রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম – ১২১-১৩০
১২১
নিত্য দিনে শপথ করি – করব তৌবা আজ রাতে,
যাব না আর পানশালাতে, ছোঁব না আর মদ হাতে।
অমনি আঁখির আগে দাঁড়ায়ে গোলাপ-ব্যাকুল বসন্ত
সকল শপথ ভুল হয়ে যায়, কুলোয় না আর তৌবাতে।
১২২
আগে যে সব সুখ ছিল, আজ শুনি তাদের নাম কেবল,
মদ ছাড়া সব গেছে ছেড়ে আগের ইয়ার বন্ধুদল।
কেমন করে ছাড়ব – যে মদ আমায় কভু ছাড়ল না,
এক পেয়ালা আনন্দ, তাও ছাড়লে কীসে বাঁচব বল!
১২৩
আমরা শরাব পান করি তাই শ্রীবৃদ্ধি ওই পানশালার,
এই পাপীদের পিঠ আছে তাই স্থান হয়েছে পাপ রাখার।
আমরা যদি পাপ না করি ব্যর্থ হবে তাঁর দয়া,
পাপ করি তাই ক্ষমা করে করুণাময় নাম খোদার!
১২৪
তোমার দয়ার পিয়ালা প্রভু উপচে পড়ুক আমার পর,
নিত্য ক্ষুধার অন্ন পেতে না যেন হয় পাততে কর।
তোমরা মদে মস্ত করো আমার ‘আমি’র পাই সীমা,
দুঃখে যেন শির না দুখায়, হে দুখ-হর অতঃপর!
১২৫
আমায় সৃজন করার দিনে জানত খোদা বেশ করেই,
ভাবীকালের কর্ম আমার, বলতে পারত মুহূর্তেই।
আমি যেসব পাপ করি – তা ললাট-লেখা, তাঁর নির্দেশ,
সেই সে পাপের শাস্তি নরক – কে বলবে ন্যায় বিচার এই!
১২৬
দুঃখে আমি মগ্ন প্রভু, দুয়ার খোলো করুণার!
আমায় করো তোমার জ্যোতি, অন্তর মোর অন্ধকার।
স্বর্গ যদি অর্জিতে হয় এতই পরিশ্রম করে –
সে তো আমার পারিশ্রমিক, নয় সে দয়ার দান তোমার।
১২৭
দয়ার তরেই দয়া যদি, করুণাময় স্রষ্টা হন,
আদমেরে স্বর্গ হতে দিলেন কেন নির্বাসন?
পাপীর তরে করুণা যে – করুণা সে-ই সত্যিকার,
তারে আবার প্রসাদ কে কয় পুণ্য করে যা অর্জন!
১২৮
আড্ডা আমার এই যে গুহা, মদ চোলাই-এর এই দোকান,
বাঁধা রেখে আত্মা-হৃদয় করি হেথায় শরাব পান।
আরাম-সুখের কাঙাল নহি, ভয় করি না দুর্দশায়,
এই ক্ষিতি-অপ-তেজ-মরুতের ঊর্ধ্বে ফিরি মুক্ত-প্রাণ।
১২৯
দেখে দেখে ভণ্ডামি সব হৃদয় বড়ো ক্লান্ত ভাই!
তুরন্ত শরাব আনো সাকি, ভণ্ডের মুখ ভুলতে চাই!
শরাব আনো বাঁধা রেখে এই টুপি এই জায়নামাজ,
হব বক-ধার্মিক কাল, আজ তো এখন মদ চালাই।
১৩০
স্যাঙাৎ ওগো, আজ যে হঠাৎ মোল্লা হয়ে সাজলে সং!
ছাড়ো কপট তপের এ ভান, সাধুর মুখোশ এই ভড়ং।
দেবেন ‘আলী-মুর্তজা’ যা সাকি হয়ে বেহেশতে
পান কর সে শরাব হেথাও হুরি নিয়ে রং-বেরং।