষার পড়া পড়ছে। গুন গুন আওয়াজে সে টের পায় সব। সবার হয়ে, সে সেই এক বেচারা বৃক্ষলতায় জড়িয়ে যাবার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে। রক্তে ফুটছে পদ্ম। রক্তে ফুটছে বুদবুদ। রক্তে ঘোড়া ছুটছে। রাত গভীর। সুতরাং শ্রাবণীর ক্ষুরের শব্দ ভেতরে ক্রমে আরও প্রখর হতে থাকল। সব নির্জন হয়ে আসছে। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। মা, বাবা, শ্যামলাল। সামনের বৈঠকখানা পার হলেই সিঁড়ি। দোতলার ঘর। সামনের ঘরটায় সেই বেচারা।

শ্রাবণী খুবই সতর্ক পা ফেলে উঠে যাচ্ছে। সতর্ক পা ফেলে স্বর্গের আসল সিঁড়ি ভাঙছে। ভাঙছে আর কাঁপছে প্রতিমা নির’নের মতো তার মুখ ঝলমল করছে।

কোথাও তখন বিসর্জনের বাজনা বাজছিল। শ্রাবণী যেন উঠতে উঠতে স্বর্গের সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে কেবল তার বিসর্জনের বাজনার শব্দ শুনতে শুনতে সেই ঘরটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। তার কোনো হুস ছিল না। সেই ঘরটা সেই কাপুরুষের ঘরটা শব্দ। ….

-তুমি আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছে। কিছুই তো চাইনি। সামান্য একটা কদম ফুল চেয়েছি। যত বড়ো হয়েছি, যত বড়ো খেলোয়াড় হয়েছি সব সময় আমার জন্য কেউ একটা কদম ফুল তুলে এনেছে। বলেছে, নিন। নিতে সাহস পাইনি। কে কী বলবে। ভয় হয়েছে। যদি সত্যি নিলে রাগ করে। অথচ দেখুন কত রাতে স্বপ্নে দেখেছি, ফুলটা গাছে ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে। পাড়তে গেলেই মনে হয়েছে —সেটা আর গাছ নেই। সুন্দর একটি কিশোরী লজ্জায় মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গেলে বলেছে লজ্জা করে, বিজুদা, তুমি ওটা নিয়ে নিলে সত্যি আমার আর অহংকার করার মতো কিছু থাকল না।

আমারও তাই। যেন ওটা নিলেই এতদিনের সব রহস্য আমার মরে যাবে বিজু। আমি সবকিছু হারিয়ে ফেলব। অথবা এক জীবন থেকে অন্য জীবনে ঢুকে যাব। বড়ো ভয় করে বিজু।

অন্ধকারটা কখনো ফিকে হয়ে যাচ্ছে। দুজন লোক কথা বলতে বলতে এদিকে এগিয়ে আসছে। মানুষের কী যে আছে। অন্ধকারে মানুষ অন্য রকমের হয়ে যায়। এবং যে বিজুটা এমন দেখতে সুন্দর, চোখ তুলে কারো দিকে তাকায় না, ঘন অন্ধকারে সেও সব কেড়ে নিতে চাইছে। সে নিজের সঙ্গেই আবার কথা বলল, বিজু আমাদের বাড়িতে একদিন এস না। বাবা-মার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেব। তা হলেই আমাদের বন্ধুত্ব হয়ে যাবে। তুমি আমি, তারপরই হুঁস করে একটা সাদা রঙের গাড়িতে দেখল, সে বিজুর সঙ্গে হাইওয়ে হয়ে ছুটে যাচ্ছে। কিছুটা বড়ো জোরে গাড়ি চালাচ্ছে হাওয়ায় চুল এলোমেলো হয়ে গেল। বুকের আঁচল পড়ে গেল। বিজু একটা সিগারেট ধরি বিজু তুমি সিগারেট খাও কেন। সিগারেটের গন্ধ আমার একদম সহ্য হয় না। আমার বমি বমি পায়। তোমাকে সব দেব বিজু। ফুলটা। লক্ষ্মীটি, সিগারেট খেও না।

—সত্যি দেবে?

মাথা নীচু করে রাখল শ্রাবণী।

—কী কথা বলছ না কেন?

–কী বলব বিজু।

—এই যে বললে ফুলটা আমাকে দেবে।

—তোমরাই তো কেউ না কেউ নেবে। কত গোপনে তাকে রক্ষা করে আসছি। কেলে পাগলা সুনীলদাটা একবার দেখতে চেয়েছিল।

—দেখিয়ে ছিলে? শ্রাবণী চুপ।

–কী কথা বলছ না কেন বিজু।

–এ সব কথা বলা যায়?

-আমার খুব হিংসে হচ্ছে।

–তোমার হিংসে হবে কেন।

তুমি তো আমার দিকে ফিরেও তাকাও না।

—শ্রাবণী তোমার নাম। তুমি সুন্দরভাবে হেঁটে যাও। যখন যাও পৃথিবীর এমন কোন অহংকারী যুবক আছে তোমার দিকে না তাকিয়ে থাকতে পারে।

আর তখনই বাড়ির কাছাকাছি বড় শিরিষ গাছটার নীচে সে এসে গেল। আর ভয় নেই। ওর ঘরের জানলাটা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। পাশের বাড়িগুলোয় কেউ মাসি কেউ মেসো। সুতরাং বেশ অবজ্ঞা ভরে সে হেঁটে যেতে থাকল। সারাটা অন্ধকার রাস্তায় সেই সুন্দর মতো ছেলে বিজুটা ছিল বলে যতটা ভয় বাপার কথা ছিল তা সে পায়নি। এমন সুন্দর ছেলেরা পাশে না থাকলে পৃথিবীতে বাঁচারও কোনো অর্থ হয় না। গাছটার নীচে সেই তিনজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে এবং মনে হল দূর থেকে ওরা শিস দিয়ে হাতে তুড়ি মেরে কি একটা গান গাইছে। পাশে যেতেই গানটা কেন যে তার ভালো লেগে গেল। অনেক পুরোনো হিন্দি ফিল্মের গান-ওরা নিজেরাই তুড়ি দিয়ে অন্ধকার আকাশের নীচে গাছের আবছা অন্ধকারে গাইছে—জেরা বাচকে জেরা হাটকে—বোধ হয় তাকে উদ্দেশ্য করে গাইছে। সে প্রায় দৌড়ে এবার বাড়ির দরজায় ঢুকে গেল। এদিকটায় লোডশেডিং ছিল না বলে সত্যি বাবা-মা বসে বসে টেলিভিশন দেখছে। তার সামান্য অভিমান হল। বাবা বললেন, এলি। মা বললেন, অভিযান’ বই হচ্ছে। আয় তাড়াতাড়ি আয়। সে গেল না। বারান্দায় বসে থাকল। আসলে সে বেশ ঘামছিল। পাখা ছেড়ে চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে থাকল। বাবা-মার সঙ্গে আরও দু-তিনজন বসে আছে।

কাজের লোক শ্যামলাল এখন বাবুর মতো একেবারে টিভির ফুট তিনেক দূরে বসে আছে। খুব কাছে থেকে ভালো করে দেখতে না পেলে তার মন ভরে না। একটু দূর থেকে এ সে দেখে না। আর মার পান সাজা, বাবার সিগারেট, কখনো গেট খোলার দরকার হলে—এই এমন ধরনের ফুট-ফরমাস বাদে তাকে দিয়ে। এখন আর কোনো কাজই করান যাবে না। শ্রাবণীর খুব জলতেষ্টা পেয়েছে। অথচ উঠতেও ইচ্ছে করছে না। ভিতরটা কেমন মাঝে মাঝে আশ্চর্য সব চিন্তায় অবশ হয়ে যেতে থাকে।

শ্রাবণী উঠে পড়ল। বাথরুমে ঢুকে চোখে-মুখে সামান্য জল দিয়ে মুখ মুছল তোয়ালে। শরীরের গরমটা যাচ্ছে না। সে আপাতত ঘাড়ে গলায় জল দিয়ে শরীরটাকে সামান্য ঠান্ডা করতে চাইল। কিন্তু পারছে না। সে তবু বাথরুম থেকে। বের হবার আগে সামান্য হালকা প্রসাধন করে নিল। বাবা বসে রয়েছে কে জানে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *