রুবাইয়াত-ই-হাফিজ – ০১-১০

রুবাইয়াত-ই-হাফিজ – ০১-১০


তোমার ছবির ধ্যানে, প্রিয়, দৃষ্টি আমার পলক-হারা।
তোমার ঘরে যাওয়ার যে-পথ, পা চলে না সে-পথ ছাড়া।
হায়, দুনিয়ায় সবার চোখে নিদ্রা নামে দিব্য সুখে,
আমার চোখেই নেই কি গো ঘুম দগ্ধ হল নয়ন-তারা॥

আমার সুখের শত্রু হতে লুকিয়ে চলে আয় লো ত্বরা।
আয়েশ-সুখের আমন্ত্রণ আজ শরাব দিয়ে পাত্র ভরা।
ঈর্ষাতুরের কুমন্ত্রণায় কোথায় যাবে, হে মোর ভীরু?
আমার প্রিয়া! শোনো শুধু আমার কথা দুখ-পাসরা॥

করল আড়াল তোমার থেকে যেদিন আমার ভাগ্য-লেখা,
সেদিন হতে ফোটেনি আর আমার ঠোঁটে হাসির রেখা।
কী নিদারুণ সেই বিরহের বাজল ব্যথা আমার হিয়ায়; –
আমি জানি, আর সে জানে অন্তর-বিহারী একা॥

আমার সকল ধ্যানে জ্ঞানে বিচিত্র সে সুরে সুরে
গাহি তোমার বন্দনা-গান, রাজাধিরাজ, নিখিল জুড়ে!
কী বলেছে তোমার কাছে মিথ্যা করে আমার নামে
হিংসুকেরা, – ডাকলে না আজ তাইতে আমায় তোমার পুরে॥

আনতে বলো পেয়ালা শরাব পার্শ্বে বসে পরান-বঁধুর।
নিঙারি লও পুষ্প-তনু তন্বঙ্গীর অধর-আঙুর।
আহত যে – ক্ষত-ব্যথায় সোয়াস্তি চায়, চায় সে আরাম;
বিষম তোমার হৃদয়-ক্ষত, ডাকো হাকিম কপট চতুর॥

ভাবনু, যখন করছে মানা বন্ধুরা সব আগলে ভাঁটি –
দিলাম ছেড়ে এবার ফুলের মরশুমে ভাই শরাব খাঁটি।
ফুল-বাগিচায় বুলবুলিরা উঠল গেয়ে, – হায় রে বেকুব,
এমন ফাগুন, ফুলের ফসল, নাইকো শরাব? – সকল মাটি॥

বিশ্বে সবাই তীর্থ-পথিক তোমার পথের কুঞ্জ-গলির।
ছুটছে নিখিল মক্ষী হয়ে তোমার আনন-আনারকলির ।
আজকে যদি তোমার থেকে মুখ ফিরিয়ে রয় গো কেহ,
কোন্ চোখে কাল দেখবে তোমায় হায় রে বে-দিল সেই মুসাফির!

তোমার আকুল অলক – হানে গভীর ছায়া রবির করে।
শুক্লা চতুর্দশীর শশী তোমার মুকুট, আঁধার হরে।
ও-কস্তুরী-কালো কেশের নিশান ওড়ায় সন্ধ্যারানি,
হেরে ও-মুখ, – উদয়-উষা – পাণ্ডুর চাঁদ ডুবে মরে॥

ভিন্ন থাকার দিন গো আমার আজকে পরান-প্রিয়ার সাথে।
বন্ধু নিয়ে খুশির মউজ – নেই গো সময় আজকে রাতে।
কী ফল রয়ে সাবধানে আজ, কাছে যখন নেইকো শরাব?
না, না, – কাছে শরাব আছে, নেইকো প্রিয়াই মন ভোলাতে॥

১০

আমার পরান নিতে যে চায় নিঠুরা রূপের পরি,
পরির মতোই রূপেরে সে রাখে আঁখির আড়াল করি।
কইনু তারে, ‘তুমি যে কও, এই তো এ-মুখ কী আর এমন?’
জবাব দিল, ‘তাই তো বলি লোভ কোরো না এ মুখ স্মরি।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *