রুদ্ধশ্বাস
আমার ছোটবেলার কিছুটা কেটেছে নদীয়ার এক প্রত্যন্ত গ্রামে। সেখানে আমার বাবা ছিলেন সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার। আমার বয়স যখন সাত তখনই বাবা-মা-দাদার সঙ্গে তল্পিতল্পা গুটিয়ে চলে এলাম প্রায় বাংলাদেশ বর্ডারের কাছাকাছি এই গ্রামে। আগে থাকতাম শহরে। সেখানকার স্কুলেই পড়তাম। হঠাৎ করে সব ছেড়ে এই গন্ড গ্রামে এসে পড়াটা না আমি, না দাদা কেউই মেনে নিতে পারিনি। এখন বুঝতে পারি, এতে বাবার কোনও দোষ ছিল না। কিন্তু তখন ভীষণ রাগ হয়েছিল বাবার উপর।
যাই হোক না কেন, গ্রামের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমার আর দাদার দু’জনেরই বেশ সময় লেগেছিল। সবসময় মনে পড়ত শহরের ঝাঁ চকচকে পরিবেশ, সুন্দর পোশাক পরা ঝকঝকে চেহারার বন্ধুদের কথা। এখনকার স্কুলে ভর্তি হলেও শিক্ষক থেকে সহপাঠী—কাউকে পছন্দ করে উঠতে পারিনি। এই সময়েই আমার সঙ্গে আলাপ হল সাবিত্রীর। ওর বাবা অন্যের জমিতে চাষ করেন। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার। সেটা ওকে দেখলে বোঝা যেত। কিন্তু ওর স্বভাবের মধ্যে কোনও জড়তা ছিল না। খুব তাড়াতাড়ি আপন করে নিত সবাইকে।
আমি তখন ক্লাস থ্রি, আর দাদা এইট। সাবিত্রী আমার ক্লাসে। হওয়ার কথা ছিল না, তবুও কীভাবে যেন ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে গেল খুব। আমার সঙ্গে স্কুল ছুটির পর প্রায়ই আমাদের বাড়িতে চলে আসত সাবিত্রী। আমার মা-ও খুব ভালোবাসতেন ওকে। নানারকমের রান্না করে খাওয়াতেন। বাড়িতে ভালোমন্দ কিছু রান্না হলেই ওর জন্য তোলা থাকত। এভাবেই দিন কাটছিল। ইতিমধ্যে আমি আর সাবিত্রী যখন ক্লাস সেভেনে উঠলাম, বাবার আবার ট্রান্সফার হতে পারে এমন একটা কথা শোনা গেল। হয়তো আবার শহরের দিকেই যাব আমরা। আমি আর দাদা খুশি হয়ে উঠলাম। কিন্তু সাবিত্রীর জন্য মন খুব খারাপ হতে লাগল। ও তো শুনে থেকেই কান্নাকাটি শুরু করে দিল। দাদা তখন ক্লাস টুয়েলভ। উচ্চ মাধ্যমিকের পর এমনিতেও ওকে কলেজে ভর্তি হতে যেতেই হত শহরে। বাবা বদলি হয়ে ওদিকে গেলে ও বাড়ি থেকেই যাতায়াত করতে পারবে, হস্টেলে থাকতে হবে না। সুতরাং আমাদের এখান থেকে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল।
আমার আর সাবিত্রীর সবচেয়ে প্রিয় খেলা ছিল লুকোচুরি। আমরা একজন লুকোতাম আর অন্যজন তাকে খুঁজতাম। খুঁজে পেলে যে লুকাতো তাকে অপরজন যা বলত তাই করতে হত। আর উলটোটা হলেও তাকে নিজের সম্পর্কে কিছু কনফেশন করতে হত। এই যেমন কাল আমি মাকে না বলে মেলায় গিয়েছিলাম অথবা তোর যে পেনটা খুঁজে পাচ্ছিস না সেটা আমি লুকিয়েছি… এই ধরনের নির্দোষ কনফেশন। অনেকটা এখনকার ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলার মতো। কিন্তু এর মধ্যেই সেই সময় কত যে আনন্দ খুঁজে পেতাম!
দেখতে-দেখতে আমাদের গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার সময় এসে গেল! আর মাত্র এক সপ্তাহ! একদিন স্কুল ফেরত সাবিত্রী এসেছে আমাদের বাড়িতে। মা আমাদের দু’জনকে যত্ন করে খাইয়ে দাদার খাবার ঢেকে রেখে একটু গড়িয়ে নিতে গেছেন। দাদা ফিরবে ঘণ্টাখানেক পর। স্কুল থেকে সোজা যাবে একজন স্যারের কাছে টিউশন পড়তে। আমি আর সাবিত্রী উঠে গেলাম দোতলায়। এই দোতলা সম্পর্কে একটু বলা দরকার। যদিও আমরা পুরো বাড়িটা নিয়েই থাকতাম, তবুও দোতলাটা অব্যবহৃতই থাকত। কারণ দোতলার অর্ধেকটা ছিল একটা মাত্র বিশাল ঘর, আর বাকিটা ছাদ। ঘরের পুরোটাই প্রায় জোড়া পুরোনো পরিত্যক্ত বিছানা পত্ৰ, ভাঙাচোরা জিনিস, লোহার বড়ো বড়ো ট্রাঙ্ক, কাঠের বাক্স ইত্যাদি দিয়ে। এসব যে কাদের জিনিস, তা আমরা জানতাম না। হয়তো আগে যাঁরা এখানে থেকে গেছেন তাঁদের জিনিস হবে। অপ্রয়োজনীয় বলে রেখে গেছেন। আমি আর সাবিত্রী এখানে লুকোচুরি খেলতাম। বড়ো বড়ো বাক্স বিছানার আড়ালে লুকোতে সুবিধা হত।
কয়েকবার আমি চোর হলাম। আমাকেই লুকোতে হল। প্রতিবার সাবিত্রী আমাকে সহজেই খুঁজে পেয়ে গেল। তারপরের বার দশ কুড়ি গোনার পর ঠিক হল আমি এক থেকে একশো গুনবো আর সাবিত্রী লুকাবে। আমি ছাদে গিয়ে দেয়ালে মুখ গুঁজে গুনতে থাকলাম! গোনা শেষ হওয়ার পর হাঁক পারলাম, ‘আমি আসছি’! মনে হল কেউ যেন হুড়মুড় করে দৌড়ে গেল। বুঝলাম সাবিত্রী এখনও লুকোবার সঠিক জায়গা খুঁজে পায়নি। একচিলতে হাসি খেলে গেল আমার ঠোঁটে। এবার ওকে হারতেই হবে। পা টিপে টিপে ঢুকলাম ঘরে। সাধারণত যেসব জায়গায় আমরা লুকোতাম, সব জায়গা তন্ন তন্ন করে খুঁজে ফেললাম।
কী আশ্চর্য! সাবিত্রী যেন ভ্যানিশ করে গেছে! একবার ভাবলাম ও নীচে লুকায়নি তো? কিন্তু সেটা তো খেলার নিয়মের বাইরে! কোথাও থেকে একটা চাপা একটানা কঁক্ কঁক্ কঁক্ শব্দ ভেসে আসছে। নিস্তব্ধ দুপুরে হয়তো কোনও নিঃসঙ্গ পাখি সঙ্গীকে ডাকছে। বাইরে ছাদের দিকে চেয়ে দেখলাম পড়ন্ত রোদের শেষ আভায় কেমন যেন মন খারাপ মিশে। হঠাৎ মনটা খুব হু হু করে উঠল। সাবিত্রী আমাকে না বলে সেই যে চলে গেল, আর ওর খোঁজ পেলাম না। যে এক সপ্তাহ আমরা ওখানে ছিলাম, শুধু গ্রাম জুড়ে খোঁজাখুঁজি, ওর বাবা মায়ের অসহায় কান্না! আমি মাঝে মাঝেই দোতলায় উঠে যেতাম বলে মা দোতলায় তালা দিয়ে দিলেন। সেই যে দৌড়ানোর শব্দ পেয়েছিলাম, ওটাই ছিল আমার কাছে সাবিত্রীর শেষ স্মৃতি। কিন্তু নির্জন দুপুরে বা ঘুম না-আসা রাতে প্রায়ই শুনতাম সাবিত্রী আমাকে চাপা গলায় ডাকছে। ‘শম্পা শম্পা, খুব কষ্ট রে! বুকের উপর খুব চাপ! আমাকে এখান থেকে নিয়ে যা!’
চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে গেছি বহুবার। বাবা বলতেন ব্যাপারটা সাইকোলজিক্যাল। এখান থেকে দূরে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। মা কাঁদতেন। আমার জন্য, সাবিত্রীর জন্যও। দাদা গম্ভীর মুখে বেরিয়ে যেত বাড়ি থেকে। ওর গলার সোনার চেনটা হারিয়ে গিয়েছিল সেদিনই।
আমরা এই ঘটনার পর যে এক সপ্তাহ ছিলাম, তার মধ্যে শুধু আমি যে ওর ডাক শুনতে পেতাম তা নয়! মা-ও এক রাতে ঘুম ভেঙে ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন দরজার পাশে। বাবা খুব বকেছিল মাকে। কোথায় আমাকে সাহস দেবে তা না, উলটে নিজেও এসব ভুলভাল দেখতে শুরু করেছে! তবে মায়ের মুখ দেখে বুঝেছিলাম মা ভুল দেখেননি।
এরপর আমরা চলে যাই শহরে। দাদা ভর্তি হল নামী কলেজে আমি একটা ভালো স্কুলে! বাবার কথাই হয়তো ঠিক। শহরে আসার পর থেকে সাবিত্রীর গলার আওয়াজ পাওয়াটা আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু এক নতুন উপসর্গ শুরু হল দাদার! ঘুমের মধ্যে মাঝে মাঝেই বোবায় ধরত ওকে। ডাক্তারি মতে স্লিপ প্যারালাইসিস। ডাক্তার যাই বলুন, সে যে কী কষ্ট, তা চোখে দেখা যায় না। সারা শরীর অসাড় হয়ে যেত দাদার। গলা থেকে গোঙানির মতো শব্দ বেরোতো। শব্দটাও অদ্ভুত। কঁক্ কঁক্ কঁক্! যেন সাপের মুখে পড়া ব্যাঙ! দু’চোখ বন্ধ অথচ হাত পা টান করে যেন কোনও অদৃশ্য শক্তির সঙ্গে লড়াইতে মেতেছে ও। মিনিট দশেক স্থায়ী হত এই অবস্থা। তারপর নিজেই ঠিক হয়ে যেত আস্তে আস্তে। ডাক্তার বলেছিলেন এরকম হলে ওকে জাগিয়ে দিতে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল, যতক্ষণ না ও নিজে থেকে জাগতো, ততক্ষণ কিছুতেই ওকে জাগানো যেত না। কিছু পরে ঘেমে স্নান করে জেগে উঠত দাদা। মা স্থানীয় এক মন্দির থেকে তাবিজ এনে একটা নতুন সোনার চেনে করে ওকে পরিয়ে দিলেন। কিন্তু কাজ খুব একটা হল না।
দেখতে দেখতে কেটে গেল বেশ কয়েকটা বছর। দাদা পোস্ট ডক্টরেট করতে চলে গেল ইতালি। আমি মেডিক্যালে সুযোগ পেয়ে পড়তে চলে এলাম নদীয়ার একটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে। আমাদের কলেজ থেকে আমার সেই ছোটবেলার গ্রাম মাত্র বাইশ কিলোমিটার পথ। ঠিক করলাম একদিন যাব। সাবিত্রীর বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে খুব ইচ্ছে করছিল। একদিন কাউকে কিছু না বলে চলেও গেলাম।
সেদিন ঘোর বর্ষা! আকাশ সারাদিন মেঘে ঢাকা। মাঝে মাঝেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামছে।
সাবিত্রীদের বাড়ির অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। ওর মা তো আমাকে চিনতেই পারলেন না। কাকু মানে ওর বাবা একবারেই চিনে ফেলে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। কোথায় বসাবেন কী খাওয়াবেন সেই চিন্তা করতে লাগলেন। আমি অবশ্য ওঁকে বললাম এসব নিয়ে চিন্তা না করতে। মাটির ধুলোমাখা দাওয়ায় বসে পড়লাম। কাকুর কাছেই শুনলাম, সাবিত্রীর মা ও নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। কাকুকে ছাড়া কাউকে চিনতেই পারেন না। মাঝে মাঝেই দুপুরে ভাত বেড়ে বসে থাকেন সাবিত্রী স্কুল থেকে ফিরে খাবে বলে। আমি বেশিক্ষণ বসতে পারলাম না। বড্ড কষ্ট হচ্ছিল। উঠে পড়লাম। কাকুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে উঠে পড়লাম। ফেরার সময়ে একবার এলাম আমাদের পুরোনো বাড়ির সামনে। তখন প্রায় সন্ধে নেমে এসেছে। অদ্ভুত ব্যাপার, বাড়িটা মনে হল ফাঁকা। কোনো আলো দেখতে পেলাম না। ওপর দিকে তাকালাম। সেই দোতলার ঘরের বন্ধ জানলা। একটা জানলার কাচ কোণা করে ভাঙা। ঝিপঝিপে বৃষ্টিতে মনে হল কেউ যেন দাঁড়িয়ে আছে। বুকটা কেমন ধ্বক্ করে উঠল। ওই তো, অন্ধকারে প্রায় মিশে কে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে আমায়! বশীভূতের মতো ঢুকে গেলাম বাড়িতে। দরজা খোলা। সোজা উঠে গেলাম দোতলায়! মা যে দরজায় তালা দিয়ে রেখেছিল, সেটাও খোলা। কী জানি আমাদের পরে আরও কতজন থেকে গেছে এখানে! দরজায় হাত ঠেকাতেই খুলে গেল দরজা। ঘরের ভাঙা জানলা দিয়ে রাস্তার আলো এসে পড়েছে কোনাচে করে। তাতেই দেখলাম ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে সাবিত্রী। স্কুলড্রেস পরা ক্লাস সেভেনের সাবিত্রী। আমি এগোতেই ও প্রথমে হাত দিয়ে ইশারা করে আমাকে থামতে বলল। তারপর আঙুল তুলে ইশারা করল ঘরের কোণে।
আমি তাকিয়ে দেখলাম, ওদিকে টাল করে রাখা তোশক, বাক্স বিছানা। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে টর্চটা জ্বালালাম। তারপর উঁচু হয়ে থাকা বিছানার স্তুপ নামাতে লাগলাম টেনে টেনে। ধুলোয় আমার সারা শরীর ভরে গেল। কাশতে কাশতেও হাত চালানো থামালাম না। একদম নীচে একটা বড়োসড় লোহার ট্রাঙ্ক। আমার কেমন যেন একটা সন্দেহ হতে লাগল। একটা ক্রমাগত একঘেয়ে কঁক্ কঁক্ শব্দ আমার কান যেন বধির করে তুলল। শব্দটা আসছে পিছনে দাঁড়ানো সাবিত্রীর গলা থেকে। আমি কোনো কিছু চিন্তা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি। বহু বছরের দমচাপা শ্বাস সাবিত্রীর বুক ভেঙে বেরিয়ে আসছে। একটানে খুলে ফেললাম ট্রাঙ্কের ঢাকনাটা। টর্চটা ওদিকে তুলে ধরতেই… একটা কঙ্কাল! এক মুহূর্তে বুঝে গেলাম ঘটনা। লুকোতে গিয়ে সাবিত্রী ঢুকেছিল এই ট্রাঙ্কে! কোনওভাবে সেটা লক হয়ে যায়। কিন্তু একটা কথা মাথায় এল না। ট্রাঙ্কের ওপর অত বিছানাপত্র চাপাল কে? ওগুলো না থাকলে হয়তো তখনই ট্রাঙ্ক খুলে দেখা হত। আরও একবার টর্চের আলোয় দেখতে গিয়ে চোখে পড়ল কঙ্কালের হাতে চকচক করছে কিছু একটা ধাতব বস্তু। নীচু হয়ে টেনে তুললাম। একটা সোনার চেন। আর চেনটা আমার খুব চেনা!
কেন যেন আমার একটুও ভয় করছে না। সাবিত্রী আমার একদম কাছে দাঁড়িয়ে আছে। ওর কালো হয়ে যাওয়া মুখটা, করুণ চোখটা, সব আমার খুব কাছে। হাত বাড়ালাম ওকে জড়িয়ে ধরব বলে। একটা আর্তনাদ যেন চাপা কান্নার মতো একরাশ গরম হাওয়া ছড়িয়ে বেরিয়ে গেল জানলার ভাঙা অংশ দিয়ে। আর আমি ছুটে গেলাম সাবিত্রীর বাবার কাছে।
সাবিত্রীর শেষকৃত্যের পর আমি ফিরলাম হস্টেলে। তবে একটা শেষ কাজ বাকি ছিল। কিন্তু যাকে আমার দরকার সে তো এখন বিদেশে। আমাকে অপেক্ষা করতে হবে সে ফেরার! যদিও এখন আমার কাছে সব পরিষ্কার! সেদিন কোনও কারণে দাদা টিউশন থেকে তাড়াতাড়ি ফিরেছিল। দোতলার ঘরে সাবিত্রীকে একা পেয়ে কোনওভাবে সুযোগ নিতে চেয়েছিল, না কি আগেই কখনো সে ঘটনা ঘটেছিল জানি না। সাবিত্রীর কাছে বাধা পেয়ে আক্রোশ চরিতার্থ করতে ও ট্রাঙ্কে লুকোতেই ট্রাঙ্ক লক করে ওপরে বিছানার পাহাড় চাপিয়ে নেমে যায় নীচে। এই সময়েই কোনওভাবে দাদার চেনটা রয়ে যায় সাবিত্রীর হাতে। আমি তখন ছাদে এক দুই গুনছি। আমার সাড়া পেয়ে দাদা পালিয়েছিল দুড়দাড় করে! সেই পায়ের শব্দই পেয়েছিলাম আমি। আর দম বন্ধ হয়ে মরতে বসা সাবিত্রীর গলা থেকে বেরিয়ে আসা কঁক্ কঁক্ শব্দটাকে আমি ভেবেছিলাম কোনও পাখির ডাক। নিজের অজান্তেই চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে আমার। এর শাস্তি পেতেই হবে দাদাকে। যদিও অনেক বছর ধরেই যে কষ্ট সাবিত্রী পেয়েছিল, সেই কষ্ট নিজেও অনুভব করছিল ও। জানি না সত্যিই কোনও রোগ, না কি পাপের প্রায়শ্চিত্ত ছিল ওটা দাদার! স্লিপ প্যারালাইসিস! কে জানে!
পরদিন ভোরবেলা বাবার কাছ থেকে ফোন পেলাম। গতকাল রাতে ইতালিতে দাদার মৃতদেহ পাওয়া গেছে ওর ফ্ল্যাটে। তদন্ত হবে, পোস্ট মর্টেম হবে। তবে আপাতভাবে পুলিশ মনে করছে ঘুমের মধ্যে কোনওভাবে দম বন্ধ হয়ে মৃত্যু। বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। এসময়ে মায়ের পাশে থাকা দরকার। ট্রেনে যেতে যেতে ব্রিজ থেকে হাত বাড়িয়ে দাদার সোনার চেনটা ফেলে দিলাম নদীর জলে।