সপ্তম পরিচ্ছেদ
ভগবান বুঝি, সে কথাও শুনিলেন। বিশুদ্ধচিত্তে যাহা বলিবে, তাহাই বুঝি তিনি শুনেন। রাধারাণী মৃদু হাসি হাসিতে হাসিতে, গজেন্দ্রমনে রুক্মিণীকুমারের নিকট আসিয়া উপস্থিত হইলেন।
রুক্মিণীকুমার তখন বলিলেন, “আপনি আমাকে বিদায় দিয়াও যান নাই, আমি যে কথা জানিবার জন্য আসিয়াছি, তাহাও জানিতে পারি নাই। তাই এখনও যাই নাই |”
রা। আপনি রাধারাণীর জন্য আসিয়াছেন, আমারও মনে আছে। এ বাড়ীতে একজন রাধারাণী আছে, সত্য বটে। সে আপনার নিকট পরিচিত হইবে কি না, সেই কথাটা ঠিক করিতে গিয়াছিলাম। রু। তার পর?
রাধারাণী তখন অল্প একটু হাসিয়া, একবার আপনার পা-র দিকে চাহিয়া, আপনার হাতের অলঙ্কার খুঁটিয়া; সেই ঘরে বসান একটা প্রস্তরনির্মিত Niobe প্রতিকৃতি পানে চাহিয়া, রুক্মিণীকুমারের পানে চাহিয়া বলিল–“আপনি বলিয়াছেন, রুক্মিণীকুমার আপনার যথার্থ নাম নহে। রাধারাণীর যে আরাধ্য দেবতা, তাহার নাম পর্যন্ত এখনও সে শুনিতে পায় নাই |”
রুক্মিণীকুমার বলিলেন, “আরাধ্য দেবতা! কে বলিল?”
রাধারাণী কথাটা অনবধানে বলিয়া ফেলিয়াছিলেন, এখন সামলাইতে গিয়া বলিয়া ফেলিলেন, “নাম ঐরূপে জিজ্ঞাসা করিতে হয় |”
কি বোকা মেয়ে।
রুক্মিণীকুমার বলিলেন, “আমার নাম দেবেন্দ্রনারায়ণ রায় |”
রাধারাণী গুপ্তভাবে দুই হাত যুক্ত করিয়া মনে মনে ডাকিল, “জয় জগদীশ্বর! তোমার কৃপা অনন্ত!” প্রকাশ্যে বলিল, “রাজা দেবেন্দ্রনারায়ণের নাম শুনিয়াছি |”
দেবেন্দ্রনারায়ণ বলিলেন, “অমনই সকলেই রাজা কবলায়। আমাকে যে কুমার বলে, সে যথেষ্ট সম্মান করে|”
রা। এক্ষণে আমার সাহস বাড়িল। জানিলাম যে, আপনি আমার স্বজাতি। এখন স্পর্ধা হইতেছে, আজি আপনাকে আমার আতিথ্য স্বীকার করাই।
দে। সে কথা পরে হবে। রাধারাণী কৈ?
রা। ভোজনের পর সে কথা বলিব।
দে। মনে দু:খ থাকিলে ভোজনে তৃপ্তি হয় না।
রা। রাধারাণীর জন্য এত দু:খ? কেন?
দে। তা জানি না, বড় দু:খ-আট বৎসরের দু:খ, তাই জানি!
রা। হঠাৎ রাধারাণীর পরিচয় দিতে আমার কিছু সঙ্কোচ হইতেছে। আপনি রাধারাণীকে পাইলে কি করিবেন?
দে। কি আর করিব? একবার দেখিব।
রা। একবার দেখিবার জন্য এই আট বৎসর এত কাতর?
দে। রকম রকমের মানুষ থাকে।
রা। আচ্ছা, আমি ভোজনের পরে আপনাকে আপনার রাধারাণী দেখাইব। ঐ বড় আয়না দেখিতেছেন; উহার ভিতর দেখাইব। চাক্ষুষ দেখিতে পাইবেন না।
দে। চাক্ষুষ সাক্ষাতেই বা কি আপত্তি? আমি যে আট বৎসর কাতর!
ভিতরে ভিতরে দুইজনে দুইজনকে বুঝিতেছেন কিনা জানি না, কিন্তু কথাবার্তা এইরূপ হইতে লাগিল। রাধারাণী বলিতে লাগিল, “সে কথাটায় তত বিশ্বাস হয় না। আপনি আট বৎসর পূর্বে তাহাকে দেখিয়াছিলেন, তখন তাহার বয়স কত?
দে। এগার হইবে।
রা। এগার বৎসরের বালিকার উপর এত অনুরাগ?
দে। হয় না কি?
রা। কখনও শুনি নাই।
দে। তবে মনে করুন কৌতূহল!
রা। সে আবার কি?
দে। শুধুই দেখিবার ইচ্ছা।
রা। তা, দেখাইব, ঐ বড় আয়নার ভিতর। আপনি বাহিরে থাকিবেন।
দে। কেন, সম্মুখ সাক্ষাতে আপত্তি কি?
রা। সে কুলের কুলবতী।
দে। আপনিও ত তাই।
রা। আমার কিছু বিষয় আছে। নিজে তাহার তত্ত্বাবধান করি। সুতরাং সকলের সমুখেই আমাকে বাহির হইতে হয়। আমি কাহারও অধীন নই। সে তাহার স্বামীর অধীন, স্বামীর অনুমতি ব্যতীত–
দে। স্বামী!
রা। হাঁ! আশ্চর্য হইলেন যে?
দে। বিবাহিতা!
রা। হিন্দুর মেয়ে–ঊনিশ বৎসর বয়স–বিবাহিতা নহে?
দেবেন্দ্রনারায়ণ অনেক্ষণ মাথায় হাত দিয়া রহিলেন। রাধারাণী বলিলেন, “কেন, আপনি কি তাহাকে বিবাহ করিতে ইচ্ছা করিয়াছিলেন?”
দে। মানুষ কি না ইচ্ছা করে?
রা। এরূপ ইচ্ছা রাণীজি জানিতে পারিয়াছেন কি?
দে। রাণীজি কেহ ইহার ভিতর নাই। রাধারাণী-সাক্ষাতের অনেক পূর্বেই আমার পত্নী- বিয়োগ হইয়াছে।
রাধারাণী আবার যুক্তকরে ডাকিল, “জয় জগদীশ্বর! আর ক্ষণকাল যেন আমার এমনই সাহস থাকে |” প্রকাশ্যে বলিল, “তা শুনিলেন ত, রাধারাণী পরস্ত্রী। এখনও কি তাহর দর্শন করিতে অভিলাষ করেন?”
দে। করি বৈ কি।
রা। সে কথাটা কি আপনার যোগ্য?
দে। রাধারাণী আমার সন্ধান করিয়াছিল কেন, তাহা এখনও আমার জানা হয় নাই।
রা। আপনি রাধারাণীকে যাহা দিয়াছিলেন, তাহা পরিশোধ করিবে বলিয়া। আপনি শোধ লইবেন কি?
দেবেন্দ্র হাসিয়া বলিলেন, “যা দিয়াছি, তাহা পাইলে লইতে পারি |”
রা। কি কি দিয়াছেন?
দে। একখানা নোট।
রা। এই নিন।
বলিয়া রাধারাণী আঁচল হইতে সেই নোটখানি খুলিয়া দেবেন্দ্রনারায়ণের হাতে দিলেন। দেবেন্দ্রনারায়ণ দেখিলেন, তাঁহার হাতে লেখা রাধারাণীর নাম সে নোটে আছে। দেখিয়া বলিলেন, “এ নোট কি রাধারাণীর স্বামী কখনও দেখিয়াছেন?”
রা। রাধারাণী কুমারী। স্বামীর কথাটা আপনাকে মিথ্যা বলিয়াছিলাম।
দে। তা, সব ত শোধ হইল না।
রা। আর কি বাকি?
দে। দুইটা টাকা, আর কাপড়।
রা। সব ঋণ যদি এখন পরিশোধ হয়, তবে আপনি আহার না করিয়া চলিয়া যাইবেন। পাওনা বুঝিয়া পাইলে কোন্ মহাজন বসে? ঋণের সে অংশ ভোজনের পর রাধারাণী পরিশোধ করিবে।
দে। আমার যে এখনও অনেক পাওনা বাকি?
রা। আবার কি?
দে। রাধারাণীকে মন:প্রাণ দিয়াছি–তা ত পাই নাই।
রা। অনেকদিন পাইয়াছেন। রাধারাণীর মন:প্রাণ আপনি অনেকদিন লইয়াছেন–তা সে দেনাটা শোধ-বোধ গিয়াছে।
দে। সুদ কিছু পাই না?
রা। পাইবেন বৈ কি।
দে। কি পাইব?
রা। শুভ লগ্নে সুতহিবুক যোগে কি অধম নারীদেহ আপনাকে দিয়া, রাধারাণী ঋণ হইতে মুক্ত হইবে।
এই বলিয়া রাধারাণী ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল।
আমি ক্লাস 9 এ পড়ি ।আমি যখন রাধারানি উপনাস টা পড়লাম সেখানে কিছু অংশ তুলে ধরা হয়েছে ।তারপর বাকি পড়া পড়ার জন্নো খুব বেশি উৎসাহিত হয়ে পড়লাম ।তার পর অনেক দোকানে, মার্কেট এ গিয়ে দেখালাম তাও পেলাম
না । তার পর আমি Google এ সারচ করলম ।
আমার এই উপনাস পড়ে খুব ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাদের ।