রুবাইয়াত্‌-ই-ওমর খৈয়াম – ১৬১-১৭০

রুবাইয়াত্‌-ই-ওমর খৈয়াম – ১৬১-১৭০

১৬১
আমরা দাবা খেলার ঘুঁটি, নাই রে এতে সন্দ নাই!
আশমানি সেই রাজ-দাবাড়ে চালায় যেমন চলছি তাই।
এই জীবনের দাবার ছকে সামনে পিছে ছুটছি সব,
খেলার শেষে তুলে মোদের রাখবে মৃত্যু-বাক্সে ভাই!

১৬২
আশমানি হাত হতে যেমন পড়বে ঘুঁটি ভাগ্যে তোর।
পণ্ডশ্রম করিসনে তুই হাতড়ে ফিরে সকল দোর!
এই জীবনের জুয়াখেলায় হবেই হবে খেলতে ভাই
সৌভাগ্যের সাথে বরণ করে নে দুর্ভাগ্য তোর।

১৬৩
চাল ভুলিয়ে দেয় রানি মোর, খঞ্জন ওই চোখ খর,
বোড়ে দিয়ে বন্দী করে আমার ঘোড়া গজ হরো!
তোমার সকল বল আগিয়ে কিস্তির পর কিস্তি দাও,
শেষে লালা-রুখ দেখিয়ে ‘রুখ’ নিয়ে মোর মাত করো!

১৬৪
আশমানে এক বলীবর্দ রয় ‘পর্বিণ’ নাম তাহার,
আছে আরেক বৃষভ নীচে বইতে মোদের ধরার ভার।
কাজেই, এই যে মানবজাতি – জ্ঞানীর চক্ষে হয় মালুম –
ওই সে ভীষণ ষাঁড় যুগলের মধ্যে যেন ঝাঁক গাধার!

১৬৫
শ্রেষ্ঠ শরাব পান করে নেয় বদরসিকে, হায় রে হায়!
স্থূল-আত্মা মূর্খ ধনিক শ্রেষ্ঠ বিলাস বিভব পায়।
হায় রে যত চিত্তহারী রূপকুমারী জর্জিয়ার
শুকায় কিনা গুম্ফবিহীন বালক-সাথে মাদ্রাসায়!

১৬৬
রূপ লোপ এর হয় অরূপে, অস্থি ইহার হয় না নাশ।
এই মদিরা – হাজার রূপে অরূপে এর হয় প্রকাশ,
ভেবো না কেউ সুরার সাথে সুরার সারও যায় উবে,
কভু এ হয় প্রাণী কভু তরুলতা, ফুল-সুবাস।

১৬৭
লাল গোলাপে কিস্তি দিয়ে তোমার ও গাল করে মাত,
খেলতে গিয়ে চীনকুমারী হারে প্রিয়া তোমার সাথ।
খেলতে বাবিল-রাজার সাথে হানলে চাউনি একটিবার
মন্ত্রী ঘোড়া গজ নিলে তার হেনে ওই এক নয়নপাত!

১৬৮
তোমার-আমার কী হবে ভাই তাই ভেবে মোর ব্যাকুল মন!
মীনকুমারী হংসীরে কয়, ‘শুকাবে এই বিল যখন!’
মরালী কয়, ‘কাবাব যদি হই দু-জনাই তুই-আমি,
ভাসলে এ বিল মদের স্রোতে মোদের কি তায় লাভ তখন।’

১৬৯
ঘূর্ণমান ওই কুগ্রহ-দল – সদাই যারা ভয় দেখায় –
ঘুরছে ওরা ভোজবাজির ওই লন্ঠনেরই ছায়ার প্রায়
সূর্য যেন মোমবাতি আর ছায়া যেন পৃথ্বী এই,
কাঁপছি মোরা মানুষ যেন প্রতিকৃতি আঁকা তায়।

১৭০
ফিরনু পথিক সাগর মরু ঘোর বনে পর্বতশিরে
এই পৃথিবীর সকল দেশে গুহায় ঘরে মন্দিরে,
শুনলাম না – ফিরছে কেউ তীর্থ-পথিক এই পথের,
আজ এ পথে যাত্রা যাহার, আসল না সে কাল ফিরে!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *