রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম – ১৮১-১৯০
১৮১
খামকা ব্যথার বিষ খাসনে, মুষড়ে যাসনে নিরাশায়,
ফেরেব-বাজির এই দুনিয়া তুই ধরে থাক সত্য ন্যায়
আখেরে তো দেখলি বিশ্ব শূন্য ফাঁস ফক্কিকার,
তুইও মায়ার পুতুল যখন – ভয় ভাবনা যাক চুলায়!
১৮২
সিন্ধু হতে বিচ্ছেদেরই দুঃখে কাঁদে বিন্দুজল,
‘পূর্ণ আমি’, কইলে হেসে বিন্দুরে সিন্ধু অতল।
সত্য শুধু পূর্ণ, বাকি অন্য যা তা নাস্তি সব,
ঘূর্ণ্যমান ওই এক সে বিন্দু বহুর রূপে করছে ছল।
১৮৩
আমার রানি (দীর্ঘায়ু হন দগ্ধে মারতে দাসকে তাঁর!)
হঠাৎ খেয়াল হল, দিলেন সস্নেহ এক উপহার!
গেলেন চলে অনুগ্রহের চাউনি হেনে! তার মানে –
‘তার চেয়ে ওই নালার জলে দাও ভাসিয়ে প্রেম তোমার!’
১৮৪
তোমার আদরিণী বধূ ছিল, প্রভু আত্মা মোর,
কাজ হতে তায় তাড়িয়ে দিলে কোন দোষে হায়, হে মনোচোর!
পূর্বে কভু ছিলে না তো এমন কঠোর, হে স্বামী!
বিরহিণী বাস করিব প্রবাসে কি জীবনভর?
১৮৫
যেমনি পাবি মন দুই মদ – যেখানে হোক যদিই পাস –
অমনি পানোন্মত্ত ওরে, সে মদ-স্রোতে ডুবে যাস!
যেমনি খাওয়া অমনি হবি আমার মতো মুক্ত-প্রাণ,
ভেসে যাবে রাশভারি তোর ঋষির মতো দাড়ির রাশ।
১৮৬
মানব-স্বভাব জড়িয়ে বহে মন্দ ভালোর দুই ধারা,
শুভাশুভ দুঃখ ও সুখ দান নিয়তির – কয় যারা,
তাদের বলি – অপরাধী করছ খামকা কুগ্রহে,
তোমার চেয়ে হাজার গুণ যে অসহায় সে বেচারা!
১৮৭
তোমার নিন্দা করতে সাহস করবে না আর কেউ কোথাও!
এক সে উপায় আছে যদি বিশ্বে খুশি করতে চাও
এন্তার সব শ্রদ্ধা পাবে বড়ো ছোটো সকলকার
মুসলিম খ্রিস্টান ইহুদি সবার যশোগাথ গাও।
১৮৮
বলতে পার! টক সে কেন আঙুর যখন কাঁচা রয়?
পাকলে ভরে মিষ্টি রসে, তারই শরাব তিক্ত হয়।
কাঠকে কুঁদে কুঁদে যখন শিল্পী গড়ে রবাব বীণ
সেই কাঠে সেই শিল্পী বেণু গড়তে পারে? নয় গো নয়!
১৮৯
খ্যাতির মুকুট পরলে হেথায় নিন্দা-গ্লানির পাঁক হানে,
বলবে ষড়যন্ত্রকারী রোস যদি তুই গোরস্থানে।
‘খিজির’ হও আর ‘ইলিয়াস’ হও ; সব সে-আচ্ছা এই ধরায়
জানতে চাসনে কারেও আর তোরেও কেহ না জানে।
১৯০
খৈয়াম! তুই কাঁদিস কেন পাপের ভয়ে অযথা?
দুঃখ করে কেঁদে কি তোর ভরবে প্রাণের শূন্যতা?
জীবনে যে করল না পাপ নাই দাবি তার তাঁর দয়ায়
পাপীর তরেই দয়ার সৃষ্টি, আনন্দ কর ভোল ব্যথা।