রুবাইয়াত্‌-ই-ওমর খৈয়াম – ০৮১-০৯০

রুবাইয়াত্‌-ই-ওমর খৈয়াম – ০৮১-০৯০

৮১
আজ আছে তোর হাতের কাছে, আগামী কাল হাতের বার,
কালের কথা হিসাব করে বাড়াসনে তুই দুঃখ আর।
স্বর্গ-ক্ষরা ক্ষণিক জীবন – করিসনে তার অপব্যয়,
বিশ্বাস কি – নিশ্বাস-ভর জীবন যে কাল পাবি ধার!

৮২
হায় রে হৃদয়, ব্যথায় যে তোর ঝরছে নিতুই রক্তধার,
অন্ত যে নেই তোর এ ভাগ্য-বিপর্যয়ের, যন্ত্রণার!
মায়ায় ভুলে এই সে কায়ায় আসলি কেন, রে অবোধ!
আখেরে যে ছেড়ে যেতে হবে এ আশ্রয় আবার!

৮৩
অর্থ বিভব যায় উড়ে সব রিক্ত করে মোদের কর,
হৃৎপিণ্ড ছিঁড়ে মোদের মৃত্যুর নিষ্ঠুর নখর,–
মৃত্যুলোকের চোখ এড়িয়ে ফেরত কেহ আসল না,
যেসব পথিক গেল সেথায় নিয়ে তাদের খোশখবর।

৮৪
পান করে যাই মদিরা তাই, শুনছি প্রাণের বেণুর রব,
শুনছি আমার তনুর তীরে যৌবনেরই মদির স্তব,
তিক্ত স্বাদের তরে সুরার করো না কেউ তিরস্কার,
ত্যক্ত মানব-জীবন সাথে মানায় ভালো তিক্তাসব।

৮৫
ব্যথার দারু শরাব পিয়ো, ইহাই জীবন চিরন্তন,
জরায় স্বর্গ-অমৃত এ, যৌবনের এ সুখ-স্বপন।
গোলাপ, শরাব, বন্ধু লাভের মরশুম এই আনন্দের–
যদিন বাঁচ শরাব পিয়ো, সত্যিকারের এই জীবন।

৮৬
সুরা দ্রবীভূত চুনি, সোরাহি সে খনি তার,
এই পিয়ালা কায়া যেন, প্রাণ তার এই দ্রাক্ষাসার।
বেলোয়ারির এই পিয়ালা-ভরা তরল হাসির রক্তিমা,
কিংবা ওরা ব্যথায়-ক্ষত হিয়ার যেন রক্তাধার।

৮৭
‍সুরার সোরাহি এই মানুষ, আত্মা শরাব তার ভিতর,
দেহ তাহার বাঁশির আর তেজ যেন সেই বাঁশির স্বর।
খৈয়াম! তুই জানিস কি এই মাটির মানুষ কোন জিনিস?
খেয়াল-খুশির ফানুস এ ভাই, ভিতরে তার প্রদীপ-কর।

৮৮
ব্যর্থ মোদের জীবনঘেরা কুগ্রহ সব মেঘলা প্রায়,
‘জিহূন’ সম স্রোত বয়ে যায় অশ্রুসিক্ত চক্ষে হায়!
বুকের কুণ্ডে দুখের দাহ – তারেই আমি নরক কই,
মুহূর্তের যে মনের শান্তি – আমি বলি স্বর্গ তায়।

৮৯
মদের নেশার গোলাম আমি সদাই থাকি নুইয়ে শির,
জীবন আমি পণ রাখি ভাই প্রসাদ পেতে তার হাসির।
শরাব-ভরা কুঁজোর টুটি জাপটে সাকি হস্তে তার
পাত্রে ঢালে, নিঠুর হাতে নিঙড়ে তাহার লাল রুধির!

৯০
পেতে যে চায় সুন্দরীদের ফুল্ল-কপোল গোলাপ ফুল
কাঁটার সাথে সইতে হবে তায় নিয়তির তীক্ষ্ণ হুল।
নিঠুর করাত চিরুনিরে কেটে কেটে তুলল দাঁত
তাই সে ছুঁয়ে ধন্য হল আমার প্রিয়ার কেশ আকুল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *