অষ্টম অধ্যায়
১১২৪ ত্রিপুরাব্দে (১৭১৪ খ্রিস্টাব্দে) যুবরাজ দুর্জয়দেব “ধর্ম মাণিক্য” (দ্বিতীয়) নাম গ্রহণ পূর্বক সিংহাসন আরোহণ করেন। ইহার অল্পকাল পরে বাঙ্গালার নবাব ধর্ম মাণিক্যকে পরাজিত করিয়া পর্বতের উপতটস্থ সমতলক্ষেত্র অধিকার পূর্বক তাহাতে মোগলদেশীয় জমিদার নিযুক্ত করিয়াছিলেন। কিন্তু মোগলগণ দীর্ঘকাল এই সুবিধা ভোগ করিতে পারেন নাই কারণ দ্বিতীয় যুদ্ধে জয়লাভ করত ধর্ম মাণিক্য অধিকাংশ (১০০) মোগল জমিদারকে দূরীকৃত করিতে সক্ষম হইয়াছিলেন। এই ঘটনার পর বাঙ্গালার নবাব ত্রিপুরাপতির সহিত যে সন্ধি করেন, সেই সন্ধি দ্বারা মহারাজ ধর্মমাণিক্য কেবল নুরনগর পরগণার জন্য বার্ষিক পঞ্চবিংশতি সহস্র মুদ্রা কর প্রদান করিতে বাধ্য হন। ইহাদ্বারা অনুমিত হয় যে, নুরনগরের তালুকদারগণের সহিত বন্দোবস্ত করিয়া নবাব যে জমা ধার্য্য করিয়াছিলেন, তাহাই মহারাজের নিকট হইতে গ্রহণ পূর্বক জমিদারি স্বরূপ সেই পরগণা তাঁহাকে প্রদত্ত হইয়াছিল। কিন্তু মোগল সম্রাট স্বয়ং নুরনগরের বার্ষিক রাজস্ব উক্ত টাকা সামরিক জায়গীর উল্লেখ বাদ দিয়াছিলেন।[১]
অমরমাণিক্যের শাসনকালে “ভুলোয়া” রাজবংশজ রাম রতন (সুর) রায় মেহেরকুল পরগণার অধীন দুর্গাপুরগ্রামে উপনিবিষ্ট হন। সেই রামরতনের বৃদ্ধ প্রপৌত্র রামবল্লভ (১০১) রায়কে মহারাজ ধর্মমাণিক্য “চৌধুরাই” নানকার প্রদান করেন।[২]
১১৩২ ত্রিপুরাব্দে (১৭২২ খ্রিস্টাব্দে) নবাব মুরশিদকুলি খাঁ “জমা কামেল তুমারি” নামক যে রাজস্বের হিসাব প্রস্তুত করেন, ত্রিপুরেশ্বরের অধিকৃত স্থান সমূহের সহিত তাহার বিশেষ কোন সম্পর্ক আছে বলিয়া বোধ হয় না। প্রকৃত পক্ষে ইহার দশ বৎসর অন্তে ত্রিপুরার সমতলক্ষেত্র মোগল সাম্রাজ্যের রাজস্বের হিসাব ভুক্ত হইয়াছিল।
১১৪২ ত্রিপুরাব্দে (১৭৩২ খ্রিস্টাব্দ) মহারাজ ছত্রমাণিক্যের প্রপৌত্র জগত্রাম ঠাকুর বলদাখালের জমিদার আকা সাদেকের[৩] সাহায্যে ঢাকা নেয়াবতের সুবিখ্যাত দেওয়ান মির (১০২) হবিবের সহিত সম্মিলিত হন। মির হবিব ত্রিপুরা বিজয়ের উত্তম সুযোগ বিবেচনা করিয়া স্বীয় প্রভু বাঙ্গালার শাসনকর্তা “নবাব মতিমনউল মুলক, সুজা অদ্দিন মাহাম্মদ খাঁ সুজা অদ্দৌলা, আসাদ জং বাহাদুর” সংক্ষেপে সুজা উদ্দিনের[৪] অনুমতি গ্রহণ পূর্বক বৃহৎ একদল সৈন্য লইয়া জগত্তাম ঠাকুরের সাহায্যে ত্রিপুরায় উপনীত হন। কুমিল্লার নিকটবর্তী স্থানে ত্রিপুর সৈন্যের সহিত মির হবিবের যুদ্ধ হয়। মহারাজ ধৰ্ম্ম মাণিক্যের উজির কমল নারায়ণ ঘোষ বিশ্বাস সেই যুদ্ধে নিহত হন।[৫] ধৰ্ম্ম মাণিক্য পরাজিত হইয়া পর্বত মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করেন। মির হবিব জগত্রাম ঠাকুরকে “রাজা জগত্মাণিক্য” আখ্যা প্রধান পূর্বক ত্রিপুরার রাজা (১০৩) বলিয়া প্রচার করেন। প্রকৃত পক্ষে কেবল মাত্র সমতলক্ষেত্র জগৎমাণিক্যের অধিকারভুক্ত হইয়াছিল। নবাব সুজা উদ্দিন ত্রিপুরার সমতলক্ষেত্রকে “চাকলে রোশনাবাদ” আখ্যা প্রদান পূর্বক বার্ষিক ৯২ ৯৯৩ টাকা কর ধার্য্য পূর্বক জগত্মাণিক্যকে জমিদারি স্বরূপ প্রদান করিয়াছিলেন।[৬] কিন্তু উক্ত রাজ্য (১০৪) মধ্যে পরগণে নুরনগরের বার্ষিক রাজস্ব ২৫০০০ টাকা দিল্লীর সম্রাটের পূর্ব আদেশমত সামরিক জায়গীর এবং হস্তীধৃত করিবার খরচ বাবত ২০০০০ টাকা মোট ৪৫০০০ টাকা বাদে ৪৭৯৯৩ টাকা আদায়ী রাজস্ব নির্ণীত হয়। রাজা জগৎ মাণিক্যকে রক্ষা করিবার জন্য কুমিল্লা নগরে একদল মোগল সৈন্য স্থাপিত হইয়াছিল। আকা সাদেক তৎকালে “ত্রিপুরার ফৌজদারের” পদে নিযুক্ত হন।
মহারাজ ধর্ম মাণিক্য মির হবিব দ্বারা এইরূপ লাঞ্ছিত (১০৫) হইয়া মুরসিদাবাদে গমন করেন। তথায় তদনীন্তন জগৎ শেঠের সহিত তাঁহার বন্ধুত্ব হয়। শেঠের সাহায্যে মহারাজ ধর্ম মাণিক্য নবাব সুজাউদ্দিনকে সমস্ত অবস্থা জ্ঞাপন করিলেন। নবাব কেবল চাকলে রোশনাবাদের বার্ষিক পঞ্চ সহস্র মুদ্রা রাজস্ব অবধারণ পূর্বক জমিদারী স্বরূপ তাহা ধর্মমাণিক্যকে অর্পণ করিবার জন্য ঢাকার শাসনকর্তার প্রতি আদেশ প্রচার করেন; তদনুসারে মহারাজ ধর্ম মাণিক্য চাকলে রোশনাবাদের জন্য বাঙ্গালার নবাবের অধীনস্থ জমিদার শ্রেণীতে সন্নিবিষ্ট হন। ষ্টুয়ার্ট প্রভৃতি ইংরেজ ইতিহাস লেখকগণ আক্ষেপ করিয়া বলিয়াছেন, স্মরণাতীত কাল হইতে যে ত্রিপুরা স্বাধীন পতাকা উডডীন করিয়া আসিতেছিলেন অদ্য তাহা মোগলদিগের পদানত হইল। কিন্তু আমাদের হর্ষ বিষাদের কারণ এই যে, তৎকালে পার্বত্য প্রদেশের স্বাধীনতা বিলুপ্ত হয় নাই। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের পূর্ব পর্য্যন্ত প্রবল প্রতাপান্বিত ব্রিটিশ গবর্ণমেন্টও “পার্বত্য ত্রিপুরা” কে “স্বাধীন ত্রিপুরা” বলিয়া মুক্ত কণ্ঠে স্বীকার করিয়াছিলেন।
মহারাজ ধর্ম মাণিক্য যৎকালে মুসলমানদিগের সহিত আহবে লিপ্ত ছিলেন সেই সময় মিতাই- (মণিপুর)- পতি পামহেইবা (করিমনওয়াজ) ত্রিপুরার উত্তর সীমান্ত প্রদেশরক্ষক সৈন্যদল আক্রমণ ও জয় করিয়া মিতাই রাজ্যের সীমারেখা দক্ষিণদিকে প্রসারিত করিয়াছিলেন। সামান্য কতকগুলি ত্রিপুরা সৈন্য জয় করিয়া মিতাইগণ এরূপ আনন্দ লাভ করিয়াছিলেন যে, এই ঘটনা চিরস্মরণীয় করিবার জন্য তাহারা পামহেইবাকে “তাখেলঙাম্বা” (বা ত্রিপুরা জয়ী) উপাধিতে বিভূষিত করিতে ত্রুটী করেন নাই। এই ঘটনা অবলম্বন করিয়া মণিপুরিগণ একখণ্ড গ্রন্থ রচনা করিয়াছিলেন, তাহার নাম “তখেলংনম্বা” অর্থাৎ ত্রিপুরা বিজয়।
চরমাবস্থায় ধর্ম মাণিক্য নিতান্ত বিমর্ষভাবে জীবন যাপন করিয়াছিলেন। উল্লিখিত দুর্ঘটনার পর তিনি অধিককাল জীবিত ছিলেন বলিয়া বোধ হয় না। তিনি নানা প্রকার ধর্ম ও সৎকার্য্যের অনুষ্ঠান করিতে ত্রুটী করেন নাই। নিষ্কর ভূমির যে সকল কাগজের লিখিত প্রাচীন সনন্দ আমরা দর্শন করিয়াছি তাহার অধিকাংশই মহারাজ ধর্ম মাণিক্যের অনুশাসন পত্র। মহারাজ ধর্ম মাণিক্য মহাভারতের বাঙ্গালা পদ্যানুবাদ করাইয়াছিলেন।
ধর্ম মাণিক্যের মৃত্যুর পর তাহার ভ্রাতা চন্দ্রমণি ফৌজদারের সাহায্যে “মুকুন্দ মাণিক্য” নাম গ্রহণ পূর্বক (১০৭) সিংহাসন আরোহণ করেন। রাজমালা গ্রন্থের মতে ১১৪১ ত্রিপুরাব্দে মুকুন্দ মাণিক্য রাজ দণ্ড ধারণ করিয়াছিলেন, কিন্তু আমাদের বিবেচনায় ১১৪৩ ত্রিপুরাব্দের পূর্বে মুকুন্দমাণিক্যের অভিষেক কার্য্য সম্পাদিত হয় নাই।
তৎকালে চাকলে রোশনাবাদের বার্ষিক রাজস্ব ৭৮৩০৫ টাকা ধার্য্য হইয়াছিল। পূর্বোক্ত সামরিক জায়গীর ও হস্তীধৃত করিবার খরচ ২০০০০ টাকা মোট ৪৫০০০ হাজার টাকা বাদে অবশিষ্ট ৩৩৩০৫ টাকা নিয়মিত বার্ষিক রাজস্ব প্রদান করিতে হইত। মহারাজ মুকুন্দ মাণিক্য তাঁহার জ্যেষ্ঠপুত্র পাঁচকড়ি ঠাকুরকে প্রতিভূ স্বরূপ[৮] মুরশিদাবাদের দরবারে উপস্থিত রাখিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। এই সময় হাজি মুনসম নামক জনৈক মুসলমান ত্রিপুরার ফৌজদারের কার্য্যে নিযুক্ত ছিলেন।
মহারাজ মুকুন্দ মাণিক্য ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈদ্য প্রভৃতিতে অনেক নিষ্কর ভূমি প্রদান করিয়াছিলেন। তৎপ্রদত্ত একটি তালুকের মকররী সনন্দ আমরা দর্শন করিয়াছি। তৎ সম্বন্ধে পশ্চাৎ আলোচনা করা যাইবে।[৯]
মহারাজ কল্যাণ মাণিক্যের তৃতীয় পুত্র জগন্নাথ ঠাকুরের প্রপৌত্র “সুবা” রুদ্রমণি ঠাকুরকে মুকুন্দমাণিক্য হস্তী ধরিবার (১০৮) জন্য মতিয়া নামক স্থানে প্রেরণ করেন। রুদ্রমণি তথায় বুচর নারায়ণ প্রভৃতি কয়েকজন পরাক্রমশালী পার্বত্য সরদারের সহিত মিলিত হইলেন। তিনি তাঁহাদের সহিত পরামর্শ করিয়া মুকুন্দ মাণিক্যকে লিখিলেন, —”ত্রিপুরাবাসিগণ যবনদিগের সহিত কিছুমাত্র সংস্রব রাখিতে ইচ্ছা করে না। মহারাজের অনুমতি পাইলে তাহারা সশস্ত্রে উপস্থিত হইয়া ফৌজদার হাজি মুনসম ও তাহার অনুচরগণকে বধ করিবে।” মুকুন্দ মাণিক্য পত্র পাইয়া যার পর নাই চিন্তিত হইলেন এবং রুদ্রমণিকে লিখিলেন, এ কার্য্যে প্রবৃত্ত হওয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক; কারণ আমার জ্যেষ্ঠ পুত্র মুরশিদাবাদে প্রতিভূ স্বরূপ রহিয়াছেন; ফৌজদারের প্রতি অন্যায় আচরণ করিলে, নবাব তৎপ্রতি কঠিন দণ্ড বিধান করিবেন। রুদ্রমণি ঐ পত্র পাইয়া ক্ষান্ত হইলেন না; পুনর্বার মুকুন্দ মাণিক্যকে লিখিলেন, “মহারাজ আমাদিগকে অবিলম্বে অনুমতি পাঠাইবেন, তাহা হইলেই আমরা ফৌজদারের রক্তে পৃথিবী রঞ্জিত করিব।” কিন্তু মুকুন্দ মাণিক্য কোনমতেই মুসলমানদিগের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ, করিতে সম্মত হইলেন না। তিনি রুদ্রমণি ঠাকুরের লিখিত পত্র ফৌজদারের হস্তে সমর্পণ করিলেন। মহাত্মা মুকুন্দ মাণিক্যের অনুকম্পায় যে পাপাত্মা হাজিমুনসমের প্রাণরক্ষা হইয়াছে, তিনি একবারও তাহা মনে করিলেন না। অধিকন্তু মহারাজকে বলিলেন, আপনি এ বিষয়ে সংলিপ্ত আছেন, নতুবা আপনার অধীনস্থ ব্যক্তিরা কখনও এমত অন্যায় কাৰ্য্যে উদ্যোগী হইতে পারেন না। আপনাকে সবংশে এই গুরুতর পাপের প্রায়শ্চিত্ত করিতে হইবে। তৎপরে হাজি মুনসম মহারাজ মুকুন্দ মাণিক্য এবং তৎপুত্রগণ ভদ্রমণি, কৃষ্ণমণি ও রাজার ভ্রাতুষ্পুত্র গঙ্গাধরকে বন্দি করিলেন। রুদ্রমণি ঠাকুর এই সংবাদ শ্রবণে বুচরনারায়ণের সহিত সসৈন্যে উপস্থিত হইলেন। তিনি সৈন্য দ্বারা উদয়পুর বেষ্টন করিলেন।
মহারাজ মুকুন্দ মাণিক্য যবন কর্তৃক বন্দি হইয়া অপমান সহ্য করিতে পারিলেন না। তিনি বিষপানে প্রাণত্যাগ করিলেন। তাঁহার সৎকারার্থ চিতা প্রস্তুত হইল। তদীয় রাজ্ঞী সহমৃতা হইতে প্রস্তুত হইলেন। তখন সরদার বুচরনারায়ণ মহারাণীকে তাহার কয়েকটি প্রার্থনা শ্রবণের জন্য অনুরোধ করিয়াছিলেন। তিনি কিছুকাল স্থিরভাবে থাকিয়া তাঁহাকে আহ্বান করিয়া পাঠাইলেন। বুচরনারায়ণ তৎসমক্ষে উপস্থিত হইয়া সিংহাসনের অধিকারী নির্ণয় করিতে প্রার্থনা করেন। রাজ্ঞী স্বীয় পুত্র পাঁচকড়ি এবং তদভাবে যুবরাজ গঙ্গাধরকে সিংহাসনের অধিকারী বলিয়া নির্ণয় করেন। বুচরনারায়ণ “তাঁহারা দূরে আছেন বলিয়া, রুদ্রমণি ঠাকুরকে মনোনীত করিতে বলেন।” রাজ্ঞী তৎশ্রবণে সক্রোধে উত্তর করিলেন, আমার পুত্রগণের, কি ভাশুর পুত্রের (১১০) জীবিতাবস্থায় রুদ্রমণি রাজ্যাধিকারী হইতে পারেন না; এবং আমি তাহাকে রাজ্যাধিকারী বলিয়া স্বীকার করিতেও পারি না। তোমাদের যেরূপ অভিরুচি হয়, সেইরূপ কর। জগদীশ্বর আছেন এই বলিয়াই রাজ্ঞী প্রজ্জ্বলিত অনলে দেহ বিসর্জ্জন করিলেন।
.
টীকা
১. The son of Ram Manik Raja zeminder of Tipperah for a while appears to have been wholly shaken off the Mogul yoke virtually, being only liable to a nominal tribute of 25000 rupees for the perganah of Noornagar, which at the same time was entirely remitted to him- self, in the form of a militarv Jaigeer from the court of Delhi. Grant’s view of the Revenues of Bengal.
(Fifth Report, page 395-96.)
২. রামবল্লভ চৌধুরীর প্রপৌত্র শ্রীযুক্ত পীতাম্বর চৌধুরী অদ্যাপি জীবিত আছেন। তিনি অনুগ্রহ পূর্বক মহারাজ ধর্ম্মমাণিক্যের প্রদত্ত রামবল্লভ চৌধুরীর নামীয় ১১৩১ ত্রিপুরাব্দের ১৫ ফাল্গুণের (১৭২২ খ্রিস্টাব্দের ২৬ ফেব্রুয়ারি) ২ খণ্ড সনন্দ এবং তাহাদের এক খণ্ড সুদীর্ঘ বংশাবলী আমাদিগকে প্রদান করিয়াছেন। রামরতনের জ্যেষ্ঠ সন্তানের অধস্তন শাখার অষ্টম, নবম ও দশম পুরুষ এক্ষণ জীবিত আছেন। এই সম্ভ্রান্ত বংশের বর্তমান অবস্থা নিতান্ত শোচনীয়।
৩. আকা সাদেকের বাস ভবনের চিহ্ন অদ্যাপি খুল্লাগ্রামে বিদ্যমান রহিয়াছে। তাঁহার নাম অনুসারে মেঘনাদের তীরবর্তী একটি স্থান “আকা নগর” আখ্যা প্ৰাপ্ত হয়।
৪. রাজমালা গ্রন্থে কেবল নবাব সুজাখাঁ লিখিত আছে।
৫. মির হুবির কুমিল্লার নিকটবর্তী ষোলনল গ্রামস্থিত কমল নারায়ণের বাসভবন লুণ্ঠন ও অগ্নিদ্বারা ভস্মসাৎ করিয়াছিল। কমল নারায়ণের বাটীর পূর্বদিকস্থ বৃহৎ পুস্করিণী দ্বারা অদ্যাপি তাঁহার নাম সেই স্থানে স্মরণীয় হইয়া রহিয়াছে। ষোলনল ও তাহার পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসীগণ অদ্যাপি তাহাকে কমল নারায়ণের পুকুর’ বলিয়া থাকে। উল্লেখিত দুর্ঘটনার পর ‘কমল নারায়ণের দুইটি পুত্র পৈত্রিক বাসস্থান পরিত্যাগ পূর্বক পরগণে নুরনগরের অন্তর্গত মাইজখাড় গ্রামে বাস করিয়াছিলেন। তন্মধ্যে এক পুত্রের বংশধরগণ অদ্যাপি তথায় বাস করিতেছেন।
৬. তদাসীৎ ত্রৈপুরেরাজা ধর্মমাণিক্য নামকঃ।
মহাবল মদোন্মত্ত দিল্লীশে নাদদৌকরৎ।
ততঃ সুজাথা যবনো দিল্লীশপ্রতি রূপকঃ।
জগন্মাণিক্য ভূপাল মসংখ্যৈ সহ সৈনিকৈঃ।
মহাবল পরাক্রান্তৈ স্ত্রৈপুরে সংন্যয়োজগৎ।
জগম্মাণিক্য ভূপাল স্ত্রৈপুরে সমুপস্থিতঃ।
অতীব তুমুলং কৃত্বা ধৰ্ম্মমাণিক্য ভূপতিং।
পরাজিত্যা ভবদ্রাজা ত্রৈপুরেশ মহাবলঃ।
(সংস্কৃত রাজমালা)
A nephew of the Raja of Tippearh, having displeased his uncle, was banished the country. The youth took refuge with a Mohamedan Zemindar, named Aka Sadik, and entreated him to assist him in recovering the share of his inheritance. The Zemindar being intimately acquinted with Meer Hubbeeb, recommended the case of the young man to him : and pointed out of favourable opportunity it offered of subjecting Tipperah to the Mohamedan arms. Meer Hubbeb, having represented the circumstances to his master obtained permission to proceed with all the troops that were then in the vicinity of Dacca, to effect the object. The Mogul troops crossed the Buramapooter, and entered Tipperah before the Raja was aware of their intertions; and having the young man with them whose cause they espoused, he pointed out to them the road by which they should advance. Aided by such a guide, they reached the capital before the Raja could make any preparation to oppose them : he was obliged to flee to the mountains; and the nephew was raised to the Raj, upon condition of paying a large portion of the revenue to the Governor of Bengal.
Stewart’s History of Bengal. pp. 266, 267.
৭. The Province of Tippera, which from time immemorial had been and independent kingdom became annexed to the Mogul Empire Stewart’s History of Bengal. P. 267.
৮. Hostage.
৯. সেই তালুক উজির কমল নারায়ণের পুত্র মায়ারামকে প্রদত্ত হইয়াছিল।