রাজা শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর
হরকুমার ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র শৌরীন্দ্রমোহনের জন্ম ১৮৪০এ। ন’বছর বয়সে তাঁকে হিন্দু কলেজে ভর্তি করা হয়। ন’বছর তিনি ঐ কলেজে পড়তে পেয়েছিলেন; মাথার অসুখের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঐ সময় তাঁকে কলেজ ছাড়তে হয়। বাল্যকাল থেকেই লেখার দিকে তাঁর ঝোঁক ছিল, লেখার জন্য পরিশ্রমও করতেন অক্লান্তভাবে। ‘ভূগোল ও ইতিহাস ঘটিত বৃত্তান্ত’ বইখানি তিনি লেখেন চৌদ্দ বছর বয়সে– এটি প্রকাশিত হয় ১৮৫৭তে। পরের বছর তাঁর মৌলিক নাটক ‘মুক্তাবলী’ প্রকাশিত হয়– তখন তাঁর বয়স পনের।
অল্প বয়স থেকেই তিনি পশু ও পাখি খুব ভালবাসতেন, এই সম্পর্কিত তাঁর সংগ্রহও মন্দ ছিল না। এইগুলি পালন করতে করতে প্রকৃতি-বিজ্ঞানে তিনি এমন বাস্তব জ্ঞান অর্জন করেন যে, শুধু ডাক শুনেই পাখিটি কোন প্রজাতির তা বলে দিতে পারতেন।
ষোল বছর বয়সে তিনি সঙ্গীত-শিক্ষা আরম্ভ করেন। সঙ্গীতে ছিল তাঁর স্বাভাবিক প্রতিভা; কিন্তু সঙ্গীতে তিনি প্রথম উৎসাহ ও শিক্ষা পান কাছারীর একজন কর্মচারীর কাছে। পরবর্তীকালে মার্গ-সঙ্গীতে তিনি শিক্ষালাভ করেন বিখ্যাত বীণকর ওস্তাদ লছমীপ্রসাদ মিশির এবং অধ্যাপক ক্ষেত্রমোহন গোস্বামীর কাছে। প্রায় ঐ সময় তিনি কালিদাসের মালবিকাগ্নিমিত্র নাটকখানি বাংলায় অনুবাদ করেন।
তিনি পিয়ানোতে ইংরেজি সঙ্গীতের শিক্ষালাভ করেন একজন জার্মান অধ্যাপকের কাছে। পরে, সময় সময় ইউরোপ থেকে কৃতবিদ্য সঙ্গীত বিশারদ এসে পিয়ানোতে তাঁকে উচ্চতর তালিম দেন। সঙ্গীত তাঁর কাছে শখের জিনিস নয়, এ এখন তাঁর নেশা। এ বিদ্যা তিনি আয়ত্ত করতে চান সুশৃঙ্খলভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে; তার জন্য যে যা দাম চেয়েছে সেই দামেই তিনি বাংলা, সংস্কৃত ও ইংরেজি পুঁথি ও পুস্তক ক্রয় করেছেন। এই সকল সূত্র থেকে তিনি তাঁর (অধ্যাপক ক্ষেত্রমোহন গোস্বামীর সাহচর্যে ) বিখ্যাত ‘সঙ্গীত সার’ গ্রন্থ রচনা করেন। তখন প্রকৃত হিন্দু সঙ্গীত সংকীর্ণ গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে, জনসাধারণ এর থেকে অনেক দূরে সরে গেছে দেখে তিনি এই সময় স্থির করেন যে হিন্দু সঙ্গীতকে জনপ্রিয় করে তুলবেন এবং এদিকে জনগণের রুচি গড়ে তুলবেন। অর্থ, গুণ ও সামগ্রীর অভাব না থাকায় তিনি নিজের উদ্দেশ্য সফল করতে ১৮৭০-এর ৩ আগস্ট কলকাতার চিৎপুর রোডে স্থাপন করলেন ‘বেঙ্গল মিউজিক স্কুল’; কিঞ্চিত বেতনের বিনিময়ে এখানে হিন্দু সঙ্গীত শেখাবার ব্যবস্থা হল। বিদ্যালয়টির প্রশংসনীয় অগ্রগতি হয়েছে; এর সাফল্যে ইউরোপীয় ও ভারতীয় সমাজ মুগ্ধ। এই বিদ্যালয়ের একটি শাখা কলুটোলায় খোলা হয়েছে, দুটিই শৌরীন্দ্রমোহনের নেতৃত্বে ও ব্যয়ে সাফল্যের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। দেশবাসীর মধ্যে হিন্দু সঙ্গীত প্রচার ও প্রসারে সন্তুষ্ট না হয়ে, সরকারী বেসরকারী বিদ্যালয়ে তিনি নিজ ব্যয়ে সঙ্গীত শিক্ষা ও সঙ্গীত শিক্ষা বিষয়ক পুস্তক সরবরাহ করছেন; এবং যে-সকল সঙ্গীতশিল্পী হিন্দু সঙ্গীতের ওপর পুস্তক লিখছেন ও প্রকাশ করছেন, তাঁদের তিনি উৎসাহ তো দেনই, উদারভাবে সাহায্য করেন।
১৮৭৫-এ শৌরীন্দ্রমোহন ফিলাডেলফিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব মিউজিক উপাধি লাভ করেন; পরে, বাংলা সরকার এই উপাধি লাভ সমর্থন করেন। একথা ভুললে চলবে না যে, দেশীয় ঐকতান বাদনে তিনি শৃঙ্খলা ও সামঞ্জস্য প্রবর্তন করেন; এই উদ্দেশ্যে নিজস্ব কিছু রচনা/স্বরলিপিও তিনি দেশীয় সঙ্গীতের উপযোগী করে তৈরি করেন। তিনিই প্রথম দেশীয় প্রমোদ জীবন্ত ট্যাবলো ও শারেড় প্রবর্তন করেন। সঙ্গীতের ক্ষেত্রে তাঁর এই শ্রম এবং বিস্তৃত হিন্দু সঙ্গীতশাস্ত্রের পুনরুজ্জীবনে তাঁর প্রচেষ্টার জন্য তিনি সারা বিশ্বের প্রশংসা অর্জন করেছেন। তিনি যে-সকল খেতাব, উপাধি, পদবী, সম্মান, প্রশংসাপত্র, পদক ও স্বীকৃতি পেয়েছেন তার একটি তালিকা এখানে দেওয়া হল :
ভারতবর্ষ : কমপ্যানিয়ন অব দি অর্ডার অব ইন্ডিয়ান এম্পায়ার; রাজা খেতাব আর তার সঙ্গে একটি সরপেচ্, একখানি তলোয়ার, সোনার একটি ঘড়ি; বাংলা সঙ্গীত বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে সরকারের প্রদত্ত প্রশংসাপত্র, লর্ড লিটন তিনবার তাঁর লিখিত পুস্তক স্বাক্ষরসহ উপহার দেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো, অনারারী ম্যাজিস্ট্রেট ও কলকাতার পুলিস ম্যাজিস্ট্রেট, জাস্টিস অব দি পীস, নেপালের গোর্খা স্টার (স্বর্ণপদক); উচ্চ প্রশংসা জানিয়ে লর্ড লিটনের একখানি পত্র; লাহোর মিউজিয়ামের বেনিফ্যাকটর; বাংলা ও বোম্বাই এশিয়াটিক সোসাইটির স্বীকৃতিপত্র।
আমেরিকা : ডিগ্রী অব ডক্টর অব মিউজিক (এপ্রিল, ১৮৭৫)। এটিই প্রথম বিদেশি ডিগ্রী– বাংলা ও ভারত সরকারদ্বয় কর্তৃক সমর্থিত। মেক্সিকোর রাষ্ট্রপতির স্বীকৃতিপত্র; রিপাবলিক অব ইউনাইটেড স্টেটস-এর প্রেসিডেন্ট মিঃ আর বি হেয়েসের লিখিত ও স্বাক্ষরিত উচ্চ প্রশংসাপত্রসূচক স্বীকৃতিপত্র। ব্রেজিলের মহামান্য সম্রাট কর্তৃক পুস্তক প্রাপ্তির স্বীকৃতিপত্র।
ইংল্যান্ড : তাঁর প্রেরিত পুস্তকের প্রাপ্তিপত্র পাঠিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের মহামান্যা মহারাণী, প্রিন্স অব ওয়েলস লিওপোল্ড এবং কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরী। রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য, রয়্যাল সোসাইটি অব লিটারেচারের ফেলো এবং লন্ডনস্থ সোসাইটি অব সায়েন্স, লেটার্স অ্যান্ড আর্টের সাম্মানিক পৃষ্ঠপোষক।
ফ্রান্স : অফিসার অ্যাকাডেমি, প্যারিস; লরেল লীসের সিলভার ডেকোরেশন; অফিসার, দ্য লিস্টাকশ্যা পাব্লিক ফ্রান্স (সঙ্গে পামলীসের গোলডেন ডেকোরেশন); অ্যাকাডেমিক মনট্রিলের প্রথম শ্রেণীর সদস্য; জনশিক্ষা বিভাগের মন্ত্রী এবং এম গার্সা দ্য তাসির কাছ থেকে পুস্তকের প্রাপ্তি স্বীকার; সদস্য, অ্যাকাডেমি দ্য এয়ারোস্টশো মেটেওরোলজিক্, প্যারি।
পর্তুগাল : রয়্যাল পর্তুগীজ মিলিটারি অর্ডার অব ক্রাইস্টের সেভালিয়ে; লিসবন জাতীয় গ্রন্থাগার থেকে পুস্তকের প্রাপ্তি স্বীকার।
সার্ডিনিয়া : সাসারিস্থ রাজকীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাথেনিয়ামের পৃষ্ঠপোষক।
স্পেন : মহামান্য রাজার নিকট হতে প্রাপ্তিস্বীকার।
সিসিলি : পালের্মো রয়্যাল অ্যাকাডেমির সোসিও অনোরেরিও, ক্যাটানিয়ার সিরকোলা ভিত্তোরিও এমানুয়েল ফিলানত্রোপিকে লেত্তেরারিও সেডে (স্বর্ণপদক সহ); ক্যাটানিয়া সিরকোলা লেওরারিও অ্যারিস্ডিকো মিউজিকেল্ বেলিনি’র সোসিও প্রোতেত্তোরো (স্বর্ণপদক সহ)।
ইতালি : পরলোকগত মহামান্য রাজা ভিকটর এমানুয়েলের স্বাক্ষরিত একখানি বড় আকারের আলোকচিত্র। পোপ ৯ম পিয়াস কর্তৃক উপহৃত একটি পদক। মহামান্য রাজা হামবার্ট কর্তৃক উপহৃত চমৎকার একটি মোজাইক টেবেল। পূজ্যপাদ পোপ ত্রয়োদশ লেও কর্তৃক উপহৃত মোজাইকে নির্মিত সেন্ট পিটার্সের একটি ব্যাসিলিকা, রোমস্থ সেন্ট সিসিলিয়ার রয়্যাল অ্যাকাডেমির সোসিও ওনোরারিও। সোসাইটা দিদাসক্যালিকা ইতালিয়ানা’র সোসিও ওনোরারিও। ফ্লোরেন্স-এর রয়্যাল মিউজিক্যাল ইনস্টিটিউটের অ্যাকাডেমিকো করিসপন্দেন্তে। নেপলসের অ্যাকাডেমি অব পিথাগোরিকার সোসিও কো-অপারেতর (রৌপ্যপদকসহ)। আরবিনোস্থ রাফায়েলো রয়্যাল অ্যাকাডেমির সোসিও করিসপনদেন্তে ( স্বর্ণপদকসহ)। বোলানোর ফিলহারমনিক অ্যাকাডেমির সোসিও ওনোরারিও। পার্মার রয়্যাল ইউনিভার্সিটির বেনিমেরিতো; অধ্যাপক জি বি ভেচ্চিওত্তি কর্তৃক শৌরীন্দ্রমোহনের পুস্তকসমূহের বিস্তৃত পর্যালোচনা। ফ্লোরেন্সের ওরিয়েন্ট্যাল অ্যাকাঁদেমির সাধারণ সদস্য। তুরিন রয়্যাল অ্যাকাডেমির করেসপনডিং সদস্য। অ্যাকাডেমিয়া পিত্তাগোরিকা ওভেরো স্কুল ইতালিকা থেকে ডত্তোরে দি মিউজিকা এ দিলেত্তারে পদবী ও প্রেসিদেন্তে ওনোরোরিও (স্বর্ণপদকসহ)। বিবলিওতেকা পপুলারি সার্কোল্যান্ডি ভিনসেনসো মন্টি ডি আলফনসিনে’র সোসিও ওনোরারিও (স্বর্ণপদকসহ)। লেগহর্ণের ইনস্টিটিউটো আমবার্তো প্রাইমো’র প্রেসিদেন্তে দ্য অনোরে উফসিয়ালে দেলিগেটো (স্বর্ণক্রস সহ)। ফের্মো’র আতেনসো আলেসসান্ত্রো মনজিনি ইনস্টিটিউটে’র সোসিও ওনোরারিও। নেপলসের বেনিমারি’তো সারকোলো একাডেমিকো লা ফ্লোরা ইতালিকা’র সোসিও শুনোরারিও। সালেরনো’র অ্যাসোসিয়েজিওনে গিওভ্যানিলে সালারনিতানা’র সোসিও ফনডাতোরে। ভিসেঞ্জা’র ভিত্তোরিও এমানুয়েলে সারকোলে এডুকেটিভে’র সোসিও ওনোরারিও (স্বর্ণপদকসহ)। অ্যাকাদিমেয়া লেত্তারারিয়া লাজজে’রো পাপি দ্য লুচ্চ’র সাম্মানিক সদস্য। উক্ত স্থানের অপেরা সোসাইটির সাম্মানিক সদস্য। রোমের রিয়ালে সোসাইটা ডিডাসক্যালিকা ইতালিনা থেকে স্বর্ণপদক।
সুইজারল্যান্ড : জেনেভা ইন্সটিটিউটের করেসপনডিং সদস্য। বার্নের অ্যাকাডেমি থেকে প্রাপ্তিস্বীকার। জেনেভার লুনিয়ন ভ্যালডোটেইনে’র সাম্মানিক সভাপতি ৷
অস্ট্রিয়া : কমানডার অব দি মোস্ট এজলটেড অর্ডার অব ফ্রান্সিস জোসেফ। অস্ট্রিয়ার আর্চডিউক চার্লস্ লুই কর্তৃক প্রাপ্তিস্বীকার। ভিয়েনা ওরিয়েন্টাল মিউজিয়ামের করেস্পন্ডিং সদস্য।
হাঙ্গেরি : অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের প্রাপ্তিস্বীকার।
স্যাক্সনি : নাইট কম্যান্ডার অব দি ফার্স্ট ক্লাস অব দি অর্ডার অব আলবার্ট। লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্তিস্বীকার।
জার্মানি : লন্ডনস্থ জার্মানির রাজকীয় রাষ্ট্রদূত কাউন্ট মুনাস্টারের মারফত মহামান্য (জার্মান) সম্রাটের স্বাক্ষরযুক্ত একখানি আলোকচিত্র। স্ট্রাসবুর্গের ইম্পিরিয়্যাল ইউনিভার্সিটি, ন্যাশন্যাল লাইব্রেরি এবং বার্লিনের রয়্যাল লাইব্রেরি কর্তৃক প্রাপ্তিস্বীকার। ডাঃ ওয়েবরের কাছ থেকে পত্র, আলোকচিত্র এবং শৌরীন্দ্রমোহনের পুস্তকের বিস্তৃত সমালোচনা।
বেলজিয়াম : নাইট কমান্ডার অব দি অর্ডার অব লিওপোল্ড। ব্যাসেসের রয়্যাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স, টোর্স অ্যান্ড ফাইন আর্টসের অ্যাসোসিয়েট মেম্বার, তৎসহ অ্যাকাডেমির সভাপতি এম গেভর্ট ও প্রাক্তন মন্ত্রী পি ডি ডেকারের অভিনন্দনপত্র।
হল্যান্ড : মহামান্য রাজার স্বাক্ষরিত একখানি আলোকচিত্র ও একটি পদক। রয়্যাল ফিলোলজিক্যাল অ্যান্ড এথনোগ্রাফিক্যাল ইনস্টিটিউশন অব নেদারল্যান্ডস, হেগ্-এর বৈদেশিক সদস্য। সোসাইটি অব আমসটারডামের করেস্পন্ডিং মেম্বার। ইউট্রেক্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও হারলেম সোসাইটি অব সায়েন্সের তরফ থেকে প্রাপ্তিস্বীকার পত্র। জাভা দ্বীপের ‘বোরো বুদুর’ মন্দিরের বর্ণনা ও অঙ্কিত চিত্রের একখানি পুস্তক ওলন্দাজ সরকারের তরফ থেকে উপহার।
ডেনমার্ক : রাজা এবং রয়্যাল সোসাইটি অব অ্যান্টিকোয়ারিয়াস্-এর পক্ষ থেকে প্রাপ্তি স্বীকার পত্র।
নরওয়ে : ক্রিস্টিয়ানাস্থিত রয়্যাল ইউনিভার্সিটির প্রাপ্তিস্বীকার পত্র।
সুইডেন : স্টকহোম রয়্যাল মিউজিক্যাল আকাঁদেমির সাম্মানিক সদস্য (স্বর্ণপদক সহ)।
রাশিয়া : সেন্ট পিটার্সবার্গ ইম্পিরিয়্যাল লাইব্রেরি ও দোরপাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাপ্তি স্বীকার পত্র।
গ্রীস : মাননীয় রাজার স্বাক্ষরিত আলোকচিত্র। এথেন্সের আর্কিওলজিক্যাল সোসাইটির সাম্মানিক সদস্য।
তুরস্ক : তুরস্কের মহামান্য সুলতানের তরফ থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির ইম্পিরিয়াল অর্ডার অব দি মেজিদী।
মিশর : সেভেলিয়ে অব দি ইম্পিরিয়াল অর্ডার অব মেজেদী।
আফ্রিকা : কেপ অব গুড হোপ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্তিস্বীকারপত্র।
সিংহল : সিংহল রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির সাম্মানিক সদস্য।
ব্রহ্মদেশ : মাননীয় রাজা কর্তৃক বাদ্যযন্ত্র উপহার
শ্যামদেশ (সিয়াম) : মাননীয় রাজা কর্তৃক ডেকোরেশন অব দি অর্ডার অব বাসবমালা।
চীনদেশ : রয়াল এশিয়াটিক সোসাইটির উত্তর চীন শাখা কর্তৃক প্রাপ্তি স্বীকারপত্র। জাভা : বাটাভিয়ার সোসাইটির অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স-এর করেসপন্ডিং সদস্য (উক্ত সমিতির শতবার্ষিকী উপলক্ষে নির্মিত পদকসহ)।
অস্ট্রেলিয়া : মেলবোর্ন ফিলহারমোনিক সোসাইটির সাম্মানিক সদস্য।
জাপান : মহামান্য সম্রাট কর্তৃক বাদ্যযন্ত্র উপহার। টোকিও ডিয়াগাকুস্থিত
ডিপার্টমেন্ট অব ল’, সায়েন্স অ্যান্ড লিটারেচার কর্তৃক প্রাপ্তি স্বীকারপত্র।
মন্ট্রিল, জেরুজালেম, রোড্স, মাল্টা প্রভৃতি স্থান থেকে প্রেরিত বহু সম্মান।
তাছাড়া–
লিভোর্নো থেকে ক্যাবালিয়ে দোনোরে। স্পেনের নাইট অব অনার অব দি অর্ডার ক্যাবাললেরোস অসপিতালারোস।
প্রথম শ্রেণির সেলেশ্চিয়্যাল ইম্পিরিয়াল অর্ডার অব দি প্রেশাস স্টার অব চায়না (তৎসহ উপহার হিসেবে এনামেল করা পাত্র)।
সাইপ্রাসের–জেরুজালেমের– আর্মেনিয়ার মহামান্যা প্রিন্সেস রয়্যাল মেয়ারি অব লুসিগানের পক্ষে উপহৃত নাইট অব অনার।
সেভিয়ার্স অব ম্যারিটাইম আল্পসের নাইট অব অনার।
লেগহর্ন থেকে হাই প্রোটেক্টর অব দি অর্ডার অব দি হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাকাডেমি অব দি হোয়াইট ক্রস।
লেগহর্নের হামবার্ট (প্রথম) ইনস্টিটিউটের হাই প্রোটেক্টর গ্র্যান্ড অফিসিয়াল ডেলিগেট– সাম্মানিক ক্রস সহ।
বুয়েনস আয়ার্সের ক্যাভেলিয়ার অব অনার অব দি অ্যাকাডেমিক অর্ডার।
ন্যাপোলি থেকে অনারারী প্রেসিডেন্ট অব দি প্রোপ্যাগান্ডা দ্য সায়েঞ্জা পোপোলেয়ার– স্বর্ণপদক সহ।
পারস্যের মহামান্য শাহ্-এ-শাহ্ দান করেন ইম্পিরিয়াল হাই অর্ডার অব দি লায়ন অ্যান্ড সান।
লন্ডনের ট্রিনিটি কলেজের ফেলো। পারস্যের মহামান্য শাহ্-এন-শাহ্ তাঁকে ‘নবাব’ খেতাবে ভূষিত করেন।
বোম্বাইয়ের থিওজফিস্ট আগস্ট, ১৮৮০র সংখ্যায় অত্যন্ত যুক্তিযুক্তভাবে লেখেন : “রাজা শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর এখন সর্বাধিক সম্মানে ভূষিত মানুষ। অবশ্য, এ বষয়ে প্রিন্স বিসমার্কের সমকক্ষ হতে হলে তাঁকে আরও অনেক অনেক পদক ও আভূষণ পেতে হবে; কারণ প্রিন্স যত খেতাব পদক ও আভূষণ পেয়েছিলেন সে সব বুকে ঝোলাতে হলে তাঁর বুকের বিস্তার একুশ ফিট হওয়ার দরকার ছিল। তাঁর এই সব পদকের সংখ্যা ছিল ৪৮২।”
১৮৮০র ১ জানুয়ারি শৌরীন্দ্রমোহনকে অর্ডার অব দি ইন্ডিয়ান এম্পায়ার উপাধিতে এবং ওই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি ‘রাজা’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। এই দুই উপলক্ষেই লর্ড লিটন তাঁকে টেলিগ্রাম ও চিঠি মারফত অভিনন্দন জানান; তাঁকে সরপেচ, তরবারি ও একটি সোনার ঘড়ি সমন্বিত খেলাৎ এবং প্রথাসিদ্ধ সনদ দেওয়া হয় ১৮৮০, ৩১ মার্চ তারিখে বেলভেডিয়ারে অনুষ্ঠিত দরবারে। ঐ অনুষ্ঠানে স্যার অ্যাশলি ইডেন তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন :
“আপনার যে সকল গবেষণা ও গুণাবলীর জন্য আপনি ইংল্যান্ড এবং ইউরোপে, তথা স্বদেশে সুপরিচিত সেগুলি গভর্নর জেনারেলের স্বীকৃতি পাওয়ায় আমি আনন্দিত হয়েছি। আপনি এমন একটি পরিবার জন্মগ্রহণ করেছেন, যার রাজভক্তি সুপরিচিত ও পরীক্ষিত; এইজন্য ব্যক্তিগত সম্মানরূপে রাজা খেতাবে আপনাকে ভূষিত করবার সুযোগ পেয়ে আমি খুশি।”
ভারত সরকার
সনদ
শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর, সি আই ই সমীপে–
“এতদ্বারা আমি আপনাকে ব্যক্তিগত সম্মান হিসেবে রাজা, খেতাবে ভূষিত করছি।”
ফোর্ট উইলিয়াম
২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৮৮০
ইন্ডিয়ান মিররের সম্পাদক ১৮৮০র ১ এপ্রিল লেখেন, ১৮৮০র ৩১ মার্চ বেলভেডিয়ারে অনুষ্ঠিত দরবারে রাজা শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর অত্যন্ত শোভনভাবে প্রাপ্ত সম্মান গ্রহণকালে নিজ জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা মাননীয় মহারাজা যতীন্দ্রমোহন ঠাকুরের চরণ স্পর্শ করে প্রণাম করেন– দাদার প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা সীমাহীন। উপস্থিত ইউরোপীয় ও ভারতীয় দর্শকবৃন্দ পুলকিত বোধ করেন এবং তাঁকে সকলে অভিনন্দন জানান। ভারতে থাকার সময় শৌরীন্দ্রমোহনের গুণ ও প্রীতিমুগ্ধ লর্ড লিটন তাঁকে অনেকগুলি স্বাক্ষরিত পত্র লেখেন। শৌরীন্দ্রমোহন লর্ড লিটনকে নিজ ও স্বীয় পূর্বপুরুষদের কয়েকখানি পুস্তক উপহার দিলে, বড়লাটবাহাদুর তাঁকে আন্তরিক ও হৃদয়স্পর্শী কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। এই পত্রে তিনি লেখেন ভারতীয় একজন ভদ্রলোকের বিস্ময়কর সাহিত্যিক প্রতিভার প্রতি তিনি আজীবন শ্রদ্ধা পোষণ করেন—- এই ভদ্রলোকের প্রতি তাঁর মর্যাদাবোধ সীমাহীন।
বিদেশ থেকে তিনি যত পদক ও নাইট প্রভৃতি খেতাবের প্রতীক আভূষণ পেয়েছিলেন, সে সব বুকে এঁটে বেলভেডিয়ারে অনুষ্ঠিত ‘রাজা’ খেতাব দানের দরবারে উপস্থিত হবার সরকারি অনুমতি তাঁকে দেওয়া হয়েছিল– ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম এই অনুমতি পেয়েছিলেন।
ফ্লোরেন্সের ওরিয়েন্টাল অ্যাকাডেমির সম্পাদক অধ্যাপক অ্যাঞ্জেলো ডি গুবারনেটিভের সম্পাদনায় প্রকাশিত সচিত্র জীবনী-কোষ গ্রন্থে জগতের তিনশত বিখ্যাত ব্যক্তির মধ্যে শৌরীন্দ্রমোহনকেও স্থান দেওয়া হয়েছে। প্যারিস থেকে এমিল আর্টান্ড কর্তৃক প্রকাশিত পেফেজ ইউনিভার্সাল ডিকশনারী-তে জগতের শ্রেষ্ঠ পঞ্চাশ জন জীবিত সুরকারের অন্যতমরূপে তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তাছাড়া সঙ্গীত বিজ্ঞানে তাঁর সহযোগিতাও প্রার্থনা করা হয়েছে। তাঁর ‘স্বরসপ্তশতী’ নামক অপূর্ব গ্রন্থখানি জগতের শ্রেষ্ঠ সুরকারদের রচনার সঙ্গে সংরক্ষিত হয়েছে।
ডিরেক্টর অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন এ ডব্লু ক্রফটের অনুরোধে ১৮৮০র অক্টোবরে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত মেলবোর্ন স্কুল সায়েন্সে প্রেরণের জন্য রাজা শৌরীন্দ্রমোহন অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং অভূতপূর্ব এক ‘ঐতিহাসিক, বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে সঙ্গীতের স্থান’ নামক একটি প্রবন্ধ প্রেরণ করেন। আশা করা যায়, এতদিনে তিনি এজন্য উপযুক্ত স্বীকৃত ও প্রশস্তি-পত্র পেয়েছেন।
ইউরোপের বহু জ্ঞানীগুণী তাঁর সম্পর্কে পুস্তিকা প্রকাশ করেছেন ও প্রখ্যাত অ্যাকাডেমিসমূহের মুখপত্রে (জার্নালে) তাঁর মহান বংশ ও কীর্তি সম্পর্কে প্রবন্ধাদি লেখা হয়েছে। কিন্তু বেলজিয়ামের মহামান্য রাজা লিওপোল্ড তাঁকে যে পত্রখানি লিখেছেন সেটাই বোধ হয় সর্বাপেক্ষা তৃপ্তিদায়ক। চিঠিটি নিচে উদ্ধৃত করা হল :
মহান রাজা শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর,
কমান্ডার অব দি রয়্যাল অর্ডার অব লিওপোল্ড,
কলিকাতা, সমীপেষু,
মাননীয় মহাশয়,
আপনি যে সহৃদয়তার সঙ্গে অতি চমৎকার উপহার আমাকে পাঠিয়েছেন তার জন্য আমার আন্তরিক ধন্যবাদ গ্রহণ করবেন; এই উপহার প্রেরণের মধ্যে দিয়ে আমার প্রতি আপনার যে সদিচ্ছা প্রকাশ পেয়েছে, তাকে আমি অত্যন্ত মূল্যবান মনে করি বলে আমি এগুলি সযত্নে সংরক্ষণ করব; তাছাড়া কলকাতায় আপনার মহান পিতৃব্যের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়, তাঁর স্মৃতিতেও আমি এগুলি সযত্নে সংরক্ষণ করব। আমি পুনরায় আপনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে মঙ্গলময় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আপনাকে এবং আপনার পরিবারবর্গকে সর্বদা সুস্বাস্থ্য ও সম্পদে রাখেন। সশ্রদ্ধ প্রীতিসহ।
ভবদীয়
স্বাঃ লিওপোল্ড
ব্রাসেসের রাজপ্রসাদ
১৮ ডিসেম্বর, ১৮৭৯
বিনা শ্রমে রাজা এই সব গুণের অধিকারী হন নি। নিচে তাঁর আজ পর্যন্ত লিখিত ও প্রকাশিত পুস্তকাদির একটি তালিকা দেওয়া হলো। তালিকাটি ভালভাবে দেখলে বোঝা যাবে, জ্ঞানরাজ্যের কত বিচিত্র দিকে এবং কত গভীরভাবে তিনি প্রবেশ করেছেন।
বাংলা–১. ভূগোল ও ইতিহাস ঘটিত বৃত্তান্ত ২. মুক্তাবলী নাটিকা (মৌলিক রচনা) ৩. মালবিকাগ্নিমিত্র নাটক (অনুবাদ) ৪. জাতীয় সঙ্গীত বিষয়ক প্রস্তাব ৫. যন্ত্রক্ষেত্র দীপিকা (সেতার বিষয়ক রচনা) ৬. মৃগজ মঞ্জরী ৭. হার্মোনিয়াম সূত্র ৮. যন্ত্র কোষ (বাদ্যযন্ত্র বিষয় রচনা) ৯. ভিক্টোরিয়া গীতিমালা (ইংল্যান্ডের ইতিহাস, ভারতীয় সুরে) ১০. ভারতীয় গীতিমালা (ভারতের ইতিহাস, ভারতীয় সুরে গেয়) ১১. ভারতীয় নাট্যরহস্য (সংস্কৃত গ্রন্থ হতে সংকলিত)।
ইংরেজি–১. হিন্দু মিউজিক ফ্রম ভেরিয়াস অথর্স (সংকলন) ২. সিক্স প্রিন্সিপাল রাগজ অব দি হিন্দুজ (লিথোগ্রাফ চিত্র সম্বলিত) ৩. এইট্ প্রিন্সিপাল রসজ অব দি হিন্দুজ (ঐ) ৪. টেন্ প্রিন্সিপাল অবতারজ অব দি হিন্দুজ (ঐ) ৫. দি বাইন্ডিং অব দি ব্রেইড (বেণীসংহার নাটকের অনুবাদ) ৬. হিন্দু মিউজিক (হিন্দু পেট্রিয়টে তাঁর ও মিঃ সি বি ক্লার্কের মধ্যে আলোচনার পুনর্মুদ্রণ) ৭. ইংলিশ ভার্সেস সেট্ টু হিন্দু মিউজি ৮. শর্ট নোটিসেস্ অব হিন্দু মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্টস (বর্ণানুক্রমিক) ৯. ফিফ্টি টিউন্স (গ্রন্থকারের স্বরলিপি সংগ্রহ) ১০. স্পেসিমেন্স অব ইন্ডিয়ান সঙস্ (সুরসহ সঙ্গীত সংগ্রহ) ১১. একতান অব ইন্ডিয়ান কন্সার্ট (ভারতীয় ঐকতান সুর সংগ্রহ) ১২. এ ফিউ লিরিক্স অব আওয়ে মেরেডিথ সেট টু ইন্ডিয়ান মিউজিক ১৩. এইট টিউন্স (গ্রন্থকারের স্বরলিপি সংগ্রহ)।
সংস্কৃত– ১. সঙ্গীত-সার-সংগ্রহ ২. মানস পূজনম্ (সুরসহ শঙ্করাচার্যের স্তোত্র) ৩. কবি রহসান (হলায়ুধের রচনা, শৌরীন্দ্রমোহন কর্তৃক সম্পাদিত)।
ইংরেজি অনুবাদসহ সংস্কৃত– ১. ভিক্টোরিয়া গীতিকা (ভারতীয় সুরসহ ইংল্যান্ডের ইতিহাস) ২. প্রিন্স পঞ্চাশৎ (ভারতীয় সুরসহ প্রিন্স অব ওয়েসের সম্মানে রচিত পঞ্চাশটি শ্লোক)।
৩. রোমকাব্য সংস্কৃত শ্লোকে সংক্ষিপ্তাকারে রোমের সমগ্র ইতিহাস — — মহামান্য সম্রাট হামবার্ট এই গ্রন্থের পুনর্মুদ্রণটি তাঁকে উৎসর্গ করবার অনুমতি দিয়েছেন। প্রস্তাবত পুনর্মুদ্রণে মূল সংস্কৃতের সঙ্গে ইতালীয় ভাষায় অনুবাদও থাকবে। ইতিমধ্যে কাব্যটির প্রশংসাসূচক আলোচনা রোমের ‘ওপিনিওন’ (২৪ জুলাই, ১৮৮০), ‘পোপোলো রোমানো’ ২৪ জুলাই, ১৮৮০) প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
হিন্দি–১. গীতাবলী — (কণ্ঠ সঙ্গীতের প্রাথমিক পুস্তক)।
হিন্দী, বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদসহ সংস্কৃত সঙ্গতি–১. মণিমালা ( দুখণ্ডে প্রকাশিত, সংস্কৃত সাহিত্য থেকে সংগৃহীত সঙ্গীত)।
রাজা শৌরীন্দ্রমোহনের মূল্যবান ও মনোজ্ঞ পুস্তকসমূহের সঙ্গে পরিচিত ব্যক্তিমাত্রেই জানেন যে, তাঁর জ্ঞান কেবলমাত্র সঙ্গীতশাস্ত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। কাব্য, কবিতা, সঙ্গতি, নাটক, ইতিহাস, ভূগোল প্রভৃতি বিষয়ে তাঁর সমান অধিকার ছিল। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে তাঁর গভীর জ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সঙ্গীতের ক্ষেত্রে তাঁর বিস্তৃত ও ব্যাপক জ্ঞান; এই জন্য কি স্বরচিত আর কি আহরিত সংস্কৃত গীতে তিনি সুললিত সুর সংযোজনে সক্ষম হয়েছেন। চিত্রশিল্পকেও তিনি অবহেলা করেন নি। তাঁর সচিত্র ‘সিক্স প্রিন্সিপাল রাগজ’, ‘এইট প্রিন্সিপাল রসজ’ এবং ‘টেন প্রিন্সিপাল অবতারস অব দি হিন্দুজ’ এর চিত্রগুলি দেখলেই বোঝা যায় এই চারুশিল্পটির প্রতি তাঁর আগ্রহ কত গভীর এবং রুচি কত উন্নত। নিজে অবশ্য তিনি কখনও এই শিল্পটির চর্চা করেন নি মণিরত্ন চেনার দিক থেকে তিনি প্রকৃত জহুরী। এ বিষয়ে তাঁর ‘মণিমালা’ গ্রন্থখানি অমূল্য।
তাঁর উৎসাহ, উদ্যম ও কর্মশক্তি সাহিত্য ও সঙ্গীতেই শেষ হয়ে যায় না। বহু বিষয়ে সাহিত্য রচনায় ব্যাপৃত থাকলেও, তিনি দাদা ও নিজের বিস্তৃত জমিদারী ও বৈষয়িক ব্যবস্থা পর্যালোচনা ও তদারকিতে আদৌ শৈথিল্য দেখাননি। সমস্ত হিসাবপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পরিচালনা ও পরীক্ষা করেন। শিল্পী সাহিত্যিকদের পক্ষে বৈষয়িক বিষয়ে এভাবে মনোনিবেশ করা সাধারণত দেখা যায় না; কিন্তু এ ক্ষেত্রেও তিনি অসাধারণ।
তাঁর দুই পুত্র–কুমার প্রমোদকুমার ঠাকুর ও কুমার প্রদ্যোৎকুমার ঠাকুর। প্রমোদকুমার বুদ্ধিমান; তাঁর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।