যৌবন বারিধি
যা রটে, তার কিছু পার্সেন্ট তো সত্যি বটে। কুণাল ঠিক করেছে রেড হ্যান্ড ধরবে। কুণালের বউয়ের নাম ভাস্বতী। কুণালের মনে হচ্ছে ততটা আর সতী নেই ভাস্বতী।
ভাস্বতীকে নিয়ে কুণাল কিছু কথা শুনেছে হেথা হোথা। যে ছেলেটি ক্যুরিয়ারের চিঠি দেয়, সে একদিন বলল— দুপুরবেলা আপনাদের বাড়িতে অনেকক্ষণ ধরে বেল বাজাতে হয়। বউদি দরজা খোলেন না।
কুণাল বলেছিল, ঘুমোয় বোধহয়…
ছেলেটি বলেছিল, না, না ঘুমোন না। বেল বাজালে বউদির গলায় খুলছি খুলছি শুনি, কিন্তু খুলছি বলার পরও অন্তত দশ মিনিটের আগে দরজা খোলেন না। কুণাল একদিন ওর অফিসের পিয়োনকে পাঠিয়েছিল একটা চিরকুট দিয়ে— ওর হাতে হংকং ব্যাংকের পাশবুকটা দিয়ো৷ পিয়োনটিও এসে বলেছিল অনেকক্ষণ বাজাতে হল।
দুপুরবেলা বাড়িতে ফোন করলে প্রায়ই শোনে এনগেজের টোন। কারুর সঙ্গে কথা বলে, নাকি ঘরের ভিতরে এমন কিছু করে যে ডিসটার্ব হতে চায় না বলে ফোনটা উঠিয়ে রাখে ?
কুণাল ব্যস্ত লোক। অফিসে বেদম খাটুনি। তাই ছুটির দিনে বেরোতে চায় না। অথচ ভাস্বতী নাটক দেখতে খুব ভালবাসে। তথাগতের সঙ্গে দেখে মাঝে মাঝে। তথাগত কুণালেরই বন্ধু। কুণালই আলাপ করিয়ে দিয়েছিল তথাগতের সঙ্গে। তথাগত গ্রিটিং কার্ড পাঠায় ভাস্বতীকে। জন্মদিনে, নতুন বছরে…।
ভ্যালন্টাইন ডে-তে পাঠায় কিনা কে জানে। সেদিন বিছানার উপর একটা বই দেখেছে কুণাল— ‘ভাস্বতীর পদ্মহাতে সদ্যছাপা গদ্য বই’— তথাগত। তথাগত লেখেটেখে।
কুণাল আজ দুপুরবেলা অফিস থেকে বেরিয়েছে। কাজ কম ছিল বলেই বেরোতে পেরেছে এমন নয়। আসলে আজ মরিয়া হয়েই বেরিয়েছে। ধরেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে। আজ ধরবেই।
সামনের রাস্তাটা জানলা দিয়ে দেখা যায়। তাই পিছনের রাস্তা দিয়ে স্কুটারটা নিয়ে এসেছে। স্কুটারটা একটু দূরে রেখে হেঁটে হেঁটে ফ্ল্যাটের কাছে গেল কুণাল। স্কুটারের শব্দটাকে পৌঁছুতে দিতে চাইছে না। আস্তে আস্তে সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠল কুণাল। বেলটা টেপার আগে দরজায় কান পাতল কুণাল। টিভি চলছে। এবারে বেল টিপল। বার তিনেক টেপার পর ভাস্বতীর বিরক্তি মেশানো গলায় শুনল— কে ?
কুণাল কিছু বলল না। ওর গলা শোনাতে চায় না এখন। আইহোলের সামনে থেকে সরেও দাড়াল কুণাল। বেশ কিছুক্ষণ পর আবার বেল বাজাল। কিন্তু কোনও সাড়া নেই। আরও দু’বার বাজাবার পর আবার একইরকম ‘কে ?’ কুণাল বলল, আমি, আমি৷ খোলো। এতক্ষণ কী করছ ? ভাস্বতীর গলায় শুনল— খুলছি। ঠিকই বলেছিল ক্যুরিয়ারের ছেলেটি। পাক্কা দশ মিনিট পর দরজা খুলল ভাস্বতী। খুলেই বলল— এখন ? অসময়ে ? কুণাল বলল, একটা জিনিস দরকার। একটা বই। কুণাল প্রথমেই জুতোর র্যাকে চোখ রাখল। নতুন কোনও জুতো দেখতে পেল না। তারপর ওর বেডরুমে গেল। এরপর পেনটা ফেলে দিয়ে, পেন তুলবার অছিলায় খাটের তলাটা দেখল। তারপর পাশের ঘরটায় গেল। ওই ঘরে আগে বাপটু থাকত। ওদের ছেলে। বাপটু এখন নরেন্দ্রপুরের রামকৃষ্ণ মিশনে ভরতি হয়ে হোস্টেলে থাকে। পাশের ঘরের র্যাক থেকে কী একটি ইংরেজি বই নিয়ে ওর ব্রিফকেসে ঢোকাল। তারপরেই ‘একটু ল্যাট্রিন করে নি’ বলে টয়লেটেও গেল। টয়লেট শুকনো এবং ফাঁকা। ফ্লাস ট্যাংকটার ঢাকনা খোলার কোনও মানে হয় না। খুব অবাক হয়ে গেল কুণাল। চিড়িয়া ভেগেছে। কিন্তু চিড়িয়া হয়ে তো ভাগতে পারে না। তা হলে ?
কুণাল সোজাসুজি জিজ্ঞাসা করল ভাস্বতীকে, দরজা খুলতে এত দেরি হল কেন ?
ভাস্বতী বলল— হতেই পারে। নানারকম কারণ থাকে মেয়েদের। পার্সোনাল।
॥ ২ ॥
দেরি তো হবেই। ভাস্বতী ঢ্যাঁড়শের হড়হড়ে রসের সঙ্গে পোস্তবাটা আর মুলতানি মাটি মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করে মুখে মেখেছিল দুপুরে। একটা মেয়েদের পত্রিকায় এই ফর্মুলাটা পেয়েছে। কুণালের গলা পেয়েই ভাস্বতী মাস্কটা ধুয়ে ফেলবার চেষ্টা চালাচ্ছিল, কিন্তু ঢ্যাঁড়শের রস মুলতানি মাটির সঙ্গে এমন গেঁড়ে বসেছিল যে খুলছিল না। এক্কেবারে ‘যেতে নাহি দিব’ তা ছাড়া শুকিয়ে যাওয়া ঢ্যাঁড়শ জুস জল পেয়েই আবার হড়হড়ে।
প্রতিদিনই দুপুরটা এভাবে কাটে ভাস্বতীর। এটা ওটা মেখে রাখে মুখে। তখন কেউ এসে পড়লে বড় ঝামেলা হয়। অনেক কিছুই মেখেছে। তবে ঢ্যাঁড়শের রস আজই প্রথম। ওই মহিলা পত্রিকায় বলা ছিল— এই মাস্ক শুষ্ক কিংবা তৈলযুক্ত দু’রকম ত্বকেই চলবে।
ভাস্বতীর এই সমস্যা আজও মিটল না। ওর ত্বক শুষ্ক, নাকি তৈলাক্ত ?
আচ্ছা, যে পর্দাটা হাড় মাস ঢেকে রাখে সেটা চামড়া, নাকি ত্বক ? ছোটবেলা ইস্তক ও দেখেছে ত্বক চকচক করে কিন্তু চামড়া ফাটে। ত্বক প্রসাধিত করতে হয় কিন্তু চামড়ায় ঝামা ঘষতে হয়। চামড়ায় ফুসকুড়ি ওঠে কিন্তু ত্বকে ওঠে ব্রণ। ত্বকে লাগাতে হয় ময়শ্চারাইজার কিন্তু চামড়ায় সরষের তেল।
সে যাই হোক। ওর সমস্যা হল ও বুঝতে পারে না ওর চামড়াটা শুষ্ক নাকি তৈলাক্ত ত্বক ? শুষ্ক ত্বক হলে ডিমের কুসুম, আর তৈলাক্ত ত্বক হলে সাদা অংশ। বাপের বাড়ি গেলে ওর মা বলেন, তোর মুখটা বড় শুকনো লাগছে রে ভাসু। আবার ওই কবি, মানে ‘হাবির’-র বন্ধু তথাগত আলাপের প্রথমদিকে একদিন আচমকা বলেছিল তোমার গালে আমি আমার মুখের ছায়া দেখতে পাই। ভাস্বতী বলেছিল, কেন, কেন, কেন ? তথাগত বলেছিল, আসলে তোমার গালটা খুব তেলতেল কিনা, চকচক করে তাই…। বলেই ঢোক গিলেছিল তথাগত। হতে পারে, ওই কেন কেন-র ঠেলায় নার্ভাস হয়ে গিয়েই ও কথাটা বলেছিল। ভাস্বতী জানে পুরুষরা খুবই নার্ভাস প্রোন। আসলে আচমকা ওইসব আলোছায়া আঁতেল কথায় ঝটকা খেয়ে এক দমকায় কেন কেন কেন বলে ফেলেছিল ভাস্বতী। স্বর যন্ত্রে ব্যালান্স ছিল না। ওই ‘কেন’ গুচ্ছধমকের মতো শোনাতেই পারে এবং ধমক খেয়ে মিথ্যে বলতেই পারে কোনও লোক। সুতরাং ওই তেলতেলে শব্দটাকে এলেবেলে ভেবে ওর স্বামীকেই একদিন জিজ্ঞাসা করেছিল— হ্যাঁগো, আমার চামড়াটা, সরি সরি ত্বকটা শুষ্ক না তৈলাক্ত ?
তখন কুণাল দাড়ি কাটছিল, অফিস যাবে, সকালবেলা, রেডিয়োতে সাতটা চল্লিশের রবীন্দ্রসংগীত, কড়াইতে বেগুন। ভাস্বতী রান্নাঘর থেকে হঠাৎই বেরিয়ে এসেছিল ওই গৃঢ় প্রশ্ন নিয়ে। ওর হাতের খুন্তিতে তখনও মৃদু ধোঁয়া। কুণাল আচারিয়া গো বেচারিয়ার মতো তাকাল ভাস্বতীর দিকে। ভাস্বতী আবার ওই প্রশ্নটা করলে কুণাল ভ্যাবাচারিয়া হয়ে যায়। ভাবে কোনটা বলা ভাল ? শুকনো না তেলতেলে ? কোনটা বেশি প্রেস্টিজিয়াস ? কুণাল অফিসে শ্রুড নামে খ্যাত। ম্যানেজমেন্ট এবং ইউনিয়ন দু’পক্ষকেই খুশি রাখে। ও বলল, ওগো, তুমি কখনও তৈলাক্ত আবার কখনও শুকনো। তুমি টু ইন ওয়ান। দুটি হলে তো চলবে না। যে কোনও একটা বেছে নিতেই হয়। আজই বেছে নিতে হবে… ভাস্বতীর জেদ চেপে গিয়েছিল।
ডিমের সাদা আর কুসুম নিয়েই হল ডিম। ডিম থেকে সাদা অংশ আলাদা করতে গিয়ে কী ঝকমারি। কুসুমটা ফেটে গেলে সাদার মধ্যে মাখামাখি হয়ে যায়। পাঁচটা ডিম এভাবে ওমলেটের জন্য রেডি হল। তারপর ছ’ নম্বর ডিমটা থেকে সাদা অংশটা আলাদা করতে পেরেছিল।
কিন্তু সাদা মাখবে, নাকি হলুদ মাখবে ? শুকনো না নাকি তৈলাক্ত ?
ভাস্বতী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাল করে দেখে। শুকনো নাকি তেলতেলে। গান হচ্ছে। রবীন্দ্রসংগীত। আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবে না। কবিগুরু কত কী বুঝতেন। বেগুন পুড়ে যাচ্ছে।
এ বেলা বেগুন ভাজা, মাছভাজা, ডাল, ওমলেট আর স্যালাড। রোজ স্যালাড খাওয়া ভাল। চামড়া মসৃণ থাকে। উঁহু ত্বক। রূপচর্চার বইতে এসব পড়েছে ভাস্বতী, তাই টমেটো, গাজর, শশা, ক্যাপসিকামের ‘সালাদ’। লেটুস পাওয়া যায় না এ বাজারে। দুপুরে ভাস্বতী যখন খাবে, তখন আরও স্যালাড কেটে নেবে।
কাঁচা শাকসবজি আর তরকারি-খোসা
খাইলে জানিও বাহ্য হইবে খোলসা।
খোলসা বাহ্য হইলে শুন হে রমণী
চামড়া উজ্জ্বল হবে, ফুসকুড়ি হবেনি।
বিনা মেডিসিনে রূপচর্চা নামে পাঁচ টাকা দামের চটি বইতে এসব আছে। সোদপুরে ওর দিদির বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিল ভাস্বতী, ফেরার সময় হকারের কাছ থেকে কিনেছিল এই চটি বইটি, ট্রেনে। এরকম অনেক দরকারি বইটই পাওয়া যায় ট্রেনে। যেমন লতাপাতার গুণ, কলকাতা-হাওড়া বাসরুট, সহজ গ্রামার শিক্ষা, সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা…। এটা বেশ অন্যরকম বই। সিন্দুর দিবার উপকারিতা কী ?— না ইহা ‘অ্যান্টিসেপটিক’ ইহা ব্যবহারে মাথায় খুশকি হয় না। বিবাহিতা নারীর লোহা শাখা পরিবার দরকার কী— ইহা শরীরে রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে। এয়োদশীতে বেগুন ভক্ষণ নিষেধ কেন ? না ওইদিন বেগুনের মধ্যে একটি ক্যামিকাল বৃদ্ধি পায়, তখন উহা খাইলে অ্যালার্জি হয়। হকারটি বলেছিল, মাননীয়গণ, আমাদের ভারতবর্ষের মুনি-ঋষিগণ রিসার্চ করে যে সমস্ত নীতি প্রচলন করেছিলেন আজ আমরা দু’পাতা ইংরিজি পড়ে সেগুলিকে কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দিতে চাইছি; মাননীয়গণ, এই বইটি পড়লে আপনারা শিক্ষিত সমাজ জানতে পারবেন ওই সংস্কারগুলির সাইন্টিফিক রিজিন…। ওই হকারটি ওই বইটির সঙ্গে বিক্রি করছিল বিনা মেডিসিনে রূপচর্চা। ভাস্বতী কিনেছিল। সোদপুর স্টেশন থেকে ওর দিদির বাড়ি নিবেদিতা পল্লি পর্যন্ত যেতে কমপক্ষে পাঁচটা বিউটি পার্লার চোখে পড়েছিল ভাস্বতীর। রূপচর্চা নিয়ে মেয়েরা আজকাল খুব ভাবছে। এই তো সেদিন মিনিবাসে শোনা দুই সখীর সংলাপ—
প্রথমা: মুলতানি মাটি সঙ্গে সর, বেসন অর হিং মিশিয়ে মুখে মেখে দু ঘণ্টা চুপচাপ বসে থাকবি। দেখবি বলিরেখা পড়বে না।
দ্বিতীয়া: হিং ? ভীষণ গন্ধ হবে যে।
প্রথমা: হোক না। তোর ও তো রাত আটটার আগে বাড়ি ফেরেনা। সন্ধেবেলায় সাবান মেখে নিবি।
দ্বিতীয়া: ও না হয় রাত আটটায় এল। কিন্তু সে যদি দুপুরবেলা এসে যায় ?
অন্য একদিন ছেলের হোস্টেলে অপেক্ষারতা দুই অভিভাবিকা—
প্রথমা: জানো দিদি, আমার একদম সময় কাটতে চায় না।
দ্বিতীয়া: কেন, তোমার চাকরিটা নেই ?
প্রথমা: ছাড়তে হয়েছে। ওর একদম মত নেই। খালি বলত যা আর্ন করি, এনাফ, তোমার চাকরি করার দরকার নেই। আমি বলি টাইম পাস হতে চায় না গো দুপুর বেলাটায়। ও তখন বলল তা হলে রূপচর্চা করো।
দ্বিতীয়া: করছ ?
প্রথমা: হ্যাঁগো, করছি, প্রথম দিকে সময় কেটে যেত। কুমড়োর বিচির মাস্ক মাখতাম কিনা। কুমড়োর থেকে বিচি একটা একটা করে খুলে তারপর বিচির একটা একটা করে চামড়া খুলে বেটে নিতে হত। বেশ টাইম কনজিউমিং। মাস্ক মেখে চোখ বুজে শুয়েছিলাম, এমন সময় ইঁদুরে গাল চেটে গেল। কুমড়োর বিচি যে ইঁদুরের এত ভালবাসার খাদ্য সেটা জানতাম না। সেই থেকে আর কুমড়োর বিচি মাখি না।
তো, ভাস্বতী রূপচর্চা করে। ওর চোখের তলায় একটু কুঁচকেছে। নাকের দু’পাশে দুটো রেখা। এটাই কি বলিরেখা ? কে জানে ? ভাস্বতী চায় না ওর গালে এসব পড়ুক। ওকে কলেজের ছেলেরা চামকি বলত। ও চামচিকে নয়, চামকিই থাকতে চায়। ও রূপচর্চায় খরচা করে। ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট খায়, ভিটামিন খায়, ভিটামিন ই মেশানো সাবান মাখে। ভিটামিন এ থেকে জেড পর্যন্ত যা যা ভিটামিন আছে, তাই দিয়ে তৈরি ক্যাপসুল খায়। কোষ্ঠ সাফ রাখতে ইসবগুল খায়, মাঝে মাঝে চিরতার জলও খায়। টক দইও, কুণালকে না দিয়ে।
প্রতিদিন অল্প করে খেলে টক দই।
যৌবন অটুট থাকে চুপিচুপি কই।
বিনা মেডিসিনে রূপচর্চায় এটাও ছিল। দুধ বাঁচিয়ে সামান্যই দই পাততে পারে ভাস্বতী। কুণালও টক দই খেতে ভালবাসে। পেঁপে কিংবা হাফ বাঁধাকপির গার্ড দিয়ে ফ্রিজে রাখে দই। কুণালকে দেয় না। ভালবাসা দেখিয়ে লাভ নেই। ‘রূপে তোমায় ভোলাব না ভালবাসায় ভোলাব’ ফর্মুলায় আর বিশ্বাস নেই ভাস্বতীর। ভালবাসার চেয়ে ব্যাটাছেলেরা রূপেই বেশি ভোলে। হালে ভালবাসায় বিরূপ হয়ে রূপেই মন দিয়েছে ভাস্বতী।
এই রূপে রূপচর্চা চলে ভাস্বতীর— সকাল ছ’টা— শয্যা ত্যাগ। এক গ্লাস জল (খুব জল খাবেন। বেশি জল খেলে ত্বক নির্মল থাকে) এরপর দাঁত মাজা। মাঝে মধ্যে নুন তেল দিয়ে আঙুলে। (মাঝে মাঝে আঙুলে দাঁত মাজবেন। ব্রাশ সব জায়গায় পৌঁছতে পারে না। আঙুলে মাড়িরও কিছুটা ব্যায়াম হয়) কোন টুথপেস্ট ব্যবহার করবে তা নিয়ে বড় সমস্যা ভাস্বতীর। টিভির বিজ্ঞাপনে দেখে নতুন ফর্মুলার আরও শক্তিশালী, আরও আরও শক্তিশালী টুথপেস্ট। সবার হাসিই মুক্তোহাসি। মাধুরী দীক্ষিত এটায় মাজে শাহরুখ খান অন্যটায়। টুথপেস্টে ফ্লোরাইড থাকলে ভাল নাকি লবঙ্গ তেল থাকলে ভাল নাকি নিম তেল থাকলে ভাল বুঝতে পারে না। কনফিউস্ড। চিন্তা করে ভাল ঘুম হয় না। এরপরে গরমজলে লেবু ও মধুর রস। (লেবুসহ মধু খাও ঈষদুষ্ণ জলে/ দেখিবে কেমনে নারী যৌবনে জ্বলে) একটু মধু মুখেও মেখে নেয় ভাস্বতী (মধু ত্বক উজ্জ্বল করে) এবার একটু ত্রিফলার জল (বাহ্য খোলস হলে…।) তারপর মুখে এক ঝাপটা ভিনিগার-ওয়াটারের ঝাপটা। ঝাপটা না, স্পল্যাশ। ভিনিগার লাগাবার আগে মধুটাকে উঠিয়ে নিতে হয়। কিন্তু অনেক সময় ব্যাপারটা মনে থাকে না। মধুর উপর ভিনিগার চাপালে বড় কুটকুট করে। এরপর চা। কুণাল চা চা করে চ্যাঁচায়। চা চায়।
কুণাল ঘুম থেকে ওঠার আগেই ভাস্বতীর বেশ কিছুটা রূপচর্চা হয়ে যায়। এসব মধু ভিনিগার ত্রিফলা টিফলা কুণাল জানে না। ইতিমধ্যে পাঁচুর মা এসে যায়। পাঁচুর মা তরকারি কুটতে থাকে। তরকারিগুলিকে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন চোখে দেখে। পাঁচুর মার চোখে কড়াইশুটি গাজর শশা পালং— হেবি ভিটামিন গো। কুণালের কাছে লো ক্যালারি। আর ভাস্বতীর কাছে মুখে মেখে ফেলার জিনিস। ‘গাজরের রস সামান্য দইয়ের সঙ্গে মেখে নিন, গায়ের রং উজ্জ্বল হবে।’ ‘লাউ ত্বকের পক্ষে অসাধারণ’। ‘উচ্ছের রস মুখে মাখলে ব্রণ ফুসকুড়ি হয় না’। ‘পাকা কুমড়োয় ভিটামিন এ থাকে। শরীরের জন্য খুব দরকার। মুখেও মাখা যেতে পারে’। ‘যখনই ফল খাবেন, পাকা পেঁপে, কলা, আপেল যাই হোক না কেন, একটু মুখে মেখে নিন, উপকার পাবেন’। আজকাল খবরের কাগজের সাপ্লিমেন্টারিতে কমপালসারি রূপচর্চা থাকেই। সব যোগটোগ করে ভাস্বতী দেখেছে মোটামুটি কচু আর চালতা ছাড়া সব ফল-তরকারিই চামড়ার পক্ষে ভাল। কিন্তু কোনটা মাখবে। এসব চিন্তায় রাতে ঘুমের গণ্ডগোল হলে, কোনও কোনওদিন একটু দেরিতে উঠলে বড় কনফিউশনে পড়ে যায় ভাস্বতী৷ মধু না ত্রিফলা না চা !
কুণাল অফিসে গেলে আবার রূপচর্চা। খরচা হয় হোক। কী করা যাবে। সর মাখবার জন্য মাঝে মাঝে কাউমিল্ক কিনে আনে। সর বানিয়ে ফ্রিজে রাখে। কী করবে ? রূপ বিশেষজ্ঞরা লেখেন সরওয়ালা দুধ খাবেন না কখনও। ফ্যাট থাকে। ডবল টোনড্ দুধই ভাল। সেটাই কেনে। কিন্তু ডবল টোনড্ দুধে সর পড়ে না। তাই কাউমিল্ক। সর না হলে সর-বেসন, সর-হলুদ, সর-মধু হবে কী করে ? দুপুরবেলাটায় শশা দিয়ে মুখে এইসব লাগিয়ে শুয়ে থাকে ভাস্বতী। মাছি বসে। মুখ কুঁচকানো যায় না, তা হলে মাস্ক ভেঙে যাবে। দাঁত ব্যথাটাথা হলে গালে হাত বোলানো যায় না। কথাও বলা যায় না, তাই ফোনের রিসিভার নামিয়ে রাখতে হয়।
আজ মেখেছিল ঢ্যাঁড়শের রসের সঙ্গে মুলতানি মাটি। অন্য এক্সপেরিমেন্ট। আজই এসে গেল দুপুরে।
কুণাল যখন এলই, একটা কাজ করলে হয়। স্কুটারে ওর সঙ্গে বেরিয়ে গেলে হয়। ওকে বললেই কলেজ স্ট্রিট মার্কেটে নামিয়ে দেবে। বাগমারি থেকে ওর অফিস জোঁড়াসাঁকো যেতে হলে কলেজ স্ট্রিট হয়েও যাওয়া যায়। ওর কিছুটা জটামংশী দরকার। ওটা কলেজ স্ট্রিট মার্কেটে পাওয়া যেতে পারে।
ক’দিন আগেই ভাস্বতী কাগজের ব্যক্তিগত কলমে বিজ্ঞাপনে দেখেছিল যৌবনের জৌলুষ জ্বালিয়ে রাখার জন্য জলপড়া। জলদি যোগাযোগ। ফোন নম্বর….। ফোন করেছিল ভাস্বতী। ফোন ধরেছিল তান্ত্রিক-কবিরাজ জটিলেশ্বর শাস্ত্রী। শাস্ত্রীমশাই বলেছিলেন,আমার হল ডবল অ্যাকশন ফর্মুলা। আরও, আরও বেশি শক্তিশালী। গাছগাছড়ার সঙ্গে তন্ত্রমন্ত্র পাইল করি। তো আপনার কী অসুবিধা ম্যাডাম ?
ঘুম হয় না। বড় চিন্তা। কোনও টুথ পেস্টে দাঁত মাজব ? কোন তরকারি ছেড়ে কোন তরকারি মুখে মাখব ? এমনিতেই বুড়িয়ে যাচ্ছি, তা ছাড়া ওসব চিন্তা করতে করতে আরও…।— বুঝিচি, আর বলতি হবে না। ঘুমটা দরকার, সেইসঙ্গে যৌবনরক্ষা। তিন তোলা জটামাংসী নিয়ে চলে আসুন, জলে ভিজোয়ি মন্তর পড়ে দেব। জটামাংসী কখনও শোনেনি ভাস্বতী। জিজ্ঞাসা করল, কীসের মাংস ওটা ? শাস্ত্রীমশাই বললেন, জটামাংসী, জটামাংসী। শোনেননি নামটা ? ওটা বাংলার গাছ। কথা বলে।
ভাস্বতী খুঁজেছিল নার্সারিতে। ভেবেছিল কিনা, পায়নি। ইতিমধ্যে ইটিভির মধ্যে শ্রীমতী অনুষ্ঠানে ‘রূপচর্চায় আয়ুর্বেদ’ দেখানো হল। সেখানে হলুদ, চন্দন, তুলসী এসবের সঙ্গে জটামাংসীর কথাও বলা হল। জটামাংসীর ছবিও দেখাল। একগোছা চুলের মতো দেখতে। ওরাও বলেছিল, জটামাংসী ভেজানো জলে ঘুম হয়, অ্যাংজাইটি কমে যায়, মন প্রফুল্ল থাকে। আর মুখের মধ্যে প্রফুল্লতার ছায়া পড়ে। কিন্তু কোথায় পাওয়া যায় বলেনি।
ভাস্বতী মুদি দোকানে খোঁজ নিল। মুদির দোকানে বলল দশকর্মা ভাণ্ডারে খোঁজ নিতে। দশকর্মা বলল, এসব কলেজ স্ট্রিট মার্কেটে পাওয়া যায়।
ওইজন্যেই কলেজ স্ট্রিট যাওয়া।
কুণালকে ভাস্বতী বলল— অফিস যখন যাচ্ছই আমাকে একটু কলেজ স্ট্রিট মার্কেটে নামিয়ে দিয়ো। কুণাল বলল— কলেজ স্ট্রিট মার্কেটে কী করতে যাবে ? ভাস্বতী বলেই ফেলল— একটু জটামাংসী দরকার। জটামাংসী শুনেই কুণালের মুখের রং পালটে গেল। হঠাৎ কেমন যেন নার্ভাস নার্ভাস হয়ে গেল। তারপর বলল— কেন, কেন জটামাংসী কী হবে ? বলার সময় কুণাল তোতলাচ্ছিল।
ভাস্বতী বলল, দরকার। দরকার।
কুণাল চুপ হয়ে গেল। একটু পরে বলল, যাচ্ছি। চলে গেল। কুণাল কেন যে মাঝে মাঝে এরকম ব্যবহার করে ভাস্বতী বোঝে না।
গত কয়েকদিন ধরে রাত বারোটার আগে শুতে যাচ্ছে না কুণাল। বিছানায় পাশ ফিরে শুয়ে থাকে। মাঝে মাঝে বিছানা থেকে উঠে যায়। ভাস্বতীরও তো সাউন্ড স্লিপ হয় না, ও টের পেয়ে যায়। কুণাল বিছানা ছাড়ছে, কিন্তু বাথরুমে জলের শব্দ নেই। গত পরশুদিন কুণাল যখন বিছানা ছাড়ল, ঘড়ির রেডিয়াম কাঁটায় তখন তিনটে বাজতে দশ। কুণাল খুব আস্তে আস্তে বিছানা ছাড়ল। পর্দা সরাল। ভাস্বতী আরও আস্তে আস্তে বিছানা ছাড়ল। কুণাল পা টিপে টিপে পাশের ঘরে গিয়ে দরজাটা আস্তে করে খুলল। ঘরে ঢুকল। দরজা বন্ধ করল। কী সাসপেন্স। কী করছে ও ? দরজায় কান দিল। বুক ঢিপঢিপ করছে ভাস্বতীর। চেয়ার টানার শব্দ শুনল। কী সর্বনাশ দড়িটডি নেয়নি তো ? ভাস্বতী দরজায় ধাক্কা দিল। একটু পরেই কুণাল বেরিয়ে এলে ব্যাকুল স্বরে কুণালের কাঁধে হাত দিয়ে বলেছিল, ওগো বলো না গো, কেন এই ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করেছিলে ? কুণাল বলেছিল, ঘুম হচ্ছে না। তাই বই পড়তে ইচ্ছে করছিল। ভাস্বতী বলেছিল, কেন হঠাৎ বই পড়তে ইচ্ছে করল তোমার ? তোমার কী শরীর খারাপ ? কুণাল বলেছিল— হ্যাঁ।
ভাস্বতী তখন ভেবেছিল হতেই পারে। শরীর খারাপ না হলে ভাস্বতীও বই পড়ে না। ভাস্বতীর পদ্মহাতে সদ্যলেখা তথাগতর গদ্যর বই আজও পড়া হয়নি। তথাগত কয়েকদিন জিজ্ঞাসা করেছিল বইটা পড়লে ? ভাস্বতী বলেছিল, না গো পড়া হয়নি। অসুখও হচ্ছে না। আসলে অসুস্থ হলেই বইটা পড়া হয়। যখন ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময় জন্ডিস হয়েছিল, বেডরেস্টে ছিল, তখন পড়া হয়েছিল দেবদাস আর চরিত্রহীন। যখন বাপটু হল তখন মেমসাহেব আর চৌরঙ্গী। অসুস্থ হলেই তো পড়া হয়। কুণাল এখন অসুস্থ। ঘুম হচ্ছে না, সুতরাং বই পড়তেই পারে। আর কোনও ব্যাপার নেই, ঠিক আছে।
কিন্তু এখন আর ঠিক আছে মনে হল না। জটামাংসী শুনেই এরকম করল কেন কুণাল ?
কুণাল অফিসে চলে গেলে ভাস্বতী একাই বেরুল। প্রথমে জটামাংসী কিনবে, তারপর যাবে জটিলেশ্বর শাস্ত্রীর কাছে। কলেজ স্ট্রিট মার্কেটে গিয়ে একটা শাড়ির দোকানে ভাস্বতী জিজ্ঞাসা করল, জটামাংসী কোথায় পাওয়া যায় ? দোকানদার বলল— আরামবাগ হ্যাচারির দোকান এখন খোলা আছে, খাসি বিকেলে পাবেন। যাইহোক খুঁজতে খুঁজতে, যেখানে শিমুল মূল, অর্জুন ছাল, শতমূলী, এইসব কবিরাজি মাল বিক্রি হয়, সেখানে জটামাংসী পেল। জটামাংসী কিনে নিয়ে ঠিকানা খুঁজে জটিলেশ্বর শাস্ত্রীর কাছে গেল শোভাবাজারে।
আমি এনেছি।
জটিলেশ্বরের কপালকুঞ্চন তখন বেশ জটিল।
এখন এলেন ? এই নিদাঘ সময়ে। আমার চেম্বার বিকেল পাঁচটার পরে।
তবে কি ফিরে যাব ? পরে আসব ?
না। ইচ্ছুক রমণীরে আমি ফেরাই না। বোতল আছে ?
বোতল কোথায় পাবে ভাস্বতী ? একটা মিনারেল ওয়াটারের বোতল কিনে নিতেই পারত— আগে জানলে।
ভাস্বতী বলল, আপনার বোতল নেই ?
তান্ত্রিক কবিরাজ জটিলেশ্বর বললেন, তা হলে তো খালি করতে হবে।
খালি করার সময় বললেন, হায়, রাম।
রামের বোতলটা খালি করলেন কিনা। অর্ধেক ভরতি ছিল। সোজাসুজি গলায় ঢেলেই বললেন, খা—লি। ভাস্বতী শুনল খা-লিয়া।
এবার বোতলটা ধুয়ে জটামাংসী গুঁড়ো ভরলেন, তারপর জল।
জটিলেশ্বর বললেন, আপনার মুখ জ্বলবে।
ভাস্বতী ভয় পেয়ে বলল, জ্বলবে ?
হ্যাঁগো লাস্যে।
লাস্য, তা হোকগে। কিন্তু আপনি কি কনফার্ম করতে পারেন আমার ত্বক শুষ্ক না তৈলাক্ত ?
তা দিয়ে কী হবে ?
শুষ্ক ত্বকে ডিমের কুসুম, তৈলাক্ত ত্বকে সাদা…
ওসব সাদা কালো কিছুই লাগবে না। ওই জটামাংসী ভিজানো জলে এইসা ডাবল অ্যাকশন মন্তর পড়ে দেবোনে, দ্যাখবে যৌবন কারে বলে। শুধু কি জেল্লা ? চোখের তলায় ওই কালিঝুলি চলি যাবনে। যৌবনের বান ডাকবে গালে, ওষ্ঠে, চিবুকে, ঘাড়ে, গলায়…
থাক থাক।
থাকল।
তবে মন্তর পড়ি ?
পড়ুন।
আমারে কিঞ্চিত স্পর্শ করি থাকো।
স্পর্শ ?
হুঁ। ডাক্তার কবিরাজের কাছে লজ্জা করলি চলে না।
জটামাংসী জলে ফুঁ দিলেন জটিলেশ্বর। বললেন, নাও। মন্ত্রপূত জটামাংসী। তিন দিন খাবা। কবিরাজি ওষুধের সঙ্গে মন্তর। ডবল অ্যাকশন। বোঝলা না ? এই ওষুধ রাতে খাতি হয়। তান্ত্রিক ফর্মুলার মন্তর কিনা। রাত বারোটায় এক ডোজ, তিনটার সময় সেকেন্ড, ভোর ছ’টায় আবার। এইভাবে তিন দিন। এক মাস পরে বুস্টার ডোজ। ব্যাস।
ওল্ড মঙ্কের গায়ে লেবেল লাগল— যৌবন বারিধি। কবিরাজ আবার বললেন, তিন মাস পরে নিজিরি চিনতে পারবা না।
কেই বা নিজেকে চিনতে পারে ? কবিগুরু নিজেই বলে গেছেন—আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবে না।
আমার ফি ওয়ান ফিফটি। আর ওই যে বোতলটা, খালি করতে হল, হাফ মতন জিনিস ছিল তাতে। ওটুকর দাম ফট্টিই ধরো। তা হলে ওয়ান নাইনটি।
বাড়ি ফিরল ভাস্বতী, তখনও সন্ধে হয়নি। রাত বারোটায় হাফ ডোজ। কিন্তু বোতলটা রাখবে কোথায় ? কুণালের সঙ্গে এসব নিয়ে কোনও কথা নয়। তন্ত্রমতে রূপ ফেরালে ওর নিজের ক্রেডিট কী ? বোতলটা গোপনে রাখতে হবে। চৌকির তলায় একটু রিস্কি হয়ে যায়। ওখানে গোপন কথাটি রবে না গোপনে। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে এই বোতল ঢুকবে না। পাশের ঘরে যায়। দেওয়ালজোড়া ক্যাবিনেট। বুদ্ধমূর্তি, টেরাকোটা, ডোকরা, বইটই। শরৎ রচনাবলীর পিছনে রাখলে কেমন হয় ? শরৎবাবু, তুমি মেয়েদের জন্য কত কী ভেবেছিলে। শরৎ রচনাবলীটা একটু উপরের দিকে রাখা আছে। চেয়ারের উপর দাঁড়ায় ভাস্বতী। বইয়ের পিছনে রাখা যেতে পারে ভেবে বইটা টেনে নেয়। টেনে বার করতেই দেখে ওখানে ঠিক একই রকমের একটা বোতল।
যৌবন বারিধি। কিছুটা রয়েছে, এক দিনের মতো।
কুণাল তুমিও ?
তথ্যকেন্দ্র, বইমেলা সংখ্যা, ২০০০