রাত্রিশেষ

রাত্রিশেষ

লোকটিকে কী জানি কেন চিত্তর একটু ভালো লাগিয়াছে। রতন গোঁসাই-এর গায়ের বর্ণ শ্যাম, চামড়া মন হয় পালিশ করা সোনার চেয়েও মসৃণ, লম্বা, দেহ এবং ঈষৎ মোটা, মাথা ভরা একরাশ ঘাড় পর্যন্ত চুল, একটিও পাকা দেখা যায় না, বেশ করিয়া সযত্নে আঁচড়ানো, চোখ দুটি গোল হইলেও বেশ ভাসা ভাসা চকচক করে, মুখে সর্বদাই মিষ্টি হাসি। সেদিনও গল্প হইতেছিল।

রতন একটা আসনের উপর দেওয়ালে ঠেস দিয়া বসিয়া, সামনেই চিত্ত ও আর একটি লোক।

চিত্ত জিজ্ঞাসা করল, তোমাকে কখনও গান গাইতে শুনিনি তো?

রতন হাসিয়া বলিল, গান গাইলে তো শুনবে। কিন্তু এ গাঁয়ে যখন প্রথম আসি তখন এই গানের জন্যই আমাকে সবাই ভালবেসেছিল। এখন আর গাই না। আশ্চর্য বটে। যা এখন তুমি খুবই ভালবাসলে পরে হয়ত তাই কোনো কারণে ভুলে যেতে পার, এটা কী আশ্চর্য নয়?

কথার ভাবে মনে হয় তাহার মূলে কোনো ইতিহাস আছে।

চিত্ত বলিল, নিশ্চয়ই। কিন্তু তোমার এই গান না গাওয়ার পেছনে কোনো কারণ আছে বোধ হয়!

রতন কোনো উত্তর না দিয়া বাহিরের দিকে চাহিয়া রহিল। চোখের দৃষ্টি নিবিড় হইয়া আসিয়াছে। কখন বিকাল হইয়াছে। গাছপালার পাশে তির্যক ছায়া, তার ফাঁকে ভাঙা মিষ্টি রোদ।

রতন আগের কথা আর না তুলিয়া অন্য লোকটিকে হঠাৎ জিজ্ঞাসা করিল, তারপর কালিচরণ, কেমন আছ?

-এই তুমি যেরকম রাখ। কালিচরণ হাসিল।

—আমি রাখব কী হে? রাখবে একমাত্র আকাশের ওই—

রতন উপরের দিকে আঙুল দিয়া দেখাইল। একটু চুপ করিয়া থাকিয়া হঠাৎ আবার বলিল, তোমার ছেলেটির না অসুখ করেছিল বলেছিলে?

–সেরে গেছে।

রতন এবার হাসিয়া বলিল, কালিচরণ, এ তোমার ভারী অন্যায়-বিয়ে করেছ সেই কবে, খাওয়ালে না, থাক, সে কথা নয় জোর করে ভুলেই গেলাম। কিন্তু তারপর ছেলে হল, তাতেও খাওয়ানোর নামটি নেই, এ কেমন কথা বল? ভারী অন্যায় ভারী—

কালিচরণ মুখ নীচু করিয়া হাসিল।

ঘরের ভিতর ছিল বিনোদিনী। তাহার গলা শোনা গেল–

-আর সে কথা মানুষের কাছে বলতে উলটে আমাদেরই লজ্জা করে। ওর সঙ্গে আমাদের এত ঘনিষ্ঠতা, আর তার মধ্যে কিনা বিয়ে হল, এমনকি ছেলে হল, তাতেও খাওয়ালে না! বাস্তবিক এসব কথা মনে হলে সংসার আর ভালো লাগে না।

রতন হাসি মুখে বলিল, ওরে বাসরে এতই দুঃখ।

-হ্যাঁগো। বিনোদিনী হাসিয়া উঠিল।

কালিচরণ লজ্জা পাইয়া বলিল, আচ্ছা, সে হবে-খন। ঝুলন পুর্ণিমা কবে?

-এখনও দু-মাস বাকি।

—সেদিন এখানকার উৎসবে যা খরচ হবে সব আমার।

রতন খুশি হইয়া বলিল, শুনছ ঠাকুরন?

—হুঁ।

কিছুক্ষণ পরে কালিচরণ চলিয়া গেল।

চিত্ত বলিল, কেন গাও না বলবে?

রতন চারিদিকে চাহিয়া মুখ বাড়াইয়া আস্তে আস্তে বলিল—বলি শোন। সে অনেক দিনের কথা। তখন আমাদের এখানে রাধা বলে একটি মেয়ে ছিল ওর একবার অসুখ হল, সে ভয়ানক অসুখ, মেয়েদের যেসব কঠিন রোগ হয়। কবরেজ চিকিৎসা করত। এতে হল না দেখে দু-কোশ দূরের মাধবদি, সেই যে যেখানে খুব বড়ো রথের মেলা বসে, সেখান থেকে মহিম ডাক্তারকে আনানো হল, সে বুড়ো এখনও বেঁচে আছে। কিন্তু যার আয়ু সত্যি ফুরিয়ে এসেছে তাকে কী আর বাঁচানো যায়? যায় না। অবস্থা খারাপ হয়ে এল। এমন সময় হল কী, আশ্চর্য রাধা আমার গান শুনতে চাইল। কিন্তু ডাক্তারদের সঙ্গে রোগীর নীতি মেলে না। তখন এমনি খারাপ অবস্থা যে একটু টুঁ শব্দ করাও ভালো নয়। তা ছাড়া রোগীর মনে মরবার ভাব জেগেছে, প্রশ্রয় দেয়াও ভালো নয়। ক্ষান্ত হলাম। কিন্তু সে সময় যে অবস্থা, যে কাতরতা দেখেছি, তারপর থেকে আজ পর্যন্ত গান গাওয়া হয়নি, হবেও না।

শুনিয়া চিত্তর কষ্ট হইল, কিন্তু কথাগুলি আস্তে আস্তে বলার সপক্ষে সে কোনো কারণই খুঁজিয়া পাইল না।

রতন নীচের দিকে চাহিয়া কী ভাবিতে লাগিল। কতক্ষণ পরে সন্ধ্যা নামিয়া আসিল। আকাশে ধূসরতা, ছায়ার সঙ্গে বাতাস মিলিয়া যেন ভারী হইয়া গেছে। বনপথ স্তব্ধ।

চিত্তর দুটি চোখ কাহাকে যেন এতক্ষণ খুঁজিয়া ফিরিতেছিল, পায় নাই। সে হঠাৎ উঠিয়া বলিল, যাই এখন।

–এখনই যাবে?

–হ্যাঁ একটু কাজ আছে।

–রাতে আসবে?

—আজ ঠিক বলতে পারিনে, দেখি যদি পারি–

চিত্ত চলিয়া আসিল। ধূলা উড়াইয়া রাখাল ছেলেগুলি গোরু লইয়া ফিরিতেছে। কুকুরগুলি পথে আসিয়া দাঁড়ায়, আর অনর্থক ঘেউ ঘেউ করে।

সে আনমনে ধীরে ধীরে হাঁটিতেছিল। পথের পাশে সরকার বাড়ির খোলা পুকুর, জলে ভরা।

হঠাৎ তাহার চোখে পড়িল এক কলসি জল কাঁখে ললিতার মতোই কে যেন সিঁড়ি ভাঙ্গিয়া উঠিতেছে। চিত্ত আর একটু কাছে গিয়া ভালো করিয়া তাকাইয়া দেখিল, হ্যাঁ, সেই। বুকটা তাহার কেমন যেন করিয়া উঠিল।

তাহাকেই সে খুঁজিয়াছিল। চিত্ত যে পথের উপর দাঁড়াইয়াছে, ললিতাকে সেখান দিয়াই যাইতে হইবে। সে ধীরে ধীরে আসিয়া কাছ দিয়াই যাইতেছিল, চিত্ত বলিল, এই সন্ধ্যে বেলায় জল নিচ্ছ যে?

ললিতা নীরবে একটু হাসল। ভারী সুন্দর, চোখ দুটি ছোটো হইয়া আসে, লালাভ গালে টোল পড়ে, চামড়ার টানে চিবুকটি সরল হইয়া যায়।

চিত্ত বলিল, বারে, যোবা নাকি?

–না গো না। বোবা কেন হতে যাব। ললিতা আবার হাসিয়া সামনে অগ্রসর হইল।

দেখা যায়, সচকিত কতটুকু ফর্সা নগ্ন-পা, মাথা-ভরা চুল, চলমান, জল ভারে বাঁকা দেহলতা। ছায়ার স্নিগ্ধতা ঘিরিয়া রহিয়াছে।

চিত্ত সেখানে দাঁড়াইয়া একদৃষ্টে চাহিয়া রহিল। পথের বাঁকে অদৃশ্য হইবার আগে ললিতা আর একবার ফিরিয়া চাহিয়াছে।

পরের দিন হাটবার। হাট আখড়ার পিছনেই। ভোর হইতে আরম্ভ করিয়া দুপুরবেলা দুইটার মধ্যে জমিয়া উঠিল। নানা গাঁয়ের লোকে গিজগিজ করে। আর ভয়ানক গোলমাল। বড়ো বড়ো কয়েকটি বটগাছ ডালপালা শিকড় গাড়িয়া সমস্ত জাগয়াটিকে ছায়াচ্ছন্ন করিয়াছে, বট গাছের গোড়ায় উঁচু করিয়া মাটি দিয়া বাঁধানো, সেখানে কেউ নামিতে পারে না। এখানকার লোকদের বিশ্বাস, উহার মধ্যে দেবতার অংশ আছে, তাই পূজা দেওয়া হয়। এই গাছের বয়স কেহ আন্দাজ করিতে পারে না, ছেলে বুড়ো সকলেই বলে যে, জন্মাবধি তাহারা ঠিক এমনই দেখিতেছে। চিত্ত অনেকক্ষণ অনির্দিষ্টভাবে ঘুরিয়া বেড়াইল, দেখিতে বেশ লাগে। গরিবরা, মজুররা আর অল্পবয়সি ছেলেগুলি সস্তা সিগারেট কিনিয়া খাইয়া বেড়াইতেছে। অলস জীবনের একটু উত্তেজনা যেন অনুভব করা যায়।

চিত্ত রতনের ওখানে গেল।

-কী করছ গোঁসাই?

—এই তো এইমাত্র চান করে দুটি খেয়ে নিলাম।

—এসো। ওগো ললিতে, সতরঞ্চি পেতে দাও তো।

ললিতা শতরঞ্চি হাতে আসিয়াছিল, কিন্তু চিত্ত তাহার হাত হইতে সেটা লইয়া বলিল, থাক থাক বোবা মেয়ে।

চিত্ত খুব আস্তেই বলিয়াছিল।

লজ্জায় রাঙা হইয়া ললিতা বলিল, বারে।

আনত মুখের চাপা হাসির ভঙ্গিটি বেশ সুন্দর।

রতনের চোখে কিছুই এড়ায় না, সে বলিল, কি বলে গো?

ললিতা ঘরে যাইতে যাইতে একবার চিত্তর মুখের দিকে চাহিয়া বলিল, আমি নাকি বোবা। এমন মিথ্যে বলতে যে পারে, সে কী না করতে পারে!

-–মানুষকে মেরে ফেলতে পারে?

–হ্যাঁ।

রতন একমুখ হাসিয়া উঠিল,—শুনছ চিত্ত, কী বলছে?

—শুনেছি। চিত্তও হাসিতে লাগিল। একটু পরে রতন বলিল, হাট জমেছে কেমন?

–ভালো।

—আগে দেখেছি, এত লোক হত না। এখন একটা বাজার চলতে পারে কী বল?

—না। চিত্ত অন্যমনস্কভাবে উত্তর দিল। তার এই অন্যমনস্কতার কারণ রতন বোঝে। সে ডাকিল,-ওলো ললিতে, কোথায় গেলে?

-বলুন। ললিতা আসিল।

রতন বলিল, আজ ললিতা যা বেঁধেছিল—বিনু ঠাকরুন কোথায়?

-ঘুমুচ্ছেন ও ঘরে।

–কী বলছিলাম, হ্যাঁ যা বেঁধেছিল, এক কথায় চমৎকার। অনেকদিন এমন রান্না খাইনি।

চিত্ত ললিতার দিকে চাহিয়া বলিল, তা এমন রাঁধলে কার লাভ? ভাগ তো পাইনি। এখন শুনেই পেট ভরাই আর কী!

ললিতা একপাশে গুটিসুটি হইয়া বসিল।

রতন বলিল, অবিশ্যি একদিন যা হয়েছিল সে কথা মনে হলে এখনও হাসি পায়। আমরা না হয় ঘরের মানুষ, কিছু মনে করব না, কিন্তু সেদিন দু-চারজন অতিথি খাওয়াতে হলে কী ব্যাপারটা হত বল দেখি?

—সে তো আর ইচ্ছে করে করিনি, ভুল হয়ে গিয়েছিল।

—তা বটে, কিন্তু বিনু ঠাকরুণ সেদিন থেকে সত্যি তোমার ওপর আস্থা হারিয়েছিলেন। আজ আবার কী মতিগতি হল, রাঁধতে দিলেন। সৌভাগ্য তোমার, তুমি সে ক্ষমতার অপব্যবহার করলে না, পাস হলে, আরে বৈকুণ্ঠ যে!

একটি মাঝবয়সি লোক পথ দিয়া যাইতেছিল। গোঁসাই-এর ডাকে থামিল।

—তোমরা একটু বসো, আমি আসছি! রতন লোকটির কাছে গিয়া কী কথা বলিতে বলিতে পথের বাঁকে অদৃশ্য হইল।

ললিতা চুপ করিয়া বসিয়াছিল। এবার চিত্তর দিকে মুখ তুলিয়া হাসিল। চিত্তও হাসিয়া বলিল, আচ্ছা, তুমি বাইরে গেলে অতবড় ঘোমটা দাও কেন?

-এমনি!

–পাছে আমরা দেখে ফেলি, না!

–দূৎ, তার জন্য নয়। সে বালাই কার থাকে? যার— ললিতা মাঝখানে থামিয়া গেল। চোখের দৃষ্টি করুণ।

চিত্ত সেদিকে কান না দিয়া বলিল, হ্যাঁ খুব বুঝি রূপ না? খুব সুন্দরী?

ললিতা মুচকি হাসিয়া বলিল, হ্যাঁ খুব সুন্দরী। পুকুরে জল আনতে গিয়ে জলে যখন ছায়া পড়ে, প্রথমে ভয়ানক কাঁপতে থাকে, ছায়াগুলো টুকরো টুকরো হয়ে যায়, তারপরে একটু পরে ভাঙা ছায়া জোড়া লাগে, আশ্চর্য হয়ে দেখি, সে কী অপরূপ সুন্দরী এক মেয়ে কলসি কাঁখে করে দাঁড়িয়ে আছে, আমার দিকে চেয়ে হাসছে। জলকে নেড়ে দিতে ভয় করে, তাহলে ঢেউ হবে, আর মেয়েটি হারিয়ে যাবে। আমার জল ভরা আর হয় না। শেওলাভরা সিঁড়ির উপর বসে পড়ি। আর চেয়ে থাকি–ললিতা আবার খিলখিল করিয়া হাসিয়া উঠিল।

-ইস, এত অহঙ্কার। তারপর আর আছে?

ললিতা বলিল, নিশ্চয়ই আছে। সে আর একদিন বলব। একটু চুপ করিয়া থাকিয়া চিত্ত বলিল, সেদিন আমাদের বাড়িতে গিয়ে গান গাইলে, চমৎকার গান, সেই থেকে তোমায় আমি চিনি। কতো বছর এখানে এসেছ?

-কতো বছর আবার? বারোটা মাসও তো হয়নি গো। যেদিন প্রথম এলাম, তখন খুব ছোটো ছিলাম।

–নাকি?

—আর এখন কতো বড়ো হয়ে গেছি, অনেক বড়ো।

—এক বছর না যেতেই?

—হ্যাঁ। ললিতা নীরবে হাসিল।

চিত্ত বলিল, আচ্ছা, এমন চমৎকার গলা পেলে কোথায়

–তার এক কাহিনি আছে।

—সবটার পেছনেই ইতিহাস? কী সে ইতিহাস শুনি?

ললিতা বলিল, সকলেই অনুযোগ করত, সবই যখন আছে, গলার সুর নেই কেন? আমিও ভাবলাম সত্যি তো, কিছুরই তো অভাব নেই, তবে গলায় গান নেই কেন? ঠিক এই প্রশ্নই ঘুরে বেড়াতে লাগল আমার মনে, বোধ হয় দিনরাত। ইচ্ছে যদি তেমন হয়, উপায় একটা তার হয়ই। আমারও হল। রাতের স্বপ্ন বন্দিনী হল হাতের মুঠোয়। কিন্তু সেই গানের সঙ্গে একটা দুঃস্বপ্নও এল, যার জন্যে সারা জীবন চোখের জল ফেলেও সান্ত্বনা মেলা ভার।

—সেটা কী?

–তা অন্যদিন বলব।

চিত্ত হাসিয়া ফেলিল, তোমার কোনো শেষই কী আজকে শেষ হবে না? ভবিষ্যতের জন্য তুলে রাখছ কেন?

—তাতো আমি নিজেই কিছুই জানিনে।

বোধহয় তোমার ওটা স্বভাব।

–স্বভাব?

–হ্যাঁ। এক একজনের এক একটি স্বভাব থাকে, যা নিতান্ত নিজের, যা অন্য কারুর সঙ্গে মেলে না। যেমন ধরো আমার স্বভাব, রোজ এখানে আসা—

-কেন? ললিতা মুচকি হাসিয়া বলিল।

চিত্ত কী যেন বলিতে যাইতেছিল এমন সময় রতন দেখা দিল, নিজের পরিত্যক্ত আসনে আবার বসিয়া বলিল, এক কান্ড ঘটেছে।

ললিতা উৎসুক চোখে তাহার দিকে চাহিল। চিত্ত জিজ্ঞাসা করিল, কী?

কোনো ভালো খবরেই রতন বশীভূত নয়, অন্তত বর্ণনার দিক দিয়া। বেশি হৈ চৈ করা তাহার স্বভাব বিরুদ্ধ।

রতন বলিল, নদীর ঘাটে একটা মড়া এসে লেগেছে।

–মড়া!

–হ্যাঁ! মড়া একটি মেয়ে, জলে থেকে ফুলে নাকি ভয়ানক দেখতে হয়েছে। তার ওপর পেটে আবার নাকি একটা সন্তান। আত্মহত্যা না সাপের কামড়ে মরেছে। কে জানে?

চিত্ত বিস্ময়ে বলিল, তুমি দ্যাখোনি?

-না, শুনলাম। খুব ভিড় হয়ে গেছে সেখানে।

—আমি যাই, চিত্ত উঠিয়া বলিল, কোনখানে, খেয়াঘাটে তো?

—হ্যাঁ। চিত্ত চলিয়া গেল।

ললিতা এতক্ষণ একটি কথাও বলে নাই, আশ্চর্য হইয়া সব শুনিতেছিল, এখন। মুখ নীচু করিয়া কী যেন ভাবিতে লাগিল।

রতন বলিল, তোমার কী মনে হয় ললিতে, আত্মহত্যা?

—হ্যাঁ।

হাটের একটানা সোরগোল। বেলা গড়াইয়া যাইতেছে, বিকাল হইতে বেলা বাকি নাই।

সকলেই মড়াটি দেখিয়া আসিয়াছে, আবরণহীন বিপুল দেহ, ফুলিয়া পচিয়া একটি বিশ্রী গন্ধে সেখানের বাতাস ভরপুর।

ললিতা ঠিকই বলিয়াছে, জানা গেছে, মেয়েটি আত্মহত্যাই করিয়াছিল। গাঁয়ের মধ্যে এমন একটা ঘটনা অভিনব বটে। আলোচনার আর শেষ নাই। রতনের ওখানেও জমিয়া উঠিয়াছে।

রাত্রি দশটা হইবে। সকলেই কিছু না কিছু বলিয়াছিল। চুপ করিয়াছিল কেবল ললিতা। সে ঘরের ভিতর বসিয়াছিল। বৈঠক হইতে নিঃশব্দে চিত্ত উঠিয়া গেল। আজ এতক্ষণে মাত্র চাঁদ উঠিয়াছে। বনানী কথা বলিতে শুরু করিয়াছে। পায়ে হাঁটা সাদা পথ টুকরা জ্যোৎস্নায় মনোরম। সৌন্দর্য আহরণের নেশায় চোখ বুজিয়া আসে, পা ফেলা মন্থর, দেহ শিথিল। কিন্তু বুকে হাত রাখিয়া সে হাঁটিতে লাগিল। পৃথিবীর প্রাণকেন্দ্রের উৎস উপভোগে বঞ্চিত এক অনাগত আত্মা জ্যোৎস্নালোকিত শুকনো বালুচরে নিঃশ্বাস না ফেলিয়া ঘুমাইতেছে।

বহিরাবরণ তাহার মা, নিজের মূঢ়তায় অন্যকে মারিবার বেদনায় এখনও বোধকরি তাহার চোখের জল শুকায় নাই।

সেখানে মড়াকে ঘিরিয়া লোক জমিয়াছিল অনেক, নানা জনে নানা কুৎসিত মন্তব্য করিয়াছিল, ওদিকে ললিতাও ঠিক এই কথাই ভাবিতেছিল। কিন্তু আর একটা জিনিস যাহা তাহার মনের সঙ্গে মিশিয়া গিয়াছিল তাহা হইল ভয়।

ইস, কী ফুলিয়াছে রে বাপু। কী বিকৃত মুখের ভঙ্গি, কেমন বিশ্রী গন্ধ। ললিতা শিহরিয়া উঠিল।

আচ্ছা এইমাত্র ভাঙিয়াছে। রতন একা কতক্ষণ বসিয়া, উঠিয়া ঘরে গেল। একপাশে কাঁপিয়া কাঁপিয়া তেলের প্রদীপ জ্বলিতেছে। সেই আলোয় দেখা গেল, ঘরের এককোণে মাটির উপরেই ললিতা পড়িয়া ঘুমাইতেছেঃ শরীর কুঁচকানো, মাথায় একটি, আর এক হাত বুকের উপর ন্যস্ত।

রতন কিছুক্ষণ তেমনি নির্বাক হইয়া দাঁড়াইয়া রহিল, তারপর কাছে গিয়া ডাকিল, ললিতে। কোনো উত্তর আসিল না।

-ওগো ললিতে, ললিতে।

—কে? ললিতা জাগিয়া উঠিল।

—এই তো আমি! হঠাৎ সেই দৃশ্যের কথা মনে পড়িয়া যাওয়ায় সে ভয়ে সংকুচিত হইয়া বসিয়া রহিল। মুখে কোনো শব্দ নাই, আলোর দিকে স্থির দৃষ্টি। রতন বলিল, একেবারে খালি যে, ওরা সব কোথায় গো?

-দক্ষিণের ঘরে বোধ হয়।

–কিন্তু তুমি এখানে একা কেন? রতনের চোখ নিবিড় হইয়া উঠিল, বলিল, না খেয়ে দেয়ে এখনই ঘুমুচ্ছো!

—টেরও পাইনি কখন ঘুমিয়ে পড়েছি। ললিতা দাঁড়াইয়া হাসিমুখে বলিল, ওদের ডাক দেব?

—না।

—তবে কি? ললিতা তাহার দিকে কতোক্ষণ চাহিয়া কী মনে করিয়া আঙিনায় গেল, কাহাকে যেন খুঁজিল, তারপর বাঁশের খুঁটি চাপিয়া নিঃশব্দে বাহিরের দিকে চাহিয়া রহিল। এখন মাথার উপরে চাঁদ, জ্যোৎস্নায় ফুটফুট করে উঠানটি, গাছের নীচে সেই ভাঙা নরম আলো। পৃথিবী ভরিয়া রূপের প্রবাহ বহিয়া গেছে, সে দিকে চাহিয়া চক্ষু বুজিয়া আসে, বুকে নিঃশ্বাস ভরিয়া ওঠে।

কিন্তু বাহিরের পৃথিবীর তুলনায় মনের কোণ শূন্য, কেবল শূন্য। সেই মরুভূমিতে কাহার হাতের স্পর্শ, ওই জ্যোৎস্নার মতো নরম, বুলাইয়া গেছে। কিন্তু কী জানি কেন বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয়। যেন বিশুর সেই আগ্রহের মূলে শ্মশানবাসী খেয়ালই বেশি।

পিছনে দরজার চৌকাঠ ধরিয়া রতন চুপ করিয়া দাঁড়াইয়াছিল, ললিতা দেখে নাই, টের পাইলে সে হয়তো ভীষণ চমকিয়া উঠিত।

পর দিন ভরা দুপুর মাথায় করিয়া চিত্ত আসিল জল খাইতে। অন্তত তাহার কথায় এই বোঝা যায়। ললিতা তখন রাঁধিতেছিল, হাসিয়া বলিল, কেন গো এমন অসময়ে?

খুঁটি ধরিয়া চিত্ত বলিল, তেষ্টা পেয়েছে।

বিস্ময়ে ললিতার চোখ বড়ো হইল : তা বলে অতদূর থেকে এলে? বাড়িতে জল নেই? আচ্ছা এ কী রকম তেষ্টা?

-আরে বাপরে; সে ভয়ানক তেষ্টা, ছাতি ফেটে যাচ্ছে, পেট চোঁ চোঁ করছে, বুক শুকিয়ে আসছে, নিঃশ্বাস ফেলতে পারছি না, এ কী, দাঁড়াতেও তো পারছি না গো। চিত্ত বসিয়া পড়িল।

তাহার ভঙ্গি দেখিয়া রুদ্ধ হাসিতে ললিতার ফর্সা মুখ যেন ফাটিয়া পড়িতেছিল। চিত্তর জলের তৃষ্ণা সত্যি পাইয়াছিল কি না জানা যায় নাই কিন্তু সে মুগ্ধ বিস্ময়ে তাহার দিকে চাহিয়া রহিল; কপালে আর তীক্ষ্ণ চিবুকে অল্প ঘাম, ঠোঁটে হাসি, কপালে আর গালের পাশে কিছু শুকনো বিপর্যস্ত চুল।

ললিতা হাত ধুইয়া জল আনিয়া দিল। চিত্ত অল্প একটু খাইয়া গ্লাসটি এক পাশে রাখিয়া বলিল, আজ প্রসাদ দেবে? তোমার রান্নার নাকি তুলনা নেই?

-কে বলে?

—সকলের মুখে তাই শুনি, বিশেষ গোঁসাই তো প্রায়ই বলেন।

—গোসাইজি? ললিতা মুচকি হাসিল।

–হাসলে কেন?

–এমনি।

কোনো কারণ না থাকলে এমনি কেউ হাসে?

ললিতা চুপ করিয়া রহিল।

চিত্ত বলিল, বললে না?

—এমনি গো এমনি, ললিতা হাসিয়া অন্য কথা পাড়িল; —খাওয়া হয়েছে?

-তা তো মনে নেই।

–খেলে কী না খেলে তাও মনে নেই, হা ভগবান! খিদের ব্যাপারে মানুষ কী করে ভুলে যায়? তুমি কী করে ভুললে?

চিত্ত বলিল, কে বলে আমি খিদের জ্বালা ভুলেছি? তার জ্বালায় একেবারে জর্জরিত। তাই তো বলছিলাম প্রসাদ দিতে। দাও, দাও, ওগো ললিতে

ললিতা হাসিয়া ফেলিল, মাছরাঙা দেখেছো?

—দেখেছি।

–সেগুলোকে আমার ভালো লাগে না।

—কেন?

–তা ঠিক বলতে পারব না, কী জানি কেন!

–ও, চিত্ত বলিল, আচ্ছা চাতক দেখেছো?

–দেখেছি।

—ওই পাখিটা আমার দু-চোখের বিষ।

–কেন?

চিত্ত বলিল, কেমন হাঁ করে বৃষ্টির আশায় চেয়ে থাকে ভিক্ষুকের মতো, ভয়ানক অলস, সবই আরামে পেতে চায়। আর পেটভরা অহংকার।

ললিতা আবার হাসিয়া উঠিল, দুষ্ট!

চিত্ত বলিল, কেমন, হয়েছে তো? আমারও মুখ আছে।

-আরও বলবে?

–বলব না? বলবই তো!

চিত্ত চুপ করিয়া রহিল।

কতক্ষণ ব্যস্তভাবে এটা ওটা নাড়িয়া আড়চোখে ললিতা চাহিয়া দেখিল, একটু পরে মুখ ফিরাইয়া বলিল, রাগ করেছ?

–না, চিত্ত হাসিয়া ফেলিল।

 ললিতা সহজ হইয়া বলিল, আমি তো কোনো কাজই করতে পারছিনে। তোমার সঙ্গে কেবল গল্প করছি। কখন একটা অঘটন ঘটে, হাত পুড়ে যায়, কে জানে?

চিত্ত বলিল, তা কখনো পুড়বে না, আর যদি পোড়েই তখন কি করব জানো?

জানি?

—কি জানো বলো।

ললিতা তবু চুপ।

–বলো।

—তোমার ওই কালো চোখ চেপে ধরবে আমার ব্যথায়।

–তারপর?

—তারপর চোখ থেকে বেরিয়ে আসবে জল, মুছে দেবে আমার ব্যথা, আমার মন তখন খুশিতে ভরে উঠবে।

আনন্দে চিত্ত তাহার হাত বাড়াইয়া দিল।

কিন্তু ললিতা চকিতে আর একপাশে সরিয়া হাসিমুখে অর্ধেক সুর মিশাইয়া গাহিল : বঁধু ছুঁতে করেছি মানা–

-ওগো ললিতে, ডালনা হয়েছে? বিনোদিনী আসিয়া উপস্থিত হইল।

চিত্ত একটু দাঁড়াইয়া চলিয়া আসিল। আর একদিন দুপুরবেলা আঙিনায় বসিয়া ললিতা একটা আসন তৈরি করিতেছিল। আখড়ার প্রায় সবাই ঘুমাইয়াছে, কাহাকেও দেখা যায় না। চারিদিক নিস্তব্ধ। অলস, মন্থর গতিতে সময় চলে।

বাতাস একটুও নাই।

ললিতা একমনে রঙিন সুতায় ফুল তুলিতেছিল; গলায় গানের একটা কলি। কাছেই অপ্রশস্ত পথে শুকনো পাতায় মর্মর উঠিল, কে যেন যাইতেছে। সে মুখ তুলিয়া দেখিল, চিত্ত। সে খুশি হইয়া দাঁড়াইয়া হাত নাড়িল। চিত্তর একবার এদিকে চোখ পড়িয়াছিল। সে কাছে আসিয়া বলিল, একা কী করছ? গোঁসাই কোথায়?

–ঘুমুচ্ছেন।

চিত্ত বলিল, এক গ্লাস জল খাওয়াবে?

–আবার সেই জল, ললিতা হাসিয়া কোল হইতে আসন রাখিয়া উঠিল। জল খাইয়া চিত্ত বলিল, একটা পান? ললিতা পান আনিয়া দিল। চিত্ত সেটা মুখে দিয়া চিবাইতে চিবাইতে বলিল, কী সেই গানটা সেই যে ভজহরি গাইত।—অর্থটা বেশ মনে আছে।

কী অর্থ, গানটা কে যে গাহিত তাহা হঠাৎ ঠিক করতে না পারিয়া ললিতা জিজ্ঞাসা করিল।

অর্থটা হচ্ছে, তোমারই দেওয়া পানে রাঙিয়া ঠোঁট ছাপ এঁকে দেব তোমার সাদা ঠোঁটে। চিত্ত তাহার পানে চাহিয়া নীরবে হাসিতে লাগিল।

ললিতার মুখ রাঙা হইয়া উঠিল, সে তাড়াতাড়ি আসনটা হাতে লইয়া বলিল, একটা কাজ করবে?

বল?

–এখানে আমার নামটা লিখে দাও না, আমি তুলব।

চিত্ত হাসিয়া বলিল, কী দিয়ে লিখব?

—দাঁড়াও এনে দিচ্ছি।

চিত্ত সযত্নে নাম লিখিয়া দিল।

কতোক্ষণ চুপচাপ।

সে বলল, তোমার সেই গল্পটা তারপর কী হল!

–সেই যে ছায়া দেখে জলভরা আর হচ্ছে না?

–হ্যাঁ।

—তারপর কততক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম হুঁশ নেই, একটা ডাকে হঠাৎ চমকে উঠে দেখি সন্ধ্যার বাকি নেই, পুকুরে ছায়া নেমেছে, জলের রঙ হয়ে গেছে কালো, বাতাস হয়েছে স্থির। কী আর করি, কলসিতে জল ভরে ছায়া ভেঙে রাগ করে চলে এলাম। রাগ আর কারুর ওপর নয়, নিজের ওপর! আমি কী পাগল হয়েছি! কিন্তু কে জানত তখন, একরকম মানুষ আছে, নিজের থেকে পরের ওপর মায়া তাদের বেশি, নিজের চেয়ে পরের সম্বন্ধে তারা বেশি সচেতন? লম্বাপানা লোকটা, চমৎকার চেহারা। এত কথা বলতে পারি কিন্তু সেদিন কী হল মুখে কিছুই এল না। এমন নাকি হয়। এর মূলে নাকি আর কিছুই নয়, শুধু ভালো লাগা! যাই হোক তাড়াতাড়ি চলে এলাম এই ভেবে, লোকটি হারিয়ে যাবার নয়। আমার অতি কাছেই সে সারাক্ষণ থাকে।—পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে চিত্তর দিকে একবার চাহিয়া ললিতা হাসিয়া ফেলিল। চিত্ত তাহার একটি হাত ধরিয়া বলিল, আমিও দাঁড়িয়ে রইলাম চুপ করে, আমাকে পেছনে রেখে মেয়েটি চলে যাচ্ছে, মিশে যাচ্ছে আমার দৃষ্টিপথ থেকে, কিন্তু মনের পর্দায় আরও উঠছে জেগে, আমি দাঁড়িয়েই রইলাম।-ওগো ললিতে।

-কী গো!

চিত্ত তাহার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকাইয়া চুপ করিয়া রহিল, অনুভব করিল তাহার হাতের উষ্ণতা। একটু হাসিয়া ললিতা তাহার হাত ছাড়াইয়া লইল। একটু পরে আবার ফিক করিয়া হাসিয়া ফেলিল।

—হাসছ যে?

—ভাবছি আজ কতো কথাই না বললাম। এক একটা দিন এমনি হয়, না?

—হ্যাঁ।

-নইলে কে জানতো, তুমি আসবে এখন? ললিতা আবার হাসিল। তাহাকে যেন একটা রোগে পাইয়া বসিয়াছে। কিন্তু চিত্ত ইহাই চায়। হাসিলে এত সুন্দর দেখা যায়, সে আগে কখনো এরকম দেখে নাই। সে বলিল, আসনটা কার জন্যে করছ?

-যে বসবে তারই জন্যে।–গোঁসাই?

-আজ তবু একটু ঘুমিয়ে নিলুম, দুজনকেই ভয়ানক আশ্চর্য করিয়া রতন দেখা দিল, বলিল, দুপুরবেলা কখনো আমার ঘুমের অভ্যাস নেই, আজ কী জানি কেন হল! চিত্ত কখন এলে, আরও আগে?

চিত্ত কিছু বলিল না।

রতন দুজনের দিকেই একবার করিয়া চাহিয়া বলিল, ললিতা ভারী কাজের মেয়ে, এদিক দিয়ে অমন যে বিনু ঠাকুরণ তাকেও হার মানায়। কী ললিতে, বসবার একটা কিছু দাও?

ললিতা উঠিয়া আসন আনিয়া দিল।

বসিয়া রতন বলিল, কালিচরণ আসবে বলেছিল, ওর জন্যেই কতক্ষণ বসে, কী আর করি, শুয়ে পড়লাম। ব্যাটার কী কথার ঠিক আছে, বলছে না ঝুলন পূর্ণিমার সময় খরচ করবে, দেখো সব মিছে কথা। তারপর তুমি যখন এসেছিলে কাউকে দিয়ে ডেকে আনলেই তো পারতে। দিনে ঘুম সইতে পারি না, পরে আর কিছুই ভালো লাগে না। অনেকক্ষণ নিশ্চয়ই এসেছো? রতন টের পাইয়াছিল আগেই। চিত্ত সংক্ষেপে বলিল, হ্যাঁ।

রতন বলিল, ললিতাও আমারই মত। কুঁড়েমি কাকে বলে জানে না।

—তবে একবার গল্প পেলে-চিত্ত উঠিয়া পড়িল।

–যাচ্ছ?

–হ্যাঁ।

–আবার কখন আসবে?

–সন্ধ্যাবেলা।

চিত্ত চলিয়া গেল। রতন কতোক্ষণ তাহার দিকে একদৃষ্টে চাহিয়া মুখ ফিরাইয়া দেখিল, ললিতাও কখন সরিয়া গিয়াছে।

আজ অনেকদিন পরে আবার বিকেলবেলা চিত্ত পুকুর পারে ছিপ লইয়া বসিল। কাছে একটি লোকও নাই, কেবল পার ঘেঁসিয়া কয়েকটা গোরু ঘাস খাইতেছে।

বড়শি ফেলিয়া সে নিস্তরঙ্গ জলের দিকে স্থির দৃষ্টিতে চাহিয়া রহিল।

আকাশে একটুকরো মেঘ নাই। বাতাসও নাই। পুকুরের চারদিকের গাছের পাতা নড়ে না। ওদিকের তালগাছটায় বসিয়া কয়েকটা শকুন বোধ হয় ডানা নাড়িতেছে, তাহারই শব্দ মাঝে মাঝে কানে আসে। দিকচক্ররেখা, চিত্ত যে জায়গায় বসিয়াছে, সেখান হইতে দেখা যায় না। কিন্তু দেখা যায়, পশ্চিমের জ্বলন্ত আকাশ, দীর্ঘ, সোজা উজ্জ্বল আলোর রেখার সমষ্টি।

চিত্ত যেন অতি সন্তর্পণে কী লক্ষ করিতেছেঃ তাহার মনে হাস্যমুখী এক মেয়ে ছায়া ফেলিয়াছে। সিঁথি বিহীন চুল টান করিয়া বাঁধা, চোখ দুটিতে হাসি ঝরিয়া পড়ে, ঈষদুন্মুক্ত ঠোঁটে কত কথা যেন থামিয়া আছে।

ললিতা যেন আসিয়া দাঁড়াইয়াছে তাহার চোখের সামনে। হাত বাড়াইয়া চিত্ত তাহাকে ধরিতে গেল কিন্তু সে তাহার হাত সরাইয়া দিয়া হাসিতে হাসিতে ঘরে দৌড় দিল। যেন বিদ্যুৎ।

চিত্ত তাহার পিছনে পিছনে তাড়াতাড়ি ঘরে গিয়া দেখিল, ললিতা মুখে হাত চাপিয়া ঘরের এককোণে দেওয়ালের সঙ্গে লাগিয়া দাঁড়াইয়া আছে।

সে কাছে গিয়া তাহার কাঁধে দুই হাত রাখিল।

বলিল, হাত দিয়ে মুখ ঢেকেছো যে!

হাত দুইটি সরাইয়া দিতেই ললিতা আবার ফিক করিয়া হাসিয়া ফেলিল।

চিত্ত নত হইয়া বলিল, ঠোঁট ছুয়ে থামাব নাকি হাসি?

ললিতা যেন একটা অবলম্বনের মতো তাহার গলা জড়াইয়া ধরিল।

একটু পরে চিত্ত বলিল, ওগো ললিতে আজও তোমার কাছে একটা পান চাইছি!

—এই ভর সন্ধ্যেবেলা, এখন কতো কাজ! ললিতা বলিল,-আলো জ্বালাতে হবে না?

তাহার হাত ধরিয়া সে বাহিরে আসিল।

এখনও একটু আলো আছে, সব অস্পষ্ট দেখা যায়। এমন সময় তাহারা দেখিল, ঠকঠক শব্দ করিয়া খড়ম পায়ে রতন এদিকে আসিতেছে।

চিত্ত চলিয়া যাইতেছিল কিন্তু সে ডাক দিয়া বলিল,-কোথায় যাচ্ছ গো, আমি যে তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। তোমার সঙ্গে কদিন ধরে ভালো করে কথা বলতেই পারছি না। এসো, বসো।

রতনও বসিল। বলিল, ললিতে এখনও আলো জ্বালাওনি, কখন জ্বালাবে বল? তোমাদের কী সে দিকে হুশ আছে।

সে চিত্তর দিকে একবার চাহিল।

চিত্ত অন্যদিকে মুখ ফিরাইয়া রাখিল।

তালপাতায় ডানার ঝাপট। চিত্ত স্বপ্ন হইতে চমকিয়া উঠিল, দেখিল : অন্তদৃষ্টির সীমানায় ললিতা অদৃশ্য হইয়া গেছে, আর কিছুই নাই, ধু ধু করে শূন্য মরুভূমি।

সূর্য অস্ত গেছে। সে বঁড়শি গুটাইয়া উঠিয়া দাঁড়াইল। পথে আসিয়া পাশের ঝোপে ছিপটা রাখিয়া সে রতনের ওখানে চলিল।

ঘরের বাহিরে কেহ নাই। চিত্ত চারিদিকে চাহিল, কাহাকেও দেখা যায় না। আখড়ার পূর্বদিকে মেহেদি গাছের বেড়া ঘেরা একটি ছোটো বাগান আছে। চিত্ত সেখানে গিয়া দেখিল, সাজি হাতে ললিতা ফুল তুলিতেছে। সে তাহাকে লক্ষ করে নাই।

কাছে গিয়া চিত্ত ডাকিল, ললিতে। ললিতা চকিতে তাহার পানে চাহিয়া হাসিল।

-ফুল তুলছ?

–হুঁ। দাঁড়াও, হয়ে গেছে প্রায়।

চিত্ত বলিল, ইস, এত ফুল দিয়ে কী করবে? আমাকে একটা দাও না, ওই যে গোলাপ ফুলটা—

তুমি নেবে? ললিতা খুশি হইয়া ফুলটি ছিঁড়িয়া আনিয়া দিল।

চিত্ত বলিল, আর সব কোথায়?

–মাধবদির মেলায় গেছে।

–গোঁসাইও?

–না। তিনি ওদিকে এইমাত্র কোথায় যেন গেলেন।

ললিতা বাগান হইতে বাহির হইয়া ঘরে ফুল রাখিয়া আসিল। চিত্ত আঙিনায় একটা সিঁড়ির উপর বসিয়া পড়িয়াছে।

ললিতা কতটুকু পুরোনো কাপড় আনিয়া সলিতা পাকাইতে বসিল।

চিত্ত বসিল, তোমার কথা মনে হতেই চলে এলাম। ভেবেছিলাম আসব না।

ললিতা হাসিয়া বলিল, আমি তাহলে ভাগ্যবতী।

চিত্ত বলিল, গোঁসাইর মনে আমার উপর রাগ জমে উঠেছে। আমি লক্ষ করেছি। তোমার কী কোনো অসুবিধে হচ্ছে সে জন্যে?

-একটুও না।

-তাই! সে তোক ভালো আমি জানি, কিন্তু পৃথিবীতে এমন কতগুলো ব্যাপার আছে যাতে ভালো থাকা যায় না। ওকে আমার ভালো লাগে, বিশ্বাস করো ওর ওপর আমার এতটুকু রাগ নেই! যদি উপায় থাকত তবে ঠিক আগে যেমনটি ছিল তেমনটি হওয়া যেত।

নতমুখী ললিতা সলিতা পাকাইতেছিল।

চিত্ত বলিল, কিন্তু উপায় যে নেই। সেই কবে ছিল যাওয়ার কথা, এখনও যাইনি কেন জানো?

-জানি গো জানি।

—কী জানো?

ললিতা হাসিয়া বলিল, বলতে পারব না!

চিত্ত বলিল, প্রথম যে দিন তোমাকে দেখি, সে দিনে তুমি যে গানটি গেয়েছিলে তার রেশ এখনও আমার মনের অনেক উঁচু পর্দায় উঠে বাজছে, আমার খুব ভাল লাগছে। ললিতে—

ললিতা খিল খিল করিয়া হাসিয়া ফেলিল, বলিল, ও মা বলে কী গো। এত আমি সইব কী করে?

ললিতা হাসি চাপিয়া সুর ধরিল—

ওগো সুখের জোয়ারে ভাসিছে আমার মন ভাবি নাই কভু, লুকায়ে কোথা ছিল। এমন ক্ষণ।

ললিতা আলো জ্বালাইয়া দিল। এমন সময় রতন আসিয়া উপস্থিত।

রতন বলিল, চিত্ত এমন চুপ করে বসে থাকায় কী লাভ? গল্প করো। আমি বাপু মুখ বুজে থাকতে পারিনে, তোমরা একে দোষই বলো আর যাই বলো।

চিত্ত এতক্ষণে একটু হাসিল, বলিল, তুমিই বলো, আমার পুঁজিতে আর গল্প নেই।

–তা আমার বেলায় থাকবে কেন? রতন চকিতে একবার ললিতার দিকে চাহিয়া বলিল, সে থাক, আমিই বলি শোনো। আমি তখন আমাদের বাড়ি শান্তিপুরে থাকি, অনেকদিন আগের কথা, আমাদের বাড়িতে একটা কুকুর ছিল, দিশি কুকুর, গায়ের রঙ সবখানেই কালো কেবল পা আর মুখ ছাড়া, সেখানে সাদা রঙ। মাঝারি গোছের দেহের আয়তন, পা দুটি খাটো, লেজটিও কে যেন কেটে দিয়েছিল। সে যাই হোক আমরা কুকুরটাকে খুব ভালোবাসতাম। ওটাও আমাদের খুব পোষ মেনেছিল, আমরা যা খেতাম সব ওকে দিতাম, দরকার হলে ভালো জিনিস আমিও ওকে খাওয়াতাম। ওর শোবার জায়গা পর্যন্ত করে দিয়েছিলাম। কিন্তু আশ্চর্য, একদিন হল কী, আমারই ছোটো বোনকে সে অনর্থক কামড়ে দিল। আমরা তো সকলেই অবাক, এ কেমন করে হয়!

ভিতরের ইঙ্গিত ধরিয়া কোনোরকমে বিরক্তি চাপিয়া চিত্ত উঠিয়া পড়িল, রতন ইহা দেখিয়া তাড়াতাড়ি হাত ধরিয়া বলিল,-যাচ্ছো কেন, শেষটুকু শুনে যাও!

-না, আমি যাই, আমার কাজ আছে!

—শুধু আমার বেলাতেই কাজ না? দাঁড়াও শেষটুকু তোমায় শুনতেই হবে। রতন হাত ছাড়িল না। মুখটি অস্বাভাবিক কঠিন হইয়া উঠিয়াছে।

-কী আরম্ভ করেছে গোঁসাই? ছেড়ে দাও আমি যাই। ললিতা স্তব্ধ হইয়া দেখিতেছিল। হাত না ছাড়িয়া রতন উষ্ণ স্বরে বলিল, তারপর আমরা ভাবলাম এ কেমন করে হয়। এতকাল যাকে বাড়ির লোকের মতই আদর করেছি, খাবার দিয়েছি, ভালবেসেছি, সে কেন এরকম করলে? কৃতজ্ঞতা বলে কোনো জিনিসই কী নেই? এ ছাড়া মানুষ বাঁচে কী করে? তাই যদি না থাকে তাহলে তো আমি তোমাকে মেরে ফেলতে পারি, তুমিও আমাকে মেরে ফেলতে পার, ললিতাও পারে। তারপর অনেক ভেবেচিন্তে ঠিক করলাম, পৃথিবীতে এমন একশ্রেণির জীব আছে যারা খুব প্রিয়জনের বুকেও ছুরি বসাতে পারে, এতটুকু দ্বিধা করে না, যাদের শিরা উপশিরায় বিভীষণের রক্ত, চোখে কংসের দৃষ্টি, ওই তাদের মতো, যারা তলে তলে ভয়ানক খেয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ওপর দেখে কিছুই বোঝা যায় না। এ ছাড়া অন্য কিছুই না! চিত্ত আর পারিল না, জোর করিয়া হাত ছাড়াইয়া তাড়াতাড়ি চলিয়া গেল।

ললিতা দ্রুত ঘরে গিয়া দু-হাতে চোখের জল চাপিল।

রতন ঘরের দিকে একবার চাহিয়া দেওয়ালে ঠেস দিয়া স্তন্ধের মতো বসিয়া রহিল। এত রাগ তাহার কোনোদিনও হয় নাই।

বাহিরের অন্ধকার আরও গাঢ়তায় চাপিয়া আসিয়াছে। একটানা ঝি ঝি পোকার শব্দ। কিছুদূরে কামার বাড়ির লোহা ঠুকিবার আওয়াজ।

রতন দুই হাঁটুর উপর হাত রাখিয়া, তার উপরে মুখটি স্থাপন করিয়া বসিয়া রহিল। চোখ দুইটি তাহার অকারণ জ্বালা করিয়া উঠিতেছে।

একটু পরেই বিনোদিনীরা আসিল। রতন তখনও বসিয়া আছে। বিনোদিনী আশ্চর্য হইয়া ঘরে গিয়া দেখিল, ললিতাও ওপাশের দরজায় চৌকাঠ ঘেসিয়া বসিয়া আছে, মুখ হাঁটুর ভিতরে। সে আন্দাজে কিছু একটা কল্পনা করিয়া মনে মনে জ্বলিয়া উঠিয়া বলিল, কী গো ঠাকরুণ, রাত বারোটা না একটা বেজেছে যে ঘুমে মুখ তুলতে পারছ না? আমরাও রক্তে মাংসে গড়া মানুষ গো! নিজের রূপের জ্বালায় দেখি চোখে-মুখে পথ দেখতে পাও না। অত অহংকার ভালো নয় বলে দিচ্ছি।

ললিতা তবু মুখ তুলিল না।

আঙিনা হইতে রতন বলিল, ঘুমুচ্ছে নাকি?

—হ্যাঁ গো হ্যাঁ, আমি কী মিথ্যে বলছি? বিনোদিনী বাহিরে আসিয়া বলিল, বয়স তো আমাদেরও একদিন ছিল কিন্তু ভর সন্ধ্যায় ঘুম কাকে বলে সে তো কখনো জানিনি!

রতন সায় দিয়া বলিল, ওকথা আর বলো না বিনুঠাকরুণ, তোমার পায়ের ধুলোর যোগ্য তো ও নয়।

বিনোদিনী খুব খুশি হইয়া কাছে আসিয়া বলিল, এ বেলা শুধু দুধ খাবেন বলেছিলেন, এখন আনব?

-না থাক।—রতন তাহার হাত ধরিল। বিনোদিনী চারিদিকে একবার চাহিয়া নিজেকে ছাড়িয়া দিল।

কালীচরণ কথা রাখিল ঠিকই।

ঝুলন পূর্ণিমার রাত্রি। অনেক লোক জমা হইয়াছে। একটু বেশি রাতে কীর্তন আরম্ভ হইবে, এখন গল্প চলিতেছে, রতন রোজ যেখানে বসে সেইখানেই বসিয়া, আর চারিদিকে অন্যান্য সব লোক। সকলের শেষে গাওয়া হইবে। কালীচরণ এখন গাঁজার সরবরাহে ব্যস্ত।

সমস্ত লোকগুলির মাথার উপরে রাশি রাশি ধোঁয়া কুন্ডলী পাকাইয়া ঘুরিয়া বেড়ায়। মাঝে মাঝে মৃদু গুঞ্জন। রতনের আস্তে মিষ্টি কথা।

রাত্রি একটু বাড়িলে পর কীর্তন আরম্ভ হইল। রতন গান গায় না ঠিকই সে চুপ করিয়া বসিয়াছিল, ইতিমধ্যে চিত্তও কখন আসিয়া এককোণে নীরবে বসিয়াছে। রাগ করিতে সে পারে না। রতন তাহাকে লক্ষ করিল কিন্তু ডাকিয়া কিছু বলিতে পারিল না। সেদিনের ব্যাপারটা মনে করিয়া আজ তাহার সত্যি দুঃখ হইতেছে।

সময়ের কাঁটার চলার বিরাম নাই। উৎসবরত মানুষেরও সেদিকে খেয়াল নাই।

বাহিরে ফুটফুটে জ্যোৎস্না। আলোর স্পর্শে বিবশ পৃথিবী। গাছপালা সব যেন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। এদিকে রাত্রি বাড়িয়া চলে। কাহারও চোখে ঘুম নাই আজ। রতন তেমনি বসিয়া আছে, চোখ দুটি যেন কী এক নেশায় নিবিড়!

তখন রাত্রির শেষ প্রহর। লোক এখন আগের মতো নাই। রতনের চোখের নিবিড়তা আরও গভীর হইয়াছে, বুক ভরিয়া নিঃশ্বাস উঠিতেছে। সে উঠিয়া দাঁড়াইল। কিন্তু এ ঘর-সে ঘর ঘুরিয়াও যাহাকে খুঁজিতেছিল তাহাকে পাইল না। ললিতা নাই। রতন তাড়াতাড়ি আঙিনায় আসিয়া দেখিল চিত্তও নাই।

সে রাগে ঠোঁট কামড়াইতে লাগিল ভাঙা জ্যোৎস্লাঙ্কিত পথের উপর দিয়া তাড়াতাড়ি নদীর খেয়াঘাটে গেল। বর্ষার বিল, নদীর সঙ্গে এক হইয়া ধু-ধু করে।

শূন্যতায় বাতাস হা হা করে।

এই শেষ রাতের পৃথিবীতে রতন অনেকক্ষণ স্তন্ধের মতো দাঁড়াইয়া চারিদিকে চাহিয়া দেখিল। দু-একটা জেলেনৌকা এদিক সেদিকে ঘুরিতেছে। তা ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ে না।

রতন ফিরিয়া আসিল। আখড়া কিছু দূরে আছে। তাহার পিছনে একটা কুকুর আসিয়া জুটিল, সেটা হয়ত প্রথম হইতেই সঙ্গে সঙ্গে আসিতেছে। রতন এই মুহূর্তে হঠাৎ উহাকে দেখিয়া ভয়ানক রাগিয়া গেল, পথ হইতে একটা ঢিল কুড়াইয়া চুড়িয়া মারিল কুকুরটার দিকে, কিন্তু লাগিল না। কুকুর পিছন দিকে দৌড় দিল।

তাহার এবার ডাক ছাড়িয়া কাঁদিতে ইচ্ছা হইল। সে আর একটা ঢিল লইয়া এবার এমন জোরে আর লক্ষ্যহীন ভাবে ছুঁড়িয়া মারিল যে কুকুরটা একবার ব্যথায় আর্তনাদ করিয়া সত্যি দৌড়াইয়া পালাইয়া গেল।

রতন তবু নিঃসন্দেহ হইবার জন্য কতোক্ষণ সেখানে দাঁড়াইয়া লক্ষ করিল, কুকুরটা আবার আসে কি না। আসিল না। সে কতকটা নিশ্চিত হইয়া আগের জায়গায় গিয়া বসিল। এবং তখনও যে বাকি লোক অবশিষ্ট ছিল, তাহারা, বিনোদিনী ও আরও কয়েকটা মেয়ে অত্যন্ত বিস্ময়ে দেখিল : সুরে সুর মিলাইয়া রতন আজ গান গাহিতেছে।

ব্যাপারটা আশাতীত। আর সকলে গান থামাইয়া দিল। বিনোদিনী ঘর হইতে তাড়াতাড়ি একতারাটি আনিয়া রতনের হাতে দিল। সে সত্যই ভারী সুন্দর গান আরম্ভ করিল। বিনোদিনীর আজ খুশির অন্ত নাই; কারণ সে জানে, ললিতা চলিয়া গিয়াছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *