রাগ দুঃখের সমর্থন

রাগ দুঃখের সমর্থন

বলাইদা মুখে বলেছিল ঠিকই, কিন্তু সত্যি সত্যি যে করে ফেলবে তা ভাবতে পারিনি।

বারান্দায় ওঠার মুখে দেখলাম গ্রিলের দরজায় বোর্ড টাঙানো। জুতোর বাক্সে সাদা কাগজ সেঁটে তৈরি। তার গায়ে ছবি। হাতে আঁকা ছবি। হাফপ্যান্ট আর ফ্রক পরা দুটো ছোট ছোট ছেলেমেয়ে। তাদের মুখ দেখা যাচ্ছে না। তারা মুখের সামনে বই ধরে মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। পায়ের কাছে খাতা এবং পেনসিল। ভাবটা এমন যেন পড়া শেষ করে তারা লিখতেও বসবে। বোঝাই যাচ্ছে, নিচু ক্লাসের পাটিগণিতের বইয়ের মলাট কেটে এই ছবি লাগানো হয়েছে।

তবে এটা কোনও বইয়ের মলাট নয়। এটা অন্য জিনিস। বোর্ডের তলায় বড় বড় লেখাটা পড়লেই সেটা পরিষ্কার হবে। বলাইদা সত্যি সত্যি তা হলে করে ফেলল!

সেদিন কথাটা শুরু করতেই আমরা হেসে গড়িয়ে পড়েছিলাম। বলাইদা ভাঁড়ের চায়ে চুমুক দিয়ে কড়া গলায় বলল, হাসছিস কেন?

দুলাল হাসতে হাসতে বলল, হাসব না তো কী করব বলাইদা? তোমার এই প্ল্যান শুনেও যদি না-হাসি তা হলে তো ডাক্তার দেখাতে হবে। হাসি আটকে গেছে বলে হাসির ডাক্তার। অপারেশন করতেও হতে পারে।

বলাইদা তখন বিল্টুর দিকে ফিরে বলল, কী রে তোরও কি হাসি পাচ্ছে?

বিল্টু মুখ ব্যাজার করে বলল, না বলাইদা, হাসি নয়, আমার কান্না পাচ্ছে। আমাদের চেনাজানা একজনের মাথাটা একদম গেল সেই কারণে কান্না পাচ্ছে।

বলাইদা চা শেষ করে ভাঁড় ছুড়ে দিল। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বলল, তোরা তা হলে হাসি-কান্নাই কর। কাজটা আমি একাই করব।

আমি বললাম, আহা, বলাইদাকে ব্যাপারটা আগে বুঝিয়ে বলতে দিবি তো। প্ল্যানটা শুনতে দোষ কী? বলাইদা বললা তো, ঘটনাটা শুনি ভাল করে।

বাকিরাও আমার কথায় তাল মেলাল। তারা বলল, হ্যাঁ, হ্যাঁ বলাইদা বিষয়টা খুলে বলে ফেলো। নাও আর এক ভাঁড় চা খাও। একটা অমলেট দিতে বলি?

বলাইদা চোখ কুঁচকে বলল, তোরা সিরিয়াস তো?

সবাই মিলে বললাম, হ্যাঁ, সিরিয়াস। ঠিক আছে অমলেটের সঙ্গে তুমি এক প্লেট আলুরদমও নাও।

এরপর বলাইদা মনোযোগ দিয়ে অমলেট এবং আলুরদম খাওয়া শেষ করল। তারপর যা বলল তার মানে এরকম— এই জগৎ সংসারে খেলাধুলো এবং খেলাধুলো সম্পর্কিত নানা ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। কোনও কিছুই বাদ নেই। ফুটবল, ক্রিকেট, টেবিল টেনিস তো বটেই এমনকী খোঁজ করলে, শিয়ালদা বা ভবানীপুরের গলিঘুঁজির ভেতর লুডো, ক্যারমের কোচিং সেন্টারও হয়তো পাওয়া যাবে। কে জানে হয়তো সেখানে ভরতি করা বেজায় কঠিন। বাবা-মা’রা শনি-রবিবার করে ছেলেমেয়েদের নিয়ে এসে ভরতির ফর্ম নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ায়। কিন্তু খেলার সঙ্গে সবসময় যারা জড়িয়ে আছে, যাদের ছাড়া কোনও খেলাই খেলা নয়, সেই অগণিত সমর্থকের জন্য প্রশিক্ষণের কোনও ব্যবস্থা নেই। অথচ এদের সংখ্যাই সবথেকে বেশি। খেলোয়াড়দের থেকে অনেক অনেক বেশি। এই সাপোর্টারদের জন্যই ভাবনাচিন্তা করেছে বলাইদা। তার মতে, এলোমেলো সমর্থনের দিন আর নেই। খেলা যেমন সুশৃঙ্খল পথে চলে, সমর্থনও চালাতে হবে কায়দা-কানুন মেনে। শিখতে হবে, জানতে হবে। একজন ভাল খেলোয়াড়কে যেমন ট্রেনিং, অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠতে হয়, একজন সমর্থককেও তাই করতে হবে। তবেই সে হয়ে উঠতে পারবে একজন সঠিক সমর্থক। স্বতঃস্ফুর্ত, ইচ্ছেমতো সমর্থনের জন্যই নাকি আজ এত অগোছালো বিচ্ছিরি অবস্থা। বলাইদা বলছে খেলার সমর্থন খেলার মতোই শিল্প। বাইচুংয়ের ব্যাকভলি যখন হাততালি আর লাফালাফি পাবে, সানিয়ার ফোরহ্যান্ড শর্ট তখন পাবে চাপা উচ্ছ্বাস। হাতে কফির মগ থাকবে বলে সেখানে হাততালির আওয়াজ হবে মৃদু। এটাই শেখার। আর সেই শেখানোর দায়িত্বটাই নিতে চায় বলাই।

মধু চোখ বড় বড় করে বলল, দায়িত্ব নেবে মানে? তুমি কী করবে বলাইদা?

বলাইদা মুচকি হেসে বলল, ঠিক করেছি একটা কোচিং সেন্টার গড়ব। বাড়ির একতলাটা তো ফাঁকাই আছে।

আমি বললাম, কোচিং সেন্টার! কীসের কোচিং? এ তো আর ফুটবল ক্রিকেট নয় যে ব্যাট ধরা আর হেড করার কোচিং দেবে!

বলাইদা বলল, তার থেকেও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। যাক, রবিবার সকালে আমার ওখানে চলে আয়। মনে হয়, এ কদিনেই কিছুটা গুছিয়ে নিতে পারব। পারলে সেদিন নিজের চোখেই সব দেখতে পাবি।

সেই নিজের চোখে দেখেই আমরা চমকে গেছি।

বারান্দায় লাগানো বোর্ডের তলায় লেখা—

সমর্থন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
অল্প পারিশ্রমিকে থিয়োরিটিক্যাল এবং
প্র্যাকটিক্যাল উভয়রকম শিক্ষারই সুযোগ আছে।
কোর্স শেষে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।

বাঁদিকের প্রথম ঘরটা অফিস। উঁকি মেরে দেখলাম, ঘরের মাঝখানে টেবিল, চেয়ার টেবিলের ওপর পিতলের একটা ফুলদানি। তাতে ফুল নেই। ব্যালান্স হারিয়ে বারবার টাল খেয়ে পড়ে যাচ্ছে। চেয়ারে বসে আছে বলাইদা। আমাদের দেখে একগাল হেসে বললে, আরে আয় আয়। ভেতরে চলে আয়।

আমরা হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকলাম। হাতের কাছে চেয়ার, টুল, মোড়া যে যা পেলাম টেনে নিয়ে বসে পড়লাম টেবিল ঘিরে। বিল্টু চোখ বড় বড় করে বলল, শেষ পর্যন্ত করে ফেললে বলাইদা! অ্যাঁ করে ফেললে?

জগবন্ধু আমাদের মধ্যে একটু বেশিরকম বোকাসোকা। সে ঘাবড়ে-যাওয়া গলায় বলল, হ্যাঁগো বলাইদা, মাথাটাথা সত্যি ঠিক আছে তো তোমার? আমার তো বেশ ভয় ভয় করছে।

গিরি বলল, আমার কিন্তু বিশ্বাস হচ্ছে না। তুমি সেদিন যখন বললে তখন ভেবেছিলাম ঠাট্টা করছ।

অখিল গালে হাত দিয়ে বলল, আমিও তো সেরকম ভেবেছিলাম। আজ যখন আমাদের আসতে বললে, ভেবেছিলাম ঠাট্টা আরও জমবে। রবিবারের সকালে ভালই কাটবে।

বলাইদা এবার লজ্জা লজ্জা মুখ করে হাসল। বলল, এখন কী মনে হচ্ছে?

আমি বললাম, কী আবার মনে হবে? কিছুই মনে হচ্ছে না। এতটাই অবাক লাগছে যে মাথা পুরো খালি হয়ে গেছে। পৃথিবীতে এরকম কোনও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা আছে বলে তো শুনিনি। ব্যাপারটা কী বলো তো।

বলাইদা বলল, সিলেবাসটা শুনলেই ব্যাপারটা বুঝতে পারবি।

বিল্টু বলল, সিলেবাস! সমর্থন শিক্ষার আবার সিলেবাসও করেছ!

বলাইদা বড় একটা খাতা সামনে টেনে নিয়ে পাতা খুলতে খুলতে বলল, বাঃ, সিলেবাস করব না? সবকিছুতেই বোকার মতো চিৎকার করলে হবে? ফুটবলের সমর্থন আর ক্রিকেটের সমর্থন কি একইরকম হবে? ইস্টবেঙ্গল গোল দিলে তুই যেভাবে হাত-পা তুলে নাচবি ব্রাজিল গোল দিলে কি একইভাবে লাফাবি? উইম্বলডনের সাপোর্টার আর ভোর পাড়ার ক্যাম্বিস টুর্নামেন্টের সাপোর্টারের যেমন পার্থক্য তেমনি সমর্থনেরও রকমফের আছে। আছে না?

গিরি বিন্দুকে ধমক দিয়ে বলল, নিশ্চয় আছে। আলবাত আছে। আগে বলাইদাকে বলতে দিবি তো!

বলাইদা বলল। শুনে আমরা চমকে উঠলাম।

পাকা সমর্থক তৈরির জন্য তিন ধরনের সিলেবাস তৈরি হয়েছে। মাঠে গিয়ে খেলা দেখার সিলেবাস, বাড়িতে বসে টিভি দেখার সিলেবাস আর রেডিয়োতে রিলে শোনার সিলেবাস। এদের মধ্যে আবার ভাগ আছে। প্রিয় দল জিতলে কী করতে হবে সে-কথা যেমন শেখানো হবে, তেমনি প্রিয় দল হেরে গেলে কী হবে সেটাও শেখানো হবে!

দুলাল বলল, কী আর হবে? মোহনবাগান হেরে গেলে আমি সেদিন খাই না। একেবারে অনশন। এর মধ্যে আর শেখার কী আছে বলাইদা?

মধু বলল, ঠিক তাই। ইস্টবেঙ্গল জিতলে আমাদের বাড়িতে আবার ফিস্ট হয়।

বলাইদা চোখ সরু করে বলল, এটাই তো ভুল। হওয়া উচিত ঠিক উলটো। সুখ, দুঃখ সবাইকে চট করে বুঝতে দেওয়াটা বিরাট বোকামি। দক্ষ সমর্থকরা কখনও এই কাজটা করবে না। এতে বিপক্ষে যারা রয়েছে তারা আরও বেশি পেয়ে বসে। এই যেমন বিল্টু বলল। মোহনবাগান হেরেছে বলে ও না-খেয়ে মুখ শুকিয়ে ঘুরে বেড়ালে ওরই বেশি ক্ষতি। ইস্টবেঙ্গলের কোনও সাপোর্টার দেখলে মজা পাবে। হয়তো ন্যাকামি করে বলবে, আহা রে বিল্টু তোর মুখটা শুকনো কেন? কিছু খাসনি বুঝি? কী করেই বা খাবি? তিনখানা গোল খেয়েছিস। আগে ওগুলো হজম কর। ভাতটাত পরে খাস। এটা শুনলে কি ভাল লাগবে?

বিন্টু ভুরু কুঁচকে বলল, তোমার সিলেবাস কী বলছে?

বলাইদা সামান্য হেসে বলল, আমার সিলেবাস বলছে ঠিক উলটো কথা। নিজের দল হেরে গেলে মনে দুঃখ ভুলে হাসিহাসি মুখে থাকো। এমন ভাব করো, যেন কিছুই হয়নি। এতে উলটোদিকের সাপোর্টার ঘাবড়ে যাবে।

গিরি বলল, বাপ রে! এ তো ভীষণ কঠিন কাজ। মনে দুঃখ, মুখে হাসি!

বলাইদা আবার হেসে বলল, কঠিন কাজ শেখানোর জন্যই তো আমি কোচিং সেন্টার খুলেছি। আপাতত একতলার তিনটে ঘরে ক্লাসের ব্যবস্থা। তিন ঘরে তিন ধরনের সিলেবাস। তবে মাঠে গিয়ে সমর্থনের ক্লাসটা ঘরে করা যাবে কি না বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে না হবে। পটকা ফাটানোর একটা ব্যাপার আছে। ঘরে পটকা ফাটলে বাড়িতে ঝামেলা করতে পারে।

আমি অবাক হয়ে বললাম, পটকা ফাটানোর ট্রেনিং হবে! পটকা ফাটানোর মধ্যে আবার শেখার কী আছে?

বলাইদা আরও অবাক হয়ে বলল, শেখার নেই! শুধু গোল দিলেই পটকা ফাটবে কেন? নিখুঁত পাস, পারফেক্ট ড্রিবলিং, এমনকী গোল বাঁচাতে ছোটখাটো ফাউল হলেও পটকা ফাটিয়ে সমর্থন জানানো দরকার। সমর্থন মানে তো আর শুধু ফলাফলে সমর্থন নয়, ফলাফলের পথেও তো সমর্থন চাই। সেটাই শেখার। বুঝলি হাঁদার দল?

আমি থতমত মুখে বললাম, বুঝলাম। তোমার ছাত্রটা কেমন হয়েছে? ভরতি হয়েছে কেউ?

বলাইদা বলল, এখনও হয়নি, তবে হয়ে যাবে। আসলে জিনিসটা বোঝাতে একটু সময় লাগবে। একজন ভাল সমর্থক হতে গেলেও যে অনেক কিছু শিখতে হয় সেটা বোঝা অত সহজ নয়। এই ধর না, টিভির সামনে বসে খেলা দেখতে দেখতে হাত তুলে লাফানো যায়। কিন্তু চলন্ত বাসে কানে রেডিয়ো নিয়ে খেলা শোনার সময় কি লাফানো যায়? নাকি সেটা উচিত হবে? অথচ এটাই দেখবি অনেক সময় মাথায় থাকে না! দুর্ঘটনা ঘটে যায়। আনন্দ তখন আর আনন্দ থাকে না। ভাঙা পা নিয়ে হাসপাতালে শুয়ে কোঁকাতে হয়। যাক অনেক কথা হল, চল এবার ঘুরে দেখাই।

এরপর আমরা সত্যি সত্যি বলাইদার সঙ্গে ঘুরে ক্লাসঘর দেখলাম। খাতাপত্র দেখলাম। সমর্থকদের আচরণ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনও বই বের হয়নি বলে বলাইদা নিজে বই লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আপাত বই হচ্ছে একটাই। নাম— হাতে কলমে সমর্থন। তিনটে চ্যাপ্টার থাকছে। ফুটবল, ক্রিকেট এবং অন্যান্য। বইয়ের খসড়াও বলাইদা দেখাল। প্রথমে ঠিক হয়েছিল, কোর্স হবে তিনমাসের। কিন্তু পরে দেখা গেছে এতে অসুবিধে হবে। এক-একটা খেলা এক-একটা সিজনে। আবার কিছু খেলা চলে সারা বছর ধরেই। তাই শেষ পর্যন্ত অনেক ভেবেচিন্তে বলাইদা এক বছরের সিলেবাস তৈরি করেছে।

বলাইদার সমর্থন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছেড়ে আমরা যখন বেরিয়ে এলাম তখন আমাদের মাথা ভোঁ ভোঁ করছে। খেলা নিয়ে অনেক কিছু শুনেছি, কিন্তু এরকম কখনও শুনিনি।

গিরি বলল, গিনেস বুক অব রেকর্ডসে বলাইদার ছবি পাঠিয়ে দেব ভাবছি।

মধু বলল, অত দূরে যাওয়ার দরকার নেই। টিভি চ্যানেলগুলোতে খবর দিলেই হবে। ক্যামেরা নিয়ে রিপোর্টাররা ছুটে আসবে।

বিল্টু আমাদের থামিয়ে দিয়ে বলল, রাখ তো। দেখিস কিছুদিনের মধ্যে বলাইদাকে পাততাড়ি গোটাতে হবে। ওই উদ্ভট কোচিং সেন্টার থাকবে ভেবেছিস? একেবারেই থাকবে না। সমর্থন শেখার জন্য কে পয়সা খরচ করে ভরতি হবে?

দুলাল বলল, কথাটা বিল্টু ঠিকই বলেছে। ক্রিকেটে ভারত জিতলে মাঝরাতে হইহই করে যে রাস্তায় নেমে পড়ি সে কি কেউ শিখিয়ে দিয়েছে? ইস্টবেঙ্গল শিল্ড পেলে চাঁদা তুলে রসগোল্লা বিলোই কার পরামর্শে? ঘরে দেওয়ালে সানিয়ার ছবি টাঙিয়েছি কি জিজ্ঞেস করে না বই পড়ে? দূর এ জিনিস কখনও শেখানো যায়? না তার দরকার আছে? নিজের দল, নিজের প্রিয় খেলোয়াড়দের জন্য যুগ যুগ ধরে মানুষ পাগল। সেই প্রাচীনকালে অলিম্পিকের সময় থেকেই এই কাণ্ড চলছে। বলাইদার সেন্টার পুরো ফ্লপ করবে।

না। বলাইদার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ফ্লপ করেনি।

সেদিন বাজারে বলাইদার সঙ্গে দেখা হতে জিজ্ঞেস করলাম, কী গো তোমার কোচিং সেন্টার চলছে কেমন? উঠে যায়নি তো?

একগাল হেসে বলাইদা বলল, প্রথমে চলছিল না। এখন অবস্থা খুব ভাল।

আমি অবাক হয়ে বললাম, সে কী! ভাল কীভাবে হল!

বলাইদা আরও বেশি করে হেসে বলল, ভারতের ক্রিকেট দল নির্বাচকরা আমার কোচিং সেন্টারটাকে একেবারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে রে।

আমি চোখ কপালে তুলে বললাম, সেটা আবার কীরকম?

বলাইদা ভুরু নাচিয়ে বলল, কীরকম বুঝতে পারছিস না? সমর্থন না-করলেও সমর্থনের কায়দা শেখাচ্ছি এখন। সিলেবাসে নতুন চ্যাপ্টার ঢুকিয়েছি। নাম দিয়েছি, রাগ দুঃখের সমর্থন। কোর্সটা খুব পপুলার হয়েছে।

আমি আরও অবাক হলাম। বললাম, রাগ দুঃখের সমর্থন! কী বলছ এসব। আমি তো মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না বলাইদা।

উফ্ এটা বুঝতে পারলি না? এই ধর কোনও দেশের সঙ্গে ভারতের ক্রিকেট ম্যাচ চলছে। অস্ট্রেলিয়া কি নিউজিল্যান্ড। আমরা কাদের সমর্থক? উত্তর খুব সহজ। তাই তো?

ঠিক তাই। খুবই সহজ। আমরা হলাম…।

বলাইদা হাত তুলে আমাকে থামিয়ে দিল। বলল, না হে, এখন অবস্থা তাই নয়। প্রিয় খেলোয়াড়রা টিমে জায়গা না-পেলে রাগ দুঃখের সহজ হিসেবটা এখন উলটে যায়। হয়ে যায় কঠিন। যাকে সমর্থন করছি না, তাকেই মনে মনে সমর্থন করে ফেলছি। এই সমর্থনের একটা অন্য কায়দা আছে। লাফালাফি ঝাঁপাঝাঁপি নেই, কিন্তু মনে মনে খুশি। এই ট্রেনিংটাই আমি দিচ্ছি। সাত দিনের স্পেশাল কোর্স। নাম দিয়েছি, রাগ-দুঃখের সমর্থন। কেমন হয়েছে বল?

আমি বিড়বিড় করে বললাম, ভাল হয়েছে। দরকার ছিল।

বলাইদাকে বললাম না, শুধু খেলা নয়, এটা জীবনের অন্য ক্ষেত্রেও হয়। প্রিয় মানুষ, প্রিয় বন্ধু না থাকলে সমর্থন করতে কষ্ট হয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *