রবিন হুড – ৮

আট

ফ্রায়ার টাকের সঙ্গে মাচ্চের দুইদিনেই খুব ভাব হয়ে গেল। সন্ন্যাসী ঠাকুরের নানারকমের বনজ লতাপাতার গুণ জানা ছিল। সেগুলি ব্যঞ্জনে দিলে ব্যঞ্জন সুগন্ধি হয়ে স্বাদ বাড়ায়। একে মাচ্চের রান্না, তার ওপর আবার সন্ন্যাসী ঠাকুরের সুগন্ধি লতাপাতা, দস্যুদল রোজই খুব তৃপ্তির সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করতে লাগল। আর সন্ন্যাসী প্রতি রবিবারে গির্জায় ভগবানের নাম করতেন, দস্যুদল তাতে যোগ দিত। এইভাবেই তাদের দিন বেশ সুখেই কাটতে লাগল।

রবিন হুডের নিয়ম ছিল—খাওয়াদাওয়ার পর প্রায় প্রতিদিন বিকালে বনের ধারে চুপটি করে বসে থাকা, আর কোনও ভদ্রবেশধারী পথিককে রাস্তায় যেতে দেখলে, তাকে খানাতল্লাশ করা। একদিন বিকালে রবিন এইরকম লুকিয়ে থেকে হঠাৎ শুনতে পেলেন, একটা লোক বেশ গলা ছেড়ে গান গেয়ে তাঁর দিকেই আসছে। কাছে আসলে দেখলেন, লোকটা ভ্রমণকারী গায়ক। উইল স্কারলেটের মতো টুকটুকে লাল পোশাক পরা, হাতে বীণ, চেহারাটি উইলের মতো ফিটবাবু না হলেও একেবারে নেহাত মন্দ নয়। বীণা বাজিয়ে গান করতে করতে আসছে। গলার আওয়াজ খুব মিষ্টি। পিঠে তার তিরধনুক ঝোলানো, শরীরটিও বলিষ্ঠ। গানটি যেন তার নিজেরই তৈরি—শহরে একটি মেয়ে আছে তাকে বড় ভালোবাসি, শহরে গেলেই সে আমাকে বিয়ে করবে—–বাঃ কী মজা!’—গানটার ভাব এই।

গান শুনেই রবিন হুডের ম্যারিয়ানের কথা মনে পড়ল, কাজেই পথিককে কিছু বললেন না। সে আপন মনে গান গেয়ে চলে গেল। রবিন হুড আড্ডায় ফিরে এসে সকলকে এই গায়কের কথা বললেন। আর বললেন,–’দ্যাখো! এই গায়কের ফেরবার সময় তোমরা যদি কেউ তাকে দেখতে পাও, তবে আমার কাছে নিয়ে এসো।’

পরদিন লিটল জন ও মাচ্চ আড্ডায় ফেরবার সময় এই গায়ককে দেখতে পেল। অন্তত তার লাল টুকটুকে পোশাক এবং হাতে বীণা দেখে তারা মনে করল, যে এর কথা রবিন হুড বলেছিলেন। কিন্তু বেচারির এখন আর সেরূপ চেহারা নেই—মুখখানি বিমর্ষ, পোশাক পরিচ্ছদ ছেঁড়াখোঁড়া। লিটল জন ও মাচ্চ কাছে এসে তাকে জিজ্ঞাসা করল—’তোমার মুখ এত মলিন কেন ভাই? তোমার কী হয়েছে?’

সঙ্গে-সঙ্গে গায়ক ধনুকে তির লাগিয়ে বলল,—’সরে যাও, আমাকে বিরক্ত কোরো না। আমার কাছে তোমাদের কী দরকার?’ ‘আরে না ভাই, তুমি রাগ করছ কেন? আমরা তোমার ভালোর জন্যই বলছি। আমাদের মনিব ওই গাছের তলায় বসে আছেন, তোমাকে অনুগ্রহ করে তাঁর কাছে একটিবার যেতে হবে।’

ধনুক নামিয়ে গায়ক বলল,–’আচ্ছা। চলো তবে তোমাদের মনিবের কাছে।’ লিটল জন ও মাচ্চ তখন গায়ককে নিয়ে রবিন হুডের কাছ হাজির হল।

রবিন গায়ককে দেখে বললেন,–’কী হে ভাই, ব্যাপার কী? কাল দেখলাম তুমি ভারী ফূর্তি করে যাচ্ছিলে, শহরে গিয়ে একটি মেয়ের সঙ্গে তোমার বিয়ে হবে—আর, আজ কেন ভাই তুমি এত বিমর্ষ, তবে কি তুমি সে লোক নও?’

গায়ক বলল,–’আজ্ঞে হাঁ, আমি ঠিক সে-ই। তবে আজ আমার মনটা বড়ই খারাপ বটে।’

রবিন বললেন,—’কেন ভাই, তোমার কী হয়েছে আমাকে বলো। হয়তো বা তোমার কোনও তোমার কোনও উপকারও করতে পারি।’

গায়ক বলল,—’মশাই, তেমন আশা দুরাশা মাত্র। পৃথিবীতে কারও দ্বারা আমার উপকার হতে পারে বলে আমার মনে হয় না। যা হোক, তবু আপনাকে আমার কথা বলছি শুনুন। কাল যে মেয়েটির বিষয়ে গান গেয়ে গেয়ে যাচ্ছিলাম, আমার সঙ্গে তার বিয়ের ঠিক ছিল, কিন্তু মেয়েটির ভাই জোর করে একজন বুড়ো যোদ্ধার সঙ্গে আজ তার বিয়ে দিচ্ছে; এখন তাকেই যখন আমি পেলাম না, তখন বাঁচি কি মরি কিছুতেই আর কিছু আসে যায় না।’

রবিন বললেন,—’ ‘কী! একটা বুড়োর সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে! কেন?’ গায়ক বলল,—’তবে শুনুন বলি, সব কথা আপনাকে খুলেই বলছি। এই বুড়ো নরম্যান যোদ্ধার নজরটা অনেক দিন থেকেই মেয়েটির সম্পত্তির ওপর ছিল। অবশ্য সম্পত্তি খুব যে একটা বিশেষ কিছু তা নয়। কিন্তু তার ভাইয়ের ইচ্ছে, যে একজন নামজাদা লোকের সঙ্গে তার বোনের বিয়ে হয়। তাই সে বুড়োর সঙ্গে পরামর্শ করে আজ বিয়ের দিন ঠিক করেছে, আজই মেয়েটির বিয়ে হবে।’

রবিন হুড জিজ্ঞাসা করলেন,—’মেয়েটি তোমাকে ভালোবাসে?’ গায়ক বলল,–’শুধু ভালোবাসে? তার আংটি পর্যন্ত আমার হাতে আছে, আজ সাত বছর থেকে সেই আংটি আমি পরে আছি।’

‘আচ্ছা তোমার নাম কী ভাই?’

গায়ক বলল,–আমার নাম, এলান-আ-ডেল।’

রবিন বললেন— ‘আচ্ছা এলান-আ-ডেল! আমি যদি মেয়েটিকে এনে দিতে পারি, তুমি আমাকে কী পুরস্কার দেবে?’

গায়ক বলল,–’মহাশয়! আমার কাছে মোটে পঁচিশটা শিলিং আছে। তবে কিনা—আচ্ছা দাঁড়ান, আমার একটা কথা মনে পড়েছে। আপনার নাম কি রবিন হুড?’

রবিন বললেন,–’হাঁ আমার নাম রবিন হুডই বটে।’

গায়ক বলল,–’তা যদি হয় তবে আমার নিশ্চয় বিশ্বাস আপনাকে দিয়ে আমার উপকার হবে। আপনি যদি সেই মেয়েটিকে উদ্ধার করে দিতে পারেন, তবে আজীবন আপনার কেনা গোলাম হয়ে থাকব।’

রবিন বললেন,–’আচ্ছা তাই হবে। এখন বলো দেখি বিয়ে কোথায় হবে?’

গায়ক বলল,—’এখান থেকে প্রায় পাঁচ মাইল দূরে প্লিম্পটন গির্জা আছে, সেখানে আজ বিকালে তিনটার সময় বিয়ে হবে।’

রবিন হুড সেই মুহূর্তে প্রস্তুত হয়ে বললেন,—’চলো প্লিম্পটন গির্জায় এখনই আমাদের যেতে হবে। উইল স্টাটলি! তুমি বাছা বাছা জনা চব্বিশ লোক নিয়ে ঠিক তিনটার সময় গির্জায় হাজির থাকবে। মাচ্চ! এলানের নিশ্চয়ই বড় খিদে পেয়েছে, তুমি তাকে কিছু খাবার জোগাড় করে দাও। উইল স্কারলেট! তুমি নিজে এলানকে ঠিক বরের মতো করে সাজিয়ে দেবে। আর ফ্রায়ার টাক! তুমি তোমার বই-টই নিয়ে প্রস্তুত হয়ে আমাদের আগেই সেখানে চলে যাও।’

এদিকে প্লিম্পটন গির্জায় মহা ধুমধাম লেগে গেছে। হারফোর্ডের বিশপ মহাশয় স্বয়ং পুরোহিত। চারদিকের সব বড়লোক বিয়েতে হাজির থাকবেন, সেজন্য বিশপ মহাশয় খুব সেজেগুজে এসেছেন। নানারঙের পতাকা এবং ফুলপাতা দিয়ে গির্জাটিকে সাজানো হয়েছে। একজন দুইজন করে নিমন্ত্রিত ভদ্রলোকেরাও আসতে আরম্ভ করেছেন। এমন সময় বিশপ দেখলেন, সবুজ রং-এর পোশাক পরা একজন গায়ক গির্জার দরজায় এসে উঁকি মারছে।

বিশপ তাকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন—’তুমি কে হে বাপু? বীণা হাতে করে গির্জার দরজায় উঁকি-ঝুঁকি মারছ কেন? তুমি তো ভারী বেয়াদপ!’

গায়ক বলল,–’আজ্ঞে না হুজুর, দোহাই আপনার! আমি একজন সামান্য গায়ক, গান গেয়ে বেড়াই। সকলেই আমাকে দয়া করে থাকেন। মনে করলাম, আজ প্লিম্পটন গির্জায় মস্ত বড় বিয়ে, কত বড়–বড় লোক আসবেন, ভারী আমোদ হবে—আমার গান শুনে যদি কেউ খুশি হন, তাই আমি এখানে এসেছি।’

বিশপ বললেন,–’আচ্ছা বেশ, আমিও গান শুনতে ভালোবাসি। আচ্ছা, একটু গাও দেখি।’

গায়ক বলল,–’আজ্ঞে না মশাই, মাপ করবেন। এখন কিছুতেই আমি যন্ত্রে হাত দেব না। বর-কনে আসবার আগে যদি গান গাই তা হলে তাদের অমঙ্গল হবে।’

বিশপ বললেন,–’আচ্ছা বাপু। তোমার যখন খুশি তখনই গেয়ো। ওই বুঝি বর-কনে আসছে।’

দেখতে দেখতে বর-কনে এসে হাজির, বৃদ্ধ বর লাঠিতে ভর করে আস্তে-আস্তে চলেছেন; তাঁর আগে আগে সোনালি এবং লাল রং-এর পোশাক পরে দশ জন তিরন্দাজ। বরের পিছনে কনে তার ভাইয়ের হাতে ভর করে আসছিল। মেয়েটি চমৎকার সুন্দরী, কিন্তু দেখলেই বোঝা যায়, কেঁদে-কেঁদে তার চোখ দুটো ফুলে গেছে।

বর-কনে কাছে এলে পর গায়ক বলে উঠল,–’বাবা ঢের ঢের বিয়ে দেখেছি কিন্তু এরকম অসম্ভব বর-কনে তো কখনও দেখিনি।’ কাছে একজন লোক ছিল, সে গায়কের কথা শুনে ধমক দিয়ে বলল,—’চুপ করো বেয়াদব।’

গায়ক কাকেও গ্রাহ্য করল না। মেয়ের কাছে গিয়ে দাঁড়াল এবং সুযোগ দেখে ফিসফিস করে তার কানে কানে বলল,–’কিছু ভয় নেই, এখনই বিপদ কেটে যাবে।’

মেয়েটি ভয়ে ভয়ে গায়কের দিকে তাকাল। কিন্তু গায়কের হাসি দেখেই তার ভয় দূর হয়ে গেল। গায়ককে তার বোনের এতটা কাছে দেখে মেয়ের ভাই রেগে বলল,–’সরে যা হতভাগা গাধা কোথাকার!

গায়ক হাসতে-হাসতে বলল,–’আঃ, রাগ করেন কেন মশাই? আমি গেলে যে বর-কনের অমঙ্গল হবে।’

মেয়ের ভাই আর কোনও আপত্তি করলেন না, বিনা বাধায় গায়ক মেয়ের সঙ্গে গির্জায় প্রবেশ করে, বেদির কাছে যেখানে বিশপ মহাশয় দাঁড়িয়েছিলেন, সেইখানে গিয়ে হাজির হল।

বিশপ গায়ককে দেখে বললেন,–’এখন তুমি বীণা বাজিয়ে গান ধরে দাও।’

গায়ক বলল—’যে আজ্ঞে বিশপ মহাশয়। তবে কিনা আমি বীণা বাজিয়ে গান করি, আবার কখনও কখনও শিঙা বাজিয়েও গান করে থাকি, শিঙার আওয়াজটি বড় মিষ্টি।’ এই বলে তার জামার ভিতর থেকে শিঙা বাইরে করে বাজাল—শিঙার আওয়াজে গির্জার দালান কেঁপে উঠল।

শিঙা শুনেই বিশপ চিৎকার করে বলে উঠলেন,—’সর্বনাশ হল, সর্বনাশ হল! কে আছ এখানে, এই ব্যাটাকে শিগগির ধরো। এ আর কিছুই নয় রবিন হুডের চালাকি।’

বাস্তবিকই তাই! গায়ক আর কেউ নয়, স্বয়ং রবিন হুড। এলান আ-ডেলের পোশাক পরে, তার বীণা হাতে নিয়ে বিবাহ-সভায় এসেছিলেন।

যে দশজন তিরন্দাজ পিছনে দাঁড়িয়েছিল, বিশপের চিৎকার শুনে তারা এগোল বটে কিন্তু গোলমাল শুনে দর্শকদের সকলেই উঠে দাঁড়িয়েছে! পথ একেবারে বন্ধ, সুতরাং তারা পিছনেই আটকা পড়ে গেল।

তখন রবিন হুড লাফ দিয়ে বেদির ওপরে উঠলেন এবং ধনু বাগিয়ে চিৎকার করে বললেন, ‘যে যেখানে আছ দাঁড়িয়ে থাকো, খবরদার! যে কেউ এগিয়ে আসবে, নিশ্চয় জেনো তাকেই মরতে হবে। আর আপনারা যাঁরা বিয়ে দেখবার জন্য এসেছেন, দয়া করে যে যার আসনে বসে থাকুন। বিয়ে নিশ্চয়ই হবে, তবে কি না কনে এখন তার বর নিজেই পছন্দ করে নেবে।’

এমন সময় গির্জার দরজায় ভীষণ গণ্ডগোল আরম্ভ হল। উইল স্টার্টলি চব্বিশ জন তিরন্দাজ নিয়ে এসে হাজির। গির্জায় প্রবেশ করেই তারা বৃদ্ধ বরের সেই দশ জন তিরন্দাজকে, মেয়ের ভাইকে এবং হাজির অপর প্রহরীদেরকে বেঁধে ফেলল। তখন উইল স্কারলেটকে সঙ্গে করে এলান-আ-ডেলও গির্জায় ঢুকল।

রবিন হুড বললেন,–’আমাদের ন্যায়বান রাজা হেনরির আইন মানা হোক। বিয়ের আগে কনে নিজে তার বর পছন্দ করে নেয়, এই হচ্ছে, রীতি।’ এই বলে মেয়েকে জিগ্যেস করলেন,–’বলো দেখি মেয়ে, কাকে তুমি বর করতে চাও?’

মেয়েটি লজ্জায় কিছু বলল না বটে কিন্তু তার চোখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠল। ধীরে-ধীরে এলান-আ-ডেলের কাছে গিয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরল।

এলান-আ-ডেলকে মেয়েটি পছন্দ করল দেখে রবিন হুড বললেন,—’এই তো হচ্ছে ঠিক বর! তবে আসুন বিশপ মহাশয়! আর দেরি কেন, কাজ শুরু করে দিন।’

বিশপ বললেন,–’না! তা কখনই হতে পারে না! বিয়ের ঘোষণাপত্র তিনবার চেঁচিয়ে না বললে কিছুতেই বিয়ে হতে পারে না— এই হচ্ছে দেশের নিয়ম!

রবিন বললেন——আচ্ছা বেশ! এসো তো হে লিটল জন, তুমিই না হয় এ কাজটা করো।’ এই বলে রবিন হুড বিশপের গা থেকে পাদ্রির জামাটা খুলে নিয়ে লিটল জনকে পরিয়ে দিলেন।

লিটল জন তখন গলা ছেড়ে চিৎকার করে সাতবার ঘোষণা শোনাল। কাছেই ফ্ৰায়ার টাকও ছিল, তার দিকে চেয়ে রবিন হুড বললেন—এই যে দেখছি একজন পাদরিও হাজির। তা হলে বিশপ মহাশয়! আপনি না হয় বিয়ের সাক্ষীই থাকবেন, এ লোকটিই পুরুতের কাজ করুক।’

পাদরি ফ্রায়ার টাক, রবিন হুডের কথা শুনে এগিয়ে এল, বর কনে তার সমানে হাঁটু গেড়ে বসল। বৃদ্ধ নাইটকেও সাক্ষী হওয়ার জন্য ধরে রাখা হল–বেচারি সম্পূর্ণ অনিচ্ছুক, রাগে তার শরীর জ্বলে যাচ্ছিল, কিন্তু নিরুপায়।

পুরোহিত ফ্রায়ার টাক তখন জিগ্যেস করল,–’কে কন্যা সম্প্রদান করবে?’

রবিন হুড এগিয়ে এসে বললেন,–’আমি সারউড বনের রবিন হুড, আমিই কন্যাকর্তা, সম্প্রদানের কাজ আমিই করব।’

সকলকে বিস্ময়ে অভিভূত করে এইভাবে বিবাহ-ব্যাপার সম্পন্ন হয়ে গেলে বর-কনে রবিন হুডের দলের সঙ্গে সারউড বনে রওনা হল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *