চতুর্থ খণ্ড (স্নেহের দীপঙ্কর আচার্য এবং সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়)
পঞ্চম খণ্ড (বন্ধুবর স্নেহপ্রতিম শ্রী নিতীশ রায় ও বউদিকে)
4 of 6

যে ট্রেনের কোন ইস্টিশন নেই

যে ট্রেনের কোন ইস্টিশন নেই

গাছের পাতা আছে। সারা বছরের স্মৃতি নিয়ে সব পাতা একদিন ঝরে যায়। আবার নতুন পাতা আসে। আবার ঝরে যায়। এইভাবেই চলতে থাকে গাছ যতদিন বাঁচে। মানুষের পাতা নেই। মানুষের পাতা হল তার জীবনের মুহূর্ত। জীবন থেকে অনবরতই মুহূর্ত ঝরে চলেছে দু:খ-সুখের স্মৃতি নিয়ে। চলার পথে জমছে। অদৃশ্য কিন্তু অনুভব করা যায়। চলতে গেলে মচমচ শব্দ হয় না ঠিকই, তবু একেবারে নীরব নয়। কান পাতলে অতীত থেকে ভেসে আসা কণ্ঠস্বর শোনা যায়।

রাতের মেল-ট্রেন ছুটছে দুলে দুলে, পাহাড়-পর্বত-নদী-নালা ডিঙিয়ে। ষষ্ঠীর দিন। বাঙলার দুর্গামণ্ডপে ঢাকে কাঠি পড়েছে। আকাশে প্যাঁজা তুলোর মতো শরতের মেঘ। একফালি চুষে-খাওয়া লেবু-লজেন্সের মতো চাঁদ মাটির কাছে ঝুলছে। তৃতীয় শ্রেণির কামরা। পুজোর ছুটিতে কলকাতা চলেছে বেড়াতে। ঠাসা ভিড়। আমরা চার কলেজ বন্ধু। এপাশে ওপাশে, মাথার ওপর দুটো বাঙ্কে পা ছড়িয়ে বসে আছি। তারস্বরে গান চলছে। কখনও রবীন্দ্র-সংগীত, কখনও হিন্দি ছায়াছবির হিট গান। বেপরোয়া চার যুবক। ভবিষ্যতের স্বপ্ন চোখে। কোনও দায়দায়িত্ব নেই। দুর্ভাবনা নেই। অর্থনৈতিক দাসত্ব নেই। কামরায় তিলধারণের জায়গা নেই, তবু আমদের কী উল্লাস! একেবারে নীচের আসনে পাশাপাশি দুটি মেয়ে বসে আছে। মাঝে মাঝে চোখে চোখ পড়ে যাচ্ছে। আমাদের গান আর কথা বলার উৎসাহ আরও বেড়ে যাচ্ছে। যার ভাণ্ডারে যত রসিকতা আছে, সব উজাড় করে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিযোগিতা চলেছে চারজনে। স্বয়ম্বর সভায় যেন চার রাজপুত্র। রাজকন্যার মালা জিতে নেওয়ার জন্যে অলিখিত, অঘোষিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ওই ভিড় ট্রেনে সেই দোলায়িত রাত যেন স্বপ্নের রাত, আরব্য রজনির রাত।

ভোরবেলা জানলা গলে আমরা চার পরাজিত রাজপুত্র যশিডি স্টেশনে হুমড়ি খেয়ে পড়লুম। সামনেই অস্পষ্ট আলোয় ঘুমন্ত একটি পাহাড়। গায়ে কুয়াশা হাত বুলোচ্ছে। কেমন একটা শীত শীত ভাব। রুক্ষ্ম, পাহাড়ি মাটি। একটি দুটি পাখি থেমে থেমে ডাকছে। বদ্ধ কামরা থেকে একেবারে মুক্ত প্রকৃতির কোলে। ট্রেন নীচের বাঙ্কে ঘুমন্ত মেয়ে দুটিকে নিয়ে পাটনার দিকে চলে গেল। এতক্ষণ ধরে মৃদু চালসে-ধরা আলোয় রোমান্সের যে জাল বোনা হয়েছিল, তা ছিঁড়ে-খুঁড়ে গেল। আমরা আর প্রতিদ্বন্দ্বী নই। প্রাণের বন্ধু। ভোরের নীলচে আলোয় অদৃশ্য কালির লেখার মতো চারপাশের দৃশ্য ফুটে উঠছে। টাঙা চলেছে আমাদের চারজনকে নিয়ে রিখিয়ার দিকে। ইউক্যালিপটাসের গন্ধ ভেসে আসছে।

বহুকাল আগে ঝরে গেছে জীবনের সেই সব মুহূর্ত। সেই চার বন্ধু কে কোথায় ছিটকে গেছে আজ। কোনও যোগাযোগ নেই। সেই স্বপ্নের মেয়ে দুটি সেই ট্রেনের সঙ্গে সেই যে হারিয়ে গেল আর দেখা হল না, কোনওদিন না। বয়েস বেড়ে গেল, চুল পেকে গেল, মন বদলে গেল। স্বাধীন, স্বপ্নময় ছাত্রজীবন দাসজীবন হয়ে গেল। যা চাওয়া হয়েছিল, তাঁর কিছু পাওয়া গেল, কিছু পাওয়া গেল না। এখনও প্রতি রাতে হাওড়া থেকে সেই ট্রেন ছাড়ে। সেই একই ভিড়। ওপরের দুটি বাঙ্কে কেউ-না-কেউ থাকে। যশিডি স্টেশনে নেমে টাঙা চেপে কেউ-না-কেউ রিখিয়ার যায়। আমিও যেতে পারি, তবে সে অন্য আমি। তরুণ নয়, প্রবীণ আমি। আমার পাশে আমার সেই তিন বন্ধু থাকবে না। নীচের বাঙ্কে সেই মেয়ে দুটি থাকবে না। ঝরা পাতা যেমন গাছের ডালে আবার আটকে দেওয়া যায় না, ঝরা মুহূর্তও তেমনি জীবনে আর জুড়ে দেওয়া যায় না। যা গেল, তা গেল।

একবার দেরাদুন থেকে কলকাতা আসার পথে সাহারানপুরের কাছে কী একটা ছোট গ্রামের পাশে ট্রেন বিকল হয়ে গেল। আমার সহযাত্রী ছিলেন এক বাঙালি ব্যারিস্টার। তাঁর সে রকম অহমিকা ছিল না। ভীষণ আমুদে মানুষ ছিলেন। গোটা চারেক ভাষায় অনর্গল কথা বলার ক্ষমতা। আদর্শনিষ্ঠ। আমার হাতে ইংরেজি গোয়েন্দা কাহিনি দেখে বললেন, ‘ও সব নেগেটিভ বই পোড়ো না। মানুষের পরমায়ু খুব বেশি নয়, অথচ ভালো ভালো বইয়ের সংখ্যা এত বেশি, এক জীবনে পড়ে শেষ করা তো যাবে না, পড়তে হলে বেছে বেছে সেই সব বই পড়ো, মনের উন্নতি হবে।’ মানুষকে যাঁরা সৎ পরামর্শ দেন তাঁরা মহান। কুপথে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গী অনেকে আছে, সুপথের সঙ্গী লাখে এক। মানুষটির আরও পরিচয় পেলুম অন্য একটি ঘটনায়। ইংরেজিতে বলে টিট ফর ট্যাট অর্থাৎ যেমন বুনো ওল তেমনি বাঘা তেঁতুল। পাশের কুপের এক অবাঙালি ভদ্রলোক জানলার রেলিং-এ ভিজে গামছা বেঁধে দিয়েছিলেন। বাতাসে সেই গামছার ঝাপটায় আমরা জানলার ধারে বসতে পারছিলুম না। আমার সেই সহযাত্রা উঠে গিয়ে অনুরোধ জানিয়ে এলেন, গামছাটা খুলে নিন। কোনও ফল হল না। তখন তিনি সুটকেস থেকে একটা কাঁচি বের করে কচাত করে গামছার যে অংশটা আমাদের ঝাপটা মারছিল, কেটে ফেলে দিলেন। পরিণাম যাই হোক না কেন, তাঁর নীতি ছিল যেমন কুকুর তেমনি মুগুর।

যখন জানা গেল ট্রেন ঘণ্টা চারেকের জন্য রুকে গেল, তখন আমরা দুজন নেমে পড়ে গ্রামের দিকে হাঁটতে লাগলুম। আমগাছ, জামগাছ, পথ চলে গেছে এঁকেবেঁকে গমের ক্ষেতের পাশ দিয়ে। ছোট্ট একটা মন্দির। মহাবীর দাঁড়িয়ে আছেন পর্বত কাঁধে। একেবারেই দেহাতি গ্রাম। কোথাও কিছু নেই। হাঁটতে হাঁটতে আমরা একটা প্রাইমারি স্কুলের কাছে চলে এলুম। প্রধান শিক্ষক ক্লাস ছেড়ে এগিয়ে এলেন। খুব খাতির করে আমাদের বসালেন। এমনকি, লাড্ডু আর চা খাওয়ালেন। জীবনের কিছু মুহূর্ত সেখানে পড়ে আছে। যা আর তুলে আনা যাবে না। ট্রেন হয়তো রোজই ওই গ্রামের পাশ দিয়ে আসে, গ্রামের হয়তো আরও উন্নতি হয়েছে, প্রাইমারি স্কুল হয়তো হাই স্কুল হয়ে গেছে। সেই বয়স্ক প্রধান শিক্ষক হয়তো আর নেই, আর কোথায়ই বা আমার সেই ব্যারিস্টার সহযাত্রী। সব পেছনে ফেলে আমার সময়ের রেলগাড়ি সোজা এগিয়ে চলেছে। রোজই তাতে নতুন যাত্রী, নতুন কথা, নতুন ভাবনা।

 যে হুলোটির কথা আগের লেখায় লিখেছি, সেই হুলোটি এইমাত্র মারা গেল। বাগানের গুমটি ঘরের ছাদে তার মৃতদেহ পড়ে আছে। পরশুদিন তাকে খাইয়ে দাইয়ে রাত এগারোটা নাগাদ দূর-দূর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। মধ্যবিত্তের সাজানো সঙ্কীর্ণতায় উটকো একটা বেড়ালকে আশ্রয় দেওয়ার উদারতা নেই। পরের দিন সন্ধেবেলায় কে এসে বললে, হুলোটা বাইরে পড়ে আছে, ভীষণ অসুস্থ। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা উঠছে। একটা স্ট্রেচার মতো করে বেড়ালকে তুলে আনা হল। ওষুধ এল, পথ্য এল, সারারাত ধরে পরিচর্যা চলল। গুমটি ঘরের ছাদ হল তার হাসপাতাল। কম্বল চাপানো হল, তার ওপর প্ল্যাস্টিকের আচ্ছাদন। শীতও পড়ল জবরদস্ত। চারপাশ হিহি করছে। কুয়াশায় প্রকৃতির যেন দমবন্ধ হয়ে আসছে। গাছের পাতার খাঁজে খাঁজে কান্নার জল জমেছে। সামান্য একটা ইতর প্রাণীর জন্যে প্রকৃতির এত বেদনা! না শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের নিষ্ঠুরতায় অশ্রু বিসর্জন! কে বা কারা মেরে হুলোর পেছনের পা দুটো ভেঙে দিয়েছে। শুধু তাই নয় বিষ খাইয়ে দিয়েছে। এই বিশাল বিপুল নিষ্ঠুর পৃথিবীতে তুচ্ছ একটা বিড়ালের বাঁচার অধিকার নেই। বেড়াল জীবনের শেষ কয়েকটি মুহূর্ত পড়ে রইল ওই গুমটি ঘরের ছাদে। আর কোনওদিন সে মা মা করে পায়ে পায়ে ঘুরবে না। আমার পেছনে পেছনে দোকান পর্যন্ত পোষা কুকুরের মতো ছুটবে না। অন্য বেড়াল হয়তো আসবে; কিন্তু তাদের ডাক আলাদা, স্বভাব আলাদা। তার সমস্ত মুহূর্ত আমার ঝরা মুহূর্তে হারিয়ে গেল। আমি যতদিন বাঁচব, ততদিন ওই গুমটি ঘরের ছাদের দিকে তাকালেই দেখতে পাব একটি মৃত বেড়ালের অর্ধনিমিলিত চোখ। আমার হাতের টর্চের আলোয় স্থির। কলকে গাছের একটি ডাল ঝুঁকে আছে মাথার ওপর। ফোঁটা-ফোঁটা শিশির ঝরে পড়ছে সময়ের বিলাপের মতো।

কতদিন ভেবেছি জীবনের সুখের কী দু:খের মুহূর্ত যদি ইচ্ছেমতো ফিরিয়ে আনা যেত! এই তো কিছুদিন আগে আমরা জলপাইগুড়ি গিয়েছিলাম। আমি, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সমরেশ বসু, সমরেশ মজুমদার, বুদ্ধদেব গুহ, বিমল দেব, মনোজ মিত্র। তিস্তা-লজের একটি ঘরে সকাল হচ্ছে। মনোজবাবু বিছানা থেকে কম্বলের পাহাড় নিয়ে উঠে বসলেন। প্রভাতি চা এল। তারপর আমরা দুজনে সারা জলপাইগুড়ি শহরটা পদব্রজে চলে এলুম। মনোজবাবু বাঁধের ওপর একটা সিকি কুড়িয়ে পেলেন। বিশাল বিশাল কৃষ্ণচূড়া নীল আকাশে ঝাড়ু মারছে। রাস্তার ধারের চায়ের দোকানে লুচি খাওয়া, গরম চা। সেলুনে দাড়ি কামানো। সেই সেলুনে আবার পটের মতো এক সার ছবি ঝুলেছে। একটু বেলার দিকে জলপাইগুড়ি কলেজের একদল ছাত্রীর আগমন প্রাণচঞ্চল, প্রশ্নে ভরপুর। একেবারে কোরকের মতো। বহু শীত, বহু গ্রীষ্ম, বর্ষার মাজাঘষায় জীবন রংচটা হয়ে যায়নি। সারি সারি কপালে সারি সারি টিপ। ছোট টিপ, বড় টিপ।

সদলে মধুর টি-এস্টেটের ডাকবাংলোতে রাত একটায় যেন স্বপ্ন দেখছি। সবুজ লনে আলোর পিচকারি। হিহি শীত। পরের দিন রাত দেড়টা কম্বলমুড়ি দিয়ে কালাচিনি ফরেস্টে পাগলা হাতি দেখতে যাওয়া। কথা বলায় বুদ্ধদেববাবুর ধমক, ‘চোপ, জঙ্গলে কিছু দেখতে হলে কথা বলা চলে না।’ ঘোর অন্ধকারে এক ডজন মানুষ ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে। প্রাচীন অরণ্যের বুক চিরে পথ চলে গেছে সিঁথির মতো। গাছের ফাঁকে ফাঁকে পিংপং বলের মতো জোনাকি ভাসছে। পাতার শব্দ হলেই বুক কেঁপে উঠছে, ওই রে পাগলা হাতি। রাত আড়াইটার সময় বাংলোয় খেতে বসে চা-বাগানের সেক্রেটারির অতিথি আপ্যায়নের আন্তরিকতা। স্যুপে মরিচ নেই বলে কর্মচারীদের ধমকধামক। নি:শব্দে পৃথিবী ঘুরে যাচ্ছে অক্ষপথে। রাত থেকে দিন, দিন থেকে রাত। প্রকৃতিতে কত বিশাল ঘটনা ঘটে চলেছে। আর বিন্দুর মতো স্থানে, তিলের মতো কিছু প্রাণী নিজের তৈরি নিরাপদ সীমানায়, মরিচ-মরিচ বলে উতলা হচ্ছে।

হাজার চেষ্টা করলেও ওই সব মুহূর্ত আর ফিরবে না। সুনীলবাবুর সেই গান দুটি, যে দুটি গান গেয়ে সমরেশ বসু মহাশয়ের জন্মদিন পালন করা হল ঠিক রাত বারোটায়, ‘আশালতা, কলমিলতা ভাসছে অগাধ জলেতে।’ আর ‘এবার মরলে সুতো হব।’ অনুরোধ করলে তিনি যেকোনও দিন গাইতে পারেন, কিন্তু ঠিক ওই দিন, ওই সময় যেমন লেগেছিল, তেমন কী আর লাগবে? মনোজবাবু আবার দুটি গানকে এক করে, অদ্ভুত এক টু-ইন-ওয়ান বানিয়েছিলেন। স্মৃতিতে সব চালান হয়ে গেছে। চোখ বুজলে দেখা যাবে বাংলার সদাশিব নাড়ুবাবু সমরেশবাবুর দিকে একগুচ্ছ মধ্যরাতের শিশিরভেজা ফুল এগিয়ে দিচ্ছেন। সে অনুভব কিন্তু মনের চোখে!

আমরা দু:খে ফিরে যেতে চাই, সুখে ফিরে যেতে চাই, যে হাত ধরে শৈশবে মেলায় ঘুরেছি সেই হাত আবার ধরতে চাই, যে আমায় কাঁদিয়েছে তাকেও চাই, যে আমায় হাসিয়েছে তাকেও চাই, যে চোখে ভালোবাসার প্রথম শিখা কেঁপেছে তাকেও চাই। চাই কিন্তু পাই না। অন্ধকার নিস্তব্ধ অরণ্যের প্রত্যাশায় দাঁড়িয়ে থাকা, ফেলে আসা পথে চলতে গেলে শুধু মচমচ শব্দ। সবই মৃত। অতীত মৃত, ভবিষ্যৎও মৃত। মুহূর্ত নবীন হয়েই প্রবীণ হয়ে যাচ্ছে। এ বড় জ্বালা। এ এমন এক রেলগাড়ি যা থামতে জানে না, যার কোনও স্টেশন নেই। যাত্রীরা সব মৃত মুহূর্ত। তবু কোন অপরাহ্নবেলায় মাটি থেকে যখন ভিজে-ভিজে গন্ধ বেরোয়, পাতায় লেগে থাকে দীর্ঘশ্বাসের মতো মৃদু বাতাস, তখন দুরের পানে তাকিয়ে আমরা প্রতীক্ষা করতে পারি, জীবনে এমন কিছু আসুক যা হারায় না। জীবনের একমাত্র সত্য অপেক্ষা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *