2 of 3

রাজপাট – ৬৪

৬৪ 

শাউন মাসে ফতেমা গো 
ফজরে জাগিলাম। 
ইলাইদার ইলাইদার পানি দেও মাগো 
অজু করিবাইন॥ 
অজু করিয়া মাগো 
ডাইনে বাঁয়ে চায়। 
আগুনেরই কুঁয়া জ্বলে 
ফতেমারই গায়॥ 
হায় হায় রে—

.

তিনি বসেছিলেন মাঝখানে। তাঁর দু’পাশে দু’জন। সুমি আর তীর্থ। কাছাকাছি মায়া। এ এক সুনিবিড় অপরাহ্ণবেলা। 

সম্পাদক চলে গেছেন। রেখে গেছেন একটি আনন্দসন্ধ্যার সম্ভাবনা। মায়া পত্রিকাটি হাতে নিয়ে দেখছেন। সামান্য লেখাপড়া ছিল তাঁর। কোনওমতে বাক্যগঠন করার মতো অশুদ্ধ বানানে। সেই অপূর্ণ শিক্ষার পরিমার্জনা করেছেন তিনি। স্বামীকে এতখানি পুস্তকঘন হতে দেখে নিজেও নিয়মিত পড়েছেন নানা বই। পড়তে পড়তেই পড়া সহজ হয়ে আসে। শব্দবন্ধে নিহিত অর্থ আপনি এসে ধরা দেয়। কিন্তু এত করেও কবিতার নাগাল পাননি তিনি। ছোটবয়সে তীর্থ যে-সব পড়ত, সুমি যে-সব পড়ে, ছন্দে ছন্দে পল্লির হাটের বর্ণনা—দূরে দূরে গ্রাম দশবারোখানি, মাঝে একখানি হাট, কিংবা শালবনে হুল্লোড় ওই এল ঝড়… গ্রামের পরিচিত দিগন্তরেখা কিংবা ঝড়ের মাতন—সেইসব বোঝেন বরং। কিন্তু অসুবিধা হয়নি কোনও সৃজনশীল স্বামীর প্রতি তাঁর প্রগাঢ় শ্রদ্ধা আছে। স্বামীকে নিয়ে গর্ব আছে। আজ সেই গর্ব যেন উপচে পড়ছে। স্বামীর নাম, স্বামীর লেখা তিনি উলটে-পালটে পড়ছেন। 

বলাই মণ্ডল এখনও দেখেননি খুলে। সংকোচে হাত গুটিয়ে আসছে। তবু মনে আনন্দ ফুটে আছে। সে-আনন্দধারা প্রকাশিত কবিতার জন্য। এবং সহকারবৃক্ষগুলির জন্যও আশায় বুক বাঁধতে পারা সম্ভব। আনন্দ তাঁর দৃষ্টিতে প্রকাশিত। আনন্দ তাঁর করতলে। দেহে। 

এমন বিরল এবং অচিন্তনীয় মুহূর্তে খেতের মাটির বুকে মুখ রাখতে ইচ্ছে করে। আমের বনে প্রিয় বৃক্ষগুলিকে আলিঙ্গন করতে ইচ্ছে করে। আর ভেসে যেতে প্রাণ চায় সেই নারীতে যে, এই পৃথিবীতে, শুধু বলাই মণ্ডল নামের মানুষটির জন্য নদী হতে চায়। সকল আনন্দ দৃষ্টিতে রেখে তিনি ধরা দিয়েছেন মায়ার কাছে। আজ দেহ ডুবে যেতে চাইছে দেহে। আনন্দের কল্লোল হয়ে মিশে যেতে চাইছে অন্য দেহের অণুতে অণুতে। মায়া তা বুঝেছেন। তাঁর দৃষ্টিতে প্রগাঢ় প্রশ্রয়। তাঁর মুখ-চোখ বলছে, হাতের নড়া বলছে, দেহের ভঙ্গি বলছে—এসো। কাছে এসো। বুকে ধরি তোমায়। আমার গর্বের ধন তুমি। আমার ইহকাল-পরকাল তুমি। তোমাকে আমি জন্ম-জন্মান্তরে চাই গো। 

এই সমস্ত কথা নিরুচ্চারে চলে। এই দীর্ঘ বৎসরকালের শান্তিময় প্রেমময় দাম্পত্যে কোনও ইচ্ছা পরস্পরের অগোচর থাকে না। এখানে একজনকে ছাড়া অপরজনের জীবনধারণ নিরর্থক। শ্বাসে-প্রশ্বাসে মিশে যাওয়া দুটি সত্তার এই দাম্পত্যকে যারা জীবনে অচ্ছেদ্যরূপে মিলায়— তারা ধন্য। কিন্তু সংসার একার নয়। ফলবতী এ সংসারে দু’জনের কাছে আসার সুযোগ মেলা ভার। সে-সুযোগ কি হবে আজ? এই রাত্রে? 

তীর্থ জানতে চাইছে সম্পাদক কী বললেন। আর কী কী বললেন। বই করার প্রস্তাবে সে আনন্দে উত্তেজনায় অস্থির। বলছে—তোমার এত কবিতা, তার থেকে ষাট-সত্তরখানা বাছবে কী করে? 

–বেছে দেব। দিলেই তো হল। 

—তাড়াতাড়ি দিয়ে দাও।

—তাড়া কী! দেব। 

–বইয়ের একটা নাম দিতে হবে। 

–হুঁ। দেব। 

–কাকে উৎসর্গ করবে বাবা? —উৎসর্গ? 

—হুঁ। দেখোনি, উৎসর্গ করা থাকে? মাকে করো বাবা। 

—মাকে? হ্যাঁ। তোর মা যদি রাজি হয়। 

মায়া হাসেন। সলাজ মুখে বলেন—ওমা! আমার আবার রাজি-অরাজি কী! তুমি যা ভাল বুঝবে, তাই করবে। 

বারান্দায় কার পায়ের শব্দ হল। মায়া উঠলেন। 

—দেখি কে এল। 

কানাই মণ্ডলের গলা পাওয়া গেল তখন। 

—দাদা। 

বলাই মণ্ডল ডাকলেন—আয়। 

বেশ কয়েকদিন পর এল কানাই। বলাই মণ্ডল নিস্পৃহ চোখে তাকালেন। ভেতরে কষ্ট হল তাঁর। কানাইকে দেখে স্নেহ উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে না আর। সে-উচ্ছ্বাস মরে গিয়েছে। তিনি ভাবতে থাকেন, হৃদয় যেখানে জাগে না, যে-সম্পর্কের মধ্যে হিম হয়ে পড়ে থাকে আবেগ, সে সম্পর্ক কি মৃত? ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের সম্পর্কও তবে মরে যায়? নাকি এ এক সাময়িক শীতলতা! তিনি যদি দেখেন কানাই কষ্টে আছে, যন্ত্রণায় আছে, তা হলে কি শোণিতে জেগে উঠবে না স্নেহ? 

কানাই বলে তখন—আমগাছগুলো কেটে দেব কাল। 

বলাই মণ্ডল নীরবে তাকিয়ে থাকেন। এ কথা শুনে শুনে সয়ে গিয়েছিল। কাল কাটা হবে শুনে নতুন করে যন্ত্রণার সূচনা হল। কিন্তু কিছুই বলার নেই তাঁর। কানাইয়ের গাছ, কানাইয়ের সম্পত্তি। তাঁর কী বলার আছে! তিনি তো নিরস্ত করতে পারবেন না। 

কানাই বলে চলে—ও জমি এবার যাবেই। তোমার কথা শোনার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু এবার যে অবস্থা, আর রাখা যাবে না। 

যেন এইসব কৈফিয়ত তার দেবার আছে বলাই মণ্ডলকে। যদিও কেউ কোনও কৈফিয়ত তার কাছে দাবি করেনি। প্রত্যাশা করেনি। হতে পারে, তার নিজের মনেই রয়েছে কোনও অপরাধবোধ। কানাই মণ্ডলের জন্য তারও প্রয়োজন ছিল না কোনও। বিষয়কে বিষয় বলেই শুধু ভাবলে আর গোলমাল থাকে না। তার মধ্যে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করে দিলেই বিপদ। অনেক দিনের পুরনো ঘড়িটি, আলমারি বা পালঙ্ক বাড়ির সদস্য হয়ে ওঠে। আবার কারও কাছে হয় আবর্জনা। যার চোখে এসব আবর্জনা ঠেকে, তার কোনও দায় থাকে না। বালাই হয় তারই, যে পালঙ্কেও পায় হৃদয়। ঘড়িতেও পায় স্নেহ। নিজের অস্তিত্বই যেন ওই সকল জড়িয়ে থাকে। কানাই মণ্ডল যেন সেই পর্বে পৌঁছেও দাঁড়িয়ে পড়েছে ঠিক এক বিঘত দূরে। আবর্জনাবোধের নিকটতর, কিন্তু প্রাণবোধের বিপরীতবিন্দুতে নয়। এটুকু অতিক্রম করতে তার লেপে যাচ্ছে আটমাসকাল। সামান্য আবেগ যা তার চেতন মনের অতলে ছিল, কী বিপুল তার জোর! তাকে এনেছে এতখানি! কৈফিয়ত সাজাতে বাধ্য করেছে। অপরাধী করে তুলেছে তাকে নিজের কাছে সামান্য হলেও। 

কিন্তু অপরাধীর রকম হল, সে অপরাধের সঙ্গ চায়। নিজে যে কাজ করছে, চায় অপর একজনও তেমনই করুক। অপরাধচেতনা দ্বারা সে দল গড়তে চায়। যে শুদ্ধ, তাকে অশুদ্ধ করে তার স্ফুর্তি। 

কানাই মণ্ডল অতঃপর বলে—ভাল দাম পেয়েছি। ওই ক’টা গাছে পঁচিশ হাজার টাকা। তা বলছিলাম, তুমিও কাটিয়ে নাও। 

—না। 

একটিমাত্র শব্দে কানাইকে আটকে দেন বলাই মণ্ডল। কানাই চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ। মায়া ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলেন চা খাবে? 

—দাও। 

ঘরে নীরবতা বিরাজ করে। সন্ধ্যার অন্ধকার গুঁড়ি মেরে ঘরে ঢুকে নীরবতাকে কঠিন রূপ দিতে চায়। সুমি উঠে ঘরের আলো জ্বেলে দেয়। মন খারাপ হয়ে গেছে তার। কী সুন্দর সময় তারা কাটাচ্ছিল। কাকা এসে পন্ড করে দিল সব। কাকা শুধু সেই কথাগুলোই এসে বলে, যা শুনলে বাবা গম্ভীর হয়ে যায়। বলাই মণ্ডলের গম্ভীর মুখ সুমি সহ্য করতে পারে না। বাড়ির কারও বেদনা ভারাতুর মুখ সহ্য হয় না তার। সে চায় সহজ আনন্দ। হাসি-খুশি দিন। যেমন সহজভাবে কুবো পাখি নেচে বেড়ায় আমগাছের ডালে। 

ঘর থেকে বেরিয়ে মায়ের কাছে চলে যায় সুমি। কানাইয়ের পাশেই পড়ে আছে পত্রিকাটি। সে তুলেও দেখে না। কিছুক্ষণ আঙুলের গাঁটগুলি মটকে নিয়ে বলে—একেবারে না করে দিয়ো না দাদা। ভেবে দেখো। অতগুলো টাকা। গাছগুলো গেলে এমনিতেও আম-বেচা টাকা পাবে না তুমি 

—না। 

—একটু বিষয়ী হওয়া কি ভাল নয়? তোমার একটা মেয়ে আছে। তাকে তো বিয়ে দিতে হবে। টাকাটা নিয়ে দশ বছরের জন্য ব্যাঙ্কে রাখো। সুমির বিয়ের সময় সাহায্য হবে। 

—না। 

–কী যে গোঁয়ারতুমি করছ দাদা, পরে ফল পাবে। টাকার প্রয়োজন হলে বুঝবে তখন।

-–তোর কাছে চাইব না কানাই। 

—অ্যাঁ? 

—আমাকে নিয়ে দুর্ভাবনা করছিস কেন? তোর ব্যবসার কথা বল। ভাল চলছে তো?

—হ্যাঁ। তা চলছে। 

কানাই কিছুক্ষণ গাল চুলকোয়। মাথা চুলকোয়। তীর্থ চুপ করে কাকার হাবভাব দেখছিল। তার মনে হচ্ছিল কানাই মণ্ডলের কিছু বলার আছে। কানাই বলে তখন—আসলে হাজার পঞ্চাশ টাকা দরকার আমার। তুমি গাছগুলো বিক্রি করলে তোমার থেকে পঁচিশ হাজার টাকা ক’দিনের জন্য ধার নিতাম। 

বলাই মণ্ডল বলেন—টাকার প্রয়োজন হলেও তো আমি তীর্থকে বিক্রি করব না কানাই।

কানাই বোকার মতো তাকায়। বলে— তার মানে? 

মায়া চা নিয়ে ঢোকেন। সন্ধ্যার চা ইত্যাদির জন্য বলাই মণ্ডল তাঁকে কিনে দিয়েছেন একটি কেরোসিন স্টোভ। তাড়াতাড়ি হয়ে যায় তাই। তিনি শঙ্কিত হয়ে উঠছেন। বলাই মণ্ডলের উত্তেজিত মুখ তাঁর দৃষ্টি এড়ায়নি। 

বলাই মণ্ডল বলছেন—মানে বুঝতে পারছিস না কেন? আমি জমির দালাল নই কানাই আমি কৃষক। চাষ করা আমার বৃত্তি। ক্ষেত্রদেবতা আমার আরাধ্য। মাটি বুকে করে রাখা ধর্ম আমার। ধর্ম নষ্ট তো করতে পারব না আমি। তোকে আগেও বলেছি, আমগাছগুলি আমার পরমাত্মীয়। আমার পিতার মতো তারা, পুত্রের মতো। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মৃত্যু দেখব সৎকার করব। কিন্তু পিতাপুত্রকে বেচতে পারব না। 

কানাই মণ্ডল ক্রুরভাবে বলে—তা হলে আমার হিসেব বুঝিয়ে দাও। 

বলাই মণ্ডল বিস্ময়ের গলায় বলেন— কীসের হিসেব? তোমার সমস্ত পাওনা তুমি বুঝে নিয়েছ। এমনকী ভিটেবাড়ির জন্যও টাকা নিয়েছ তুমি। আর কী চাও! 

কানাই মণ্ডল উত্তেজিতভাবে বলে—ষোলোবিঘা জমির ফসল বিক্রির টাকা, তার থেকে মোটা টাকা জমাওনি তুমি? তার অর্ধেক আমার প্রাপ্য। বউদির গয়না-টয়না গড়িয়েছ, সেসব তো ছেড়েই দিলাম। 

বলাই মণ্ডল ঠান্ডা গলায় বলেন—চাষের খরচ নেই? সংসার চালাতে হয়নি আমাকে? তোকে পড়াইনি? তোর বিয়ে দিইনি? আজ এ ব্যবসা, কাল ও ব্যবসা করে টাকা নিসনি তুই? 

—সে আর এমনকী টাকা! 

—হিসেব করে দেখ কানাই। হিসেব যখন এতদূর গেছে তোর, আমাকে যখন এত অবিশ্বাস, তখন পুরো হিসেব কর। আমিও করি। 

—তুমি বলতে চাও, টাকা জমাওনি? 

—যদি জমিয়ে থাকি, সে-টাকা আমার প্রাপ্য। দিনের পর দিন মাঠে পরিশ্রম করেছে কে? আমি করেছি। মুনিষদের সঙ্গে আমি খেটেছি। যদি জমিয়ে থাকি কিছু, সে আমার পারিশ্রমিক। তোমার কোনও অধিকার নেই তাতে। 

—তুমি তা হলে আমার প্রাপ্য আত্মসাৎ করলে! 

—যদি বলিস তাই, তবে তাই। 

কানাই তিক্ত হেসে বলে—সততার মুখোশ তোমার শেষ পর্যন্ত খুলে গেল দাদা। 

—হ্যাঁ। এতক্ষণ বিষয় বোঝাচ্ছিলিস আমাকে। এখন বিষয়ীর মুখ দেখ। 

কানাই উঠে পড়ল। তার জন্য আনা চা পড়ে পড়ে ঠান্ডা হয়ে গেল। কেউ তাকে চা খেয়ে যাবার জন্য অনুরোধ করল না। অন্ধকারে হাঁটতে লাগল সে। সে জানে বলাই মণ্ডলের কথা মিথ্যে নয়। এটা-ওটা করে প্রচুর টাকা সে নিয়েছে। এমনকী আম বিক্রয়ের টাকা নিজে বেশি নিয়ে কম দিয়েছে বলাই মণ্ডলকে। সে মিথ্যে বলেছে। বলাই মণ্ডল তা বিশ্বাস করেছেন। ফসল বিক্রির টাকায় ভালভাবে সংসার চলে যায়। কিন্তু সব বছর সমান ফসল হয় না। এক-দুই বৎসর অন্তর লেগে থাকে বন্যা। অনাবৃষ্টিতে ফসল ঝলসে যায়। প্রচুর টাকা বলাই মণ্ডল পাবেন কোথায়? কী যে এক বিষ উঠে এল তার মধ্যে, সে বলে ফেলল এসব। বলে ফেলল কারণ রানি দিবারাত্র এই বোঝাচ্ছে তাকে। আরও টাকা, আরও টাকা। রানির রূপকলা বিপণির টাকা কম পড়েছে। সারা দেওয়ালে আয়না লাগানো হয়নি। নরম গদি আঁটা ঘোরানো চেয়ার মাত্র একখানি, আরও দুটি অস্তুত দরকার। যন্ত্রপাতিও কম-কম। চোখ-ধাঁধানো আকর্ষণ গড়ে তুলতে হবে আগে, তারপর ব্যবসা আসবে। তখন টাকার পাহাড়ে বসে থাকবে তারা। কিন্তু এখন? অনেক টাকা চাই। যেন-তেল-প্রকারেণ। কিন্তু কী প্রকারে? বলাই মণ্ডল কিছুমাত্র সাহায্য করলেন না। কোনও প্রতিশ্রুতি দিলেন না। কানাইয়ের ক্রোধ জাগে। উন্মত্ত প্রতিহিংসায় হাত নিশপিশ করে। বারবার সে-ই ছোট হয়ে যায়। ক্ষুদ্র থেকে একেবারে কীটাণুকীট হয়ে যায় বলাই মণ্ডলের কাছে। নিজেকে সে সমর্থন করতে চায়। চেয়েছে বেশ করেছে। আছে। আরও প্রাপ্য আছে তার। ন্যায্য পাওনা চাইলেই লোকের রাগ হয়। ভাল সাজছেন! ভাল! এখন আর রামচন্দ্র জন্মায় না। লক্ষ্মণভাইও নেই আর। সকল লোকই সমান সেয়ানা। তার ইচ্ছে করে, রাতের অন্ধকারে বলাই মণ্ডলের আমগাছগুলি মুড়িয়ে কেটে দেয়। 

বলাই মণ্ডল স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলেন। তাঁর মুখে পিতৃস্থানীয় অগ্রজের গাঢ় বেদনার ছায়া! তাঁর চোখে অভিমান ও হতাশার থমকানো স্তব্ধ মুহূর্ত! তাঁর হৃদয়ে এক শঙ্কিত বিপন্ন কবি, যিনি নিজেকে বিষয়বিষবিকার সর্বস্ব ভাবতে ঘৃণা বোধ করেন। এক আহত অসম্মানিত রাত্রির আসন্ন মুহূর্তে সকলেই মূক হয়ে ছিল। মায়া ভাবছিলেন, শেষ পর্যন্ত কি কানাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কই রাখা যাবে না আর? 

বদরুদ্দিন এল তখন। সে আসায় ঘরের পরিস্থিতি কিছু স্বাভাবিক হল। আজ কথা বলার অনেক কিছু আছে। বদরুদ্দিনের আন্দোলন, বলাই মণ্ডলের কাছে উজ্জ্বল পরামানিকের আগমন ইত্যাদি। অতএব বলাই মণ্ডল কথায় ব্যাপৃত হলেন। একসময় মায়া এসে বললেন—সুমি তোমাদের চা করে দেবে। আমি একটু বেরুচ্ছি। 

—কোথায়? 

জিগ্যেস করলেন বলাই মণ্ডল। মায়া বললেন—থানে। 

—থানে? কেন? 

—বৃষ্টি হচ্ছে না। সতী মায়ের থানে বর্ষা আবাহন হবে। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *