অধ্যায় ২৭
ঘরে উপস্থিত সবাই এতটাই অবাক হয়েছে যে প্রতিক্রিয়া দেখাতেও যেন ভুলে গেল। ধীরে ধীরে মুখ তুললো আকিও। স্ত্রী’র সাথে চোখাচোখি হলো একবার। সে-ও হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছে। চাহনিতে তীব্র অপরাধবোধ। কামড়ে ধরেছে ঠোঁট।
“মাফ করে দিও, আমি আর পারলাম না,” স্ত্রী’কে বলে আকিও। “সম্ভব না। কিছুতেই না।”
চোখ নামিয়ে নিল ইয়াইকো। তার অবস্থাও স্বামীর মতনই।
“আপনার মা দোষী নন, সেটা নাহয় বুঝলাম। তাহলে আসল কালপ্রিট কে?”
নিস্পৃহ কন্ঠে প্রশ্নটা করলো কাগা। তার চেহারার দিকে তাকালো আকিও। কথা বলার ধরণ নিস্পৃহ হলেও, ডিটেকটিভের চেহারাতেও বিষাদের ছায়া।
পুরো ব্যাপারটা নিশ্চয়ই বুঝেই ফেলেছে, আবারো ভাবে আকিও। এজন্যেই অবাক হয়নি।
“আমার ছেলে।”
মাথা নাড়ল কাগা। জোরে কেঁদে উঠলো ইয়াইকো, কান্নার দমকে কাঁপছে লাগল তার পুরো শরীর।
“মাতসুমিয়া, উপরে যাও।”
“দাঁড়ান…” ইয়াইকো উঠে দাঁড়িয়ে বলে। “আমিও যাচ্ছি।”
“ঠিক আছে। যান তাহলে।”
কাঁপা কাঁপা পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ইয়াইকো। তার পেছনে মাতসুমিয়া। আকিওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো কাগা।
“সত্য কথাটা বলার জন্যে ধন্যবাদ। অনেক বড় একটা অবিচার করে ফেলছিলেন আরেকটু হলেই।’
“কিন্তু সত্যিটা আপনি অনেক আগেই বুঝে গিয়েছিলেন।“
“না, আপনারা যখন থানায় ফোন দিলেন তখনই কিছু বুঝিনি। তবে আপনার গল্পটা অসংলগ্ন মনে হয়েছিল।”
“তাহলে কখন…”
মাসায়ের দিকে তাকাল কাগা।
“উনার আঙুলের লাল দাগগুলো দেখে।“
“কিভাবে?”
“দাগগুলো দেখে আমার মনে হয় ওখানে লাল রঙ লাগলো কিভাবে। আর দাগটা যদি ভিক্টিমের মৃত্যুর আগে আপনার মায়ের হাতে লেগে থাকে, তাহলে মেয়েটার শরীরেও আমরা লাল দাগের উপস্থিতি টের পেতাম। কারণ আপনার মা হাতে গ্লাভস পরেছিলেন ঘটনার পরদিন। কিন্তু ভিক্টিমের শরীরে কোন দাগই ছিল না। আর আপনিও কোন দাগ মোছার কথা উল্লেখ করেননি। এসব দেখে মাথায় আসে যে মেয়েটা খুন হওয়ার পরে কোন এক সময়ে তার আঙুলে লিপস্টিকের লাল দাগ লেগেছে। কিন্তু আমরা কোন লিপস্টিক খুঁজে পাইনি। এই রুমে নেই ওটা।”
“নিশ্চয়ই আমার স্ত্রী’র লিপস্টিক।”
কথাটা বলার পরেই আকিও বুঝতে পারল সেটা অসম্ভব।
“আপনার স্ত্রী’র ড্রেসিং টেবিল উপর তলায়। আপনার মা’র পক্ষে সেখানে যাওয়া সম্ভব না।”
“তাহলে কোথায় পেল।”
“লিপস্টিকটা যদি এখানে কোথাও না থেকে থাকে, তাহলে আপনার মা’র কাছে কি করে এলো, তাই তো? কেউ হয়তো বাইরে থেকে নিয়ে এসেছে। কে? আমি আপনার বোনকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করি। জানতে চাই তার কাছে ওরকম কোন লিপস্টিক আছে কিনা। মিসেস তাজিমা, দেখান ওটা।”
ব্যাগ থেকে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ বের করলো হারুমি। একটা লিপস্টিকের টিউব আছে ভেতরে।
“এটার দাগই লেগেছে মিসেস মায়েহারার হাতে। নিশ্চিত হয়েছি আমি। তবু ল্যাবে পরীক্ষা করে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাবে।”
বোনের দিকে তাকালো আকিও। “তোর কাছে ওটা গেল কি করে? “
“সেটাই তো সমস্যা,” কাগা বলে। “আপনার মা যদি মিসেস তাজিমার লিপস্টিকটা চুরি করতো, তবুও নাহয় অদ্ভুত ঠেকত না বিষয়টা। কিন্তু আপনার বোনের কাছে এখনো লিপস্টিকটা আছে। মিসেস তাজিমা, আপনার সাথে আপনার মায়ের শেষ কখন দেখা হয়েছিল?
“বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়।”
“অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে এই বাড়িতে লিপস্টিকটা ছিল না। এর অর্থ কি বুঝতে পারছেন মি. মায়েহারা?“
“হ্যাঁ। মা’র আঙুলে বৃহস্পতিবার লেগেছিল লিপস্টিকের লাল দাগ।”
“ঠিক ধরেছেন। অর্থাৎ, তিনি খুনটা করেননি। ভিক্টিমের দেহে কোন লাল দাগ পাওয়া যায়নি।”
শক্ত করে হাত মুঠি করলো আকিওর। তালুতে বসে গেল নখের দাগ।
“বুঝতে পেরেছি….”
বুকের ভেতরটা খালি খালি লাগছে ওর।