রেড ফিঙ্গার – ১১

অধ্যায় ১১

প্রাথমিকভাবে নারিমা থানায় একত্রিত হয়েছে তদন্ত দলের সবাই। প্রথম মিটিংটা শুরু হলো দুপুর দু’টোর কিছুক্ষণ পর। টেবিলের একদম মাথার কাছে বসে থাকা এক সহকর্মীর দিকে আড়াল থেকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাতসুমিয়া। প্রায় দশ বছর পর তাকে দেখল ও। চেহারা বা শারীরিক গঠনে সেরকম কোন পরিবর্তন আসেনি। লম্বা সময় ধরে কেন্দো অনুশীলনের কারণে এমনটা হতে পারে। পিঠ একদম সোজা করে বসে আছে।

মাতসুমিয়াকে যখন এই কেসটার ব্যাপারে জানানো হলো, তখনই ওর মনে হয়েছিল এই সহকর্মীর সাথে দেখা হয়ে যেতে পারে। কিন্তু দেখাটা ঠিক কোন পরিস্থিতিতে হবে, তা ঠাওর করতে পারেনি ও। লোকটা হয়তো জানে যে মাতসুমিয়া পুলিশে চাকরি নিয়েছে, কিন্তু টোকিও মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তরে যে পোস্টিং হয়েছে সেটা খুব সম্ভবত জানা নেই।

মাতসুমিয়া আসার আগেই সে থানায় এসেছে বিধায় ওকে দেখেনি এখনো। সঠিক সময়েই শুরু হয়ে গেল মিটিংটা। শব পরীক্ষক জানিয়েছেন গত দিন বিকাল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা আটটার মধ্যবর্তী কোন একটা সময়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে ইউনাকে। গলায় শ্বাসরোধের চিহ্ন বাদে পুরো শরীরে আর কোন ক্ষত চিহ্ন নেই।

পাকস্থলী পরীক্ষা করে জানা গেছে মৃত্যুর আগে আইসক্রিম খেয়েছিল মেয়েটা। এই তথ্য থেকে বলা যায় সেই আইসক্রিমের দোকানটা থেকে ইউনাই আইসক্রিম কিনেছিল সেদিন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী পার্কটার পাশে বেশ গাড়ি রাখা ছিল বলে জানিয়েছে। অনেকেই জায়গাটা পার্কিং স্পেস হিসেবে ব্যবহার করে। তবে রাতের বেলা কেউ কোন গাড়ি দেখেনি।

খুনীর সাথে সম্পর্ক থাকতে পারে, এমন কিছু খুঁজে পায়নি পুলিশ। তবে ফরেনসিক টেকনিশিয়ানরা বেশ কিছু আগ্রোহদ্দীপক তথ্য দিয়েছে। ভিক্টিমের পোশাকে বেশ কিছু ঘাস খুঁজে পেয়েছে তারা, জাপানিজ জয়সিয়া জাতের। এখান থেকে অনুমান করা যায় ভিক্টিমের মৃতদেহ কোন একটা পর্যায়ে খুব বেশি যত্ন নেয়া হয় না এরকম কোন বাগানে রাখা ছিল। এছাড়াও ট্রিফলিয়াম রিপেনস (Trifolium repens) বা হোয়াইট ক্লোভার গাছের পাতা পাওয়া গেছে। টেকনিশিয়ানদের মতে জয়সিয়া ঘাসের মধ্যেই জন্মিয়েছে গাছটা।

কাসুগাইরা যে অ্যাপার্টমেন্টে থাকে সেখানে কোন বাগান নেই। ছোট্ট ইউনা সচরাচর যে পার্কটায় খেলত, সেখানকার গ্লাস ভিন্ন জাতের। গিঙ্কগো পার্কটায় ঘাস জন্মানোর মত কোন জায়গা নেই। আরেকটা উল্লেখযোগ্য তত্য জানিয়েছে ফরেনসিক টেকনিশিয়ানরা। মেয়েটার পায়ের মোজাতেও ঘাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু তাকে পার্কে যখন পাওয়া যায়, তখন তার দুই পায়েই স্নিকার্স ছিল।

বাচ্চারা মাঝে মাঝে ঘাসের মধ্যে খেলে, সেখানে শুয়েও থাকে। সেক্ষেত্রে জুতা খুলে ফেলাটা অস্বাভাবিক কিছ উনয়। কিন্তু গতকাল সকাল অবধি মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। আশপাশের সব উঠান একদম ভেজা থাকার কথা। তাই ওরকম পরিবেশে কারো জুতা খুলে খেলা বা ঘাসের মধ্যে শুয়ে থাকার কথা নয়। তাছাড়া ইউনার পায়ের স্নিকার্স জোড়ায় ফিতা আছে, সহজে খুলে আসবে না। সুতরাং, সে যে নিজ ইচ্ছায় ঘাসে শোয়নি, তা যে কেউ বুঝতে পারবে।

এক্ষেত্রে প্রথমেই মাথায় আসবে, মৃত্যুর পর হয়তো ঘাসের উপরে ফেলে রাখা হয়েছিল তাকে; জনবহুল কোন জায়গায় যা একদমই সম্ভব না। আশপাশের সবার নজরে পড়তো ব্যাপারটা। সুতরাং, কোন বাড়ির ভেতরে রাখা হয়েছিল তাকে। খুব সম্ভবত কারো উঠানে।

এই তথ্যগুলো জানতে খুব বেশি সময় লাগেনি বিধায় নারিমা থানার কর্মীরা আশপাশে কোন কোন বাড়িতে এরকম ঘাস আছে তা খুঁজতে বের হয়। জাপানিজ জয়সিয়া হচ্ছে গোটা জাপানে সবচেয়ে বেশি জন্মানো ঘাস; তাই সংখ্যাটা নেহায়েত কম নয়। আর অপরাধী যদি গাড়ি চালিয়ে অন্য কোথাও থেকে আসে, তাহলে তো কথাই নেই। সেক্ষেত্রে পুরো টোকিও’ই সম্ভাব্য অপরাধস্থল হতে পারে।

মিটিংয়ে সবাই রিপোর্ট জমা দিয়েছে। সেসব নিয়েই আলোচনা চলছে। মাতসুমিয়াকে অবাক করে দিয়ে সে যাকে এতক্ষণ লক্ষ্য করছিল, সে-ই কথা বলে উঠলো সবার প্রথমে।

“আমার নাম কাগা, নারিমা থানায় আছি। এই ডিস্ট্রিক্টের ১ থেকে ৭ নম্বর সেক্টরে মোট চব্বিশটা বাসায় এমন বাগান আছে যেখানে ঘাস জন্মে। সেগুলোর মধ্যে মোট তেরোটা বাগানের ঘাস জাপানিজ জয়সিয়া জাতের। তবে এই তথ্যটা পুরোপুরি ঠিক না-ও হতে পারে। যারা আমাকে তথ্যগুলো দিয়েছে তাদেরও ভুল হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বাকি এগারোটা বাড়ির ঘাস কোন জাতের তা এখনো আমরা জানি না। ভিক্টিমের ছবি সবাইকে দেখানো হয়েছে। তাদের মধ্যে ইউনাকে চিনতে পেরেছে কেবল তিনজন। কিন্তু গত কয়েকদিনে তাদের কারো সাথে দেখা হয়নি মেয়েটার।”

কাগার কথা শুনেই মাতসুমিয়া বুঝতে পারছে যে গিঙ্কগো পার্কে ইউনার মৃতদেহের সন্ধান পাওয়া মাত্র কাজে লেগে পড়েছিল সে।

এরপর অন্য তদন্ত কর্মকর্তারা যার যার রিপোর্ট পেশ করলো। কাগার রিপোর্টের সাথে মিলে গেল তাদের বেশিরভাগ তথ্য। কাজে লাগতে পারে, এরকম নতুন আর কিছু জানা যায়নি।

সবশেষে মেট্রোপলিটন পুলিশ চিফ সবার উদ্দেশ্যে বললো কি কি করতে হবে সামনে। সবাইকে কাজ ভাগ করে দেয়ার পর শেষ হলো মিটিং। এখন অবধি যে তথ্য উপাত্ত হাতে আছে, সেখান থেকে বলা যাচ্ছে না যে মেয়েটাকে আগে থেকে চিনত কিনা খুনী। ইউনাকে কোনো গাড়িতে করে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এই সম্ভাবনাও প্রবল। মৃতদেহ কাসুগাইদের বাড়ির কাছে পার্কে পাওয়া গেছে, তার মানে এই নয় যে খুনীও একই এলাকার। তার ঠিকানা অন্য কোথাও-ও হতে পারে। কিন্তু ইউনাকে পার্কের টয়লেটে রেখে যাওয়া ইঙ্গিত করছে সে এই এলাকা ভালো করেই চেনে, এই বিষয়ে সবাই মোটামুটি একমত।

মাতসুমিয়ার সেকশনের প্রধান, ইশিগাকি তার অধস্তন দুই অফিসারকে ডেকে কথা বললো কিছুক্ষণ। খানিক বাদে কাগাসহ স্থানীয় থানার অন্যান্য পুলিশ অফিসারদের সাথেও কথা বললো তিনজন। কি আলোচনা হচ্ছে সেটা জানতে ইচ্ছে করছে মাতসুমিয়ার, কিন্তু না ডাকলে যাওয়াটা অভদ্রতা।

আলোচনাপর্ব শেষে মাতসুমিয়াদের কাছে ফিরে এলো কোবায়াশি।

“গিঙ্কগো পার্কের আশপাশে তদন্তের দায়িত্ব আমাদের। কি করতে হবে, সেটা বুঝতেই পারছ নিশ্চয়ই? ঘটনার কোন প্রত্যক্ষদর্শী থাকলে তাকে খুঁজে বের করতে হবে। আর এটাও দেখতে হবে যে নিকট অতীতে পার্কে বা আশপাশে কারো সাথে ইউনার কোন সমস্যা হয়েছিল কিনা। ভিক্টিমের শরীরে যে ঘাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, তা আমাদের তদন্তে সাহায্য করবে। আর তোমাদের কারো চোখে যদি সন্দেহজনক কিছু পড়ে, অবশ্যই খতিয়ে দেখবে।”

কোবায়াশি সবাইকে যার যার কাজ বুঝিয়ে দিল। “তুমি ডিটেকটিভ কাগার সাথে কাজ করবে।”

নির্দেশটা শুনে অবাক না হয়ে পারল না মাতসুমিয়া। চেহারাতেও ছাপ পড়লো সেই বিস্ময়ের।

“তোমার কানে নিশ্চয়ই গেছে যে কাগা কতটা দক্ষ একজন ডিটেকটিভ? আমি বেশ কয়েকবার কাজ করেছি ওর সাথে। খুব যে সহজ হবে, তা বলবো না। কিন্তু কাজ করলে অনেক কিছু শিখতে পারবে।’

“হ্যাঁ, কিন্তু…”

“কি?” মাতসুমিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো কোবায়াশি।

“নাহ…কিছু না,” মাতসুমিয়া বলে।

“একসাথে কাজ করতে পারলে ভালোই লাগবে,” এসময় ওর পেছন থেকে বললো কেউ।

পেছনে ফিরে দেখে কাগা তাকিয়ে আছে ওর দিকে। চোখে ইঙ্গিতপূর্ণ দৃষ্টি। “আমারো ভালো লাগবে,” বললো মাতসুমিয়া।

কোবায়াশি আর অন্যান্যরা সরে গেল ওখান থেকে।

“অনেক দিন পর,” মাতসুমিয়া বলে।

“হ্যাঁ,” স্বভাবসুলভ ভাবালু কন্ঠে বলে কাগা। “লাঞ্চ করেছো?

“না, এখনো করিনি।”

“একসাথে করি তাহলে, চলো। ভালো একটা জায়গা চিনি আমি।”

থানা থেকে বের হয়ে স্টেশনে উল্টোদিকে অবস্থিত শপিং ডিস্ট্রিক্টের দিকে হাঁটতে শুরু করলো ওরা।

“কেমন লাগছে চাকরি?

“শিখছি আস্তে আস্তে। সেতাগায়া ডিস্ট্রিক্টে এক গৃহিনী খুন হওয়ার কেসে কাজ করেছি। ওখান থেকে নতুন কিছু বিষয় জানতে পেরেছি, ধীরে ধীরে মানিয়ে নিচ্ছি খুনের ঘটনাগুলোর সাথে।”

ইচ্ছে করেই এসব বললো মাতসুমিয়া যেন কাগা ওকে একদম নোভিস না ধরে নেয়।

মুচকি হাসল কাগা।

“কখনোই পুরোপুরি মানিয়ে নিতে পারবে না। বিশেষ করে তদন্ত করার সময়। ভিক্টিমের পরিবারের কান্না যদি কারো কাছে স্বাভাবিক মনে হয়, তাহলে তার সমস্যা আছে। আমি জানতে চাইছি, ডিটেকটিভের কাজের সাথে মানিয়ে নিতে পেরেছ কিনা। ইউনিফর্ম পরা আর না পরার মধ্যে একটা পাৰ্থক্য আছে, এটা নিশ্চয়ই বুঝে গেছ এতদিনে?“

“হ্যাঁ।”

“ভালো। যাইহোক, সময় যত যাবে, আরো উপভোগ করবে কাজ।”

মূল রাস্তা থেকে কিছুটা ভেতরে একটা ছোট রেস্তোরাঁয় ওকে নিয়ে এলো কাগা। দরজার কাছের টেবিলটায় বসলো দু’জনে। রেস্তোরাঁ মালিকের ব্যবহার দেখে মনে হচ্ছে এখানে সম্ভবত প্রায়ই আসে কাগা।

“‘এই রেস্তোরাঁর সব খাবার ভালো। গ্রিলড চিকেনের মেন্যুটা দেখতে পারো।”

“আচ্ছা,” মাতসুমিয়া বলে।

তবে শেষ পর্যন্ত মাছের একটা আইটেম নিল ও আর কাগা নিল জিঞ্জার গ্রিলড পর্ক!

“সকালে যখন শুনলাম আমাদের এখানে আসতে, তখনই ভেবেছিলাম তোমার সাথে দেখা হয়ে যাবে হয়তো।”

“বাহ।”

“আমাকে দেখে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছো?”

“খুব একটা না। তোমাকে দেখেই মনে পড়েছিল এখন কোথায় তোমার পোস্টিং।”

“আমি যে মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিপার্টমেন্টে, এটা আগে থেকে জানতে?”

“হ্যাঁ।”

“মামা বলেছে তোমাকে?”

“না। হেডকোয়ার্টারে কি হয় না হয় সেসব নিয়ে অনেক কানাঘুষো চলে স্থানীয় থানাগুলোয়।”

“ওহ।”

কাগার পোস্টিং একসময় মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিপার্টমেন্টে ছিল। এখনও নিশ্চয়ই পরিচিত কেউ না কেউ আছে ওখানে।

“আমাদের যে একসাথে কাজ করতে হবে, তা ভাবিনি। আমার বসের সাথে কথা হয়েছে তোমার?’

“না। কেন? একসাথে কাজ করলে কোন সমস্যা?“

“না, না। ওরকম কিছু না। একটু চিন্তা হচ্ছিল আরকি।”

“শোনো, তুমি চাইলে কোবায়াশির সাথে কথা বলতে পারি আমি।”

“বললাম তো, কোন সমস্যা নেই,” এবারে আগের তুলনায় তীক্ষ্ন স্বরে কথাটা বললো মাতসুমিয়া।

টেবিলের উপরে হাত রাখলো কাগা।

“আমরা যারা স্থানীয় থানায় আছি, তারা সবাই মেট্রোপলিটন পুলিশ থেকে যা যা নির্দেশ আসে, সেগুলো মেনে চলি কেবল। আমাদের একসাথে কাজ করা কাকতালীয় ব্যাপার বলতে পার বড়জোর। আর কিছু না।”

“সেরকম কিছু কিন্তু বলিনি। আমিও আমার বসের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করি। তাছাড়া কাজের সময় আমরা তো কাজিন না, সহকর্মী।”

“সেরকমটা হলেই ভালো,” নিস্পৃহ কন্ঠে বলে কাগা।

ওদের খাবার চলে এলো এসময়। দু’টো ডিশই দেখে দারুণ মনে হচ্ছে। বাসার বাইরে সাধারণত এরকম ভারি খাবার-দাবার কমই খায় মাতসুমিয়া। মা’র রান্নাই ভালো লাগে ওর। কিন্তু কাগা একা থাকে। বিয়েশাদি করেনি; করার ইচ্ছেও নেই। তাই এরকম খাবারের জন্যে রেস্তোরাঁই ভরসা তার, ভাবে মাতসুমিয়া।

“ফুপুর শরীর ভালো?” চপস্টিকস তুলে নিয়ে বলে কাগা।

বিস্মিত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায় মাতসুমিয়া। পরমুহূর্তেই চোখ নামিয়ে নেয়। যথাসম্ভব চেষ্টা করছে যেন ওর ব্যবহারে কোন প্রকার ছেলেমানুষী না প্রকাশ পায়। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বললো, “হ্যাঁ, ভালো আছে। এখনও আগের মতনই বেশি কথা বলে। তোমার সাথে দেখা হলে খোঁজখবর নিতে বলেছিল, কিন্তু সেটা অনেক আগের কথা। তাছাড়া আমিও জানতাম না কবে আমাদের দেখা হবে।”

“বুঝেছি।”

খেতে শুরু করলো মাতসুমিয়া। কিন্তু মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকা চিন্তাগুলো খাবারটা উপভোগ করতে দিচ্ছে না।

কাগারই খাওয়া শেষ হলো আগে। হাত মুছে পকেট থেকে ফোন বের করে একটা দেখল একবার।

“কয়েকদিন আগে মামার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম আমি,” মাতসুমিয়া বললো এসময়।

ফোন নামিয়ে রাখার আগ অবধি মুখ বন্ধ রাখলো কাগা। “ওহ, আচ্ছা,” এমন ভঙ্গিতে কথাটা বললো যেন এই বিষয়ে কোন আগ্রহ নেই।

হাতের চপস্টিকগুলো নামিয়ে রাখলো মাতসুমিয়া।

“তোমার নিজেরও যাওয়া উচিত। মামার শরীর এখন একদমই ভালো না। সত্যি বলতে, খুব বেশিদিন সময় আর নেই হাতে। আমি দেখতে গেলে বুঝতে দিতে চায় না, কিন্তু…“

জবাবে কিছু না বলে চায়ের কাপে চুমুক দিল কাগা।

“কিয়োচিরো…..

“তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করো। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে ভাল লাগবে না খেতে। আমাদের কাজও আছে এরপর।”

আবারো খাওয়ায় মনোযোগ দিল মাতসুমিয়া। পরিবারের ব্যাপারে আলাপ তো ও শুরু করেনি প্রথমে।

ওর খাওয়া প্রায় শেষ, এমন সময় ফোন বেজে উঠলো পকেটে। কোবায়াশি কল করেছে।

“ফরেনসিক টেকনিশিয়ানরা কিছু নতুন তথ্য দিয়েছে আমাদের। ভিক্টিমের কাপড়ে এক ধরণে সাদা ফাইবারের উপস্থিতি খুঁজে পেয়েছিল ওরা। ওটা কি সেটা জানা গেছে।”

“কি? “পলিস্টাইরিন।”

“ওহ…..” মাতসুমিয়া বলে। এই তথ্য জেনে কি লাভ হবে সেটা মাথায় ঢুকছে না ওর।

“বাসাবাড়ির জিনিসপত্র রাখার জন্যে সাধারণত পলিস্টাইরিনের বাক্স ব্যবহার করা হয়। টেকনিশিয়ানদের মতে ফাইবারগুলো ওরকম কোথাও থেকে এসেছে।”

“অৰ্থাৎ…”

“খুনী খুব সম্ভবত কার্ডবোর্ডের বাক্সতে করে বহন করে এনেছে ভিক্টিমকে, কোবায়াশি ব্যাখা করে বলে। “সেটায় পলিস্টাইরিন ছিল, যেটা ভিক্টিমের কাপড়ে লেগে গেছে।”

“বুঝতে পেরেছি।”

“আমরা এখন খুঁজে দেখব পার্কের আশপাশে ওরকম কোন বাক্স খুঁজে পাই কিনা। কে জানে, কাজ শেষে খুনী হয়তো ফেলে দিয়েছে ওটা। তবে সেই সম্ভাবনা কম, বাসাতেই হয়তো নিয়ে গেছে। তোমরা যখন ঘাসের ব্যাপারে তদন্ত করতে বাড়িতে বাড়িতে যাবে, এই বিষয়টা মাথায় রেখো।”

“ঠিক আছে,” বলে ফোন কেটে দিল মাতসুমিয়া। কাগাকে সব খুলে বললো। “খুব একটা লাভ হবে না,” শেষে যোগ করে দিল ও।

“মানে?”

“আমি যদি খুনি হতাম, তাহলে বাসা কাছে হলেও বাক্সটা বাড়িতে ফেরত নিয়ে যেতাম না। গাড়িতে করে নিয়ে দূরে কোথাও ফেলে আসতাম।”

কাগার চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে না ওর কথার সাথে একমত কিনা সে। থুতনি দুই হাতের উপরে রেখে ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *