রমাকুমত্তউ
উত্তমকুমারকে আমি খুব কমই চিনি। জানি অনেক তার সম্বন্ধে, কিন্তু চিনি অনেক কম। তাই কী লিখব ভেবেই পাচ্ছি না। উত্তমকুমারকে আমি ভালোভাবে একবারই চেনবার সুযোগ পেয়েছিলাম এবং সেটুকুই আমার অভিজ্ঞতা। রোগশয্যায় উত্তমকুমারকে পরপর কয়েকদিন দেখতে গিয়েছিলাম। ময়রা স্ট্রিটের বিরাট ফ্ল্যাটে উত্তমকুমারকে পরিচর্যা করবার জন্য বিরাট আয়োজন ছিল। কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল লোকটা কি নি:সঙ্গ—একা। আমার মনে হচ্ছিল এই উত্তমকুমারের পৃথিবীতে কোনও বন্ধু নেই কেন? খোঁজবার চেষ্টা করেছিলাম—এই যে এত লোকজন যাতায়াত করছেন, এঁরা কি সবাই উত্তমকুমারের আত্মীয়? উত্তমকুমার কি নির্বোধ? অথবা উত্তমকুমার কি চতুর?
আমার মনে হল উত্তমকুমার অতি সাধারণ মানুষ। বোধহয় সে সাধারণ মানুষের মতোই শান্তি চায়। সুনাম কি উত্তমকুমারের জীবনে ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়েছে? আবার সুনামের ফলে উত্তমকুমার জানতে পেরেছে জীবনের দাম কোথায় কতটুকু? রোগশয্যায় শুয়ে আমার মনে হল, উত্তমকুমার এই সবই ভাবছে। বাংলার শ্রেষ্ঠ নায়ক উত্তমকুমার রোগশয্যায় শুয়ে রোজই একজনের আসবার অপেক্ষায় থাকতেন। তিনি তাঁর প্রেয়সী নন—তিনি তাঁর প্রফেশন্যাল বন্ধুও নন—তিনি ডাক্তার জে সি বি-ও নন। অপেক্ষা করতেন যাঁর জন্য তিনি হলেন ‘মা’। একমাত্র মায়ের কাছেই বোধহয় উত্তমকুমার সাধারণ মানুষ এবং সে কারণেই সেখানেই আছে তাঁর সর্বরোগের শান্তি।
উত্তমকুমার কি বন্ধুহীন? উত্তমকুমার কি জ্ঞানী? উত্তমকুমার—আমার মতে একজন অত্যন্ত সাধারণ মানুষ—সে ভালোবাসে তাঁর কাজকে—সে ভালোবাসে গ্ল্যামার জগতের বাইরের বন্ধুবান্ধবদের—সে ভালোবাসে নিজের পরিজনদের। উত্তমকুমার গ্ল্যামারের শীর্ষে উঠেছেন। গ্ল্যামারের একটা ভালো দিক আছে আবার একটা খারাপ দিকও থাকে। এই দুইয়ের টানাপোড়েনে উত্তমকুমার নিশ্চয়ই মাঝে মাঝে চিন্তা করেন—’আমি যদি আবার ভবানীপুরের চাটুজ্যেবাড়ির সেই সাধারণ ছেলেটি হয়ে যাই—তাহলে কী হয়?’
‘প্রসাদ’ পত্রিকা : উত্তমকুমার সংখ্যা (আষাঢ় ১৩৭৫)