একুশ
ফ্রায়ার টাকের চিকিৎসায় লিটল জনের হাঁটু প্রায় সেরে উঠেছে। এখন চিকিৎসার চেয়ে শক্তির প্রয়োজন বেশি। রোগীকে এখন বলপ্রয়োগ করে বিছানায় ধরে রাখতে হয়। ফ্রায়ার টাক যদি একরাশ ধর্মগ্রন্থ লিটল জনের পায়ের ওপর চাপিয়ে, নিজে তার পেটের ওপর না বসে থাকত, তাহলে জন নিশ্চয়ই উঠে পড়ত। এইরকম আসুরিক প্রণালীর চিকিৎসায় বাধ্য হয়ে জনকে শুয়ে থাকতে হত। ঘা একেবারে শুকোলে, ফ্রায়ার টাক জনকে নিয়ে আড্ডায় গিয়ে হাজির। এতদিন পর জনকে সুস্থ সবল দেখে, সকলের মনে আনন্দের সীমা রইল না।
একে ঠান্ডা রাত্রি, সঙ্গে-সঙ্গে আবার অল্প-অল্প বৃষ্টি। সন্ন্যাসী টাক খুব দেরি না করে আশ্রমে ফিরে এল। আগুন জ্বেলে, ভিজে কাপড় পালটে খেতে বসবে, এমন সময় দরজায় ঘা পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে তার কুকুরগুলোর ভীষণ চিৎকার শুনে বুঝতে পারল, বাইরে আগন্তুক হাজির।
সন্ন্যাসী বিরক্ত হয়ে বলল,–’মরণ আর কি! কে হে বাপু এত রাত্রে ঝড়-বাদলে এসে দরজায় ঘা দিচ্ছ? এটা হোটেল নয়। সরে পড়ো, আমার খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে।
‘কে আছে ভিতরে? শুনতে পাও না কি? শিগগির দরজা খোলো।’
টাক রেগে বলল,—’যাও, বাপু চলে যাও, এখানে কিছু হবে না। এই খানিকটা গেলে পরই গ্যামওয়েল শহর পাবে। সেখানে চলে যাও।’
আগন্তুক উত্তর করল, ‘বাবা! গ্যামওয়েলের রাস্তাটাস্তা আমি জানি না, আর তা জানলেও যেতাম না। বাইরে থেকে ভিজে গেলাম, তুমি তো ভিতরে দিব্বি আরামে আছ। খোলো বাপু দরজাটি, মিছিমিছি কেন দেরি করছ? এই বলে আগন্তুক দমাদম দরজায় আঘাত করতে লাগল।’
‘তুমি গোল্লায় যাও। আমি বেচারি সন্ন্যাসী মানুষ, বসে বসে ভগবানের নাম করছি, আমাকে কেন জ্বালাতে এসেছ?’
কী আর করবে, টাক মশাল জ্বেলে এবং একটা কুকুর সঙ্গে নিয়ে গিয়ে দরজা খুলল। দরজা খুলেই দেখতে পেল, আগন্তুক একজন যোদ্ধা। কালো রং-এর বর্ম আঁটা, মাথায় পালক দেওয়া কালো হেলমেট। পাশেই ঘোড়াটি দাঁড়িয়ে আছে, সেটারও গায়ে কালো রং–এর মূল্যবান বর্ম।
সন্ন্যাসীকে দেখেই কৃষ্ণবর্ণ নাইট জিজ্ঞাসা করলেন,—’ ‘ভাই, কিছু খাবার আছে কি? আজ রাতটা তোমার ঘরেই থাকতে চাই, একটু জায়গা দিতে হবে যে।’
টাক বলল,–’স্যার নাইট! তোমার তো দূরের কথা, তোমার ঘোড়াটার পছন্দ হয় এমন একটু জায়গাও আমার এখানে নেই। আর খাবারের কথা বলছ? রুটির টুকরো আর জল ছাড়া আর কিছু নাই।’
‘না ভাই! আমার নাকে গন্ধ এসেছে, ভালো খাবার আছে। তুমি তো বললে না, কী আর করি, আমি নিজেই একবার দেখি। তোমার ভাবনা নেই, আমি তোমাদের আশ্রমে টাকা দেব। আমার ঘোড়ার গায়ের একটা কম্বল হলেই হল, ঘরের দাওয়ায় দাঁড়িয়ে থাকবে এখন।
আর বেশি বাক্যব্যয় না করে নাইট সটান ঘরের ভেতর ঢুকে পড়লেন। একটু অভদ্রতা হলেও তাঁর এইরকম প্রভুত্বের ভাব দেখে টাক মনে-মনে সন্তুষ্ট হল।
তারপর নাইটকে বলল,—’স্যার নাইট! আপনি বসুন। ঘোড়াটাকে আমি কিছু খাবার দিয়ে বেঁধে রাখছি। আজ রাতটা আমার বিছানা এবং খাবার দুজনে ভাগ করে নেওয়া যাবে। তারপর কাল সকালে দেখা যাবে—কে কাকে হুকুম করতে পারে?’
‘তা বেশ তো। আমি রাজি আছি।’
তখন ঘোড়াটাকে বেঁধে রেখে, সন্ন্যাসী একটি ছোট টেবিল আগুনের কাছে এনে বলল,–’স্যার নাইট! আপনার সাজপোশাক খুলে রাখুন। আমার বড় খিদে পেয়েছে, চলুন, খাওয়া যাক।‘
খাওয়াদাওয়ার পর অনেকক্ষণ পর্যন্ত গল্প করে দুজনে পাশাপাশি শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন।
পরদিন সন্ন্যাসীর ঘুম ভাঙার আগেই কৃষ্ণবর্ণ নাইট উঠে হাত মুখ ধুয়ে আগুনের পাশে বসে আছেন, এমন সময় সন্ন্যাসীরও ঘুম ভাঙল। আগন্তুক তার আগেই উঠে পড়েছে দেখে, সন্ন্যাসী লজ্জিত হয়ে বলল,–’তাই তো স্যার নাইট! আমার বড় অন্যায় হয়েছে। কোথায় আমি আগে উঠে আপনাকে আদরযত্ন করব, না আপনিই আমার আগে উঠে পড়েছেন। এখন চলুন, তবে একটু জলযোগ করা যাক। কাল রাতে আপনি যে টাকার কথা বলেছিলেন, তা আমি আপনার কাছ থেকে নেব না। বরং আপনি যখন যাবেন, তখন দেখা যাবে আপনাকে কোনওরকম সাহায্য করতে পারি কি না।’
‘আচ্ছা, এখন বলো দেখি, ডাকাত রবিন হুডকে কী করে পাই? রাজা আমাকে পাঠিয়েছেন, রবিন হুডকে একটা খবর বলতে হবে। কাল সব দিন আমি খুঁজেছি কিন্তু কোথাও তাকে পাইনি।’
‘স্যার নাইট! আমি সন্ন্যাসী মানুষ, রবিন হুড-টুডের কোনও ধার ধারি না।’
‘আরে না সন্ন্যাসী ঠাকুর, তা বলছি না। রবিন হুডের মন্দ করবার আমার কোনও মতলব নেই। আমার বড় দরকার, একবার তার সঙ্গে দেখা করতে চাই।’
‘তা যদি হয় তবে চলুন। আমি তাদের আড্ডায় আপনাকে পৌঁছে দেব। অনেক দিন থেকে এ বনে আছি, তাদের খবরটবর একটুআধটু কানে আসে বইকি। তবে কি না ধর্মকর্ম নিয়েই আমি ব্যস্ত থাকি, সেটাই আমার আসল কাজ।’
ব্ল্যাক নাইট বললেন,–’আচ্ছা ভাই, তাহলে এখন চলো।’ তখন দুজনে সন্ন্যাসীর আশ্রম থেকে বনের দিকে চললেন। প্রায় তিন-চার মাইল এলে পর, হঠাৎ একটি ঝোপের ভেতর থেকে একজন লোক বেরিয়ে এসেই ব্ল্যাক নাইটের ঘোড়ার রাশ ধরল। লোকটি রবিন হুড, খানিক দূর থেকেই ফ্রায়ার টাকের সঙ্গে নাইটকে বনের দিকে যেতে দেখে, টাকের অভিসন্ধি বুঝতে পারছিলেন। টাক যেন তাঁকে চিনতেই পারল না। রবিন হুড নাইটকে বললেন,–’থামুন মশাই! আজ আমি এই রাস্তায় পাহারা দিচ্ছি। হিসাব না দিয়ে কেউ এখান দিয়ে যেতে পারে না।’
নাইট বললেন,—’থামতে বলবার তুমি কে হে বাপু? একজন লোকের হুকুমে কাজ করা তো আমার অভ্যাস নেই। ‘
‘তা বেশ তো, আরও লোক আনছি।’ এই বলে হাতে তালি দিলেন এবং হঠাৎ দশ জন বলিষ্ঠ অস্ত্রশস্ত্রধারী যোদ্ধা এসে হাজির হল।
তখন রবিন বললেন,–’দেখুন স্যার নাইট! আমরা হচ্ছি তিরন্দাজ। এই বনেই থাকি। আপনার মতো বড় লোক যোদ্ধারা দয়া করে যা কিছু দেন, তা দিয়েই আমাদের খাওয়াদাওয়া চলে। আপনার কাছে নিশ্চয়ই ঢের টাকা আছে। আমাদের কিছু দিয়ে যান।’
ব্ল্যাক নাইট বললেন,–’দ্যাখো, আমি কিন্তু রাজার দূত। রাজাও খুব কাছেই আছেন। তিনি রবিন হুডের সঙ্গে দেখা করতে চান, এই খবর নিয়ে আমি এসেছি।’
এই কথা শুনে রবিন হুড তক্ষুনি মাথার টুপি খুলে বললেন,–’ভগবান আমাদের রাজার মঙ্গল করুন! আমিই হচ্ছি রবিন হুড। যে
লোক আমাদের রাজাকে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় বলে না মানে, আমি নিশ্চয়ই বলছি সে নরকে যাবে।’
স্যার নাইট বললেন,—’—’কথাটা একটু হুঁশিয়ার হয়ে বলো। শেষে কিন্তু শাপটা তোমার নিজের ঘাড়েই চাপবে।’
‘কেন মশাই? আমি নিশ্চয়ই বলছি, আমার চেয়ে বাধ্য রাজার অন্য কোনও প্রজা নেই। অবশ্য পেটের জ্বালায় মাঝে-মাঝে রাজার দুটো একটা হরিণ মেরে খাই বটে, কিন্তু আমার ঝগড়া হচ্ছে কেবল পাদরিদের সঙ্গে আর গরিবের শত্রু অত্যাচারী ব্যারনদের সঙ্গে।
আপনার সঙ্গে এখানে দেখা হয়ে বড় ভালো হয়েছে। দয়া করে আমাদের সঙ্গে আজ আপনাকে খেতে হবে।
স্যার নাইট বললেন,–’আমি শুনেছি এখানে খেলেই খরচ দিতে হয়। আমাকে কত দিতে হবে?’
‘না-না, আপনি হচ্ছেন রাজার দূত। আপনার কাছ থেকে খরচ কী নেব? আচ্ছা আপনার কাছে কত টাকা আছে?’
নাইট বললেন,–’আমার কাছে তো বেশি কিছু নেই। মোটে চল্লিশটা মোহর আছে। পনেরো দিন যাবৎ নটিংহাম শহরে রাজার সঙ্গে আছি, টাকা পয়সা অনেক খরচ হয়ে গিয়েছে।’ এই কথা বলে চল্লিশটা মোহর রবিন হুডের হাতে দিলেন।
রবিন হুড চল্লিশটা মোহর নিয়ে অর্ধেক তাঁর লোকদের দিলেন, বাকি অর্ধেক ফিরিয়ে দিয়ে বললেন,–’মশায়, এই টাকাটা আপনার হাত খরচের জন্য রেখে দিন। রাজার সঙ্গে থাকা, টাকাপয়সার দরকার হবে বইকি।’
তারপর রবিন হুড ব্ল্যাক নাইটকে নিয়ে তাঁদের আড্ডায় গেলেন। আড্ডায় পৌঁছে, শিঙা বের করে তিনটি ফুঁ দেওয়ামাত্র, চারজন সেনাপতির অধীনে চারটি দস্যুদল এসে হাজির হল। তারা রবিন হুডকে নমস্কার করে সকলেই নিজের-নিজের আসনে বসল। আর একটি সুন্দর বালক-ভৃত্য এসে রবিন হুডের ডান পাশে দাঁড়াল।
ব্ল্যাক নাইট দেখেশুনে অবাক হয়ে গেলেন। মনে-মনে ভাবলেন,–’আমার লোকজন আমাকে যা মান্য করে, রবিন হুড়ের লোকেরা দেখছি তাকে তার চেয়ে বেশি মানে।’
এরপর সকলে একসঙ্গে বসে খাবার খেলেন। খাওয়ার পর রবিন হুড বললেন,—’স্যার নাইট! এবারে আপনাকে কিছু তিরের খেলা দেখাব। ভালোই হোক আর মন্দই হোক, দেখে আপনার যা মনে হয়, রাজাকে কিন্তু বলতে হবে।’
রবিন হুডের সংকেত পেয়ে সকলেই তিরধনুক নিয়ে প্রস্তুত হল। অনেক দূরে মাটিতে একটি গাছের ডাল খাড়া করে, তার ডগায় একটি ফুলের মালা রেখে রবিন হুড বললেন,–’এইটি হচ্ছে লক্ষ। যে এই মালার ভেতর দিয়ে তির চালাতে পারবে না, তাকেই এই ফ্রায়ার টাকের হাতের একটা ঘুষি খেতে হবে।’ ফ্রায়ার টাক তখন জামার আস্তিন গুটিয়ে উঠে দাঁড়াল।
ব্ল্যাক নাইট হোঃ-হোঃ করে হেসে বললেন—আরে বন্ধু, তুমিই তাহলে ফ্রায়ার টাক?
ধরা পড়ে টাক অপ্রস্তুত হয়ে বলল—’হাঁ স্যার নাইট। আমিই ফ্রায়ার টাক, তা অস্বীকার করব কেন? আমি দস্যু দলের পাদরি। তা বলে কি তাদের ভুল হলে সাজা দেব না?’
ডেভিড-অব-ডনকেস্টার, স্টার্টলি, উইল স্কারলেট, এলান এবং লিটল জন প্রভৃতি সকলের তিরই পরিষ্কার মালটির ভেতর দিয়ে চলে গেল। মাচ্চ মনে করল, সেও একটু বাহাদুরি দেখাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বেচারির তির মালার প্রায় এক হাত দূর দিয়ে গেল।
লিটল জন তখন মাচ্চকে ডাকল—’এসো মাচ্চ, পাদরির কাছ থেকে আশীর্বাদটা নিয়ে যাও। পাদরির আশীর্বাদ পেয়ে মাচ্চ, ঘাসের ওপর গড়াগড়ি দিতে লাগল। দলের অপর লোকদের বেলাও মাচ্চ–এর দশা অনেকেরই ঘটল।
শেষে রবিন হুডের পালা। ধনুক নিয়ে তিনিও লক্ষ করে তির চালালেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তিরটির পালক ভালো করে বাঁধা না থাকায়, তা লক্ষের চার আঙুল দূর দিয়ে চলে গেল। রবিন হুডের প্রায়ই ভুল হয় না, সুতরাং এই ব্যাপার দেখে সকলে একেবারে অবাক!
রবিন হুড বিরক্ত হয়ে নতুন তির নিলেন এবং খুব দ্রুত পরপর তিনটি তির মারলেন। প্রত্যেকটি পরিষ্কার মালার মধ্য দিয়েই গেল। নাইট ভাবলেন,–’এমন আশ্চর্য তির চালানো তো কখনও দেখিনি!’ দলের সকলেই খুব বাহবা দিতে লাগল।
কিন্তু উইল স্কারলেট তখন গম্ভীরভাবে রবিন হুডের কাছ এসে বলল,–’বাস্তবিকই ভালো তির চালিয়েছ ভাই! কিন্তু ভালোটার দরুন যেমন বাহবা পেয়েছ, তেমন মন্দটার দরুন সাজাটাও নাও?’
রবিন হুড বললেন,–’তা কী করে হয় স্কারলেট? টাক হচ্ছে আমার দলের লোক, আমার অধীন, সে কি আমাকে সাজা দিতে পারে? আচ্ছা স্যার নাইট! আপনি হচ্ছেন রাজার লোক, আপনিই না হয় আমার সাজাটা দিন।’
ফ্রায়ার টাক কেন তা শুনবে, সে বলল,–’না বাবা! তা কী করে হবে। আমি হচ্ছি চার্চের লোক! রাজার চেয়েও বড়।’
ব্ল্যাক নাইট উঠে বললেন,–’আরে! রাজার চেয়েও পাদরি বড় বলছ, সেটা আমাদের দেশে খাটবে না। এসো রবিন হুড, আমি তৈরি আছি।’
নাইটের কথা শুনে ফ্রায়ার টাকের ধৈর্যচ্যুতি হল। সে বলল,–তবে রে ফাজিল চালাক নাইট। আমি কাল রাতেই বলেছিলাম, যে, দেখা যাবে আমাদের মধ্যে কে ওস্তাদ। এসো, তবে এখন পরখ করে দেখা যাক, রবিন হুড কার ঘুসি খাবে।’
রবিন হুড বললেন, ‘বেশ ভালো কথা! চার্চের সঙ্গে রাজার লড়াই বাধিয়ে দরকার কী?’
নাইট বললেন,–’তাই ভালো। অতি সহজেই হ্যাঙ্গাম মিটে যাবে। এসো সন্ন্যাসী ঠাকুর! তুমিই তবে আগে মারো।’
টাক বলল,–’তোমার মাথায় লোহার টুপি ও হাতে দস্তানা রয়েছে, তা কুছ পরোয়া নেই, আমার ঘুসি খেলে তোমাকে আর খাড়া থাকতে হবে না।’ এই বলে টাক ব্ল্যাক নাইটকে এক ভীষণ মুষ্টাঘাত করল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, নাইট এক পাও নড়লেন না। ফ্রায়ার টাকের আঘাত ব্যর্থ হল দেখে সকলে একেবারে হতবুদ্ধি হয়ে গেল!’
তখন হাতের দাস্তানা খুলে নাইট বললেন,—’এসো তবে এখন আমার ঘুসি খাও। ব্ল্যাক নাইটের দারুণ আঘাতে টাক মাটিতে গড়িয়ে পড়ল।
রবিন হুড ভাবলেন,–’কী সর্বনাশ! এর চেয়ে যে ফ্রায়ার টাকের ঘুসিই ভালো ছিল! এখন উপায়!’
বাস্তবিক নাইটের ঘুসি খেলে রবিন হুডের কী দশা ঘটত, তা বলা যায় না। কিন্তু ভগবানের কৃপায় তিনি রক্ষা পেলেন। কারণ, ঠিক এই সময়ে সামনের মাঠে বিউগল বেজে উঠল, হঠাৎ কোথা থেকে একদল সৈন্য এসে হাজির!
শত্রুর আশঙ্কায় রবিন হুড ধনুক নিয়ে লাফিয়ে উঠে অন্য সকলকেও তৈরি হতে বললেন। সৈন্যদল কাছে এলে একজন বলল,–’এ যে স্যার রিচার্ডের লোক! ওই যে তাঁকেও দেখতে পাচ্ছি।’
বাস্তবিকই স্যার রিচার্ড। ব্ল্যাক নাইটের সামনে এসেই ঘোড়া থেকে নেমে, হাঁটু গেড়ে তাঁকে নমস্কার করে বললেন— আশা করি মহারাজ, আমাদের সাহায্যের কোনও দরকার হয়নি?’
উইল স্কারলেটও তক্ষুনি হাঁটু গেড়ে রাজাকে নমস্কার করে বলল,—’—তাই তো! এ যে সত্যি-সত্যিই আমাদের রাজা এসেছেন।’
রবিন হুড অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তিনিও তখন বলে উঠলেন,—’—জয় সম্রাটের জয়!’ তখন সবাই মিলে একসঙ্গে রাজার সামনে হাঁটু গেড়ে বসলেন।