রেড ফিঙ্গার – ৯

অধ্যায় ৯

ট্যাক্সিতে চেপে ক্রাইম সিনে যাওয়ার সময় মাতসুমিয়ার একটু কেমন যেন লাগছে। ঠিক ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না অনুভূতিটা। টোকিও মেট্রোপলিটন পুলিশে যোগ দেয়ার পর এটা ওর দ্বিতীয় খুনের কেস। প্রথম কেসটায় এক গৃহিনীর খুনীকে খুঁজে বের করতে হয়েছিল। সেক্ষেত্রে কেবল সিনিয়র অফিসারের পেছন পেছন ঘুরেছে ও, আর কিছু না।

“সকাল সকাল একটা বাচ্চা মেয়ে খুন হয়েছে শুনলে কেমন লাগে, বলো? বয়স্ক কেউও তো হতে পারত,” পাশে বসে থাকা সাকাগামি বললো।

“সবার জন্যেই কঠিন এই ব্যাপারটা হজম করা। বিশেষ করে মেয়েটার বাবা-মা’র।”

“তা তো বটেই। কিন্তু আমি আসলে বোঝাতে চাইছিলাম এই ধাঁচের কেসগুলো একটু জটিল প্রকৃতির হয়। ভিক্টিম বয়স্ক কেউ হলে সহজেই তার শত্রুদের চিহ্নিত করে তদন্ত শুরু করতে পারি আমরা। মোটিভ খুঁজে পেতেও খুব বেশি সময় লাগে না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। কিন্তু ভিক্টিম একটা বাচ্চা হলে সেটা সম্ভব না। যদি ওই এলাকায় এসব কুকর্মের জন্যে পরিচিত কেউ থাকে, তাহলে আলাদা কথা।”

“কোন পুরনো শিকারীর কাজ বলতে চাইছো?”

“হতেও পারে, বলা যায় না। অথবা এমন কেউও হতে পারে যে হয়তো লম্বা সময় ধরে চোখে চোখে রেখেছিল মেয়েটাকে। যা-ই হোক না কেন, কাজটা যে করেছে তার মাথার ঠিক নেই। হয়তো তার পাগলামি স্বাভাবিক দৃষ্টিতে চোখে পড়বে না। বড়রা যেরকম কাউকে দেখলেই ধারণা করতে পারে কিছু একটা ঠিক নেই, বাচ্চারা তো সেটা পারে না। ওদের ধোঁকা দেয়া অনেক সহজ।

সাকাগামির বয়স পয়ত্রিশ ছুই ছুই। কিন্তু টোকিও মেট্রোপলিটন পুলিশে প্রায় দশ বছর ধরে আছে সে। এরকম কেসের অভিজ্ঞতা আগেও হয়েছে তার।

“নারিমা থানার ভেতরে পড়েছে জায়গাটা। ওদের ওখানে আবার নতুন এক ডিটেকটিভ এসেছে। যে কোন রহস্য উদ্ঘাটনে তার আগ্রহের কোন কমতি নেই। অতি উৎসাহী বলতে পার।”

কথাটা শুনে প্রায় নিঃশব্দে লম্বা একটা শ্বাস ফেলল মাতসুমিয়া। ও যে এরকম গ্যাট হয়ে বসে আছে, সেটার কারণ যে কেবলমাত্র অপরাধটার ধরণ, তা নয়। জায়গাটা নারিমা থানার অধীনে, এটা জানার পর থেকেই হৃৎপিণ্ডটা যেন গলার কাছে এসে লাফাচ্ছে। ওর খুব পরিচিত একজন চাকরি করে সেই থানায়।

কিছুদিন আগে দেখে আসা তাকামাসা’র হলুদাভ চেহারাটা ভেসে উঠলো ওর মনের পর্দায়। এই নতুন তদন্তটার কাজ যে ওর ঘাড়ে এসেই বর্তেছে, এটার পেছনে নিশ্চয়ই নিয়তির যোগসাজশ আছে।

একটা উচ্চ মধ্যবিত্ত আবাসিক এলাকা দিয়ে যাচ্ছে এখন ট্যাক্সিটা। এখানকার অধিবাসীরা লম্বা সময় ধরে থাকছে একই রকম দেখতে বাড়িগুলোয়।

কিছুটা সামনে মানুষের জটলা দেখা যাচ্ছে। বেশ কয়েকটা পুলিশের গাড়ি পার্ক করে রাখা আশপাশে। ইউনিফর্ম পরিহিত এক পুলিশ অফিসার গাড়ির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করছে।

“এখানেই নামিয়ে দিন আমাদের,” ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বললো সাকাগামি। ট্যাক্সি থেকে নেমে জটলার দিকে এগোলো দু’জনে। গেটের কাছে দাঁড়ানো অফিসার স্যালুট জানালো ওদের। লোকজন সরিয়ে জায়গা করে দিল।

মাতসুমিয়া জানে যে গিঙ্কগো পার্কটার টয়লেটে পাওয়া গেছে মেয়েটার লাশ। তবে এটা এখনও জানা যায়নি যে তাকে ওখানেই খুন করা হয়েছে কিনা। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে সহিংসতার স্বীকার মেয়েটা।

পার্কে আসার সবগুলো রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রবেশপথের একটু সামনে ঝানু পুলিশ লেফটেন্যান্ট কোবায়াশিকে চোখে পড়লো মাতসুমিয়ার।

“তুমি দেখি তাড়াতাড়িই এসে পড়েছ!” সাকাগামি বলে।

“এই কেবলই এলাম। ভেতরে উঁকি দেইনি এখনো, কিন্তু এখানকার লোকেরা ব্রিফ করেছে আমাকে,” কোবায়াশির এক হাতে সিগারেট। আরেক হাতে ছোট একটা পোর্টেবল অ্যাশট্রে ধরে আছে। মাতসুমিয়ার সেকশনের অনেকেই ধূমপান ছেড়ে দিয়েছে সম্প্রতি। কিন্তু কোবায়াশি চেইন স্মোকার। উপরমহল থেকে যখন নির্দেশ এলো অফিসে ধূমপান করা যাবে না, ভীষণ রেগে গেছিল সে।

“মৃতদেহটা খুঁজে পেয়েছে কে?’

এই এলাকার বয়স্ক এক লোক। প্রতিদিন সকালে পার্কে আসে সে। বয়স্ক হওয়ায় মাঝে মাঝেই টয়লেটে যেতে হয়। যাইহোক, আজকে টয়লেটে যাওয়ার পর সে দেখে একটা দরজা অর্ধেকটা খোলা। তখন ভেতরে উঁকি দিয়ে মেয়েটাকে দেখতে পায়। দিনের কি চমৎকার শুরু! এই ঘটনায় লোকটাকেই শেষমেষ গ্রেফতার করতে হয় কিনা কে জানে!” জিহ্বা দিয়ে একবার শব্দ করে বললো কোবায়াশি, এটা তার একটা মুদ্রাদোষ।

“মৃতদেহ সনাক্ত করেছে কেউ?”

“খুব সম্ভবত পুলিশ ষ্টেশনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এখন। ফরেনসিক কর্মীদের মতে, দশ ঘন্টা আগে কোন এক সময়ে মারা গেছে মেয়েটা। প্রাথমিক তদন্ত দল এখানকার দাগী আসামীদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখছে কালকে ওই সময়ে তারা কোথায় আছে। তবে এভাবে কিছু খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।”

চারপাশে নজর বুলাতে বুলাতে দুই উর্ধ্বতন অফিসারের কথোপকথন শুনছে মাতসুমিয়া। পার্কে একপাশে দোলনা আর একটা স্লাইড চোখে পড়লো। মাঝে বেশ বড় একটা মাঠের মতন জায়গা। ফুটবল খেলা যাবে ওখানটায়। পার্কের অন্যপাশে ঘন ঝোপঝাড়ে পূর্ণ জায়গাটায় তল্লাশি চালাচ্ছে ফরেনসিক টেকনিশিয়ানরা।

“এখনও পার্কে ঢুকতে পারব না আমরা,” মাতসুমিয়ার দৃষ্টি অনুসরণ করে বললো কোবায়াশি। “টেকনিশিয়ানরা কিছু একটা খুঁজছে।”

“খুনের হাতিয়ার?”

“ওরকম কিছু নেই খুব সম্ভবত,” মাতসুমিয়ার প্রশ্নের জবাবে হাত দিয়ে গলা চেপে ধরার ভঙ্গি করে বলে কোবায়াশি।

“তাহলে কি খুঁজছে?”

“ময়লার ব্যাগ, কার্ডবোর্ডের বাক্স বা অরকম কিছু একটা। যেটায় করে মৃতদেহটা নিয়ে আসা হয়েছে এখানে।”

“বাচ্চাটাকে তাহলে এখানে খুন করা হয়নি?

মাথা নেড়ে সায় দিল কোবায়াশি।

“খুব সম্ভবত।”

“মেয়েটাকে নিপীড়নের উদ্দেশ্যে বাথরুমটায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, এই সম্ভাবনা তাহলে বাদ?”

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাকাগামি দীর্ঘশ্বাস ফেলল এসময়।

“মাথার কয়েকটা স্ক্রু ঢিলা, এরকম লোকেও কোন বাচ্চাকে পাবলিক টয়লেটে নিয়ে নিপীড়নের চেষ্টা করবে না।”

“রাতে তো করতে পারে।”

“তোমার কি ধারণা, বাচ্চারা রাতের বেলা ঘুরে বেড়ায় এরকম একটা জায়গায়? খুব সম্ভবত মেয়েটাকে অন্য কোথাও অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।”

চুপ হয়ে গেল মাতসুমিয়া। যুক্তি আছে কথাটায়। ক্রাইম সিনের অবস্থান দেখেই সাকাগামি আর কোবায়াশি দু’জন ধারণা করছে খুনের ঘটনাটা এখানে ঘটেনি।

“নারিমা থানা থেকে লোক এসেছে,” ঘাড় নেড়ে মাতসুমিয়ার পেছনে ইঙ্গিত করে বললো কোবায়াশি।

পেছনে ঘুরে ধূসর স্যুট পরিহিত একটা লোককে দেখতে পেল ও, চুল পরিপাটি করে আঁচড়ানো তার। দেখে মনে হচ্ছে পুলিশ নয়, কোন নামী দামী কোম্পানির এক্সিকিউটিভ অফিসার বুঝি। ওদের দিকে হেঁটে এলো সে। নিজের নাম বললো মাকিমুরা।

“ভিক্টিমের পরিচয় পাওয়া গেছে?” কোবায়াশি জিজ্ঞেস করলো তাকে। কপালে ভাঁজ পড়লো মাকিমুরার।

“হ্যাঁ, পাওয়া গেছে। ভিক্টিমের মা এখন কথা বলার মত অবস্থায় নেই, কিন্তু মেয়েটার বাবা বলেছে তদন্তে যে কোন প্রকার সাহায্যের জন্যে রাজি সে।”

“শুনলাম গত রাতে নাকি থানায় রিপোর্ট করা হয়েছিল মেয়েটার ব্যাপারে?”

“আটটার একটু পরে ভদ্রলোক তার স্ত্রী’কে নিয়ে নারিমা থানায় আসেন। বাস স্টেশনের পাশের রাস্তাটায় থাকে তারা। মেয়েটার বাবা একটা কোম্পানিতে চাকরি করে,” পকেট থেকে নোটবুক বের করে দেখে বললো মাকিমুরা। “বাচ্চা মেয়েটার নাম ইউনা কাসুগাই।”

তার কাছ থেকে বানান শুনে মেয়েটার নাম লিখে নিল মাতসুমিয়া। ইউনার বাবার নাম তাদাহিকো আর মায়ের নাম নাতসুকো।

“বাচ্চাটা এলিমেন্টারি স্কুলের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। স্কুলটা বাসা থেকে দশ মিনিটের দূরত্বে। স্কুল শেষে চারটার দিকে কালকে বাসায় ফেরে সে। এরপর মা’কে কিছু না বলেই বেরিয়ে যায়। মেয়েটার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না, সেটা জানার পরেই আমাদের থানার সবাই খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে। স্টেশন থেকে স্কুল পর্যন্ত সবখানে খুঁজে দেখা হয়, কিন্তু পাওয়া যায়নি। আশপাশের লোকদের মেয়েটার চেহারা বর্ণনা দিয়ে কেবল এটুকু জানা যায় যে বিকাল পাঁচটার দিকে একটা আইসক্রিমের দোকান থেকে আইসক্রিম কেনে সে। বিক্রেতাকে ছোট্ট ইউনার ছবি দেখাই আমরা, কিন্তু সে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারেনি।

“আইসক্রিম,” বিড়বিড় করে বললো কোবায়াশি। “আইসক্রিম কেনার জন্যে বাসা থেকে বেরিয়েছিল?’

কারো উদ্দেশ্যে প্রশ্নটা করেনি সে, তাই কেউ জবাব দিল না প্রথমে।

“হতে পারে। বেশ চটপটে স্বভাবের ছিল মেয়েটা, কিছু একটা করতে ইচ্ছে হলে করেই ছাড়তো নাকি।”

মাথা নাড়ল কোবায়াশি।

“ইউনার বাবা কি আমাদের সাথে কথা বলার জন্যে তৈরি?”

“হ্যাঁ। আপনাদের যা যা বললাম সব কিছু তার কাছ থেকেই শোনা।“

“আমাদের চিফ এখনো আসেননি, কিন্তু তার সাথে এখন কথা বলে ফেললেই ভালো হয়। তোমরা দু’জন আসো আমার সাথে,” মাতসুমিয়া আর সাকাগামির উদ্দেশ্যে বললো কোবায়াশি।

খুনের কেসগুলোর ক্ষেত্রে প্রাথমিক তদন্ত ও খোঁজখবর নেয়ার দায়িত্বটা স্থানীয় থানার কর্মীদের ঘাড়েই বর্তায়। কিন্তু যেসকল কেসের তদন্তভার টোকিও মেট্রোপলিটন পুলিশের, সেসব ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষদর্শী এবং সাক্ষীদের সাথে পুনরায় কথা বলে ওরা। ফলে ভিক্টিমের পরিবারের লোকজনকে একই কথার কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করতে হয়। নিজের প্রথম কেসেই বিষয়টা বুঝতে পারে মাতসুমিয়া। একটু অমানবিক লাগে ওর কাছে ব্যাপারটা। কিন্তু কিছু করার নেই, তদন্ত এভাবেই চলে।

দোতলা একটা বিল্ডিংয়ের নিচতলায় ওদের নিয়ে গেল মাকিমুরা। বিল্ডিংটার অবস্থা খুব একটা সুবিধার নয়। মালিক বিক্রির নোটিশ টাঙ্গিয়ে রেখেছে বাইরে। ভাড়া দেয়ার চাইতে বিক্রি করে দেয়াটার তার জন্যে বেশি লাভজনক খুব সম্ভবত।

ভেতরে ঢুকতেই ছাতাপড়া একটা গন্ধ নাকে এসে লাগলো। হালকা নীল রঙের একটা সোয়েটার পরে তাতামি রুমের মেঝেতে বসে আছে একটা লোক। মাথা নিচু করে রেখেছে। ওদের পদশব্দ নিশ্চয়ই কানে গেছে তার, কিন্তু মূর্তির মতন একদম স্থির সে। নড়াচড়ার সামান্যতম শক্তিটাও যেন হারিয়ে ফেলেছে।

“মি. কাসুগাই!”

মাকিমুরা ডাক দেয়ার পর মাথা তুললো সে। ফ্যাকাসে চেহারায় চোখজোড়া কোটরাগত। কপালে বিন্দু বিন্দু সেদকণা আলোয় চিকচিক করছে।

“টোকিও মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে আমার সহকর্মীরা এসেছেন। প্রথমেই মাফ চেয়ে নিচ্ছি, কিন্তু পুরো ঘটনাটা তাদের কাছে আরেকবার বয়ান করতে হবে আপনাকে।“

শূন্য দৃষ্টিতে মাতসুমিয়া এবং তার সহকর্মীদের দিকে তাকালো কাসুগাই। এতক্ষণ কাঁদছিল সে।

“যতবার প্রয়োজন পড়ে, বলতে রাজি আছি আমি।”

“যা ঘটে গেছে, সেজন্যে আমাদের সমবেদনা জানবেন,” একবার বাউ করে বললো কোবায়াশি। “ভিক্টিমের বাবা-মা’র সাথে কথা বলাটা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব অপরাধীকে গ্রেফতার করতে।”

“কোত্থেকে শুরু করবো?” ম্রিয় কন্ঠে জানতে চাইলো কাসুগাই। কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে ভেতরে ভেতরে শোকে ন্যুব্জ লোকটা।

“শুনেছি আপনারা গতকাল রাত আটটায় থানায় রিপোর্ট করতে গিয়েছিলেন ইউনার নিখোঁজ হবার ব্যাপারে, কিন্তু আপনারা ঠিক কখন বুঝতে পারলেন যে ও বাড়িতে নেই?”

“আমার স্ত্রী’র মতে ছ’টার আশপাশে কোন একটা সময়ে। রাতের খাবার রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছিল ও তখন। ইউনাকে ডাক দেয়, কিন্তু ঘর থেকে বের হয় না আমার মেয়ে। ওকে না জানিয়েই বাইরে বের হয়ে গেছে কখন যেন। অফিস থেকে ফেরার পথে ওর কাছ থেকে ফোন পাই। বলে, ইউনা স্টেশনের কাছ থাকতে পারে। গত বছর এরকম একবার করেছিল ইউনা। আমার জন্যে স্টেশনের কাছে এসে দাঁড়িয়ে ছিল। আমরা বকা দিয়ে বলেছিলাম এরকমটা আর কখনো না করতে। করেনি ও…“

স্টেশনটা ইউনাদের বাসা থেকে আধা ঘন্টার দূরত্বে। বাবাকে খুশি করার জন্যে নিশ্চয়ই সেদিন একা একাই বাইরে বেরিয়েছিল ছোট্ট মেয়েটা, ভাবে মাতসুমিয়া।

“আপনার স্ত্রী তাহলে খুব একটা চিন্তিত ছিলেন না তখন?“

“না, না, ছিল। আমারও চিন্তিত হচ্ছিল। কিন্তু ও একা স্টেশনে আসতে চাইছিল না কারণ ইউনা যদি বাসায় ফিরে কাউকে না দেখে তাহলে ভয় পাবে।”

কাসুগাইয়ের কথা শুনে মাতসুমিয়া বুঝতে পারল ইউনা বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।

“আমি সাড়ে ছ’টা নাগাদ বাসায় পৌছি। ইউনা তখনও ফেরেনি। এবারে দুশ্চিন্তা একদম জেঁকে বসে মাথায়। বাসার চাবি প্রতিবেশীদের কাছে রেখে ইউনার মা’কে নিয়ে ওকে খুঁজতে বের হই। স্টেশনের কাছে গিয়ে সবাইকে ইউনার ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করি ওকে চোখে পড়েছে কিনা। স্টেশন বাদেও অন্য সব জায়গায় খোঁজ নিয়েছি। এখানেও এসেছিলাম। কিন্তু টয়লেটগুলোর কথা মাথায় আসেনি…” কেঁপে উঠলো কাসুগাইয়ের কণ্ঠস্বর।

নোটবুকে তথ্যগুলো টুকে নেয়ার সময় মাতসুমিয়া চেষ্টা করছে যেন লোকটার দিকে না তাকাতে হয়। তার মনের অবস্থা বোঝার জন্যে কাউকে গণক হতে হবে না।

নোটবুকের পাতা ওল্টাবে, এসময় একটা ক্ষীণ শব্দ কানে আসায় মাথা তুললো মাতসুমিয়া। পার্টিশনের অন্য পাশ থেকে এসেছে শব্দটা।

“আমার স্ত্রী,” নিচু স্বরে বললো কাসুগাই।

“ওহ!” কিছুটা অবাক হয়েছে মাতসুমিয়া।

“পেছনের ঘরে শুয়ে আছে ও।”

শব্দটা আবারো শুনতে পেল ওরা। কাঁদছে ইউনার মা, এবারে বুঝতে পারল মাতসুমিয়া। কিন্তু লম্বা সময় ধরে কান্নার কারণে এখন আর কোন শব্দ বেরুচ্ছে না ভদ্রমহিলার গলা দিয়ে।

পিন পতন নীরবতা নেমে এলো গোটা ঘরটায়।

মাতসুমিয়ার ইচ্ছে করছে ছুটে পালাতে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *