রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম – ০০১-০১০
১
রাতের আঁচল দীর্ণ করে আসল শুভ ওই প্রভাত,
জাগো সাকি! সকাল বেলার খোয়ারি ভাঙো আমার সাথ।
ভোলো ভোলো বিষাদ-স্মৃতি! এমনি প্রভাত আসবে ঢের,
খুঁজতে মোদের এইখানে ফের, করবে করুণ নয়নপাত।
২
আঁধার অন্তরীক্ষে বুনে যখন রুপার পাড় প্রভাত,
পাখির বিলাপ-ধ্বনি কেন শুনি তখন অকস্মাৎ?
তারা যেন দেখতে বলে উজল প্রাতের আরশিতে–
ছন্নছাড়া তোর জীবনের কাটল কেমন একটি রাত!
৩
‘ঘুমিয়ে কেন জীবন কাটাস?’ কইল ঋষি স্বপ্নে মোর,
‘আনন্দ-গুল প্রস্ফুটিত করতে পারে ঘুম কি তোর?
ঘুম মৃত্যুর যমজ-ভ্রাতা, তার সাথে ভাব করিসনে,
ঘুম দিতে ঢের পাবি সময় কবরে তোর জনম-ভোর।’
৪
আমার আজের রাতের খোরাক তোর টুকটুক শিরীন ঠোঁট
গজল শোনাও, শিরাজি দাও, তন্বী সাকি জেগে ওঠ!
লাজ-রাঙা তোর গালের মত দে গোলাপি-রং শরাব,
মনে ব্যথার বিনুনি মোর খোঁপায় যেমন তোর চুনোট।
৫
প্রভাত হল। শরাব দিয়ে করব সতেজ হৃদয়-পুর,
যশোখ্যাতির ঠুনকো এ কাচ করব ভেঙে চাখনাচুর।
অনেক দিনের সাধ আশা এক নিমেষে করব ত্যাগ,
পরব প্রিয়ার বেণি বাঁধন, ধরব বেণুর বিধুর সুর।
৬
ওঠো নাচো! আমরা প্রচুর করব তারিফ মদ-অলস
ওই নার্গিস আঁখির তোমার, ঢালবে তুমি আঙুর-রস!
এমন কী আর – যদিই তাহা পান করি দশ বিশ গেলাস,
ছয় দশে ষাট পাত্র পড়লে খানিকটা হয় দিল্ সরস!
৭
তোমার রাঙা ঠোঁটে আছে অমৃত-কূপ প্রাণ-সুধার,
ওই পিয়ালার ঠোঁট যেন গো ছোঁয় না, প্রিয়া, ঠোঁট তোমার।
ওই পিয়ালার রক্ত যদি পান না করি, শাপ দিয়ো;
তোমার অধর স্পর্শ করে এত বড়ো স্পর্ধা তার!
৮
আজকে তোমার গোলাপ-বাগে ফুটল যখন রঙিন গুল
রেখো না পান পাত্র বেকার, উপচে পড়ুক সুখ ফজুল।
পান করে নে, সময় ভীষণ অবিশ্বাসী, শত্রু ঘোর,
হয়তো এমন ফুল-মাখানো দিন পাবি না আজের তুল!
৯
শরাব আনো! বক্ষে আমার খুশির তুফান দেয় যে দোল।
স্বপ্ন-চপল ভাগ্যলক্ষ্মী জাগল জাগো ঘুম-বিভোল!
মোদের শুভদিন চলে যায় পারদ-সম ব্যস্ত পায়
যৌবনের এই বহ্নি নিভে খোঁজে নদীর শীতল কোল।
১০
আমরা পথিক ধূলির পথের, ভ্রমি শুধু একটি দিন,
লাভের অঙ্ক হিসাব করে পাই শুধু দুখ, মুখ মলিন।
খুঁজতে গিয়ে এই জীবনে রহস্যেরই কূল বৃথাই
অপূর্ণ সাধ আশা লয়ে হবই মৃত্যুর অঙ্কলীন।