পঞ্চম পর্ব
যাত্রার ভূমিকাও আমার অভিনয় জীবনে অনস্বীকার্য। যাত্রার নাম ‘বাঁচতে দাও’। আমাকে দু’ লাখ টাকা অফার দেওয়া হয়েছিল। প্রবোধ অধিকারীর দল। ওঁর ছিল তাঁতের ব্যবসা। টানা একবছর ধরে যাত্রা করেছি। সেইসময় আমি সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা। এক বিরাট অফার এল আমার কাছে। চিৎপুরে এক জমিদার বাড়ি ভাড়া নিয়ে শুরু হল যাত্রার রিহার্সাল। যাত্রা হল মন্দিরের মতো। পূজার স্থান। সেই বেদীতে অনেকের পায়ের ধুলো পড়েছে। স্বপনকুমার, শান্তিগোপাল, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। আমিও যোগ দিলাম। সালটা সম্ভবত ১৯৭১-৭২-এর। টানা এক বছর যাত্রার অভিনয় করেছি। আমিই হিরো। প্রধান চরিত্র। আমাকে ঘিরেই যাবতীয় আলো বিচ্ছুরিত। নিজেকে কেউকেটা লাগত। তখনকার দিনে দু’লক্ষ টাকা বিরাট ব্যাপার। অজিতেশদাও যাত্রায় যোগ দিয়েছিলেন। প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার চুক্তি। পালার নাম ‘রাবণ’। তবে অপেরার নাম মনে নেই। আমার সঙ্গে দেখা হত। আসানসোল, বহরমপুরে একসঙ্গে যাত্রাও করেছি। জিজ্ঞাসা করেছিলাম— ”যাত্রায় এলেন কেন?” উত্তর দিয়েছিলাম— ”মাটির কাছাকাছি মানুষগুলোকে দেখব বলে। তাঁদের চিনব বলে। ভালোবাসব বলে।” আমি বলেছিলাম— ”টাকা রোজগার করব বলে যাত্রায় এসেছি।” এই কথা ওঁর খুব একটা পছন্দ হয়নি। তবে নাট্যকার, সু-অভিনেতা, নির্দেশক অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলার মানুষ যেভাবে গ্রহণ করেছিলেন, যাত্রায় তিনি তেমন সুনাম অর্জন করতে পারেননি। ‘রাবণ’ সুপার ফ্লপ করেছিল। এরপর অজিতেশদা আর কোনও যাত্রায় অভিনয় করেননি।
এক বছরের যাত্রার অভিজ্ঞতা থেকে এটুকু বলতে পারি, যাত্রা হল অভিনয়ের সেরা মাধ্যম। যাত্রায় অভিনয় না করলে একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রী শিল্পী হিসাবে সম্পূর্ণ হন না। একজন অভিনেতা বলতে পারেন যে, ফিল্ম-থিয়েটার তো করছি, লোকে সুনামও করছে। তাহলে আবার যাত্রায় অভিনয় করব কেন? এখানে একটাই কথা বলার, যাত্রাও অভিনয়ের একটা মাধ্যম। সেই মাধ্যমে চলাচল বন্ধ থাকলে অভিনয়ের বৃত্তটা সম্পূর্ণ হয় না। সব অভিনেতারই একবার যাত্রার স্টেজ ঘুরে আসা ভালো। অভিনয়ের দৃশ্যাতিদৃশ্য বিষয়, বৌদ্ধিক চিন্তাধারা, আদর্শ বোধের ব্যাপারগুলো সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া যেত যাত্রায় অভিনয় করলে। একজন অভিনেতা অনেক বেশি দক্ষ ও পরিপূর্ণ হন যাত্রায় অভিনয় করে। না হলে বৃত্তটা সম্পূর্ণ হয় না। যাত্রা আমাকে জীবনে অনেক কিছু দিয়েছে। গ্রাম ও শহরের বিভেদ ঘুচিয়ে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যাত্রার সুবাদে ঘুরেছি। মানুষের সঙ্গে মিশেছি। তাঁদের জীবন-সভ্যতা-সংস্কৃতিকে আপন করে নিয়েছি। বর্ধমান, মেদিনীপুর, উত্তর চব্বিশ পরগনা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, মুর্শিদাবাদ জেলার মাঠে বসা যাত্রার আসরে দেখেছি মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের মিছিল। আমাকে চিনতে পেরে কথা বলতে এসেছেন। কথা বলেছি। ওঁদের সুখ-দুঃখের মাঝে নিজেকে মিশিয়ে দিতে চেয়েছি। জেলার প্রান্তে গিয়ে দেখেছি সেখানে কোনও সিনেমা হল নেই। সিরিয়াল নাটকের আলোচনাও হয় না। কিন্তু রয়েছে বিস্তীর্ণ মাঠ। সেই মাঠে বসেছে যাত্রার আসর। মাঠ ভরে গিয়েছে মানুষে-মানুষে। অবাক হয়েছি। যাত্রা আমাকে বিরাট জনপ্রিয়তা দিয়েছে। আমাদের ‘যুগযাত্রা’ অপেরার ‘বাঁচতে দাও’ ছিল মূলত একটি সামাজিক পালা। গান ছিল। নাট্যদৃশ্যের বর্ণময়তা ছিল। ছিল দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে যাওয়ার প্রয়াস। বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল যাত্রা। শহরের থেকে গ্রামেই জনপ্রিয়তা বেশি পায়। ‘বাঁচতে দাও’ অশোক মুখোপাধ্যায়ে লেখা। একটি আইরিশ নাটকের বাংলায় ভাবানুবাদ। সেখানকার বস্তির জীবনযাত্রা কলকাতার বস্তির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অত্যন্ত দরিদ্র একটি পরিবার। মা-বাবা-ভাই-বোন। মাতাল বন্ধু— বস্তির যুবকদের মধ্যে ক্রমে প্রবেশ করছে কমিউনিস্ট চিন্তাধারা। তার প্রভাবে যুবসমাজ আন্দোলিত, আলোড়িতও। কারখানায় কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকের হাত কাটা যায়— বিনিময়ে সে ক্ষতিপূরণ পায় না। এদের সকলের দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়ে গ্রামীণ মানুষরা নিজেদের মিশিয়ে দিয়েছেন। এ যেন ছিল ওঁদের জীবনের প্রতিচ্ছবি। মেদিনীপুরের এগরায় আমাদের প্রথম শো হয়। প্রথমদিনে একটা ভয় ছিল। দর্শকরা বিষয়টিকে নেবেন কি নেবেন না— কিন্তু শো শুরু হওয়ার পর বুঝতে পারলাম আমাদের সকলের অভিনয় এবং যাত্রার বিষয়বস্তু জনসমাজে গৃহীত হয়েছে। আমি রঙমহলে ‘রাহুমুক্তি’ বলে একটি নাটক করেছিলাম। ‘বাঁচতে দাও’-ও অভিনয় করার সময় সেই নাটকের অভিনয়ের ছায়া পড়েছিল।
বর্তমান সময়ের বিভিন্ন নাটক বা যাত্রায় নারী জাগরণের ছবি দেখতে পাই। কিন্তু এই সময়ের অনেক আগে ‘বাঁচতে দাও’ যাত্রার বিষয়বস্তুতে নারী জাগরণের ছবিটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। উৎপলদা, জ্ঞানেশদা, শান্তিগোপাল ও স্বপনকুমারের নাটক ও যাত্রার বিষয় সামাজিক কাহিনি নির্ভর। পরে সেই তালিকায় একটি নাম যুক্ত হয়— চিন্ময় রায়।
যখন নাটক করেছি বা প্রফেশনাল থিয়েটার আমরা অথবা যাত্রা; চেষ্টা করেছি বিষয়বস্তুর মধ্য দিয়ে সমাজের বৈষম্য, অন্যায়কে তুলে ধরতে। সফলও হয়েছি। ‘বাঁচতে দাও’ অভিনয়ের সময় বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে প্রান্তিক মানুষের চেহারা, তাঁদের সমস্যা অনেক বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। শো-এর শেষে যখন গরিব মানুষেরা কথা বলতে আসত তখন মনটা প্রসন্ন হয়ে উঠত। ভালো লাগত এই ভেবে যে আমাদের অভিনয়, যাত্রার বিষয় গৃহীত হয়েছে। শো চলাকালীন গলায় পরিয়ে দেওয়া হত ১০-৫০-১০০ টাকার মালা। আমি এমন মালা গোটা পঞ্চাশেক পেয়েছি।
যাত্রার যেমন ভালো দিক রয়েছে। তেমনই রয়েছে খারাপ দিক। সকালে ধূপ-ধুনো দিয়ে পুজো করা হত। ধূপের গন্ধে ম ম করত চারপাশ। চলত অনেকক্ষণ ধরে প্রসাদ বিতরণ পর্ব। আমি ছিলাম হিরো বা প্রধান চরিত্র বা এক নম্বর। এক নম্বর অভিনেতার আলাদা ঘর। আলাদা কাজের লোক। খাওয়ার জায়গা, স্নান করার জায়গা সবই আলাদা। আমার দেখা-শোনার জন্য যে থাকত তার নাম বাবু। তখনকার যাত্রাজগতের নিয়ম ছিল, নাম ধরে না ডেকে বয় বা বেয়ারা বলে ডাকার। আমি কিন্তু নিয়মের ধারকাছ দিয়ে যেতাম না। নাম ধরেই ডাকতাম। ফলে মালিকের বিরাগভাজন হতে হয়েছিল। আমি অবশ্য তোয়াক্কা করিনি। সেটা মালিক বুঝতে পেরে কখনও কিছু বলেননি। আর বললেও আমি শুনিনি।
খারাপ দিকটা হল, যাত্রায় এক্সট্রাদের কখনওই জুনিয়র আর্টিস্ট বলা হত না। বলা হত ফালতু বা এক্সট্রা। এদের ছোটখাটো পার্ট দেওয়া হত। মিলত ৫০ পয়সা বা ৭৫ পয়সা (তখনকার হিসেবে)। সম্মান, শ্রদ্ধা কিছুই ছিল না। যে অর্থ ফালতুরা পেত, তা দিয়ে কোনওমতে একবেলা খাবার জুটত। একবেলা জুটত না। আমি আমার রান্নার লোককে দিয়ে বেশি করে রান্না করিয়ে রাখতাম। যাতে দ্বিপ্রাহরিক আহারটা আমার সঙ্গে অনেক জুনিয়র আর্টিস্ট সেরে ফেলতে পারে। এইভাবে চেষ্টা করেছি নিজের খাবার থেকে অন্যকে ভাগ দিতে। মালিক রাগ করেছেন। বলেছেন— ”আপনি নিয়ম ভাঙছেন। কথা শুনছেন না। কাজের লোককে বয় বা বেয়ারা বলে ডাকছেন না। নাম ধরে ডাকছেন। এরপর ওরা আপনাকে মানতে চাইবে না। কথা শুনবে না। আপনি কি যাত্রার নিয়মকানুন সংশোধন করতে এসেছেন।” আমি নীরবে সব শুনে গিয়েছি। কিন্তু কোনও উত্তর দিইনি। নিজে যেটা ভালো মনে করেছি তাই করেছি।
আমাদের যাত্রার দলটা ছিল ছোটো। সাত হাজারি। মানে সাত হাজার লোক সেই আসরে হাজির হতে পারত। মধ্যবিত্ত দল। আটপৌরে পোশাক আশাক। কিন্তু চিন্তাভাবনায় অন্য দলের থেকে এগিয়ে। সেই সময় অর্থাৎ ৭১-৭২ সাল নকশাল পিরিয়ড। গ্রামেগঞ্জে যেখানে গিয়েছি সমাদর পেয়েছি। নকশাল আন্দোলনের কেউ যাত্রার কুশীলবদের গায়ে হাত তোলেনি। কোথাও পালা চলাকালীন গোলমাল হয়নি। সেইসময় বেশ কয়েকটি দল ছিল, এখন বয়সের কারণে নাম মনে পড়ছে না। দলগুলি বেশ বড়ো। ৮০ হাজারি, ৬০ হাজারি। প্রায় ৫০,০০০, ৪০,০০০ লোকের সমাগম চলত। আসর ভরে থাকত। আমাদের দল পাল্লা দিয়েছে বড়ো দলগুলির সঙ্গে। একদিনও লোক কম হয়নি। সব শো-ই হাউসফুল ছিল। মালিক লাভের টাকা পেতেন কি পেতেন না তা নিয়ে আমি ভাবিনি। কেবল নিজের প্রাপ্য অর্থটা বুঝে নিয়েছি এবং বুঝেছি আমার দলের বাকি সতীর্থদের অর্থপ্রাপ্তির দিকটা। তাঁরা পেলেন কিনা সে বিষয়ে খোঁজ নিয়েছি। নকশাল আন্দোলনের ঢেউ যখন এ সবের গায়ে এসে লাগল, তখন আমরাও রেহাই পাইনি। বড়ো দল প্রচুর লোকজন নিয়ে চলাফেরা করতে হত। সঙ্গে লোহার রড, বড়ো লাঠি থাকত। মারামারি করার জন্য নয়, আত্মরক্ষার্থে। নিরাপত্তার স্বার্থে। মেদিনীপুরের দর্শক সব থেকে বেশি শিক্ষিত। সেখানে শো চলাকালীন নকশালদের কয়েকজন যুবকের সঙ্গে আমার দেখা হয়। মনে আছে তারা আমাকে বলেছিল, ”দাদা, আপনাকে আমরা আঘাত করব না। আপনি তো মানুষকে আনন্দ দেন।” আমি বলেছিলাম— ”আর আমার দলের বাকিদের।” ওরা বলেছিল— ”আপনারা শিল্পী। আপনাদের উপর আমাদের কোনও রাগ নেই। আমাদের রাগ রাষ্ট্র#য় ও সামাজিক পরিকাঠামোর উপর।” নকশালদের আন্দোলনকে আমি সমর্থন করিনি কিন্তু ওদের ব্যবহার, আচরণ আমার ভালো লেগেছিল। মনে আছে থিয়েটার ওয়ার্কশপের এক সদস্য সত্যেন মিত্র নকশালদের আক্রমণেই মারা যায়। টবিন রোডে সত্যেনের মূর্তি রয়েছে। যখনই ওদিকে যাই, মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। মারপিট, অশান্তি ভালো লাগে না।
যাত্রা আমি আরও একবছর করতে পারতাম। কিন্তু সেটা হল না। তার কারণ একটাই, ‘যাত্রাবন্ধু’ অধিকারীবাবুর বাড়ি নবদ্বীপে। ৪০টি পালা হয়ে যাওয়ার পর একদিন তিনি বললেন, যে শো পুরোপুরি ফ্লপ। তিনি আর পালাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান না। নবদ্বীপে তাঁর বাড়িতে আমাকে ডাকলেন। বড়ো কাঁসার থালায় ভাত-ডাল আরও কত পদ। আমি বললাম— ”যাত্রা আপনি চালাবেন না। তা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে শো ফ্লপ আপনাকে একথা কে বলেছে জানি না। আপনি যদি যাত্রা দেখতে যেতেন তাহলে দেখতেন শো হাউসফুল।” অধিকারীবাবু বললেন—”তাহলে প্রথম দু’তিনমাসের পর পয়সা পেলাম না কেন?” পরে জানা গেল যে যাঁকে উনি দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওঁর সেই শালাই সমস্ত টাকা নিয়ে নিয়েছেন। লভ্যাংশের কড়ি জামাইবাবুকে দেননি। শালাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছিল। এসব ওঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি ভিতরে ঢুকিনি। বুঝেছিলাম— চৌর্যবৃত্তি সব জায়গাতেই এক। কোথাও কম। কোথাও বেশি। শিল্প ও শিল্পীর সর্বনাশ হয় এভাবেই। যাত্রা ছেড়ে ছিলাম। তবে যে দু’লক্ষ টাকা আমি অভিনয় সুবাদে পেয়েছিলাম তার ফলে নিজের সংসার ও জীবনকে গুছিয়ে নিতে পেরেছিলাম। যাত্রাজগতের কাছে আমি যথেষ্ট ঋণী। আমি কৃতজ্ঞও। ঋণশোধ করা যায় না।
জলসা করার সূত্রে গানের জগতে মহা-তারকাদের সঙ্গে আলাপ হয়। তখনকার দিনের বিখ্যাত শিল্পী মান্নাদা— হেমন্তদা, শ্যামল মিত্র, পরে নির্মলেন্দু চৌধুরী। অমার প্রথম জলসা ছিল উত্তরবঙ্গে। সেখানে ছিলেন হেমন্তদা আর হৈমন্তী শুক্লা। সেদিন জলসার পর টাকা হাতে পাওয়ার পর চোখে জল এসেছিল। মানে স্টেজ-এ কমিক পরিবেশন করে যে টাকা পাওয়া যায়, সে বিষয়টাই আমার কাছে নতুন। যাই হোক, সেই সময় হেমন্তদার সঙ্গে আলাপ হয়। ভীষণ আত্মভোলা, সাদামাঠা একজন মানুষ। একটা ঘটনা বড়ো মনে পড়ছে। কোচবিহারে অনুষ্ঠান আছে। আমি শুনতে পেলাম মান্নাদা বলছেন, ”হেমন্তদা? আমি আগে অনুষ্ঠান করে নিই? আপনার পরে তো আর আমার গান কেউ শুনবে না”…। সেদিন মান্নাদার কথা শুনে শ্রদ্ধায় মনটা ভরে গেছিল। এমন বিনয় না থাকলে বড়ো শিল্পী হওয়া যায় না। হেমন্তদাও ততটাই আত্মভোলা। একটা কাঠের চেয়ারে হেলান দিয়ে বললেন, ”হ্যাঁ তা গেয়ে নাও। আমায় এখন রাত ২ টো অবধি বসিয়ে রাখবে।” বলে গুনগুন করে গাইতে গাইতে ইনসুলিন নিলেন। তারপর টপ করে ২টো মিষ্টি খেয়ে ফেললেন। এরকম মজার মানুষ। সাহিত্যিকদের মধ্যে যাঁদের সঙ্গে আলাপ করে পুলকিত হয়েছিলাম তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সমরেশ বসু। অসাধারণ ব্যক্তিত্ব সব। নবনীতা দেবসেনের সঙ্গে ছবি ও নানা সাহিত্যসভায় আলোচনা হয়েছে। খুব মজার মানুষ নবনীতাও।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায় এরা সৌমিত্রর বন্ধু ছিল। কফি হাউসে আলাপ হয়েছে। অনেক টুকরো টুকরো ঘটনা। সব আমার মনেও নেই। মাঝে মাঝে আবছা স্মৃতি ঝাপটা মারে। যেমন, শান্তিনিকেতনে অন্নদাশঙ্কর রায় ও লীলা রায়ের সঙ্গে আলাপ হয়। লীলা দেবী তখন বাংলা শিখছেন। মিষ্টি করে বাংলা বলতেন। খুব অতিথিসেবা করতে ভালোবাসতেন।
ভি. বালসারা আমার স্বপ্নের মানুষ ছিলেন। তাঁর সঙ্গে আলাপ ও বন্ধুত্ব হয়েছে আমার এই জীবনে। হিন্দুস্থান রেকর্ড থেকে একটা ক্যাসেট বেরিয়েছিল। দু’টো গান আমি গেয়েছিলাম। শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা। সুর দিয়েছিলেন ভি. বালসারা। এমন চমৎকার প্রতিভা, অথচ কোনও অহংকার নেই।
সেই কাজের সূত্রেই আলাপ হয় ওয়াই এস মুলকির সঙ্গে। আমার জীবন ধন্য হয়েছিল ওঁদের সঙ্গে আলাপ করে। আর হ্যাঁ সলিলদা। বম্বে-কলকাতার top most সুরকার-গীতিকার, আমার জন্য, আমার অনুরোধে কাজ করেছিলেন। অসামান্য মহৎ মানুষ, আর খাঁটি বাঙালি। সুধীন দাশগুপ্ত আমার ভালো বন্ধু ছিলেন। আমার অভিনয়ের প্রশংসা করতেন নানা জায়গায়। কোনও পরিচালকের সঙ্গে আলাপ হলেই আমার কথা বলতেন বলে শুনেছি।
আমাদের বাংলার ও ভারতের গর্ব সৌরভ— আমার খুব স্নেহের মানুষ। সৌরভের কাছ থেকে আমি যা শ্রদ্ধা পেয়েছি, তা ভোলার নয়। যুবভারতী বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের ক্রিকেটার বনাম অ্যাক্টরদের একটা সৌজন্যমূলক ম্যাচ হয়। সেখানেই আমার ওর সঙ্গে আলাপ। আমি ড্রেসিংরুমে বসেছিলাম। ও এসে বলল, ”দাদা, আপনাকে তো খেলতেই হবে।” আমি অবাক হয়ে বললাম, ”সে কী, আমি তো কোনও বুট ইত্যাদি আনিনি।” সৌরভ বলে, ”আমাদের sports shoe আছে। আপনি পরে নিন। কিন্তু আপনাকে মাঠে নামতেই হবে। আমি আর ডোনা আপনার খুব বড়ো ফ্যান।” আমি আপ্লুত হয়ে পড়ি। ব্যস নেমে পড়লাম মাঠে। দশ মিনিট থাকার পর সুভাষদা এসে বললেন, —”অনেক খেলেছ, এবার নীচের দিকে একটা গোল করে চলে এসো।” সেখানেই সৌরভ আমায় কপিলদেবের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেয়। কপিল দেব আমায় চেনেন না, কিন্তু ওই অত বড়ো ক্রিকেটারের বিনয় আমায় মুগ্ধ করেছিল। সৌরভের স্ত্রী ডোনাও বড়ো গুণী মেয়ে। আমার ওদের দু’জনের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক। অনেক জায়গায় দেখা হয়। আমায় আদর দিয়ে কথা বলে ওরা দুজনেই। ওদের পুরো পরিবারটাই অসাধারণ।
ক্রিকেটের সম্বরণ ব্যানার্জি, ফুটবলের পি.কে-দা, শৈলেন মান্না— আমার প্রিয় মানুষ ছিলেন। আমার কাছে ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানের কোনও পার্থক্য ছিল না। যে ভালো খেলত আমার ভালো লাগত। পিণ্টু দাশগুপ্ত, গৌতম সরকার, অসীম মৌলিক— আমার বন্ধুস্থানীয় ছিল। ফুটবল মাঠে যাওয়া আমার নেশা ছিল। সুভাষ ভৌমিক তো প্রায়ই ডাকত। আমি দু’টো line-এই যেতাম। ইদানীংকালে বাইচুং-ব্যারোটোর সঙ্গে আলাপ হয়েছে। বিদেশি খেলোয়াড়দের খেলা দেখি কিন্তু তবু মনে হয়, বাঙালির ফুটবল, বাঙালিদের মধ্যে আবদ্ধ থাকলেই ভালো হয়। না, বিদেশিদের প্রতি আমার বিদ্বেষ নেই, কিন্তু তবু, বাঙালির ফুটবলে বাঙালিদেরই দেখতে ইচ্ছে করে খুব। After all— ”সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল”— এই নামের মধুতেই বাঙালিরা কাটিয়ে দেবে। বাঙালি গোলকিপাররা আমার কাছে সেরা। যেমন আমাদের সুব্রত পাল।
ম্যাজিসিয়ান পি.সি. সরকারের সঙ্গে আলাপ আমার জীবনের একটা পাওয়া। এত বড়ো মানুষ, অথচ কী সাধারণ-সরল। সবাইকে বড়ো সহজে আপন করে নিতে পারেন এই মানুষটি। আমার জীবনে একটা খারাপ সময়ে আমায় খুব সাহায্য করেছিলেন। সে উপকারের কথা আমি কখনও ভুলব না ওঁর। সারাজীবন ওই মানুষটির কাছে এজন্য আমি ঋণী হয়ে থাকব। ওর মেয়ে মুমতাজের আমার একটা ছবিতে কাজ করার কথা ছিল, কিন্তু যাই হোক, ছবিটা শুরু হয়েও মাঝপথে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আবার যদি ছবিটা কখনও হয়, তবে ও-ই কাজটা করবে। খুব ভালো মেয়ে— দারুণ সপ্রতিভ অভিনেত্রী।
সারাজীবন আক্ষেপ থাকবে তুলসী চক্রবর্তী,ছবি বিশ্বাসের সঙ্গে আলাপ না হওয়া বা কাজ করতে না-পারা। তবু এই জীবন অনেক কিছু দিল। পাওয়া-না পাওয়ার রং মিলিয়ে কখনও বা খুব রঙিন-ঝলমলে আবার কখনও বা ফ্যাকাশে বেরঙিন। আগেকার দিনের মহিলা শিল্পীদের কথা বলতেই মনে পড়ে মলিনা দেবী, সন্ধ্যারানির কথা। পরে মলিনা দেবীর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাই ‘ফুলু ঠাকুমা’ ছবিতে। উনিই হয়েছিলেন ঠাকুমা। মলিনা দেবী মায়ের চরিত্রে এত ভালো অভিনয় করতেন যে, কেঁদে ফেলতাম। অথচ উনিই ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এ অসামান্য কমিক রোলে অভিনয় করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কতটা বহুমুখী প্রতিভার অধিকারিণী তিনি। ‘ফুল ঠাকুমা’ ছবির প্রথম দিনের শ্যুটিংয়ে ওকে প্রণাম করতে যেতেই আমায় জড়িয়ে ধরেন। বলেন, ”আজকালকার ছেলেরা আমাদের প্রণাম করে নাকি?” সেইসময় আমি সত্যিই আজকালকার ছেলে। আমি জবাবে বলেছিলাম, ”করে বইকি। যাদের নিজেদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আছে, তারাই সম্মান জানায়।” এই কথা শুনে কেঁদে ফেলেছিলেন মলিনা দেবীর মতো মহান শিল্পী। আমার পরে মনে হয়েছিল, হয়তো কোনও গভীর দুঃখবোধ ওঁকে পীড়া দেয়।
ভারতী দেবীর সঙ্গে অভিনয় করি, আমার কেরিয়ারের প্রথম ছবি ‘গল্প হলেও সত্যি’-তে। ভারতী দেবীও মজার মানুষ ছিলেন। খুব রসিক আর মজলিশি ছিলেন। মায়ের মতো জুনিয়ারদের গাইড করতেন।
মাঝে মাঝে পদ্মাদি মানে পদ্মা দেবীকে খুব মিস করি। আমার ছবি ‘ননীগোপালের বিয়ে’-তে আমার শাশুড়ির ভূমিকায় উনি অভিনয় করেন। গোড়ায় পদ্মাদির সঙ্গে যখন আলাপ হয়েছিল, জানতাম যে উনি বম্বেরও প্রচুর ছবি করেছেন। খুব ভালো হিন্দি বলতেন। দেবানন্দের অনেক ছবিতে অভিনয় করেছেন। (সুন্দরীও ছিলেন।)
পদ্মাদি, নীলিমা দাস, সাধনা রায়চৌধুরী এবং গীতা দে-র সঙ্গে অভিনয় করে অনেক কিছু শিখেছি। প্রচুর উপকৃতও হয়েছি। ছায়াদি রুমাদির কথাও ভুলব না। ছায়াদেবীর মতো শক্তিশালী অভিনেত্রী সারা ভারতে খুব কম আছে, এ কথা আমি হলফ করে বলতে পারি।
আমার কেরিয়ারে যে সুন্দরী ও আমার প্রায় সমবয়সি অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করে আমি আপ্লুত— সে হল অপর্ণা সেন। এখনও বন্ধুত্ব আছে আমাদের। অপর্ণা হল একদম সময়ের উলটো স্রোতে হাঁটা একটা মেয়ে। যতটা মারকাটারি সুন্দরী, ততটাই প্রতিভাময়ী। অপর্ণার সঙ্গে প্রথম থেকেই মধুর বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল আমার। ‘ছুটির ফাঁদে’ ছবিতে ঘাটশিলায় আউটডোরে থাকাকালীন প্রায়ই সানরাইজ দেখতে যেতাম। অপর্ণা খুব sporting মেয়ে। খুব মুডি। হাসতে হাসতেই গম্ভীর হয়ে যেত। গানটা একেবারেই গাইতে পারত না। কিন্তু ভালো কবিতা বলত। আমায় মাঝে মাঝেই বলত— ”ওই গানটা শোনান না।”— রবি ঠাকুরের গান মূলত। আমি তখন টুকটাক গাইতাম। এই করে আমরা বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলাম। গানের সূত্র ধরেই আমাদের বন্ধুত্ব।
সুপ্রিয়া চৌধুরী এই industry-তে আমার আর এক বন্ধু। সুপ্রিয়াকে ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘কোমল গান্ধার’-এ দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। ওই অভিনয়, ওই ক্যারিশমা! ‘জীবন-জিজ্ঞাসা’ ছবিতে আমরা এক সঙ্গে কাজ করেছি। এ ছবিতে উত্তমদা আমায় প্রায় বাদই দিচ্ছিলেন। কিন্তু সুপ্রিয়ার দৌলতেই আমি চান্স পাই। আমার কাছে সুপ্রিয়া তৎকালীন অন্য অনেকের চেয়ে অনেক বড়ো মাপের অভিনেত্রী। আমি ওর সঙ্গে মঞ্চেও অভিনয় করেছি। যে মানুষটি স্টেজ-এ অমন দাপিয়ে অভিনয় করতে পারে, তার প্রতিভা সেখানেই বোঝা যায়। সুপ্রিয়ার সঙ্গেও এখনও বন্ধুত্ব অক্ষুণ্ণ।
কানাঘুষোয় সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নিয়ে অনেকেই মুখর ছিল একসময়। আমার হাত ধরেই ওর এ জগতে আসা! বড়ো দুটি মেয়ে ছিল। আমার এক বন্ধু বিশ্বনাথ দাস, ওর সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দেয়। আমার স্টুডিয়ো-র কাছেই ওঁর বাড়ি ছিল। সেখানে আমি যেতাম। তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হল— ”আচ্ছা চিনুদাও ওখানে যায়”— কখনও পাত্তা দিইনি। কারণ, আমি সুমিত্রাকে দেখতে যেতাম। স্বামী ভাগ্য বড়ো খারাপ ছিল ওর। মারধর, অপমান, লাঞ্ছনা এ ছাড়া স্বামীর থেকে আর কিছু পায়নি মেয়েটি। আমার খারাপ লাগত। নিজের পায়ে দাঁড়াতে আমার সাহায্য পেয়েছিল সুমিত্রা আমিই ওকে দীনেন গুপ্ত আর তপনদার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই। দু’জনেই ওঁকে পছন্দ করেন। দীনেন গুপ্তর প্রায় সব ছবিতে সুমিত্রা পর পর হিরোইন হয়েছে। স্বাভাবিক সহজাত প্রতিভা দিয়ে অভিনয় শিখেছে। দীনেনদা সুমিত্রাকে ব্যবহার করতেন লালসা মেটাতে— এমন অনেক গল্প চালু ছিল মিডিয়ায়— যাই হোক সে তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে আমায় ঘিরে গুঞ্জন বাড়তেই থাকল। আমি মাঝে মাঝে সুমিত্রার শ্যুটিং থাকাকালীন ‘ফ্লোর’-এ যেতাম— টাকা ঠিক মতো পাচ্ছে কি না, রোল পাচ্ছে কি না দেখতে। সবাই ভাবত আমি প্রেমে পড়েছি বোধহয়। এত প্রাণখুলে হাসত যে সবাই ওকে ‘হাসি’ বলে ডাকতো। আমার ওর প্রতি কোনও প্রেম ছিল না। তবে কেন জানি মনে হত, আমার প্রতি ওর বোধহয় প্রেম ছিল। তবে তা প্রেম না কৃতজ্ঞতা না শ্রদ্ধা এখনও জানি না। খুব কষ্টে মারা গেল সুমিত্রা। সন্তানদের জন্য অনেক ত্যাগ করেছিল, অথচ… যাই হোক। এই মেয়েটি আমার মনে থাকবে শ্রদ্ধার সঙ্গে।
সাবিত্রীর কথা না বলে পারা যায় না। মারাত্মক ছটফটে, দুরন্ত প্রাণবন্ত আর দারুণ অভিনেত্রী। সাবিত্রী ও আমার বন্ধুত্বের সমীকরণ একেবারে সহজ। আমি বারবার অবাক হই ওর প্রতিভা দেখে। ‘ধন্যিমেয়ে’, ‘হীরে মাণিক’-সহ অনেক ছবি আমরা একসঙ্গে করেছি। জন্মগত প্রতিভা নিয়েই জন্মেছে ও। নানা ডায়মেনশনের অভিনয় করতে পারে। কমেডি-ট্র্যাজেডি— আবার ফিল্ম-স্টেজ তিন দিক খোলা যাত্রাপালা সবেতেই সাবিত্রীকে আমি মুগ্ধ হয়ে দেখি— দেখতাম। মঞ্চেই তো একজনের আসল প্রতিভা বোঝা যায়। আমার কাছে সাবিত্রী হল— lady chaplin। আমায় অনেকেই জিজ্ঞেস করেন, ”কে বড়ো সাবিত্রী না সুচিত্রা সেন?” হ্যাঁ, একটা বয়সে সুচিত্রা সেনের অভিনয়, প্রেজেন্স, শারীরিক সৌষ্ঠব মনকে পাগল করত— কিন্তু আমার কাছে অভিনয়ের দিক থেকে সাবিত্রীই সেরা। অন্য অনেকের চেয়ে সেরা, তবে রাজ্য বা কেন্দ্র সরকারের কাছে যথোচিত মর্যাদা পেল না। এখনও দাপিয়ে কাজ করে দেখে ভালো লাগে। ওঁর একটাই খুঁত— অভিনয়ের সময় সহ-অভিনেতা-অভিনেত্রীদের বিশেষ সাহায্য করে না। আর সব ঠিক আছে। খুব খাওয়াতে ভালোবাসে। এখনও ধুমধাম করে জন্মদিন পালন করে। বেশ ভালো লাগে আমার।
‘বালিকা বধূ’ ছবিতে প্রথম দেখেছিলাম জুঁই-কে। ভালো লেগেছিল। ‘ননীগোপালের বিয়ে’ ছবিতে কাজ করার সময় প্রেম নিবেদন করি। আমার মতো চেহারার একটা মানুষকে কাছে টেনে নিয়েছিল। আমরা বিয়ে করলাম। সব কেমন হারিয়ে গেল সুখে চলতে চলতে। পাঠকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এর বেশি আর বলতে পারব না। জুঁই চলে যাওয়ার পর যে অবসাদ আমায় ঘিরে রেখেছে তা থেকে আমি বেরোতে চাই। কথা দিচ্ছি, আমাদের প্রেম-বিবাহের সুন্দর স্মৃতি নিয়ে আপনাদের সামনে আবার নিশ্চয় আসব।