রূপকথা ১ প্রভাতে রাজার ছেলে যেত পাঠশালায়, রাজার মেয়ে যেত তথা। দুজনে দেখা হত পথের মাঝে, কে জানে কবেকার কথা। রাজার মেয়ে দূরে সরে যেত, চুলের ফুল তার পড়ে যেত, রাজার ছেলে এসে তুলে দিত ফুলের সাথে বনলতা। রাজার ছেলে যেত পাঠশালায়, রাজার মেয়ে যেত তথা। পথের দুই পাশে ফুটেছে ফুল, পাখিরা গান গাহে গাছে। রাজার মেয়ে আগে এগিয়ে চলে, রাজার ছেলে যায় পাছে। ২ মধ্যাহ্নে উপরে বসে পড়ে রাজার মেয়ে, রাজার ছেলে নীচে বসে। পুঁথি খুলিয়া শেখে কত কী ভাষা, খড়ি পাতিয়া আঁক কষে। রাজার মেয়ে পড়া যায় ভুলে, পুঁথিটি হাত হতে পড়ে খুলে, রাজার ছেলে এসে দেয় তুলে, আবার পড়ে যায় খসে। উপরে বসে পড়ে রাজার মেয়ে, রাজার ছেলে নীচে বসে। দুপুরে খরতাপ, বকুলশাখে কোকিল কুহু কুহরিছে। রাজার ছেলে চায় উপর-পানে, রাজার মেয়ে চায় নীচে। ৩ সায়াহ্নে রাজার ছেলে ঘরে ফিরিয়া আসে, রাজার মেয়ে যায় ঘরে। খুলিয়া গলা হতে মোতির মালা রাজার মেয়ে খেলা করে। পথে সে মালাখানি গেল ভুলে, রাজার ছেলে সেটি নিল তুলে, আপন মণিহার মনোভুলে দিল সে বালিকার করে। রাজার ছেলে ঘরে ফিরিয়া এল, রাজার মেয়ে গেল ঘরে। শ্রান্ত রবি ধীরে অস্ত যায় নদীর তীরে একশেষে। সাঙ্গ হয়ে গেল দোঁহার পাঠ, যে যার গেল নিজ দেশে। ৪ নিশীথে রাজার মেয়ে শোয় সোনার খাটে, স্বপনে দেখে রূপরাশি। রুপোর খাটে শুয়ে রাজার ছেলে দেখিছে কার সুধা-হাসি। করিছে আনাগোনা সুখ-দুখ, কখনো দুরু দুরু করে বুক, অধরে কভু কাঁপে হাসিটুক, নয়ন কভু যায় ভাসি। রাজার মেয়ে কার দেখিছে মুখ, রাজার ছেলে কার হাসি। বাদর ঝর ঝর, গরজে মেঘ, পবন করে মাতামাতি। শিথানে মাথা রাখি বিথান বেশ, স্বপনে কেটে যায় রাতি।