রেড ফিঙ্গার – ২৮

অধ্যায় ২৮

হলওয়েতে দাঁড়িয়ে কথাগুলো শোনার পর কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলল মাতসুমিয়া

মানুষ যে কখনো এরকম জঘন্য একটা কাজ করতে পারে, তা ভাবতেও পারেনি ও! ছেলেকে বাঁচানোর জন্যে বয়স্ক মা’কে খুনী সাজানো! এই বাড়িতে আসার পর থেকে ইতিবাচক একটা ব্যাপারই ঘটেছে, সেটা হচ্ছে আকিও মায়েহারার সবকিছু স্বীকার করে নেয়া। আর সেটাও হয়েছে প্রবল অপরাধবোধ থেকে।

বয়স্ক ভদ্রমহিলার হাতের লাল দাগটা আগে খেয়াল করলেও কিছু বলেনি কেন কাগা? তাহলে তো আরো আগেই সত্যটা বেরিয়ে আসত।

“কি বলছো তুমি এসব? আগে তো বলেছিলে আমাকে থানায় যেতে হবে না! সিঁড়ির মাথা থেকে নাওমির কন্ঠস্বর ভেসে এলো।

““তোমাকে তো কেবলই বললাম কেন। পুলিশের লোকেরা বুঝে ফেলেছে সবকিছু…” কাঁদতে কাঁদতে বলে ইয়াইকো।

“কিভাবে? আমাকে যা করতে বলেছ, সব তো করেছি!”

কিছু একটা ভাঙ্গার শব্দ ভেসে এলো পরক্ষণেই। এরপর একটা চিৎকার। “সব তোর দোষ, শূয়োর! সব তোর দোষ!”

“সরি, সরি…“

মাতসুমিয়া বুঝে উঠতে পারছে না কি করবে। পেছনের ঘর থেকে কাগা দ্রুত বেরিয়ে এলো এসময়। দুদ্দাড় করে উপরে উঠে গেল সে। খানিকবাদে আবারো কানে এলো নাওমির চিৎকার। কলার ধরে টানতে টানতে তাকে নিচে নিয়ে আসছে কাগা। সিঁড়ির গোড়ায় এসে ছেলেটাকে সোজা করে দাঁড় করালো সে। আরেকটু হলেই পড়ে যাচ্ছিল ছেলেটা।

“মাতসুমিয়া, এই বেয়াদবটাকে নিয়ে যাও।”

“হ্যাঁ,” বলে নাওমির বাহু পেঁচিয়ে ধরলো ও।

স্কুল পড়ুয়া ছেলেটা বাচ্চাদের মত কাঁদতে শুরু করেছে এবারে, চিৎকার জুড়ে দিয়েছে।

“এসো আমার সাথে,” দৃঢ় কণ্ঠে বলে মাতসুমিয়া।

“আমিও যাব সাথে,” পেছন থেকে বলে ইয়াইকো।

কোবায়াশি আর সাকাগামি গেটের বাইরে অপেক্ষা করছিল এতক্ষণ। এবারে ভেতর ঢুকলো তারা।

“কি ঘটেছে, সব বলবো আপনাদের…”

হাত নেড়ে ওকে চুপ করার নির্দেশ দিল কোবায়াশি।

“কাগা সব বলেছে আমাদের।”

পেছনে দাঁড়ানো কর্মীদের দিকে তাকিয়ে মা আর ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার অর্ডার দিল সে, এরপর মাতসুমিয়ার দিকে তাকালো আবারো।

“কাসুগাইদের কম্পিউটার পরীক্ষা করে দেখেছি আমরা। মেইলবক্সের ট্র্যাশ ফোল্ডারে ডিলিট করে দেয়া একটা মেইল পেয়েছি। ঘটনার দিন এসেছিল ইমেইলটা। ইউনার মা-বাবা কেউই মেইলটা দেখেনি। অর্থাৎ, ইউনাই দেখেছিল ওটা। এরপর ডিলিট করে দিয়েছে। কিন্তু ডিলিট করা ইমেইল যে ট্র্যাশ ফোল্ডারে জমা হয়, এটা জানা ছিল না ওর। ইমেইলটায় সুপার প্রিন্সেস সিরিজের পুতুলের ছবি ছিল।

“কে পাঠিয়েছিল সেটা কি জানা গেছে?”

“একটা ফ্রি ইমেইল অ্যাড্রেস থেকে পাঠানো হয়েছে। তবে শিঘ্রই জানা যাবে প্রেরক কে ছিল,” বলে মায়েহারাদের বাড়ির দিকে ইশারা করে কোবায়াশি।

“ছেলেটার নিজের কম্পিউটার আছে।“

“ইমেইলটা দেখেই বেরিয়ে পড়ে মেয়েটা। নিশ্চয়ই যে পাঠিয়েছে তাকে খুঁজতেই বেরিয়েছিল।”

“আমরা কি এই বাসার কম্পিউটারটা বাজেয়াপ্ত করবো?”

“করতে তো হবেই। তবে তাড়া নেই কোন। এখনো একজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা বাকি আছে।”

“আকিও মায়েহারাকে? সে-ই লাশটা নিয়ে গিয়েছিল পার্কে। এখন ডিটেকটিভ কাগার সাথে কথা বলছে সে!”

“সেক্ষেত্রে আমি বলবো ভেতরে গিয়ে তাদের কথা শোনো।”

“কেন?”

“সবচেয়ে বড় বোমাটা এখনও ফাটায়নি কাগা। যাও, গেলেই বুঝতে পারবে,” ওর কাঁধে হাত রেখে বলে কোবায়াশি। “যা ঘটে গেছে, তার চাইতেই বিস্ময়কর ব্যাপারটা। একটুও বাড়িয়ে বলছি না। “

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *