রেড ফিঙ্গার – ২০

অধ্যায় ২০

চোখ খুলে অ্যালার্ম ঘড়িটার দিকে তাকায় আকিও। আটটা বেজে দশ মিনিট। অর্থাৎ ঘন্টা তিনেকের মতন ঘুমিয়েছে ও। রাতে ঘুম না আসায় অল্প অল্প করে হুইস্কি গিলেছিল ভোর পাঁচটা অবধি। মধ খেয়ে মাতাল হওয়ার জন্যে সময়টা অস্বাভাবিকই বটে, কিন্তু ঘুমের জন্যে অ্যালকোহলের শরণাপন্ন না হয়ে উপায় ছিল না।

এখন মাথাটা ভীষণ ভারি ভারি লাগছে। বেশ কয়েকবার ঘুম ভেঙ্গে গেছিল মাঝে। ঘুম তো না, তন্দ্রা বলাই ভালো।

ওর পাশে অন্যদিকে ফিরে শুয়ে আছে ইয়াইকো। আকিও খেয়াল করেছে ইদানিং ঘুমের মাঝে আগের তুলনায় অনেক বেশি শব্দ করে ওর স্ত্রী। নাক ডাকে বললেও ভুল হবে না। কিন্তু আজ একবারের জন্যেও শুব্দ করেনি। স্থির হয়ে শুয়ে আছে কেবল।

“অ্যাই…” ডাক দেয় ও।

ধীরে ধীরে ওর দিকে মুখ ফেরায় ইয়াইকো। জানালায় পর্দা থাকায় ভেতরটা বেশ অন্ধকারে। সেই আঁধারে ইয়াইকোর গম্ভীর চেহারা আরো গম্ভীর দেখায়।

“ঘুমাতে পেরেছ একটু?”

মাথা ঝাঁকিয়ে না বলে ইয়াইকো। “তুমি?”

“খুব একটা না,” ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায় আকিও। হাত পায়ের গাটে ব্যাথা করছে হঠাৎ, যেন জং ধরে গেছে ভেতরে। হাত বাড়িয়ে পর্দা সরিয়ে দিল জানালা থেকে। আকাশে গোমড়া মেঘের আনাগোণা। যে কোন সময় শুরু হবে ভারি বর্ষণ।

“আচ্ছা…” ইয়াইকো বলে এসময়। “আমরা কাজ শুরু করবো কখন?” গভীর ভাবনায় মগ্ন আকিও জবাব দেয় না এই প্রশ্নের। ওদের আসলেই আর কোন উপায় নেই। কিন্তু সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে ওদের পরিবারের সবাই যেন একই কথা বলে। শুধুমাত্র একজন বাদে।

“আকিও!”

“শুনেছি তোমার কথা আমি,” বিড়বিড় করে বলে।

বিয়ের পর এই প্রথম স্ত্রী’র সাথে এই সুরে কথা বললো আকিও। কারণ এবারে ও জানে যে এই ব্যাপারটায় ওর ওপরে পুরোপুরি নির্ভরশীল ইয়াইকো। আরো আগেই শক্ত হওয়ার দরকার ছিল ওর।

এবারে পর্দা পুরোপুরি সরিয়ে বাইরে উঁকি দেয় আকিও। ওদের গেট থেকে বিশ মিটার দূরে একটা গাড়ি রাখা। ভেতরে লোকও আছে।

সাথে সাথে জানালা বন্ধ করে দিল।

“কি হয়েছে?” জিজ্ঞেস করে ইয়াইকো।

“পুলিশ এসেছে।”

“সামনের রাস্তায়?”

“হ্যাঁ। আমাদের গেট থেকে একটু দূরে গাড়ির ভেতরে বসে আছে। নজর রাখতে এসেছে নিশ্চয়ই।”

আঁতকে ওঠে ইয়াইকো। বিছানা থেকে নেমে জানালার দিকে এগোয়। “খুলো না! আমরা যে জানি সেটা না বুঝলেই ভালো।”

“কিন্তু কি করবো আমরা?“

“ওরা আমাদের বাসায় আসার আগ পর্যন্ত তো করার কিছু নেই। নাওমি কি ঘুমাচ্ছে এখনও?”

“দেখে আসি,” এলোমেলো চুলে হাত চালিয়ে বলে ইয়াইকো।

“পুতুলটা নিয়ে ওকে এখানে আসতে বলো। এখন ঘরে বসে থাকলে চলবে না। বাকি জিনিসগুলো সব ঠিক মত সরিয়ে ফেলেছ তো?”

“হ্যাঁ।”

“দরকার হলে আরো একবার দেখ। বিন্দুমাত্র ঝামেলা হলে আমরা ফেঁসে যাব।”

“জানি আমি।”

ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল ইয়াইকো। এসময় মাথা ঘুরে ওঠায় চট করে বসে পড়লো আকিও। বমি বমি লাগছে ওর ভীষণ। শব্দ করে ঢেঁকুর তুলল একবার। মুখের ভেতরটা টক টক লাগছে।

জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিনটার কেবল শুরু, নিজেকেই বললো ও।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *