রানি ভিক্টোরিয়ার টাকা – অনিল ভৌমিক

রানি ভিক্টোরিয়ার টাকা – অনিল ভৌমিক

নৈহাটি স্টেশনে ট্রেন যখন পৌঁছল, তখন প্রায় চারটে বাজে। মা’র সঙ্গে মৈনাক স্টেশনে নামল। ওভারব্রিজ পার হয়ে রাস্তায় এল। কত রিকশা দাঁড়িয়ে। দু’জনে একটা রিকশায় উঠল।

দু’জনে চলেছে মৈনাকের জেঠুর বাড়ি। দাদুর জন্মদিন পালন করেন জেঠু। ওরা নিমন্ত্রিত। প্রতি বছরই এই দিনে মৈনাকৱা আসে। এবার অফিসের কাজে আটকে পড়ে বাবা আসতে পারেননি।

জেঠুর বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল রিকশা। দু’জনে নামল। মৈনাক দেখল, জেঠু বারান্দায় বসে আছেন। দু’জনে জেঠুর কাছে এল। জেঠু ততক্ষণে প্রায় ছুটে এসে মৈনাককে দু’হাতে বুকে তুলে নিলেন। নিঃশব্দ হাসি তাঁর মুখে। জেঠুর ছেলেমেয়ে নেই। বোধহয় এইজন্যই মৈনাকের ওপর জেঠুর ভীষণ টান।

বিকেলেই জেঠুর লাইব্রেরি ঘর পরিষ্কার করা হয়ে গেল। একটা টেবিলের ওপর রাখা হল দাদুর ফোটো। জ্যাঠাইমা ফোটোতে চন্দনের ফোঁটা দিলেন। মালা পরালেন। মৈনাকের জেঠু সুনির্মলবাবু দাদুর ব্যবহৃত চশমা, চশমার খাপ, দোয়াত-কলম টেবিলে রাখলেন। মৈনাক যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি ভালবাসে সেটা সুনির্মলবাবুর কয়েনের থলেটা। সেই থলেতে আছে দাদুর জমানো কয়েনগুলো। মৈনাক এবার বলল, “জেই, দাদুর কয়েনগুলো তো আনা হয়নি। আমি আনব?”

সুনির্মল বললেন, “যা তো, নিয়ে আয়। সিন্দুকে চাবি লাগানো আছে।”

মৈনাক দৌড়ে নিয়ে এল রংছুট সিল্কের থলেতে দাদুর জমানো কয়েনগুলো। এনে টেবিলে রাখল।

একেবারে ঘরোয়া অনুষ্ঠান। সুনির্মলের সহকর্মী বন্ধুবান্ধবরা স্ত্রী ছেলেমেয়েকে নিয়ে এলেন। অনুষ্ঠানে গানবাজনা হল। মৈনাক রবীন্দ্রনাথের ‘নিঝরের স্বপ্নভঙ্গ কবিতাটি খুব সুন্দর আবৃত্তি করল। খাওয়াদাওয়া হল।

সবাই চলে গেল। শুধু সুনির্মলবাবুর সহকর্মী মিলনবাবু বাইরের বারান্দায় এসে বসলেন। সুনির্মলবাবুও এসে বসলেন। তখনই সুনির্মলবাবু মৈনাককে ডেকে বললেন, “মানু, বাবার জিনিসগুলো সব সিন্দুকে তুলে রাখ তো।”

মৈনাক ছুটল লাইব্রেরি ঘরের দিকে।টেবিলের কাছে গেল।

থলির বাঁধা ফিতেটা খুলে টেবিলে ঢালল কয়েনগুলো। কয়েনগুলো হাতে তুলে নিয়ে নিয়ে দেখতে লাগল। আকবরের আমলের লম্বাটে রুপোর চৌকোনা কয়েনটা দেখল। জেঠু বলেছেন, এটাতে আরবি ভাষায় কী যেন লেখা আছে। এবার খুঁজতে লাগল রানি ভিক্টোরিয়ার কয়েনটা। কিন্তু সেই কয়েনটা তো নেই। মৈনাক বারবার কয়েনগুলো ছড়িয়ে দেখল। যাঃ, ভিক্টোরিয়ার টাকাটা নেই। মৈনাকের কেমন ভয় ভয় করতে লাগল।

মৈনাক ছুটে বাইরের বারান্দায় এল। বলল, “জেঠু, ভিক্টোরিয়ার টাকাটা কাউকে দিয়েছ?”

“না তো। কেন, ওই থলেতে নেই?”

“না।” মৈনাক বলল, “আমি খুঁজে দেখেছি। নেই।’’

সুনির্মলবাবু উঠে দাঁড়ালেন। চললেন লাইব্রেরি ঘরের দিকে। মিলনবাবুও চললেন। লাইব্রেরি ঘরে এসে টেবিলের কাছে গেলেন। কয়েনগুলো ছড়িয়ে দেখলেন। নাঃ, ভিক্টোরিয়ার টাকাটা নেই। মিলনবাবু বললেন, “সিন্দুকে কোথাও রাখোনি। তো?”

“না। সারা দুপুর বাইরের বারান্দায় বসে আমি কয়েনগুলো পরিষ্কার করেছি। স্পষ্ট মনে আছে আমার। তারপর সব কয়েন থলেতে ভরে ফিতে বেঁধে সিন্দুকে রেখেছি।”

“টেবিল থেকে পড়েও যেতে পারে।” মিলনবাবু বললেন।

“ছড়িয়ে রেখেছিলাম। যদি টেবিল থেকে পড়ে যেত তা হলে শব্দ হত।” সুনির্মলবাবু বললেন।

“তবু মেঝেটা খুঁজতে হবে।” মিলনবাবু বললেন।

তিনজনে মেঝেয় খুঁজতে লাগল। না, মেঝের কোথাও নেই। এর মধ্যে সুনির্মলবাবু সিন্দুকটাও খুঁজে এলেন। না, নেই। মিলনবাবু বললেন, “সুনির্মলদা, ভিক্টোরিয়ার কয়েনটা কি খুব দামি ছিল?”

সুনির্মলবাবু নিঃশব্দে মাথা নাড়লেন।

“তা হলে তো পুলিশে খবর দিতে হয়। দাঁড়াও সুনির্মলদা, নৈহাটি থানার এক ইনসপেক্টর মি. মিত্র, তাঁকে ফোন করছি। আমার খুবই পরিচিত।”

আধঘণ্টার মধ্যে জিপে চড়ে মি. মিত্র এলেন। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বললেন, “কী ব্যাপার মিলনবাবু?”

মিলনবাবু সুনির্মলবাবুকে দেখিয়ে বললেন, “ইনি সুনির্মল চ্যাটার্জি। আমার কলিগ। ওঁর একটা দামি কয়েন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”

মি. মিত্রের সঙ্গে তার সহকর্মী একজন ছিলেন। তাঁরা চেয়ারে বসলেন।

মি. মিত্র বললেন, “কখন কী করে জানলেন যে, কয়েনটা হারিয়েছে বা চুরি হয়েছে?”

মিলনবাবু তখন লোকজনের আসা, অনুষ্ঠান হওয়া, খাওয়াদাওয়া সবই বললেন। মি. মিত্র উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, “চলুন, ফাংশানের জায়গাটা দেখি?”

সকলে লাইব্রেরি ঘরে এল। মি. মিত্র চারদিকে দেখে নিয়ে টেবিলটার কাছে এলেন। টেবিলে ছড়ানো কয়েনগুলো দেখলেন। বললেন, “সবসুদ্ধ ক’টা কয়েন ছিল?”

“আমি তো ঠিক…” মিলনবাবু বললেন। তারপর সকলের দিকে তাকিয়ে দেখলেন সুনির্মলবাবু আসেননি।

মৈনাক বলল, “একশো সাইতিরিশটা।”

মি. মিত্র মৈনাকের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আর য়ু শিওর?”

“শিওর, সঙ্গের কাগজটাতে কয়েনের লিস্টটা আছে। ওটা গুনলে—।”

মিলনবাবু বললেন, “এর নাম মৈনাক― ও-ই প্রথম কয়েনগুলো রাখতে গিয়ে দেখেছে ভিক্টোরিয়ার কয়েনটা নেই।”

মি. মিত্র মৈনাককে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কী করে বুঝলে যে, এই কয়েনটা নেই।”

“রানি ভিক্টোরিয়ার কয়েনটা এর আগে আমি অনেকবার দেখেছি।”

“হুঁ।” মি. মিত্র বললেন, “চলুন বারান্দায়। এখানে আর কিছু দেখার নেই।”

তিনজনে বারান্দায় এসে বসল। মি. মিত্র সুনির্মলবাবুকে জিজ্ঞেস করলেন, “মি. চ্যাটার্জি, কয়েনগুলো আপনি কোথায় রাখতেন?”

“সিন্দুকে।”

“শুধু অনুষ্ঠানের দিন বের করতেন?”

“হ্যাঁ।” সুনির্মলবাবু বললেন।

“আচ্ছা, ঠিক মনে করে বলুন তো, দুপুর থেকে কারা কারা আপনার কাছে এসেছিল?” মি. মিত্র জানতে চাইলেন।

“মহাবীর ইস্ত্রি ওলা এসেছিল। কাপড়চোপড় দিয়ে গেছে। নিয়ে গেছে।” সুনির্মলবাবু বললেন।

“আর কেউ?”

“হ্যাঁ, তারপর জয়ন্ত এল। খুব স্টুডিয়াস ছেলে। প্রেসিডেন্সিতে পড়ে। আজকে ওর কলেজ বন্ধ ছিল।” সুনির্মলবাবু বললেন।

“জয়ন্ত কেন আসে?” মি. মিত্র বললেন।

“আমার লাইব্রেরি থেকে বইটই নিয়ে যায়। পড়ে ফেরত দিয়ে যায়।” সুনির্মলবাবু বললেন।

“জয়ন্ত কি বই নিয়ে গিয়েছিল?” মি. মিত্র বললেন।

“হ্যাঁ। লাইব্রেরিতে গিয়ে বই দেখেটেখে দুটো বই নিয়ে গিয়েছিল।” সুনির্মলবাবু বললেন।

“জয়ন্তকে বিশ্বাস করা চলে?”

“অফ কোর্স। জয়ন্ত খুব ভাল ছেলে।” সুনির্মলবাবু গলায় জোর দিয়ে বললেন।

“জয়ন্ত চলে যাওয়ার পর ওই কয়েনটা আপনি দেখেছিলেন?”

“তখন আমি ওই ভিক্টোরিয়ার কয়েনটা পরিষ্কার করছিলাম।” সুনির্মলবাবু বললেন।

“আর কে কে এসেছিল?” মি. মিত্র বললেন।

“এবার একটু আগের কথা বলি। মি. নন্দী আমাদের কলিগ, কলকাতায় বদলি হয়েছিলেন। সেই মি. নন্দী সকালে আমাকে ফোন করেছিলেন। বলেছিলেন তাঁদের ফ্ল্যাটের পাশেই থাকে এক অবাঙালি পরিবার। তাদের আত্মীয় ব্রজলাল শুক্লা, কানপুরে থাকে। ব্ৰজালালেরও নাকি নেশা কয়েন কালেকশনের। আমার কালেকশনটা দেখার জন্য ব্রজলালকে আমার কাছে পাঠাচ্ছেন।” একটু থেমে সুনির্মলবাবু বললেন, “ব্রজলাল এল। মোটরসাইকেল চেপে। মুখে ছাঁটা দাড়ি গোফ। আমি তখন বাইরের বারান্দায় বসে কয়েনগুলো পরিষ্কার করছিলাম। ব্রজলাল খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কয়েনগুলো দেখল। রানি ভিক্টোরিয়ার কয়েনটা দেখে ও যেন চমকে উঠল। কয়েনটা উলটেপালটে মনোযোগ দিয়ে দেখে বলল, ‘দিস কয়েন, সেল করবেন? আমি খুব বিরক্ত হলাম। বাবার কয়েনগুলো বিক্রি, এক্সচেঞ্জের অফার এর আগেও পেয়েছি। আমি স্পষ্টই বললাম― না।”

“ভালই করেছেন,” মি. মিত্র বললেন, “কীই বা দাম দিত!”

সুনির্মলবাবু একটু চুপ করে থেকে বললেন, “হি ওয়াজ রেডি টু পে ল্যাক্‌স।”

মি. মিত্র বেশ চমকে উঠে বললেন, “বলেন কী! এনি ওয়ে, তারপর?”

“এবার ব্রজলালকে ভাল করে দেখলাম। ওর কয়েনগুলো দেখা, চোখের ধূর্ত চাউনি দেখে বুঝলাম, ব্রজলালের কয়েন জমানো নেশা নয়। ও কয়েন নিয়ে ব্যাবসা করে। যা হোক, বিরক্ত হয়ে ওকে প্রায় তাড়িয়ে দিলাম।”

“ব্রজলাল চলে যাওয়ার পর ওই রানির কয়েনটা দেখেছিলেন?”

“হ্যাঁ। তারপর বিকেল নাগাদ কলকাতা থেকে আমার ভ্রাতৃবধূ তাঁর ছেলেকে নিয়ে এলেন।”

“তা হলে আর কেউ আসেনি।”

সুনির্মলবাবু একটু ভেবে বলে উঠলেন, “ইয়েস, ইয়েস, দ্য পোস্টম্যান, টেলিগ্রাম। মানে, দুপুরে একজন পোেস্টম্যান একটা টেলিগ্রাম নিয়ে এসেছিল। আমার এক ভাগনি দিল্লিতে থাকে, ও এম এসসি তে ফার্স্ট ক্লাস ফাস্ট হয়েছে। খবরটা দিতে আমি বাড়ির ভেতরে বেশ তাড়াতাড়িই এলাম।”

“তখন টেবিলে আপনার কয়েনগুলো ছড়ানো ছিল, ধারেকাছে কেউ নেই। শুধু পোস্টম্যান। ভিক্টোরিয়ার টাকাটা তুলে নিয়ে চলে যাওয়া। ইজি, ইজি।’’

মি. মিত্র উঠে দাঁড়ালেন। সঙ্গী ভদ্রলোকও উঠলেন। মি. মিত্র বললেন, “কালকে সকাল দশটা নাগাদ থানায় আসুন।”

দু’জনে জিপে উঠলেন। খোলা গেট দিয়ে জিপ রাস্তায় এল।

পরদিন পৌনে দশটা নাগাদ সুনির্মলবাবু মৈনাককে নিয়ে থানায় এলেন। মি. মিত্র বসতে বললেন। তারপর বললেন, “নৈহাটি পোস্ট অফিসের সেই পোস্টম্যান এখনও অফিসে এসে পৌঁছয়নি। কী ট্রেনের গোলমাল। আমার লোক রয়েছে।”

ঘণ্টাখানেক পরে মৈনাক জানালা দিয়ে দেখল একটা রিকশা থানার সামনে দাঁড়াল। একজন বেশ বলিষ্ঠদেহী লোক আর একজন রোগামতো লোক নামল।

রোগামতো লোকটি মি. মিত্রের ঘরে এসে দাঁড়াল। মি. মিত্র বললেন, “আপনিই জীবনকৃষ্ণ সাহা?”

“আজ্ঞে হ্যাঁ।”

বোঝাই গেল, জীবনকৃষ্ণ ভয়ে কাঁপছে। মি. মিত্র বললেন, “বসুন।” সুনির্মলবাবুকে দেখিয়ে বললেন, “ইনি সুনির্মল চ্যাটার্জি। গরফায় থাকেন। আপনি কাল দুপুরে এই ভদ্রলোকের বাড়িতে একটা টেলিগ্রাম ডেলিভারি দিয়েছেন?”

“হ্যাঁ।”

এবার মি. মিত্র বললেন, “সুনির্মলবাবু, এই পোস্টম্যানই কি টেলিগ্রাম ডেলিভারি দিয়েছিল?”

‘না, অন্য লোক।” মি. মিত্র চেয়ার ছেড়ে উঠে জীবনের কাছে এলেন। জীবনের জামার কলার ধরে তুলে দাঁড় করালেন। বললেন, “জীবন, তুমি মিথ্যে কথা বলছ।”

জীবন এবার হাতজোড় করে বলল, “সার, যা ঘটেছিল সব বলছি। আমার চাকরিটা খাবেন না।”

“তুমি যা বলতে চাও তা শুনে সব ব্যবস্থা হবে।” মি. মিত্র গলা চড়িয়ে বলে উঠলেন, “বলো।” তারপর চেয়ারে বসলেন।

জীবন বলতে লাগল, “কাল দুপুরে সাইকেলে চেপে একটা টেলিগ্রাম নিয়ে ডেলিভারি দিতে যাচ্ছিলাম সুনির্মলবাবুর বাড়িতে। আমি এখানে নতুন জয়েন করেছি। লোকজন, পাড়া চিনি না। এখানে এসে এক স্টলওয়ালাকে বলতে ও ছোট একটা গলি দেখিয়ে বলল, সোজা যান, দেখবেন হলুদরঙের একটা একতলা বাড়ি। দোকানে বেঞ্চিতে আধশোয়া একজন যুবক ধড়মড় করে উঠে বসল। ছুটে আমার কাছে এল। বলল, “কী বেপার? আমি টেলিগ্রামের কথা বললাম। যুবকটি বলল, ‘এ তো কোন বেপারই নয়। টেলিগ্রাম আমাকে দিন। আমি ডেলিভারি দিয়ে আসব।’ আমি মাথা নাড়লাম। দাড়ি-গোঁফওয়ালা যুবকটি বলল, ‘হামি সুনির্মলবাবুর বহিনের ছেলে। মামাজিকে একটা সারপ্রাইজ দেব।’ আমি আবার মাথা নাড়লাম। প্যান্টের পেছনের পকেট থেকে যুবকটি একটা পেটমোটা মানিব্যাগ বের করল। একটা একশো টাকার নোট আমার হাতে দিল। বলল, ‘তুমার জামা আমাকে দাও। আমার কী হল। আমি রাজি হলাম। লোকটি বলল, ‘হামি এক্ষুনি আসছি।’ সামনের সেলুনে ঢুকল। কিছুক্ষণ পরে যখন বেরিয়ে এল, দেখি দাড়ি-গোঁফ কামানো। অন্য চেহারা। আমি তাকে টেলিগ্রাম দিলাম। সই করার রসিদ দিলাম। ভাবলাম, সুনির্মলবাবুর ভাগনে, কী আর হবে। যুবকটি আমার জামা গায়ে দিল। আমার সাইকেলে চড়ে চলে গেল গলিটা দিয়ে।

“কিছুক্ষণ পরে ফিরে এল। আমার জামাটা ফিরিয়ে দিল। তারপর একটা দাঁড় করানো মোটরবাইক চালিয়ে স্টেশনের দিকে চলে গেল।”

মি. মিত্র বললেন, “বুঝলাম।” সুনির্মলবাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন, “আপনার কলিগ মি, নন্দী কলকাতায় কোথায় থাকেন?”

“মৌলালি।” সুনির্মলবাবু বললেন, “চারের এ আচার্য তে সি বসু রোড।”

মি. মিত্র একটা কাগজে নাম-ঠিকানাটা লিখলেন। তারপর ফোন তুলে ডায়াল করলেন। দু’-একটা কথার পর বললেন, “মাইতি, মি. নন্দীর ঠিকানাটা লিখে নাও। মি. নন্দীর ফ্ল্যাটে যাও। তাঁর পাশের ফ্ল্যাটে এক অবাঙালি ফ্যামিলি থাকেন। তাঁদের জিজ্ঞেস করে জানো ব্রজলাল তাদের কেমন আত্মীয়, সে এখন কোথায়? পেলেই লালবাজারে নিয়ে এসো।” তারপর দু’জনের আরও কিছু কথা হল। মি. মিত্র ফোন রেখে সুনির্মলবাবুকে বললেন, “কিছুক্ষণের মধ্যেই মাইতি খোঁজ করে আমাকে জানাবে। আপনারা বাড়ি যান। আমি ফোনে সব জানাব।”

সুনির্মলবাবু মৈনাককে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন।

তখন রাত ন’টার কাছাকাছি। ফোন বাজল ক্রিং ক্রিং। সুনির্মলবাবু প্রায় ছুটে গিয়ে ফোন ধরলেন। মি. মিত্রের সঙ্গে কী কথা হল। ফোন ছাড়ার সময় বললেন, “মি. মিত্র, আপনি আর আপনার বন্ধু মি. মাইতি, আপনাদের আমার আন্তরিক ধন্যবাদ। ফোন রেখে সুনির্মলবাবু হেসে মৈনাকের মা আর জ্যাঠাইমার দিকে তাকালেন। বললেন, “কালপ্রিট ব্রজলাল ধরা পড়েছে। আমার ভিক্টোরিয়ার টাকাটা পাওয়া গেছে।”

মৈনাক ছুটে এসে সুনির্মলবাবুর কোমর জড়িয়ে ধরল। ইমামবাড়ার ঘড়িতে ঢং ঢং করে বাজনা বাজল। বাজনার সঙ্গে সঙ্গে মৈনাক গুনতে লাগল, “এক-দুই-তিন—।” ন’টা পর্যন্ত গুনল।

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০২

অলংকরণ: নিমলেন্দু মণ্ডল

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *