রাজকুমার
খুব ছোটবেলায় আমার এক বন্ধু ছিল, তাকে আমরা রাজকুমার বলে ডাকতুম। তার আসল নাম ছিল চন্দ্রকান্ত। কিন্তু ওর বাবা ছিলেন জমিদার। এক সময় ওর পূর্বপুরুষ নাকি রাজা ছিলেন। বেশ সুন্দর চেহারা ছিল চন্দ্রকান্তর। শান্ত ও নম্র স্বভাবের। কখনো মিথ্যা কথা বলতো না।
আমরা ওকে রাজকুমার বললে ও খুব লজ্জা পেত। চুপ চুপি আমাদের বলতো, কেন ভাই ঠাট্টা করছিস—আমি তো রাজার ছেলে নই। দেশে এখন কোনো রাজাই নেই। আমরা বলতাম, রূপকথায় তো রাজা আছে। তুই সেই রূপকথার রাজকুমার। তোর সেই পক্ষীরাজ ঘোড়া কই রে?
ও বলতো, পক্ষীরাজ ঘোড়া তো দূরের কথা—আমাদের এখন আর একটা এমনি ঘোড়াও নেই।
স্কুল ছেড়ে যখন আমরা কলেজে পড়তে গেলাম তখন চন্দ্রকান্ত আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেল। ও গিয়ে ভর্তি হল কলকাতার বাইরে কি যেন একটা কলেজে—তারপর ওর খোঁজখবর আর পাইনি।
ভুলেই গিয়েছিলাম ওর কথা। কিছুদিন আগে ফরাক্কায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। বাঁধের ওপর কতকগুলো লোক বড় বড় লোহার চাকা ঘোরাচ্ছিল। তাদের মধ্যে একজনকে দেখে চমকে উঠলাম। সেই আমাদের চন্দ্রকান্ত—যাকে আমরা রাজকুমার বলতাম।
তার কাছে গিয়ে বললাম, কিরে, তুই রাজার ছেলে হয়ে শেষ পর্যন্ত কলের মিস্তিরির কাজ করছিস?
সামান্য হেসে রাজকুমার বললো, ভাই, এককালে আমাদের পূর্বপুরুষ রাজারা সাধারণ মানুষের ওপর অনেক অত্যাচার করেছে। এখন আমি নিজে গায়ে খেটে তার খানিকটা শোধ দিচ্ছি।
দেখলাম, রাজকুমারের মুখে কোনো দুঃখের চিহ্ন নেই। এখনো ওকে রূপকথার রাজকুমার বলেই মনে হয়।