প্রথম অধ্যায়
চন্দ্রবংশীয় সুবিখ্যাত নরপতি যযাতির চতুর্থ পুত্র অনুববংশে বলি নামে এক নরপতি ছিলেন। বলিরাজ-পত্নী মহর্ষি দীর্ঘতমার ঔরসে পাঁচটি পুত্র লাভ করেন। বলির ক্ষেত্রজ পুত্রগণ অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, সুহ্ম ও পুণ্ড্র আখ্যা প্রাপ্ত হন। তাঁহারাই পূর্ব ভারত পাঁচ ভাগে বিভক্ত করিয়া এক একটি প্রদেশের রাজদণ্ড ধারণ করেন। স্থাপয়িতার নামানুসারে সেই সেই রাজ্য অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, সুহ্ম ও পুণ্ড্র আখ্যায় পরিচিত হইয়াছিল।
কামরূপের দক্ষিণ সীমা হইতে রাক্ষিয়াং (আরাকান) পর্য্যন্ত[১] ১) বিস্তৃত, ব্ৰহ্মপুত্র ও সমুদ্রের পূর্বদিকস্থ সমগ্র ভূমি প্রাচীনকালে সুহ্ম নামে পরিচিত ছিল। মহাভারতের সভ্য পর্বে, পূর্বদিগ্বিজয়ী দ্বিতীয় পাণ্ডব ভীম কর্তৃত সুহ্ম, দেশীয় নরপতির পরাজয় বৃত্তান্ত বর্ণিত হইয়াছে। তাহাতে লিখিত আছে যে, “বিজয়ী ভীম মোদাগিরি (মুঙ্গের) হইতে পুণ্ড্রাধিপতি বাসুদেবের প্রতি ধাবমান হইয়াছিলেন, তদনন্তর তিনি কৌশকিকচ্ছ পতিকে জয় করত বঙ্গ দেশীয় নরপতি সমুদ্র সেন ও চন্দ্র সেন এবং তাম্রলিপ্ত এবং কর্বটাধিপতিকে বিজিত করিয়া, সুহ্মদেশাধিপতি ও সাগর তীরবাসী ম্লেচ্ছগণকে জয় করিয়াছিলেন।[২] দক্ষিণ দিগ্বিজয়ী সহদেবের বিজয় বৃত্তান্তে যে ত্রিপুরার উল্লেখ আছে, তাহা আধুনিক ঝববলপুরের নিকটবর্ত্তী পরিত্যক্ত নগরী “তিওর” বলিয়া নির্ণীত হইয়াছে।[৩] প্রকৃত পক্ষে হৈহর বংশীয়দিগের রাজধানী ত্রিপুরীকে ভারতের পূর্ব (২) প্রান্ত স্থিত ত্রিপুরা অবধারণ করিতে যত্নবান হওয়া, নিতান্ত ভ্রমাত্মক কাৰ্য্য।[৪]
কবিচূড়ামণি কালিদাস রঘুবংশ নামক কাব্যগ্রন্থে সুহ্মদেশকে মহাসাগরের “তালীবন শ্যাম উপকণ্ঠ” বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন।(৩)
প্রাচীন কালে সুহ্মদেশ অনেকগুলি ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল। সেই রাজ্য সমূহের ভৌগলিকত্ব কিংম্বা ধারাবাহিক ইতিহাস সংগ্রহ করা নিতান্ত সুকঠিন। আধুনিক কুমিল্লা ও তৎসন্নিহিত প্রদেশ শকাব্দের ষষ্ঠ শতাব্দে “কমলাঙ্ক” আখ্যা দ্বারা পরিচিত ছিল। চীনপরিব্রাজক হিয়োন সঙ সমতট (বঙ্গ) রাজ্যের পূর্ব দক্ষিণ দিকে কমলাঙ্ক রাজ্যের স্থিতি স্থান নির্দ্দেশ করিয়াছেন। কালিদাসের ন্যায় তিনিও কমলাঙ্ককে সাগর তীরবর্ত্তী দেশ বলিয়া বর্ণনা করিয়াছে বলা বাহুল্য যে তৎকালে সাগর সঙ্গম জন্য নদরাজ ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনাদকে ঝাপ্টার মোহনা অতিক্রম করিতে হয় নাই।
শকাব্দের দশম শতাব্দীতে কুমিল্লার পশ্চিমদিকস্থ পাটিকাড়া নামক স্থানে “কমলাঙ্ক” রাজ্যের রাজধানী ছিল।
ব্রহ্মার ইতিহাস “মহারাজোয়াং” গ্রন্থে লিখিত আছে যে, ৯৭৯ শকাব্দে ব্রহ্মরাজ “খ্যানশিশা” সিংহাসন আরোহণ করেন।[৫] তৎকালে পাটিকাড়ার জনৈক রাজকুমার ব্রহ্মরাজ্যে (৪) গমণ করিয়াছিলেন। ব্রহ্মরাজ খ্যানশিশা স্বীয় একমাত্র দুহিতাকে সেই রাজকুমারের করে সমর্পণ করিতে প্রস্তুত হইলেন। কিন্তু অমাত্যবর্গ ও রাজ্যের প্রধান প্রধান ব্যক্তিগণ এই বিবাহ প্রস্তাব পণ্ড করিবার জন্য বদ্ধপরিকর হইলেন। “কোলা” অর্থাৎ বিদেশী ব্রহ্মরাজ দণ্ডের অধিকারী হইবেন, ইহা তাঁহাদের পক্ষে নিতান্ত অসহনীয় বোধ হইল। মনুষ্য ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে নিতান্ত অন্ধ। অমাত্যবর্গ যদিও পাটিকাড়ার রাজকুমারের সহিত ব্রহ্মরাজকুমারীর বিবাহ প্রস্তাব পণ্ড করিতে কৃতসঙ্কল্প হইয়াছিলেন তথাপি অল্পকালমধ্যে ইহা প্রচারিত হইল যে, সেই রাজপুত্রের সহযোগে ব্রহ্মরাজকুমারীর গর্ভসঞ্চার হইয়াছে। কালক্রমে সেই গর্ভে ভাব্রিহ্মরাজ আলংশিশু জন্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু আলংশিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বে তাঁহার জনক আত্মহত্যা করিয়াছিলেন। শৈশবেই আলংশিশু স্বীয় মাতামহ কর্তৃক যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত হইলেন, এবং মাতামহের মৃত্যুর পর তিনি সিংহাসন আরোহণ পূর্বক প্রবল বিক্রমে ৭৫ বৎসর ব্রহ্মরাজ্য শাসন করিয়াছিলেন। আলংশিশু রাজদণ্ড ধারণ পূর্বক প্রথমেই পিতৃভূমি সন্দর্শন জন্য পাটিকাড়ায় আগমন করিয়াছিলেন। আলংশিশু ও তাহার উত্তরবর্ত্তি পুরুষগণ ২০৬ বৎসর ব্রহ্মরাজ্য শাসন করিয়াছিলেন। তাঁহারা সর্বদা পাটিকাড়া রাজবংশের সহিত জ্ঞাতিত্বভাব রক্ষা করিতে যত্নবান ছিলেন। ॥৫॥
১১৪১ শকাব্দের এক খণ্ড তাম্রশাসন পাঠে জ্ঞাত হওয়া যায় যে, রণবঙ্কমল্ল নামক জনৈক নরপতি কমলাঙ্ক, পাটিকাড়া প্রভৃতি স্থানে রাজদণ্ড পরিচালন করিয়াছিলেন। “মহারাজোয়াং” গ্রন্থে যে পাটিকাড়া রাজবংশের উল্লেখ রহিয়াছে, আমাদের বিবেচনায় রণবঙ্কমল্ল সেই বংশীয় নরপতি। আধুনিক মেহেরকুল, পাটিকাড়া গঙ্গামণ্ডল ও তৎসন্নিহিত পরগণাগুলি এই রাজবংশের শাসনাধীন ছিল।
কমলাঙ্ক বা পাটিকাড়া রাজ্যের পূর্বদিকে রাঙ্গামাটীয়া নামে একটি রাজ্য ছিল। এই রাজ্যের দক্ষিণ পার্শ্বে অবস্থিত প্রদেশ যে কতগুলি ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল, তাহা এখন নির্ণয় করা সুকঠিন।
প্রবাদ অনুসারে আধুনিক চৌদ্দগ্রাম ও তৎসন্নিহিত স্থানে ভবচন্দ্র নামে এক নরপতি রাজত্ব করিয়া গিয়াছেন। উক্ত নরপতির সম্বন্ধ বহুবিধ অলৌকিক গল্প শ্রুত হওয়া যায়।[৬] ভুলুয়া নামক স্থানে সুরবংশীয় নরপতিগণ দীর্ঘকাল রাজদণ্ড পরিচালনা করিয়াছিলেন। উত্তরকালে ভুলুয়া রাজগণ ত্রিপুরেশ্বর দিগের সর্ব প্রধান সামন্ত বলিয়া পরিচিত হন।
রাঙ্গামাটিয়া রাজ্যের দক্ষিণ পার্শ্বে আর একটি স্বতন্ত্র রাজ্য (৬) ছিল। স্বাধীন ত্রিপুরার অন্তর্গত বিলনীয়া উপবিভাগের মধ্যে বিবিধ স্থানে সেই রাজ্যাধিপতিগণের বাস ভবনের চিহ্ন প্রাপ্ত হওয়া যায়।
চট্টগ্রাম প্রদেশে আর একটি স্বতন্ত্র হিন্দু রাজবংশ রাজত্ব করিয়া গিয়াছেন। ১১৬৫ শকাব্দের এক খণ্ড তাম্রশাসন পাঠে জ্ঞাত হওয়া যায় যে, দামোদরদেব নামক চন্দ্রবংশীয় জনৈক নরপতি তৎকালে চট্টগ্রাম শাসন করিতেছিলেন। তাঁহার পিতার নাম মধুসুদন দেব, পিতামহের নাম পুরুষোত্তম দেব। তাম্রশাসনে দামোদর দেবকে “সকল ভূপতি চক্রবর্ত্তী” বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে।
রাঙ্গামাটিয়ার উত্তর দিকস্থ প্রদেশে কতগুলি স্বতন্ত্র রাজ্য ছিল, তাহা এখন নির্ণয় করা সুকঠিন। কিন্তু তরপ, শ্রীহট্ট লাউর, প্রভৃতি স্থান যে সকল রাজবংশ শাসন দণ্ড পরিচালন করিয়াছেন, তাঁহারা অপ্রাচীন নহেন।
বর্তমান ত্রিপুর রাজবংশের পূর্ব পুরুষগণ আধুনিক কাছাড় প্রদেশের উত্তর প্রান্ত হইতে কিরূপে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হইয়া চট্টলাচল পর্য্যন্ত আপনাদের করতলস্থ করিয়াছিলেন, এক্ষণে আমরা তাহার উল্লেখ করিব।
প্রাচীনকালে ব্রহ্মদেশের উত্তরভাগে শ্যানবংশীয়গণ প্রবল বিক্রমে রাজদণ্ড পরিচালন করিতে ছিলেন। এই রাজ্য “পোয়াং” আখ্যায় আখ্যাত হইত। “মাগুয়াং” নগরী ॥৭॥ পোয়াং রাজ্যের রাজধানী ছিল। এই শ্যানবংশের এক শাখা কামরূপের পূর্বাংশে একটি স্বতন্ত্র রাজ্য স্থাপন করেন। এই রাজ্যের অধিপতিগণ “ফা” উপাধি ধারণ করিতেন। পার্বত্য মানব দিগের দ্বারা “ফা” বংশীয়গণ কামরূপ হইতে তাড়িত হইয়াছিলেন। রাজ্যভ্রষ্ট নরপতির জ্যেষ্ঠ পুত্র আধুনিক নাগাপর্বতে একটি স্বতন্ত্র রাজ্য স্থাপন করেন, ইহাই প্রাচীন কাছাড় বা কৃত্রিম হেরম্ব রাজ্য। দিমাপুর তাহার আদিম রাজধানী। সেই হৃতরাজ্য কামরূপপতির কনিষ্ঠ পুত্র অগ্রজের ন্যায় আধুনিক কাছাড় প্রদেশের উত্তরাংশে দ্বিতীয় রাজ্য স্থাপন করেন। ইহা প্রাচীন “তৃপুরা” বা “ত্রীপুরা” রাজ্য। এই “তৃপুরা” বা “ত্রীপুরা” শব্দ হইতে আধুনিক ত্রিপুরা নামের উৎপত্তি।
ক্রমে এই “তৃপুরা” রাজ্য প্রবল পরাক্রমশালী হইয়া উঠে। গুপ্ত সম্রাটদিগের ভারত শাসন কালে তৃপুরা গণনীয় রাজ্য শ্রেণীতে স্থান প্রাপ্ত হইয়াছিল। মহারাজাধিরাজ সমুদ্র গুপ্তের লাট-প্রস্তর লিপির দ্বাবিংশ পংক্তিতে লিখিত আছে যে, সমতট (বঙ্গ), কামরূপ, নেপালক, বেং তৃপুরা প্রভৃতি প্রত্যন্ত রাজ্যের অধিপতিগণ সমুদ্র গুপ্তকে করদান করিয়াছিলেন। সমতটও কামরূপের নিকটবর্ত্তী প্রতন্ত্যরাজ্য “তৃপুরা” আমাদের এই ত্রিপুরা ব্যতীত অন্য কোন রাজ্য হইতে পারে না। সমুদ্র গুপ্ত শকাব্দের চতুর্থ শতাব্দীর পূর্ববর্ত্তী ॥৮॥ নরপতি; সুতরাং “তৃপুরা” তদপেক্ষা প্রাচীন নির্ণীত হইতেছে।
ভারতে এক্ষণ যে সকল রাজ্য বর্ত্তমান আছে; তন্মধ্যে “তৃপুরা” সর্বাপেক্ষা প্রাচীন। মিবারের ভট্টকবিগণ যাহাই বলুন না কেন মিবার ও তৃপুরার ন্যায় প্রাচীন নহে। সমুদ্রগুপ্তের পৌত্র কুমারগুপ্তের সেনাপতি ভট্টার্ক কণক সেনকে মিবার রাজবংশের আদি পিতা বলিয়া স্বীকার করা হইয়াছে। অথচ এই ভট্টার্ক সেনাপতির পিতামহের সময়ে যে “তৃপুরা” রাজ্য বর্তমান ছিল, লাটপ্রস্তর লিপিই তাঁহার প্রমাণ।
প্রবাদ অনুসারে জনৈক প্রাচীন ত্রিপুরা নরপতি দিগ্বিজয় উপলক্ষে গঙ্গার পশ্চিমতীরে বিজয় বৈজয়ন্তী উডডীন করিয়া সেই ঘটনা চিরস্মরণীয় করিবার জন্য একটি অব্দ প্রবর্তিত করেন। ইহাই অধুনা “ত্রিপুরাব্দ” নামে পরিচিত। ১৮১৬ শকাব্দে, ১৩০৪ ত্রিপুরাব্দ চলিতেছে। সুতরাং ৫১২ শকাব্দ হইতে ইহার গণনা আরম্ভ হইয়াছিল।
৬৯৯ শকাব্দে শ্যান রাজার ভ্রাতা শ্যামলুং মাগুয়াং নগরী হইতে দূত স্বরুপ ত্রিপুরায় আগমন করিয়াছিলেন। প্রত্যাবর্তন কালে তিনি মিতাই ভূমির (আধুনিক মণিপুর) মধ্য দিয়া গমন করেন। যে মণিপুরী অর্থাৎ মিতাইগণ অধুনা বক্রবাহনের বংশধর (চন্দ্রবংশীয় ক্ষত্রিয়) বলিয়া॥ ৯॥ আত্ম পরিচয় প্রদানে গৌরবান্বিত হইয়া থাকেন, রাজকুমার শ্যামলু সেই মিতাইগণকে কুকি জাতির ন্যায় উলঙ্গ, নিতান্ত কদাচারী ও হীন অবস্থাপন্ন দর্শন করিয়াছিলেন।
ত্রিপুর বংশীয়গণ ক্রমে দক্ষিণদিকে রাজ্য বিস্তারের জন্য যত্নবান হইয়া ছিলেন। তাঁহারা ক্রমে উত্তর কাছাড় হইতে মধ্য কাছাড় এবং তথা হইতে দক্ষিণ কাছাড়, এবং সেই স্থান হইতে আধুনিক কৈলাসহর উপবিভাগের অন্তর্গত ফটীয়াখুলী, মাণিকচন্দন, প্রভৃতি বিবিধ স্থানে রাজধানী নির্মাণ করিয়াছিলেন। শ্রীহট্ট জেলার পূর্ব প্রান্তস্থিত বিবিধ স্থানে ইঁহাদের রাজধানীর ভগ্নাবশেষ দৃষ্টিগোচর হইয়া থাকে। ক্রমে ত্রিপুর নরপতিগণ কৈলাসহরের নিকটবর্ত্তী স্থান পরিত্যাগ করিয়া দক্ষিণদিকে অগ্রসর হইতেছিলেন সেই সকল বৃত্তান্ত যথাস্থানে বর্ণিত হইবে।
ইহা বিশেষরূপে প্রমাণিত হইয়াছে যে, ৫/৬ শতাব্দী পূর্বে আদি কাছাড় অর্থাৎ দিমাপুরের জনৈক নরপতি ত্রিপুর রাজকন্যাকে বিবাহ করিয়া আধুনিক কাছাড় জেলার মধ্যভাগ যৌতুকস্বরূপ প্রাপ্ত হইয়া ছিলেন। কাছাড় জেলার দক্ষিণাংশ অল্পকাল হইল ব্রিট্রিশ গবর্ণমেণ্ট ত্রিপুরেশ্বর হইতে কৌশল ক্রমে গ্রহণ করিয়াছেন। পেম্বার্টনের মানচিত্রই তাহার প্রমাণ॥ ১০॥
.
টীকা
১. বিষ্ণুপুরাণের অনুবাদক উইলসন সাহেবের মতে ত্রিপুরা (ত্রিপুরা রাজ্য, জেলা ত্রিপুরা, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী) এবং আরাকান লইয়া সূহ্মদেশ গঠিত হইয়াছিল।
২. সুক্ষানামাধিপঞ্চৈব যে চ সাগর বাসিনঃ।
সবর্বান ম্লেচ্ছগনাংশ্চৈব বিজিগো ভরতর্ষভঃ।
সভাপবর্ব ২৯ অধ্যায়
৩. হৈহর বংশীয় নরপতিগণের বিবিধ তাম্রশাসন ও প্রস্তর লিপিতে তাহাদের রাজধানী ত্রিপুরা বা ত্রিপুরী আখ্যাদ্বারা পরিচিত হইয়াছে। এই ত্রৈপুর নরপতিগণ ১৭১ শকাব্দে (২৪৯ খ্রিষ্টাব্দে) যে অব্দ প্রচলিত করেন তাহা তাহাদের ক্ষোদিত লিপিতে উৎকীর্ণ রহিয়াছে।
৪. ১২৮৯ বঙ্গাব্দে জনৈক ঢাকা নিবাসী কর্তৃক প্রকাশিত ‘সাময়িক সমালোচনার সমালোচনা ও মীমাংসা’ নামক ক্ষুদ্র পুস্তিকায় সহদেবের বিজয় বৃত্তান্ত হইতে:
ত্রৈপুরংস বশেকৃত্বা রাজানামমিতৌজ সং
নিজগ্রাহ মহাবাহুস্তরসা পৌরবেশ্বরম্।
এই শ্লোকটি উদ্ধৃত করিয়া বর্তমান ত্রিপুরাজবংশের ক্ষত্রিয়ত্ব সংস্থাপন করিতে যত্নবান হইয়াছিলেন। গ্রন্থকার সত্যের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন পূর্বক, এরূপ স্বার্থান্ধ হইয়াছিলেন যে, তিনি তৎপরবর্তী শ্লোকটি দৃষ্টি করিতে অবকাশ প্ৰাপ্ত হন নাই। কারণ মহাভারতে লিখিত আছে যে, ‘সহদেব ত্রৈপুররাজ ও পৌরবেশ্বরকে জয় করিয়া তৎপর সৌরাষ্ট্রাধিপতির প্রতি ধাবমান হইয়াছিলেন।’ সহদেব কিরূপে ভারতের পূবর্ব প্রান্তস্থিত ত্রিপুরা হইতে এক লম্ফে পশ্চিম সাগরের তীরস্থিত সৌরাষ্ট্রে উপনীত হইলেন, ইহা গ্রন্থকারের স্থূলবুদ্ধির আয়ত্ত হইল না। বিশেষত মহাভারতের সভাপর্বের পঞ্চবিংশ অধ্যায়ে লিখিত আছে যে, ‘অৰ্জ্জুন উত্তরদিক, ভীম পূবর্বদিক, সহদেব দক্ষিণদিক এবং নকুল পশ্চিম দিক জয় করিলেন। সহদেব যে পূর্ব ভারতে আগমন করিয়াছিলেন, মহাভারতে তাহার কোন উল্লেখ নাই।
৫. বনপর্বের ২৫৩ অধ্যায় কর্ণের দিগ্বিজয় উপলক্ষে যে ত্রিপুরার উল্লেখ দৃষ্ট হয়, তাহাতে মধ্যভারতের অন্তর্গত জববলপুরের নিকটবর্ত্তী ত্রিপুরাকেই লক্ষ্য করা হইয়াছে। কারণ তাহাতে ত্রিপুরা ও কোশল দেশের কথা এই শ্লোকে বর্ণিত হইয়াছে। কনিংহাম প্রভৃতি পণ্ডিতগণ দ্বারা ইহা বিশেষরূপে নির্ণীত হইয়াছে যে, এই কোশল আধুনিক ছত্রিশগড়জেলা ও তৎসন্নিহিত স্থান লইয়া গঠিত হইয়াছিল।
৬. রঙ্গপুর ও তৎসন্নিহিত স্থানে প্রাচীনকালে ভবচন্দ্র নামে অন্য একজন নরপতি রাজত্ব করিয়াছিলেন।