রাজনীতিক ও বাঙলা
মানবগোষ্ঠির সবচেয়ে বাচল শ্রেণী হচ্ছে রাজনীতিক শ্রেণী, ভাষা তাঁদের প্রধান অস্ত্র। গরিব দেশগুলোতে গণতন্ত্রের বড়ো অবদান রাজনীতিকসম্প্রদায় : বাকসর্বস্বতা তাঁদের মূল বল ও ধন। তাঁদের সব সময় ও জায়গার কথা বলতে হয়। জনসভায় তাঁরা আগুন জ্বালান, তাঁদের গলা থেকে দাবানল, ভূমিকম্প, বজ্র, মহাপ্লাবন বেরিয়ে আসতে থাকে; এবং বেরোয় বিপুল আবর্জনা।
যখন তাদের দেখি অবিরাম বজ্রপাত হয় নীল থেকে।
পোকা জন্মে আম্রফলে, শবরিতে; ইক্ষুর শরীর ভরে কালান্তক বিষে
প’চে ওঠে পাকা ধান, পঙ্গপাল মেতে ওঠে আদিগন্ত ছড়ানো সবুজে,
ভেসে ওঠে মরা মাছ, বিছানায় বিষাক্ত সাপ ওঠে এঁকেবেঁকে।
স্বপ্নাতুর দুই ঠোঁট ভ’রে ওঠে মরারক্তে— ঘনীভূত পুঁজে।
বাঙলাদেশের রাজনীতিকসম্প্রদায় দ্বিভাষিক : পারিবারিক জীবনে ও জনতার সামনে তাঁরা ব্যবহার করেন সাধু-চলতি-আঞ্চলিক মিশ্রিত বাঙলা, কিন্তু শাসনের সময় সাধারণ ভুতত্রুটিপূর্ণ ইংরেজি ব্যবহার করেন। অনেকে সংসদেও ইংরেজিতে ভাষণ দেন। তথাকথিত আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানসমূহে রাজনীতিকেরা ইংরেজিতেই বক্তব্য প্রকাশের চেষ্টা করেন। আমাদের রাজনীতিকদের দ্বিভাষিকতা তাঁদের চারিত্রিক দ্বিমুখিতার পরিচায়ক;- সাধারণ জনগণকে উত্তেজিত-প্রতারিত করার জন্যে তাঁরা বাঙলা ভাষা ব্যবহার করেন, কিন্তু জনতা থেকে তাঁরা যখন দূরে সুসজ্জিত অফিসে বা গৃহে আসেন, তখন ইংরেজি তাঁদের কাছে তৃপ্তকর মনে হয়। বাঙলাদেশের রাজনীতিক দলগুলোর নাম আমাদের রাজনীতিকদের বিভাষমুখিতার প্রমাণ দেয়। ‘আওয়ামি লিগ’, ‘ন্যাশন্যাল আওয়ামি পার্টি’, ‘বাংলাদেশ ন্যাশন্যালিস্ট পার্টি’ প্রভৃতি নাম আমাদের রাজনীতিকসম্প্রদায়ের জনবিচ্ছিন্ন মানসিকতার পরিচয় বহন করে।