রূপকথার কেলেঙ্কারি – বাদল সরকার
(প্রেমেন্দ্র মিত্রের গল্প অবলম্বনে)
কোরাস ১
কোরাস ২
কোরাস ৩
কোরাস ৪
কাগজওয়ালা
বজ্রকুমার
রাজা
মন্ত্রী
দূত
লোকটা
রাক্ষস
প্রথম দৃশ্য
[কাগজওয়ালা হাঁকতে হাঁকতে ছুটে এল। তার সব ‘স’-এর উচ্চারণ S-এর মতো]
কাগজওয়ালা। তেপান্তর তেপান্তর, দৈনিক তেপান্তর! আবার আবার বজ্রকুমার-আবার বজ্রকুমার-উত্তপ্ত সংবাদ-দৈনিক তেপান্তর-
[কোরাসের ৪ জন এসে পর পর কাগজ কিনে চারপাশে দাঁড়িয়ে পড়তে শুরু করলো]
১। দুঃস্বপ্ন রজনীর অবসান।
২। তাম্রপুরী বিভীষিকা মুক্ত।
৩। বজ্রকুমারের সপ্তম সাফল্য।
৪। তেপান্তরের বিশেষ সংবাদদাতা।
১। সুবর্ণপুর-
২। রজতনগর-
৩। মুক্তারাজ্য-
৪। হীরক দ্বীপ-
১। পান্নাদেশ-
২। মাণিক্যধাম-
৩। পর পর এই ছয়টি রাজ্যের
৪। কালান্তক বিভীষিকা-
১। ছয়টি ভয়ংকর নরখাদক রাক্ষসকে-
২। যমের দক্ষিণদ্বার প্রদর্শন করাইয়া-
৩। মহাবীর রাজপুত্র বজ্রকুমার-
৪। গতরাত্রে প্রচণ্ড সংগ্রামে-
১। আবার এক দুর্দান্ত রাক্ষসকে বধ করিয়া-
২। তাম্রপুরীকে রাহুমুক্ত করিলেন।
৩। বজ্রকুমারের ইহা সপ্তম রাক্ষস নিধন।
৪। প্রতিবারের মতো এবারও রাক্ষসের দেহ-
১। খড়্গাঘাতে খণ্ড খণ্ড হইয়া-
২। পৃথিবীর প্রান্তে সপ্তসমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হইয়াছে,-
৩। চিহ্নমাত্র অবশিষ্ট নাই।
৪। আছে শুধু বজ্রকুমারের খড়্গে রক্তের জয়তিলক।
কাগজওয়ালা। তেপান্তর তেপান্তর, দৈনিক তেপান্তর! -আবার, আবার বজ্রকুমার-
১। প্রতিদিন একটি করিয়া নধরকান্তি নাগরিককে-
২। এই হিংস্র রাক্ষসের জলযোগের জন্য প্রেরণের দাবির ফলে-
৩। গত তিন দিবসরাত্রি তাম্রপুরীর অধিবাসীদিগের-
৪। আহার নিদ্রা বন্ধপ্রায়।
১। কিন্তু বিচক্ষণ মন্ত্রী মহোদয়ের সুপরামর্শে-
২। মহামহিমান্বিত তাম্ররাজ অর্ধেক রাজত্ব ও রাজকন্যার প্রতিশ্রুতি দিয়া-
৩। বড়ো-রাক্ষসবিজয়ী রাজপুত্র বজ্রকুমারকে-
৪। ঝটিতি আমন্ত্রণ করিয়া-
১। যে দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়াছেন-
২। তাহার তুলনা নাই।
৩। পাঠকগণের স্মরণ থাকিতে পারে-
৪। বজ্রকুমার অর্ধেক রাজত্ব গ্রহণ করিলেও-
১। আজ পর্যন্ত কোনো ক্ষেত্রেই-
২। রাজকন্যার পাণিগ্রহণে সম্মত হন নাই।
৩। বরাবরই পরিবর্তে উপযুক্ত পরিমাণ-
৪। কাঞ্চনমূল্য গ্রহণ করিয়াছেন।
১। তাহার ফলে আজ বজ্রকুমার-
২। রূপকথার দেশে সর্বাপেক্ষা ঐশ্বর্যশালী রাজা-
৩। কিন্তু অদ্যাদপি অবিবাহিত।
৪। তাম্রপুরীর সমগ্র নাগরিক সম্প্রদায়-
১। পরম কৌতূহলে অপেক্ষা করিয়া আছেন-
২। এবারও কি বজ্রকুমার কাঞ্চনমূল্য দাবি করিবেন?
৩। না তাম্ররাজকন্যার পাণিগ্রহণ করিয়া-
৪। তাহার এতদিনের ব্রত ভঙ্গ করিবেন?
[কোরাস একজায়গায় জমা হল। কাগজওয়ালা নতুন কাগজের বান্ডিল নিয়ে বিক্রি শুরু করল]
কাগজওয়ালা। তেপান্তর তেপান্তর-বিশেষ সান্ধ্য সংস্করণ। বজ্রকুমারের সিদ্ধান্ত।
[সবাই ছুটে এসে কাগজ কিনে আবার চার কোণে দাঁড়াল]
১। বজ্রকুমারের ব্রত এবারও অক্ষুণ্ণ।
২। অর্ধেক রাজত্ব গ্রহণ। কিন্তু-
৩। রাজকন্যার পরিবর্তে আবার কাঞ্চণমূল্য।
৪। কাঞ্চনমূল্যের পরিমাণ সামান্য নহে,-
১। কিন্তু বজ্রকুমারের অসীম শৌর্য-
২। এবং তাম্রপুরীর রাহুমুক্তির তুলনায়-
৩। এ মূল্য অবশ্যই যথোপযুক্ত।
৪। অতএব রূপকথার রাজ্যের গণপ্রতিনিধি তেপান্তর-
১। বজ্রকুমারের এই বীরোচিত সিদ্ধান্তকে-
২। অকুণ্ঠ অভিনন্দন জানাইতেছে।
৩। আশা করি নিজ আদর্শে অটল থাকিয়া বজ্রকুমার-
৪। আরও বহু রাজ্যকে রাক্ষস হইতে রক্ষা করিবেন।
[সবাই কাগজ ফেলে ঊর্ধ্ববাহু হয়ে ধ্বনি দিতে লাগলো]
কোরাস। জয় বজ্রকুমারের জয়! বজ্রকুমার-যুগ যুগ জিয়ো!
[বলতে বলতে বেরিয়ে গেল]
কাগজওয়ালা। নমস্কার স্যার। আপনারা এইসব সংস্কৃতমার্কা শুদ্ধ ভাষা শুনে ঘেবড়ে গেছেন তো? কিছু মনে করবেন না স্যার, রূপকথার ভাষাটা একটু খটোমটো হতে হয়, নইলে রূপকথার সুগন্ধটা ঠিক ছাড়ে না। আমি স্যার ও সব বুঝি না তবু ‘সান্ধ্য সংস্করণ’, ‘উত্তপ্ত সংবাদ’ এসব হাঁকতে হয়, নইলে সবাই কাগজ না কিনে ফুটে যায়। সে যাই হোক, ভাষাটা শক্ত হলেও মোদ্দা কথাটা বুঝেছেন বোধ হয়? মানে-রূপকথার দেশে মধ্যে মধ্যে রাক্কোস-খোক্কোস দত্যি-দানা আসে। রোজ একটা করে মোটাসোটা নধর মানুষ তার চাই, নাহলে রাজ্য সুদ্ধ দেবে পেটে পুরে। তখন রাজা ঘোষণা করেন, ঘোষণা বুঝলেন না? ডিক্লেয়ার আর কি? রাজা ডিক্লেয়ার করেন-যে রাক্কোস মেরে দেশোদ্ধার করবে, তাকে অদ্দেক রাজত্বি আর রাজকন্যে-আজ্ঞে হ্যাঁ স্যার, ও রাক্কোস যে দেশে আসবে, রাজকন্যে সে দেশে একটা থাকবেই-তাই নিয়ম। তারপর সারি সারি রাজপুত্তুর আসবে। তলোয়ার এঁটে পাহাড় ভেঙে রাক্কোসের গর্তে যাবে। আর রাক্কোস তাকে সাঁটিয়ে ঢেঁকুর তুলবে। তারপর আসবে হিরো রাজপুত্তুর-ব্যস! রাক্কোস খতম, রাজকন্যের বে, সানাই, পোলাও-কালিয়া, ধুমধাম, অদ্দেক রাজত্বি, সুখশান্তি ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব তো আপনাদের জানা। কিন্তু আমাদের এই গুরু রাজকুমার-ইনি খাঁড়া হাতে রাক্কোস মেরে চলেছেন আজ এক বছরের ওপর, সাত রাজ্যে সাতটা হল আজ পর্যন্ত, কিন্তু বিয়ে করবার নামটি নেই। প্রথম যখন সুবর্ণপুরে বলল-রাজকন্যা চাইনে, তার বদলে নগদ। রাজ্যসুদ্ধ ভেবেই পায় না-হাসবে না কাঁদবে না ইনসল্ট হবে। এ কী বিদঘুটে বায়না রে বাবা? তখন আমাদের কাগজ এই তেপান্তর-আমাদের মানে আমি অবিশ্যি শুধু বেচি কমিশনে-এই তেপান্তর তখন গরম সম্পাদকীয় ছাড়ল-দেশের কল্যাণব্রত, মহান আদর্শ, ব্রহ্মচারী বীর-এমনি সব বাঘা বাঘা কথা! দেশসুদ্ধু তখন বলল-ঠিক ঠিক! আর আজ তাই দেখুন-সুবর্ণপুর, রজতনগর, মুক্তারাজ্য, হীরকদ্বীপ, পান্নাদেশ, মাণিক্যধাম, তাম্রপুরী-সব রাজ্যের রাজকন্যে আইবুড়ো বসে আছে, আর বজ্রকুমার জমিদারি আর নগদে ফুলে ফেঁপে শাহেনশা! একবার ভেবে দেখুন স্যার-সাত অদ্দেকে সাড়ে তিন রাজ্য, তার ওপর কাঞ্চনমূল্য-সে হিসেব নেই গুরু-কমপক্ষে সাত লটারির ফাস্ট প্রাইজ! এই তো শুনলেন তাম্রপুরীর কথা? সবে এক মাসও যায়নি, আবার শুনুন- (ছুটে গিয়ে ফের কাগজ বিক্রি শুরু করল) তেপান্তর তেপান্তর দৈনিক তেপান্তর-লৌহগড়ে রাক্ষসের হানা -প্রতিদিন মানুষ ভক্ষণের দাবি। রাজার ঘোষণা-অর্ধেক রাজত্ব আর রাজকন্যা পুষ্পবতী-সুন্দরী সুশিক্ষিতা সুগায়িকা রাজকর্মনিপুণা রাজকন্যা পুষ্পবতী-তেপান্তরে ছবি পাবেন স্যার-তেপান্তর দৈনিক তেপান্তর-(দর্শকদের) আজ্ঞে হ্যাঁ স্যার, আমি এখন লৌহগড়ে কাগজ বেচছি। রূপকথার দেশে এমন হয়-(আবার চিৎকার) তেপান্তর তেপান্তর-উত্তপ্ত সংবাদ।
[কোরাস ৪ জন এসে কাগজ কিনে দাঁড়িয়ে গেল]
১। আবার রাক্ষস-
২। এবার লৌহগড়!
৩। এবারও কি বজ্রকুমার?
৪। এবারও কি সফল অভিযান?
[ওরা মাঝখানে এসে নীরবে আলোচনা করছে। কাগজওয়ালা নতুন কাগজ নিয়ে হাঁকল]
কাগজওয়ালা। তেপান্তর তেপান্তর-উত্তপ্ত সংবাদ-বজ্রকুমার!
[সবাই কিনল]
কোরাস। বজ্রকুমার আসিবেন। বজ্রকুমার আসিতেছেন। বজ্রকুমার আসিয়াছেন।
[বজ্রকুমারের বীরোচিত প্রবেশ]
জয়, গুরু বজ্রকুমারের জয়! গুরু বজ্র-যুগ যুগ জিয়ো!
[বীর পরিক্রমায় রাজকুমার নিষ্ক্রান্ত হলেন। পেছনে কোরাস ও কাগজওয়ালা। ঘোষক এল]
ঘোষক। লৌহগড়-অধীশ্বর রাজাধিরাজ কন্দর্পকান্তি লৌহবর্মা-আ-আ-আ।
[বৃদ্ধ রাজা তস্য মন্ত্রীর সপারিষদ প্রবেশ]
রাজা। মন্ত্রী, রাক্ষসের সপ্তমদিবসের সময়সীমা কি উত্তীর্ণ?
মন্ত্রী। (ক্লান্তভাবে) আজই সপ্তম দিবস মহারাজ। এই নিয়ে সপ্তদশবার রাজকর্ণে নিবেদন করলাম।
রাজা। হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক। ইয়ে-বজ্রকুমার কি আগত?
মন্ত্রী। বজ্রকুমার আগত এবং রাক্ষস ধ্বংসের চেষ্টায় বহির্গত-মহারাজ কি আবার সে কথা বিস্মৃত হলেন?
রাজা। হ্যাঁ হ্যাঁ বলেছিলে বটে। তা, কীরূপ বোধ হয় মন্ত্রী? বজ্রকুমার কি সাফল্যমণ্ডিত হবে?
মন্ত্রী। সমস্ত দেশবাসীর সেইরূপ আশা। মহারাজা কি জয়ধ্বনি শোনেননি? আমার তো কর্ণপটহ বিদীর্ণ প্রায়।
রাজা। কিন্তু, মন্ত্রী-
মন্ত্রী। আদেশ করুন মহারাজ।
রাজা। পুষ্পবতীর মাতা বলছিলেন-নাঃ থাক। ঘরের কথা সর্বসমক্ষে আলোচনা সমীচীন নয়।
মন্ত্রী। যথার্থ বলেছেন মহারাজ। (দর্শকদের) রাজ্যসুদ্ধ জানে- রানিমা বজ্রকুমারকে জামাতা করতে উন্মুখ হয়ে উঠেছেন, আর ইনি এখন বলছেন-‘সর্বসমক্ষে আলোচনা সমীচীন নয়!’
রাজা। মন্ত্রী, কিছু নিবেদন করছ কি?
মন্ত্রী। না মহারাজ, একটা হিসাব করছিলাম।
রাজা। কী হিসাব?
মন্ত্রী। বজ্রকুমারের কাঞ্চনমূল্য বাদ গেলে, আমাদের অর্ধেক রাজত্বের আর্থিক অবস্থা কীরূপ দাঁড়াবে,-তাই।
রাজা। কাঞ্চনমূল্য কেন? আমার তো মনে হয়, পুষ্পবতীকে স্বচক্ষে দেখলে বজ্রকুমার বিবাহ করতে অনিচ্ছুক হবেন না। তোমার কী মত?
মন্ত্রী। আমার মতে মহারাজ-সে গুড়ে বালুকা। পর পর সাতবার তো দেখলাম।
রাজা। সাতবার যা হয়েছে, অষ্টমবারেও যে তাই হবে তা কে বলতে পারে?
মন্ত্রী। যথার্থ বলেছেন মহারাজ। এবারে বজ্রকুমারের সমাপ্তি রাক্ষসের পাকস্থলীতেও হতে পারে।
রাজা। মন্ত্রী, তুমি বিচক্ষণ এবং কর্মপটু, কিন্তু বড়োই নিরাশাবাদী এবং বেশ কিছুটা দুর্মুখ। এতটা আগে ছিলে না।
মন্ত্রী। মার্জনা করবেন মহারাজ। প্রবল দুশ্চিন্তায় এইরূপ হচ্ছে।
রাজা। অবশ্যই। এই রাক্ষসের ভীষণ প্রস্তাবে দুশ্চিন্তা না হয়ে পারে না, কিন্তু তাই বলে-
মন্ত্রী। দুশ্চিন্তা সে কারণে নয় মহারাজ।
রাজা। তবে?
মন্ত্রী। আগের সাতটি রাজ্যই বজ্রকুমারের প্রাপ্য মেটাবার পর মন্ত্রীদের বেতন কমাতে বাধ্য হয়েছে।
[দূতের প্রবেশ]
দূত। মহারাজের জয় হোক।
রাজা। কী সংবাদ দূত?
দূত। মহারাজ। আমি পাহাড়ের নীচে ছিলাম।
রাজা। হ্যাঁ হ্যাঁ বলো বলো।
দূত। বজ্রকুমার পাহাড় থেকে নেমে আসছেন। হাতে রক্ত মাখা খড়্গ।
রাজা। (উল্লাসে) ধন্য বজ্রকুমার! দূত, তোমার প্রদত্ত সুসংবাদে আমার মন ভারমুক্ত। হৃদয় উল্লসিত- (গলা থেকে হার খুললেন)
মন্ত্রী। (হার চেপে ধরে) করেন কী মহারাজ! রাজত্ব অর্ধেক গেলে এ মণিহারের দাম দ্বিগুণ, তদুপরি কাঞ্চনমূল্য বেরিয়ে গেলে তিনগুণ।-দূত, তোমার সংবাদে অতীব প্রীত হয়ে মহারাজ পঞ্চ রৌপ্যমুদ্রা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। কাল দ্বিপ্রহরে কোষাধ্যক্ষের কাছে গেলেই পেয়ে যাবে। নগদ পাবে ডিউ স্লিপ নয়।
দূত। (হতাশায়) মহারাজের জয় হোক!
[প্রস্থান]
রাজা। ওরে তোরা শঙ্খধ্বনি কর! জয়ধ্বনি কর! চলো মন্ত্রী, বীরের অভ্যর্থনায় সদলবলে অগ্রসর হই। ওরে কে আছিস, রানিকে বল পুষ্পবতীকে নিয়ে আমাদের সঙ্গে আসতে-
মন্ত্রী। মহারাজ, আমার মতে রাজকন্যাকে না নিয়ে কোষাধ্যক্ষকে সঙ্গে নেওয়াই অধিকতর সমীচীন।
রাজা। মন্ত্রী, তোমার নিরাশাবাদ নিপাত যাক! কোষাধ্যক্ষকে নিতে চাও নাও, কিন্তু পুষ্পবতী যাবেই।
মন্ত্রী। যথা আজ্ঞা মহারাজ।
[ওদের প্রস্থান। কোরাসের প্রবেশ]
কোরাস। বজ্রকুমার-যুগ যুগ জিয়ো! জয়, গুরু বজ্রকুমারের-জয়। অষ্টম রাক্ষস বিজয়ী বজ্রকুমার-যুগ যুগ জিয়ো!
[কাগজওয়ালার প্রবেশ]
কাগজওয়ালা। তেপান্তর, দৈনিক তেপান্তর-অতি উত্তপ্ত সংবাদ। বিনা মেঘে বজ্রপাত!
[সবাই কিনল]
১। একী!
২/৩/৪। একী!
১। বিনা মেঘে বজ্রপাত!
২। রাজকন্যা দর্শনে ব্রহ্মচারী বজ্রকুমারের ব্রত ভঙ্গ!
৩। কাঞ্চন নহে-পুষ্পবতী!
৪। অষ্টম দিবসে বিবাহ স্থির!
কোরাস। বজ্র-পুষ্প-যুগ যুগ জিয়ো!
[ধ্বনি দিতে দিতে বেরিয়ে গেল]
কাগজওয়ালা। দেখলেন স্যার? হেডিং পড়েই সবাই নেচে উঠল! সম্পাদকীয়তে কী লিখেছে একবার উলটে দেখল না। এই হল দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতির নমুনা। আমি স্যার কাগজ বেচে খাই। কিন্তু সম্পাদকীয় না পড়ে রাস্তায় নামি না। এই শুনুন স্যার কী লিখেছে-‘বজ্রকুমার বিবাহ করিতেছেন, সুখের কথা। কিন্তু দেশের কল্যাণ যাঁহার ব্রত, তাঁহার আদর্শ আরও কঠোর হওয়া উচিত নয় কি? বজ্রকুমারের ন্যায় রূপকথার দেশের এমন অসাধারণ বীর যদি আর পাঁচজনের মতো নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যকেই বড়ো করিয়া দেখেন, তবে তাঁহার নিকট হইতে দেশ আর কী আশা করিতে পারে?” -ইত্যাদি ইত্যাদি কী গরম কথা। সেসব কিছু দেখল না। বিয়ের নাম শুনেই মেয়ে মানুষের মতো হুমড়ি খেয়ে পড়ল। যা ব্যাটারা, এক-একটা শাঁখ নিয়ে দাঁড়িয়ে যা!
[কোরাসের প্রবেশ]
কোরাস। বজ্র-পুষ্প-যুগ যুগ জিয়ো!
কাগজওয়ালা। তেপান্তর তেপান্তর-বজ্রকুমারের মত অপরিবর্তিত-বিবাহের ছয় দিন বাকি।
কোরাস। বজ্র-পুষ্প-যুগ যুগ জিয়ো!
কাগজওয়ালা। তেপান্তর তেপান্তর-বজ্রকুমারের দুর্বলতা অটুট-পাঁচদিন বাকি।
কোরাস। (স্বর দুর্বল হয়ে আসছে) বজ্র-পুষ্প-যুগ যুগ জিয়ো!
কাগজওয়ালা। তেপান্তর তেপান্তর-বজ্রকুমার আজও মোহাচ্ছন্ন-চারদিন বাকি।
কোরাস। (গলা আরও নীচে) বজ্র-পুষ্প-যুগ যুগ জিয়ো!
কাগজওয়ালা। (প্রচণ্ড হেঁকে) তেপান্তর তেপান্তর! বজ্রকুমারের বুজরুকি। রূপকথার দেশে দুর্নীতি। বজ্রকুমারের সকল কীর্তি ফাঁস। তেপান্তর-উত্তপ্ত অতি উত্তপ্ত সংবাদ।
[সবাই কিনল]
১। রূপকথার দেশের অনেক রাজ্যেই তো বজ্রকুমার রাক্ষস মারিয়াছেন বলিয়া শুনা যায়।
২। কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি রাক্ষসের মৃতদেহ কেহ দেখিয়াছেন কি?
৩। সেই পর্বত প্রমাণ লাশ যখন প্রতিবারই অনুপস্থিত-
৪। তখন বজ্রকুমারের কীর্তি বিশ্বাস করা কি সম্ভব?
কোরাস। (পরস্পরকে ফিসফিস করে) রাক্ষস-লাশ-বজ্রকুমার-বুজরুকি-রাক্ষস-লাশ-বজ্রকুমার-বুজরুকি-
[ঙ্মকোরাসের প্রস্থান
কাগজওয়ালা। দেখেছেন স্যার? তেপান্তর গোড়া থেকে আঁচ করেছে। সম্পাদকীয় তো পড়বে না!
[প্রস্থান]
[রাজা ও মন্ত্রীর প্রবেশ]
রাজা। প্রাচীরপত্র?
মন্ত্রী। হ্যাঁ মহারাজ।
রাজা। জনসভা?
মন্ত্রী। হ্যাঁ মহারাজ!
রাজা। শোভাযাত্রা?
মন্ত্রী। হ্যাঁ মহারাজ।
রাজা। সব বজ্রকুমারের বিরুদ্ধে?
মন্ত্রী। বিরুদ্ধে কি পক্ষে তা জানি না মহারাজ। তবে প্রত্যেকটিতেই দাবি রাক্ষসের লাশ দেখতে চাই।
রাজা। আর এ সমস্ত হচ্ছে ওই নূতন পত্রিকা ‘তেপান্তর’টার প্ররোচনায়?
মন্ত্রী। নিঃসন্দেহে মহারাজ।
[কোরাসের প্রবেশ]
কোরাস। রাক্ষসের লাশ-কোথায় গেল? বজ্রকুমার জবাব দাও! বজ্রকুমারের রাক্ষসবধের-প্রমাণ চাই!
[প্রস্থান]
রাজা। (হুংকারে) বন্ধ করো সব! নগরপাল কোথায়? সেনাপতি কোথায়? জরুরি অবস্থা ঘোষণা করো! নিরাপত্তা আইনে বন্দি করো!
মন্ত্রী। মহারাজ, গণতন্ত্র বলবত, অনেক প্রশ্ন উঠে পড়বে-সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, জনসভার অধিকার ইত্যাদি।
রাজা। গণতন্ত্র? রাজপরিবার অপদস্থ হলে গণতন্ত্র রেখে কী হবে?
মন্ত্রী। মহারাজ, রাজপরিবারের সুরক্ষার জন্যই গণতন্ত্র প্রয়োজন। এটা পরীক্ষিত সত্য। অধীর হয়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনবেন না।
রাজা। তবে উপায়? তদন্ত কমিশন?
মন্ত্রী। মহারাজ, অপরাধ ক্ষমা করবেন। পর পর খান দশেক তদন্ত কমিশনের নমুনা দেখে দেশবাসী এখন কথাটা শুনেই হাসে। যদি বা না হাসে তেপান্তর হাসিয়ে ছাড়বে।
রাজা। তাহলে?
মন্ত্রী। আমার মতে মহারাজ, প্রকাশ্য বিচার ছাড়া উপায় নেই। নইলে রাজপরিবারের ভাবমূর্তি বজায় থাকে না।
রাজা। প্রকাশ্য বিচার? রাজসভায় রাজ-জামাতার অপমান?
মন্ত্রী। মহারাজ, জামাতা হতে এখনও দু-দিন বাকি।
রাজা। না না অসম্ভব। তা ছাড়া-(থেমে গেলেন)
মন্ত্রী। আদেশ করুন মহারাজ।
রাজা। বজ্রকুমারের বীরত্ব, ঐশ্বর্য এবং প্রতিপত্তির কথাটা ভেবে দেখেছ? কৈফিয়ত চাইলে কী করে বসবে বলা যায়?
মন্ত্রী। এটাই আসল ভয় মহারাজ। আমাদের কৈফিয়ত চাওয়া দূরের কথা, পত্রিকা পড়ে অথবা প্রাচীরপত্র দেখে তিনিই এসে আমাদের কৈফিয়ত চেয়ে না বসেন?
[প্রহরীর প্রবেশ]
প্রহরী। মহারাজের জয় হোক!
রাজা। কী সংবাদ প্রহরী?
প্রহরী। রাজপুত্র বজ্রকুমার মহারাজের দর্শনপ্রার্থী।
মন্ত্রী। সর্বনাশ!
রাজা। কৈফিয়ত!
প্রহরী। (বিস্মিত) মহারাজ?
রাজা। কিছু না। সসম্মানে নিয়ে এসো।
[প্রহরীর প্রস্থান]
রাজা। কী হবে মন্ত্রী?
মন্ত্রী। দ্রুত চিন্তা করছি মহারাজ।
রাজা। মনে হচ্ছে কাঞ্চনমূল্যই ছিল ভালো! মন্ত্রী, চিন্তা দ্রুততর করো।
মন্ত্রী। হ্যাঁ মহারাজ।
রাজা। কিছু পেলে?
মন্ত্রী। কী মহারাজ?
রাজা। কী আবার? কৈফিয়ত। যা চাইতে আসছে।
মন্ত্রী। চেষ্টা করছি মহারাজ।
রাজা। আর চেষ্টা বৃথা। ওই দেখো বজ্রকুমার আগত।
[বজ্রকুমারের প্রবেশ]
বজ্র। মহারাজ, আমি বিচার চাই।
মন্ত্রী। বিচার!
রাজা। কৈফিয়ত নয়?
বজ্র। কী বললেন মহারাজ?
মন্ত্রী। ইয়ে-কীসের বিচার কুমার?
বজ্র। আমার নিজের বিচার। শুনছি আমার রাক্ষস বধের ব্যাপারটা বুজরুকি বলে কথা উঠেছে। তারই বিচার চাই আমি।
মন্ত্রী। আরে রামঃ, ওসব কথা আবার ধর্তব্য? আপনি রাক্ষস মারেননি তো মারল কে? তবে কিনা-
বজ্র। সেই ‘তবে কিনা’-র জন্যই আমার বিচার চাই। সকলের মাঝে খোলা সভায় আমার বিচারের ব্যবস্থা করুন।
[প্রস্থান]
রাজা। মন্ত্রী?
মন্ত্রী। শুভসংবাদ মহারাজ। বজ্রকুমারই বাঁচালেন আমাদের।
রাজা। তবে বিচার সভা ডাকো কাল।
মন্ত্রী। যথা আজ্ঞা মহারাজ।
রাজা। কোনো গণ্ডগোল হবে না তো?
মন্ত্রী। হলে তখন দেখা যাবে। আপাতত রাজ্যের এই গণতান্ত্রিক গণ্ডগোলটা থেকে তো বাঁচি।
[দুজনের স্থান পরিবর্তন। কাগজওয়ালার প্রবেশ]
কাগজওয়ালা। তেপান্তর তেপান্তর-বজ্রকুমারের বিচার-তেপান্তর তেপান্তর-উত্তপ্ত সংবাদ।
[কোরাস এবং অন্যান্যদের প্রবেশ ও স্থান গ্রহণ। বজ্রকুমারও আছেন]
মন্ত্রী। মহারাজ, সেনাপতি, নগরপাল, সভাসদমণ্ডলী ও উপস্থিত জনসাধারণ। রাজ্যে একটা গুজব রাষ্ট্র হয়েছে-বজ্রকুমার নাকি রাক্ষস বধ করেননি। ফাঁকি দিয়ে রাজত্ব ও কাঞ্চনমূল্য আদায় করেছেন। সবাইকার মত এরকম নয়। তবু, রাক্ষসগুলোর লাশ যখন পাওয়া যাচ্ছে না, তখন বজ্রকুমারের কাছ থেকে এ বিষয়ে কিছু শুনতে পেলে ভালো হয়।
বজ্র। মন্ত্রীমশায় গুজব যা রটেছে তা মিথ্যে নয়। (সভায় চাপা গুঞ্জন, বজ্রকুমার ইঙ্গিতে থামালেন) কিন্তু আমার অপরাধের শাস্তি নেবার আগে দুজন সাক্ষী আমি ডাকতে চাই ব্যাপারটা পরিষ্কার করবার জন্য। আমার প্রথম সাক্ষী-
[হাততালি। রাক্ষসের প্রবেশ। ভদ্রস্থ চেহারা]
জনতা। (সভয়ে) রাক্ষস!
বজ্র। হ্যাঁ রাক্ষস স্বয়ং। ভয় পাবেন না। এ শুধু সাক্ষ্য দেবে, কোনো কিছু ভোজন করবে না। মন্ত্রীমশাই সাক্ষ্য গ্রহণ করতে আজ্ঞা হয়।
মন্ত্রী। সা সা সা স সাক্ষী-
রাক্ষস। (হঠাৎ হাউমাউ করে কেঁদে উঠে) দোহাই ধর্মাবতার, আমি নেহাত মুখ্যুসুখ্যু সাদাসিধে রাক্ষস রাক্ষসকুলের সাবেকি সনদের জোরে পুরুষানুক্রমে রূপকথার দেশে একটু-আধটু উপদ্রব করে আসছি। দুষ্টু লোকের কুপরামর্শে আজ আমার এই দুর্দশা। আমার অপরাধ ক্ষমা করুন ধর্মাবতার, ক্ষমা করুন।
মন্ত্রী। (সাহস সঞ্চয় করে) ইয়ে-হুম, কান্না থামাও! লজ্জা করে না কাঁদতে? বুড়ো ধাড়ি হয়ে মরবার বয়স হল!
রাক্ষস। (চোখ মুছে) আজ্ঞে সেই দুঃখেই তো কাঁদি। রাক্ষসকুলে আমার মতো হতভাগা আর কেউ নেই। কোথায় বয়সকালে বাপ-পিতেম’র নাম রেখে রাজপুত্রের খাঁড়ায় মারা যাব, না, লোকের কুপরামর্শ শুনে লোভে পড়ে বুড়ো হবার জ্বালা ভোগ করছি। কেন যে আমার দুর্মতি হয়েছিল-
মন্ত্রী। কী জ্বালা, তবু কাঁদে! আরে কে তোমায় কুপরামর্শ দিয়েছিল শুনি?
রাক্ষস। তার নাম জানি না ধর্মাবতার। তবে গন্ধটা চিনি। সে গন্ধটা যেন এখানেও পাচ্ছি।
[রাক্ষস এদিক-ওদিক দেখে এবং শুঁকে একদিকে আঙুল তুলতেই দেখা গেল একজন পালাচ্ছে। বজ্রকুমার একলাফে গিয়ে তার কবজি চেপে ধরলেন]
বজ্র। এই আমার দ্বিতীয় সাক্ষী মহারাজ। তেপান্তর পত্রিকার মালিক এবং সম্পাদক।
লোকটা। এই ভালো হোবে না বোলছি-ছোড়ে দাও। মিছিমিছি নাকাল কোরলে, কেস হোবে। তেপান্তরেভি এমন লেখা লিখবো-
মন্ত্রী। তেপান্তরের সব লেখা কি আপনিই লেখেন?
লোকটা। হামি কেনো লিখবো? হামি কি কেরানি আছি? হামি বুদ্ধি দিয়ে লিখিয়ে লি। ভালো তনখা দিয়ে ভালো ভালো লিখিয়ে রাখি।
মন্ত্রী। বেশ বেশ। আপনার নাম?
লোকটা। কুবেররাম ফাটকাবাজারিয়া।
মন্ত্রী। ফাটকাবাজারিয়া? এ তো রূপকথার নাম নয়? রূপকথার দেশে কেমন করে এলেন?
কুবের। কেনো? রূপকথায় কি হামাদের মানা আছে? হামিলোগ কুথায় নাই? আজকাল ফিলম বানাই। কোতো পৌরাণিক গল্প পটাপট কাটিয়ে বদল করিয়ে দিই। পার্টি বানাই, বিপ্লব বানাই, থিয়েটার বানাই, মন্দির ভি বানাই। রূপকথায় কেনো আসব না?
মন্ত্রী। কিন্তু কুপরামর্শ দিয়ে এরাজ্যের ধারা বিগড়ে দেবার অধিকার তো আপনার নেই!
কুবের। (চটে) কুপোরামোর্শো? হ্যাঁ আখুন তো কুপোরামোর্শো বোলবেই। কুথায় থাকতো এতোদিন ওই হাবা রাক্ষস? কোন রাজপুত্রের খাঁড়ার ঘায়ে কোবে কাবার হয়ে যেতো। এমোন সাজগোজ করিয়ে রাজসভায় আসতে হোতো না। আর ওই রাজপুত্র বজ্রকুমার? তারই বা কী দোশা হোতো? হজম হইয়ে যেতো, নয়তো বড়জোর একটা রাক্ষস মেরে একরত্তি রাজ্যের আধি আর রাজকন্যা লিয়ে খুশি থাকতে হোতো চিরদিন। এই যে এতো বড়ো জমিদারি-সাত আধা সাড়ে তিন রাজ্য, তার উপর এতো নগদ সোনা-চাঁদি ইসব কার দৌলতে? রাক্ষোসের সঙ্গে রফা করে দেশে দেশে তাকে মারবার বুদ্ধি কে দিয়েছে? এই কুবেররাম?! তার বদলে কুবেররাম কী লিয়েছে? খালি ছে আনা বখরা। আজ নিজের আহাম্মকিতে এমোন লাভের ব্যওসা নষ্ট করিয়ে দিলো। রাজকন্যা দেখে মাথা ঘুরিয়ে গেলো। বিয়ের নামে খেপিয়ে উঠলো। তাই তেপান্তরকে ভি উলটো লিখতে হোলো। নইলে এ মকদ্দমা উঠতো? আর আপনি বোলছেন কুপোরামোর্শো! (বজ্রকে) বলি এখুনকার এই আহাম্মকিটা কার পোরামোর্শে কোরলে তুমি, সিটা বোলবে?
বজ্র। আমার বিবেকের।
কুবের। বিবেকরাম? সে বেওসার কী জানে? হামি নাম ভি শুনে নাই। কুথায় গদি তার?
মন্ত্রী। তার গদির ঠিকানা জেনে আপনার লাভ নেই-কুবেররামজি। আপনার ব্যবসা-বুদ্ধির কাছে সে দাঁড়াতে পারবে না। আপনি শূন্যকে সোনা করতে পারেন।
কুবের। (খুশি হয়ে) এই দেখো। মন্ত্রী ভি বোলছে! আর তুমি কিনা-
মন্ত্রী। কিন্তু কুবেররামজি, রূপকথার রাজ্য এখনও আপনার কদর বুঝবার উপযুক্ত হয়নি। অতএব আপনাকে নির্বাসন দণ্ডই দিতে হবে।
কুবের। হাঁ হাঁ, খুশিসে যাবে হামি। ই-রাজ্যে আউর মার্কিট কুথা?
বজ্র। কোন রাজ্যে যাবে এবার কুবেররাম?
কুবের। বাংলা মুলুক। বহুত আচ্ছা মার্কিট। চাওল তেল বেবিফুড পারমিটসে লেকর ফুটপাথকা দুকান! রাম রাম রাজামশাই। রাম রাম মন্ত্রীজি।
[প্রস্থান]
বজ্র। এবার আমার বিচার মহারাজ।
রাজা। মন্ত্রী?
মন্ত্রী। মহারাজ, বজ্রকুমার রাক্ষস মারুন না মারুন, প্রতি রাজ্যকে রাক্ষসের উৎপাত থেকে বাঁচিয়েছেন-এ কথা তো সত্য।
রাজা। অবশ্যই। এবং অর্ধেক রাজত্ব আর কাঞ্চনমূল্যও সেই হেতু ওর প্রাপ্য ছিল। আমার কাছ থেকেও প্রাপ্য।
মন্ত্রী। কুমার, রাজকন্যা বলেই অর্ধেক রাজত্ব প্রাপ্য বলে মানছি। কাঞ্চনমূল্য চাইলে মামলা অন্যরকম হত। কি মহারাজ যথার্থ কি না?
রাজা। অত জানি না মন্ত্রী। শুধু জানি, রাজকন্যা না হলে রাজকন্যার মাতা আমাকে আস্ত রাখবেন না।
মন্ত্রী। সুতরাং বিবাহটা পাকা।
রাক্ষস। কিন্তু মহারাজ, আমার কী গতি হবে? এতদিন ঘি-দুধ খেয়ে আমি তো মানুষ খেতেও ভুলে গেছি!
বজ্র। কিছু ভেবো না রাক্ষস, অনেক কাঞ্চনমূল্য জমিয়েছি। তার থেকে তোমার পেনসনের ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
মন্ত্রী। রূপকথার রীতি অনুযায়ী সব কিছুই ভালোয় ভালোয় চুকল। অতএব-হে সমবেত ভদ্রমণ্ডলী। বজ্র-পুষ্প-
সকলে। যুগ যুগ জিয়ো!
[ধ্বনি দিতে দিতে সবাই চলে গেল। পড়ে রইল কাগজওয়ালা]
কাগজওয়ালা। উত্তপ্ত সংবাদ-লৌহগড় সমাচার। লৌহগড় সমাচার। বজ্রকুমার-পুষ্পবতী বিবাহ সংবাদ-লৌহগড় সমাচার। আজ্ঞে হ্যাঁ স্যার, তেপান্তর উঠে গেল। এ কচুর সরকারি কাগজ একদম বিক্কিরি হয় না মাইরি। -দূর শালা। আমিও চললাম বাংলা মুলুক। সেখানে কুবেররাম ফাটকাবাজারিয়া একটা চালু কাগজ নির্ঘাত বের করে ফেলেছে এ্যাদ্দিনে!
[প্রস্থান]