রেড ফিঙ্গার – ১৪

অধ্যায় ১৪

পর্দার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে দেখল স্কুলপড়ুয়া দুই ছেলে ঢিমেতালে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া রাস্তায় আর কেউ নেই। দুই ডিটেকটিভের চলে যাওয়ার প্রায় দশ মিনিট হতে চললো। খুব সম্ভবত আর ফিরবে না।

একবার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জানালার কাছ থেকে সরে কাউচে এসে বসে আকিও।

“তো?” ডাইনিং রুমের চেয়ারে বসে থাকা ইয়াইকো বলে।

“চলে গেছে দু’জনই। আমাদের উপরে নজর রাখছে না।”

“গোটা এলাকায় শুধু আমাদের বাসায় এসেছিল, এমন তো না?”

“খুব সম্ভবত। তবে নিশ্চিত হয়ে বলার উপায় নেই।”

কপালের দুই পাশে আঙুল দিয়ে চেপে ধরলো ইয়াইকো। একটু আগেই মাথা ব্যাথার কথা বলছিল সে। কম ঘুম হওয়র ফল।

“এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমাদের বাগানে ঘাস আছে।”

“সেটাই। আর এখনকার বিজ্ঞান তো অনেক উন্নত। হয়তো এটা প্ৰমাণ

করে ফেলতেও পারে যে ঘাসগুলো আমাদের বাগানের।”

“কবে আসবে কে জানে।”

“মানে?“

“পুলিশের কথা বলছি। টেস্টের রিপোর্ট কি তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবে?”

“সেটা বলা কঠিন। আমার মতে দিন তিনেক তো লাগবেই। দুই দিনেও সম্ভব।”

“অর্থাৎ আজ বা কালের মধ্যেও পেতে পারে?”

“হয়তো।”

চোখ বন্ধ করে ফেলল ইয়াইকো। চেহারায় দুশ্চিন্তা প্রকট।

“তোমার কি মনে হয়, আমরা পার পেয়ে যাব?”

পকেট থেকে সিগারেট বের করার পথে থেমে গেল আকিও। মুখ দিয়ে বিরক্তিসূচক শব্দ করে বললো, “এখন এই প্রশ্ন করার মানে কি?”

“কিন্তু …”

“তুমিই তো বলেছিলে নাওমিকে যেন গ্রেফতার না হতে হয়, সেজন্যে যা করা দরকার, করবে। সেজন্যেই এই পরিকল্পনাটা সাজিয়েছি আমি। এখন কি মত বদলে ফেলছ নাকি? ও আত্মসমর্পণ করুক, এটাই চাও?” বিরক্ত স্বরে কথাগুলো আকিও। পরিকল্পনাটা বাস্তবেও কাজে লাগাবে এই সিদ্ধান্তটা নিতে নিজের সাথে যুঝতে হয়েছে ওকে। এখন ইয়াইকোর এই সুরে কথা বলা একদমই সহ্য হচ্ছে না।

“কক্ষনো না। সিদ্ধান্ত বদলায়নি আমি। মনেপ্রাণে চাইছি পরিকল্পনাটা কাজ করুক। শুধু এটুকু নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা কোন ভুল করছি না।

আকিও বেশ বুঝতে পারছে ইয়াইকো ওকে চটাতে চাইছে না। কয়েক টানে সিগারেটটা শেষ করে অ্যাশট্রেতে ফেলে দিল ও। “আমরা তো অনেক ভেবেচিন্তেই পরিকল্পনাটা বাস্তবায়ন করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাই না? সবকিছু সেই অনুযায়ী গেলে নাওমির কোন চিন্তা নেই। মনে মনে প্রার্থনা করো, ভাগ্য যেন আমাদের সহায় হয়। এখন আর আমাদের ‘কি হতে পারত?’- এসব নিয়ে চিন্তা করে কোন লাভ নেই। বন্দর থেকে জাহাজ ছেড়ে দিয়েছে। চারদিকে অথৈ সমুদ্র।”

“তোমার কি এটা মনে হচ্ছে যে আমি আফসোস করছি? কথাগুলো বললাম যেন দু’জনই একদম সাবধান থাকি, কিছু ভুলে না যাই। আমিও এটাই চাই যেন সবকিছু চুকেবুকে যাক। একটু আমি তো ঠিকঠাকই অভিনয় করেছি, তাই না? ওই দু’জনের চেহারা দেখে কিছু বুঝেছ?’

“এই ব্যাপারে কিছু বলা মুশকিল। তুমি যে অভিনয় করছো, সেটা খুব সম্ভবত বোঝেনি। কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে কিনা, তা আগে থেকে বলা যাবে না।”

“ওহ আচ্ছা…” কিছুটা হতাশ সুরে বললো ইয়াইকো।

“যদি মা’কে সামনাসামনি পাগলামি করতে দেখত, তাহলে বেশি কার্যকরি হতো। কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়। মা কোথায় এখন?”

“আহ…..রুমে বোধহয়। “

“আর নাওমি?”

প্রশ্নটা শোনা মাত্র বদলে গেল ইয়াইকো অভিব্যক্তি। জবাব দিল না সে।

“এখনো গেম খেলছে, তাই না?”

“থামো তো! আমি পুরো পরিকল্পনা খুলে বলেছি ওকে, ওটা নিয়েই ভাবছে নিশ্চয়ই। পুরো ঘটনাটা ওর উপরে কেমন প্রভাব ফেলেছে, একটু চিন্তা করো। মুষড়ে পড়েছে বেচারা।”

“এটাই কি স্বাভাবিক না? ওকে নিয়ে আসো, যাও।”

“কিন্তু কেন? এখন বকাবকি কোরো না, প্লিজ।”

“আরে নাহ। এখন বকে কি লাভ? আমাদের পরিকল্পনা কাজে লাগাতে চাইলে একদম ঠিকঠাক মিথ্যা বলতে হবে। পুলিশের লোকেরা কিন্তু পরিবারের সবার আলাদা আলাদা জবানবন্দি নেয়ার পর মিলিয়ে দেখবে। একটু অমিল খুঁজে পেলেই খেল খতম। তাই একসাথে প্রস্তুতি নিতে হবে।”

“আসলেই?”

“এক না এক সময় তো নাওমিকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেই পুলিশ, তাই না? তাদের সামনে ওর তোতলানো, ইতস্তত বা একেকবার একেক কথা বলা যাবে না। জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হওয়ার জন্যে আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে ওকে, নাহলে পার পাবে না। এখন সেটাই করতে চাইছি আমি। পুলিশের মত ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো।”

“ওহ…বুঝেছি,” নিচের দিকে তাকিয়ে বলে ইয়াইকো, কিছু একটা ভাবছে সে।

“দেরি করছো কেন? নিয়ে আসো না!”

“তুমি কি করতে চাইছো, তা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু সেটা কয়েকদিন পরে করলেও হবে। এখন বেশি তাড়াতাড়ি হয়ে যায়।”

“তাড়াতাড়ি, কিভাবে?”

“মেয়েটা যে আসলেই মারা গেছে, সেই ধাক্কাটা এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি ও। পুরো পরিকল্পনাটা ওকে খুলে বলেছি আমি, কিন্তু মনে হয়না বিষয়টা ধরতে পেরেছে নাওমি। পুলিশের সামনে অভিনয় করতে পারবে কিনা সন্দেহ। এটা বললে হয় না যে ও ঘটনাস্থলে ছিল না?”

“ঘটনাস্থলে ছিল না?”

“হ্যাঁ। ঘটনাটা যখন ঘটে তখন ও বাসায় ছিল না। পুলিশ তখন আর ওকে কিছু জিজ্ঞেস করবে না। “

ইয়াইকোর কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেল আকিও।

“এটা ওর পরিকল্পনা, তাই না?”

“কি?”

“নাওমি তোমাকে এটা বলেছে তো, নাকি?“

“না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এমনটা করলেই ভালো হবে।”

“ও বলেছে পুলিশের লোকদের সাথে কথা বলবে না। ঠিক বলছি তো?”

জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মাথা নিচু করে ইয়াইকো।

“ও কেন এই কথা বলেছে, সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ? এখনও স্কুলে পড়ে নাওমি। পুলিশ ভয় পায়। এই বয়সে পুলিশি জেরার মুখোমুখি হতে বলাটা একটু বেশি বেশি হয়ে যায় না?”

মাথা ঝাঁকায় আকিও। ইয়াইকোর কথা বুঝতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না ওর। সে কেন কথাগুলো বলছে তা-ও পরিষ্কার। ছোট থেকে ছেলের গায়ে ফুলের টোকাও পড়তে দেয়নি ইয়াইকো। সে ভালো করেই জানে পুলিশ যখন একই কথা বারবার জিজ্ঞেস করবে, বিরক্ত হয়ে সত্যটা বলে দিবে নাওমি। অথচ গোটা ব্যাপারটায় সমস্ত দোষই তার। সে যদি ওই জঘন্য কাজটা না করতো তাহলে মায়েহারাকে পরিবারকে এরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হত না। এত কিছুর পরেও ছেলেটা যে মা-বাবার উপর দিয়ে সব চালিয়ে দিতে চাইছে, এটা ভেবে রীতিমত লজ্জা লাগছে ওর।

“তাহলে নতুন আরেকটা মিথ্যে যোগ হবে। আর সেই একটা মিথ্যে ঢাকার জন্যে আরো হাজারটা মিথ্যে বলতে হবে।”

“কেন?”

“পুলিশকে যদি আমরা বলি ঘটনার সময় ও এখানে ছিল না, তখন নিশ্চয়ই জানতে চাইবে কোথায় ছিল। জবাবে যে জায়গার কথা বলবে, সেখানে গিয়েও খোঁজ নেবে তাদের লোক। সেক্ষেত্রেও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে নাওমিকে। এর চেয়ে মিথ্যেটা না বলাই ভালো হবে না?“

ইয়াইকো জবাবে কিছু বলার আগেই কলিংবেল বেজে উঠলো।

স্তম্ভিত দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো দু’জন।

“আবার পুলিশ এলো নাকি?” ভয়ার্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ইয়াইকো। “ইতিমধ্যে জেনেও গেছে যে ঘাসগুলো আমাদের বাগানের?”

“এত তাড়াতাড়ি এই তথ্য বের করা অসম্ভব,” শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে বলে আকিও। ইন্টারকম তুলে কানে চাপায় পরক্ষণে। “কে?”

“গুড মর্নিং। আমি।”

বোন হারুমির কন্ঠস্বর চিনতে কোন অসুবিধা হয় না আকিওর। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও স্বস্তিটা খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। নতুন দুশ্চিন্তা ভর করে মাথায়। বোনকে কি বলবে সেটা এখনো ঠিক করেনি ও।

“আজকে দেখি তাড়াতাড়ি এসে পড়লে! দোকান বন্ধ নাকি?” যথাসম্ভব স্বাভাবিক কণ্ঠে জানতে চায় আকিও।

“না, কিন্তু পাশেই একটা কাজে এসেছিলাম।”

“ওহ, আচ্ছা,” রিসিভার নামিয়ে স্ত্রী’র দিকে তাকায় আকিও। “হারুমি এসেছে!”

“কি করবো আমরা এখন?”

“দেখি কোনভাবে ফেরত পাঠিয়ে দেই।”

হলওয়েতে চলে এলো আকিও। বাগানের গেট পার হয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েছে হারুমি। এই বাড়িতে বড় হয়েছে সে, তাই নিজের মনে করেই সবকিছু করে।

“সরি হারুমি, কিন্তু আজকে তোর সাহায্য লাগবে না।”

“কেন?”

“আমিই মা’র দেখভাল করবো। আসলে ইয়াইকোর সাথে ঝগড়া চলছে আমার,” চেহারা যতটা সম্ভব গম্ভীর করে বলে আকিও।

“কি হয়েছে? মা আবার কিছু করেছে?” ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে ওর বোন।

“না, সেরকম কিছু না। নাওমিকে নিয়ে লেগেছে আর কি।“

“নাওমিকে নিয়ে?”

“ওকে কোন স্কুলে ভর্তি করবো সেটা নিয়ে একমত হতে পারছি না আমরা।”

“ওহ…” হারুমির চেহারা দেখে মনে হলো না ওর কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করেছে সে।

“মা নিজের ঘরেই আছে। আজকে কোন পাগলামো করেনি। আমি খাইয়ে দিব। তোর থাকতে হবে না।”

“আচ্ছা। তুই যদি খাইয়ে দিতে পারিস, তাহলে আমার কোন সমস্যা নেই।“

“এখানে এসে এমনি এমনি সময় নষ্ট হলো তোর।”

“ব্যাপার না। এগুলা রাখ, মা’কে দুপুরে দিস,” একটা শপিং ব্যাগ আকিওর হাতে দেয় হারুমি।

ভেতরে স্যান্ডউইচ আর কয়েক কার্টন দুধ আছে দেখল আকিও।

“মা এগুলো খাবে তো?”

“ইদানিং স্যান্ডউইচই যা একটু আগ্রহ নিয়ে খায় মা। মনে হয় যেন পিকনিকে গিয়েছে।”

“ওহ্…..”

“মা”র ঘরের সামনে মেঝেতে ব্যাগটা রেখে দিস, তাই হবে। ক্ষুধা পেলে খেয়ে নিবে।”

“মেঝেতে কেন রাখব?

“জানি না। মাঝে মাঝে মা এমন সব উৎপাত করে, যেটার কারণ বোঝা দায়। একদম বাচ্চাদের মতন।”

বিষয়টা আকিও’র মাথায় ঢুকল না, কিন্তু কিছু না বলে চুপচাপ মেনে নিল।

“দরকার পড়লে আমি তোকে ফোন দিব। ফোন না দিলে আসতে হবে না।”

“আসলেই!” বিস্ময়ে চোখজোড়া বড় বড় করে বলে হারুমি।

“মা”র শরীর এখন তুলনামূলক ভালো। তুই কয়েকদিন বিশ্রাম কর বাসায়। তাছাড়া সামনে ছুটি, আমিই খেয়াল রাখতে পারব। তাছাড়া প্রতিদিন এই কাজের জন্যে এখানে আসতে তোরও নিশ্চয়ই ভালো লাগে না।“

“ইয়াইকোরও কোন আপত্তি নেই? আশা করি আমাকে নিয়ে ঝগড়া হয়নি তোদের।”

“আমাদের ঝগড়া হয়েছে, কিন্তু সেটা নাওমির স্কুল নিয়ে। মা’কে নিয়ে চিন্তা করিস না; কোন ঝামেলা হবে না।”

“বাহ্, তাহলে তো ভালোই। সাবধানে কিন্তু, যে-কোন সময়ে যে-কোন কিছু করে বসতে পারে মা। ইয়াইকোকে মেক-আপ লুকিয়ে রাখতে বলিস।”

“মেক-আপ?”

“হ্যাঁ, ইদানিং মেক-আপ মা’র খুব ভালো লাগে। বড়রা যেভাবে মেক- আপ পছন্দ করে, ওরকম নয় ব্যাপারটা। বরং ছোট মেয়েরা যেমন মায়ের মেক- আপ নিয়ে আগ্রহী থাকে, সেরকম।“

“ওহ আচ্ছা…”

আকিও’র মনে আছে ওদের বাবাও এরকম আচরণ করতো মাঝে মাঝে। মা’র কাছ থেকে শুনেছিল। আর এখন মা নিজেই সেই ছোটবেলায় ফিরে গেছে।

“লিপস্টিক আর ফাউন্ডেশন নাগালের বাইরে রাখলেই ভালো।”

“ঠিক আছে। আমি ইয়াইকো’কে বলে দিব।”

“ধন্যবাদ। কিছু লাগলে আমাকে ফোন দিস।”

“আচ্ছা।”

বোনকে ফিরে যেতে দেখল আকিও। সামনে যে কাজটা করতে যাচ্ছে, সেজন্যে নিজের প্রতি প্রচণ্ড রকম ঘেন্না কাজ করছে আবারো।

ডাইনিং রুমে ফিরে স্ত্রী’কে সবকিছু খুলে বললো।

“এই কয়দিন মা’র দেখভাল আমরা করতে পারব শুনে কিছুটা অবাক হয়েছিল। কিন্তু রাজি করিয়েছি শেষ পর্যন্ত।“

“‘মেক-আপের ব্যাপারে কথা বলছিলে শুনছিলাম।”

“ওহ হ্যাঁ।” হারুমি মেক-আপ নিয়ে যা বলেছে তা ইয়াইকো’কে বললো

“মা যে ইদানিং স্টুপিডের মত এসব করছে, তা তো জানতাম না।”

স্ত্রী’র মুখে ‘স্টুপিড’ কথাটা শুনে আরো একবার ধাক্কা খেল আকিও, কিন্তু এই অবস্থায় রাগ করে কিছু বলাও সম্ভব নয়।

“নাওমি’ কে নিয়ে এসো।”

“তোমাকে তো বললাম।”

“পাঁচ মিনিটের মধ্যে ওকে এখানে দেখতে চাই আমি। ও কি বুঝতে পারছে ওর জন্যে কি করতে চলেছি আমরা? এরকম ত্যাগ স্বীকার কেউ কারো জন্যে করবে? ওর কানে ভালো মতন বিষয়টা ঢুকিয়ে দিতে চাই। তাছাড়া আমি আর তুমি যে সবসময় ওকে উল্টোপাল্টা কাজ করার পর বাঁচাব, তা-ও নয়। কি পেয়েছে আমাদের? যা বলছি শোনো, তুমি না গেলে আমি নিজে যাচ্ছি।”

আকিও উপরে যেতে উদ্যোত হলে ইয়াইকো ছুটে এসে থামাল ওকে। “দাঁড়াও! আমি নিয়ে আসছি। কিন্তু ভালো মত কথা বলবে। এমনিতেই অনেক ভয় পেয়েছে।”

“ভয় পাওয়াই উচিৎ। যাও নিয়ে এসো।”

“তুমি এখানে থাকো,” বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ইয়াইকো।

এই মুহূর্তে অ্যালকোহল দরকার আকিওর। গলা পর্যন্ত মদ গিলে পড়ে থাকতে পারলে ভালো হতো।

হারুমির দেয়া প্লাস্টিকের ব্যাগটা এখনো ধরে আছে ও। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডাইনিং রুম থেকে বেরিয়ে বামদিকে মায়ের ঘরের সামনে চলে এলো। পাল্লা সরিয়ে দেখল ওর দিকে পিঠ দিয়ে বসে আছে মাসায়ে।

‘মা’ বলে ডাকতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু ও জানে যে কোন সাড়া পাবে না। নিজের পরিচয় ভুলে গেছে সে। হারুমির কাছ থেকে শুনেছে মাঝে মাঝে মা চান বলে ডাকলে সাড়া দেয়। ছোটবেলায় নিশ্চয়ই এই নামেই ডাকা হতো তাকে। কিন্তু আকিও’র পক্ষে সেটাও সম্ভব না।

“স্যান্ডউইচ এনেছি আমি!

ঘুরে তাকালো মাসায়ে। ছেলেমানুষী একটা হাসি ফুটলো চেহারায়। সাথে সাথে আবারো অপরাধবোধ জেঁকে বসলো ওর মনে।

হামাগুড়ি দিয়ে সামনে এসে প্লাস্টিকের ব্যাগটা নিয়ে আবারো হামাগুড়ি দিয়ে ফিরে গেল মাসায়ে। প্লাস্টিকের ব্যাগটা থেকে একটা একটা করে জিনিসপত্র বের করে সার বেঁধে সামনে রাখল।

আকিও খেয়াল করলো সকালের সেই গ্লাভস এখনো পড়ে আছে মা। এই গ্লাভসে কি পেয়েছে সে, তা বুঝতে পারছে না ও। কিন্তু খুলে নিতে গেলেই হৈচৈ জুড়ে দিবে।

ঘর থেকে বেরিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল ও। অন্ধকার হলওয়ে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কিছুক্ষণ আগে স্ত্রী’কে বলা কথাটা মনে পড়লো- “আমাদের কি পেয়েছে ও?”

হঠাৎই আবেগের আতিশায্যে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লো আকিও। একই কথা কি ওর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য না?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *