রাতের অতিথি

রাতের অতিথি

সেকালে যখন ট্রেন ছিল না, বাস ছিল না, তখন লোকে প্রাণের মায়া ত্যাগ করেই দলবদ্ধ হয়ে পায়ে হেঁটে দূর দেশে যাত্রা করত। পথে চোর ডাকাতের নির্যাতনও ভোগ করত অনেকে। কেউ কেউ প্রাণ হারাত। তাই লোকে যতটা সম্ভব সাবধানতা অবলম্বন করেই পথ চলত। এইরকম একটি দল চলেছে তীর্থযাত্রায়। উদ্দেশ্য, কাশীতে বিশ্বনাথ দর্শন করে মথুরা হয়ে বৃন্দাবন যাবে।

এই দলটিতে গোলক নামে এক তরুণ ছিল। তার বাড়ি ছিল বর্ধমান জেলার মেমারি গ্রামে। সে অবশ্য সেখানে যাবে না। তার গন্তব্যস্থল হল গয়া। গয়ায় গিয়ে গদাধরের পাদপদ্মে পিতৃপুরুষের উদ্দেশে পিণ্ডদান করে ফিরে আসবে সে।

এই দলের সঙ্গে যেতে যেতে গোলক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ল। সঙ্গের লোকেরা ওকে অসুস্থ অবস্থাতেই ফেলে রেখে চলে গেল। যাওয়ার আগে বলে গেল, আমরা পাশের গ্রামে তোমার জন্য কাল সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করব। আশা করি এর মধ্যে তুমি আমাদের ধরে ফেলবে। গোলক “আচ্ছা” বলে একটি গাছতলায় গাছের গুঁড়িতে ঠেস দিয়ে শুয়ে পড়ল। ওর অসুস্থতার কারণ অবশ্য অন্য কিছুই নয়, শুধু পথশ্রমে এবং রোদে ঘুরে ভীষণ গা-মাথা ঘুরছিল । চোখে-মুখে জাল পড়ে আসছিল। দলটির সঙ্গে পায়ে হেঁটে এগোনোর মতো সমস্ত শক্তিই হারিয়ে ফেলেছিল সে।

যাই হোক, ক্লান্ত অবসন্ন দেহে গাছতলায় শুয়ে পড়তেই গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে পড়ল গোলক। ঘুম যখন ভাঙল তখন শরীরও সুস্থ হয়েছে। গোলক চোখ মেলে দেখল চারদিকে শুধু বনজঙ্গল আর ঘন অন্ধকার।

এই অন্ধকারেতে তো সারাটা রাত গাছতলায় পড়ে থাকা যায় না। তাই একটু নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য এগোল সে। খানিক যাওয়ার পর এক জায়গায় একটু আলো দেখতে পেয়ে আশান্বিত হল। আলো লক্ষ্য করে এগিয়ে গিয়ে সে দেখল এক বর্ধিষ্ণু চাষি পরিবারের বাড়ি সেটা। বাড়ির সামনে মাটির দাওয়ায় বসে এক বৃদ্ধ তামাক সেবন করছিলেন।

গোলক গিয়ে বিনীতভাবে তাঁকে বলল, “মহাশয়ের কাছে আমার একটি নিবেদন আছে। রাখতে পারি কি?”

বৃদ্ধ ভদ্রলোক হুঁকো থেকে মুখ তুলে বললেন, “কে আপনি?”

“আমি একজন পথিক। দলছুট হয়ে একা পড়ে গেছি। আপনি আমাকে এক রাতের জন্য আপনার বাড়িতে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন?”

বৃদ্ধ দাওয়া থেকে নেমে এসে গোলকের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, “নিশ্চয়ই পারি। কিন্তু মহাশয়ের পরিচয়?”

গোলক বলল, “দেখুন, আপনি আমার বাবার বয়সি লোক। এখন থেকে আপনি আমাকে ‘আপনি আজ্ঞে’ করবেন না। আমার পরিচয় আপনাকে দিচ্ছি। আমার নাম গোলকবিহারী  ভট্টাচার্য। বাড়ি মেমারি। যাচ্ছি গয়াধামে আমার বাবা এবং অন্যান্যদের পিণ্ডদান করতে। আজকের রাতটুকু শুধু আপনার বাড়িতে আমি থাকতে চাই।”

বৃদ্ধ খুবই খুশি হলেন গোলকের কথায়। বললেন, “নিশ্চয় ভায়া। অমন একটি সৎকর্মে যাচ্ছ যখন, তখন আমার এখানে আহার আশ্রয় কিছুরই অভাব হবে না। আজ রাত্রে এখানে থেকে কাল ভোর ভোর রওনা দিয়ো। গয়া এখান থেকে খুব বেশি দূর নয়। গয়া যাওয়ার সোজা পথটা কাল ভোরে আমি দেখিয়ে দেব। এটা সীমান্তের গ্রাম। বিহার বাংলা বর্ডার। এই বলে বৃদ্ধ গোলককে পরম সমাদরে ভেতর বাড়িতে নিয়ে গেলেন। “

বেশ অবস্থা সম্পন্ন চাষি পরিবার। ঘর গেরস্থালি জমজম করছে। মেয়েরা রান্নাঘরে রান্না করছে। ছেলেরা দাওয়ায় বসে সুর করে পদ্য পড়ছে।

বৃদ্ধ গোলককে নিজের শোওয়ার ঘরে নিয়ে গিয়ে বসালেন। তারপর শুরু করলেন নানারকমের গালগল্প। এ দেশে নীলকর সাহেবরা কীরকম অত্যাচার করেছে, ইংরেজদের এ দেশ থেকে কেন তাড়ানো হবে না, সেইসব আলোচনা করতে লাগলেন। এরই ফাঁকে এক সময় বললেন, “আমি অনেকদিন ধরে ঠিক তোমারই মতন একজনের প্রতীক্ষা করছিলাম, যে গয়ায় পিণ্ডি দিতে যাবে। গয়ায় যাওয়া কি চাট্টিখানি কথা! কত বনজঙ্গল নদীনালা পার হয়ে আসতে হবে। পাহাড় পর্বত ডিঙোতে হবে। তা ভায়া আমার একটা উপকার করবে তুমি?”

“বলুন কী উপকার? যদি আমার সাধ্যের মধ্যে হয় তা হলে নিশ্চয়ই করব।”

“তোমার সাধ্যের মধ্যেই হবে। তুমি তো গয়ায় যাচ্ছ, তা বলছিলাম কি, আমি তোমায় কয়েকটা নাম দেব। সেই নামে নামে তুমি একটি করে পিণ্ডি দিয়ে আসবে? এটা যদি তুমি করতে পারো তা হলে তোমার কাছে আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ থাকব।”

গোলক বলল, “এ আর এমন কী কথা? নিশ্চয়ই দেব। আমি যে শুধু আমার বংশের লোকেদের জন্যই পিণ্ডদান করতে যাচ্ছি তা তো নয়, আমার চেনাজানা বহু লোকের নাম গোত্র লিখে নিয়ে যাচ্ছি। এক এক করে সবাইকেই পিণ্ড দেব।”

“তোমার ভাল হোক। তবে তুমি কিন্তু আমার অনুরোধটাও রক্ষা করবার চেষ্টা কোরো। কেমন?”

“এ-কথা আপনাকে আর দ্বিতীয়বার বলতে হবে না। আপনি এখনই একটা কাগজে কার কার নামে পিণ্ডদান হবে তা লিখে দিন।”

বৃদ্ধ তো আনন্দের আতিশয্যে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে জোর গলায় বলতে লাগলেন, “শোনো শোনো, তোমাদের সবাইকেই বলছি। আমাদের বাড়িতে আজ যিনি অতিথি হয়ে এসেছেন তাঁর যেন কোনওরকম অসুবিধা না হয় এখানে। খুব ভাল করে এঁর পরিচর্যা এবং খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করো। ইনি গয়ায় যাচ্ছেন পিণ্ডি দিতে। আমাকে কথা দিয়েছেন আমি যে যে নাম লিখে দেব উনি সেই সেই নামেও একটি করে পিণ্ডি দিয়ে আসবেন।”

“তাই নাকি?”

“হ্যাঁ।”

বলার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়িসুদ্ধু লোক সবাই দরজার কাছে এসে হুমড়ি খেয়ে গোলককে দেখতে লাগল।

অতগুলো মানুষের জোড়া জোড়া চোখের সামনে খুবই অস্বস্তি হতে লাগল গোলকের। বৃদ্ধ সেটা বুঝতে পেরে ধমকধামক দিয়ে তাড়ালেন সবাইকে। বললেন, “এ কী অসভ্যতা করছ তোমরা! উনি তো কথা দিয়েছেন আমাকে। অমন হুমড়ি খেয়ে পড়বার কী আছে? যাও, যে যার কাজে যাও।” বলে সবাইকে হটিয়ে আবার খোসগল্পে মেতে উঠলেন দু’জনে।

গোলক বলল, “কই, নামগুলো লিখে দিন?”

“দেব ভায়া। দেব বলেই তো কতদিন ধরে হা পিত্যেশ করে বসে আছি। আগে খাওয়া দাওয়া হোক। তারপর মাথা ঠাণ্ডা করে সবকিছু করা যাবে।”

এমন সময় একগলা ঘোমটা দিয়ে সম্ভবত বৃদ্ধের পুত্রবধূ দোরগোড়ায় এসে বলল, “ওনার ঠাঁই হয়ে গেছে বাবা। আসতে বলুন।”

বৃদ্ধ বললেন, “হয়েছে? কোথায় দিলে, দালানে?”

“হ্যাঁ।”

বৃদ্ধ গোলককে দালানে এনে বসালেন।

সত্যিকারের ভদ্র পরিবার হলে যা হয়। সকলের সে কী সুমধুর আতিথেয়তা। ভাত ডাল ভাজা মাছের কালিয়া, কোনও কিছুই বাদ নেই। এর ওপর একজন বড় একটি বগি থালায় মস্ত একটি মাছের মুড়ো এনে পাতের কাছে রাখল।

মুড়োর বহর দেখে গোলকের চোখ কপালে উঠে গেল।

বৃদ্ধ বললেন, “এ আমার পুকুরের মাছ ভায়া, আমার বড় ছেলে ধরেছে।” গোলক বলল, “কিন্তু এতসব আয়োজন আমি খেতে পারব কেন?”

“খুব পারবে। বেশ ভাল করে পেটভরে খাও। কবে বাড়ি থেকে বেরিয়েছ! কবে পৌঁছবে তার ঠিক কি?”

গোলক মাথা হেঁট করে খেয়ে যেতে লাগল।

বৃদ্ধ সেই অবসরে কাগজ কলম নিয়ে বসলেন। অনেক ভেবেচিন্তে একটা নামের তালিকাও তৈরি করে ফেললেন।

তারপর খাওয়াদাওয়ার পর গোলক যখন বিছানায় শুতে এল, বৃদ্ধ তখন তালিকাটি দেখালেন গোলককে। মোট বারোজনের নাম আছে তাতে। এর মধ্যে একটি নাম কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ি। বৃদ্ধ বললেন, “ তুমি তো পিণ্ডি দেবে, তবে ভায়া হুঁশ রেখো এই নামটি যেন কোনওরকমে বাদ না পড়ে। কেমন?”

গোলক বলল, “না না। বাদ পড়বে কেন? কোনও নামই বাদ পড়বে না।” কাগজটি যথাস্থানে রেখে গোলক শুয়ে পড়ল। বৃদ্ধও একপাশে শুলেন।

মাটির ঘর। খড়ের চালা। সারাদিনের হাঁটার পরিশ্রমে ক্লান্ত গোলক পরিতৃপ্ত আহারের ফলে শোওয়ামাত্রই ঘুমিয়ে পড়ল।

ঘুম ভাঙল বৃদ্ধের ডাকে।

তখন শেষ রাত।

বৃদ্ধ ডাকলেন, “ভায়া! ভায়া হে। এবার উঠে পড়ো। রাত শেষ হয়ে আসছে। অনেক দূরের পথ যেতে হবে তোমাকে।”

গোলক উঠে পড়ল।

তারপর মুখহাত ধুয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি হল।

বৃদ্ধ বললেন, “তা হলে ভায়া, যা বললাম, মনে আছে তো? এই নামটা যেন কোনও রকমে বাদ না পড়ে। তবে তোমাকে দিয়েও আমি এমনি কাজ করাব না। তুমি পিণ্ডি দিয়ে ফিরে এলে তোমাকে আমি যা দেব তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। কিন্তু ভায়া একটি  কথা, ওই কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ি যেন বাদ না যায়।”

গোলক বলল, “আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞেস করব আপনাকে?”

“করো।”

“আমি তো আপনাকে বারবার বলছি কোনও নামই বাদ পড়বে না। তা সত্ত্বেও আপনি বিশেষভাবে ওই নামটির ওপরই জোর দিচ্ছেন কেন?”

বৃদ্ধ একটু চুপ করে থেকে বললেন, “ওটা আমার নাম।”

গোলকের চোখ তখন কপালে উঠে গেছে, “তার মানে?”

“তা হলে তোমাকে সত্যি কথাটাই খুলে বলি। এই যে তুমি এখানে এসে যাদের দেখলে এরা সবাই আমার পরিজন। কিন্তু এরা সবাই মৃত। এমনকী আমিও। কলেরার মড়কে সেবার গ্রাম উজাড় হয়ে যাওয়ায় আমরা সবাই মরে ভূত হয়ে গেছি, কাজেই তোমাকে আমার একান্ত অনুরোধ তুমি গদাধরের পাদপদ্মে আমাদের নামে একটা করে পিণ্ডি দিয়ে এসো। তা হলে আমরা সবাই উদ্ধার হয়ে যাব।”

গোলক ভয়ে ভয়ে বলল, “আমি তা হলে রওনা হই এবার?”

“হ্যাঁ। চলো তোমাকে একটা সোজা রাস্তা দেখিয়ে দিই।” এই বলে বৃদ্ধ বাড়ির বাইরে নিয়ে এলেন গোলককে, এসে বললেন, “আর হ্যাঁ। ওই যে ওখানে বেলগাছটা দেখছ, ওই বেলগাছের নীচে আমাদের পিতৃপুরুষের দশ ঘড়া সোনার মোহর পোঁতা আছে। বাড়ি যাওয়ার সময় ওই মোহরগুলো তুমি নিয়ে যেয়ো। তবে একটা কথা। যদি দেখো এই বেলগাছটা শেকড়সুদ্ধু উপড়ে পড়েছে তবেই জানবে আমরা উদ্ধার হয়েছি। এবং ওই মোহরে তুমি হাত দেবে। নচেৎ যদি দিনমানে আসো আমার জন্য সন্ধে পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। কেমন?”

গোলক বলল, “আচ্ছা।” বলে বৃদ্ধের নির্দেশিত পথে রওনা হল।

বৃদ্ধ বললেন, “এমনিতে গয়া এখান থেকে সাতদিনের পথ। তবে আমার প্রভাবে তুমি এই পথে গেলে কাল সকালেই পৌঁছে যাবে।”

গোলক সেই পথেই অগ্রসর হল।

যথানিয়মে গয়ায় গিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে সকলকেই পিণ্ডদান করল গোলক। বিশেষ করে বৃদ্ধের অনুরোধে তাঁর পিণ্ডটাই ভাল করে দিল। তারপর মোহরের লোভে আবার এসে উপস্থিত হল সেই স্থানে।

তখন ভর্তি দুপুরবেলা।

রাতের অন্ধকারে বৃদ্ধের যে বাড়িটি সে দেখেছিল সেই বাড়িটি এখন দেখল ধ্বংসস্তূপ হয়ে পড়ে আছে।

কিন্তু এ কী! বেলগাছ ওপড়ায়নি কেন? তা হলে কি ওরা উদ্ধার হয়নি? যাই হোক, বৃদ্ধের কথামতো গোলক সন্ধে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে লাগল।

সন্ধের পরই বৃদ্ধের আবছা শরীর ফুটে উঠল সেই ভাঙা বাড়ির ভেতর থেকে। বৃদ্ধ বেরিয়ে এসে বললেন, “তোমাকে ধন্যবাদ ভায়া। আমার বংশের সবাই উদ্ধার হয়ে গেছে, একমাত্র আমি ছাড়া।”

গোলক বলল, “কেন? আপনার পিণ্ড তো আমি বেশ যত্ন করে খুব ভালভাবে দিয়েছি।” “তা দিয়েছ। তবে কি জানো, আমি অত্যন্ত খুঁতখুঁতে লোক। আমার পিণ্ডিটার ওপর একটা চুল পড়েছিল। তাই আমি সেটা খেতে পারিনি। তোমাকে আমার জন্য আর একবার কষ্ট করে যেতে হবে লক্ষ্মী ভায়া আমার।”

গোলক বলল, “বেশ, যাব।”

বৃদ্ধ বললেন, “তা হলে আর দেরি না করে তুমি এখনই চলে যাও। সোজা পথটা তোমাকে আমি বাতলে দিচ্ছি।”

বৃদ্ধের নির্দেশমতো পথ ধরে সেই রাত্রেই আবার গয়ায় ফিরে এল গোলক। এবং রাতটা ধর্মশালায় কাটিয়ে পরদিন সকালে আবার বেশ ভাল করে পিণ্ডি দিল বৃদ্ধের নামে।

তারপর আবার ফিরে এল সেই গ্রামে।

কিন্তু এ কী! বেলগাছ তো ওপড়ায়নি। যেমনকার গাছ তেমনই আছে।

গোলকের মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। তবু সে সন্ধে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে লাগল বৃদ্ধের বাড়িতে।

সন্ধে উত্তীর্ণ হতেই বৃদ্ধের আবির্ভাব হল। একটু যেন কুণ্ঠার সঙ্গেই বৃদ্ধ বললেন, “না ভায়া। আমি আর উদ্ধার হলাম না।”

‘কেন? আমার কি আবার ত্রুটি হল?”

“না। এবারে হল কি, অন্যান্য কিছু ভূত যারা আমার বন্ধুবান্ধবের মতো এবং স্থানান্তরে ছিল, তারা কীভাবে যেন খবর পেয়ে এসে হাজির হল আমার কাছে। তারা কিছুতেই আমাকে ছাড়ল না। সবাই এসে হাতেপায়ে ধরতে লাগল। বলল, আমি উদ্ধার হয়ে গেলে ওরা একেবারে অসহায় হয়ে পড়বে। তাই ওদের মুখ চেয়ে তুমি যখন পিণ্ডি দিচ্ছিলে আমি তখন মুখে বটপাতা চাপা দিয়ে বসে ছিলাম।”

“যাঃ। তা হলে?”

“তা হলে আর কি হবে? আমি যেমনকার তেমনই রইলাম। তবে হ্যাঁ, তোমার সঙ্গে বেইমানি করব না। ওই বেলগাছের গোড়ায় দশ ঘড়া মোহর পোঁতা আছে। ওসবই তুমি নিয়ে যাও।”

“তা নয় হয় নেব। কিন্তু দশ ঘড়া মোহর আমি বইব কী করে?”

“সে ভাবনা আমার।” বলেই বৃদ্ধ তিনবার হাতে তালি দিলেন, তালি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিচ্ছিরি চেহারার কিছু ভূত এসে হাজির হল সেখানে।

বৃদ্ধ বললেন, “ওই বেলগাছের নীচে দশ ঘড়া মোহর আছে, বার করো।”

ভূতের তাই করল।

“ওগুলো নিয়ে তোমাদের বর্ধমান জেলার মেমারি গ্রামে যেতে হবে।” “ওঁর বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে। এই তো?”

“হ্যাঁ।”

“যথা আজ্ঞা। উনিও তা হলে আমাদের সঙ্গেই আসুন না কেন?”

বৃদ্ধ বললেন, “খুবই ভাল হয় তা হলে। তবে একটা কথা, উনি কিন্তু আমার অতিথি এবং আমার বিশেষ উপকার করেছেন। ওঁর যেন কোনওরকম অসুবিধে না হয়। সেদিকে কিন্তু নজর রেখো।”

ভূতেরা বলল, “সে আমরা জানি। ও বিষয়ে কিছু বলে দিতে হবে না আপনাকে। ওঁকে আমরা রাজার মর্যাদায় নিয়ে যাব।

বৃদ্ধের কথামতো ভূতেদের সাহায্যে গোলক দশ ঘড়া মোহর নিয়ে ঘরে ফিরল। সে এবং তার বাড়ির লোকেরা খুব চাপা বলে মোহরের কথা কেউ জানতে পারল না। অল্পদিনের মধ্যেই গোলক মস্ত বড়লোক হয়ে উঠল।
 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *