রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড – ২

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

ধনীদের অর্থ আবিষ্কারের বাস্তব দর্শন

রবার্ট কিয়োসাকির একটি সহজ দর্শন আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে যেভাবে বদলে দেয়। তিনি বলেছিলেন গত রাত্রে আমি লেখা থেকে ছুটি নিয়ে এক অল্পবয়স্ক ছেলে অ্যালেকজান্ডার গ্রাহাম বেল এর ইতিহাসের বিষয়ে একটা টিভি প্রোগ্রাম দেখছিলাম। বেল তখন সবে তার টেলিফোনের পেটেন্ট নিয়েছেন, আর বড় বিপদে পড়েছেন- তার নতুন আবিষ্কারের দাবি প্রচুর। একটা বড় কোম্পানি প্রয়োজন, তাই তিনি তখনকার সবচেয়ে বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন-এর কাছে গেলেন এবং প্রশ্ন করলেন তাঁরা তার পেটেন্ট আর ছোট কোম্পানি কিনে নেবে কি না। তিনি সম্পূর্ণ ব্যাপারটার জন্য ১,০০,০০০ ডলার চেয়েছিলেন। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট তাকে ব্যঙ্গ করে ফিরিয়ে দিয়েছিল, তারা বলেছিল যে দামটা অর্থহীন। বাকিটা ইতিহাস। একটা মাল্টিবিলিয়ান ডলারের ব্যবসা শুরু হল এবং জন্ম হল এটি এন্ড টির।

আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল-এর গল্প শেষ হবার ঠিক পরেই সেদিনের সান্ধ্য কাগজ এসেছিল। খবরে আরেকটা স্থানীয় কোম্পানির আয়তন ছোট করার খবর ছিল। কর্মীরা ক্রুব্ধ হয়ে চাকরি হারিয়ে তার স্ত্রী আর দুটি শিশুকে নিয়ে ঐ কারখানায় উপস্থিত হয়েছিলেন আর রক্ষীদের কাছে মালিকদের সঙ্গে দেখা করার একটা সুযোগ চেয়ে অনুরোধ করেছিলেন। তিনি মালিকদের জিজ্ঞাসা করতে চেয়েছিলেন যে তাঁকে বরখাস্ত করার ব্যাপারটা তাঁরা পুনর্বিবেচনা করবেন কি না। তিনি সম্প্রতি একটা বাড়ি কিনেছিলেন আর সেটা হাতছাড়া হওয়াতে ভয় পাচ্ছিলেন। ক্যামেরা তার দয়াভিক্ষার মর্মান্তিক দৃশ্য ফোকাস করে পুরো পৃথিবীকে সেটা দেখতে চেয়েছিল। বলা বাহুল্য, আমার দৃষ্টি আটকে গিয়েছিল।

আমি ১৯৮৪ সাল থেকে পেশাগতভাবে পড়াচ্ছি। এ একটা দারুণ অভিজ্ঞতা এবং একই সঙ্গে পুরস্কার। এটা একটা বিচলিত করার মত পেশাও বটে, কারণ আমি হাজার হাজার ছাত্রদের পড়িয়েছি এবং আমি সবার মধ্যে এমনকি আমার মধ্যেই একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি যে, আমাদের সবার মধ্যেই বিস্ময়কর সম্ভাবনা আছে আর আমরা সবাই সহজাতগুণসম্পন্ন। তা সত্ত্বেও যে জিনিস আমাদের পিছিয়ে দেয় তা হল আত্ম-দ্বন্দ্ব। প্রয়োগীয় তথ্যের স্বল্পতা কিন্তু আমাদের পিছিয়ে দেয় না।

আত্মবিশ্বাসের অভাবই আমাদের এগাতে দেয় না। কেউ কেউ অন্যদের থেকে বেশি প্রভাবিত হয়।

আমরা স্কুলের পাঠ শেষ করার উপলব্ধি করি যে, কলেজ ডিগ্রী অথবা ভাল নম্বর এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ নয়। শিক্ষাজগতের বাইরে বাস্তব জগতে, নম্বরের চেয়ে বেশি প্রয়োজন অন্য কিছু। লোকে একে ‘সাহস’, ‘আত্মবিশ্বাস’, ‘বেপরোয়াভাব’, ‘স্পর্দ্ধা’, ‘বাহাদুরি দেখানো’, ‘ধূর্তাত’, ‘দুঃসাহস’, ‘ধৈর্য’, অথবা ‘মেধা’ বলেন। এই উপাদান, তা সে যে নামেই ডাকা হোক, শেষ অব্দি একজনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে; সেখানে স্কুলের নম্বরের বিশেষ ভূমিকা নেই।

আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই এই সাহসিকতা, মেধা, দুঃসাহস ইত্যাদি চারিত্রিক গুণের একটা না একটা আছে। আবার চারিত্রিক দুর্বলতার দিকটাও আছে : এমন মানুষ যে তেমন মনে করলে হাঁটু গেড়ে বসে ভিক্ষাও চাইতে পারে। ভিয়েতনামে মেরিন কোর্সের পাইলট হিসাবে এক বছর থাকার পরে আমি আমার চরিত্রের দুটো দিকই গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম। একটা অন্যটা থেকে বেশি ভাল তাও নয়।

তবুও একজন শিক্ষক হিসাবে আমি মনে করি ব্যক্তিগত প্রতিভার সব থেকে বড় অন্তরায় তার অত্যধিক ভয় আর আত্ম-দ্বন্দ্ব। যখন দেখি ছাত্ররা উত্তরটা জানে কিন্তু উত্তরটার প্রতিক্রিয়া দেখানোর সাহস নেই, আমি হতাশ হই। বাস্তব জগতে অনেক সময়ই যে বুদ্ধিমান সেই এগিয়ে যায় না তবে সাহসী অবশ্যই এগিয়ে যায়।

আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় বলি আর্থিক প্রতিভার জন্য দুটোই প্রয়োজন, প্রয়োগীয় জ্ঞান এবং সাহস। ভয় খুব বেশি হলে প্রতিভা চাপা পড়ে যায়। আমি আমার ক্লাসের ছাত্রদের ঝুঁকি নিতে, সাহসী হতে, তাদের প্রতিভা দিয়ে ভয়কে জয় করে ক্ষমতা অর্জন করতে অনুপ্রেরণা দেই। এটা কারো জন্য কার্যকর হয়, আবার কাউকে শুধু ভয় পাইয়ে দেয়। আমি অনুভব করেছি বেশির ভাগ লোক অর্থের বিষয়ে নিরাপদেই খেলতে চায়। আমাকে প্রায়ই এ ধরনের প্রশ্ন শুনতে হয় যেমন- কেন ঝুঁকি নেব? কেন আমি আমার আর্থিক আই কিউ গড়ে তোলা নিয়ে মাথা ঘামাব? কেন আমি আর্থিকভাবে স্বাক্ষর বা জ্ঞানী হব?

আমি উত্তর দেই, ‘আরও বেশি বিকল্প পাওয়ার জন্য।’

সামনে বিরাট পরিবর্তন আসছে। আমি যেমন- শুরু করেছিলাম তরুণ আবিষ্কারক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের গল্প দিয়ে, আগামী বছরগুলোতে ঠিক তাঁর মত অনেক মানুষ দেখা যাবে। বিল গেটের মত শত শত লোক থাকবেন আর সারাবিশ্বে প্রতি বছর ‘মাইক্রোসফটে’র মত দারুণ সফল কোম্পানিও সৃষ্টি হবে। আর সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেক দেউলিয়া হওয়া, ছাঁটাই আর ডাউন সাইজিং (আয়তন ছোট করা)-ও চলতে থাকবে।

তাহলে কেন আপনার আর্থিক ‘আই কিউ’ গড়ে তোলার জন্য মাথা ঘামাবেন? শুধু আপনিই এর উত্তর দিতে পারেন। তবুও আমি নিজে কেন এটা করেছি তা বলতে পারি, এই সময়টা বেঁচে থাকার জন্য খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। আমি বরং পরিবর্তনকে ভয় না পেয়ে অভ্যর্থনা জানাব। আমি বেতন বৃদ্ধি হচ্ছে না বলে দুঃশ্চিন্তা না করে বরং কোটি কোটি টাকা রোজগারের চিন্তায় নিমগ্ন থাকব। আমরা এক রোমাঞ্চকর যুগে বসবাস করছি, যা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। আজ থেকে বেশ কয়েক প্রজন্ম পরে লোকেরা এই সময়ের দিকে পিছন ফিরে দেখে বলবে যে, ঐ সময়টা এক অসম্ভব উত্তেজনাময় যুগ ছিল। পুরানোর মৃত্যু আর নতুনের জন্মের এই যুগ আলোড়নপূর্ণ এবং রোমাঞ্চকর।

তাহলে আপনার আর্থিক আই কিউ গড়ে তোলার জন্য মাথা ঘামাবেন কেন? কারণ তা করলে আপনি খুব উন্নতি করবেন। তা না করলে এই সময়টা আপনার জন্য ভীতিময় হয়ে উঠবে। এই সময় সাহসীরা এগিয়ে যাবে আর অন্যরা পুরানো ক্ষয়ধরা জীবনচক্র আঁকড়ে পড়ে থাকবে।

৩০০ বছর আগে জমিকেই ধন বলা হতো। তাই যে জমির মালিক ছিল সেই ছিল ধনের অধিকারী। তারপর এল কারখানা আর উৎপাদন, আর আমেরিকার কর্তৃত্ব শুরু হল। ব্যবসায়ীরা ধনের মালিক হল। আজ তথ্যের যুগ। যে ঠিক সময়ে সবচেয়ে বেশি তথ্য পায় সেই ধনবান হয়। সমস্যা হচ্ছে সারা পৃথিবীতে এই তথ্য আলোর গতিতে উড়ে বেড়ায়। এই নতুন ধনকে তাই সীমা দিয়ে বেঁধে রাখা যায় না, যেমন- জমি বা কারখানাকে করা যেত। তাই পরিবর্তনও আরও দ্রুত আর আকস্মিক হবে। নতুন কোটপতির সংখ্যা আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পাবে। তেমনি অনেক পিছিয়েও পড়বে।

আজকাল, আমি কত লোককে সংগ্রাম করতে দেখি, এরা পুরানো ধ্যান- ধারণা আঁকড়ে ধরে প্রচুর পরিশ্রম করে চলেছে। তারা চায় পুরানো জীবনযাত্রা, তারা পরিবর্তনে বাধা দেয়। আমি এমন অনেক লোকেদের জানি যারা চাকরি হারাচ্ছে, তাদের বাড়ি ছেড়ে দিতে হচ্ছে আর এসবের জন্য তারা প্রযুক্তিবিদ্যা, কর্মকর্তা আর্থিক পরিস্থিতিকে দোষী সাব্যস্ত করছে। দুঃখের বিষয়, তারা বুঝতে পারে না হয়তো তারা নিজেরাই সমস্যা। পুরানো ধারণাগুলো তাদের সবচেয়ে বড় ‘দায়’। এটা ‘দায়’ কারণ তারা বুঝতে চায় না যে ঐ ধারণা বা ঐ কর্মপন্থা হয়তো গতকাল ‘সম্পত্তি’ ছিল, কিন্তু গতকালটা গত হয়েছে।

১৯৮৪ থেকে, স্কুল কর্তৃপক্ষ যা করে না আমি তাই করে কোটি কোটি টাকা বানিয়েছি। স্কুলে বেশির ভাগ শিক্ষক বক্তৃতা দেয়। আমি ছাত্র হিসাবে বক্তৃতা অপছন্দ করতাম। আমার একঘেয়ে লাগত আর অন্যমনস্ক হয়ে যেতাম।

১৯৮৪ থেকে আমি খেলা আর ‘সিমুলেশানের’ সাহায্যে শেখানো শুরু করি। আমি সবসময় বয়স্ক ছাত্রদের খেলাকে তাদের বর্তমান জ্ঞান এবং যে জ্ঞানের প্রয়োজন তার প্রতিফলন হিসাবে দেখতে বলেছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এই খেলা মানুষের ব্যবহারের প্রতিফলন। তাই এটা একটা তাৎক্ষণিক ‘ফিডব্যাক’ অর্থাৎ প্রতিক্রিয়া। শিক্ষকের বক্তৃতার বদলে এখানে খেলাটাই একটা বক্তৃতা হয়ে যায় সেটা আপনাকে ঠিক মনের মত করেই ফিডব্যাক দেয়।

ঐ ভদ্রমহিলার বন্ধু পরে আমাকে ফোনে সব খবরা-খবর জানিয়েছিলেন তিনি বলেছিলেন তার বন্ধু ভাল আছেন এবং শান্ত হয়েছে। ঠাণ্ডা মাথায় উনি ঐ খেলাটা আর ওঁর জীবনের মধ্যে সামঞ্জস্য দেখতে পেয়েছেন।

যদিও তাঁর এবং তাঁর স্বামীর নৌকা ছিল না কিন্তু তাদের কাছে বাকি যা যা সম্ভব সেসব ছিল। তিনি বিবাহ-বিচ্ছেদের পর রেগে গিয়েছিলেন দুটি কারণে। এক তার স্বামী কম বয়সী একটি মেয়ের সাথে পালিয়ে গিয়েছিলেন, দ্বিতীয়ত বিয়ের ২০ বছর পরে তাদের বিশেষ সম্পত্তি ছিল না। ভাগ করে নেবার মত তাদের কাছে প্রায় কিছুই ছিল না। তাদের ২০ বছরের বিবাহিত জীবন বেশ মজাদার ছিল, কিন্তু যা তার জমাতে পেরেছেন তা হচ্ছে শুধু এক টন ‘ডুড্যাডস্’।

তিনি বুঝতে পেরেছেন তার সংখ্যা নিয়ে কাজ করায় আপত্তি— তার ইনকাম স্টেটমেন্ট, ব্যালেন্স শীট ইত্যাদি না বুঝতে পারার লজ্জা থেকেই এসেছে। তিনি বিশ্বাস করতেন অর্থ পুরুষের কাজ। তিনি বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ করতে অতিথি আপ্পায়ন করতেন আর স্বামী অর্থের দিকটা সামলাতেন। এখন তিনি নিশ্চিত যে তাদের বিবাহিত জীবনের শেষ ৫ বছর তিনি তার কাছ থেকে টাকাকড়ি লুকিয়ে রেখেছিলেন। তার এখন নিজের উপরই রাগ জহচ্ছে কেননা তিনি অর্থের ব্যয় সম্বন্ধে এবং অবশ্যই ঐ অন্য মহিলার বিষয়ে সচেতন হননি।

ঠিক বোর্ডগেমের মতে, পৃথিবীও আমাদের সবসময় তাৎক্ষণিক ‘ফিডব্যাক’ দিচ্ছে। সচেতন ও সতর্ক থাকলে অনেক কিছু বোঝা ও শেখা যায়। বেশি দিনের কথা নয়, আমি আমার স্ত্রীকে অভিযোগ করেছিলাম, ক্লিনাররা নিশ্চয়ই আমার প্যান্ট ছোট করে দিচ্ছে। আমার স্ত্রী শান্তভাবে হেসে আমার পেটে খোঁচা মেরে খবর দিয়েছিলেন প্যান্ট ছোট হয়ে যায়নি, অন্য কিছুর আয়তন বৃদ্ধি পেয়েছে : আমার!

ক্যাশফ্লো খেলাটা এমনভাবে তৈরি যা প্রতিটি খেলোয়াড়কে ব্যক্তিগত ফিডব্যাক দিতে পারে। আপনাকে নানা বিকল্প দেওয়া এর উদ্দেশ্য। আপনি যদি নৌকার কার্ডটা টানের আর এটা আপনাকে দেনায় দায়ে ফেলে, তাহলে প্রশ্ন হবে, ‘এখন আপনি কি করতে পারেন?’ কতগুলো ভিন্ন ভিন্ন আর্থিক বিকল্প আছে? এটাই খেলোয়াড়দের চিন্তা করতে এবং নতুন আর বিভিন্ন আর্থিক বিকল্প উদ্ভাবন করতে শেখায়।

এই খেলাটা ১,০০০ জনের বেশি লোককে খেলতে দেখেছি। যেসব লোকেরা সবচেয়ে তাড়াতাড়ি ‘র‍্যাট-রেস’ থেকে বেরিয়ে আসে তারা সংখ্যা বোঝে আর সৃজনশীল অর্থগত বুদ্ধির অধিকারী হয়। তারা বিভিন্ন আর্থিক বিকল্পগুলো বুঝতে পারে। সবচেয়ে বেশি দেরি হয় সেইসব লোকেদের যারা সংখ্যার সাথে পরিচিত নয় আর প্রায়ই বিনিয়োগের ক্ষমতা বোঝে না। ধনী লোকেরা অনেক সময় সৃজনশীল হয়, তারা বিচার বিবেচনা করে ঝুঁকি নেয়।

অনেক লোক ‘ক্যাশফ্লো’ খেলার সময় খেলায় প্রচুর অর্থ লাভ করে, কিন্তু তারা জানে না এটা নিয়ে কি করবে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ বাস্তবজীবনেও আর্থিকভাবে সফল হয়নি। মনে হয় সবাই তাদের ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে, যদিও তাঁদের অর্থবল আছে। আর সেটা বাস্তব জীবনেও সত্যি। এমন অনেক লোক আছেন যারা প্রচুর অর্থবান, কিন্তু তারা আর্থিকভাবে সামনে এগোতে পারছেন না।

আপনার বিকল্পকে সীমিত রাখা পুরানো ধ্যান-ধারণা আঁকড়ে থাকার মত। আমার হাই স্কুলের এক বন্ধু এখন তিনটে জায়গায় কাজ করে। ২০ বছর আগে সে আমার সহপাঠিদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ছিল। যখন স্থানীয় চিনির কারখানা বন্ধ হয়ে গেল, সে যে কোম্পানির জন্য কাজ করতো সেটাও ঐ কারখানার সাথে বন্ধ হয়ে গেল। তার মাথায় শুধু একটা বিকল্পই ছিল সেই পুরাতনী বিকল্প অর্থাৎ আরও পরিশ্রম করে কাজ করুন। এমন সমস্যা ছিল, তিনি তার পুরোনো কোম্পানি সমকক্ষ উচ্চপদে চাকরি পেলেন না। ফলে তিনি এখন যে চাকরিগুলো করছেন তাঁর জন্য তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা অনেক বেশি আর মাইনে অনেক কম। জীবনধারণের জন্য যথেষ্ট রোজগার করতে তিনি এখন তিনটে চাকরি করছেন।

আমি লোকেদের অভিযোগ করতে শুনেছি ক্যাশফ্লো খেলতে খেলতে সঠিক সুযোগের কার্ডটা তাদের হাতে আসছে না। তাই তারা বসে আছে। আমি জানি বাস্তব জীবনেও অনেকে তাই করে। তারা অপেক্ষা করে সঠিক সুযোগের।

আমি এও দেখেছি যে লোকেরা ঠিক সুযোগের কার্ড পেয়েছে অথচ তখন তাদের হাতে যথেষ্ট অর্থ নেই। তখন তারা অভিযোগ করে যে তারা “ইঁদুর দৌড়’ থেকে বেরিয়ে যেতে পারতো যদি তাদের আরও পয়সা থাকতো। তারা বাধ্য হয়ে ওখানে বসে আছে। আমি এমন লোক জানি যারা বাস্তবে তাই করে। তারা সব বড় বড় ব্যবসায়িক লেনদেন প্রত্যক্ষ করে, কিন্তু তাদের অর্থ নেই।

আবার এমন লোকও আছে যারা একটা বিরাট সুযোগের কার্ড টেনেছে, জোরগলায় পড়ে শুনিয়েছে কিন্তু তাদের কোন ধারণা নেই যে এটা একটা বড় সুযোগ। তাদের অর্থ আছে, সময়টাও ঠিক, তাদের কার্ডটাও আছে, কিন্তু তাদের কাছে যে সুযোগগুলো আছে তারা সেগুলো দেখতে পাচ্ছে না। আমি দেখেছি অন্যান্য সবার চেয়ে এরকম লোকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বেশির ভাগ লোক তাদের জীবনকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সুযোগটি দেখেও চিনতে পারে না। এক বছর পরে তারা এ ব্যাপারে সজাগ হয় তবে তখন বাকিরা সবাই ধনী হয়ে গেছে।

আর্থিক বুদ্ধি মানে একাধিক বিকল্প। যদি আপনার সামনে সুযোগ না আসে, আপনার আর্থিক অবস্থার উন্নতি করার জন্য কি করতে পারেন? যদি একটা সুযোগ আপনার হাতের মুঠোয় এসে যায় অথচ আপনার কাছে অর্থ নেই, এদিকে ব্যাংকও আপনার সাথে কথা বলতে নারাজ, আপনি সুযোগটা সদ্ব্যবহারের জন্য কি করতে পারেন? আপনার বিচক্ষণ অনুমান যদি ভুল হয়, আর আপনি যার ভরসায় ছিলেন তা যদি না হয়, আপনি কি করে শূন্যকে কোটিতে পরিণত করবেন? তাকেই বলে অর্থগত বুদ্ধিমত্তা।

কি হবে তা তেমন জরুরী নয়, যা জরুরী তা হল শূন্যকে কোটিতে পরিণত করতে আপনি কতগুলো ভিন্ন ভিন্ন আর্থিক সমাধান উদ্ভব করতে পারেন। আর সেখানেই বোঝা যায় আর্থিক সমস্যার সমাধানে আপনি কতটা সৃজনশীল।

বেশির ভাগ লোক শুধু একটাই সমাধান জানে : আরও পরিশ্রম করে কাজ করুন, অর্থ জমান, আর ধার করুন।

তাহলে আপনি আপনার আর্থক বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে চাইবেন কেন? কারণ আপনি নিজের ভাগ্য নিজে তৈরি করে এমন মানুষ হতে চান। যা ঘটে, আপনি তা গ্রহণ করেন আর এটাকে আরও উন্নত করেন। খুব কম লোক বোঝে যে ভাগ্য সৃষ্টি করা যায়। ঠিক যেমন- অর্থ। আর আপনি যদি আরও ভাগ্যবান হতে চান আর অর্থ উপার্জন করতে চান, আরও পরিশ্রম করার বদলে, আপনার আর্থিক জ্ঞান থাকা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি ‘ঠিক’ ঘটনা ঘটার জন্য অপেক্ষমান লোক হতে চান, তাহলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে পারেন। এটা অনেকটা যাত্রা করার আগেই আগামী পাঁচ মাইলের সব ট্রাফিক লাইট সবুজ থাকবে এই আশায় অপেক্ষা করার মত।

যখন মাইক আর আমি অল্পবয়সী ছিলাম, আমার ধনবান বাবা আমাদের সবসময় বলতেন, ‘অর্থ সত্যি নয়।’ আমাদের ধনবান বাবা মাঝে মাঝে মনে করিয়ে দিতেন, সেই প্রথম যখন আমরা একসাথে প্লাস্টার অফ প্লারিস থেকে ‘মুদ্রা বানাতে’ শুরু করেছিলাম। তখনই আমরা অর্থের জন্য কাজ গোপন রহস্যের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম। ‘গরীব আর মধ্যবিত্ত শ্রেণী অর্থের জন্য কাজ করে’, তিনি বলতেন, ‘ধনীরা অর্থ সৃষ্টি করে। অর্থকে তুমি যত সত্যি ভাববে, তত বেশি তুমি তার জন্য পরিশ্রম করবে। তোমরা যদি একবার বুঝতে পারো যে অর্থ সত্যি নয়, তোমরা দ্রুত আরও ধনী হয়ে যাবে।’

‘এটা তাহলে কি?’ মাইক আর আমি প্রায়ই এই প্রশ্নটা করতাম। ‘অর্থ সত্যি নাহলে তাহলে কি?’

‘এটা এক রকমের বোঝাপড়া বা চুক্তি’ ধনবাব বাবা এই টুকুই বলতেন। আমাদের সকলের সবচেয়ে ক্ষমতাবান সম্পত্তিটি হল আমাদের বুদ্ধি। এটাকে যদি ভাল করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, মুহূর্তকালেই এটা প্রচুর ধন সৃষ্টি করতে পারে। যা ৩০০ বছর আগেকার রাজা-রানীদেরও স্বপ্নের অতীত। আবার, একটা প্রশিক্ষণহীন মনোভাব চরম দারিদ্র্য সৃষ্টি করতে পারে যা পুরুষানুক্রমে চলতে থাকে, তাদের পরিবারকেও এই দারিদ্র্যতা শিক্ষা দেয়।

তথ্যর যুগে কল্পনাতীতভাবে অর্থ বৃদ্ধি হচ্ছে। কেউ কেউ অসাধারণ ধনী হয়ে যাচ্ছে ‘শূন্য’ থেকে, শুধু ধ্যান-ধারণা আর চুক্তির সাহায্যে। যে সব লোকের স্টক আর বিনিয়োগের ব্যবসা করে জীবন চালায় তাদের জিজ্ঞাসা করলে জানবেন তারা সবসময় একইরকম হতে দেখছে। প্রায় মুহূর্তের মধ্যে ‘কিছু না’ থেকে কোটি কোটি টাকা তৈরি হয়। আর কিছু না বলতে আমি বোঝাতে চাই কোনো টাকার লেনদেন ছাড়া। এটা হয় চুক্তির মধ্য দিয়ে : বাণিজ্যক্ষেত্রে একটা হাতের ইঙ্গিতে; বা লিসবনের এক ব্যবসায়ীর স্ক্রীনে টরান্টোবাসী ব্যবসায়ীর স্ক্রীন থেকে একটা রীপে, যা আবার লিসবনে ফিরে আসে। ফোন মারফত আমার ব্রোকারকে কিনতে বলা আর পর মুহূর্তে বিক্রি করতে বলা। এক্ষেত্রে পয়সার হাতবদল হয়নি। শুধু চুক্তি হয়েছে।

তাহলে আপনার আর্থিক বুদ্ধিমত্তা গড়ে তুলবেন কেন? শুধু আপনিই তার উত্তর দিতে পারেন। আমি আপনাকে বলতে পারি কেন আমি আমার বুদ্ধির এই দিকটা গড়ে তুলছি। আমি এটা করছি কারণ আমি দ্রুত অর্থ করতে চাই। আমার প্রয়োজন আছে বলে নয়, কিন্তু আমি চাই বলে। এটা একটা আকর্ষণীয় শিক্ষাপ্রণালী। আমি আমার আর্থিক আই কিউ গড়ে তুলতে চাই কারণ আমি পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম আর সবচেয়ে বড় খেলায় অংশ নিতে চাই। আর আমার নিজস্ব ছোট উপায়ে মনুষ্যজাতির এই নজিরবিনীন বিবর্তনের অংশ হতে চাই, সেই যুগের অংশ হতে চাই, যেখানে মানুষ নির্লজ্জভাবে বুদ্ধি দিয়ে কাজ করে, তাদের শরীর বা কায়িক শ্রম দিয়ে নয়। তাছাড়া এখানেই সব কর্মকাণ্ড হচ্ছে। এরকমই হচ্ছে। এটা প্রগতির পথ। ভয়ঙ্করও বটে। তবে মজাদারও।

তাই আমি আমার সবচেয়ে শক্তিশালী সম্পদের বিকাশ করছি, আমার আর্থিক বৃদ্ধিমত্তাকে বিনিয়োগ করেছি, যারা সাহস করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে আমি তাদের সাথে চলতে চাই। আমি যারা পিছনে পড়ে রইলো তাদের সাথে থাকতে চাই না।

আমি আপনাদের পয়সা তৈরির একটা সরল উদাহরণ দেবো। ১৯৯০-র প্রথম দিকে ফিনিক্সের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা খুব খারাপ ছিল। আমি ‘গুড মর্নিং আমেরিকা’ টি.ভি শো-টা দেখছিলাম এতে একজন ফিনানশিয়াল প্ল্যানার এসে নৈরাশ্যজনক ভবিষ্যৎবাণী করতে শুরু করলেন। তার উপদেশ ছিল ‘অর্থ বাঁচাও’। ‘প্রতি মাসে ১০০ ডলার রাখুন আর ৪০ বছরে আপনি একজন কোটিপতি হয়ে যাবেন।

ঠিক আছে, প্রতি মাসে অর্থসঞ্চয় একটা নির্ভেজাল আইডিয়া। এটা একটা বিকল্প যে বিকল্পটায় বেশির ভাগ লোক সম্মত। সমস্যাটা হচ্ছে এটা ব্যক্তিকে বাস্তবটা দেখতে দেয় না। তারা তাদের পয়সার আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বৃদ্ধির সুযোগ হারায়। পৃথিবী তাদের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যায়।

যেমন- আমি বলছি, দেশের অর্থব্যবস্থা তখন খুব খারাপ ছিল। বিনিয়োগকারীদের জন্য এ একদম সঠিক বাজার পরিস্থিতি। আমার অর্থের একটা বড় অংশ স্টক মার্কেট আর অ্যাপার্টমেন্ট হাউসে বিনিয়োগ করা ছিল। আমার ক্যাশ তাই কম ছিল। কারণ সবাই শেয়ার দিয়ে দিচ্ছে আর আমি কিনছি। আমি সঞ্চয় করছিলাম না। আমি বিনিয়োগ করছিলাম। আর স্ত্রী আর আমার মিলিয়ান ডলারের চেয়েও বেশ ক্যাশ দ্রুত ঊর্ধ্বগামী মার্কেটে কাজ করছিল। এটা বিনিয়োগ করার সবচেয়ে ভাল সুযোগ ছিল। অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল শোচনীয়। আমি কিছুতেই এই ছোট ছোট কেনা-বেচাগুলো এগিয়ে যেতে পারছিলাম না।

যে বাড়িগুলো এক সময় ১,০০,০০০ ডলার ছিল এখন তা ৭৫,০০০ ডলার দাঁড়িয়েছে। কিন্তু স্থানীয় রিয়েল স্টেটের অফিসে ব্যবসা করার বদলে আমি ব্যবসা শুরু করলাম ‘দেউলিয়া’ অ্যাটর্নীর অফিসে, অথবা আদালতের সিঁড়িতে। এইসব জায়গায় যে বাড়ির দাম ছিল ৭৫,০০০ ডলার তা কখনও কখনও ২০,০০০ ডলার বা তার থেকেও কমে দামে কেনা যেত। আমার এক বন্ধু আমাকে ২,০০০ ডলার ৯০ দিনের জন্য ধার দিয়েছিল, তার উপর ২০০ ডলারের সুদ ছিল। আমি অ্যাটর্নি ক্যাশিয়ারস্ চেক্ দিয়ে দিয়েছিলাম। যখন এই অধিগ্রহণ চলছে আমি কাগজে একটা বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম ৭৫,০০০ ডলারের বাড়ি শুধু ৬০,০০০ ডলারের পাওয়া যাচ্ছে, তার জন্য তৎক্ষণাৎ নগদ দিতে হবে না। ফলে একনাগাড়ে ফোন বেজে চলেছিল। ভাবী ক্রেতাদের বাছা হয়েছিল আর একবার যখন সম্পত্তিটা আইনতঃ আমার হয়ে গেল, সমস্ত সম্ভাব্য ক্রেতারা বাড়িটা দেখার অনুমতি পেয়েছিল।

বাড়িটা কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। আমি ২,৫০০ ডলার ‘প্রসেসিং ফি’ চেয়েছিলাম, বা তারা খুশি হয়ে দিয়ে দিয়েছিল। এরপর আইনতঃ নাম পরিবর্তনের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল। আমার বন্ধুরা ২,০০০ ডলার অতিরিক্ত ২০০ ডলার সহ আমি ফিরিয়ে দিলাম। সে খুশী, যারা বাড়ি কিনেছে তারা খুশী আর আমিও খুশী। আমি একটা বাড়ি ৬০,০০০ ডলারে বিক্রি করেছি যার জন্য আমার মাত্র ২০,০০০ ডলার দাম দিতে হয়েছে। আমার সম্পত্তি-তালিকার অর্থ থেকে ৪০,০০০ ডলার সৃষ্টি হল ক্রেতার প্রতিজ্ঞাপত্ররূপে। সম্পূর্ণ কাজটার সময় পাঁচ ঘণ্টা। এখন আপনি যেহেতু আর্থিকভাবে স্বাক্ষর আর সংখ্যা পড়তে পারেন, আমি আপনাকে দেখাবো কেন এটা অর্থ আবিষ্কারের দৃষ্টান্তস্বরূপ।

সম্পত্তি কলামে:

৪০,০০০ ডলার সৃষ্টি হয়েছে-

পয়সা তৈরি হয়েছে ট্যাক্স না দিয়েই।

আপনি ১০% সুদে বছরে ৪,০০০ ডলার ক্যাশফ্লো সৃষ্টি করেছেন।

বাজারের এরকম হতাশাজনক অবস্থায় আমার স্ত্রী আর আমি আমাদের অবসর সময়ে এরকম ৬টা সরল আদান-প্রদান করতে পেরেছিলাম। যখন আমাদের বেশির ভাগ অর্থ অপেক্ষাকৃত বড় সম্পত্তি আর স্টক মার্কেটে লাগানো ছিল আমরা ঐ ৬টা কেনা, তৈরি করা আর বিক্রির আদান-প্রদান করে ১,৯০,০০০ ডলারেরও বেশি অর্থ সম্পত্তি হিসাবে (দশ শতাংশ সুদে) সৃষ্টি করতে পেরেছিলাম। অর্থাৎ বছরে মোটামুটি ১৯,০০০ ডলার রোজগারের সমান, এর বেশির ভাগই আমাদের নিজস্ব করপোরেশান দিয়ে সুরক্ষিত ছিল। এই বছরে ১৯,০০০ ডলারের অনেকাংশই আমাদের কোম্পানির গাড়ি, গ্যাস, বেড়ানো, ইনস্যুরেন্স, ক্লায়েন্টের সাথে ডিনার আর অন্য বিষয়ে খরচ করা হতো। যখন সরকার রোজগারের ট্যাক্স বসানোর সুযোগ পেত ততক্ষণে এগুলো আইন অনুমোদিত প্রি-ট্যাক্স (ট্যাক্সের আগে) ব্যয়স্বরূপ খরচ হয়ে গেছে।

এটা অর্থ আবিষ্কারের, সৃষ্টি করা ও আর্থিক বুদ্ধিমত্তা দিয়ে অর্থ সুরক্ষিত রাখার একটা সহজ-সরল উদাহরণ।

নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, ১,৯০,০০০ ডলার সঞ্চয় করতে কতদিন লাগবে? ব্যাংক কি আপনার অর্থের দশ শতাংশ সুদ দেবে? শপথপত্র ৩০ বছর পর্যন্ত বৈধ। আশা করি, তারা যেন কখনও ১,৯০,০০০ ডলার না দেয়। তারা যদি মূলধনটা দিয়ে দেয় আমাকে ট্যাক্স দিতেই হবে। তাছাড়া ৩০ বছর ধরে ১৯,০০০ ডলার করে দিয়ে গেলে মোট ৫,০০,০০০ চেয়ে একটু বেশি আয় হয়।

আমাকে লোকেরা প্রশ্ন করেছে যদি ঐ লোকটি অর্থ না দেয় কি হবে? এমনটি বাস্তবে ঘটে আর তা ভাল খবর। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ফিনিক্সস্থি এর রিয়্যাল স্টেটের বাজার পুরো দেশের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাশীল ছিল। সেই ৬০,০০০ ডলারের বাড়ি কিনে তা বিক্রি করা হয়েছিল ৭০,০০০ ডলারে।

আরেকবার ২,৫০০ ডলার নেওয়া হয়েছিল লোন প্রসেসিং-ফি হিসাবে। নতুন ক্রেতার তখনও এটা খুবই সস্তার লেনদেন মনে হয়েছিল। আর এই প্রক্রিয়া অনবরত প্রয়োগ করা হয়।

প্রথমবার আমি যখন বাড়ি বিক্রি করেছিলাম আমি শুধু ২,০০০ ডলার ফেরত দিয়েছিলাম। এই আদান-প্রদানে প্রয়োগিকভাবে আমার কোনো পয়সা দিতে হয়নি। আমার বিনিয়োগ থেকে ‘রিটার্ন’ বা ফেরত (ROI) ছিল অনন্ত। এটা একটা শূন্য থেকে প্রচুর উপার্জনের উদাহরণ।

দ্বিতীয় আদান-প্রদান যখন বাড়ি আবার বিক্রি করা হল, আমি ২০,০০০ ডলার আমার পকেটেই রেখে দিতাম আর দেনার মেয়াদ ৩০ বছর বাড়িয়ে দিতাম। যদি আমাকে টাকা বানাবার জন্য টাকা দেওয়া হয় তাহলে আমার আর ও আই (ROI) কত হবে? আমি জানি না, কিন্তু আমি নিশ্চিন্ত যে এটা প্রতি মাসে ১০০ ডলার জমানোর থেকে বেশি। এটা আসলে প্রায় ১৫০ ডলার থেকে শুরু। কারণ এটা ট্যাক্স দেবার পরের রোজগার। বাস্তবে ১৫০ ডলার রোজগার করে, আর উপর ট্যাক্স দিয়ে ১০০ টাকা হাতে পাওয়া যায় যেটা ৪০ বছর ধরে পাঁচ শতাংশ সুদে জমাতে হচ্ছে। এই পাঁচ শতাংশ সুদের উপর আবার আপনাকে ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। এটা খুব বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এটা নিরাপদ হতে পারে কিন্তু বুদ্ধির পরিচয় নয়।

আজকে, ১৯৯৭-এর যখন আমি এই বই লিখছি বাজারের অবস্থা পাঁচ বছর আগের তুলনায় সম্পূর্ণ বিপরীত। ফিনিক্সের রিয়্যাল স্টেট-এর বাজার ইউ.এস.এ-র ঈর্ষার কারণ। যে বাড়িগুলো আমরা ৬০,০০০ ডলারে বিক্রি করেছিলাম এখন সেগুলোর মূল্য ১,১০,০০০ ডলারের সমান। কিছু পূর্বচুক্তির সুযোগ এখনও পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু এটা আমার একটা মূল্যবান সম্পত্তি অর্থাৎ আমার সময় নষ্ট করে খুঁজে বার করতে হবে। ওগুলো এখন খুবই অল্প। কিন্তু আজও হাজার হাজার ক্রেতা এই ধরনের বেচা-কেনার সুযোগে আর্থিক লাভের সম্ভাবনা পাওয়া যাচ্ছে। বাজারের পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন সম্পদ তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করতে হবে অন্যান্য সুযোগ।

‘আপনি এটা এখানে করতে পারেন না’, ‘এটা আইনবিরুদ্ধ’, ‘আইন মিথ্যে কথা বলছেন’।

আমি প্রায়ই এই ধরনের মন্তব্য শুনি। কিন্তু ‘ওটা কিভাবে করতে হয় আমাকে দেখিয়ে দিতে পারেন কি?’ এমন মন্তব্য শুনি। কিন্তু ‘ওটা কিভাবে করতে হয় আমাকে দেখিয়ে দিতে পারেন কি?’ এমন মন্তব্য কমই শোনা যায়।

অঙ্কটা সোজা। অ্যালজেবরা বা ক্যালকুলাসের প্রয়োজন নেই। আমি বেশি লিখি না কারণ এসক্রো কোম্পানি আইনসংক্রান্ত সমস্ত আদান-প্রদান এবং লেন- দেন এর দেখাশোনা ও পরিচালনা করে। আমার ছাদ মেরামত করতে হয় না অথবা টয়লেট খুলতে হয় না কারণ মালিকরা সেটা কেরে। তাদের বাড়ি। মাঝেমধ্যে কেউ অবশ্য পাওয়া মেটায় না। তবে সে তো খুবই ভাল, কারণ তারা দেরি করলে আলাদা ফি দিতে হয় অথবা তারা বাড়ি ছেড়ে চলে যায় আর সম্পত্তিটা আবার বিক্রি করা হয়। আদালতের কার্যপ্রণালী সেসবের দেখাশোনা করে।

আপনার এলাকায় এটা কার্যকর নাও হতে পারে। বাজারের অবস্থা ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু এই উদাহরণটা দেখে বোঝা যায় কিভাবে একটা সরল অর্থনৈতিক কার্যপ্রণালী অত্যন্ত অল্প পয়সায় কম ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার ডলার সৃষ্টি করতে পারে। অর্থ যে শুধু একটা চুক্তি এটা তারই উদাহরণ। মাধ্যমিক স্কুলের বিদ্যাসম্পন্ন যে কেউ এটা করতে পারে।

তবুও, বেশির ভাগ লোক তা করবেন না। বেশির ভাগ লোক গতানুগতিক উপদেশ শুনবে, ‘পরিশ্রম করে কাজ করো আর অর্থ জমাও।’

প্রায় ৩০ ঘন্টা কাজ করার পর মোটামুটি ১,৯০,০০০ ডলার সম্পত্তি সৃষ্টি হয়েছিল আর কোন ট্যাক্স দিতে হয়নি।

আপনার কোনটা কঠিন মনে হচ্ছে?

১। পরিশ্রম করে কাজ করুন, ৫০ শতাংশ ট্যাক্স দিন, যা বাকি থাকে সঞ্চয় করুন। সঞ্চিত ধনে পাঁচ শতাংশের সুদ পাওয়া যায়, তাতেও ট্যাক্স নেওয়া হয়।

আমার সর্বসমেত জীবনদর্শন হল সম্পত্তির তালিকায় বীজ বপন করা। সেটাই আমার ফরমুলা। আমি শুরু করি ছোটভাবে আর বীজ বপন করি। কিছু বেড়ে ওঠে, কিছু বাড়ে না।

আমাদের রিয়্যাল স্টেট করপোরেশানে, কয়েক মিলিয়ান ডলার দামের সম্পত্তি আছে। এটা আমাদের নিজেদের আর ই আই টি (REIT) অথবা রিয়্যাল স্টেট ইনভেস্টমেন্ট স্ট্রাস্ট। আমার মূল বক্তব্য হচ্ছে এই মিলিয়ানগুলোর বেশির ভাগ শুরু হয়েছে ৫,০০০ ডলার থেকে ১০,০০০ ডলার এর ছোট বিনিয়োগ দিয়ে। এই সমস্ত নগদ পয়সা ভাগ্য ভাল থাকায় দ্রুত বর্ধমান বাজার ধরনে পেরেছে, ট্যাক্স না দিয়েই বেড়েছে, বহু বছর ধরে বারবার কেনাবেচা হয়েছে।

আমাদের একটা করপোরেশান পরিবেষ্টিত স্টক পোর্টফোলিও আছে, এটাকে আমার স্ত্রী আর আমি আমাদের ব্যক্তিগত মিউচুয়্যাল ফান্ড বলি। আমাদের অনেক বন্ধু আছে যারা বিশেষভাবে আমাদের মত বিনিয়োগকারীদের সাথে কেনাবেচা করে যাদের হাতে প্রতি মাসেই বিনিয়োগ করার মত কিছু অতিরিক্ত অর্থ থাকে। আমরা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, দূরকল্পী প্রাইভেট কোম্পানি কিনি যারা ইউনাইটেড স্টেটস্, অফ আমেরিকা বা কানাডার স্টক এক্সচেঞ্জে সবেমাত্র সার্বজনীন হতে চলেছে। কত দ্রুত লাভ করতে পারে তার উদাহরণ হচ্ছে- যেমন- কোম্পানি সার্বজনীন হবার আগে একেকটা ২৫ সেন্ট দামে ১,০০,০০০ শেয়ার কেনা হল। ছ’মাস পরে, কোম্পানি শেয়ার ভালভাবে পরিচালিত হয়, দাম বাড়তে থাকে আর স্টক বেড়ে শেয়ার প্রতি ২০ ডলার বা আরও বেশি হয়ে যায়। এমন বছর গেছে যখন মাত্র এক বছরের কম সময়ে আমাদের ২৫,০০০ ডলার এক মিলিয়ন পরিণত হয়ে গেছে।

যদি আপনি জানেন আপনি কি করছেন তাহলে এটাকে জুয়া বলবেন না। এটা জুয়া তখনই হবে যদি আপনি শুধু একটা লেনদেনে অর্থ দেন আর ভগবানের কাছে লাভের প্রার্থনা করেন। আমার বক্তব্য হল আপনার ক্ষতি কম করা ও ঝুঁকি কমানোর জন্য প্রায়োগিক জ্ঞান, বুদ্ধি আর খেলার প্রতি ভালবাসা ব্যবহার করুন। নিশ্চয়ই, ঝুঁকি সবসময়েই থাকে। অর্থগত বুদ্ধিমত্তা দিয়েই ক্ষতির পরিস্থিতির উন্নতি করা যায়। এইভাবে যা একজনের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ আরেকজনের কাছে তা কম ঝুঁকিপূর্ণ। সেজন্যই আমি লোকেদের স্টক, রিয়্যাল স্টেট বা অন্যান্য বাজারে বিনিয়োগ না করে অর্থগত জ্ঞানলাভে উৎসাহ দিতে চাই। আপনি যত বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ হয়ে উঠবেন তত ক্ষতিকে লাভে পরিণত করাতে পারবেন।

যে সমস্ত স্টকের খেলায় আমি বিনিয়োগ করি সেগুলো বেশির ভাগ লোকের পক্ষে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং মোটেই গ্রহণযোগ্য বলে পরামর্শ দেবার মত নয়। আমি এই খেলাটা ১৯৭৯ থেকে খেলছি তাই এই খেলাটা আমি ভালভাবে জানি কিন্তু আপনি যদি আবার পড়েন এই ধরনের বিনিয়োগ বেশির ভাগ লোকের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, তাহলে আপনি হয়তো আপনার জীবনটাকে অন্যভাবে বাজাতে পারবেন, যাতে আপনার পক্ষে ২৫,০০০ ডলারকে এক বছরে এক মিলিয়ানে পরিণত করার ক্ষমতাটা কম ঝুঁকির ব্যাপার হয়।

যেমন- আমি আগেও বলেছি, আমি যা যা লিখেছি তা গ্রহণযোগ্য উপদেশ বলে লিখিনি। এটা শুধু এই বোঝবার উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে যে এটা সোজা এবং সম্ভব। একজন সাধারণ লোকের পক্ষে বছরে ১,০০,০০০ ডলারের বেশি পরোক্ষ রোজগার খুবই ভাল এবং তা অর্জন করা তেমন কঠিন নয়। বাজারের উপর নির্ভর করে এবং আপনি কত বুদ্ধিমান সেই অনুযায়ী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যেই তা করা সম্ভব। আপনার জীবনধারণের খরচ যদি কম রাখতে পারেন, তাহলে এই অতিরিক্ত ১,০০,০০০ ডলারের রোজগার ভালই, সে আপনি কাজ করুন আর না করুন। ইচ্ছা হলে আপনি কাজ করতে পারেন বা অবসর নিতে পারেন আর গভর্নমেন্টের ট্যাক্স সিস্টেমকে বিরুদ্ধে না করে আপনার সমর্থনে কাজে লাগাতে পারেন।

আমার ব্যক্তিগত ভিত্তি হচ্ছে রিয়্যাল স্টেট। আমার রিয়্যাল স্টেট ভাল লাগে কারণ এটা স্থায়ী এবং ধীর গতিসম্পন্ন। আপনি আমার ভিত দৃঢ় রাখি। আমার ক্যাশফ্রো যথেষ্ট অবিচলিত এবং যদি ঠিকভাবে দেখাশোনা করা যায় দাম বাড়ার একটা ভাল সুযোগ আছে। রিয়্যাল স্টেটের দৃঢ় ভিত্তি থাকার সুবিধা হচ্ছে, আমি যে দূরকল্পী স্টক কিনি তাতে আরও ঝুঁকি নেবার সুযোগ দেয়।

যদি আমি স্টক মার্কেটে অনেক লাভ করি, আমি লাভের উপর আমার ‘ক্যাপিটাল গেন’ ট্যাক্স দিয়ে দেই আর যা বাকি থাকে, রিয়্যাল স্টেটে বিনিয়োগ করি, এইভাবে আবার আমার সম্পত্তির ভিত নিরাপদ করি।

রিয়্যাল স্টেটের বিষয়ে শেষ কথা বলি। আমি সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়িয়েছি আর বিনিয়োগ করার শিক্ষা দিয়েছি। প্রত্যেক শহরে আমি লোকেদের বলতে শুনেছি রিয়্যাল স্টেট সস্তায় কেনা যায় না। আমার অভিজ্ঞতা কিন্তু তা না। এমন কি নিউইয়র্ক আর টোকিওতেও শহরের ঠিক বাইরে সেরা সওদাগুলো বেশির ভাগ লোকের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। সিঙ্গাপুরে সম্প্রতি যেখানে রিয়্যাল স্টেটের দাম খুব চড়া সেখানেও গাড়ি চালিয়ে যাবার সামান্য দূরত্বে ভাল সওদা খুঁজে পাওয়া যাবে। তাই যখনই আমি কাউকে বলতে শুনি, ‘আপনি এখানে ওটা করতে পারেন না,’ আমি তাদের মনে করিয়ে দেই হয়তো তারা আসলে বলতে চাইছে, ‘আমি এখন পর্যন্ত জানি না ওটা এখানে কিভাবে করা যায়।’

সুবর্ণ সুযোগগুলো চোখে দেখা যায় না। তাদের দেখার জন্য চাই মন। বেশির ভাগ লোক ধনী হতে পারেন না কারণ তাদের সামনের যে সুযোগগুলো রয়েছে তা চিনে নেওয়ার আর্থিক প্রশিক্ষণ তাদের নেই।

আমায় প্রায়ই জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘আমি কিভাবে শুরু করবো?’

শেষ অধ্যায়ে আমি দশটা পদক্ষেপের প্রস্তাব দিয়েছি যা আমি আমার নিজের আর্থিক স্বাধীনতার পথে অনুসরণ করেছি। কিন্তু সবসময় আনন্দ করার কথা মনে রাখবেন। এটা শুধুই একটা খেলা। কোন সময় আপনি জেতেন কোন সময়ে আপনি শেখেন। ব্যাপারটা উপভোগ করুন। বেশিরভাগ লোক কখনই জেতে না, কারণ তাদের হারার ভয় বেশি। তাই আমার কাছে স্কুল এত অর্থহীন মনে হয়। স্কুলে আমরা শিখি ভুল করাটা খারাপ আর ভুল করার জন্য আমরা শাস্তি পাই। তবুও, যদি আপনি খেয়াল করেন মানুষ শেখার জন্য এমনভাবে সৃষ্ট যে আমরা ভুল করার মধ্যে দিয়েই শিখি। আমরা হাঁটতে শিখি আছাড় খেয়ে। আমরা যদি কখনও না পড়ে যাই আমরা হাঁটতে শিখি না। সাইকেল চালাতে শেখার ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। আমার এখনো হাঁটুতে দাগ আছে, কিন্তু আজ আমি কিছু না ভেবেই সাইকেল চালাতে পারি। ধনী হবার ক্ষেত্রেও ঐ একই কথা সত্যি। দুর্ভাগ্যক্রমে বেশির ভাগ লোক ধনী না হবার কারণ তারা হারার ভয়ে আতঙ্কিত। বিজেতারা হারতে ভয় করে না। কিন্তু যারা হেরে যায় তারা ভয় পায়। সাফল্যের প্রক্রিয়ার একটা অংশ বিফলতা। যে সব লোকেরা বিফলতা এড়ায় তারা সাফল্যকেও এড়িয়ে যায়।

আমি অর্থকে প্রায় আমার টেনিস খেলার মতই দেখি। আমি জোরে খেলি, ভুল করি, সংশোধন করি, আরও ভুল করি, সংশোধন করি আর ক্রমে উন্নতি করি। যদি আমি খেলায় হেরে যাই, আমি নেটের কাছে যাই, প্রতিপক্ষর সাথে করমর্দন করি, হাসি আর বলি, ‘পরের রবিবার আবার দেখা হবে।’

দুই ধরনের বিনিয়োগকারী হয়।

১। প্রথম আর সব থেকে সাধারণ ধরনের লোক ‘প্যাকেজ বিনিয়োগত কেনে। তারা একটা খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রে, যেমন- রিয়্যাল স্টেট কোম্পানি বা স্টক ব্রোকার বা ফিনানসিয়াল প্ল্যানারকে ফোন করে আর কিছু একটা কেনে। এটা মিউচুয়্যাল ফান্ড, আর.ই.আই.টি, স্টক বা বন্ড হতে পারে। এটা বিনিয়োগের একটা ভাল আর পরিষ্কার উপায়। উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, একজন ক্রেতা কমপিউটারের দোকানে গিয়ে সোজাসুজি একটা কমপিউটার কিনলো।

২। দ্বিতীয় ধরনের বিনিয়োগকারী হচ্ছে যারা বিনিয়োগ সৃষ্টি করে। এই বিনিয়োগকারীর সাধারণ লেনদেন জোগাড় করে। এটা ক্রেতার পছন্দ অনুযায়ী বানানোর মত। আমি কম্পিউটারের ভিন্ন ভিন্ন অংশ কি করে একত্র করে জানি না। কিন্তু আমি নিশ্চয়ই জানি কি করে টুকরো টুকরো সুযোগ একত্র করা যায় অথবা সেসব লোকেরা এই কাজ করে তাদের জানি।

এই দ্বিতীয় ধরনের বিনিয়োগকারীরাই খুব সম্ভবত পেশাদারী বিনিয়োগকারী। কখনও কখনও সব টুকরোগুলোকে একত্র করতে বহু বছর লাগে। আবার, কখনও তারা একত্রিত হয়ই না। আমার ধনবান বাবা আমাকে এই দ্বিতীয় প্রকারের বিনিয়োগকারী হতে উৎসাহ দিয়েছিলেন। কি করে ভিন্ন ভিন্ন টুকরোগুলো একসাথে করা যায় সেটা শেখা গুরুত্বপূর্ণ কারণ সেখানেই লুকিয়ে আছে বিরাট জয়ের সুযোগ তবে যদি ভাগ্য বিরূপ হয় তাহলে বিরাট ক্ষতিও হতে পারে।

যদি আপনি দ্বিতীয় ধরনের বিনিয়োগকারী হতে চান আপনাকে তিনটি প্রধান দক্ষতা গড়ে তুলতে হবে। অর্থগতভাবে বিচক্ষণ হতে যা প্রয়োজন তার সাথে এই তিনটি দক্ষতা জুড়তে হবে :

১। এমন একটা সুযোগ যা বাকি সবার দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে সেটা কিভাবে খুঁজে পাওয়া যাবে? যা অন্যদের চোখ এড়িয়ে গেছে তা আপনি আপনার বুদ্ধি দিয়ে দেখবেন। উদাহরণস্বরূপ, আমার এক বন্ধু এই পুরানো ভেঙে যাওয়া বাড়িটা কিনেছেন। এটা দেখে ভুতুড়ে মনে হয়। সবাই ভাবছেন কেন উনি ওটা কিনেছেন। উনি যা দেখেছিলেন, যা আমরা দেখতে পাইনি তা হচ্ছে বাড়িটার সাথে অতিরিক্ত চারটে ফাঁকা জমির টুকরো আছে। তিনি টাইটেল কোম্পানির কাছে গিয়ে সেটা বুঝতে পারেন। বাড়িটা কেনার পর তিনি বাড়িটা ভেঙে ফেলেন এবং বিল্ডারের কাছে বিক্রি করেন, যে দামে তিনি পুরোটা কিনেছিলেন তার তিন গুণ দামে। তিনি মাত্র দু’মাসের কাজে ৭৫,০০০ ডলার উপার্জন করতে পেরেছিলেন। এটা অনেক অর্থ নয়, কিন্তু এটা ন্যূনতম বেতনের চেয়ে বেশি এবং প্রায়োগিকভাবে খুব কঠিন নয়।

২। কি করে অর্থ জোগাড় করতে হয়। সাধারণ লোকেরা শুধু ব্যাংকে যায়। এই দ্বিতীয় ধরনের বিনিয়োগকারীর জানা প্রয়োজন, কি করে পুঁজি জোগাড় করা যায় এবং এমন অনেক উপায় আছে যার জন্য ব্যাংকে যাবার দরকার পড়ে না। শুরুতে আমি শিখেছিলাম ব্যাংকের সাহায্য ছাড়া কি করে বাড়ি কেনা যায়। বাড়িটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু অর্থোপার্জন দক্ষতার যা শিক্ষা তা অমূল্য।

প্রায়ই আমি লোকেদের বলতে শুনি, ‘ব্যাংক আমাকে ধার দেবে না।’ অথবা ‘আমার ওটা কেনার টাকা নেই।’ আপনি যদি দ্বিতীয় ধরনের হতে চান, আপনার শেখার প্রয়োজন কি করে সেটা করা যায় যেটা বেশির ভাগ লোককে বাধা দিচ্ছে? অন্য কথায়, বেশির ভাগ লোকের অর্থভাব তাদের কেনাবেচায় বাধা দিচ্ছে। আপনি যদি এই বাধাটা এড়াতে পারেন যারা এই দক্ষতাটা শেখেনি তাদের থেকে আপনি অনেক এগিয়ে যাবেন। অনেকবার এরকম হয়েছে আমার ব্যাংকে একটাও পয়সা না থাকা সত্ত্বেও আমি একটা বাড়ি, স্টক, অথবা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং কিনেছি। আমি একবার একটা অ্যাপার্টমেন্ট হাউস কিনেছিলাম ১.২ মিলিয়ান ডলার দিয়ে। আমি একটা লিখিত চুক্তি ক্রেতা আর বিক্রেতার মধ্যে করেছিলাম, যাকে বলে ‘টাইং ইট আপ’। আমি তারপর জমা হিসাবে ১,০০,০০০ ডলার যোগাড় করেছিলাম ফলে আমি বাকি টাকাটা যোগাড় করতে আরও ৯০ দিন সময় পেয়েছিলাম। আমি এটা কেন করেছিলাম? কারণ আমি জানতাম এর দাম দুই মিলিয়ান ডলার। আমি কখনও টাকাটা তুলিইনি। বরং যিনি আমাকে ১,০০,০০০ ডলার দিয়েছিলেন তিনি এই লেনদেনটা খুঁজে বার করার জন্য আমাকে ৫০,০০০ ডলার দিয়েছিলেন। তিনি তারপর আমার জায়গায় চলে এসেছিলেন আর আমি ঐ লেনদেন থেকে সরে গিয়েছিলাম। পুরো কাজটায় আমার সময় লেগেছিল তিন দিন। আবার বলি, আপনি কি কিনছেন তার চেয়ে আপনি কি জানেন সেটা জরুরি। বিনিয়োগ করা কেনা নয়। এক্ষেত্রে আপনার জ্ঞানটা জরুরি

৩। কি করে বুদ্ধিমান লোকদের সংগঠিত করা যায়? সেই মানুষটাই বুদ্ধিমান যে নিজের চেয়েও বুদ্ধিমান লোকেদের সঙ্গে কাজ করে বা তেমন লোকেদের কাজে নিযুক্ত করে। যখন আপনার উপদেশের প্রয়োজন হবে অবশ্যই বিচক্ষণভাবে উপদেষ্টা বেছে নেবেন।

অনেক কিছু শেখার আছে কিন্তু এর পুরস্কারও আকাশচুম্বী হতে পারে। যদি আপনি এসব দক্ষতা শিখতে না চান তাহলে আপনাকে এক নম্বরের বিনিয়োগকারী হওয়ার উপদেশ দেব। আপনি যা জানেন সেটাই আপনার সব থেকে বড় ধন। আপনি যা জানেন না সেটাই আপনার সব থেকে বড় ঝুঁকি।

ঝুঁকি সবসময়েই আছে, কাজেই ঝুঁকি এড়িয়ে না গিয়ে তা মোকাবিলা করার চেষ্টা করুন।

কীভাবে বাধা অতিক্রম করা যায়

মানুষ অধ্যয়ন করে আর্থিক স্বাক্ষর হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তাদের আর্থিক স্বাধীনতার পথে তখনও বাধা আসতে পারে। পাঁচটি প্রধান কারণবশতঃ আর্থিক বিষয়ে বিচক্ষণ ব্যক্তিও যথেষ্ট সম্পত্তি সংগ্রহ করতে পারে না। এমন সম্পদ যা প্রচুর অঙ্কের ক্যাশফ্লো দেয়। এমন সম্পদ যা তাদের কাঙ্খিত জীবনযাপনের সুযোগ ও মুক্তির প্রতিশ্রুতি দেয়, সারাটা জীবন বিলের টাকা জমা দেওয়ার জন্য গলদঘর্ম হওয়ার হাত থেকে রেহাই দেয়।

১। ভীতি

২। বিশ্বনিন্দা করার অভ্যাস

৩। আলস্য

৪। বদভ্যাস

৫। ঔদ্ধত্য

এক নম্বর কারণ : অর্থ হারানোর ভয়কে অতিক্রম করা। আমার এখনও পর্যন্ত এমন কারো সাথে দেখা হয়নি যে সত্যি আর্থিক ক্ষতি পছন্দ করে। আর আমি এত বছরে এমন কোনো ধনী ব্যক্তি দেখিনি যে কখনো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কিন্তু আমি এমন অনেক গরীব লোক দেখেছি যারা বিনিয়োগে একটা পয়সাও হারায়নি।

অর্থ হারাবার ভয়টা সত্যি। এটা প্রত্যেকের আছে। এমন কি বড়লোকদেরও। কিন্তু এই ভয়টা সমস্যা নয়। আপনি কিভাবে ভয়টার মোকাবিলা করছেন সেটাই বিবেচ্য। আপনি হারানোটা কিভাবে দেখছেন। আপনি কিভাবে আপনার অসফলতাক মোকাবিলা করছেন সেটাই জীবনে প্রভেদ আনে। সেটা জীবনের সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, শুধু অর্থের ব্যাপারে নয়। একজন ধনী ব্যক্তি আর একজন গরীব ব্যক্তির মধ্যে প্রধান তফাত হল তারা কিভাবে তাদের ভয়ের মোকাবেলা করছে।

ভয় থাকাটা স্বাভাবিক। অর্থের ব্যাপারে হলে ভীতু হওয়াও স্বাভাবিক। আপনি তা সত্ত্বেও ধনী হতে পারেন। আমরা সবাই কোনো বিষয়ে বাহাদুর আবার অন্য কোনো বিষয়ে ভীতু। আমার বন্ধুর স্ত্রী এমার্জেন্সি রুমের নার্সের কাজ করেন। রক্ত দেখলেই তার কাজের দ্রুততা বেড়ে যায়। কিন্তু আমি যদি বিনিয়োগের কথা বলি, তিনি পালিয়ে যান। আমি কিন্তু রক্ত দেখে পালিয়ে যাই না। আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।

আমার ধনবান বাবা অর্থ সম্বন্ধে ভীতির ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। কেউ কেউ সাপকে ভীষণ ভয় পায়। কেউ কেউ অর্থ হারানোর ব্যাপারে ভীষণ ভয় পায়। ‘দুটোই আতঙ্ক, তিনি বলতেন। তাই তার অর্থ হারানোর আতঙ্কের সমাধান ছিল এই ছোট্ট ছড়াটা। ‘আপনি যদি ঝুঁকি আর দুঃশ্চিন্তাকে ঘৃণা করেন…তাড়াতাড়ি শুরু করুন।

তাই ছোটবেলা থেকে ব্যাংক সঞ্চয়ের অভ্যাস করতে পরামর্শ দেয়। আপনি যদি অল্প বয়সে শুরু করেন, ধনী হওয়া সোজা। যে ২০ বছরে সঞ্চয় শুরু করে আর যে ৩০ বছরে সঞ্চয় শুরু করে তার মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। বলা হয় যে চক্রবৃদ্ধি সুদের ক্ষমতা পৃথিবীর বিস্ময়কর বিষয়গুলোর একটা। ম্যান হ্যাটান দ্বীপ কেনাটা সর্বসময়ের সেরা সওদার একটা বলে ধরা হয়। নিউইয়র্ক ২৪ ডলার দিয়ে কেনা হয়েছিল। তবু যদি ঐ ২৪ ডলার বছরের চার শতাংশ সুদে বিনিয়োগ করা যেত, তাহলে ১৯৯৫-র মধ্যে ঐ ২৪ ডলার ৮ ট্রিলিয়ন ডলারের চেয়েও বেশি হতো। ১৯৯৫ সালের রিয়্যাল স্টেটের দামে ম্যানহ্যাটান আবার কোযেত এবং তারপরেও অর্থ পড়ে থাকতো তাই দিয়ে এল, এর একটা বড় অংশ কেনা যেত।

আমার প্রতিবেশী একটা বড় কমপিউটার কোম্পানিতে কাজ করেন। তিনি ওখানে ২৫ বছর যাবৎ কাজ করছেন। আর পাঁচ বছর পর উনি কোম্পানিটা ছেড়ে দেবেন আর তাঁর ৪০১শ অবসর পরিকল্পনায় চার বিলিয়ন ডলার জমা হবে। এগুলো বেশির ভাগ বিরাট লাভে মিউচুয়্যাল ফাণ্ডে বিনিয়োগ করা আছে যেগুলো তিনি বন্ড আর গভর্ণমেন্ট সিকিউরিটিতে বদলে নিতে পারবেন। অবসর গ্রহণের সময় তার বয়স মোটে ৫৫ বছর হবে আর বছরে ৩,০০,০০০ ডলারের বেশি পরোক্ষ আয় থাকবে, যা তার বেতনের থেকে বেশি। তাহলে এটাও করা যায় যদি একটা অবসরের পরিকল্পনা নিশ্চিত করতে হবে। আর আপনার একজন বিশ্বস্ত ফিন্যানশিয়াল প্ল্যানার থাকা উচিত যে আপনাকে বিশ্বাস করেন যে আপনাকে বিনিয়োগ ইত্যাদি করাতে সাহায্য করবে।

কিন্তু কি হবে যদি আপনার সময় বেশি না থাকে অথচ আপনি শীঘ্র অবসর নিতে চান। আপনি কিভাবে অর্থ হারাবার ভয়ের মোকাবিলা করবেন?

আমার নির্ধন বাবা কিছুই করেননি। তিনি শুধু বিষয়টা এড়িয়ে গেছেন এবং আলোচনা করতেও রাজি ছিলেন না।

অথচ আমার ধনবান বাবা টেক্সাসবাসীদের মত ভাবনাচিন্তা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ‘আমি টেক্সাস আর টেক্সানদের ভালবাসি, তিনি বলতেন। টেক্সাসে সবকিছুই তুলনামূলকভাবে বড়। যখন টেক্সানরা জেতে তারা বড়ভাবে জেতে। আর যখন হারে তখনও তা দেখার মত।

‘তার তো হারতে ভালবাসে?’ আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম।

‘আমি তা বলছি না। কেউই হারতে চায় না। তুমি আমাকে একজন খুশি অথচ পরাজিত লোক দেখাও আর আমি তোমাকে একজন পরাজিত লোকের মনোভাব দেখাবো,’ ধনবান বাবা বলেছিলেন। আমি টেক্সাসবাসীদের ঝুঁকি, পুরস্কার আর অসফলতার প্রতি মনোভাবের কথা বলছি। এইভাবেই তারা জীবনের মোকাবিলা করে। তারা বড়ভাবে বাঁচে। এখানের চারপাশের মত নয় যারা অর্থ-সংক্রান্ত বিষয়ে আরশোলার মতন বাঁচে তারা সব সময় আতঙ্কিত থাকে যে তাদের উপর কেউ আলো ফেলবে। যদি দোকানদার চার আনা কম দেয় তাও ঘ্যানঘ্যান করে।

ধনবান বাবা বোঝাতে থাকলেন।

‘আমি যা সবচেয়ে পছন্দ করি তা হচ্ছে টেক্সাসবাসীদের মনোভাব। তারা জিতে গর্বিত হয়, আবার হেরে গিয়েও বড়াই করে। টেক্সাসে একটা প্রবাদ আছে, ‘আপনি যদি দেউলিয়া হন তাও বড়ভাবে হোন। আপনি একটা ডুপ্লেক্সের জন্য দেউলিয়া হয়েছেন একথা স্বীকার করতে চাইবেন না। এখানে চারপাশের লোকেরা ব্যর্থতাকে এত ভয় পায় যে তাদের কাছে দেউলিয়া হবার মত একটা ডুপ্লেক্সও নেই।” তিনি সবসময় মাইক আর আমাকে বলতেন আর্থিকভাবে সফল না হওয়ার প্রধান কারণ হল লোকেরা অত্যন্ত সাবধানে খেলছে। লোকেরা হারাবার ভয়ে এত ভীত যে তারা হেরে যায় তিনি বলতেন।

এককালীন এন, এফ এল-এর কোয়ার্টার ব্যাক, ফ্যানটার কেনটন এটাকে আবার একটু অন্যভাবে বলেছেন, ‘জয়ের মানে হারতে ভয় না পাওয়া।

আমার নিজের জীবনে আমি লক্ষ্য করেছি জেতার পরেই সাধারনত হার আসে। আমি সাইকেল চালাতে শেখার আগে, অনেকবার পড়ে গিয়েছিলাম। আমার এরকম গলফারের সাথে দেখা হয়নি যে কখনো একটাও গলফেল বল হারায়নি। আমি এইরকম লোক কখনো দেখিনি যারা প্রেমে পড়েছে কিন্তু কখনো হৃদয়ভঙ্গ হয়নি। আর আমার কখনো এমন ধনীর সাথে দেখা হয়নি যার কখনো অর্থাভাব হয়নি।

তাই বেশির ভাগ লোকের জন্য আর্থিকভাবে না জেতার কারণ হল অর্থ হারানোর দুঃখ তাদের কাছে ধনী হবার আনন্দের চেয়ে অনেক বেশি। টেক্সাসের আরেকটি কথা আছে, ‘সবাই স্বর্গে যেতে চায় কিন্তু কেউ মরতে চায় না। বেশি ভাগ লোক স্বপ্ন দেখে বড়লোক হবার, কিন্তু অর্থ হারাবার ভয়ে সন্ত্রস্ত হয়ে থাকে। তাই তারা স্বর্গে পৌঁছাতে পারে না।

ধনী-বাবা মাইক আর আমাকে তাঁর টেক্সাসে যাবার বিষয় গল্প শোনাতেন। ‘তোমরা যদি ঝুঁকি, পরাজয় আর অসফলতার মোকাবিলা করা শিখতে চাও, তাহলে তোমরা স্যান অ্যান্টানিও যাও, অ্যালমো দেখ। অ্যালমো হচ্ছে বীর লোকেদের এমন এক গল্প যারা অদম্য বাধার বিরুদ্ধে সফল হবার কোনো আশা নেই জেনেও যুদ্ধ বেছে নিয়েছিলেন। তারা আত্মসমর্পনের পরিবর্তে মৃত্যুকে বেছে নিয়েছিলেন। এটা একটা প্ররেণাদায়ক গল্প যা অধ্যয়ন করা উচিত। এ এক সামরিক বাহিনীর বেদনাদায়ক পরাজয় বটে। তারা লাতি খেয়েছিল। বলতে পারো একটা অসফলতা ছিল। তাহলে টেক্সাসের লোকেরা কিভাবে অসফলতার মোকাবিলা করে? তারা এখনো চিৎকার করে, অ্যালমোর কথা মনে রাখবে।’

মাইক আর আমি এ গল্প অনেকবার শুনেছি। তিনি যখনই কোনো বড় কেনাবেচার জন্য ঘাবড়ে যেতেন, তিনি সবসময় এই গল্পটাই করতেন। যখন যথেষ্ট পরিশ্রম করার পর তাঁর পরিস্থিতি এমন হতো যে হয় হেরে যাবেন না হলে সফল হবেন, তখন তিনি আমাদের এই গল্প শোনাতেন। যতবার তিনি ভুল করার অথবা লোকসানের ভয় পেতেন, তিনি আমাদের এই গল্পটা বলতেন। এটা তাকে শক্তি দিত, কারণ এটা তাকে মনে করিয়ে দিত যে তিনি সবসময় এটা আর্থিক হারকে জয় এ পরিণত করতে পারেন। ধনবান বাবা জানতেন অসফলতা তাঁকে শুধু আরও দৃঢ় এবং বুদ্ধিমান হতে সাহায্য করবে। উনি হারতে চাইতেন তা নয়। তিনি তার ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন এবং তিনি জানতেন তিনি হারকে কিভাবে গ্রহণ করবেন। তিনি হারকে গ্রহণ করতেন এবং ‘জয়’ এ পরিণত করতেন। এটাই তাকে বিজেতা এবং অন্যদের পরাজিত করেছিল। যেখানে বাকিরা পিছিয়ে গিয়েছিল এটা তাকে রেখা পার করার সাহস দিয়েছিল। এই জন্য আমি টেক্সানদের এত পছন্দ করি। তারা একটা অসফলতা গ্রহণ করে সেটাকে একটা পর্যটকদের গন্তব্যস্থলকে পরিণত করেছিল যার থেকে তাদের বেশ কয়েক মিলিয়ন রোজগার হয়।

কিন্তু বোধ হয় যে কথাগুলো আমার কাছে সব থেকে অর্থবহ মনে হয় তা হল ‘টেক্সানরা তাদের অফলতাকে কবর দিয়ে রাখে না। তারা তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়। তারা তাদের অসফলতাকে গ্রহণ করে এবং তাকে জয়ধ্বনিতে পরিণত করে। অসফলতা টেক্সানদের বিজেতা হবার প্রেরণা দেয়। কিন্তু এই ফরমূলাটা শুধু টেক্সানদেরই ফলমূলা নয়। এটা প্রত্যেক বিজেতারই ফরমূলা।

ঠিক আমিও যেমন বলেছি যে সাইকেল থেকে পড়ে যাওয়াটা আমার সাইকেল চালাতে শেখার একটা অংশ। আমার মনে আছে পড়ে যাওয়াটা আমার সাইকেল শেখার জিদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। কম করতে পারেনি। আমি এও বলেছি আমি এমন কোনো গলফারকে দেখিনি যে একটাও গলফের বল হারায়নি। একজন সেরা পেশাদার গলফার হবার সময় একটা বল হারানো বা একটা প্রতিযোগিতার পরাজয় গলফারকে আরও ভালো হতে, আরও অনুশীলন করতে এবং আরও শিক্ষা নিতে প্রেরণা দেয়। এটাই ওদের আরওসুদক্ষ করে। বিজেতাদের ক্ষেত্রে, পরাজয় প্রেরণার কারণ হয়ে ওঠে। আর পরাজিতদের ক্ষেত্রে, তারা তাদের পরাজিত করে।

জন ডি রকফেলার বলেছিলেন, আমি সবসময় প্রতিটি আকস্মিক দুর্ঘটনাকে একটা সুযোগে পরিণত করতে চেষ্টা করেছি।’

আর আমি জাপানি আমেরিকান হিসাবে একথা বলতে পারি। অনেকে বলে পার্ল হার্বার আমেরিকানদের ভুল। আমি বলি এটা জাপানদের ভুল। টোরা টোরা টোরা চলচ্চিত্রে একজন জাপানি নৌ-অধ্যক্ষ তার উৎফুল্ল অধীনস্থ কর্মচারীদের বলছেন, “আমার মনে হচ্ছে আমি একটা ঘুমন্ত শয়তানকে জাগিয়ে তুলেছি। ‘পার্ল হার্বারকে মনে করো” জয়ের আনন্দধ্বনিত পরিণত হয়েছিল। পরবর্তীকালে আমেরিকার এই বিরাট হার আমেরিকার জেতার প্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই বিরাট আমেরিকাকে মনোবল দিয়েছিল এবং আমেরিকা শীঘ্রই বিশ্বশক্তি হিসাবে উত্থিত হয়েছিল।

অসফলতা বিজেতাদের প্রেরণা দেয়। আবার এই অসফলতাই পরাজিতদের হারিয়ে দেয়। এটাই বিজেতাদের সবচেয়ে বড় গোপন রহস্য। এটা এমন এক রহস্য যা পরাজিতদের জানা নেই। বিজেতাদের সবচেয়ে বড় রহস্য হল অসফলতা বিজেতাদের প্রেরণা দেয়ঃ তাই, তারা হারতে ভয় পায় না। ফ্র্যান টারকেনটনের উক্তি আবার উদ্ধৃত করছি, ‘ জেতা মানে হারতে ভয় না পাওয়া। ফ্র্যান টারকেনটনের মত মানুষরা হারতে ভয় পায় না। কারণ তাদের ক্ষমতা সম্বন্ধে তারা ওয়াকিবহাল। তারা হারতে ঘৃণা বোধ করে, তাই তারা জানে হারা তাদের আরও ভাল হতে প্রেরণা দেবে। হারতে ঘৃণা করা আর হারতে ভয় পাওয়ার মধ্যে একটা বিরাট তফাত আছে। বেশির ভাগ লোক অর্থ হারাবার ভয়ে এত ভীত থাকে যে তারা হেরে যায়। তারা একটা ডুপ্লেক্সের জন্যই দেউলিয়া হয়ে যায়। আর্থিকভাবে তারা জীবনটাকে খুব সাবধানে, অত্যন্ত ছোট মাপে খেলে। তারা বড় বাড়ি, বড় গাড়ি কেনে কিন্তু বড় বিনিয়োগ কেনে না। ৯০ শতাংশের উপর আমেরিকান জনতা আর্থিকভাবে সংঘর্ষ করে, কারণ তারা না হারার জন্য খেলে। তারা জেতার জন্য খেলে না।

তারা তাদের আর্থিক প্ল্যানার, অথবা অ্যাকাউন্টেট অথবা স্টকব্রোকারের কাছে যায় এবং একটা সুষম পোর্টফোলিও কেনে। অনেকেই সি ডি, লো-ইল্ড বন্ড(যে বন্ড থেকে কম আমদানি হয়), এবং মিউচুয়াল ফান্ড (যেগুলো একই ধরনের মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে আদান-প্রদান করা যায়) এবং কিছু ব্যক্তিগত স্টকে প্রচুর নগদ গচ্ছিত রাখেন। এটা নিরাপদ এবং বিচক্ষণ পোর্টফোলিও। কিন্তু এটা জেতার পোর্টফোলিও নয়। এটা একটা এমন একজনের পোর্টফোলিও যে হারতে চায় না।

আমাকে ভুল বুঝবেন না। এটা বোধ হয় ৭০ শতাংশ জনসংখ্যার জন্য অপেক্ষাকৃত ভাল পোর্টফোলিও ভয়াবহ। কারণ কোনো পোর্টফোলিও না থাকার চেয়ে একটা নিরাপদ পোর্টফোলিও থাকা অনেক ভাল। যে নিরাপত্তা পছন্দ করে তার জন্য এ এক দারুণ পোর্টফোলিও। কিন্তু সাবধানে খেলা বা বিনিয়োগ পোর্টফোলিও সুষম রাখা সফল বিনিয়োগকারীদের খেলা নয়। আপনার যদি অল্প অর্থ থাকে আর আপনি ধনী হতে চান প্রথমে আপনার ‘দৃষ্টিনিবদ্ধ’ করতে হবে, সুসামঞ্জস্য থাকার চেষ্টা করবেন না। আপনি যদি কোনো সফল লোকের শুরুটা দেখেন, দেখবেন তারা সুসামঞ্জস্য ছিলেন না। সুসামঞ্জস্য মানুষ কোথাও যেতে পারে না। তারা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে। অগ্রগতির জন্য, ভারসাম্য হারাতে হয়। তাহলে আপনি কিভাবে এগিয়ে যাওয়া শিখবেন।

থমাস এডিসন সুসামঞ্জস্য ছিলেন না। তিনি কেন্দ্রীভূত ছিলেন। বিল গেট সুসামঞ্জস্য ছিলেন না। তিনি কেন্দ্রীভূত ছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প কেন্দ্ৰীভূত ছিলেন। জর্জ সোরস কেন্দ্রীভূত ছিলেন। জর্জ প্যাটন ওঁর ট্যাঙ্ককে ছড়িয়ে ব্যবহার করেননি। তিনি ওগুলোকে জার্মান লাইনের দুর্বল জায়াগুলোতে কেন্দ্রীভূত করে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। ফরাসিরা ম্যাগনিট লাইলে সর্বত্র গুলি চালিয়েছিল। আর আপনি তাদের পরিণাম কি হয়েছিল তা জানেন।

আপনার যদি ধনী হবার কিছুমাত্র ইচ্ছা থাকে অবশ্যই নিজেকে কেন্দ্রীভূত করুন। অল্প কয়েকটা ঝুড়িতে অনেকগুলো ডিম রাখুন। গরীব আর মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকেরা যা করে তা করবেন না অল্প কয়েকটা ডিম তারা অনেকগুলো ঝুড়িতে ছড়িয়ে রাখে।

আপনি যদি হারতে ঘৃণা করেন, সাবধানে খেলুন। যদি হারা আপনাকে দুর্বল করে দেয়, সাবধানে খেলুন। সামঞ্জস্যপূর্ণ বিনিয়োগ করুন। আপনার বয়স যদি ২৫ বছরের বেশি হয় আর আপনি যদি ঝুঁকি নিতে ভয় পান, নিজেকে বদলাবার দরকার নেই। সাবধানে খেলুন কিন্তু শীঘ্র শুরু করুন। আপনার বাসার ডিমগুলো আগে থেকেই যোগাড় করতে শুরু করুন কারণ এতে সময় লাগবে।

কিন্তু আপনার যদি স্বাধীনতার স্বপ্ন থেকে-ইঁদুর দৌড় থেকে আপনি যদি মুক্তি চান- আপনাকে নিজেকে যে প্রশ্নটা প্রথমে করতে হবে তা হচ্ছে, ‘আমি অসফলতায় কি প্রতিক্রিয়া দেখাবো? যদি অসফলতা আপনাকে জেতার প্রেরণা দেয়, তাহলে হয়তো আপনার চেষ্টা করা উচিত-তবে এতে ‘হয়তো’ শব্দটা আছে। যদি অসফলতা আপনাকে দুর্বল করে বা আপনার মেজাজ খারাপের কারণ হয়- যেমন কিছু খেয়ালী লোকেদের হয় যারা নিজেদের মনঃপুত জিনিস না পেলেই প্রতিবার মামলা দায়ের করবার জন্য অ্যাটর্নীকে ডাকে তাহলে আপনি সাবধানে খেলুন। আপনার দিনের বেলায় চাকরি রাখুন। অথবা বন্ড এবং মিউচুয়্যাল ফান্ড কিনুন। কিন্তু মনে রাখুন এ আর্থিক ব্যবস্থায়ও ঝুঁকি আছে, যদিও তারা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ।

আমি টেক্সাস, ফ্ল্যান টারকেনটন এদের উল্লেখ করে এসব কথা বলছি কারণ সম্পত্তির তালিকাবৃদ্ধি বাস্তবিকই সহজ। এতে কোনো বিশেষ স্বাভাবিক ক্ষমতা প্রয়োজন হয় না। এর জন্য প্রচুর পড়াশোনার দরকার নেই। পঞ্চম শ্রেণীর অঙ্কই যথেষ্ট। কিন্তু সম্পত্তি বৃদ্ধি একটা উচ্চ মনোভাবের খেলা। এর জন্য সাহস, ধৈর্য এবং অসফলতার প্রতি অসাধারণ দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন। পরাজিতরা অসফলতাকে এড়িয়ে যায়। আর অসফলতা পরাজিতদের বিজেতাতে পরিবর্তন করে। অ্যালামোর কথা মনে রাখবেন।

দ্বিতীয় কারণ। শঙ্কাকে (সন্দেহ) জয় করা। আকাশ ভেঙে পড়ছে। আমরা বেশির ভাগ সেই। ছোট্ট মুরগির গল্প জানি যে উঠোনের চারপাশে দৌড়ে গোলাবাড়ির সবাইকে আসন্ন বিপদ সম্পর্কে সাবধান করে বেড়াচ্ছিল। আমরা সবাই এরকম লোকেদের জানি। আমাদের সবার মধ্যেই এক ছোট্ট মুরগি আছে।

আর যেমন আমি আগে বলেছি বিষন্ন ব্যক্তি আসলে একটা ছোট মুরগি। যখন ভয় আর দ্বিধার মেঘ আমাদের ভাবনাকে আচ্ছন্ন করে আমরা সবাই এইরকম ছোট মুরগির মত অনুভব করি।

আমাদের প্রত্যেকের মনেই নানা দ্বিধা থাকে। ‘আমি বুদ্ধিমান নই। আমি যথেষ্ট ভাল নই।’ অমুকে আমার চেয়ে ভাল। আমাদের দ্বিধা বা আশঙ্কা আমাদের অচল করে দেয়। আমরা যদি খেলা খেলতে থাকি। কি হবে যদি আমি ঠিক বিনিয়োগ করার পরেই অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ে? অথবা, কি হবে যদি আমি নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারি এবং আমি পয়সাটা ফেরত দিতে না পারি? কি হবে যদি আমি ভেবে পরিকল্পনা করেছি সেভাবে সবকিছু না হয়? অথবা আমাদের বন্ধু এবং প্রিয়জনরা আমি না চাইতেও আমাদের দোষ-ত্রুটি মনে করিয়ে দেবেন। তাঁরা প্রায়ই জিজ্ঞাসা করেন, আপনার কেন মনে হয় আপনি এটা করতে পারবেন? অথবা এটা যদি একটা এত ভাল পরিকল্পনা হয়ে থাকে, এটা অন্য কেউ ভাবেননি কেন? অথবা ওটা কখনোই সফল হবে না। আপনি জানেন না আপনি কি বলছেন। এই শঙ্কার কথাগুলো একেক সময় এত সরব হয়ে ওঠে যে আমরা কাজ করতে ভয় পাই। এত অস্বস্তিকর অনুভূতি হয়। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। সামনে এগিয়ে যেতে পারি না। তাই আমরা যা নিরাপদ তাই নিয়ে থাকি আর সুযোগ আমাদের পাশ এগিয়ে যেতে পারি না। তাই আমরা যে নিরাপদ তাই নিয়ে থাকি আর সুযোগ আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আমরা জীবনকে এগিয়ে যেতে দেখি অথচ আমরা হতবুদ্ধি হয়ে বসে থাকি। আমরা সবাই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে এরকম অনুভব করেছি, কেউ বেশি, কেউ বা কম।

ফিডেলিটি ম্যাগেলান মিউচুয়াল ফান্ডখ্যাত পিটার লিঞ্চ আকাশ ভেঙে পড়ার সাবধানবাণীকে গোলমাল বলে উল্লেখ করেছেন, আমরা সবাই সেই গোলমান শুনতে পাই।

‘গোলমাল’ বা ‘বিশৃঙ্খলা শব্দ আমাদের মাথার ভিতর সৃষ্টি হয় অথবা বাইরে থেকে আসে। প্রায়ই বন্ধু, পরিবার, সহকর্মী বা প্রচার মাধ্যমের কাছ থেকে এগুলো শোনা যায়। লিঞ্চ বলেন ১৯৫০ এর দশকে নিউক্লিয়ার যুদ্ধের আশঙ্কা খবরে এত বেশি ছিল যে লোকেরা নির্ভরযোগ্য ছাউনি তৈরি করতে শুরু করেছিল, খাবার আর জল সঞ্চয় করতে শুরু করেছিল। তারা যদি নিরাপদ আশ্রয় না বানিয়ে বুদ্ধি খাটিয়ে সেই পয়সা বাজারে নিয়োগ করতো, তাহলে হয়তো আজ আর্থিকভাবে স্বাধীন হতে পারত।

যখন কয়েক বছর আগে লস এঞ্জেলসে দাঙা হয়েছিল, সারাদেশে বন্ধুক বিক্রি বেড়ে গিয়েছিল। ওয়াশিংটন স্টেটে হ্যামবার্গারের মাংস খেয়ে এক ব্যক্তি মারা যাওয়ায়, অ্যারিজোর স্বাস্থ্য দপ্তর সমস্ত রেস্তোরাঁয় গরুর মাংস ভাল করে রান্না করার আদেশ দেয়। একটা ওষুধের কোম্পানি জাতীয় টিভিতে একটা বিজ্ঞাপন দেখায় যে লোকেদের ফ্লু হচ্ছে। এটা দেখানো হয় ফেব্রুয়ারি মাসে। লোকেদের সর্দি কাশি বেড়ে যায় আর সাথে সাথে তাদের সর্দির ওষুধের বিক্রিও বৃদ্ধি পেয়েছিল।

বেশির ভাগ লোক দরিদ্র, কারণ যখন বিনিয়োগের কথা ওঠে পৃথিবী ভর্তি ছোট মুরগিরা চারিধারে দৌড়ে বেড়ায় আর চিৎকার করে আকাশ ভেঙে পড়ছে। আকাশ ভেঙ্গে পড়ছে। আর ছোট মুরগিরা প্রভাব ফেলতো কারণ আমরা সবাই একেকটা ছোট মুরগি। মনের শঙ্কা ও ভীতিতে যাতে গুজব এবং নৈরাশ্যের প্রভাব না পড়ে সেজন্য প্রয়োজন প্রচুর মনোবল ও সাহসিকতা। ১৯৯২এ আমার এক বন্ধু রিচার্ড বস্টন থেকে আমার স্ত্রী আর আমার সাথে ফিনিক্সে দেখা করতে এসেছিল। সে আমরা স্টক আর রিয়্যাল স্টেটের কাজ দেখে প্রভাবিত হয়েছিল। ফিনিক্সে রিয়্যাল স্টেটের দাম তখন নৈরাশ্যজনক। আমরা দুটি ধরে তাকে দেখিয়েছিলাম যে ক্যাশফ্লোর জন্য এবং পুঁজিবৃদ্ধির জন্য এ এক দারুণ সুযোগ।

আমার স্ত্রী আর আমি রিয়্যাল স্টেট এজেন্ট ছিলাম না। আমরা বিশুদ্ধ বিনিয়োগকারী ছিলাম। একটা রিসোর্ট কমিউনিটির ইউনিট পছন্দ করার পর, আমরা একজন এজেন্ট কে ফোন করলাম, সেই বিকেলেই ওই এজেন্ট তাকে ওটা বিক্রি করে দিলেন। শহরে একটা দুই শোবার ঘরের বাড়ি হওয়া সত্ত্বেও তার দাম ছিল শুধু ৪২,০০০ ডলাল। ঐ একই ধরনের ইউনিটের তখন দাম ছিল ৬৫,০০০ ডলার। তার এটা একটা ভাল সওদা মনে করেছিল। উত্তেজিত হয়ে সে এটা কিনে বস্টনে গিয়েছিল।

দু’সপ্তাহ পরে, এজেন্টটি আমাদের ফোন করে জানালো যে আমাদের বন্ধুটি ঐ সম্পত্তি কেনায় অনিচ্ছুক। আমি তৎক্ষণাৎ কারণ জানার জন্য ফোন করেছিলাম। সে যা বললো তা হচ্ছে সে তার প্রতিবেশীর সাথে কথা বলেছে, তিনি বলেছেন এই কেনা-বেচাটা ভাল হচ্ছে না। তাকে খুব চড়া দাম দিতে হচ্ছে।

আমি রিচার্ডকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তার প্রতিবেশী বিনিয়োগকারী কি না। রিচার্ড বলেছিল ‘না’। যখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম কে সে ওর কথা শুনছে, রিচার্ড নিজের পক্ষ সমর্থনে বলেছিল সে আরও কয়েকটা ভু-সম্পত্তি দেখতে চায়।

ফিনিক্সের রিয়্যাল স্টেটের বাজার ঘুরে গেল আর ১৯৯৪-এ ঐ ছোট ইউনিটের মাসিক ভাড়া হল ১,০০০ ডলার, আর শীতের চরমে ভাড়া হল ২,৫০০ ডলার করে। ১৯৯৫ এ ইউনিটটার মূল্য ৯৫,০০০ ডলার ছিল। শুধু ৫,০০০ ডলার দিয়ে রিচার্ড ইঁদুর দৌড়ের বাইরে যাবার চেষ্টা শুরু করতে পারতো। আজকে, এখনও তার কিছু নেই। আর ফিনিক্সের সওদাগুলো এখনও রয়েছে, শুধু আপনাকে আরও বেশি খুঁজতে হবে।

রিচার্ডের পিছিয়ে যাওয়া আমায় অবাক করেনি। একে বলে, ক্রেতার অনুতাপ,’ আর এটা আমাদের সবাইকে প্রভাবিত করে। এই শঙ্কাগুলো আমাদের গ্রাস করে। ছোট মুরগিটা জিতে যায়, তার স্বাধীনতার একটা সুযোগ যায় হারিয়ে।

আরেকটা উদাহরণ, আমি সি. ডি বদলে ট্যাক্স লিয়েন সার্টিফিকেট আমার সম্পত্তির অল্প অংশ রাখি। আমার পয়সার উপর আমি বছরে ১৬ শতাংশ করে সুদ পাই বা ব্যাংকের প্রস্তাবিত ৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। এই সার্টিফিকেটগুলো রিয়্যাল স্টেট দিয়ে সুরক্ষিত আর জাতীয় আইন দ্বারা ভাল মত সংরক্ষিত, যা অধিকাংশ ব্যাংক থেকে ভাল। যে ফরমূলায় তাদের কেনা হয়েছে সেটা তাদের আরও সুরক্ষিত করে। অবশ্য এগুলো সহজেই নগদ টাকায় পরিণত করা যায় না। তাই আমি তাদের ২ থেকে ৭ বছরের সি. ডি হিসাবে গণ্য করি। আমি যখনই কাউকে বলি যে আমি এইভাবে বিনিয়োগ করেছি, বিশেষ করে তাদের যদি সিডিতে পয়সা থাকে, তারা বলে ওঠে ব্যাপারটা ঝুঁকিপূর্ণ। তারা আমাকে বোঝায় আমার কেন একরম করা উচিত না। আমি যখন তাদের জিজ্ঞাসা করি কোথা থেকে এরকম ধারনা হচ্ছে, তারা বলে কোনো বন্ধুর বিনিয়োগের পত্রিকা থেকে তারা জেনেছে। তারা নিজেরা কখনও এটা করেনি আর যারা এটা করতে চলেছে তাদের এ কাজে বিরত থাকতে কারণ বোঝাচ্ছে। আমি সব থেকে কম যে সুদ পাই তা ১৬ শতাংশে কিন্তু যারা ভীত শঙ্কিত তারা ৫ শতাংশ মেনে নিতেও প্রস্তুত। শঙ্কার দাম দিতে হয় বইকি। আমার বক্তব্য হচ্ছে এই শঙ্কা আর সন্দেহ বেশির ভাগ লোককে গরীব করে রেখেছে এবং তারা সাবধানে খেলছে। বাস্তবজগত অপেক্ষা করে আছে আপনার ধনী হবার জন্য। শুধু একটা ব্যক্তির শঙ্কা তাদের দরিদ্র করে রেখেছে। যেমন-আমি বলেছি ইঁদুর দৌড় থেকে বেরোনো প্রায়োগিক দিক থেকে সোজা। এর জন্য অনেক পড়াশেনার দরকার হয় না। কিন্তু এই শঙ্কাগুলো বেশির ভাগ লোককে পঙ্গু করে দেয়।

সন্দেহপ্রবণ মানুষ কখনও জেতে না, ধনবান বাবা বলতেন। ‘যাচাই না করা আর ভয় সন্দেহ বাতিকের সৃষ্টি করে। ‘সন্দেহপ্রবণ মানুষ সমালোচনা করে আর বিজেতারা বিশ্লেষণ করে। এটা তার একটা প্রিয় উক্তি ছিল। ধনবান বাবা বুঝিয়েছিলেন, সমালোচনা অন্ধ করে দেয় আর বিশ্লেষণ চোখ খুলে দেয়। বিশ্লেষণ বিজেতাদের বুঝিয়ে দেয় যে, সমালোচকরা অন্ধ। আর সেই সবসুযোগ, যা বাকিরা দেখতে পায়নি, তাও বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিজেতারা দেখতে পায়। এইভাবে অন্যরা যে সুযোগে বঞ্চিত হয়েছে তাতে তারা সফলতার চাবিকাঠি খুঁজে পায়।

যে আর্থিক স্বাধীনতা বা মুক্তি খুঁজছে তার কাছে রিয়্যাল স্টেট একটা ক্ষমতাশীল বিনিয়োগের মাধ্যম। এটা একটা অভূতপূর্ব বিনিয়োগের যন্ত্র। তবু যতবার আমি রিয়্যাল স্টেটকে একটা বাহন হিসাবে উল্লেখ করেছি, আমি প্রায়ই শুনেছি, আমি টয়লেট সারাতে চাই না। এটাকেই পিটার লিঞ্চ ‘গোলমাল’ বা বিশৃঙ্খলার শব্দ বলে উল্লেখ করেছেন। এটাকেই আমার ধনবান বাবা বলবেন সন্দেহপ্রবণ মানুষের কথা। যারা সমালোচনা করে অথচ বিশ্লেষণ করে না। যারা চোখ খুলে দেখে না বরং সন্দেহ আর ভয় দেখে বুদ্ধি খাটানো বন্ধ করে দেয়।

তাই যখন কেউ বলে, ‘আমি টয়লেট সারাতে চাই’ আমি প্রত্যুত্তরে বলতে চাই, আপনার কেন মনে হল যে আমি সারাতে চাই?’ তারা বলতে চাইছে একটা টয়লেট তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি ইঁদুর দৌড় থেকে মুক্তির কথা বলছি আর তারা টয়লেটে তাদের দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত করছে। এই চিন্তার ধারাই বেশির ভাগ লোককে দরিদ্র করে রাখে। তারা বিশ্লেষণ করার পরিবর্তে সমালোচনা করে।

“আমি চাই না ….. কথাটায় তোমার সাফল্যের চাবি আছে” ধনবান বাবা বলতেন। কারণ আমিও টয়লেট সারাতে চাই না, আমি এমন এক প্রপার্টি ম্যানেজারের খোঁজ করি যে টয়লেট সারাতে পারে। আর ভাল প্রপার্টি ম্যানেজার খুঁজে পেলে, সে আমার বাড়ি আর অ্যাপার্টমেন্টের ব্যবসা দেখে, আমার ক্যাশফ্লো বেড়ে যায়। কিন্তু আরও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একজন ভাল প্রপার্টি ম্যানেজার আমাকে আরও অনেক রিয়্যাল স্টেট কেনার সুযোগ দেয়, কারণ আমাকে আর টয়লেট সারাতে হয় না। একজন বড় প্রপার্টি ম্যানেজার রিয়্যাল স্টেটের ব্যবসায় সাফল্যের চাবিকাঠি। একজন ভাল প্রপার্টি ম্যানেজার খুঁজে বের করা আমার কাছে রিয়্যাল স্টেটের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একজন ভাল প্রপার্টি ম্যানেজার প্রায়ই বড় বড় কেনা-বেচার খবর রিয়্যাল স্টেট এজেন্টের আগে পায়, যা তাদের আরও মূল্যবান করে তোলে।

ধনবান বাবা এই বোঝাতে চেয়েছিলেন, অর্থাৎ ‘আমি চাই না, ‘কথাটায় তোমার সাফল্যের চাবি থাকে। যেহেতু আমিও টয়লেট সারাতে চাই না, আমি চিন্তা করি কি করে আরও রিয়্যাল স্টেট কেনা যায় এবং আমার ইঁদুর দৌড় থেকে বেরানো তরান্বিত করা যায়। সে সব লোকেরা বলতে থাকে ‘আমি টয়লেট সারাতে চাই না প্রায়ই তারা তাদের নিজেদের এই ক্ষমতাবান বিনিয়োগ-বাহনকে ব্যবহার করা থেকে বঞ্চিত করে তাদের কাছে স্বাধীনতার চেয়ে টয়লেট বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

স্টক মার্কেটে, আমি প্রায়ই লোকেদের বলতে শুনি, ‘আমি অর্থ হারাতে চাই না। বেশ, তাদের এমন কেন মনে হয় যে আমি বা অন্য কেউ অর্থ হারাতে ভালবাসি। তারা অর্থ করতে পারে না কারণ অর্থ হারাবে না ঠিক করেছে। বিশ্লেষণ করার পরিবর্তে তারা তাদের মস্তিষ্ককে আরেকটা ক্ষমতাশীল বিনিয়োগের বাহন স্টক মার্কেটের থেকে বঞ্চিত রেখেছে। ডিসেম্বর ১৯৯৬ এ আমি আমার বন্ধুর সাথে পাড়ার গ্যাস স্টেশনের কাছ দিয় যাচ্ছিলাম। তিনি হঠাৎ মুখ তুলে দেখলেন যে তেলের দাম ভেঙ্গে যাচ্ছে। আমার বন্ধু অত্যন্ত দুশ্চিন্তা করেন অর্থাৎ তিনি একটা ‘ ছোট মুরগি’। তার কাছে, আকাশ সবসময়ই ভেঙে পড়ছে আর তা সাধারণত তাঁর মাথায় ভেঙে পড়ে।

আমরা যখন বাড়ি পৌঁছালাম তিনি আমাদের পরিসংখ্যানের মাধ্যমে দেখালেন পরের কয়েক বছরে তেলের দাম কেন বেড়ে যাবে। আমি আগে কখনও এইসব পরিসংখ্যান দেখিনি যদিও আমি একটা চালু তেলের কোম্পানির অনেকগুলো শেয়ারের মালিক। এই খবরের সাথে সাথে আমি খোঁজ করলাম এবং একটা নতুন তেলের কোম্পানির খোঁজ পেলাম যার মূল্য ন্যায্য থেকে কম। এরা সবে কয়েকটা তেলের ভান্ডারে সন্ধান পেয়েছে। আমার ব্রোকার এই নতুন কোম্পানি নিয়ে উত্তেজিত এবং আমি প্রতিটি শেয়ার ৬৫ সেন্ট দরে ১৫,০০০ শেয়ার কিনেছিলাম।

ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭-এর আমার সেই বন্ধু আর আমি একই গ্যাস স্টেশনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তেলের মূল্য প্রতি গ্যালনে প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। আবার, সেই ছোট মুরগি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন আর অভিযোগ করছিলেন। আমি হাসলাম কারণ জানুয়ারি ১৯৯৭ এ সেই ছোট তেলের কোম্পানি তেল পেয়েছিল আর সেই ১৫,০০০ শেয়ারের দাম বেড়ে গিয়ে ৩ ডলার প্রতি শেয়ারের হয়ে গিয়েছিল আর এই টিপাসটাও সেই আমাকে প্ৰথম দিয়েছিল। আর আমার বন্ধুর কথা সত্যি হলে দাম বাড়তেই থাকবে।

বিশ্লেষণ করার পরিবর্তে এই ছোট মুরগিরা তাদের মনের দরজা বন্ধ করে দেয়। যদি বেশির ভাগ লোক বুঝত ষ্টক মার্কেট বিনিয়োগে স্টপ কি করে কাজ করে তাহলে আরও বেশি লোক না হারার জন্য বিনিয়োগ না করে জেতার জন্য বিনিয়োগ করতেন। ‘স্টপ’ একটা কম্পিউটারের নির্দেশ যা দাম পড়ে যেতে শুরু হওয়ামাত্র আপনার স্টককে নিজে থেকে বিক্রি করে দেয় যাতে করে আপনার যৎসামান্য আর কিছু লাভ বাড়ে। যারা হারতে ভয় পায় তাদের জন্য এটা একটা মহান যন্ত্ৰ।

তাই এখন আমি লোকেদের চাওয়ার ইচ্ছা ছেড়ে ‘আমি চাই না’- তে কেন্দ্রীভূত হতে দেখি, আমি বুঝি তাদের মাথায় ‘বিশৃঙ্খলার শব্দ নিশ্চয়ই বেড়ে গিয়েছে। ছোট মুরগি তাদের মস্তিষ্কের দখল করে নিয়েছে আর চেঁচাচ্ছে, আকাশ ভেঙে পড়ছে আর টয়লেট ভেঙে যাচ্ছে। তাই তারা তাদের ‘আমি চাই না তা পায় না। ধনবান বাবা আমাকে ছোট মুরগিদের দেখার এক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছিলেন। কর্নের স্যান্ডারস যা করেছিলেন ঠিক তাই করো। ৬৬ বছর বয়সে তিনি তার ব্যবসা হারিয়ে সোস্যাল সিকিউরিটি চেকের ভরসায় জীবন শুরু করেছিলেন। এটা যথেষ্ট ছিল না তিনি সারা দেশ ঘুরে তার মুরগি ভাজার রেসিপি বিক্রি করতে শুরু করেছিলেন। একটি সম্মতিসূচক ‘হ্যাঁ’ শোনার আগে তাকে ১,০০৯ বার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অথচ তিনি শেষে এমন একক বয়সে পৌঁছে মাল্টিমিলিওয়নিয়ারে পরিণত হয়েছিলেন যখন বেশির ভাগ ব্যবসা ছাড়ার কথা ভাবে। তিনি একজন সাহসী এবং নাছোড়বান্দা ব্যক্তি ছিলেন, ধনবান বাবা হারল্যান স্যান্ডার সম্বন্ধে বলেছিলেন। সুতরাং আপনি যখন দ্বিধায় থাকবেন অথবা একটু ভয় কর্নেল স্যান্ডার নিজের মনের ছোট মুরগিটার যা দশা করেছিলেন তাই করুন। তিনি এটা ভেঁজে ফেলেছিলেন।

তৃতীয় কারণ কুঁড়েমি। ব্যস্ত লোকেরা প্রায়ই খুব কুড়ে হয়। আমরা সবাই এমন ব্যবসায়ীর গল্প শুনেছি যে অর্থ রোজগার করার জন্য প্রচণ্ড পরিশ্রম করে কাজ করে। তার স্ত্রী এবং সন্তানদে জীবনধারণের ভাল বস্তু করার জন্য সে পরিশ্রম করে কাজ করে। দীর্ঘ সময় সে অফিসে কাটায় আর সপ্তাহান্তে অফিসের কাজ বাড়িতেও নিয়ে আসে। একদিন সে বাড়ি ফিরে দেখে বাড়ি খালি। তার স্ত্রী বাচ্চাদের নিয়ে চলে গেছে। সে জানতো যে তার স্ত্রীর সাথে তার সমস্যা চলছে, কিন্তু সম্পর্কটা আরও দৃঢ় করার চেষ্টা করার বদলে সে কাজে ব্যস্ত থাকতো। সে আতঙ্কিত হয়ে উঠল, তার কাজ করার ক্ষমতার অবনতি হয়ে থাকলো আর তার চাকরি চলে গেল।

আজকাল, আমার এমন মানুষের সাথে দেখা হয় যারা তাদের সম্পত্তি দেখাশোনা করতে পারে না কারণ তারা ব্যস্ত। আবার এমন লোক আছে যারা অত্যধিক ব্যস্ত থাকায় স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে পারে না। কারণটা একই। তারা ব্যস্ত এবং তারা ব্যস্তই থাকে যাতে ব্যস্ততার অজুহাতে তারা যেন সত্যের মুখোমুখি হতে চায় না সেটা এড়িয়ে যেতে পারে। একথা কাউকে বলে দিতে হয় না। অন্তরের গভীরে তারা জানে। আপনি যদি তাদের মনে করিয়ে দেন তারা প্রায়শই রাগ এবং বিরক্তি প্রকাশ করে।

তারা যদি কাজ নিয়ে বা সন্তানদের নিয়ে ব্যস্ত নাও হয়, তখন তারা থাকে টি, ভি দেখতে, মাছ ধরতে, গলফ খেলতে বা বাজার করতে। যদিও অন্তরের গভীরে তারা জানে যে তারা গুরুত্বপূর্ণ কিছু এড়িয়ে যাচ্ছে। এটাই অতি পরিচিত কুঁড়েমির লক্ষণ। ব্যস্ত থেকে কুঁড়েমি।

তাহলে কুঁড়েমির প্রতিকার কি? উত্তর হচ্ছে একটু লোভ।

আমাদের মধ্যে অনেকেই বড় হয়েছি এই ধারণা নিয়ে যে লোভ বা তীব্র আকাঙ্ক্ষা খারাপ। লোভী লোকেরা খারাপ, আমার মা বলতেন, তবুও আমাদের সকলের ভিতরে সুন্দর জিনিস, নতুন জিনিস, উত্তেজক জিনিস পাবার আকুল আকাঙ্ক্ষা থাকে। সেই আকাঙ্ক্ষার আবেগ চাপা দেবার পথ বের করেন।

‘তুমি শুধু তোমার কথা চিন্তা করো। তুমি কি জানো না তোমার আরও ভাই-বোন আছে?’ এটা আমার মায়ের একটা প্রিয় উক্তি ছিল। অথবা ‘তুমি চাও আমি তোমাকে ওটা কিনে দেই?’এটা আমার বাবার প্রিয় ছিল। তোমার কি মনে হয় আমরা পয়সা দিয়ে তৈরি? অর্থ কি গাছে ফলে? আমরা বড়লোক নই, তুমি জানো।

শুধু শব্দ না রাগ আর অপরাধবোধের যে অনুভূতি এই শব্দগুলোর সাথে মিশে থাকতো-সেগুলো আমার উপর প্রভাব ফেলতো।

অথবা এর উল্টো অপরাধবোধের জাল এরকম ছিল। আমি আমার জীবনের সব কিন্তু ত্যাগ করছি তোমাকে এটা কিনে দেবার জন্য। আমি তোমায় এটা কিনে দিচ্ছি কারণ আমি যখন ছোট ছিলাম আমি এই সুবিধা পাইনি। আমার এক প্রতিবেশী সম্পূর্ণ দেউলিয়া, কিন্তু তার গাড়ি গ্যারাজে রাখতে পারে না। গ্যারাজটা তার বাচ্চাদের জন্য। খেলনা দিয়ে ভরা। এই অদূরে সন্তানরা যা চায় তাই পায়। আমি ওদের চাহিদার বেদনা অনুভব করাতে চাই না এ ওর প্রতিদিনের উক্তি। তিনি তার সন্তানদের কলেজের জন্য বা নিজের অবসরের জন্য কিছুই আলাদা করে রাখেননি, কিন্তু তার সন্তানরা যেখানে যা খেলনা তৈরি হয়েছে পেয়েছে। তিনি সম্প্রতি ডাকে একটা ক্রেডিট কার্ড পেয়ে তার ছেলেমেয়েদের লাস ভেগাস বেড়াতে নিয়ে গেছেন। আমি এটা আমার সন্তানের জন্য করছি। এই ছিল তার ত্যাগের উক্তি।

ধনবান বাবা আমার ক্ষমতা নেই। কথাটাতে বিরক্তবোধ করছেন।

আমার বাড়িতে আমি এটাই শুনতাম। পরিবর্তে আমার ধনবান বাবা তার ছেলেয়েদের কাছে শুনতে চেয়েছিলেন, “কি করে এটা করা যায়? ওর যুক্তি ছিল আমার ক্ষমতা নেই এই কথাটা মস্তিষ্কের ক্ষমতাকে রুদ্ধ করে দেয়। ওটা আর চিন্তা করতে পারে না। ‘কি করে এটা করতে পারি? উক্তিটা মস্তিষ্ককে সজাগ করে তুলে উত্তর খোঁজায় ভাবনা-চিন্তা করতে বাধ্য করে।

কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তিনি অনুভব করেছিলেন ‘আমার ক্ষমতা নেই। কথাটা মিথ্যে। আর মানুষের প্রাণশক্তি তা জানে। মানুষের প্রাণশক্ত অত্যন্ত ক্ষমতাশীল, তিনি বলতেন। এটা জানে যে এটা সবকিছু করতে পারে। একটা অলস মনে অধিকারী যখন বলে, ‘আমার মন তার এই মিথ্যাটা নিশ্চয়ই ঢাকতে চায়। আত্মচিৎকার করতে থাকে, এস। জিমে গিয়ে ব্যায়াম করা যাক। অলস মন বলে, কিন্তু আমি ক্লান্ত। আমি আজ সত্যি পরিশ্রম করেছি।’ অথবা মানুষের প্রাণশক্তি বলে, ‘আমার দারিদ্রে আমি বিরক্ত। বেরিয়ে পড়ি আর ধনী হয়ে উঠি এ উত্তরে অলস মন বলে, ধনীরা লোভী। তাছাড়া এতে প্রচুর ঝামেলা। এটা নিরাপদ নয়। এতে অর্থাভাব হতে পারে। আমি এমনিই প্রচুর পরিশ্রম করে কাজ করেছি। আমার কর্মক্ষেত্রে প্রচুর কাজ। দেখুন আমার আজ রাতেই কত কাজ করতে হবে। আমার বস কালের মধ্যে এটা শেষ করতে বলেছেন।

‘আমার ক্ষমতা নেই’ কথাটা দুঃখদায়কও বটে। এমন এক অসহায় বোধ যা থেকে আসে নৈরাশ্য আর অবসাদ। ‘উদাসীনতা হচ্ছে এমনই আরেকটা শব্দ। কি করে ক্ষমতা হবে কথাটা সম্ভাবনার, রোমঞ্চ আর স্বপ্নের দুয়ার খুলে দেয়। তাই ধনবান বাবা কি কিনতে চাও তা নিয়ে অত চিন্তিত ছিলেন না, কিন্তু কিভাবে কেনার ক্ষমতা হবে? সেই চিন্তা তাকে ভাবিয়ে তুলত এবং সেইজন্যই তার একটা দৃঢ় মন আর প্রগতিশীল মানসিকতা গড়ে উঠেছিল।

তাই, তিনি মাইককে আর আমাকে খুব সামান্যই দিয়েছিলেন। বরং তিনি জিজ্ঞাসা করতেন, তোমাদের এটা করার ক্ষমতা কি করে হবে? এর মধ্যে কলেজের শিক্ষা অন্তর্ভূক্ত ছিল যার খরচ আমরা নিজেরাই বহন করেছি। শুধু উদ্দেশ্য নয়, আকাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য অর্জন করার প্রণালী তিনি আমাদের শেখাতে চেয়েছিলেন I

আজকাল যে সমস্যাটা আমি অনুভব করি তা হল কোটি কোটি মানুষ তাদের লোভ সম্পর্কে অপরাধবোধে ভোগে। এটা তাদের ছোটবেলা থেকে একটা পুরনো ভাবনাধারা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তারা জীবনে শৌখিন জিনিস আকাঙ্ক্ষা করে। বেশির ভাগ মানুষের অবচেতন মন এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত যে তারা বলে, তুমি ওটা পেতে পারো না অথবা ওটা তোমার সাধ্যতীত।

যখন আমি স্থির করলাম যে আমি ইঁদুর দৌড় থেকে বেরিয়ে আসবো, প্রশ্নটা ছিল যে, কি করলে আমাকে আর কাজ না করতে হবে না? আর আমার মন উত্তর আর সমাধান খুঁজতে থাকলো। সব থেকে কঠিন ছিল আমার আসল বাবা-মার চিন্তাধারা, যেমন-আমাদের সামর্থ্য নেই অথবা শুধু নিজের কথা চিন্তা করা বন্ধ করো” অথাব কেন তুমি অন্যদের কথা ভাবো না? ইত্যাদির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। এই ধরনের অনেক কথা আমার লোভ চাপা দিয়ে ভিতরে অপরাধবোধ জাগিয়ে দেবার জন্য বলা হতো।

তাহলে কি করে কুঁড়েমি কাটানো যায়? উত্তর হচ্ছে, ‘একটু লোভ। এটা সেই রেডিও স্টেশন WII-FM, যার পুরো অর্থ হচ্ছে ‘What’s in it for me.’ যে কোনও মানুষের সুস্থিরভাবে বসে নিজেকে প্রশ্ন করা উচিত ‘আমি যদি স্বাস্থ্যবান, আকর্ষণীয় এবং সুন্দর দেখতে হই, তাতে কি হবে? অথবা ‘আমার জীবন কেমন হবে যদি আমাকে আর কাজ না করতে হয়? অথবা ‘আমার প্রয়োজন মাফিক অর্থ হাতে পেলে আমি কি করব? একটু লোভ ছাড়া, আরও ভাল পাবার আকাঙ্ক্ষা ছাড়া, প্রগতি হয় না। আমাদের পৃথিবী এগিয়ে যায়, কারণ আমরা আরও ভাল প্রত্যাশা করি। নতুন আবিষ্কার হয় কারণ আমরা আরও ভাল কিছু আকাঙ্ক্ষা করি। আমরা স্কুলে যাই আর খেটে পড়াশোনা করি কারণ আমরা আরও ভাল কিছু চাই। তাই যখনই আপনি দেখবেন নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন এটাতে আমার জন্য কি আছে?’ একটু লোভী হন। এটাই আলস্যের সব থেকে ভাল প্রতিকার।

যে কোন মাত্রাতিরিক্ত জিনিসের মত অত্যধিক বেশি লোভ ভাল নয়। তবে মনে রাখবেন ‘ওয়াল স্ট্রিট’ সিনেমাতে মাইকেল ডগলাস কি বলেছেন, ‘লোভ ভাল’ ধনবান বাবা একটু অন্যরকম করে বলেছেন, ‘অপরাধবোধ লোভের থেকেও খারাপ। কারণ অপরাধবোধ আত্মাকে তার শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ইলেনর রুসভেল্টের বক্তব্য আমার সবচেয়ে প্রিয়ঃ তুমি হৃদয় থেকে যা ঠিক মনে হয় তাই করো, কারণ তোমার সমালোচনা হবেই। তুমি করলেও হবে, না করলেও হবে।

চতুর্থ কারণ! অভ্যাসঃ আমাদের জীবন শিক্ষার চেয়ে বেশি অভ্যাসের প্রতিফলন। আর্নল্ড সোয়ার্জনেগর অভিনীত সিনেমা ‘কোন্যান’ দেখার পর আমার এক বন্ধু বলেছিল, আমি সোয়ার্জনগরের মত একটা শরীর ফেলে খুশি হব। বেশির ভাগ বন্ধুরা সম্মতিসূচক মাথা নাড়লো।

আমি এও শুনেছি ও একসময় চর্মসার ছিল, আরেক বন্ধু যোগ করলো।

হ্যাঁ, আমিও তাই শুনেছি, আরেক বন্ধু বললো।

আমি শুনেছি ওর প্রতিদিন জিমে গিয়ে ব্যায়াম করার অভ্যাস আছে। ‘

‘হ্যা, আমি হলফ করে বলতে পারি ওকে করতেই হয়।

‘না,’ দলের সমালোচক বললো।

‘আমার মনে হয় ও জন্ম থেকেই ঐ রকম। তাছাড়া আর্নল্ড সম্বন্ধে কথা বন্ধ করে চল কিছু বিয়ার খাওয়া যাক।

কিভাবে অভ্যাস আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে তার এ একটা উদাহরণ। আমার মনে আছে আমি আমার ধনবান বাবার কাছে ধনীদের অভ্যাস সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম। তিনি আমাকে সোজাসুজি উত্তর দেননি। তিনি যথারীতি উদাহরণের মধ্য দিয়ে শেখাতে চেয়েছিলেন।

‘তোমার বাবা কখন বিয়ের পয়সা দেন?’ ধনবান বাবা জিজ্ঞাসা করেছিলেন।

‘মাসে প্রথমে, আমি বললাম।

‘তার কি কিছু বাকি থাকে?’ তিনি জিজ্ঞাসা করলেন।

‘খুব কম, আমি বললাম।

‘এটাই তার সংগ্রামের প্রধান কারণ, ধনবান বাবা বললেন। ওই অভ্যাস খারাপ। তোমার বাবা আগে সবাইকে কাটাকড়ি দেন, তারপর যদি কিছু বাকি থাকে তাহলেই নিজেকে তা দেন।’

বেশির ভাগ আপনি কি তাঁর বিলের পয়সা দেওয়া উচিত না?

নিশ্চয়ই না, ধনবান বাবা বললেন।

‘আমি দৃঢ়ভাবে বলছি বিলের অর্থ সময়মত মেটানো উচিত। আমি শুধু নিজেকে প্রথমে অর্থ দেই। সরকারকে অর্থ দেবার আগে নিজেকে দেই।’

‘কিন্তু যদি আপনার যথেষ্ট পয়সা না থাকে কি হয়? আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তখন আপনি কি করেন?

‘একই,’ ধনবান বাবা বললেন। আমি তাও নিজেকেই আগে পয়সা দেব। যদি আমার পয়সা কম থাকে, তাও। আমার সম্পত্তি তালিকা সরকারের চেয়ে আমার কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

‘কিন্তু, আমি বললাম। ওরা আপনার কিছু করে না?

‘হ্যাঁ, তুমি যদি অর্থ না দাও, ধনবান বাবা বললেন। দেখো, আমি অর্থ দিতে বারণ করি না। আমি শুধু বলেছি, আমার অর্থ কম থাকলেও আমি আমাকে আগে অর্থ দেই।

‘কিন্তু,’ আমি উত্তর দিলাম আপনি কিভাবে এটা করেন?”

কিভাবে করি তা জরুরী নয়। প্রশ্ন হচ্ছে কেন, ধনবান বাবা বলেছিলেন।

‘ঠিক আছে কেন?’

‘প্রেরণা,’ ধনবান বাবা বললেন। তোমার কি মনে হয় কে বেশি জোরে অভিযোগ করবে-আমি না আমার পাওনাদার?

‘আপনার পাওনাদাররা নিশ্চয়ই আপনার চেয়ে জোরে চিৎকার করবে, আমি যা স্পষ্ট মনে হচ্ছে তাই বললাম।

‘যদি আপনাকে অর্থ না দেওয়া হয় আপনি নিশ্চয়ই কিছু বলবেন না।

‘তাহলে দেখো, আমার নিজেকে অর্থ দেবার পর আমার ট্যাক্স আর পাওনাদারের অর্থ দেবার চাপ এত বেশি হয় যে এটা আমাকে অন্যভাবে আয়ের পথ খুঁজতে বাধ্য করে। অর্থ দেবার চাপ প্রেরণায় পরিণত হয়। আমি অতিরিক্ত চাকরি করেছি, অন্য কোম্পানি শুরু করেছি, স্টক মার্কেটে সওদা করেছি, সব কিছু করেছি যাতে লোকেরা আমার দিকে না চেঁচায়। ঐ চাপ আমায় পরিশ্রম করে কাজ করিয়েছে, কিন্তু করতে বাধ্য করেছে, আর সর্বসাকুল্যে আমাকে পয়সার ব্যাপারে আরও বুদ্ধিমান ও কর্মচঞ্চল করেছে। যদি আমি নিজেকে সব শেষে পয়সা দিতাম, আমি কোনো চাপ অনুভব করতাম না, কিন্তু দেউলিয়া হয়ে যেতাম।

‘তাহলে গভর্নমেন্টের অথবা অন্য লোকেরা যারা আপনার কাছে পয়সা পায় তাদের প্রতি ভয়ই আপনাকে প্রেরণা দেয়।

‘ঠিক বলেছো,’ ধনী বাবা বলেছিলেন।

‘তুমি দেখো, গভর্নমেন্টে যারা বিলের পয়সা নেয় তারা অত্যন্ত উৎপীড়ক হয়। সাধারণভাবে সব বিল আদায়কারীরাই এরকম। বেশির ভাগ লোক এই উৎপীড়কদের কাছে আত্মসমর্পন করে। তারা ওদের পয়সা দেয় কিন্তু নিজেদের কখনও দেয় না। তুমি ৯৬ পাউন্ড ওজনের দুর্বল লোকের গল্প জানো নিশ্চয়ই যার মুখে বালি ছুঁড়ে মারা হয়েছিল?

আমি মাথা নাড়লাম।

‘আমি ওজন তোলার আর শরীর গঠনের শিক্ষার ঐ বিজ্ঞাপন আমার কমিক বইয়ে সবসময় দেখি। বেশির ভাগ লোক উৎপীড়কদের মুখে বালি ছোঁড়ার সুযোগ দেয়। আমি স্থির করেছিলাম উৎপীড়কদের প্রতি ভয়কে আমি নিজেকে আরও শক্তিশালী করে তোলার জন্য ব্যবহার করবো। অন্যরা আরও দুর্বল হয়ে যায়। আমাকে অতিরিক্ত অর্থ করার কথা ভাবতে বাধ্য করা জিমে গিয়ে ওজন নিয়ে কাজ করার মত। আমি যত আমার মানসিক পেশিগুলোকে পয়সার জন্য কাজ করাবো তাও আমি শক্তিশালী হব। তখন আমি আর উৎপীড়কদের ভয় পাবো না। আমার ধনবান বাবা যা বলছিলেন তা আমার ভাল লেগেছিল। সেজন্য আমি আমাকে সব থেকে আগে পয়সা নেই আর আমি আর্থিকভাবে শক্তিশালী হই, মানসিকভাবে এবং ধনসঞ্চয়ে বলশালী হই।

ধনবান বাবা মাথা নাড়লেন।

‘আর যদি আমাকে বিল থেকে শেষে অর্থ দেই অথবা না-ই দেই, আমি দুর্বল হয়ে যাই। তাই বস, ম্যানেজার, ট্যাক্স কালেক্টর, বিল কালেকটার আর বাড়িওয়ালার মত লোকেরা সারাজীবন ধরে আমার চারদিকে ঠেলতে থাকে। শুধু এই কারণে আমার ভাল অর্থের অভ্যাস নেই। ধনবান বাবা মাথা নাড়লেন। ঠিক ৯৬ পাউন্ড দুর্বল লোকটার মত।

পঞ্চম কারণ। ঔদ্ধত্যঃ ঔদ্ধত্য হচ্ছে অহংকার আর অজ্ঞানতার সমন্বয় ‘আমি যা জানি আমার অর্থ করতে সাহায্য করে। আমার জ্ঞান আমার অর্থ উপার্জনে সাহায্য করে। যতবার উদ্ধৃত হয়েছি, আমার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। কারণ যখন আমি উদ্ধৃত হই, আমি বিশ্বাস করি যে যা আমি না তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ধনবান বাবা আমাকে প্রায়ই বলতেন।

আমি দেখেছি অনেকে নিজেদের অজ্ঞানতা লুকোবার জন্য ঔদ্ধতাকে ব্যবহার করে। এটা প্রায়ই হয় যখন আমি আর্থিক স্টেটমেন্ট নিয়ে অ্যাকাউন্টেট এমনকি অন্য বিনিয়োগকারীর সাথে আলোচনা করছি।

তারা আরোচনার মধ্যে তর্জন গর্জন করে এগোতে চায়। আমার কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে তারা কি বলছে তা তারা জানে না। তারা মিথ্যে কথা বলছে না কিন্তু তারা সত্যিও বলছে না।

পয়সা, অর্থ আর বিনিয়োগের জগতে এমন অনেক লোক আছে যাদের কোনো ধারণাই নেই তারা কি বিষয়ে কথা বলছে। পয়সার ব্যবসায়ে বেশির ভাগ লোক ব্যবহৃত গাড়ির বিক্রেতাদের মত তীব্র চিৎকার করে শুধু বিক্রির কথা বলতে থাকে।

আপনি যখন বুঝবেন যে আপনার কোনো একটি বিষয়ে জ্ঞান নেই, ঐ বিষয়ে পারদর্শী ব্যক্তিকে খুঁজে বার করে, অথবা ঐ বিষয়ে একটা বই পড়ে নিজেকে শিক্ষিত করতে শুরু করুন।

শুধু অর্থ নয় জ্ঞানের প্রয়োজন

রবার্ট কিয়োসাকির বর্ণনা- আমি যখন বিভিন্ন নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানির বিষয়ে গবেষণা করতাম একটি মন্তব্য প্রায়ই শুনতে হতো… ‘আমাদের কাছে সবচেয়ে সেরা কমপেনসেশন প্ল্যান আছে।’ নিজেদের ব্যবসার এই ব্যবসা করে মাসে মাসে কয়েক লক্ষ্য ডলার রোজগার করেন। আমি নিজেও এমন অনেকের সংস্পর্শে এসেছি যাঁরা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসা করে মাসে কয়েক লক্ষ ডলার উপার্জন করেন এতটুকু সন্দেহ নেই।

প্রচুর অর্থলাভের লোভ অনেককেই এই ব্যবসায় টেনে আনে। তা সত্ত্বেও শুধুমাত্র অর্থোপার্জনের জন্য আমি নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসার কথা বিবেচনা করার পরামর্শ দেব না।

শুধু পণ্য নয় বাচনিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন

‘আমাদের পণ্যদ্রব্য সর্বশ্রেষ্ঠ’। বিভিন্ন নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসা সম্বন্ধে খোঁজখবর নেয়ার সময় আমাকে এই দ্বিতীয় গুণটির বিষয়ে বিশেষভাবে জানানো হয়েছে। নানা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে জেনে অবাক হই যে, নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসার মাধ্যমে নানা ধরনের পণ্য বা সেবা উপস্থাপিত করা হচ্ছে।

সত্তর দশকে প্রথম যে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসার সুযোগ সম্বন্ধে তদন্ত করি তারা বিক্রি করত ভিটামিন। আমি নিজে ব্যবহার করে দেখলাম ভিটামিনগুলো অসাধারণ। এখনও আমি তাদের কয়েকটি ভিটামিন ব্যবহার করি। তদন্ত করার সময় নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসা মূলধারার এই পণ্যসম্ভারগুলো আমার চোখে পড়েঃ

* ব্যবহারযোগ্য, গৃহ পরিচর্যার পণ্য

* টেলিফোন ব্যবস্থা

* রিয়্যাল এস্টেট অর্থাৎ ভূ-সম্পত্তি

* ফিনানসিয়াল সার্ভিস অর্থাৎ অর্থ-সংক্রান্ত সেবা-ব্যবস্থা

* ইন্টারনেট ওয়েবসাইট

* ইন্টারনেট বাজারের বিতরণ ব্যবস্থা, ওয়াল-মার্ট এবং কে-মার্টে যেসব পণ্য বিক্রি হয় প্রায় সেসব কিছুই ছাড়সহ এখানে বিক্রি হয়

* স্বাস্থ্য পরিচর্যার পণ্যসম্ভার

* গহনা

* কর-সংক্রান্ত সুবিধা-ব্যবস্থা

* শিক্ষা-সংক্রান্ত খেলনা।

তালিকাটি অন্তহীন। আমি মাসে অন্তত এমন একটি নতুন নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানির বিষয়ে জানতে পারি যারা পণ্য বা ক্ষতিপূরণ পরিকল্পনায় নতুন কিছু উপস্থাপিত করছে, এদের মধ্যে কারুর পণ্য বা সেবায় আগ্রহী হলে আমি নিজেও এদের দলে যোগ দিই। তবে প্রধানত পণ্য বা ক্ষতিপূরণ পরিকল্পনার জন্য আমি লোকদের বিভিন্ন নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসার সম্বন্ধে বিবেচনা করে দেখতে বলছি না।

এদের শিক্ষা পরিকল্পনা

রবার্ট কিয়োসাকির মতে, নেটওয়ার্ক ব্যবসা পরামর্শ দেওয়ার প্রধান কারণ হল এদের শিক্ষা পদ্ধতি। কোম্পানির পণ্য ও পারিশ্রমিক যাচাই নয়, যথেষ্ট সময় নিয়ে কোম্পানির প্রধান উদ্দেশ্যটি বিবেচনা করে দেখুন, এরা কি বাস্তবিকই আপনাকে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা দিতে ইচ্ছুক। তিন ঘণ্টা যাবত বিক্রির বিবরণ শোনা ও রংবেরং-এর পণ্যতালিকা দেখার চেয়ে এই কাজটি করতে অনেক বেশি সময় লাগে। এদের শিক্ষাব্যবস্থা সত্যি কতখানি কার্যকর তা জানার জন্য আপনাকে খানিকটা পরিশ্রম করতে হবে, এদের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা পদ্ধতি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার করে দেখতে হবে। যদি আপনার প্রথম প্রেজেন্টেশনটি পছন্দ হয় তাহলে যাঁরা শেখাচ্ছেন ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করুন। আমি তাই করেছি, যা পেলাম তা দেখে আমি মুগ্ধ।

অবশ্যই ভালমত বিবেচনা করে দেখুন, কারণ অধিকাংশ নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানির মতে তাদের শিক্ষা পরিকল্পনা অসাধারণ। তবে আমি দেখেছি এরা যেমনটি দাবি করেন তেমন উন্নতমানের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা অনেকের কাছেই নেই। আমি যে সব কোম্পানিগুলো দেখেছি তাদের মধ্যে বেশির ভাগ কোম্পানি প্রশিক্ষণে কতগুলো বইয়ের তালিকার নির্দেশ দেয় এবং তারপর আপনার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনকে ব্যবসায় নিযুক্ত করার জন্য আপনাকে প্রশিক্ষণ দেয়। অর্থাৎ শুধুই নিজেদের পণ্য বা সেবা-ব্যবসা বিক্রির জন্য এরা আপনাকে আরও ভাল সেলসপার্সন করে তোলার শিক্ষা দেয়। তাই সময় নিয়ে সাবধানে বিবেচনা করে দেখুন, এমন অনেক নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানি আছে যাদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা সত্যিই অসাধারণ…আমার মতে, যতগুলো বাস্তব জীবন-ভিত্তিক ব্যবসা প্রশিক্ষণ দেখেছি তার মধ্যে কয়েকটি সেরা প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা এখানে খুঁজে পেয়েছি।

শিক্ষা পরিকল্পনায় কি খুঁজবেন

আপনি আমার অন্যান্য বই আগে পড়ে থাকলে নিশ্চয়ই জানেন যে আমাদের শিক্ষকদের পরিবার আমার বাবা স্টেট অফ হাওয়াই-এ স্কুল ব্যবস্থার প্রধান ছিলেন। যদিও আমি শিক্ষক পরিবারের একজন, তা সত্ত্বেও আমি নিজে পুরাতন শিক্ষা-ব্যবস্থা পছন্দ করতাম না। যদিও আমি নিউইয়র্কের এক প্রখ্যাত ফেডেরাল মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে কংগ্রেসন্যাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাই অর্থাৎ কংগ্রেস দ্বারা নিযুক্ত হই এবং বিজহাস্লোতকের ডিগ্রি প্রাপ্ত কিন্তু পুরাতন শিক্ষাজগত আমার একঘেয়ে মনে হতো। ছাত্রাবস্থা ওস্নাতকের পর্ব আমাকেও অতিক্রম করে আসতে হয় তবে আমি পড়শোনায় কখনওই চ্যালেঞ্জ বা উৎসাহ উদ্দীপনা অনুভব করতাম না।

স্কুল পাস করার পর আমি ইউ. এস. মেরিন কোর্সে যোগ দেই এবং আমাকে ফ্লোরিডার পেনসাকোলার ইউ. এস. নেভি ফ্লাইট প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেইসময় ভিয়েতনামে যুদ্ধ চলছিল, দ্রুত আরও বেশি পাইলট নিযুক্ত করার প্রয়োজন ছিল ছাত্র পাইলট অবস্থায় যে শিক্ষালাভ করি তাতে আমি উৎসাহ উদ্দীপনা অনুভব করি। বহু ব্যবহৃত ‘শুয়োপোকা থেকে প্রজাপতি হয়ে ওঠার উক্তিটি হয়ত সকলেই শুনেছেন। ফ্লাইট স্কুলে প্রকৃতপক্ষে তাই করা হয়। ফ্লাইট স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে অবশ্য আমি মিলিটারি অ্যাকাডেমি থেকে স্নাতক হয়ে একজন কমিশনপ্রাপ্ত অফিসার হয়ে গিয়েছিলাম। তবে অনেকেই অসামরিক কলেজ থেকে সরাসরি ফ্লাইট স্কুলে ভর্তি হয়েছিল, তাদের দেখে শুয়োপোকার কথাই মনে পড়ত। হিপি যুগের কথা, অসামরিক পোশাক পরিহিত বেশ কিছু বিচিত্র চেহারার ছাত্র-ছাত্রীদের দেখলাম জীবন পরিবর্তনকারী শিক্ষাসূচি আরম্ভ করার জন্য প্রস্তুত। দু-তিন বছরের প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করতে পারলে এরা হয়ে উঠত প্রজাপতি অর্থাৎ বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন প্লেন চালানোর জন্য প্রস্তুত সুদক্ষ পাইলট হয়ে উঠত এরা।

শুয়োপোকার প্রজাপতিতে রূপান্তরের সেরা গল্প টম ক্রুশ অভিনীত সিনেমা ‘টপ গান’। ভিয়েতনামে যাওয়ার আগে ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ডিয়েগোতে আমার কার্যালয় ছিল, এখানেই ‘টপ গান’-এর স্কুলটি অবস্থিত। আমি নিজে যদিও এই প্রথিতযশা স্কুলে যোগ্য ছাত্র নির্বাচিত হয়ে উঠতে পারিনি তবে ঐ সিনেমায় তরুণ পাইলটরা যে প্রাণশক্তি ও আত্মপ্রত্যয় প্রদর্শন করেছিল, যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময় আমরা সকলেই তা অনুভব করেছিলাম। আমরা ছিলম একদল অবিন্যস্ত তরুণ, প্লেন চালাতে জানতাম না… হয়ে উঠলাম প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণ, সাধারণ মানুষ যে সব বাঁধা-বিপত্তি এড়িয়ে যায় সে সব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠলাম। আমার ও আমার সহ- পাইলটদের মধ্যে যে পরিবর্তন দেখলাম তাকেই ‘জীবন পরিবর্তনকারী শিক্ষা বলে উল্লেখ করছি। ফ্লাইট স্কুল সম্পূর্ণ করে যখন ভিয়েতনামের জন্য রওনা হই, তখন আমার জীবনে এসেছে আমূল পরিবর্তন। যে ছেলেটি ফ্লাইট স্কুলে ভর্তি হয়েছিল আমি যেন সে নই।

ফ্লাইট স্কুলের বহু বছর পরের কথা, আমার সঙ্গী পাইলটদের মধ্যে অনেকেই ব্যবসা জগতে প্রচুর সাফল্য লাভ করেছেন। একত্র হয়ে যখন আমরা সেই পুরোনো যুদ্ধের দিনগুলোর গল্প করি সকলেই একবাক্যে স্বীকার করি যে, আমাদের বর্তমান ব্যবসায়িক জীবনের সাফল্যে ফ্লাইট স্কুলের প্রশিক্ষণের অশেষ অবদান রয়েছে।

তাই যখন আমি জীবন পরিবর্তনকারী শিক্ষার কথা বলি তখন এমন শিক্ষার কথাই বোঝায় যা শুয়োপোকাকে একটি সুন্দর প্রজাপতি করে তোলার ক্ষমতা রাখে। যখন নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসার শিক্ষা পরিকল্পনা বিবেচনা করে দেখবেন, আমার মতে, এমন শিক্ষা পরিকল্পনা অন্বেষণ করবেন যা জীবনে বিশেষ পরিবর্তন আনার ক্ষমতা রাখে।

তবে আবার সতর্ক করে দিই, ফ্লাইট স্কুলের মতই, সকলেই এই কর্মসূচিতে সফল হতে পারেন না।

বাস্তব জীবনের বিজনেস স্কুল

এখানে রবার্ট কিয়োসাকি তাঁর বিজনেস স্কুল গ্রন্থের শিক্ষা গ্রাফের নানা পদ্ধতির উল্লেখ করেছেন। ফ্লাইট স্কুলের একটি বৈশিষ্ট্য ছিল, যে সব পাইলট ভিয়েতনাম থেকে যুদ্ধ করে ফিরতেন তারাই আমাদের প্রশিক্ষণ দিতেন। যখন তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলতেন, তারা নিজেদের জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতার গল্প শোনাতেন। এদিকে বিজনেস স্কুলের সমস্যাটা ছিল, যাঁরা আমাদের পড়াতেন তাঁদের মধ্যে অনেকেরই ব্যবসার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং-এ যাঁরা শীর্ষস্থানীয় তারা বাস্তব জগতে সফল ব্যক্তি, তা না হলে তারা শীর্ষে পৌঁছাতে পারতেন না। পুরাতনী বিজনেস স্কুলের জগতে, ব্যবসা শিক্ষাদানের জন্য বাস্তব ব্যবসা জগতে সফল হওয়া জরুরী নয়। সেই জন্যই বোধ হয় নেটওয়ার্ক মার্কেটিং শিক্ষাজগতের নির্দেশ করা যে পরিমাণ অর্থোপার্জন করেন পুরাতন ব্যবসা-শিক্ষার জগতের শিক্ষকেরা ততখানি অর্থোপার্জন করতে পারেন না।

এই নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখার সময় যাঁরা শীর্ষে রয়েছেন, যাঁরা ব্যবসা সফল হয়েছেন তাঁদের খুঁজে বের করুন, তারপর নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি এঁদের কাছ থেকে কিছু শিখতে চান কি না।

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানিগুলো বাস্তব জীবনের যে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসার বিষয়গুলো শেখায় তার মধ্যে কয়েকটি হলঃ

* সাফল্যের মনোভাব

* নেতৃত্বের ক্ষমতা

* সংযোগ স্থাপনের দক্ষতা

* মানুষ পরিচালনায় দক্ষতা অর্থাৎ পিপল স্কুল

* ব্যক্তিগত ভয়, দ্বিধা বা আত্মপ্রত্যয়ের অভাব অতিক্রম করা

* বাতিল হওয়ার ভয় অতিক্রম করা

* অর্থ পরিচালনার দক্ষতা

* অর্থ বিনিয়োগের দক্ষতা

* দায়িত্বশীল হওয়ার দক্ষতা

* সময় সদ্ব্যবহারের দক্ষতা

* লক্ষ্য নির্ণয় ও

* নিয়মানুসারে কাজ করা।

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসার যে সব সফল ব্যক্তিদের সঙ্গে আমার আলাপ হয় তারা সকলেই নেটওয়ার্ক মার্কেটিং প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম থেকে এই দক্ষতাগুলো অর্জন করে তা বিকাশ করেছেন। আপনি নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবস্থার শীর্ষে পৌঁছাতে বা প্রচুর অর্থলাভ করতে যদি নাও পারেন, এই প্রশিক্ষণ আপনার বাকি জীবনের এক মূল্যবান প্রাপ্তি হবে। যদি শিক্ষা পরিকল্পনা সত্যি ভাল হয়, তাহলে তা আপনার জীবনে হয়ত চিরকালের মত উন্নতি সাধন করতে পারবে।

জীবন-পরিবর্তনকারী শিক্ষা কি?

জীবন পরিবর্তনকারী শিক্ষার ব্যাখ্যা করার জন্য আমি নিােক্ত নক্শাটি তৈরী করেছি। লক্ষ্য করবেন এটি একটি চতুস্ক অর্থাৎ চারটে দিকবিশিষ্ট পিরামিডের মত… ‘জিপ্টের পিরামিড কয়েকশ’ বছর যাবত টিকে আছে। অর্থাৎ ঐ

জিপ্টের পিরামিড

পিরামিডের কাঠামো খুবই দৃঢ় ও অটল। যুগ যুগ ধরে বিদ্বান পন্ডিত ব্যক্তিরা মনে করেন নিখিল সৃষ্টি অথবা বিশ্বপ্রকৃতি চারের ভিত্তিতে, এ ক্ষেত্রে চারটি দিকের ভিত্তিতে, কাজ করে। তাই ঋতু চার প্রকারে, শীত, বসন্ত, গ্রীস্ম ও হেমন্ত। যাঁরা জ্যোতিষ-চর্চা করেন তাঁরা জানেন প্রধানত চারটি চিহ্ন বিদ্যামন, পৃথিবী, বায়ু, অগ্নি ও জল। আমি যে জীবন পরিবর্তনকারী শিক্ষার কথা বলছি সেখানেও কিন্তু এই চার সংখ্যাটি বিদ্যমান। অর্থাৎ জীবন পরিবর্তনকারী শিক্ষা তখনই কার্যকর হবে যখন তা লার্নিং অর্থাৎ শিক্ষা পিরামিডের চারটি প্রান্তকে প্রভাবিত করবে।

চিরাচরিত শিক্ষাপদ্ধতি প্রধানত মনোগত শিক্ষা ও বিকাশে কেগ্ৰীভূত। এরা আপনাকে পড়া, লেখা ও অঙ্ক করার গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতাগুলো শেখায়। এগুলোকে বোধগম্য ক্ষমতা বলা চলে। শিক্ষার অনুভূতিগত, শারীরিক ও আধ্যাত্মিক দিকগুলো এই চিরাচরিত শিক্ষা পদ্ধতির যে প্রভাব পড়েছে তা আমার ব্যাক্তিগতভাবে অপছন্দ। প্রতিটি বিষয়ে আলাদাভাবে আলোচনা করছি।

১. অনুভূতিগত শিক্ষা

চিরাচরিত শিক্ষার বিরুদ্ধে আমার একটি অভিযোগ হল, এটি ভয়ের ভিত্তিতে গড়ে তোলা হয়েছে… আরও বিশদভাবে বলতে গেলে এই শিক্ষার মূলে রয়েছে ভুলভ্রান্তির ভয়। যার ফলে মনে হেরে যাওয়ার ভয় সৃষ্টি হয়। শেখায় অনুপ্রাণিত না করে, শিক্ষক আমাকে প্ররোচিত করার জন্য, বিফল হওয়ার ভয়টাকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতেন, যেমন ‘ভাল নম্বর না পেলে, মোটা টাকার চাকরি পাবে না।’

আবার স্কুল শিক্ষক নির্ধন বাবা মনে করতেন, ভুল করা পাপ। এদিকে আমার ধনবান বাবা বলতেন, ‘ভুল করলে অনেকেই মিথ্যে কথা বলে, কারণ তারা মনে মনে নিজের ভুল স্বীকার করতে ভয় পায় … তাই তারা শেখা ও উন্নতি করার সুযোগগুলোও হারায়। ভুল স্বীকার করে আমরা শেখার সুযোগ পাই, ভুলের দোষটা অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে বা তা সমর্থন করে অথবা অজুহাত দেখিয়ে কিছু শেখা যায় না। ভুল করে যদি তা স্বীকার না কর, অথবা সেই ভুলের জন্য যদি অন্যকে দোষী সাব্যস্ত কর তাহলে তা পাপ’। চিরাচরিত ব্যবসা ভুলের প্রতি এরকমই ভাবনা পোষণ করা হয়। ব্যবসার জগতে ভুল করলে আপনাকে বরখাস্ত করে দেয়া হয়। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং জগতে ভুল করলে সেই ভুল থেকে শেখার ব্যাপারে আপনাকে উৎসাহ দেয়া হয়, যাতে আপনি ভুল সংশোধন করতে পারেন, যাতে মানবিক ও অনুভূতিগতভাবে আরও তৎপর হয়ে উঠতে পারেন। কর্পোরেট জগতে যখন আমি বিক্রি করা শিখছিলাম তখন দেখেছি, যারা উপযুক্ত পরিমাণ বিক্রি করার অসফল হতো তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দেয়া হতো। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর জগতে দলনেতা এমন লোকদের সঙ্গে কাজ করতে চান যারা তেমন সফল নয়, এদের কাজ থেকে বরখাস্ত না করে দলনেতা এদের অগ্রসর হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেন। যদি সাইকেল থেকে পড়ে যাওয়ার জন্য আপনাকে শাস্তি দেয়া হতো অথবা সাইকেল চালানো শেখা হতো না।

আমার মনে হয়, অধিকাংশ মানুষের তুলনায় আর্থিকভাবে আমি বেশি সফল, কারণ আমি অন্যদের তুলনায় বেশি বিফল হয়েছি। মানে, যারা জেনেছিল যে, ভুল করা অন্যায় বা ভুল করা বোকামি, তাদের তুলনায় আমি অনেক বেশি ভুল করা, সংশোধন করা, শেখা ও উন্নতি করায় অনুপ্রাণিত করা হয়। আমার মতে, এটিই জীবন পরিবর্তনকারী শিক্ষা… যা চিরাচরিত শিক্ষা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

যদি আপনি ভুল করতে ভয় পান, অসফল হতে ভয় পান তাহলে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসা বিশেষভাবে আপনারই উপযুক্ত। আমি এমন অনেক নেটওয়ার্ক পশিক্ষণ সূচি দেখেছি যা মানুষের আত্মবিশ্বস গড়ে তোলে, আত্মপ্রত্যয় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে… একবার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পেলে আপনার জীবনও বদলে যাবে… চিরতরে।

২. শারীরিক শিক্ষা

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, যারা ভুল করতে ভয় পায় তারা যেহেতু জীবনে বিশেষ কিছু কাজ করে না তাই তারা কিছু শিখতেও পারে না। অনেকেই জানেন যে শিক্ষা মানসিক এবং শারীরিক পদ্ধতি, পড়া ও লেখাও শারীরিক পদ্ধতি। যদি আপনাকে এমনভাবে তৈরি করা হয় যে আপনি সব সঠিক উত্তর জানেন, কখনওই ভুল করেন না, তাহলে সম্ভবত আপনার শিক্ষা পদ্ধতিতে বাঁধা পড়ছে। আপনি যদি সব উত্তর জানেন অথচ চেষ্টা করতে ভয় পান তাহলে কীভাবে উন্নতি করবেন? আমি যে ক’টা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানির অধ্যয়ন করেছি তারা সবাই মনোগত শিক্ষার সঙ্গে শারীরিক শিক্ষাকেও সমান গুরুত্ব দিয়েছে। এরা আপনাকে বাইরে বেরিয়ে কাজ করতে, ভয়ের সম্মুখীন হতে উৎসাহিত করে তোলে, যাতে আপনি সেই ভুল থেকে কিছু শিখতে পারেন। এবং মানসিক, অনুভূতিগত ও শারীরিক দৃষ্টিতে আরও বেশি বলশালী হয়ে উঠতে পারে। চিরাচরিত শিক্ষা আপনাকে তথ্যাদি শেখায় উৎসাহিত করে ও ভুল করলে ভয় পাওয়া শেখায়, ফলে শারীরিক দিক দিয়েও আপনি পিছিয়ে পড়েন। ভয়ের পরিবেশে বেঁচে থাকা মনোগত, অনুভূতিগত, শারীরিক বা আর্থিক দিক দিয়ে স্বাস্থ্যকর নয়। আগেও বলেছি, আমি বেশি বিত্তবান, কারণ আমি পুঁথিগত বিদ্যার বিশারদ নই, আমি ধনবান কারণ অন্যের তুলনায় আমি বেশি ভুল করেছি, ভুল স্বীকার করেছি এবং ভুলগুলো থেকে শিখেছি। তারপর আবার ভুল করেছি…ভবিষ্যতেও আমি ‘আরো ভুল করার জন্য প্রস্তুত… অবশ্য অনেকেই ভবিষ্যতে আর কোনো ভুল যাতে না হয় সেজন্য কঠোর পরিশ্রম করে চলেছে। … তাই বোধ হয় আমাদের ভবিষ্যৎও ভিন্ন। আপনি যদি নতুন কিছু করতে না চান, ভুল করার ঝুঁকি না নিতে চান, সেই ভুল থেকে কিছু শিখতে না চান, ভবিষ্যতে আপনার উন্নতি অসম্ভব।

সবচেয়ে সেরা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানিগুলো তাদের লোকদের নতুন কিছু শিখতে, কাজ করতে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে, যাতে আপনি ভুল করে সেই ভুল সংশোধন করেন এবং নতুন পদ্ধতি শেখেন। একেই বলে বাস্তবিক শিক্ষা।

যদি আপনি ভুল করতে ভয় পান তবে জানেন যে আপনার জীবনে পরিবর্তন প্রয়োজন, তাহলে একটি ভাল নেটওয়ার্ক মার্কেটিং প্রোগ্রাম আপনার জন্য সবচেয়ে সেরা ব্যক্তিগত বিকাশের প্রোগ্রাম হতে পারে। একটি সেরা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানি আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আর যদি কারুর সাহায্য নেয়া আপনার পছন্দ না হয়, তাহলে তারা আপনার হাত ধরবে না।

৩. আধ্যাত্মিক

প্রথমত, প্রায়শই বিতর্কিত ও আবেগজড়িত এই বিষয়টি সম্বন্ধে আলোচনা করার আগে আমার ব্যক্তিগত মতামত জানানো প্রয়োজন বিশেষ কারণে ধার্মিক শব্দের পরিবর্তে আমি আধ্যাত্মিক শব্দটি ব্যবহার করছি। ভাল নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানি ও মন্দ নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানির মতই, আমার মতে, ভাল ধর্মসংস্থা ও মন্দ ধর্মসংস্থা আছে। আরো বিশেষভাবে বলতে গেলে, আমি লক্ষ্য করেছি, কিছু কর্মসংস্থা মানুষকে আধ্যাত্মিকভাবে আরো বলীয়ান করে তুলেছে, আবার এমন কর্মসংস্থাও দেখেছি যা মানুষকে আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল করেছে।

তাই যখন আমি আধ্যত্মিক শিক্ষার কথা আলোচনা করছি সেখানে ধর্ম- শিক্ষা থাকতে পারে, অথবা নাও থাকতে পারে। যখন আমি আধ্যাত্মিক শিক্ষার কথা বলছি, আমি কিন্তু সাম্প্রদায়িক আখ্যার ভিত্তিতে আলোচনা করছি না। ধর্মের ব্যাপারে আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের সমর্থক, যেখানে নিজের ধর্ম বেছে নেয়ার স্বাধীনতা প্রদান করা হয়েছে।

এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার ব্যাপারে আমি অত্যন্ত সাবধানে কথা বলি, কারণ ছোটবেলা থেকেই আমাদের শেখানো হতো, ‘ধর্ম, রাজনীতি, লিঙ্গ ও আর্থ নিয়ে কখনও আলোচনা করবে না।’ এবং এ ব্যাপারে আমি একমত, কারণ এই বিষয়গুলো অত্যন্ত উদ্দীপক ও আবেগজড়িত। আপনার ব্যক্তিগত অনুভূতি বা বিশ্বাসে কোনোরকম আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি আপনার অনুভূতি ও বিশ্বাসের অধিকারগুলোকে সম্পূর্ণ সমর্থন করি।

সীমা অতিক্রম করে

যখন আমি কারুর জীবনী শক্তির কথা উল্লেখ করি, সেই শক্তির কথা বলি যা আমাদের পরিস্থিতি…আমাদের মানসিক, অনুভূতিগত ও শারীরিক সীমা অতিক্রম করে যায়।

ভিয়েতনামে থাকাকালীন এমন অনেক তরুণকে দেখেছি যারা আহত ছিল, যারা মৃত্যুমুখে ছিল এবং তা জানা সত্ত্বেও অপরকে বাঁচানোর জন্য অবিরাম যুদ্ধ করে গিয়েছে। আমার প্রাথমিক স্কুলের এক সহপাঠী যে ভিয়েতনামে থাকাকালীন অধিকাংশ সময় শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্রে কাটিয়েছে, একটি যথার্থ উক্তি করেছিল, ‘আজ আমি বেঁচে আছি কারণ মৃত মানুষগুলো ক্রমাগত যুদ্ধ করে গেছেন। সে বলেছিল, যুদ্ধক্ষেত্রে দু-বার এমন হয় যে, একমাত্র আমি বেঁচে ফিরে আসি। যখন মনে হয় যে তোমাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তোমার বন্ধুরা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে তখন সম্পূর্ণ জীবনের অর্থটাই যেন বদলে যায়। যুদ্ধের আগের রাত্রে অনেক সময় আমি প্লেনের কোরিয়ারে একা চুপচাপ বসে থাকতাম, নিচে ঢেউগুলো দেখা যেত। এই দীর্ঘ নিশ্চুপ মুহূর্তগুলোতে আমি আমার অন্তরের সঙ্গে একান্ত বোধ করতাম। জানতাম সকালে উঠে আবার মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। এই একান্তবোধ করতাম। এই একান্ত নিরিবিলি বিকেলগুলোতেই একসময় উপলব্ধি করলাম-পর দিন মৃত্যু তো সবচেয়ে সহজ পথ। অনুভব কললাম, বেঁচে থাকা মৃত্যুর চেয়ে শতগুণ কঠিন। একবার যখন নির্ভয়ে দুটি সম্ভাবনা জীবন অথবা মৃত্যু-র সম্মুখীন হলাম তখন সহজেই নির্ণয় করতে শিখলাম পরের দিন আমি কীভাবে বাঁচতে চাই। অর্থাৎ আমি কি ভয়ে ভয়ে প্লেন চালাবো, নাকি নির্ভয়ে এগিয়ে যাবো? একবার মনকে দৃঢ়নিশ্চিত করে আমি নিজের জীবনীশক্তিকে আহবান জানালাম, আগামী দিনের সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম, পরিণাম যাই হোক আমার সম্পূর্ণ ক্ষমতা উজাড় করে প্লেন চালানো, যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হলাম।

যুদ্ধ এক বিভীষিকা। এখানে মানুষ মানুষের প্রতি ভয়াবহ অত্যাচার করে। অথচ, এই যুদ্ধেই আমি মানবিকতার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ পেয়েছি। এই যুদ্ধে আমি মানুষের অপরিসীম শক্তির সন্ধান পেয়েছি যা তার সীমাকে অতিক্রম করে যায়। আর এই শক্তি আমাদের সকলের মধ্যে নিহিত আছে। আমি জানি আপনার মধ্যে তা আছে। সুখবরটি হল, এই শক্তির সন্ধান পেতে আপনাকে যুদ্ধে যেতে হবে না। একবার প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে গিয়ে আমি ওই জীবনীশক্তি প্রত্যক্ষ করি এবং তা আমায় স্পর্শ করে। যখন দেখি এদের মধ্যে কারুর পা নেই, নকল পা নিয়ে প্রাণপণ দৌড়ে চলেছে ১০০ গজ দূরত্ব সম্পূর্ণ করার জন্য। তাদের জীবনীশক্তি আমাকে অবিভূত করে। দেখেছিলাম একটি ছোট মেয়ে এক পায়ে প্রাণপণ দৌড়াচ্ছে, দেখে চোখে জল এসে গিয়েছিল। আমি দেখেছি নকল পায়ের সাহায্যে দৌড়ানোর দুঃসহ বেদনা তার মুখে ফুটে উঠেছিল, তা সত্ত্বেও ওর জীবনীশক্তির কাছে শারীরিক বেদনাকে হার মানতে হয়। যদিও সেদিন সে দৌড়ে জেতেনি, তবে আমার মন জয় করে নিয়েছিল। আমার জীবনীশক্তিকে স্পর্শ করেছিল। যা ভুলে গিয়েছিলাম তা আবার মনে করিয়ে দিল। সেই মুহূর্তে আমার যেন মনে হল এই তরুণরা যতটা নিজেদের জন্য দৌড়াচ্ছিল ততখানি যেন আমাদের জন্যও দৌড়াচ্ছিল। আমাদের ভেতরে যে বিপুল শক্তির সম্ভাবনা সঞ্চিত রয়েছে তা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য ওরা দৌড়াচ্ছিল।

সিনেমায় আমরা বহু মহামানবদের দেখতে পাই। ‘ব্রেভ হার্ট’ সিনেমায় মেল গিবসন ঘোড়ার পিঠে চরে তার ছন্নছাড়া স্কটিশ কৃষকদের নেতৃত্ব করে এগিয়ে চলেছে, সামনে হুঙ্কার দিল, ‘এরা আমাদের শরীরকে শেষ করতে পারে, আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে পারবে না।’ সেই মুহূর্তে সে নিজের প্রাণশক্তি থেকে তাদের প্রাণশক্তিকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলছিল তাদের প্রাণশক্তিকে স্পর্শ করেছিল, প্রশিক্ষণের অভাব ও অপেক্ষাকৃত নিকৃষ্ট অস্ত্রশস্ত্রবশত তাদের যে ভয় ও দ্বিধা ছিল তার উপর জয়লাভ করতে পেরেছিল। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাদলকে পরাজিত করার জন্য সে তাদের প্রাণশক্তিকে জাগিয়ে তুলেছিল।

আমি লক্ষ্য করেছি নেটওয়ার্ক মার্কেটিং-এ সফল দলনেতাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, যাতে তারা মানুষের প্রাণশক্তির সঙ্গে সংযোগস্থাপনে ক্ষমতা অর্জন করে। এদের এই ক্ষমতা অনুসরণকারীদের ভেতরকার শক্তিকে স্পর্শ করে তাদের সীমা অতিক্রম করে অগ্রসর হওয়ার অনুপ্রেরণা জোগায়। জীবন পরিবর্তনকারী শিক্ষার এমনই শক্তি।

লার্নিং পিরামিড-এর নক্সা দেখে বুঝতে পারবেন আবেগপ্রবণ হওয়া বা মানসিকভাবে প্রভাবিত হওয়ার পরিবর্তে মানুষ প্রাণশক্তিকে প্রণোদিত হলে কি হয়।

মনে মনে যোগাযোগ

সাধারণত মনে মনে কিছু শিখলে বিশেষ কিছু অর্জন করা যায় না। আমরা অনেকেই ভাল, ‘আগামী সপ্তাহ থেকে আমার ওজন কম করা শুরু করব।’

অথচ তারপর আমাদের ওজন বৃদ্ধি বজায় থাকে। অথবা বলি ‘আগামী মাসে আমার বিক্রি বৃদ্ধি করব, বা আরো লোক নিযুক্ত করব,’ কিংবা ‘পরের বেতনটা পেলে আমি টাকা জমানো শুরু করব।’ কিছুই বদলায় না- কারণ এটা শুধু মনে মনে করা কাজ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সত্যিকার পরিবর্তনের জন্য চুতঙ্কের চারটি বিষয়ের প্রয়োজন হয়।

যোগাযোগ

অনুভূতি দ্বারা যোগাযোগ

অনুভূতি দ্বারা যোগাযোগ

দ্রষ্টব্য : আবেগচালিত সংযোগস্থাপনকে অনুভূতিতাড়িত যোগাযোগও বলা হয়। অর্থাৎ শব্দের চেয়ে বেশি অনুভূতি দিয়ে যোগাযোগ করা। উদাহরণস্বরূপ, আমরা অনেকেই ঘরে ঢুকে হয়ত বুঝতে পেরেছি কেউ আমাদের ওপর রেগে রয়েছে অথচ সে হয়ত একটা কথাও বলেনি। আবেগচালিত যোগযোগ স্থাপন অনেকটা দু’টি টিউনিং ফর্কের স্পন্দনের মত। যদি দুটি সমস্পন্দনের হয়, আপনি একটি টিউনিং ফর্কে আঘাত করুন, সেটা কাঁপতে শুরু করার কয়েক মুহূর্তের মধ্যে অন্য ফর্কটিও কাঁপতে শুরু করবে। অর্থাৎ, যখন আমরা মনে মনে ভীত সন্ত্রস্ত থাকি, প্রায়শই অন্যান্য ভীরু মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হই অথবা এমন মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হই যে অপরকে ভয় দেখায় আমারা ছোটবেলায় প্রায়ই এ ধরনের কথা বলতাম, ‘ঐ ছেলেটার সঙ্গে আমার মোটেই মনের মিল নেই।’ আবেগতাড়িত বা অনুভূতিচালিত যোগাযোগের এটি একটি উদাহরণ।

উৎকৃষ্ট শিক্ষা পরিকল্পনাবিশিষ্ট নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানির কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেয়ার একটি বড় লাভ হল এরা আপনার অনুভূতিগত সীমাগুলো অতিক্রম করে, আপনার প্রাণশক্তি প্রয়োগ করতে শেখায়।

শারীরিক উপায়ে যোগাযোগ

আমরা সকলেই এমন মানুষের সংস্পর্শে এসেছি যাদের প্রতি শারীরিক আকর্ষণ অনুভব করি। আবার এমন লোকও দেখেছি যাদের শুধুমাত্র চেহারার জন্য আমরা তাদের প্রতি বীতস্পৃহ বোধ করি। কারণ, প্রথম দর্শনে মানুষটি কেমন দেখতে, অর্থাৎ শারীরিক যোগাযোগ বা দৃষ্টি বিনিময় সংযোগস্থাপনের সবচেয়ে শক্তিশালী পদ্ধতি।

অধ্যয়নে জানা গিয়েছে দু’জন মানুষের যোগাযোগে আনুমানিকঃ

১০% শব্দ

৩৫% অনুভূতি

৫০% দর্শন বা শারীরিক

৫০% অন্যান্য বিষয় রয়েছে

অর্থাৎ, আপনি কেমন দেখতে অথবা বিরক্তি প্রকাশ করছেন কি না, জবুথবু হয়ে আছেন বা অনুপযুক্ত পোশাক পরিহিত কি না, আপনার যোগযোগ স্থাপনের বা কথোপকথনের ক্ষমতায় এসবের প্রভাব পড়ে। এগুলো অবশ্য আনুমানিক সংখ্যা তবে সংযোগস্থাপনে উন্নতির জন্য এগুলো যথার্থ নির্দেশিকা।

বড় বড় নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানি মানুষের বাহ্য রূপের উন্নতি করায় প্রচুর সময় ব্যয় করে। একটি কোম্পানিতে তো ওজন হ্রাস ও ব্যায়ামের অনুষ্ঠানসূচি বেছে নেয়ার সুযোগও দেয়া হয়েছিল। দলনেতারা জানেন যে, অসুস্থ মানুষের তুলনায় সুস্থ সবল আকর্ষণীয় ব্যক্তি বেশি কার্যকরভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে।

শারীরিকভাবে যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়ে আরও দু’টি কথা বলব। প্রথমতঃ আমরা এমন অনেকের সংস্পর্শে এসেছি যারা বহির্দৃষ্টিতে আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্ব হলেও মনের দিক দিয়ে দুর্বল আবার আমরা এমন মানুষও দেখেছি যারা প্রথম দৃষ্টিতে হয়ত আমাদের অপছন্দ ছিল, তবে পরে জানতে ও বুঝতে পারি যে অন্তরে এরা এক একটি রত্ন। অর্থাৎ প্রথম প্রভাব ফেলার একটি মাত্র সুযোগ পাওয়া যায়, তাই শারীরিক যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দ্বিতীয় কথাটি হল, ব্যবসা উন্নতির জন্য প্রায়ই লোক আমার কাছে সাহায্য চায় আমি যদি তাদের সাহায্য করতে রাজি হই, প্রথম যে প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করি তা হল ‘আপনি কি নমনীয়, পরিবর্তন আনতে আগ্রহী?’ যদি তারা সম্মতিসূচক ‘হ্যাঁ’ বলে তবেই আমি অগ্রসর হই, নতুবা নয়।

অধিকাংশ মানুষ উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলে, বলে আমরা পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত।’ তারপর আমি নিজের সম্মতি জানাই, আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি, তাদের সম্মতির দৃঢ়তা যাচাই করি। কয়েক মাস আগে এক পরিচিত ভদ্রলোক তার ব্যবসায় লভ্যাংশ বৃদ্ধির জন্য আমার কাছে সাহায্য চায়। তাকেও আমি পরিবর্তনের ইচ্ছা সম্বন্ধে প্রশ্ন করি, সে সম্মতি জানায়।

তক্ষুণি পেছপা হয়ে ঐ ভদ্রলোক বলেন, ‘গোঁফ কামাতে আমি রাজি নই। সেই হাই স্কুল থেকে এটা আমার সঙ্গী।’ আলোচনা শেষ হল, আমিও ওর ব্যবসা উন্নতির জন্য কাজ করিনি। বিষয়টা গোঁফ নয়, বিষয়টা হল ওর পরিবর্তনের ইচ্ছা। ও গোঁফ রাখুক বা না রাখুক তাতে কিছু যায় আসে না। আমি শুধু ওর পরিবর্তনের অভিপ্রায় যাচাই করে দেখছিলাম। তা ওর টাই বা জুতো বা শারীরিক যে কোন জিনিস দিয়ে করতে পারতাম। অনেকেই হয়ত মানসিকভাবে পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত, যেমন ছিলেন আমার এই বন্ধু। তবে যে মুহূর্তে তাকে পরীক্ষা করার জন্য আমি শারীরিক পরিবর্তন আনতে বললাম, সে পিছিয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত সব শিক্ষাই শারীরিক শিক্ষা হয় যদি কোন ব্যক্তি শারীরিক শিক্ষার জন্য প্রস্তুত না হয়, তাহলে তার দীর্ঘস্থায়ী শিক্ষালাভের সম্ভাবনা কমে যায়।

আমার ধনবান বাবা বলতেন, ‘বেড়ার ওপর তিনটে বেড়াল বসে আছে, তার মধ্যে দুটো ভাবল লাফ দিই, কটা বাকি থাকে?’

উত্তর, ‘বেড়ার ওপর তিনটে বেড়ালই থাকবে।’ কারণ, লাফানোর কথা চিন্তা করে মানেই লাফ দেয়া নয়। তাই, আমার ধনবান বাবা বলতেন, ‘আগামীকাল বছরের ব্যস্ততম দিন হবে।’ অনেকেই জীবনে উন্নতির সিদ্ধান্ত অতি সহজেই নিয়ে নেয়, তারপর সব কাজই আগামী দিনগুলোর জন্য স্থগিত রাখে।’ আমার ধনবান বাবা আরও বলতেন, ‘বেশির ভাগ মানুষের কাছে শেষ পর্যন্ত ঐ আগামী দিনগুলো থাকে না।’ তাই পাঠ্যটি হল অধিকাংশ মানুষ জীবনে পরিবর্তন চায় তবে সেই পরিবর্তন তখনই সম্ভব হবে যখন আপনি ক্রিয়াশীল হবেন … তাই শিক্ষার শারীরিক পদ্ধতিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

রবার্টের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষালাভ

কালেজের পর ফ্লাইট স্কুলে প্রবেশ আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্তের একটি। প্লেন চালানো শেখা বা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি ছিল বাস্তব জীবনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। তখন আর আমি শিশু বা স্কুল-পড়ুয়া ছাত্র নই, সে সময় যে প্রশিক্ষণ পেলাম তা আমার জন্য জরুরি ছিল সেটা ছিল জীবন পরিবর্তনকারী শিক্ষা যা মানসিক, অনুভূতিগত, শারীরিক ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে আমাকে বদলে দিয়েছিল। যুদ্ধ থেকে ফিরে আমি সে সব আর্থিক ও ব্যবসা-সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম যা বেশির ভাগ মানুষ মোকাবিলা করতে ভয় পায়।

যদি জীবনে পরিবর্তন আনার জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকেন তাহলে কয়েকটি নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানির শিক্ষাসূচি দেখে নিন। সময় নিয়ে বিবেচনা করে দেখুন, যে ব্যবসা, পারিশ্রমিক, পণ্য ও শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন তা আপনার জীবনের এই স্তরে প্রয়োজনীয় কি না। যদি মনে হয় যে কোম্পানিটি প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন পূরণ করছে, তাহলে ঐ কোম্পানির সঙ্গে খন্ডকালীন ব্যবসা করার কথা বিবেচনা করে দেখুন।

বইয়ের বাকি অংশে আমি নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানিগুলোতে নিহিত অন্যান্য উপযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করব।

অর্থ আছে… তবে অবসর সময় নেই

ই এবং এস কোয়াড্রান্টভুক্ত আমার বেশ কয়েকটি বন্ধুর কাছে অর্থবল রয়েছে, তবে অবসর সময় নেই। অনেকেই প্রচুর অর্থোপার্জন করেন, অথচ কাজ বন্ধ রাখতে পারেন না। আমার মতে, এটা অর্থ থাকা সত্ত্বেও স্বাধীনতার অভাব। তাই পরিবেশে পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাদের কাছে প্রচুর অর্থ ও অবসর সময় আছে বা যারা এই দুটো জিনিস পেতে চায়, আপনিও তাদের মত চিন্তা- ভাবনা করতে পারেন। এদের ও আপনার মানসিকতায় বিশাল তফাৎ রয়েছে এবং এই মানসিকতার হদিশ পাওয়ার জন্য আপনাকে পরিবেশ বদলাতে হবে … আশা করি শীঘ্রই তা করবেন।

বেশ কয়েক বছর যাবত আমি ও আমার স্ত্রী ব্যবসা গড়ে তোলার ও বিনিয়োগের জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছি। প্রথমদিকে মনে হতো, সামান্য অর্থের জন্য আমারা প্রচুর পরিশ্রম করছি ও আমাদের হাতে অবসর সময়ও তেমন ছিল না। এখন, আমাদের কাছে অর্থ ও সময় দুই-ই আছে কারণ আমরা আগেই এর জন্য বিনিয়োগ করেছি। এখন আমরা কাজ করি, কারণ আমরা ব্যস্ত থাকতে চাই

আমরা কাজ করতে বাধ্য নই … সেখানেই আসল পার্থক্য।

পাঁচ বছর কেন

তাই যদি নিজেকে ছ’মাসের বেশি সময় না দিতে পারেন তাহলে ছ’মাসের লক্ষ্যই রাখুন। নিচে দেয়া কয়েকটি কারণবশত আমি পাঁচ বছরের অঙ্গীকারের পরামর্শ দিই :

কারণ # ১ : আগেই বলেছি, শিক্ষা এক শারীরিক প্রক্রিয়া এবং মানসিক শিক্ষালাভের তুলনায় শারীরিক শিক্ষায় বেশি সময় প্রয়োজন। উদাহরণ, আপনি সাইকেল চালানো শেখার সিদ্ধান্ত নিলেন, মানসিকভাবে এই সিদ্ধান্ত নিতে যতখানি সময় লাগবে-তার চেয়ে বেশি সময় বাস্তবিক ক্ষেত্রে শিখতে লাগবে। তবে সুসংবাদ এই যে, একবার নিজের হাতে কোনো জিনিস শিখলে সাধারণত সারাজীবন তা মনে থাকে।

কারণ # ২ : আবার, শেখা জিনিস ভুলে যাওয়াও এক শারীরিক প্রক্রিয়া। একটি কথা আছে যে, বুড়ো কুকুরকে নতুন খেলা শেখানো যায়না। সৌভাগ্যবশত, আমরা মানুষ, কুকুর নই। তবে একথাও আংশিকভাবে সত্যি যে, আমাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শেখা জিনিসগুলো ভোলার চেষ্টা করাও কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকেই ই এবং এস কোয়াড্রান্টে স্বাচ্ছন্দ ও নিরাপদ অনুভব করে … বহু বছর যাবত তারা এখানে পৌঁছানোর পন্থা শিখেছে, এখন তারা এখানেই ফিরে আসে, যদিও এই স্বাচ্ছন্দ্য হয়ত অবশেষে তেমন লাভজনক হয় না।

সময় নিয়ে, শেখা জিনিস ভুলে নতুন করে শিখুন। অনেকের জন্যই কোয়াড্রান্টের বাঁ দিক থেকে ডানদিকে আসার পথে সবচয়ে কঠিন কাজটি হল ই এবং এস কোয়াড্রান্টে শেখা চিন্তাধারা ভুলে নতুন দৃষ্টি-ভঙ্গি অবলম্বন করা। আমার মনে হয়, একবার যদি শেখা জিনিস ভুলে, নতুন করে শুরু করতে পারেন, তাহলে খুব দ্রুত ও সহজ পরিবর্তন আনা সম্ভব।

কারণ # ৩ : প্রজাপতিতে পরিণত হওয়ার আগে সব শুঁয়োপোকা রেশমগুটি গড়ে তোলে। আমার ফ্লাইট স্কুলটি ছিল আমার রেশ গুটি। ফ্লাইট স্কুলে প্রবেশের সময় আমি সাধারণস্নাতক ছিলাম, যখন ফ্লাইট স্কুল থেকে বেরোলাম তখন আমি এক পাইলট, ভিয়েতনাম যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। যদি কোনো অসামরিক ফ্লাইট স্কুলে ভর্তি হতাম তাহলে হয়ত পাইলট হতে পারতাম তবে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে পারতাম কি না সন্দেহ। অসামরিক পাইলটদের যা শিখতে হয় তার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল আমাদের, মিলিটারি পাইলটদের শিক্ষা-দীক্ষা। কর্মক্ষমতা সম্পূর্ণ ভিন্ন, প্রশিক্ষণের তীব্রতা ভিন্ন। প্রশিক্ষণের শেষে যুদ্ধে যাওয়ার বাস্তব সত্য সবকিছুই বদলে দেয়।

ফ্লোরিডার প্রাথমিক ফ্লাইট স্কুল থেকে পাস করতে আমার প্রায় দু’বছর সময় লাগে। পাইলট হওয়ার পর আমাকে ‘উইংগস’ দেয়া হয় এবং উন্নততর ফ্লাইট প্রশিক্ষণের জন্য আমাকে ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাম্প পেগুলটনে পাঠানো হয়। এখানে প্লেন চালানোর চেয়ে বেশি যুদ্ধ কৌশল শেখানো হয়। বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আপনাদের বিরক্ত করব না, তবে ক্যাম্প পেগুলটনে প্রশিক্ষণের তীব্রতা বহুগুণ বেড়ে যায়।

আমরা ফ্লাইট স্কুলের শিক্ষা সম্পূর্ণ করে পাইলট হয়েছি, ভিয়েতনামে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে আমাদের এক বছর সময় দেয়া হল। এই প্রস্তুতিপর্বে আমরা বিরামহীন প্লেন চালিয়েছি, এমন পরিস্থিতিতে প্লেন চালিয়েছি যা আমাদের মানসিক, অনুভূতিগত, শরীরিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষমতার ক্রমাগত পরীক্ষা নিয়েছিল।

ক্যাম্প পেগুলটনে আট মাস প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের পর নিজের মধ্যে পরিবর্তন অনুভব করি। এমনই এক ট্রেনিং ফ্লাইটে আমি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত পাইলট হয়ে উঠি। সেদিন পর্যন্ত আমি মনে মনে, অনুভূতিতে, শারীরিকভাবে প্লেন চালিয়েছি। অনেকে একে ‘যান্ত্রিকভাবে প্লেন চালানো’ বলবে। ঐ একটি প্রশিক্ষণ পূর্বে আমার মধ্যে আধ্যাত্মিক পরিবর্তন ঘটেছিল। উদ্দেশ্যটি এত প্রগাঢ় ও ভয়াবহ ছিল যে, হঠাৎ আমার সব ভয়-ভীতি-সন্দেহ উধাও হয়ে যায় এবং প্রচণ্ড মনোবল খুঁজে পাই। প্লেন চালানো আমার জীবনের অংশ হয়ে ওঠে। এয়ারক্র্যাফটের ভেতরে বসে শান্তি স্বস্তি খুঁজে পাই। এয়ারক্র্যাফট আমার আরেকটা অঙ্গ হয়ে ওঠে। এয়ারক্র্যাফটের জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠি।

আমার মনে একেবারেই ভয় ছিল না তা নয় ভয় ছিল। যুদ্ধে যাওয়ার ভীতি তখনও ছিল। মৃত্যুভয় এবং তার চেয়েও ভয়াবহ, অঙ্গহানির ভয় ছিল তখনও। একমাত্র তফাৎ ছিল- আমি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। ভীতিকে অতিক্রম করে গিয়েছিল আমার নিজের ওপর আস্থা। জীবনে আমূল পরিবর্তনকারী এই শিক্ষাই আমি বহু নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসা পেয়েছি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত পাইলট হতে গিয়ে যেমনটি হয়েছিল ঠিক তেমন অনুভূতির পুনরাবৃত্তি হয় আমার ব্যবসায়ী ও ইনভেস্টার হয়ে ওঠার সময়। ব্যবসা দু-দুবার অসফল হওয়ার পর আমি খুঁজে পাই নিজের সাহস, নিজের উদ্দীপনা… ‘উদ্যমীর উদ্দীপনা’। যতই কঠিন পরিস্থিতি হোক এই উদ্দীপনাই আমায় বি এবং আই কোয়াড্রান্টে প্রতিষ্ঠিত রেখেছে। ই এবং এস পক্ষের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য উপেক্ষা করে আমি বি এবং আই পক্ষে দাঁড়িয়ে থাকতে সক্ষম। একথা অবশ্য অনস্বীকার্য যে, বি কোয়াড্রান্টে স্বচ্ছন্দবোধ করার জন্য আত্মপ্রত্যয় পড়ে তুলতে আমার লেগেছে দীর্ঘ পনেরো বছরের অধ্যবসায়।

আমি আজও পাঁচ বছরের পরিকল্পনা অনুসরণ করে চলেছি

যখন আমি নতুন কিছু শেখার সিদ্ধান্ত নেই যেমন বিয়াল এস্টেট ইনভেস্ট করার বিষয়ে শেখা, নিজেকে পাঁচ বছর সময় দেই। যখন স্টকে ইনভেস্ট করার প্রণালী শেখার জন্য প্রস্তুত হই, তখনও পম্পূর্ণ প্রণালীটি শেখার জন্য নিজেকে পাঁচ বছর সময় দিয়েছিলাম। অনেকেই একবার অর্থ বিনিয়োগ করে সামান্য টাকাকড়ি হেরে গেলেই সরে পড়ে। প্রথম ভুলেই তাঁরা যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালায়, তাই তাদের কিছুই শেখা হয় না। আমার ধনবান বাবা বলতেন, ‘সত্যিকার বিজেতা জানে যে হেরে যাওয়া জেতার অংশবিশেষ। যারা জীবনে হেরে যায় শুধু তারাই মনে করে যে বিজয়ীরা কখনও হারে না। পরাজিত মানুষ সবসময় জেতার স্বপ্ন দেখে এবং ভুল এড়িয়ে যাওয়ার যথা সম্ভব চেষ্টা করে।

তবু আমি নিজেকে পাঁচ বছর যথাসম্ভব ভুল করার সময় নিই। আমি জানি যতগুলো ভুল করব, যত শিখব… পাঁচ বছরের ততই বুদ্ধিমান, তৎপর হয়ে উঠব। যদি পাঁচ বছর যাবৎ কোনো ভুল না করি তাহলে পাঁচ বছর আগেকার মতই অদক্ষ রয়ে যাব। অথচ পাঁচটা বছর বয়স বেড়ে যাবে।

শিক্ষা-গ্রাফ

লোক যখন জ্ঞানার্জনের গ্রাফের কথা বলে, অনেকের মনে হয় গ্রাফটি বুঝি বা এরকম দেখতে :

শিক্ষা-গ্রাফ

যে কোণাকুণি বক্ররেখা এক্স এবং ওয়াই মেরু ভেদ করে যায়, তাকে শিক্ষা- গ্রাফ বলা হয়।

প্রকৃতির শিক্ষা-গ্রাফ

তবে যদি প্রকৃতির শিক্ষা-গ্রাফ দেখেন, তা কিন্তু মানুষের তৈরি শিক্ষা-গ্রাফ থেকে আলাদা। লক্ষ্য করুন, ছোট্ট পক্ষীশাবক প্রথমবার বাসা ছেড়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময় কেমন দেখায় এটি একটি প্রাকৃতিক শিক্ষা-গ্রাফ।

নিচে দেওয়া ছবিটি দেখে বুঝবেন কীভাবে ছোট পাখিটি বাসা ছেড়ে উড়তে শিখছে।

প্রকৃতির শিক্ষা-গ্রাফ

এটাই প্রকৃতির বাস্তবিক শিক্ষা-গ্রাফ। অনেকেই মনে করে শিক্ষগ্রাফ উত্তরোত্তর উর্ধ্বগামী … এবং তা সত্যি। শিক্ষা-গ্রাফের এই জনপ্রিয় ধারণাটি মানুষের আবিস্কার, তার নিজের জন্য প্রযোজ্য।

অথচ যদি প্রকৃতির শিক্ষা-গ্রাফ দেখেন বা আমার ভাষায় অনুভূতির শিক্ষা- গ্রাফ দেখেন… দেখতে পাবেন যে, প্রথম এই গ্রাফ নিম্নমুখী হয়, পরে তা উপরের দিকে অগ্রসর হয়। এই ওড়ার অদ্ভুত আনন্দ উপভোগ করার আগে যে মানসিক নিরাশার মুখোমুখি হতে হয় অনেকেই তা এড়িয়ে যেতে চায়।

বেশির ভাগ লোকের জীবনে সফল না হওয়ার কারণ হল এর ব্যক্তিগত দ্বিধা ও অনিশ্চয়তা এবং মানসিক ব্যর্থতার সম্মুখীন হতে চান না। আমাদের অনেকেরই এমন হয়, কারণ আমাদের স্কুলগুলোতে শেখানো হয় যে, ভুল করা অন্যায়, ভুল করতে নেই। তাই স্কুল ছাড়ার পর, আমরা আমাদের বাসাতেই বসে থাকি, ই এবং এস-এর বাসায় বসে থাকার ফলে উড়তে শেখা হয় না।

কিছু নেটওয়ার্ক মার্কেটিং প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার কয়েকটি বিশেষ গুণ এরা :

অনুগত কর্মচারী তৈরী করার বদলে আপনাকে বাসা ছেড়ে উড়তে শেখায়।

ভীতি, দ্বিধা ও নৈরাশ্যের মুহূর্তেগুলোতে আপনাকে সাহায্য করার জন্য এদের কাছে অনুষ্ঠানসূচি তৈরি থাকে।

এদের নিজস্ব পরামর্শদাতা আছে, যারা নিজেরা এই পথে চলেছে এবং আপনাকে এই পথ অনুসরণ করার জন্য অনুপ্রাণিত করেন।

যদি আপনি নিজের গতিতে অগ্রসর হন তাহলেও স্কুলের মত এরা আপনাকে শাস্তি দেবে না, ব্যবসা বা কর্মক্ষেত্রের মত বাতিল বা বরখাস্ত করবে না। তারা চায় আপনিও যেন অপরদিকের কোয়াড্রান্টে পৌঁছাতে পারেন।

চাকরি বদলের চেয়ে এটা অনেক ভাল

সারাজীবন কাজের নিরাপত্তা আকড়ে ধরে থাকা বা ক্রমাগত চাকরি বদল করে বা যতক্ষণ না অর্থ হওয়া ততক্ষণ একই চাকরিতে টিকে থাকার চেয়ে একটু সাহস করে, একটু ঝুকি নিয়ে কোয়াড্রান্ট বদলানোর ব্যাপারে লোকদের পথনির্দেশ দেয়া এক মহামূল্য দায়িত্ব এবং বহু নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এই দায়িত্ব পালন করে চলেছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *