রক্তস্বাক্ষর – হীরেন চট্টোপাধ্যায়
কালো আকাশটাকে নীল ছুরি দিয়ে কে যেন এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত চিরে দিল। ক্ষণিক পিরেই মেঘের তীব্র গর্জন।
ঝিরঝিরে বৃষ্টি আগেই শুরু হয়েছিল, এবার যেন জোরে এল।
‘আমাকে উঠতে দিন।’
প্রায়ান্ধকার পার্কের অতল নৈঃশব্দ থেকে মেয়েটির গলা ভেসে এল।
‘আমার প্রশ্নের জবাব না পেলে আমি তোমায় ছাড়ব না।’
ভরাট পুরুষ কণ্ঠ ফিসফিস করে উঠল।
‘জবাব!’ মেয়েটির স্বর বিদ্যুতের মত ধারালো হয়ে উঠল। অবিরল বৃষ্টির ধারা দূরে রাস্তার টিমটিমে আলোর মধ্যে ধোঁয়ার পর্দা ঝুলিয়ে দিয়েছে। সেই ধোঁয়াটে অন্ধকার থেকে ভেসে এল :‘আমার পেছনে ঘুরবার সময় মনে ছিল না? আমার সব চুরি করে নেবার সময় মনে ছিল না?’
ঝড়ের দমকা হাওয়া উড়িয়ে নিয়ে গেল কণ্ঠস্বর। আবার চোখ ঝলসানো আলো, আবার শব্দ। পার্ক ক্রমশ গভীর থেকে গভীরতর অন্ধকারের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে।
‘আমি ভুল করেছিলাম, আমি স্বীকার করছি।’ বাতাসে ঝড়ের কান্না কেঁপে উঠছিল, ‘তার মাশুলও তো আমি কম দিইনি। আমার স্ত্রী আছে, সমাজে একটা খ্যাতি আছে—সেসব এমন করে কেড়ে নিতে আমি দেব না।’
‘আমি তা চাই না, ওসব আপনারই থাক। আমি চাই টাকা।’
‘কিন্তু আর কতদিন? যা চাও একবারে নিয়ে তুমি আমায় মুক্তি দাও।’
‘মুক্তি। প্রাগৈতিহাসিক অন্ধকারের গর্ভ থেকে সাপের জিভের মত হাসি ছড়িয়ে পড়ল সর্বত্র: ‘আমি আপনাকে সারা জীবন জ্বালাব সারা জীবন!’
বৃষ্টির অবিরল ধারা। কোথাও কোন জীবিত প্রাণীর চিহ্ন নেই।
জনহীন পিচের রাস্তায় একটা গাড়ি পর্যন্ত আওয়াজ তুলছে না।
পার্কের গাছগুলো বিদ্যুতের আলোয় ঝলসে উঠছে মাঝে মাঝে।.
কোথায় পেটা ঘড়িতে রাত বারটা বাজার সঙ্কেত।
‘এই তাহলে তোমার শেষ কথা?’
‘হ্যাঁ!’
‘ভাল করে ভেবে বলছ?’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ, খুব ভেবেছি। আমার রাস্তা ছাড়ন।’
‘ছাড়ছি।’
নীল আলো ঝলসে উঠল আর একবার। সেই আলোয় উদ্যত একটা হাত ভারী একখণ্ড পাথর নিয়ে নেমে এল।
ক্কড়—ক্কড়—ক্কড়াৎ—
বাজ পড়ল কাছেই কোথাও। সেই তীব্র গর্জনে ডুবে গেল ককিয়ে-ওঠা এক মরণাস্তিক আর্তনাদ।
সেই হাত—
উঠল, নামল—উঠল, নামল—উঠল, নামল—
বর্শার মত বৃষ্টিধারা ভেদ করে পুলিশভ্যানের হেডলাইট দুটো মুখ থুবড়ে পড়ছে অন্ধকারে।
হাড় কাঁপানো বাতাস বইছে দমকে দমকে।
শোঁ শোঁ হাওয়ায় কিসের যেন হাহাকার।
ঝলসে উঠছে বিদ্যুৎ সেই সঙ্গে কান ফাটানো শব্দ।
হাসপাতালের ভোলা গেট দিয়ে পুলিশভ্যান ঢুকে গেল ইমারজেন্সীর সামনে।
রক্তাপ্লুত মেয়েটিকে নামানো হল ধীরে ধীরে।
মাথার চুলে রক্ত চাপ বাঁধতে শুরু করেছে। নাকের দু’পাশ দিয়ে রক্তের ধারা নেমে এসে থমকে আছে বুকের ওপর।
নিটোল হাতদুটোতেও রক্তের ছোপ। আঙুলগুলো রক্তে মাখামাখি।
ইমারজেন্সীতে কর্তব্যরত ডাক্তারের মুখ গম্ভীর। পালস্ দেখলেন।
পুলিশ অফিসারের চোখ উদগ্র।
‘সরি।’
‘ডেড?’
‘অলমোস্ট।’
‘অপারেশান করা যায় না?’
‘সম্ভব নয়। আর কয়েক মিনিটের মধ্যে পেশেন্ট মারা যাবে।’
‘কোনরকম করে যদি—’
হাওয়ার প্রবল দমকে পুলিশভ্যানের একটা পাল্লা আছড়ে পড়ল। ভয় পেয়ে ঘুমন্ত কুকুরটা তীব্ৰস্বরে ডেকে উঠল একবার।
স্বপ্নের কিনার থেকে ভেসে আসছে শব্দটা। প্রথমে মনে হয়েছিল একটা পাখির ডাক। কয়েক মুহূর্ত পরে মানস বুঝতে পারল, ওটা টেলিফোনের রিসিভার। সমস্ত অঙ্গ জুড়ে ক্লান্তি। ঘুমের ট্যাবলেটের ক্রিয়া মাথায় ছড়িয়ে পড়েছে।
কিন্তু না, ওঘরে নীলার ঘুম ভেঙে যাবে। বিছানা থেকে উঠে বেডসুইচ টিপে আলো জ্বালল। রিসিভার তুলে নিল।
‘ডক্টর সোম?’
‘বলছি—’ ঘুম জড়ানো চোখে মানস কোনরকমে বলল। টেবিলের ঘড়িতে এখন একটা পাঁচ। তার মানে, আধ ঘণ্টার বেশি শোওয়া হয়নি।
‘ডক্টর রুদ্র বলছি, হাসপাতাল থেকে। একটা ইমারজেন্সী কেস আছে।’
রিসিভারটা ছুঁড়ে ফেলে দিতে ইচ্ছে হল।
প্রচণ্ড বিরক্তিতে তন্দ্রার ঘোর কাটতে শুরু করেছে।
বাইরে ঝড়ের শব্দ প্রবল। মেঘ ডাকছে মুহুর্মুহু।
‘কি ব্যাপার?’
‘হেড ফ্র্যাকচার—খুলিটা একেবারে ভেঙে গেছে, কি করে এখনও বেঁচে আছে সেইটাই আশ্চর্য!’
‘কিন্তু—’ মানস বাধা দিল, ‘আপনারা তো আছেন! এই রকম দুর্যোগের রাতে—তাছাড়া, আজ রাতেই তো আমি দু’দুটো অপারেশন করে এলাম—’
‘মাপ করবেন,’ডক্টর রুদ্রর কণ্ঠ শোনা গেল, কলকাতায় আপনি ছাড়া আর কোন সার্জনের পক্ষে একাজ সম্ভব বলে মনে হয় না। অবশ্য আমি জানি না, এরকম পেশেন্টকে নিয়ে কিছু করা সম্ভব কিনা। হয়তো আপনি আসার আগেই এ মারা যাবে।’
‘তাহলে কেন মিছিমিছি আমাকে ডিসটার্ব করছেন?’
‘পুলিশ অফিসার বারবার বলছেন—আমি ভাবলাম, আপনি যদি অন্তত এসে পড়েন, আমি বলতে পারব, আমাদের বেস্ট সার্জনকে দিয়ে আমি চেষ্টা করেছি।’
চোখ জ্বালা করছিল। মানস দাঁতে দাঁত চেপে একমুহূর্ত ভাবল। উপায় নেই। সার্জারিকে পেশা হিসেবে যখন নিয়েছে, তখন এতে বিরক্ত হলে চলবে কেন!
‘আমি যাচ্ছি।’ মানস ফোন ছেড়ে দিল।
শ্লথ গতিতে উঠে একবার পাশের ঘরে উঁকি মারল।
নীলা আঘোরে ঘুমুচ্ছে। নীল বেডল্যাম্পে ওর শরীরটা হালকা ছায়া-মানবীর মত লাগছে।
এখন ওকে ডাকা চলে না।
বাড়ি ফেরার শব্দে নীলার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। একটাও কথা বলেনি। বলবে, তেমন আশাও করেনি মানস। নিঃশব্দে পোশাক ছেড়ে নাইট গাউন পরে নিয়েছিল। শোবার আগে শুভরাত্রি জানিয়েছিল।
পোশাক পরিবর্তন করে বেরিয়ে এল মানস। রাখালকে ডাকল।
বাইরে আকাশ ভেঙে পড়েছে। বৃষ্টির এতটুকু বিরাম নেই। ঝড়ের গতি যেন বাড়ছে ক্রমশ।
গ্যারেজ থেকে গাড়ি বার করল। রাখাল গেট বন্ধ করে দিল।
হাসপাতালে পৌছতে দেরি হল না। ডক্টর রুদ্র গেটেই ছিল, বলল, ‘আসুন। পেশেন্ট এখনো জীবিত, কিন্তু কি করে বেঁচে আছে—দ্যাটস এ মিরাক্কেল।’
গম্ভীর মুখে মানস ঘরে পৌছল।
যুবতী বলা যায়। এবং সুন্দরীও নিঃসন্দেহে।
এখন অবশ্য মুখ বিবর্ণ। রক্তে, বৃষ্টির জলে মুখের প্রসাধনহীন রূপ ফ্যাকাশে হয়ে পড়েছে।
রেশমী চুল কেউ এখন ক্লিপ করে দিয়েছে। কিন্তু রক্তের ক্ষরণ এখনো বন্ধ হয়নি।
‘একটা পার্কে পাওয়া গেছে। আঘাতটা একেবারে নির্ভুল—খুলির নিচের দিকে ঠিক যেখানে মারলে সঙ্গে সঙ্গে মরার কথা, সেখানেই মারা হয়েছে—এখনো বলছি ডক্টর সোম, পেশেন্ট কি করে যে বেঁচে আছে—’
ক্কড় ক্কড় শব্দে বাজ পড়ল কোথায়। মানসের মুখের চেহারা শক্ত হচ্ছিল।
কঠিন দৃষ্টিতে সে তাকিয়েছিল মেয়েটির দিকে। তার চোয়াল ঝুলে পড়েছিল। কয়েক মুহূর্ত পরে সে কাঁধ ঝাঁকাল। না, সম্ভব নয়। এগিয়ে গেল এক পা।
‘দেখলেন তো—’ ডক্টর রুদ্র পুলিশ অফিসারকে বোঝাচ্ছিল, ‘আমি তো আপনাকে আগেই বলেছিলাম, অপারেশনে ডক্টর সোম মাঝে মাঝে অসাধ্য করেন সত্যি—কিন্তু এ জিনিস ওঁর হাতেও ঠিক হবার নয়। নিজের কানেই শুনলেন তো—’
থমকে দাঁড়াল মানস!
এ জিনিস ওর হাতেও ঠিক হবার নয়।
কেন বলছে রুদ্র একথা? তাকে অপমান করছে? রুদ্র কি মানসকে চেনে না।
নাকি ও উত্তেজিত করছে চাইছে মানসকে!
যাই করতে চাক, এ অপারেশন মানসকে করতে হবে।
করতেই হবে।
এবং ততক্ষণ পর্যন্ত যদি মেয়েটি বুঝতে পারে—
মানস ঘুরে দাঁড়াল।
আজকের বিপুল খ্যাতি অনেক মূল্যের বিনিময়ে তাকে অর্জন করতে হয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে বহু ডাক আসে তার। মেডিকেল জার্নালগুলো তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। মানস সেই খ্যাতি নষ্ট করতে পারে না, তার জন্যে যদি—
‘পেশেন্টকে রেডি করুন, আমি চেষ্টা করব একবার।’
দশ মিনিট পরে মানস সব কিছু ভুলে গেল।
গ্লাভস পরা হাতে পাথরের মত শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গেল অপারেশন টেবিলের সামনে।
মেয়েটি মৃত্যুর শেষ সীমায় পৌছে গেছে।
কিন্তু না, ওকে মারতে দেওয়া চলে না। ওকে বাঁচাতে হবে।
অদ্ভুত ক্ষিপ্রতায় কাজ করে যাচ্ছিল মানস।
যন্ত্রের মত তুলে নিচ্ছিল অপারেশনের অস্ত্রগুলো। বিন্দুমাত্র ভুল করলে সমস্ত কিছু শেষ হয়ে যাবে।
মানসের মাথায় এক সেকেন্ডের জন্য একটা চিন্তা ঝলসে গেল—যে কোন সূক্ষ্ম ভুল এখন কারো চোখে পড়বে না, অথচ মেয়েটির মৃত্যুর জন্যে তাই যথেষ্ট হবে।
সঙ্গে সঙ্গে চিন্তাটা ঝেড়ে ফেলল মানস।
না, মানস পৃথিবীর নামকরা একজন সার্জন। এই খ্যাতি মিথ্যে হতে দেওয়া যায় না। রুদ্র ঠিকই বলেছে, একমাত্র মানসই পারে ওকে বাঁচাতে। মেয়েটির মুখ এখন মড়ার মত সাদা।
মানস ফিসফিস করে বলল, ‘রক্ত আরো জোরে পাম্প কর। নার্স, আলোটা আরো কাছে, হ্যাঁ, আরো নামিয়ে দাও…ঠিক আছে।’
শেষ কাজটুকু সারার জন্য সমস্ত চেতনাকে সংহত করল মানস্ব।
একবার শুধু কণ্ডিশনটা জেনে নিতে হবে।
‘নিশ্বাস?’
‘আটত্রিশ।’
‘নাড়ী?’
‘কোনরকমে পাওয়া যাচ্ছে।’
মানস ঝুঁকে পড়ল। টিসুর মধ্যে জড়িয়ে আছে পাথরের টুকরো। ব্রেনে একটুও ধাক্কা লাগলে ক্ষতি হবে।
অতি সন্তর্পণে সরাতে লাগল মানস।
এক। দুই। তিন। চার—
নেই, আর নেই।
মানস নিশ্বাস বন্ধ করে রেখেছিল। এইবার সোজা হয়ে বুক ভরে নিশ্বাস নিল।
আর ভয় নেই। হার্টফেল না করলে মেয়েটি বাঁচবে।
পরের কাজগুলো যান্ত্রিক। এসব কাজে মন দেবার দরকার হয় না মানসের। এতক্ষণ যে স্নায়বিক চাপে ভুগছিল, হঠাৎ যেন তার ভার কমে গেল।
মানস সরে এল।
হাত থেকে গ্লাভস খুলে ফেলল।
জলের ধারা হাতে পড়ছিল।
নার্সের দিকে তাকিয়ে মানস ফিসফিস করে বলল, ‘সব সময় নজর রাখবে। দু’দিন ইন্টারভেনাস ইনজেকশন করে খাওয়াবে।’
বাইরে আসতে রুদ্র হাত চেপে ধরল মানসের : ‘ডক্টর সোম, আপনি আবার একটা অসাধ্য সাধন করলেন, এ কেবল আপনার পক্ষেই সম্ভব।’
করিডোরে বেরিয়ে এল মানস।
বৃষ্টি কমে গেছে, সেই সঙ্গে ঝড়ের দাপটও।
ক্লান্ত দেহটা টেনে নিয়ে রেস্টরুমের ইজিচেয়ারে ছেড়ে দিল নিজেকে।
অদ্ভুত এক প্রসন্নতায় ভরে গেছে মন।
সার্জন মানস সোম মরেনি। একমাত্র সেই পারে মানুষকে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে আনতে।
দূরে ডক্টর রুদ্রর উচ্ছ্বসিত কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে।
পুলিশ অফিসারকে আশ্বস্ত করছে, আর কোন ভয় নেই।
না, আর কোন ভয় নেই—মেয়েটি বাঁচবে।
মানস বুঝতে পারছিল, ও যা করেছে, ঠিক করেছে—এখনও, দু’ঘণ্টা আগেও।
দু’ঘন্টা আগের সেই দৃশ্য চোখের সামনে ভাসছিল। সেই হাসি, সেই বিষাক্ত ব্যবহার, সেই তরল লাভার মত কণ্ঠস্বর—
আমি আপনাকে সারা জীবন জ্বালাব, সারা জীবন—
ভুল মানুষই করে, মানসের চেতনা অবশ হয়ে আসছিল—নীলার মত স্ত্রী থাকতে এই রকম একটা সস্তা মেয়ের জন্য—
হাতের কাছে কোন ধারালো অস্ত্র পেলে এই ঘৃণ্য মেয়েটি হাসপাতাল পর্যন্ত আসবার সুযোগ পেত না। সামান্য পাথরের টুকরো দিয়েও লক্ষ্য ভালই করা গিয়েছিল, কিন্তু একটা যদি অস্ত্র থাকত। একটু ভুলের জন্য—
মানস দু’হাতে মাথার চুল টেনে ধরল।
একটুখানি ভুল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কোনটা ভুল?
ওই জঘন্য মেয়েটার সঙ্গে মেশা?
সুখী জীবনের জন্য মেয়েটাকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে যাওয়া?
নাকি, এমন নিখুত অপারেশনে তাকে মৃত্যুর আঙ্গিনা থেকে টেনে নিয়ে আসা?
মানস ভাবতে পারছিল না, ওর ঘুম পাচ্ছিল। চোখ বন্ধ করে তন্দ্রায় নিমজ্জিত হতে হতে ও যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিল—তার বিরুদ্ধে একমাত্র সাক্ষী, জীবনে সমস্ত অশান্তির বীজ—একটা জঘন্য নোরা মেয়ে মৃত্যু পেরিয়ে তিল তিল করে এগিয়ে চলেছে সুনিশ্চিত জীবনের দিকে।