রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম – ০৬১-০৭০
৬১
এক সোরাহি সুরা দিয়ো, একটু রুটির ছিলকে আর
প্রিয়া সাকি, তাহার সাথে একখানি বই কবিতার,
জীর্ণ আমার জীবন জুড়ে রইবে প্রিয়া আমার সাথ,
এই যদি পাই চাইব নাকো তখ্ত আমি শাহানশার!
৬২
হুরি বলে থাকলে কিছু – একটি হুরি, মদ খানিক,
ঘাস-বিছানো ঝরনাতীরে, অল্প-বয়েস বৈতালিক–
এই যদি পাস, স্বর্গ নামক পুরনো সেই নরকটায়
চাসনে যেতে, স্বর্গ ইহাই স্বর্গ যদি থাকেই ঠিক।
৬৩
যতক্ষণ এ হাতের কাছে আছে অঢেল লাল শরাব
গেহুঁর রুটি, গরম কোরমা, কালিয়া আর শিক-কাবাব,
আর লাল-রুখ প্রিয়া আমার কুটির-শয়ন-সঙ্গিনী, –
কোথায় লাগে শাহানশাহের দৌলত ওই বে-হিসাব!
৬৪
দোষ দিয়ো না মদ্যপায়ীর তোমরা, যারা খাও না মদ;
ভালো করার থাকলে কিছু, মদ খাওয়া মোর হত রদ।
মদ না পিয়েও, হে নীতিবিদ, তোমরা যেসব কর পাপ,
তাহার কাছে আমরাও শিশু, হই না যতই মাতাল-বদ!
৬৫
খুশি-মাখা পেয়ালাতে ওই গোলাপ-রক্ত মদ-মধুর!
মধুরতর পাখির গীতি, বেণুর ধ্বনি, বীণার সুর।
কিন্তু ওই যে ধর্মগোঁড়া – বুঝল না যে মদের স্বাদ,
মধুরতম – রয় সে যখন অন্তত পাঁচ যোজন দূর!
৬৬
চৈতি-রাতে খুঁজে নিলাম তৃণাস্তৃত ঝরনা-তীর,
সুন্দরী এক হুরি নিলাম, পেয়ালা নিলাম লাল পানির।
আমার নামে বইল হাজার কুৎসা গ্লানির ঝড় তুফান,
ভুলেও মনে হল না মোর স্বর্গ নরকের নজির।
৬৭
সাকি-হীন ও শরাব-হীনের জীবনে হায় সুখ কী বলো?
নাই ইরাকি-বেণুর ধ্বনির জমজমাটি সুর-উছল
সুখ নাই ভাই সেথায় থেকে, এই জগতের তত্ত্ব শোনো,
আনন্দহীন জীবন-বাগে ফলে শুধু তিক্ত ফল।
৬৮
মরুর বুকে বসাও মেলা, উপনিবেশ আনন্দের,
একটি হৃদয় খুশি করা তাহার চেয়ে মহৎ ঢের।
প্রেমের শিকল পরিয়ে যদি বাঁধতে পার একটি প্রাণ–
হাজার বন্দি মুক্ত করার চেয়েও অধিক পুণ্য এর।
৬৯
শরাব এবং প্রিয়ায় নিয়ে, সাকি, হেথায় এলাম ফের!
তৌবা করেও পাইনে রেহাই হাত হতে ভাই এই পাপের।
‘নূহ’ আর তাঁর প্লাবন-কথা শুনিয়ো নাকো আর, সাকি,
তার চেয়ে মদ-প্লাবন এনে ডুবাও ব্যথা মোর বুকের!
৭০
নৃত্য-পাগল ঝরনাতীরে সবুজ ঘাসের ওই ঝালর
উন্মুখ কার চুমো যেন দেবকুমারের ঠোঁটের পর –
হেলায় পায়ে দলো না কেউ – এই যে সবুজ তৃণের ভিড়
হয়তো কোনো গুল-বদনীর কবর-ঢাকা নীল চাদর।