রুবাইয়াত্‌-ই-ওমর খৈয়াম – ০২১-০৩০

রুবাইয়াত্‌-ই-ওমর খৈয়াম – ০২১-০৩০

২১
করব এতই শিরাজি পান পাত্র এবং পরান ভোর
তীব্র-মিঠে খোশবো তাহার উঠবে আমার ছাপিয়ে গোর।
থমকে যাবে চলতে পথিক আমার গোরের পাশ দিয়ে,
ঝিমিয়ে শেষে পড়বে নেশায় মাতাল-করা গন্ধে ওর।

২২
দেখতে পাবে যেথায় তুমি গোলাপ লালা ফুলের ভিড়,
জেনো, সেথায় ঝরেছিল কোনো শাহানশা-র রুধির।
নার্গিস আর গুল-বনোসার দেখবে যেথায় সুনীল দল,
ঘুমিয়ে আছে সেথায় – গালে তিল ছিল যে সুন্দরীর।

২৩
নিদ্রা যেতে হবে গোরে অনন্তকাল, মদ পিয়ো।
থাকবে নাকো সাথি সেথায় বন্ধু প্রিয় আত্মীয়।
আবার বলতে আসব না ভাই, বলছি যা তা রাখ শুনে–
ধরেছে যে ফুলের মুকুল, ফুটতে পারে আর কি ও?

২৪
বিদায় নিয়ে আগে যারা গেছে চলে, হে সাকি,
চির-ঘুমে ঘুমায় তারা মাটির তলে, হে সাকি!
শরাব আনো, আসল সত্য আমার কাছে যাও শুনে,
তাদের যত তথ্য গেল হাওয়ায় গলে, হে সাকি!

২৫
তুমি আমি জন্মিনিকো – যখন শুধু বিরামহীন
নিশীথিনীর গলা ধরে ফিরত হেথায় উজল দিন;
বন্ধু ধীরে চরণ ফেলো! কাজল-আঁখি সুন্দরীর
আঁখির তারা আছে হেথায় হয়তো ধূলির অঙ্কলীন!

২৬
প্রথম থেকেই আছে লেখা অদৃষ্টে তোর যা হবার,
তাঁর সে কলম দিয়ে – যিনি দুঃখে সুখে নির্বিকার।
স্রেফ বোকামি, কান্নাকাটি লড়তে যাওয়া তাঁর সাথে,
বিধির লিখন ললাট-লিপি টলবে না যা জন্মে আর!

২৭
ভালো করেই জানি আমি, আছে এক রহস্য-লোক,
যায় না বলা সকলকে তা ভালোই হোক কি মন্দ হোক।
আমার কথা ধোঁয়ায় ভরা, ভাঙতে তবু পারব না –
থাকি সে কোন গোপন-লোকে, দেখতে যাহা পায় না চোখ।

২৮
চলবে নাকো মেকি টাকার কারবার আর, মোল্লাজি!
মোদের আবাস সাফ করে নেয় সেয়ান-ঝাড়ুর কারসাজি।
বেরিয়ে ভাঁটি-খানার থেকে বলল হেঁকে বৃদ্ধ পির –
‘অনন্ত ঘুম ঘুমাবি কাল পান করে নে মদ আজি!’

২৯
সবকে পারি ফাঁকি দিতে মনকে নারি ঠারতে চোখ,
খোদার উপর খোদাকারিতে ব্যর্থ হয় এ মিছে স্তোক।
তীক্ষ্ণ সূক্ষ্ম বুদ্ধি দিয়ে জাল বুনিলাম চাতুর্যের,
মুহূর্তে তা দিল ছিঁড়ে হিংস্র নিয়তির সে নোখ!

৩০
মৃত্তিকা-লীন হবার আগে নিয়তির নিঠুর করে
বেঁচে নে তুই, মৃত্যু-পাত্র আসছে রে ওই তোর তরে!
হেথায় কিছু জোগাড় করে নে রে, হোথায় কেউ সে নাই
তাদের তরে – শূন্য হাতে যায় যাহারা সেই ঘরে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *