রুবাইয়াত্‌-ই-ওমর খৈয়াম – ০৭১-০৮০

রুবাইয়াত্‌-ই-ওমর খৈয়াম – ০৭১-০৮০

৭১
আমার ক্ষণিক জীবন হেথায় যায় চলে ওই ত্রস্ত পায়
খরস্রোতা স্রোতস্বতী কিংবা মরুঝঞ্ঝা-প্রায়।
তারই মাঝে এই দু-দিনের খোঁজ রাখি না – ভাবনা নাই,
যে গতকাল গত, আর যে আগামীকাল আসতে চায়।

৭২
আর কতদিন সাগরবেলায় খামকা বসে তুলব ইঁট!
গড় করি পায়, দিক লেগেছে গড়ে গড়ে মূর্তি পীঠ।
ভেবো নাকো – খৈয়াম ওই জাহান্নমের বাসিন্দা,
ভিতরে সে স্বর্গ-চারী, বাহিরে সে নরক-কীট।

৭৩
মধুর, গোলাপ-বালার গালে দখিন হাওয়ার মদির শ্বাস,
মধুর তোমার রূপের কুহক মাতায় যে এই পুষ্প-বাস।
যে গেছে কাল গেছে চলে এল না তার ম্লান স্মৃতি,
মধুর আজের কথা বলো, ভোগ করে নাও এই বিলাস।

৭৪
শীত ঋতু ওই হল গত বইছে বায় বসন্তেরই,
জীবন-পুথির পাতাগুলি পড়বে ঝরে, নাই দেরি।
ঠিক বলেছেন দরবেশ এক, ‘দূষিত বিষ এই জীবন,
দ্রাক্ষার রস বিনা ইহার প্রতিষেধক নাই, হেরি।’

৭৫
‘সরো’র মতন সরল-তনু টাটকা-তোলা গোলাপ-তুল,
কুমারীদের সঙ্গে নিয়ে আনন্দে তুই হ মশগুল!
মৃত্যুর ঝড় উঠবে কখন, আয়ুর পিরান ছিঁড়বে তোর–
পড়ে আছে ধুলায় যেমন ওই বিদীর্ণ-দল মুকুল!

৭৬
পল্লবিত তরুলতা কতই আছে কাননময়,
দেওদার আর থলকমলে, জান কেন মুক্ত কয়?
দেবদারু তরুর শত কর, তবু কিছু চায় না সে
থলকমলীর দশ রসনা তবু সদা নীরব রয়।

৭৭
আমার সাথি সাকি জানে মানুষ আমি কোন জাতের ;
চাবি আছে তার আঁচলে আমার বুকের সুখ দুখের।
যেমনি মেজাজ মিইয়ে আসে গেলাস ভরে দেয় সে মদ,
এক লহমায় বদলে গিয়ে দূত হয়ে যাই দেবলোকের।

৭৮
আরাম করে ছিলাম শুয়ে নদীর তীরে কাল রাতে,
পার্শ্বে ছিল কুমারী এক, শরাব ছিল পিয়ালাতে ;
স্বচ্ছ তাহার দীপ্তি হেরি শুক্তি-বুকে মুক্তাপ্রায়
উঠল হেঁকে প্রাসাদরক্ষী, ‘ভোর হল কি আধ-রাতে?’

৭৯
মন কহে, আজ ফুটল যখন এন্তার ওই গোলাপ গুল
শরিয়তের আজ খেলাফ করে বেদম আমি করব ভুল।
গুল-লালা-রুখ কুমারীদের প্রস্ফুটিত যৌবনে
উঠল রেঙে কানন-ভূমি লালা ফুলের কেয়ারি-তুল।

৮০
হায় রে, আজি জীর্ণ আমার কাব্য পুথি যৌবনের!
ধুলায় লুটায় ছিন্ন ফুলের পাপড়িগুলি বসন্তের।
কখন এসে গেলি উড়ে, রে যৌবনের বিহঙ্গম!
জানতে পেরে কাঁদছি যখন হয়ে গেছে অনেক দের!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *