রাজপুত্তুরের অসুখ
যখন যা চাই, তক্ষুনি সেটা এসে পড়বে, কোনো কিছুরই অভাব নেই। তবু মলয়কুমারের মুখে হাসি নেই। যখন তখন সে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। দিন—দিন সে রোগা হয়ে যাচ্ছে। মহারাজার একমাত্র ছেলে এই রাজকুমার মলয়ের খুব অসুখ।
আজকালকার দিনে তো আর আমাদের দেশে একটাও রাজা—মহারাজা নেই। তাই মলয়কুমার সত্যিকারের রাজকুমারও নয়। কিন্তু মলয়ের বাবা পাঁচটা খুব বড় কারখানার মালিক। তিনি থাকেন রাজা—মহারাজাদের স্টাইলে। তাঁর পূর্বপুরুষ এসেছিল রাজপুতানা থেকে, কিন্তু এখন সবাই বাঙালি হয়ে গেছে। নিউ আলিপুরে ওঁদের বাড়িটা যে কোনো রাজবাড়ির চেয়েও বড়। এ বাড়ির হাতিশালে হাতি আর ঘোড়াশালে ঘোড়া না থাকলেও গ্যারাজে আছে দশখানা মোটরগাড়ি আর বাড়ি ভর্তি দাসদাসী। শুধু মলয়কুমারের জন্যই তিনজন চাকর, একজন ঝি, একজন গয়লা আর একজন ড্রাইভার।
মলয় ইচ্ছে করলেই যত খুশি চকোলেট—লজেন্স খেতে পারে। কিংবা আইসক্রিম। কিংবা চাইনীজ খাবার। কিংবা সন্দেহ—রসগোল্লা। সে মুখের কথাটি খসালেই সব এসে যাবে। কিন্তু মলয় কিছুই খেতে চায় না। তার বয়েস এখন চোদ্দ, রোগা, শুকনো চেহারা। কোনো খাবার তার সামনে আনলেই সে নাক কুঁচকে নাকি গলায় বলে, ”না কিচ্ছু, খাঁব নাঁ, সঁব কুঁকুরকে খাঁইয়ে দাঁও!”
কত বড় বড় ডাক্তার আসেন। লম্বা লম্বা কাগজে কতরকম ওষুধের নাম লিখে দিয়ে যান। কিন্তু কিছুই ফল হয় না। আবার নতুন ডাক্তারকে ডাকা হয়। তিনি এসে আগের ডাক্তারের সব ওষুধের নাম কেটে দিয়ে আবার নতুন ওষুধ লিখে দেন। মলয়কুমার তবু খাবার দেখলেই বলে, ”কুঁকুরকে খাঁইয়ে দাঁও!”
তার কুকুরটা ইয়া মোটা হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। আর মলয়কুমার আরও শুকিয়ে শুকিয়ে একেবারে খ্যাংরাকাঠি হয়ে যাচ্ছে।
কলকাতার গরুর দুধে ভেজাল থাকে বলে মলয়ের জন্য আলাদা গরু কেনা হয়েছে। ওদের নিজস্ব গয়লা মলয়ের মায়ের সামনে সেই দুধ দোয়। কোনো রকমে ভেজাল দেবার উপায় নেই। তবু একদিন মলয় সেই দুধে চুমুক দিয়ে বলল, ”হুঁ, পঁচা গঁন্ধ!”
তারপর থেকে আর সেই দুধ খায় না। মলয়ের মা তো মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। বাড়িতে পোষা গরুর দুধও যদি ছেলে না খায় তা হলে আর এর চেয়ে ভাল দুধ কোথায় পাওয়া যাবে। ছেলে যদি দুধও না খায়, তা হলে বাঁচবে কী করে? মলয়ের মা কান্নাকাটি করে হুলুস্থুলু বাধিয়ে দিলেন বাড়িতে। তিনি বলতে লাগলেন, ছেলে না খেলে তিনিও আর কিছু খাবেন না।
মলয়ের বাবা কলকাতা—দিল্লী—মুম্বাই থেকে দশজন বড় বড় ডাক্তার আনিয়ে এক মিটিং বসিয়ে দিলেন বাড়িতে। তাঁর একমাত্র ছেলে, একে বাঁচাতেই হবে। কিন্তু এর মধ্যে লাভ হল এই যে, ডাক্তারদের মধ্যেই একটা ঝগড়া বেধে গেল। প্রায় প্রত্যেকে বললেন আলাদা—আলাদা রোগের নাম, খেতে বললেন নতুন—নতুন ওষুধ। খালি দুজন ডাক্তার বললেন, মলয়ের কোনো অসুখই নেই। সব সময় ভাল ভাল খাবার খেয়ে খেয়ে ওর হয়েছে অরুচি। সেই দুজনের মধ্যে একজন বললেন, ওকে আর কিছু খাবার দেবার দরকার নেই। দু’দিন উপোসে রাখলেই ছেলে গপাপগ করে সব কিছু খাবে। আর একজন ডাক্তার বললেন, অত কিছু করারও দরকার নেই। না খেতে চাইলেই ওকে দুটো করে থাপ্পড় মারতে হবে। দশ—বারোটা থাপ্পড় খেলেই ওর সব রোগ সেরে যাবে।
মলয়ের বাবা সেই দুজন ডাক্তারের দিকে কটমট করে তাকালেন। আর তাঁদের বিদায় করে দিলেন তক্ষুনি। বাকি আটজন ডাক্তারের আট রকম ওষুধেও কোনো উপকার হল না। মলয় সেইসব ওষুধও কুকুরকে খাইয়ে দিতে বলল।
তারপর হোমিওপ্যাথি, কবিরাজি, সাধুবাবুর ওষুধ, ফকিরের তাবিজ—অনেক কিছু দিয়েই চেষ্টা করা হলো। কিছুতেই কিছু হয় না। মলয় এখন শয্যাশায়ী। আর বেশি দিন বোধহয় সে বাঁচবে না।
তখন বাড়ির একজন চাকর মলয়ের মাকে বলল, ”মা, বৌবাজারে এক জ্যোতিষী আছেন, তাঁকে এনে দেখাবেন? তিনি আবার কবিরাজি চিকিৎসাও করেন। ওনার চিকিৎসায় মরা মানুষও উঠে বসে।”
মলয়ের মা বললেন, ”ডাক, ডাক শিগগির সেই জ্যোতিষীকে ডাক।”
সন্ধেবেলা সেই জ্যোতিষী এসে হাজির। তার নাম মাধব পণ্ডিত। তার চেহারা দেখলে কিন্তু ভক্তি হয় না একটুও। পাগলা—পাগলা চেহারা, খালি পা, গায়ে গেঞ্জির ওপর একটা চাদর জড়ানো, মাথায় ঝাঁকড়া—ঝাঁকড়া চুল আর চোখ দুটো গাঁজখোরদের মতন লাল। সে এল ও—বাড়ির চাকর গয়ারামের কাঁধে হাত দিয়ে।
বাড়িতে ঢুকেই সে বলল, ”বাপরে বাপ, কত বড় বাড়ি! দেখলেই ভয় করে। নিশ্চয়ই এ বাড়িতে অনেক কুকুর আছে?”
এ বাড়িতে সব মিলিয়ে পাঁচটা কুকুর আছে সত্যি। বাঘের মতন চেহারা।
মাধব পণ্ডিত বলল, ”আগে সব কুকুর বাঁধো!”
মলয়ের বাবা ভুরু কুঁচকে বললেন,”এ আবার কী চিকিৎসা করবে?”
মলয়ের মা বললেন, ”দেখাই যাক না ও কী বলে! কুকুরগুলো বাঁধতে বলো!
মাধব পণ্ডিত মলয়ের ঘরে ঢুকেই বলল, ”টক টক গন্ধ!”
মলয় চোখ বুজে শুয়ে ছিল, চোখ খুলল না।
মাধব পণ্ডিত বলল, ”সব পচা খাবার!”
মলয় এবার চেয়ে দেখল মাধব পণ্ডিতকে।
মাধব পণ্ডিত বলল, ”এ সব পচা খাবার কি রাজপুত্তুর খেতে পারে? ওর দোষ কী?”
মলয়ের বাবা বললেন, ”পচা খাবার মানে? কলকাতার সবচেয়ে বড় দোকানের সবচেয়ে ভাল খাবার দেওয়া হয় ওকে।”
মাধব পণ্ডিত বলল, ”হোটেলের খাবার, দোকানের খাবার তো! ওসব আমি জানি। ছেলেকে খাঁটি টাটকা খাবর দিন। ছেলে ঠিক খাবে!”
মলয়ের মা বললেন, ”বাড়ির পোষা গরুর দুধ, সেটাও টাটকা নয়? এর থেকে টাটকা দুধ আর হয়?
মাধব পণ্ডিত জিজ্ঞেস করল, ”কোথাকার গরু?”
”মুলতানের গরু!”
”তাই বলুন! যাদের বয়েস ষোল বছরের কম, তাদের কক্ষনো মুলতানী গাইয়ের দুধ সহ্য হয় না। ভাগলপুরী গরুর দুধ সবচেয়ে ভাল।”
মলয়ের বাবা বললেন, ”ঠিক আছে, কালই ভাগলপুর থেকে গরু কিনে আনাচ্ছি।”
মাধব পণ্ডিত বললেন, ”দাঁড়ান, দাঁড়ান, এত সহজ নয়। ভাগলপুরের গরু কলকাতায় এসে খাবে কী? সেই তো শুকনো খড়? তাতে আবার পচা দুধ দেবে। ভাগলপুরের ঘাস খাওয়াতে হবে। প্রত্যেকদিন ভোরবেলা শিশির পড়ে থাকে যে ঘাসে, সেই ঘাস খাওয়াতে হবে গরুকে। তাহলে সেই গরু টাটকা দুধ দেবে।”
”ভাগলপুরের ঘাস এখানে কী করে পাব?”
”এখানে পাবেন না। ভাগলপুরে পাবেন।”
”ঠিক আছে। ভাগলপুরে একটা বাড়ি কিনছি, মলয় গিয়ে কিছুদিন ওখানে থাকুক!”
”দাঁড়ান, দাঁড়ান, অত সহজ নয়। সেই দুধ খেয়ে হজম করতে হবে তো! আপনার ছেলের হয়েছে বদহজমের অসুখ, এখন ভাগলপুরের জল তো ওর সহ্য হবে না! ওর জন্য এখন লাগবে দেওঘরের দুধকুণ্ডের জল।”
”তা হলে দেওঘরে একটা বাড়ি কিনি, সেখানে গিয়ে থাকুক কিছুদিন।”
”দেওঘরে থেকে ভাগলপুরের গরুর দুধ খাবে কী করে?”
”রোজ আনিয়ে নেব ওখান থেকে। তা হলে ছেলে ঠিক সারবে তো।”
”ছেলে কি শুধু জল আর দুধ খেয়ে বাঁচবে? ভাত খেতে হবে না? শাক তরকারি, মাছ মাংস খেতে হবে না? ও ছেলের কপালে কী লেখা আছে দেখতে পাচ্ছেন?”
”কপালে আবার কী লেখা আছে? থাকলেও তা দেখা যায় নাকি?”
”আমি দেখতে পাচ্ছি। ওর কপালে লেখা আছে লালগোলা……।”
”লালগোলা?”
”হ্যাঁ, লালগোলা! লালগোলা একটা জায়গার নাম।”
”তা তো জানি! কিন্তু একটা জায়গার নাম ওর কপালে লেখা থাকবে কেন?”
”আগের জন্মে ও জন্মেছিল লালগোলায়। ওর ষোল বছর বয়েস না হওয়া পর্যন্ত ওকে লালাগোলার রূপশালি ধানের ঢেঁকিছাঁটা চালের ভাত খাওয়াতে হবে।”
”ঠিক আছে, সেই চালই আনব।”
”দাঁড়ান, দাঁড়ান, এত সহজ নয়। বলেছি না, টাটকা জিনিস চাই। প্রত্যেকদিন এককৌটো ধান ঢেঁকিতে ছাঁটিয়ে সেই চালের ভাত খাওয়াতে হবে। আগের দিনের চালের ভাত খাওয়ালে কোনো লাভ নেই।”
”বাবাঃ! তাহলে তো লালগোলায় গিয়ে থাকতে হবে। সেখানে একটা বাড়ি কিনব?”
”কিন্তু লালাগোলায় গিয়ে থাকলে দেওঘরের জল আর ভাগলপুরের টাটকা দুধ খাবে কী করে?”
”তাও তো বটে!”
”আরও আছে! হজমের অসুখের পক্ষে খুব ভাল হচ্ছে পেঁপে সেদ্ধ। ওই পেঁপে সেদ্ধ খাইয়ে আমি কত রুগিকে ভাল করেছি। কোথাকার পেঁপে বিখ্যাত জানেন? পুরুলিয়া। পুরুলিয়া থেকে প্রত্যেকদিন একটা করে গাছ থেকে ছিঁড়ে আনা টাটকা পেঁপে যদি খাওয়াতে পারেন…”
মলয়ের বাবা রেগে গিয়ে বললেন, ”অসম্ভব! যত সব বুজরুকি! পুরুলিয়ার পেঁপে, লালাগোলার চাল, দেওঘরের জল আর ভাগলপুরের দুধ—প্রত্যেকদিন এগুলো এনে খাওয়ানো যায়? এত বাড়ির ছেলেরা সাধারণ খাওয়া খেয়ে ঠিকঠাক থাকছে…”
মাধব পণ্ডিত বলল, ”এত বাড়ির ছেলের সঙ্গে আপনার ছেলের তুলনা? ও তো সাধারণ ছেলে নয়। চোখ দেখেই বুঝতে পেরেছি ক্ষণজন্মা। কবে যে মায়া কাটিয়ে চলে যাবে!”
মলয়ের মা প্রায় কেঁদে উঠে বললেন, ”অ্যাঁ? ছেড়ে চলে যাবে? ওগো তুমি যেমন করে পারো, ওগুলো জোগাড় করো!”
মলয়ের বাবা বললেন, ”তা অসম্ভব।”
মলয়ের মা বললেন, ”তা আমি জনি না। ব্যবস্থা তোমাকে করতেই হবে!”
তখন মলয় হঠাৎ বলে উঠল, ”আমি পুরুলিয়ার পেঁপে খাব!”
সবাই চমকে উঠল সেই কথা শুনে। অনেকদিন বাদে মলয় এই প্রথম একটা কিছু খেতে চাইল নিজের মুখে!
মলয়ের মা বললেন, ”হ্যাঁ বাবা তোকে পুরুলিয়ার পেঁপে এনে দেব। আজই এনে দেব।”
মলয় বলল, ”আমি লালগোলার চাল খাব।”
মলয়ের মা বললেন ”হ্যাঁ, তাই এনে দেব।”
মলয় আবার বলল, ”আমি দেওঘরের জল আর ভাগলপুরের দুধ খাব। সব একসঙ্গে।”
এই বলে মলয় মুচকি মুচকি হাসতে লাগল। সে ভেবেছে, এই বার তার বাবা জব্দ হবেন! সে যখন যা চেয়েছে, সবই এনে দিয়েছেন তার বাবা। কিন্তু এবার আর তিনি পারবেন না।
কিন্তু মলয়ের বাবা মাধব পণ্ডিতের দিকে তাকিয়ে হুংকার দিয়ে বললেন, ”ঠিক আছে এই সবই আমি জোগাড় করব। কিন্তু পণ্ডিত এতেও যদি ছেলের অসুখ না সারে?”
মাধব পণ্ডিত বলল, ”এরপরও যদি আপনার ছেলের রোগ না সেরে যায়, তাহলে আমার নাক—কান কেটে আমায় ডালকুত্তা দিয়ে খাওয়াবেন। কিন্তু একদিন খাওয়ালে হবে না। রোজ খাওয়াতে হবে এরকম, ছ’মাস ধরে অন্তত একটানা।”
মলয়ের বাবা বললেন, ”তাই হবে! এতেও যদি ছেলে না সারে, তাহলে তোমার গর্দান নেব আমি। রেলের চাকার নীচে তোমার কাটা মুন্ডু গড়াবে। আর যদি ভাল হয়ে যায়…তাহলে তোমায় কত দিতে হবে?”
মাধব পণ্ডিত চোখ বুজে জিভ কেটে বলল, ”আমায় কিছু দিতে হবে না। আমি পয়সা—কড়ি ছুঁই না। লোকের চিকিৎসা করে যদি আমি টাকা নিতাম, তাহলে কি আর আমাকে খালি পায়ে হাঁটতে হয়? আমি শুধু পরের উপকার করি।”
যেন একটা খুব মজার কথা বলেছে, এই ভেবে মাধব পণ্ডিত নিজেই হেসে উঠল হো হো করে।
মলয়ের বাবা সেইদিনই সব ব্যবস্থা করে ফেললেন। চারজন চাকরকে পাঠালেন চারদিকে। এখন ট্রেনে বাসে সব জায়গায় যাওয়ার অনেক সুবিধে আছে। চারজন চাকর চলে যাবে লালগোলা আর দেওঘর আর ভাগলপুর আর পুরুলিয়া। সেখান থেকে তারা ভোরবেলা চাল, জল, দুধ আর পেঁপে নিয়ে ফিরে আসবে বিকেলের মধ্যে। জিনিসগুলো পৌঁছে দিয়ে তারা আবার চলে যাবে তক্ষুনি। আবার পরের দিন আসবে। এই ভাবে চলবে। চারজন লোকের শুধু ওই কাজ।
সত্যি—সত্যি পরদিন চারজন লোক নিয়ে এল চাল আর জল আর দুধ আর পেঁপে। সেগুলো নামিয়ে রেখেই তারা আবার ছুটল স্টেশনে। সেই দুধ ফোটাবার পর মলয়ের মা বললেন, ”এবার খাবি তো?” মলয়ের বাবা কোমরে হাত দিয়ে রাগী চোখে তাকিয়ে রইলেন। মলয় দুধের গেলাসে এক চুমুক দিয়ে বলল, ”আ, এই দুধটা পচা নয়।” তারপর দেওঘরের জলে এক চুমুক দিয়ে বলল, ”আ, এই জলটা খাঁটি।” এরপর সে লালাগোলার চালের ভাত আর পুরুলিয়ার পেঁপেসেদ্ধ খেল বেশ আরাম করে অনেকদিন পর।
দিনের পর দিন এই রকম চলতে লাগল। স্বাস্থ্য ফিরে গেল মলয়ের। এক সপ্তাহের মধ্যেই সে শুরু করে দিল দৌড়ঝাঁপ। ওদের বাড়িতে সকলের মুখে হাসি ফুটল। শুধু মলয়ের পোষা কুকুরটা আর মলয়ের ফেলে দেওয়া ভাল—ভাল খাবার খেতে পায় না বলে মাঝেমাঝে কুঁইকুঁই করে!
এরপর এই গল্পের শুধু আর—একটু বাকি আছে। সেটা অবশ্য মলয়দের বাড়ির কেউ জানে না। লেখকরা ডিটেকটিভদের মতন সব কিছু জেনে ফেলে কিনা, তাই ওটুকু আমিও জেনে ফেলেছি।
মলয়দের বাড়ি থেকে চারজন চাকর বেরিয়ে যায় স্টেশনের দিকে। তারা যাবে লালগোলা আর দেওঘর আর ভাগলপুর আর পুরুলিয়া। স্টেশনের কাছাকাছি এসেই তারা সুট করে ভিড়ের মধ্যে মিশে গিয়ে পালিয়ে যায়। চারজনেই চলে আসে বৌবাজারে মাধব পণ্ডিতের আস্তানায়। সেখানে তারা খুব করে গাঁজা আর জিলিপি খায় আর ঘুমোয়। পরদিন একজন রাস্তার টিউবওয়েল থেকে জল ভরে নেয় কুঁজোয়। একজন ছানাপট্টির গয়লাদের কাছ থেকে কিনে নেয়এক কিলো দুধ, একজন বাজার থেকে কিনে নেয় সবচেয়ে শস্তা চাল, আর একজন কেনে একটা পেঁপে। তারপর সেইগুলো নিয়ে খুব ব্যস্ত ভাব করে চলে যায় বাড়ি। সেগুলো রেখেই তার আবার দৌড়োয়। আবার এসে হাজির হয়ে যায় মাধব পণ্ডিতের আড্ডায়। ভাড়ার পয়সা বাঁচিয়ে সেই পয়সায় খেয়ে তারা নিজেরা খুব আনন্দ করে।
কলকাতার আর সব ছেলেরা যে চাল আর দুধ আর জল আর পেঁপে খায়, সেগুলো খেয়েই কিন্তু এখন মলয়ের স্বাস্থ্য খুব ভাল হয়ে গেছে। এখন সে ইস্কুলের টিমে—দারুণ ক্রিকেট খেলে! আর বাড়ি ফিরেই বলে, ”শিগগির খাবার দাও, দারুণ খিদে পেয়েছে!”