৪১
সকল-কিছুর চেয়ে ভালো সুরাই – যখন কাঁচা বয়েস,
প্রণয়-বেদন, মওতা, পাপ – যৌবনেরই একার আয়েশ
এই সে তামাম দুনিয়াটা-ই বরবাদ আর খারাব রে ভাই,
মন্দ ধরায় মন্দ যা – তার প্রমত্ততাই মানায় যে বেশ॥
৪২
আয়ুর মরু বেয়ে এল খ্যাপা প্লাবন আকুল ধারায়,
এই তো জীবন পান-পিয়ালা ভরার সময় কানায় কানায়।
হুঁশিয়ার হও সাহেব! যেন খুশি হয়ে কালের কুলি
তোমার জীবন-গেহ থেকে আসবাব সব উঠিয়ে নে যায়॥
৪৩
আলতো করে আঙুল রেখে প্রিয়ার কালো পশমি কেশে,
কইনু তারে, ‘দাও গো জীবন, এসেছি অমৃতের দেশে।’
কইল প্রিয়া, ‘অলক ছাড়ো, তার চেয়ে এই অধর ধরো!
খুঁজো নাকো দীর্ঘজীবন – ফুর্তি মউজ ওড়াও হেসে’॥
৪৪
বিনিদ্র কাল কাটল নিশি একলা জেগে তোমার ব্যথায়,
অশ্রু-মণির হার গেঁথেছি নয়ন-পাতার ঝালর-সুতায়।
তোমার তরে প্রাণ-পোড়ানি কইতে নারি কারুর কাছে,
আপন মনে তাই সারাদিন আপন ব্যথা কই আপনায়॥
৪৫
বীরত্ব শেখ ‘খয়বরী-দ্বার-ভগ্ন-কারী ‘আলি’ র কাছে,
দান কারে কয় শিখতে হলে ‘কুনবরের’ ওই বাদশা আছে।
ওরে হাফিজ, পিয়াসি কি তুই করুণা-বারির তরে?
শরাব-সুধার সাকি জানে উৎস তাহার কোন্ কানাচে॥
৪৬
প্রিয়া তোমায় দেছে দাগা? বন্ধু , পীড়ন সহ্য করো!
আমার পরামর্শ শোনো, সকল ভুলে শরাব ধরো।
মতলব হাসিল করো তোমার খুবসুরতি রতির সাথে,
অন্তর দিয়ো না তারে যে তব অযোগ্যতর॥
৪৭
‘বাবিলনের’ জাদু বুঝি গুরু তব চটুল চোখের,
হার মানে ও চোখের কাছে, জাদুকরি সকল লোকের!
দুলছে যে ওই অলক-গুছি রূপকুমারীর কর্ণমূলে
দুলে যেন হাফিজের এই কাব্য-মোতির চারপাশে ফের॥
৪৮
দেখ রে বিকচ ফুলকুমারীর রূপ-সুষমার আনন-শোভা,
দেখ বাদলের কাঁদন সাথে ফুলের হাসি মনোলোভা!
কীসের এত ঠমক দেখায় দেবদারু আজ দখনে হাওয়ায়,
ফুলরানিরে করবে বীজন দোল দিল এই আনন্দ বা!
৪৯
বুক হতে তার পিরান খোলে শ্যামাঙ্গী ওই তন্বী যখন,
ঠিক উপমা পাইনে খুঁজে সে মাধুরী দেখায় কেমন!
এমনি তরল রূপ গো তাহার – বুকের তলে হৃদয় দেখায়,
স্বচ্ছ দিঘির কালো জলে সুডৌল পাষাণ-নুড়ি যেমন॥
৫০
মোমের বাতি! পতঙ্গে এ ভুলেও কি গো স্মরণ করো?
আমার কাছে – ভালোবেসে ভুলে যাওয়া কেমনতর!
তোমার তরে যে বেদনার ফল্গুধারা বয় এ হৃদে,
জানে শুধু জীবন-মরুর বালুর চর এ রৌদ্র-খর॥