রাজা প্রসন্ননারায়ণ দেব বাহাদুর
ইনি মহারাজা নবকৃষ্ণ দেব, বাহাদুরের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা শ্রীনারায়ণ দেবের প্রপৌত্র।
সরকারের বৈদেশিক বিভাগীয় সচিবের দফতরের সঙ্গে যুক্ত সরকারি তোষাখানায় ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্টরূপে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। তাঁর জ্ঞাতি ভ্রাতা রাজা সীতানাথ বোস বাহাদুর উক্ত অফিসের সুপারিন্টেন্ডেন্ট পদ ত্যাগ করলে, তাঁকে তাঁর কর্মদক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা এবং সততার জন্য উক্ত পদে উন্নীত করা হয়।
তাঁর তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও সততার জন্য তিনি লর্ড এলেনবরো ও লর্ড হারডিঞ্জ-এর মতো গভর্নর-জেনারেলদের সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করেন; তাছাড়া স্যার হাবার্ট ম্যাডক, অনারেবল্ মিঃ টমসন, স্যার এফ কারি এবং স্যার হেনরি এলিয়টের মতো চীফ সেক্রেটারিগণও তাঁর সম্পর্কে এই উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন যে, তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও উচ্চ গুণের অধিকারী। তাঁর এই সকল গুণের জন্য তিনি ১৮৪৭-এ রায় বাহাদুর এবং পরবর্তীকালে রাজাবাহাদুর খেতাব দ্বারা ভূষিত হন।
রাজা প্রসন্ননারায়ণ দেব, বাহাদুরের চরিত্রবত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কে ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড হারডিঞ্জ বলেন-
কলকাতা ৩ জানুয়ারি, ১৮৪৮
তোষাখানার অধীক্ষক (রাজা) প্রসন্ননারায়ণ দেব, (বাহাদুরের) অতি উচ্চমানের সেবার কথা লিখতে আনন্দ বোধ করছি বেশ কয়েকবার এই অফিসারটি তাঁর বিভাগ নিয়ে আমাদের সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে গেছেন এবং বহুবারই আমি প্রকাশ্য দরবারে ও অন্যত্র তাঁর সেবার প্রশংসা করেছি। শতদ্রু অভিযানের সময় এবং আপার প্রভিন্সে আমার অবস্থানের সমগ্র সময় বিশেষত আমার লাহোরে অবস্থান কালে ‘রায়’ আমার সঙ্গে ছিলেন; ঐসব সময় অতীব দায়িত্বপূর্ণ কাজ তাঁকে দেওয়া হয়েছিল; যে কর্তব্যপরায়ণতার সঙ্গে তিনি সমস্ত কর্তব্য সম্পাদন করেছিলেন, তাতে আমি পূর্ণ সন্তোষ লাভ করেছিলাম।
গত বছর তাঁকে আমি রায় বাহাদুর খেতাব দ্বারা ভূষিত করেছিলাম; আমার ঘোষণা সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর মহান গুণসমূহ তাঁর উন্নত ব্যক্তিগত চরিত্র, তাঁর সম্ভ্রান্ত বংশ পরিচয় ও সম্মানিত পারিবারিক সম্পর্ক বিবেচনা করে, আমি তাঁকে রাজা খেতাব ও মর্যাদার সম্পূর্ণ যোগ্য বলে বিবেচনা করি।
কিন্তু তিনি বর্তমানে যে পদে চাকুরি করছেন, তাতে এখনই তাঁকে উক্ত খেতাব দ্বারা সম্মানিত না করে তাঁর অবসর গ্রহণ করার পর্যন্ত অপেক্ষা করা অধিকতর যুক্তিযুক্ত হবে।
ব্যক্তিগত শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ আমার এই মন্তব্য; এর একটি প্রতিলিপি আমি “রায়’কে দিয়ে যাচ্ছি। আমার ইচ্ছা, আমি ইংল্যান্ড ফিরে গিয়ে তাঁকে উপযুক্ত খোদিত মন্তব্যসহ একটি স্বর্ণপদক উপহার হিসাবে পাঠাব।
স্বা: হারডিঞ্জ
রাজা সীতানাথ বোস, বাহাদুরের মৃত্যুর পর সরকারের সুপারিশে নবাব নাজিমের দেওয়ানের পদে রাজা প্রসন্ননারায়ণ দেব বাহাদুরকে নিযুক্ত করা হয়। বিশেষ যোগ্যতার সঙ্গে তিনি এই পদের কর্তব্য সম্পাদন করেন। নবাবের এস্টেটের কার্যপরিচালনার ব্যাপারে তিনি যেসব পরিবর্তন সুপারিশ করেন, সেগুলি সরকার ও নবাব উভয় তরফ থেকেই অনুমোদিত হয় : অতীতে অযোগ্য পরিচালনার জন্য নিজামতটি ধ্বংস হবার উপক্রম হয়েছিল; তাঁর সুপরিচালনায় সেটি রক্ষা পায়।
মহামান্য নবাব নাজিমের অনুমতি নিয়ে, সরকার প্রসন্ননারায়ণ দেব, বাহাদুরকে বৈদেশিক বিভাগর সহকারী সচিব নিয়োগ করে মাননীয় গভর্নর জেনারেলের সঙ্গে লখনৌ ও কানপুরে প্রেরণ করেন। সরকারদত্ত সম্মান বেশি দিন ভোগ করবার জন্য তিনি জীবিত ছিলেন না। ১৮৭০ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তিনি কুমার যোগেন্দ্রনারায়ণ ও কুমার যতীন্দ্রনারায়ণ এই দুই পুত্র রেখে যান। কুমার যোগেন্দ্রনারায়ণের মৃত্যু হয় ১৮৭৯ সালে।