রুবাইয়াত-ই-হাফিজ – ৫১-৬০

৫১

কে দেখেছে সরল মনের প্রিয়া গো – যে দেখব আমি!
আমার মতো অনেকে ওই প্রাণ-পীড়নের মুক্তিকামী।
করব কী আর – পরান-প্রিয় তুমিই যদি কপট এত!
আমার মতো ভাগ্য সবার দেখনু সমান বিপথ-গামী॥

৫২

সেই ভালো মোর – এই শরাবের পিয়ালা দিয়ে তর করি দিল,
যে সাধ আমার পুরল না তা ভুলব গো আজ করব বাতিল।
ধার-করা এ জীবন আমার বন্দি নিতি বুদ্ধি-কারায়,
আজ নিমেষের মুক্তি দেব তারে, ভেঙে কারার পাঁচিল॥

৫৩

আনন্দের ওই বিহগ-পাখার শব্দ শুনি অদূর নভে,
কিংবা গো ও নম্র-চিতের ফুলবাগানের খোশবু হবে।
অথবা ওই মৃদুল হাওয়া তোমার শিরীন ঠোঁটের ভাষা,
কী এ যেন, এক অপরূপ রূপকথা কি শুনছি তবে?

৫৪

কাঁদি তোমার বিরহে গো বেশি মোমের বাতির চেয়ে,
আরক্ত-ধার অশ্রু ঝরে মদের সোরাই সম বেয়ে।
আমি গো পান-পেয়ালা যেন, হৃদয় যখন কৃপণ হেরি –
দূর বাঁশরি-বিলাপ শুনি রক্ত-ধারায় উঠি ছেয়ে॥

৫৫

পরান-পিয়া! কাটাই যদি তোমার সাথে একটি সে রাত,
বসন সম জড়িয়ে রব নিমেষ পলক করব না পাত।
ভয় কী আমার, যদিই সখী তার পরদিন মৃত্যু আসে,
পান করেছি অমর-করা তোমার ঠোঁটের ‘আব-ই-হায়াত’॥

৫৬

আলিঙ্গন ও চুম্বন হায় মরল তোমার ধেয়ান করে
তোমার ঠোঁটের চুম না পেয়ে পান্না-চুনি গেল মরে।
কাহিনি আর বাড়াব না অল্পে সারি কল্পকথা, –
মরল কেহ ফিরে এসে প্রতীক্ষাতে জীবন ধরে॥

৫৭

দয়িত মোর! অল্পে এত ছাড়ব তোমায় কেমন করি,
মরকত-নীল ও-কেশ-ফাঁসে যতক্ষণ না প্রাণ বিসরি।
লোহিত চুনির ঠোঁট গো তোমার মোর জীবন-শক্তি সে যে,
লক্ষ প্রবাল বিনিময়েও পারব না তা দিতে, গোরি !

৫৮

দুঃখ ছাড়া এ-জীবন হল না আর কিছুই হাসিল,
বিষাদ হল সাথের সাথি তোমায় দিয়ে আমার এ দিল।
গোপন মনের স্বপন-সাথি পেলাম না গো বন্ধু কোনো,
ব্যথাই আমার ব্যথার ব্যথী, তোমার মতোই নিঠুর নিখিল॥

৫৯

আমায় প্রবোধ দেওয়ার তরে, ভোরের হাওয়া, বলো তারে –
যে পাষাণীর মন গলে না আমার শত অশ্রু-ধারে, –
‘সুখে তুমি ঘুমাও নিতি দুলে দুলে আরাম-দোলায়,
কার নয়নে ঘুম নাহি আর – উদয় কি হয় স্মরণ-পারে?’

৬০

আর কতদিন করবে, প্রিয়, এ উৎপীড়ন আমায় নিয়ে,
বিনা কারণ বিশ্ব-নিখিল জ্বালাবে ও -হৃদয় দিয়ে?
আশীর্বাদের সম অসি দুঃসাহসীর কঠোর হাতে,
তোমার হাতে পড়লে তাহা করবে তা খুন তোমায় প্রিয়ে॥

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *