রিটার্ন টু জায়ন

রিটার্ন টু জায়ন

১৮৯৮ সালের কথা, মার্ক টোয়েন বলেছিলেন— ‘ইহুদিরা যদি একটা রাষ্ট্র গঠন করে, তাহলে তা হবে বিশ্বের সবচেয়ে উর্বর মস্তিষ্কের মানুষদের দেশ। এটা হতে দেওয়াটা ঠিক হবে না। এই জাতি নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে পেরে যাবে। ঘোড়া যদি নিজের শক্তির কথা জেনে যায়, তাহলে তো আমরা আর ঘোড়ায় চড়তেই পারব না’।

টোয়েন কি জানতেন যে, এর ঠিক ৫০ বছর পরে ইহুদিরা একটা রাষ্ট্র তৈরি করবে?

হয়তো ‘না’।

ইহুদিদের ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠন মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক অসাধারণ অধ্যায়! নতুন রাষ্ট্র গড়ে তোলার পরের কয়েক দশকের মধ্যেই তাঁরা এমন উচ্চতায় নিজেদের নিয়ে গেছে যে তা আজ রূপকথার মতোই শোনায়। আর মনে হয় সার্থক বেন-গুরিয়নের সেই উক্তি— ‘ইন ইসরায়েল, ইন অর্ডার টু বি রিয়ালিস্ট ইউ মাস্ট বিলিভ ইন মিরাকলস।’

হ্যাঁ, ইসরায়েল আসলে এক অলৌকিক ভূমির নাম। সেই সত্তর খ্রিস্টাব্দের কথা। এই মাটি থেকে রোমানদের দ্বারা বিতাড়িত হয়েছে ইহুদির দল। তারপর প্রায় দু’ হাজার বছর ধরে ইহুদিরা তাদের পুণ্যভূমিতে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখেছে। পৃথিবীর যে স্থানেই থাকুক না কেন, ইহুদিরা প্রার্থনা করত জেরুসালেমের দিকে মুখ করে। একদিন যে তারা সেখানে ফিরবেই এই বিশ্বাস কখনো তাদের মধ্যে থেকে হারিয়ে যায়নি। প্রায় দু’ হাজার বছর তারা বাস করেছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। এই সময় তাদের নিজস্ব কোনো দেশ ছিল না।

ষষ্ঠ শতক থেকেই প্যালেস্টাইন বা ফিলিস্তিনে ইহুদিরা ছিল সংখ্যালঘু। সেই সময় থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত প্যালেস্টাইন ছিল পাথুরে, অনুর্বর ও ক্যাকটাস ভরা এক মরুময় এলাকা।

জায়নিজম— যার মানে রিটার্ন টু জায়ন’ বা ‘রিটার্ন টু জেরুসালেম’। ইহুদিদের স্বপ্ন ছিল তারা যখন আবার প্যালেস্টাইনে ফিরে যাবে, তখন জেরুসালেমই হবে তাদের রাজধানী।

জায়নিজমই কি ইহুদি ধর্ম?

না, ইহুদি রীতির সঙ্গে জায়নিজমের একটা মূলগত পার্থক্য আছে। জায়নিজমের আবির্ভাবের আগে ইহুদিরা বিশ্বাস করত যে, একজন মসীহা আবির্ভূত হবেন এবং তিনিই ইহুদিদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন ফিলিস্তিনের মাটিতে। আর জায়নিস্টরা বলেন—মসীহা নয়, এই কাজ করতে হবে আমাদেরই, ইহুদিদেরই!

জায়নিজমের সূত্রপাত ১৮৬০ সাল নাগাদ। ইহুদি-বিদ্বেষ তখন ইহুদিদের কাছে এক জ্বলন্ত সমস্যা এবং তা কোনো বিশেষ দেশের সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। ইউরোপে ইহুদিদের প্রতি খ্রিস্টানদের একটা জাতিগত বিদ্বেষ ছিলই। পূর্ব ইউরোপে এই বিশ্বাস প্রচলিত ছিল যে, যিশু খ্রিস্টকে ইহুদিরা হত্যা করেছে। আর এই বিদ্বেষ এতটাই প্রবল ছিল যে কোনো ইহুদি খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করলেও তাকে ঘৃণার চোখেই দেখা হত। মধ্য ও পশ্চিম ইউরোপেও এই বিদ্বেষ সংক্রামিত হয়। ইহুদিরা এটা উপলব্ধি করে যে, এক দেশ থেকে পালিয়ে অন্য কোনো দেশে আশ্রয় নিলেও তারা শান্তিতে বসবাস করতে পারবে না।

১৮৮০ সালে রাশিয়াতে সরকারি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ইহুদিদের ভর্তির জন্য একটা সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হয়, যাতে সব ইহুদি শিক্ষার সুযোগ না পায়। ১৮৯১-১৮৯২ সালের মধ্যে কম করে কুড়ি হাজার ইহুদিকে মস্কোর বাইরে বের করে দেওয়া হল। এভাবেই ইহুদিরা হয়রানির শিকার হচ্ছিল। ১৮৮২ সাল থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যে পূর্ব ইউরোপের অস্ট্রিয়া, পোল্যান্ড, জার্মানি থেকে প্রায় ২৫ লক্ষ ইহুদি পালিয়ে বাঁচেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পনেরো বছর আগে থেকে প্রায় ১৩ লক্ষ ইহুদি রাশিয়া থেকে পলায়ন করে। এদের একটা বড় অংশ আমেরিকায় পাড়ি জমায়। আর কিছু লোক চলে যায় প্যালেস্টাইনে।

জায়নিজমের উত্থানের ক্ষেত্রে ১৮৬০ সাল থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত লেখা বেশ কিছু বই ইহুদিদের মধ্যে বিস্তর প্রভাব ফেলেছিল। যেমন ১৯৬২ সালে মোজেস হেস-এর লেখা ‘রোম অ্যান্ড জেরুসালেম’। এই বইতে হেস ইহুদিদের প্যালেস্টাইনে ফিরে আসার জন্য আহ্বান জানান। এই সময়েই পেরেট্জ সমোলেসকিন এক হিব্রু মাসিক পত্রিকা বের করতে শুরু করেন, যেখানে তিনি লেখেন তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘দ্য ইটারনাল পিপল’। তাঁর মত ছিল— ‘প্যালেস্টাইন একদিন সমগ্র বিশ্বের কাছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে এবং ইহুদিরা আবার সেখানে নিজেদের পুরোনো ঐতিহ্য ফিরে পাবে।’ ভদ্রলোকের দূরদর্শিতা দেখলে অবাক হতে হয়।

১৮৮০ সালে রাবাই স্যামুয়েল মহিলিভার প্যালেস্টাইনে প্রথম ইহুদিদের অনুপ্রবেশের সূচনা করেন। তিনি একটি রাজনৈতিক সংগঠন তৈরি করেন, যার নাম ছিল— ‘লাভার্স অফ জায়ন’। মহিলিভার নিজের রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে ইহুদিদের প্যালেস্টাইনে জমি কেনার ডাক দেন। রাশিয়া ও পোল্যান্ডের ইহুদিদের মধ্যে তাঁর প্রচারই সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিল।

লাভার্স অফ জায়নের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন জুডা পিন্সকার। তাঁর আরও একটা পরিচয় ছিল— রাশিয়ান মেডিকাল কর্পসের একজন আধিকারিক। তিনি ওদেসাতে ইহুদিদের ওপর চলা হত্যাকাণ্ড নিজের চোখে দেখেছিলেন। পিন্সকার ইহুদিদের শক্ত হাতে লড়াই করার ডাক দিলেন। তিনি বললেন, ‘ইহুদিরা নিজেরা নিজেদের রক্ষা করতে না পারলে কেবলমাত্র অন্যের দয়ার ওপর নির্ভর করে কোনোভাবেই টিকে থাকতে পারবে না।’

আর ঠিক এই সময়েই আবির্ভাব ঘটল ইহুদিদের সবচেয়ে বেশি আলোচিত নেতা থিওডর হার্জেলের। ১৮৬০ সালে হাঙ্গেরির বুদাপেস্ট শহরে এক সম্ভ্রান্ত ইহুদি পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। ভিয়েনাতে তিনি আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। কিন্তু পেশা হিসাবে বেছে নেন সাংবাদিকতাকে এবং একজন দক্ষ সাংবাদিক হিসাবে তিনি ভিয়েনাতে বেশ সুনামও অর্জন করেন।

এই পর্যন্ত হার্জেলের জীবন স্বাভাবিক খাতেই বইছিল। কিন্তু ওই যে, নিয়তি কেন বাধ্যতে। জীবনের বাঁক বদল করে দিল একটি ঘটনা, যা ‘ডেফাস অ্যাফেয়ার’ নামে ইতিহাসে খ্যাত। একটি পত্রিকার তরফ থেকে হার্জেলকে এই কেসটা কভার করার জন্য প্যারিসে পাঠানো হয়। সময়টা ছিল ১৮৯৪ সালের ডিসেম্বর মাস। ক্যাপ্টেন আলফ্রেড ড্রেফাস ছিলেন একজন ফরাসি আর্টিলারি অফিসার। জাতিতে ইহুদি। জার্মানিকে ফরাসি সেনার গোপন তথ্য সরবরাহ করার অভিযোগে এই ইহুদি অফিসারকে জেলে পোরা হয়। ১৮৯৬ সাল নাগাদ অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেল যে, আসল অপরাধী ড্রেফাস নন, আরেক জন ফ্রেঞ্চ আর্মি মেজর। তখন ফরাসি আর্মির উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ব্যাপারটাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তত দিনে সংবাদমাধ্যমে গোটা ব্যাপারটা নিয়ে বেশ শোরগোল পড়ে গেছে।

হার্জেল প্রথম দিকে ভেবেছিলেন যে, ড্রেফাসই আসল অপরাধী। কিন্তু যখন তিনি নিশ্চিত হলেন ড্রেফাস নির্দোষ, তখন তিনি ড্রেফাসের সমর্থনে কোমর বেঁধে নামলেন। শেষ পর্যন্ত ১৯০৬ সালে ড্রেফাসের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খারিজ করে দেওয়া হল এবং তাঁকে ফ্রেঞ্চ আর্মিতে মেজর পদে পুনর্বহাল করার সিদ্ধান্ত নিল ফ্রেঞ্চ গভর্নমেন্ট।

এই ঘটনা হার্জেলের জীবনে গভীর দাগ কেটে যায়। ইহুদি-বিদ্বেষের যে রূপ তিনি দেখলেন, তাতে তিনি বুঝলেন যে এই বিদ্বেষের শেকড় সমাজের অনেক

গভীর পর্যন্ত ঢুকে আছে। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলেন, ‘একে উপড়ে ফেলা কি অসম্ভব?’ তাঁর কানে বাজতে থাকল উন্মত্ত ফরাসি জনতার চিৎকার— ‘ইহুদিদের মেরে ফেলো! ইহুদিদের মেরে ফেলো!’

তিনি লিখলেন একটি বিখ্যাত বই— ‘দ্য জিউয়িস স্টেট’। বইটি প্রকাশিত হয় ১৮৯৬ সালে। রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি হল। জায়নিজম পরিণত হল একটি রাজনৈতিক আন্দোলনে। বইটি ইংরেজি, হিব্রু, য়িদ্দিশ, রোমানিয়ান, বুলগেরিয়ান, রাশিয়ান ও ফরাসি ভাষায় অনূদিত হল। ইহুদিরা এবার ভাবতে শুরু করলেন যে, এবার তাঁদের একটা দেশ দরকার এবং তা বাস্তবেও করে দেখানো সম্ভব। এই বই প্রকাশিত হবার পরই কেউ হার্জেলকে প্রথম জায়নিস্ট কংগ্রেসের প্রস্তাব দেন এবং তিনি সেই প্রস্তাব সাদরে গ্রহণও করেন। প্রায় আঠেরো মাসের পরিকল্পনার পর তিনি এই জায়নিস্ট কংগ্রেস বাস্তবায়িত করে দেখালেন। ১৮৯৭ সালে সুইৎজারল্যান্ডের বেসেল শহরে আয়োজিত হল প্রথম জায়নিস্ট কংগ্রেস। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অংশগ্রহণকারীরা জমায়েত হয়েছিল বেসেলে। ব্রিটেন, আমেরিকা, প্যালেস্টাইন, আরব, রাশিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স ও আরো অনেক দেশ থেকে অংশগ্রহণকারীরা এসেছিল। মোট ১৮৭ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছিলেন। কয়েক দিনের দীর্ঘ আলোচনা ও বাগবিতণ্ডার পর ইহুদিদের জন্য প্যালেস্টাইনে স্থায়ী বাসস্থান গড়ে তোলার জন্য কয়েকটি ধাপ স্থির করা হয়—

-প্যালেস্টাইনে কৃষক, শ্রমিক ও মিস্ত্রিদের বাস করার জন্য উৎসাহিত করা হবে।

-এমন একটা আইনব্যবস্থা তৈরি করা হবে, যার সঙ্গে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ইহুদিদের আইনের সামঞ্জস্য থাকবে।

-ইহুদি ভাবাবেগ ও জাতীয়তাবাদকে আরও শক্তিশালী করে তোলা হবে।

-ইহুদিদের এই দেশের জন্য একটা সরকারী স্বীকৃতি জোগাড় করাই হবে প্রাথমিক লক্ষ্য।

—শিক্ষাদীক্ষার মান বজায় রাখার জন্য একটা হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব রাখা হয়।

-ইহুদিদের জাতীয় তহবিল তৈরি করা হবে, যার উদ্দেশ্য অটোমান শাসিত প্যালেস্টাইনে জমি কিনে তাকে বসবাসের উপযোগী করে তোলা।

হার্জেল পরে নিজের ডায়রিতে লিখেছিলেন— ‘বেসেলে আমি ইহুদি রাষ্ট্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম, কিন্তু যদি আজ আমি এই এই কথাটি চিৎকার করে সবাইকে শোনাই তাহলে আমি হাসির খোরাক হব। আজ থেকে পাঁচ বছর পর না হোক, ৫০ বছর পর সবাই আমার কথার সত্যতা স্বীকার করে নেবে।’

হার্জেল জানতেন যে, ইহুদি-রাষ্ট্র গঠন করাটা মোটেও সহজ হবে না। কারণ ধনী ইহুদিরা ছিল হার্জেলের মতবাদের বিরোধী। অনেক রাবাইও তাঁর মতবাদকে সমর্থন করেননি। তবু ভবিষ্যতের ইহুদি-রাষ্ট্র নিয়ে তাঁর মনে কোনো সন্দেহ ছিল না। কারণ সাধারণ নিম্নবিত্ত ইহুদিরা তাঁকে সাদরে গ্রহণ করছিলেন। তাঁরা হার্জেলের নাম দিয়েছিলেন— ‘হার্জেল দ্য কিং’।

কিন্তু রাজারও ভুল হয়। আর হার্জেলও এই সময় একটা মারাত্মক ভুল করে বসেন। জায়নিস্টদের মধ্যে তখন দুটো দল ছিল। এক দল মনে করত যে কেবল কূটনীতির মাধ্যমেই ইহুদি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আরেকটা দল মনে করত যে, স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্র তৈরি করার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া অন্য কোনো রাস্তা নেই। একদম ভারতের স্বাধীনতা-পূর্ব নরমপন্থী ও চরমপন্থী আন্দোলনের মতোই। ১৯০৩ সালে জায়নিস্ট কংগ্রেসে হার্জেল প্রস্তাব রাখেন প্যালেস্টাইনের পরিবর্তে উগান্ডাতে ইহুদি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হোক, কারণ ব্রিটিশরা তাঁকে ওখানে জমি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই প্রস্তাবে এক চরম বিশৃঙ্খলা জন্ম নিল। ক্রুদ্ধ জায়নিস্টরা তাঁকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলল। এই ঘটনার প্রায় এক বছর পর মাত্র চুয়াল্লিশ বছর বয়সেই হার্জেলের মৃত্যু হয়।

জায়নিস্টরা প্যালেস্টাইনে ‘জায়নিস্ট ন্যাশনাল ফান্ড’ ব্যবহার করে জমি কিনতে আরম্ভ করে দেয়। জমির মালিক তো ছিল আরব ও তুর্কিরা। তারা অত্যন্ত চড়া দামে জমি বিক্রি করছিল। ১৮৮০ সাল নাগাদ মাত্র ১২,০০০ ইহুদির বাস ছিল প্যালেস্টাইনে। ১৯৮০ থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় পর্যন্ত আরো ১,১৫,০০০ জন ইহুদি এই মাটিতে ডেরা জমায়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হল। জায়নিস্ট মুভমেন্ট একটা বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেল। এই সময় অটোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল প্যালেস্টাইন। অটোমানরা জার্মানির পক্ষ নেওয়ায় ইহুদিদের জন্য পরিস্থিতি হয়ে উঠল বিপজ্জনক। কারণ অটোমানরা সব ইহুদিকেই সন্দেহের চোখে দেখছিল। সামান্য ইংরেজি জানা ইহুদিদেরকেও ব্রিটিশদের সমর্থক সন্দেহে ফাঁসিতে ঝোলানো হতে থাকে। ১২,০০০ ইহুদিকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। জায়নিজমকে সম্পূর্ণরূপে বেআইনি ঘোষণা করা হয়।

১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর ব্রিটিশ বিদেশ সচিব আর্থার জেমস ব্যালফোর বিশিষ্ট ব্রিটিশ জায়নিস্ট লর্ড ওয়াল্টার রথসচাইল্ডকে একটি খোলা চিঠিতে জানান যে, ব্রিটিশ সরকার মনে করে যে প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের জন্য একটা আলাদা রাজ্য তৈরি হওয়া দরকার। এটাই ‘ব্যালফোর ডিক্লারেশন’ নামে খ্যাত।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আবহ। ব্রিটিশ ও অস্ট্রেলিয়ার সৈন্য তখন প্যালেস্টাইনের ভেতর লড়ছে অটোমানদের বিরুদ্ধে। এরকম একটা পরিস্থিতিতে এমন একটা খোলা চিঠি ইহুদিদের পক্ষে কতটা মঙ্গলকারী আর কতটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তা নিয়ে অবশ্য বিতর্কের শেষ নেই। কারো কারো মতে ইহুদিদের যুদ্ধে অবদানের কথা মাথায় রেখেই এই ডিক্লারেশন করা হয়। এদের মধ্যে একজনের নাম উল্লেখ না করলেই নয়— কেম উইজম্যান। উইজম্যান ছিলেন একজন ইহুদি কেমিস্ট। তিনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফারমেন্টেশনের জনকও বটে। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে সিন্থেটিক কর্ডাইট তৈরি করার দায়িত্ব দেয়। এটার ব্যবহার হত বিস্ফোরক তৈরি করার জন্য। আগে কর্ডাইট তৈরি করার জন্য জার্মানি থেকে আমদানি করা অ্যাসিটোন ব্যবহার করা হত। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এর একটা বিকল্পের দরকার হয় ব্রিটিশদের। উইজম্যান ব্রিটিশদের দেওয়া দায়িত্ব পালন করেন ও তিনি সিন্থেটিক কর্ডাইট তৈরির কৌশল তাদের হাতে তুলে দেন এবং এই কাজের সুবাদে তিনি ব্রিটেনের সিনিয়র ক্যাবিনেট সদস্যদের ঘনিষ্ঠ হতে পেরেছিলেন।

উইজম্যান তাদের কাছে ইহুদিদের সমস্যাগুলো তুলে ধরলেন। যদিও তিনি ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক, কিন্তু স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের জন্য নিজের চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি। পরবর্তীতে তিনি ইসরায়েলের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা আরেকটা ছলনা করল। তারা আরবদের প্রতিশ্রুতি দিল যে, যদি আরবরা অটোমানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তাহলে আরবদের স্বাধীন দেশ গড়ার অধিকার দেওয়া হবে। ফলস্বরূপ তৈরি হল সিরিয়া, লেবানন, ট্রান্সজর্ডন, ইরাক ও সৌদি আরবের মতো দেশ। এবার প্যালেস্টাইন কার দখলে থাকবে এই নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এই সময় সামনে আসে ‘কিং অফ হেজাজ’ ও মিশরের ব্রিটিশ হাই কমিশনার স্যর আর্থার হেনরি ম্যাকমোহনের মধ্যে আদানপ্রদান হওয়া চিঠিপত্র। এতে ব্রিটিশদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট হয়। আরবরা দাবি করে যে, প্যালেস্টাইনও এই প্রতিশ্রুতির অংশ। যদিও প্যালেস্টাইনের স্পষ্ট উল্লেখ তাতে ছিল না। এবার শুরু হয় বেলফর ডিক্লারেশন ও ম্যাকমোহনের চিঠিপত্র নিয়ে টানাহেঁচড়া।

আরবরা দাবি করল সপ্তম শতক থেকে তারাই এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং তাদেরই এই এলাকা প্রাপ্য। আর ইহুদিদের দাবি ছিল যে, খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ লে হুদিরাই এই অঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল এবং সেই সুবাদে তাদেরই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।

এদিকে ইহুদিরা প্যালেস্টাইনে নিজেদের সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছিল। ১৯১৮ থেকে ১৯৩৬ সালের মধ্যে প্রায় ১.৫ লক্ষ ইহুদি প্যালেস্টাইনে এসে বসবাস করতে শুরু করে।

মরুভূমি এলাকার মধ্যে ধীরে ধীরে গড়ে উঠল গ্রাম, শহর, কলকারখানা ও চাষের খামার। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হতে থাকল। আর এর সুফল পেল আরবরাও। সেই সময় প্রায় ১ লক্ষ আরব ছিল ভূমিহীন। তাদের জীবনযাপন ছিল যাযাবরের মতোই। আরবরা ইহুদিদের খেতখামার ও কলকারখানায় কাজ করা শুরু করে দিল। আরব জমিদারদের থেকেও বেশি মজুরি তারা পেতে লাগল ইহুদিদের কাছে।

ক্ষেপে গেল আরব জমিদাররা। তারা ছক কষতে লাগল— ইহুদিদের ধ্বংস করার ছক। ব্রিটিশরা সব দেখে-বুঝেও চুপই রইল। কারণ তারা কোনো পক্ষকেই ঘাঁটাতে চাইছিল না। আরব ও ইহুদিদের বিবাদ মেটানোর চেয়ে সাম্রাজ্য রক্ষা করাটাই ছিল তাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আরবরা ইহুদিদের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ শুরু করে। আরব-আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য ইহুদিরা গড়ে তুলল এক সশস্ত্র বাহিনী ‘হেগানা’। আর এই হেগানাই পরবর্তীতে পরিণত হল ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ-এ।

জার্মানিতে হিটলার ক্ষমতায় আসার পর সেখানে ইহুদিদের ওপর অত্যাচার শুরু হয়। জার্মান ইহুদিরা দলে দলে প্যালেস্টাইনে আসতে থাকে। ১৯৩৬ সাল নাগাদ প্যালেস্টাইনে কেবল জার্মান ইহুদির সংখ্যাই ছিল প্রায় ৬০ হাজার। বিজ্ঞানী, কেমিস্ট, রিসার্চার— সবাই প্যালেস্টাইনে আসতে লাগল আশ্রয়ের খোঁজে। আর এদের আগমনের ফলে প্যালেস্টাইনে শিক্ষা, অর্থব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হল। ব্রিটিশ শাসনে থেকেও এই ইহুদিরা গড়ে তুললেন প্রায় এক স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল।

আরবরা কিন্তু পরিষ্কার বুঝতে পারছিল যে ইহুদিরা কোন পথে এগোচ্ছে। তারাও স্থির করে যে ইহুদিদের ধ্বংস করতে হবে এবং তা করতে হবে অতি শীঘ্রই। আরবরা নাৎসিদের সঙ্গে একটা গোপন আঁতাত তৈরি করল। জার্মানির অর্থ ও অস্ত্রের বিনিময়ে তারা জার্মানি ও ব্রিটেনের মধ্যে ভবিষ্যতের সংঘর্ষে জার্মানিকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল। আর ওদিকে ব্রিটিশরা চুপচাপ নজর রাখছিল। তারা চাইছিল আরব ও ইহুদিরা নিজেদের মধ্যে লড়াই করে মরুক, আর কায়েম হোক একচ্ছত্র ইংরেজ আধিপত্য। কিন্তু বাস্তব যে গল্পের চেয়েও বর্ণাঢ্য হয়। তা-ই হল।

১৯৩৬ সালেই আরবরা নাৎসি বাহিনীর সরবরাহ করা অস্ত্র নিয়ে ইহুদিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। শহরে, গ্রামে, রাস্তায় ইহুদিদের সঙ্গে শুরু হল আরবদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। হেগানার অতি রক্ষণাত্মক নীতির বিরোধিতা করে জবোটিনস্কি গড়ে তুললেন ‘ইরগুন’, যার আক্রমণের নিশানায় ছিল আরব ও ব্রিটিশরা। আরবদের লক্ষ্য ছিল প্যালেস্টাইনে ইহুদি অনুপ্রবেশ বন্ধ করা এবং সমস্ত শাসনক্ষমতা নিজেদের হাতে রাখা। তারা চাইছিল ইহুদিরা কেবল সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসাবেই প্যালেস্টাইনে থাকুক। আর ইহুদিদের লক্ষ্য ছিল প্যালেস্টাইনে ইহুদি-অনুপ্রবেশ চালিয়ে যাওয়া। যখন নাৎসিদের অত্যাচারে ইহুদিরা জার্মানি থেকে পালাচ্ছিল, তখন বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশ ইহুদিদের জন্য দরজা বন্ধ করে দেয়। তাঁদের একমাত্র ভরসা তখন প্যালেস্টাইন।

হিংসাত্মক ঘটনা যখন মাত্রা ছাড়াতে শুরু করল, তখন ব্রিটিশরা ছয় সদস্যের একটা দল গঠন করে এবং রিপোর্ট দেওয়ার আদেশ দেয়। তার নাম ছিল ‘পিল কমিশন’। পিল কমিশনের সদস্যরা সব বিচার করে প্যালেস্টাইনকে বিভক্ত করে আলাদা আরব ও ইহুদি-রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে মত দিয়ে তাদের রিপোর্ট জমা দেয়। এমনটা যে ঘটতে পারে তা ব্রিটিশরা ভাবেইনি। ইহুদিরা সন্দিগ্ধ মনে এই প্রস্তাব মেনে নিলেও আরবরা তা প্রত্যাখ্যান করল।

প্যালেস্টাইনের পার্টিশন আটকানোর জন্য এবার ব্রিটিশরা একটা নতুন উপায় বের করে। তারা ১৯৩৯ সালে একটা শ্বেতপত্র প্রকাশ করল, যাতে আরবরা নিমরাজি হয়। কিন্তু ইহুদিরা তা প্রত্যাখ্যান করে দিল। এই প্রস্তাবে ইহুদি-অনুপ্রবেশ বছরে পনেরো হাজার করে পাঁচ বছর পর্যন্ত চালু রাখার কথা বলা হয় এবং পাঁচ বছর পর তা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলা হয়।

শ্বেতপত্র প্রকাশিত হতেই ইহুদিরা বলল, ‘মানছি না, মানব না!’ অতিসক্রিয় হয়ে উঠল ইরগুনের সদস্যরা। ব্রিটিশদের ওপর হামলা চালাতে লাগল ইরগুন বাহিনী।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলে এল। তখন ব্রিটিশদের প্রচুর সৈন্যের প্রয়োজন। প্রায় ১.৩ লক্ষ ইহুদি ব্রিটিশ সেনাদলে নাম লেখানোর জন্য আবেদন করল। ব্রিটিশরা এত বেশি সংখ্যক ইহুদির হাতে অস্ত্র তুলে দিতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। কিন্তু কী আর করা যাবে? তাদের যে তখন সৈন্যেরও প্রয়োজন। তাই তারা আবেদন করা প্রার্থীদের মধ্যে থেকে ৩০ হাজার জনকে বেছে নিল। পরে এই ইহুদি সৈন্যদের সাহসিকতার জন্য ব্রিটিশরা তাদের প্রশংসা করতেও বাধ্য হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের লড়াই ইহুদিদের জন্য কেবল নাৎসিদের খতম করার লড়াই ছিল না, এই যুদ্ধের মাধ্যমে তারা নিজেদের তৈরি করছিল, যাতে ইহুদি- রাষ্ট্রের জন্যও তারা লড়তে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইহুদিরা আশা করেছিল যে, এবার হয়তো ব্রিটিশরা ইহুদি-রাষ্ট্র স্থাপন করার জন্য কোনো সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কিন্তু তাদের কপাল পোড়া! ব্রিটিশরা তাদের শ্বেতপত্রের ঘোষণা করা নীতি থেকে এক চুলও সরতে রাজি হল না।

১৯৪৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হ্যারি এস. ট্রম্যান ১ লক্ষ ইহুদিকে জার্মানি থেকে সরিয়ে প্যালেস্টাইনে পাঠানোর প্রস্তাব দেন। কিন্তু ব্রিটেন সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেয়। এই ঘটনা ইহুদিদের আরও ক্ষিপ্ত করে তোলে। ইরগুনের সদস্যরা নাশকতার প্রস্তুতি শুরু করে। তারা কিং ডেভিড হোটেলে বম্ব চার্জ করল। ব্রিটিশ আধিকারিক ও ব্রিটিশ নাগরিক মিলে হতাহতের সংখ্যা দাঁড়াল দেড়শো।

সব ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া থাকে। মিললও। ব্রিটিশরা সমস্ত ইহুদি দোকানগুলোকে বয়কট করার আদেশ দিল। এই ঘটনায় ইহুদিদের ব্রিটিশ-বিদ্বেষ আরও তীব্র হল এবং বাড়ল ইহুদি ঐক্য।

ব্রিটিশরা ইহুদিদের আটকানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠল। কেউ কোনো ইহুদি অনুপ্রবেশকারীকে সাহায্য করলেই তাকে জরিমানা করতে লাগল তারা। এসব সত্ত্বেও ১.১৩ লক্ষ ইহুদি সেই সময় প্যালেস্টাইনে প্রবেশ করে। ব্রিটিশরা ইহুদিদের অস্ত্র বাজেয়াপ্ত শুরু করতে লাগল, গ্রেফতার করতে আরম্ভ করল অনেককে। বহু ইহুদি নেতাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হল। এর ফলে ইহুদি জনতা উন্মত্ত হয়ে উঠল। প্রত্যেক ইহুদির ফাঁসির বদলা হিসাবে ইরগুন একজন করে ব্রিটিশ আধিকারিককে ফাঁসিতে ঝোলানো শুরু করে। গোটা প্যালেস্টাইন জুড়ে এই হত্যালীলা চলতে থাকে।

১৯৪৭ সালে তিতিবিরক্ত ব্রিটেন প্যালস্টাইনের ভাগ্য ইউনাইটেড নেশনের হাতে ছেড়ে দেয়। ইউনাইটেড নেশন প্যালেস্টাইনে একটা প্রতিনিধি দল পাঠায়। এই প্রতিনিধি দল যে রিপোর্ট দেয় তা ছিল অনেকটা পিল কমিশনের রিপোর্টের মতোই। এই কমিশন বলে যে, ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে প্যালেস্টাইনকে ভাগ করে আলাদা আরব ও ইহুদি-রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর ইউনাইটেড নেশনের জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে ভোটাভুটি হয়। পার্টিশনের পক্ষে ৩৩ টি ও বিপক্ষে ১৩ টি ভোট পড়ে। ইহুদিরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও আরবরা তা প্রত্যাখ্যান করে দিল।

এবার আর কোনো বাধা রইল না স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ইসরায়েলের আত্মপ্রকাশ করার। ইসরায়েল— ইহুদিদের পুণ্যভূমি, প্রমিসড ল্যান্ড!

আরবরা ইহুদি-অধ্যুষিত এলাকা থেকে পালাতে শুরু করে। আরব উদ্বাস্তু সমস্যার শুরু এখান থেকেই।

তেল আভিভ মিউজিয়ামে ১৯৪৮ সালের ১৪ই মে বিকেল চারটের সময় বেন-গুরিয়ন সরকারিভাবে ইসরায়েলের স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন। ইসরায়েলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে প্রথম স্বীকৃতি দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারপর রাশিয়া, পোল্যান্ড চেকোস্লাভাকিয়া, যুগোস্লাভিয়া থেকে আসে স্বীকৃতি।

স্বাধীনতা ঘোষণার পর বেন-গুরিয়ন আরব দেশগুলোর প্রতি একটি আবেদন করেন। তিনি আরব দেশগুলোকে এই নবজাত ইহুদি-রাষ্ট্রকে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর কথা বলেন। সহযোগিতা তো দূর, মিশর একটি টেলিগ্রাম পাঠিয়ে জানায় যে, তারা ইসরায়েল আক্রমণ করবে এবং পৃথিবীর বুক থেকে এর অস্তিত্ব মুছে দেবে! জর্ডন, লেবানন ও সিরিয়া মিশরের সঙ্গে যোগ দিল।

একটা দেশ জন্মলগ্নেই সম্মুখীন হল এক বিরাট চ্যালেঞ্জের!

তারপর কী হল?

সে আরেক গল্প। যুদ্ধের গল্প। সেই গল্পও আমরা পরে শুনব।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *