রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম – ১৭১-১৮০
১৭১
দুই জনাতেই সইছি সাকি নিয়তির ভ্রুভঙ্গি ঢের,
এই ধরাতে তোমার আমার নাই অবসর আনন্দের।
তবুও মোদের মাঝে আছে মদ-পিয়ালা যতক্ষণ
সেই তো ধ্রুব সত্য, সখী, পথ দেখাবে সেই মোদের!
১৭২
স্রষ্টা মোরে করল সৃজন জাহান্নমে জ্বলতে সে,
কিংবা স্বর্গে করবে চালান – তাই বা পারে বলতে কে!
করব না ত্যাগ সেই লোভে এই শরাব সাকি দিলরুবা,
নগদার এ ব্যবসা খুইয়ে ধারে স্বর্গ কিনবে কে?
১৭৩
দুর্ভাগ্যের বিরক্তি পান করতে যেন না হয় আর,
পানই যদি করি, পানি পান করব পানশালার।
এই সংসার হত্যাকারী, রক্ত তাহার লাল শরাব,
আমাদের যে খুন করে, কি? করব না পান খুন তাহার?
১৭৪
ওমর রে, তোর জ্বলছে হৃদয় হয়তো নরকেই জ্বলি,
তাহার বহ্নি-মহোৎসবে হয়তো হবি অঞ্জলি।
খোদায় দয়া শিখাতে যাস সেই সে তুই, কী দুঃসাহস।
তুই শিখাবার কে, তাঁহারে শিখাতে যাস কী বলি?
১৭৫
কুগ্রহ মোর! বলতে পারিস, করেছি তোর ক্ষতি কোন
সত্যি বলিস, মোর পরে তুই বিরূপ এত কী কারণ।
একটু মদের তরে এত উঞ্ছবৃত্তি তোষামোদ
এক টুকরো রুটির তরে, ভিক্ষা করাস অনুক্ষণ।
১৭৬
জল্লাদিনি ভাগ্যলক্ষ্মী, ওর্ফে ওগো গ্রহের ফের!
স্বভাব-দোষে চিরটা কাল নিষ্ঠুরতার টানছ জের।
বক্ষ তোমার বিদারিয়া দেখতে যদি এই ধরা
খুঁজে পেত ওই বুকে তার হারা-মণি-মানিক ঢের।
১৭৭
ভাগ্যদেবী! তোমার যত লীলাখেলায় সুপ্রকাশ
অত্যাচারী উৎপীড়কের দাসী তুমি বারো মাস।
মন্দকে দাও লাখ নিয়ামত ভালোকে দাও দুঃখ শোক,
বাহাত্তুরে ধরল শেষে? না এ বুদ্ধিভ্রম বিলাস?
১৭৮
সইতে জুলুম খল নিয়তির চাও বা না চাও শির নোওয়াও!
বাঁচতে হলে হাত হতে তার প্রচুরভাবে মদ্য খাও।
তোমার আদি অন্ত উভয় এই সে ধুলামাটির কোল,
নিম্নে নয় আর এখন তুমি ধরার ধূলির ঊর্ধ্বে ধাও।
১৭৯
মোক্ষম বাঁধ বেঁধেছে যে মোদের স্বভাব-শৃঙ্খলে,
স্বভাব-জয়ী হতে আবার আমাদের সেই বলে!
দাঁড়িয়ে আছি বুদ্ধিহত তাই এ দুয়ের মাঝখানে-
উলটে ধরবে কুঁজো কিন্তু জল যেন তার না টলে!
১৮০
মানুষ খেলার গোলক প্রায় ফিরছে ছুটে ডাইনে বাঁয়,
যেদিক পানে চলতে বলে ক্রূর নিয়তির হাতা তায়।
কেন হলি ভাগ্যদেবীর নিঠুর খেলার পুতুল তুই,
সে-ই জানে – এক সে-ই জানে রে, আমরা পুতুল অসহায়।