যা ইচ্ছে

যা ইচ্ছে

এমন ঘটনা আগেও কখনও হয়নি। পরে আর কখনও হবে বলেও মনে হয় না। মাত্র দু-বছরে সাত-সাতবার ক্লাবের ‘সাবজেক্ট’ বদল! এমন কথা কেউ কখনও শুনেছে?

নিশ্চয় মনে হচ্ছে, ‘ক্লাবের সাবজেক্ট বদল’ আবার কী ব্যাপার রে বাবা! ক্লাব কি স্কুলের পরীক্ষা যে সেখানে অঙ্ক, বিজ্ঞান, ভুগোল এসব সাবজেক্ট থাকবে? প্রথমটায় আমরাও আঁতকে উঠেছিলাম। চোখ কপালে উঠে গিয়েছিল। বুকের ভিতর ধুকপুকানি আর পেটের মধ্যে গুড়গুড়ানি শুরু হয়েছিল। ক্লাবেও এবার লেখাপড়া হবে নাকি? সর্বনাশ! কান্তিদা ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলায় শান্তি পেয়েছিলাম। হাঁফ ছেড়েছিলাম। বুঝেছিলাম, না, এই ‘সাবজেক্ট’ সেই ‘সাবজেক্ট’ নয়।

কান্তিদা আমাদের ক্যাপ্টেন। শুধু ক্যাপ্টেন বললে কম বলা হবে, সে আমাদের ‘বটবৃক্ষ ক্লাব’-এর সর্বেসর্বা। যাকে বলে ‘অল ইন অল’। কান্তিদা যা বলবে সেটাই ফাইনাল। আমরা যে এতবার ক্লাবের ‘সাবজেক্ট’ বদলালাম সেটা কান্তিদারই পরিকল্পনা। প্রতিবারই সে নেতাদের মতো ভাষণ দেবার কায়দায়, গলা কাঁপিয়ে বলে, ‘দেখে নিস, এবার আমরা সফল হবই। বটগাছের যেমন ডালপালা, ঝুড়ি ছড়িয়ে থাকে, আমাদের বটবৃক্ষ ক্লাবের খ্যাতিও দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়বে। মনে রাখবি, ব্যর্থতার সিঁড়ি বেয়েই উঠতে হয় সাফল্যের মিনারে। তোরা মনকে শক্ত কর। আমি তোদের সামনে আছি।’

হায়রে! আমরা বারবার মনকে ‘শক্ত’ করেছি, কিন্তু লাভ হয়নি। ছ’বার ডাহা ফেল। ঘটনা শুরু থেকে বলা যাক।

আমাদের ক্লাবের নাম শুনে সকলেই নাক সিঁটকোয়, ভুরু কোঁচকায়। আর ফিচফিচ করে হাসে।

ছোটকা বলে, ‘হ্যাঁ রে সাম্য, তোদের ক্লাবের নাম বটবৃক্ষ কেন? তোরা কী বৃক্ষে বৃক্ষে ঘুরে বেড়াস?’

আমি রাগ দেখিয়ে বলি, ‘বৃক্ষে বৃক্ষে ঘুরে বেড়াব কেন? আমরা কি হনুমান?’

অন্য ক্লাবের ছেলেরা প্রথমদিকে খুব খেপাত। দেখা হলে ঠাট্টা করত। পাশের পাড়ার ‘বিজয়ী’ ক্লাবের বিল্টুর সঙ্গে আমাদের অর্চির তো একবার মারপিট পর্যন্ত হয়ে গিয়েছিল। বাজারে দুজনের দেখা। বিল্টু গিয়েছিল মিষ্টির দোকান। সেদিন ওর বড়মামা এসেছিল। বড়মামা আমাদের এখানকার রসগোল্লার ভক্ত। আটটার কমে খায় না। বিল্টু গিয়েছিল সেই রসগোল্লা কিনতে। আর আমাদের অর্চিকে মাসিমা পাঠিয়েছিলেন মুদি দোকান। রান্না করতে করতে হঠাৎ নুন গিয়েছিল ফুরিয়ে। মাসিমা অর্চিকে বলল, ‘যা চট করে খানিকটা নুন কিনে আন। যাবি আর আসবি। দেরি করবি না মোটে।’ বিল্টু রসগোল্লার ভাঁড় হাতে ফিরছিল। অর্চির সঙ্গে ছিল নুনের প্যাকেট। বাজারের মুখে দুজনের দেখা। বিল্টু একগাল হেসে বলল, ‘হ্যাঁ রে অর্চি, শুনলাম তোরা নাকি বটগাছের ডালে তোদের ক্লাবঘর বানিয়েছিস?’

অর্চি চোখ পাকিয়ে বলল, ‘তাতে তোর কী?’

বিল্টু বলল, ‘আমার কিছু নয়। তোদের বটবৃক্ষ ক্লাবঘর যে বট গাছের ডালে হবে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে? তবে একটা খবর কানে এল, তাই ভাবলাম তোকে জিগ্যেস করি।’

অর্চি ভুরু কুঁচকে বলল, ‘কী খবর?’

বিল্টু এদিক-ওদিক তাকিতে গলা নামিয়ে বলল, ‘শুনলাম তোদের ক্যাপ্টেন কান্তিদা নাকি দুপুরবেলা সেই ক্লাবঘরে বসে কাকেদের সঙ্গে ক্যারাম খেলে? ঘটনা সত্যি?’

অর্চি দাঁত কিড়মিড় করে উঠল। কান্তিদার নামে এত বড় অপমান! বিল্টু তার কাঁধে চাপড় মেরে হাসিমুখে বলল, ‘আহা, রাগ করিস কেন? গাছের ডালে কাক ছাড়া ভরদুপুরে আর কাকে পাবে?’

ব্যস, এর পরেই লাগে মারপিট। প্রথমে জামার কলার, তারপর চুলের মুঠি, শেষে ঘুষোঘুষি। বাজারের লোকজন ছুটে এসে দুজনকে সরাল। রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে দুজনে বাড়ি ফিরে দেখল কেলেঙ্কারি হয়েছে! কী করে জানি অর্চির রসগোল্লার ভাঁড়ে ঢুকে পড়েছে নুন! একই ভাবে বিল্টুর প্যাকেটের নুন রসগোল্লার রসে মাখামাখি হয়ে বসে আছে। অর্চির বড়মামা নুন মাখা রসগোল্লা খেয়ে আর বিল্টুর মা রস মাখা নুন রান্নায় দিয়ে কী করেছিলেন তা অবশ্য জানা নেই। অর্চি বা বিল্টু কেউই শাস্তির কথা বাইরে ফাঁস করেনি। তবে ক্লাবের নাম নিয়ে কঠিন শাস্তি পেতে হয়েছিল আমাদের সাম্যকে। ক্লাস সেভেনের সাম্য। একদিন স্কুলের বাংলা ব্যাকরণ স্যার ভূদেববাবু ক্লাসে এসে সাম্যকে বললেন, ‘সাম্য, তোরা নাকি নতুন ক্লাব বানিয়েছিস?’

ভূদেববাবুকে ভয় পায় না এমন ছেলে স্কুলে নেই। সাম্য ঢোঁক গিলে বলল, ‘হ্যাঁ, স্যার।’

ভূদেববাবু মাথা নেড়ে বললেন, ‘বা:, অতি ভালো, অতিশয় ভালো। তা বাপু শুনলাম, তোদের নতুন ক্লাবের নাম নাকি বটবৃক্ষ। সত্যি?’

কারক, বিভক্তি, সমাস বাদ দিয়ে ক্লাবের ব্যাপারে স্যারের উৎসাহ দেখে সৌম্য খুবই আহ্লাদিত হল। গদগদ গলায় বলল, ‘হ্যাঁ স্যার। বড়দিঘির পাশে যে বিরাট বটগাছটা আছে, আমরা তার নীচে বসে নতুন ক্লাব তৈরির কথা ভেবেছিলাম। আমাদের ক্যাপ্টেন কান্তিদা বলল, বটগাছের তলায় বসে যখন ক্লাব তৈরি হল, তখন ক্লাবের নাম হোক বটবৃক্ষ। আমরা সবাই রাজি হয়ে গেলাম।’

ভূদেববাবু চোখ বড় করে বলল, ‘বা:, তোদের কান্তিদার মস্তিষ্ক খুবই উর্বর দেখছি! ভাগ্যিস বটগাছের তলায় বসে নাম ভেবেছিলি, এই যদি কলাগাছের তলায় বসে ভাবতিস? আর সেই গাছের কলা যদি কাঁচা হত? তাহলে তোদের ক্লাবের নাম রাখতে হত কাঁচকলা ক্লাব। সে বড় কেলেঙ্কারি হত। তাই না?’

স্যারের কথায় ক্লাসের সবাই হেসে উঠল। স্যার বললেন, ‘তা বাবা সৌম্য, শুদ্ধ করে বটবৃক্ষ বানানটা বল দেখি। নিজের ক্লাবের নাম বলে কথা। নামের বানান তো জানতেই হবে। তাই না?’

ব্যস, তখনই সৌম্য কুপোকাত। চিরকালই সে বানানে দুর্বল। ক্লাবের নাম থেকে দুম করে যে বানানের ব্যাপারে চলে আসবে সে ভাবতেও পারেনি। বিরাট নার্ভাস হয়ে পড়ল। মাথা চুলকে, চুল টেনে, কানে টোকা মেরে, বিড়বিড় করেও সৌম্য ‘বটবৃক্ষ’-এর বানান মনে করতে পারল না। হায়রে, বটগাছের গুঁড়ি, ডালপালা, ঝুড়ি সব মনে পড়ছে, কিন্তু বানান মনে পড়ছে না! বট বানানে ‘ট’ না ‘ঠ’ আছে? ‘বৃক্ষ’ তে হ্রস্বইকার? নীচে কী রফলা? নাকি ওপরে রেফ বসাতে হবে? সব তালগোল পাকিয়ে গেল সৌম্যর। একবার ‘ট’ বলে, একবার বলে ‘ঠ’। ভূদেবস্যার তাকে থামায়। তারপর খাতার পাতায় গুনে গুনে দুশো ছাপান্নবার ‘বটবৃক্ষ’ লেখবার আদেশ দেন। দুশো পঞ্চাশবার হল শাস্তি আর ছ’বার হল শাস্তিটার ফাউ। যেন শাস্তি নয়, ফুচকা খেতে গেছে। তাই ফাউ। ভূদেবস্যার হুংকার দিয়ে বলেন, ‘এই যে ছেলেরা, এরপর থেকে তোমরা যদি নতুন কোনও ক্লাব করো তাহলে তার নামের বানান শিখে আমার ক্লাসে আসবে। বুঝেছ?’

এই ঘটনার পর বেচারি সৌম্য পর পর তিনরাত স্বপ্নে বটগাছ দেখল আর শিউরে উঠল।

তবে অত অপমান, আক্রমণ, শাস্তির পরেও আমরা আমাদের ক্লাবের নাম বদলাইনি। কিন্তু ঘন ঘন ‘সাবজেক্ট’ বদলাতে হল। উপায় ছিল না।

আমাদের এখানে একেকটা ক্লাব একেকটা বিষয় নিয়ে নাম করেছে। কেউ ফুটবলে, কেউ ক্রিকেটে, কেউ ভলিবলে। কান্তিদার ভাষায় এটাই হল ক্লাবের ‘সাবজেক্ট’। সহজ করে বলতে গেলে, ‘বিশেষত্ব’। যেমন ‘আমরা সবাই’ ক্লাবের বিশেষত্ব ফুটবলে। তাদের ফুটবল টিমকে হারানো কঠিন ব্যাপার। আমরা সবাই জানি, এই এলাকায় ফুটবল মানে ‘আমরা সবাই’। তেমন আবার ‘দিগন্ত ক্লাব’ চ্যাম্পিয়ান হা ডু ডু-তে। একটার পর একটা ট্রফি এনে জমা করছে। ‘নতুন দিন’ ক্লাবের ছেলেরা সাঁতারে সবার আগে থাকে। সেরা সাঁতারুর সবক’টা মেডেল ওদের ছেলেদের গলায়। ওরা নেমতন্ন বাড়িতে গেলেও গলায় মেডেল ঝুলিয়ে যায়। অতএব ‘বটবৃক্ষ’কেও এরকম একটা কোনও খেলাধুলোয় নাম করতে হবে। সেটাই হবে আমাদের বিশেষত্ব। কান্তিদার ভাষায় যাকে বলে ‘সাবজেক্ট’।

ক্লাব তৈরির প্রথমদিনই কান্তিদা বলল, ‘আমাদের বিষয় হবে ফুটবল। এবারের লিগ আর নক আউট জিতলেই কেল্লাফতে। আমরা সবাই ক্লাবকে যদি টক্কর দিতে পারি আমাদের আর পায় কে? ফুটবলের জন্য বটবৃক্ষের নাম দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়বে।’

আমি মাথা চুলকে বললাম, ‘আমরা সবাইকে ফুটবলে হারানো কি সম্ভব? গত পাঁচ বছর ধরে কেউ পারেনি।’

কান্তিদা মুখ থেকে ‘ফুঁ’ ধরনের অবজ্ঞার আওয়াজ করল। তারপর গলা কাঁপিয়ে, হাত নেড়ে ভাষণ শুরু করল, ‘গত পাঁচ বছরে তো বটবৃক্ষ নামে কোনও ক্লাব ছিল না। অসম্ভব বলে কিছু হয় না। কাল থেকে প্র্যাকটিস শুরু। এখনও তো হাতে মাসখানেক সময় আছে। আগে থেকে ঘাবড়ালে তো চলবে না। নতুন ক্লাব যখন করা হয়েছে, ফুটবলকে যখন বেছে নেওয়া হয়েছে তখন লড়াই করতে হবে, লড়াই করতে হবে বন্ধুগণ।’

কান্তিদার ভাষণ শুনে সবাই হইহই করে উঠল। বলল, ‘ঠিকই। লড়াই করতে হবে।’

আমরা লড়াই করলাম এবং গো হারান হারলাম। পণ্ডিত নরেনচন্দ্র স্মৃতি শিল্ড আর ওস্তাদ গড়াই নস্কর চ্যালেঞ্জ নকআউটে ‘বটবৃক্ষ’ একেবারে ধরাশায়ী হয়ে গেল। প্রথমটায় ছ’টা, আর দ্বিতীয়টায় আটটা করে গোল খেয়ে পেট আইঢাই। ট্রফি, শিল্ড তো দূরের কথা, ছোটখাটো সান্ত্বনা পুরস্কারও কপালে জুটল না। নতুন ক্লাবের জন্য অতি লজ্জার বিষয়। ‘আমরা সবাই’ ক্লাবের ক্যাপ্টেন ভীষ্ম এসে কান্তিদাকে বলল, ‘চিন্তা কোরো না। শুনলাম, ফুটবলকে তোমরা ক্লাবের সাবজেক্ট করেছিল। আরে বাবা, সবাই কি সব সাবজেক্টে পাশ করে? ফুটবলে তোমরা পেলে গোল্লা।’

ক্লাবে ফিরে কান্তিদা ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলল, ‘এই অপমান সহ্য করা যায় না। আমরা সাবজেক্ট বদলে নেব। আর ফুটবল নয়, এবার ক্রিকেট। দেখি আমাদের কে ঠেকায়।’

মান্তু মিনমিন করে বলল, ‘কান্তিদা ক্রিকেটেও তো ”আমরা সবাই”-এর মতো ”সেঞ্চুরি ক্লাব” আছে। যে-কোনও ম্যাচে ওদের টিমের একজন সেঞ্চুরি করবেই করবে। আমরা ওদের হারাব কী করে? তার থেকে অন্য কোনও সাবজেক্ট বাছলে হত না? সহজ কিছু?’

কান্তিদা ধমক দিয়ে বলল, ‘চোপ। আমি যা বলছি তাই হবে। ফুটবল, ক্রিকেট হল মেইন আইটেম। বড় হতে গেলে দুটোর একটা লাগবেই। ফুটবল গেছে যাক, কুছ পরোয়া নেহি, বটবৃক্ষ ক্রিকেটে একনম্বর হবে। আজ থেকে প্রচার করতে শুরু করে দে, আমরা আসলে ক্রিকেটের ক্লাব। কেউ যাতে বুঝতে না পারে সেই জন্য ফুটবল ম্যাচে নেমেছিলাম। মাঠে ছোটাছুটি করে খানিকটা গা গরম করে নিলাম এই যা। শীত পড়লেই আমাদের আসল পরিচয় টের পাবে।’

টের পেল বটে। ফুটবল যদি বটবৃক্ষকে ধরাশায়ী করে, ক্রিকেট তার ডালপালা কেটে সাফ করে দিল। তিনটে ম্যাচে নেমে তিনটেতেই বিতিকিচ্ছিরি ভাবে হারলাম। প্রথমটায় পাঁচ উইকেটে, দ্বিতীয়টায় ইনিংশ ডিফিট। তিন নম্বর ম্যাচটা ছিল সেঞ্চুরি ক্লাবের সঙ্গে। টুয়েন্টি ওভারের খেলা। ওদের পানু ওস্তাদ ব্যাটসম্যান। কান্তিদার বল পিটিয়ে পাউডার করে দিল। একশো এক করে তবে পানু মাঠ ছাড়ল। তারপর বটবৃক্ষ নামল ব্যাট হাতে। নেমেই ঝড়ের সময় কাঁচা আমের মতো টুপটাপ করে ঝরে পড়তে লাগল। মাঠে যাচ্ছে আর আউট হয়ে ফিরছে। কুড়ি ওভারের খেলা হলেও উনিশ রানেই আমরা সবাই আউট।

এই ঘটনার ক’দিন পর কান্তিদা একদিন এল হাসিমুখে। আমরা অবাক হলাম। এই পরাজয়ের পরও হাসি!

কান্তিদা বলল, ‘নো চিন্তা। সবাইকে যে ফুটবল ক্রিকেটেই বড় হতে হবে তার কোনও মানে নেই। অলিম্পিকে সাঁতার, দৌড়, হাইজাম্প, লঙ জাম্পে যে গোল্ড দেওয়া হয় সেটা কি নকল সোনা? তবে? ওখানে তো ক্রিকেটের কোনও জায়গাই নেই। অতএব ক্রিকেটে হেরেছি বলে মন খারাপের কিছু নেই। আমরা সাবজেক্ট চেঞ্জ করব।’

অর্ণব বলল, ‘আবার সাবজেক্ট বদল!’

কান্তিদা চোখ পাকিয়ে বলল, ‘কেন তোমার অসুবিধে আছে? সেদিন জিরো করে যখন দাঁত বের করে ব্যাট হাতে ফিরে এলে তখন অসুবিধে হয়নি? একদম চুপ করে থাকবি। অবশ্যই সাবজেক্ট পালটাতে হবে। আমাদের ক্লাব এখন থেকে হবে দৌড়ের ক্লাব। যাকে বলে রেস। চারপাশে স্পোটর্স চলছে। ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। বটবৃক্ষের মেম্বাররা সবক’টায় নাম দেবে। হান্ড্রেড মিটারস, টু হান্ড্রেড মিটারস থেকে একেবারে ম্যারথন পর্যন্ত। সব মেডেল আমাদের ছিনিয়ে আনতে হবে। সবাই বলবে, বটবৃক্ষ নিজে অনড়, কিন্তু বটবৃক্ষ ক্লাবের ছেলেরা দৌড়োয় শনশন করে, যেন চিতা বাঘের সামনে পড়া হরিণ, যেন ঝড়ের মুখে পড়া গাছের পাতা, যেন পুলিশের তাড়া খাওয়া চোর…তারপর ধর…ইয়ের মতো…।’ কান্তিদা হাত মুঠো করে উপমা খুঁজতে লাগল।

তাকে থামিয়ে প্রসূন বলল, ‘বলা নেই কওয়া নেই, আমরা কি এত জোরে দৌড়োতে পারব কান্তিদা?’

কান্তিদা বলল, ‘আলবাত পারব। পারতেই হবে। সবাইকে এখন থেকে বলতে হবে, গ্রামের শিল্ড আর পাড়ার টুয়েন্টি ওভারস আমাদের লক্ষ্য নয়, আমাদের লক্ষ্য অলিম্পিক।’

কান্তিদার কথা শুনে ফুচাইয়ের এমন হেঁচকি শুরু হল যে সেদিন আর হেঁচকি বন্ধই হল না। স্বাভাবিক। ফুটবল, ক্রিকেটে গোল্লা খেয়ে বটবৃক্ষ এখন অলিম্পিকে যেতে চায় শুনলে হেঁচকি ওঠা কী আর এমন ব্যাপার? আমরা যে দু-একজন অজ্ঞান হয়ে যাইনি এই কি যথেষ্ট নয়? কান্তিদা এসব পাত্তা দিল না। পরদিন ভোর থেকে বটবৃক্ষের মেম্বারদের নিয়ে ফুটবল গ্রাউন্ডে প্র্যাকটিস শুরু হল। দৌড়ের প্র্যাকটিস। হাতে মোটে সময় নেই। সাবজেক্ট একেবারে নতুন। পরীক্ষায় শুধু পাশ করলে হবে না, ফার্স্ট হতে হবে যে! আমরা প্রাণপণে প্র্যাকটিস শুরু করলাম। বটবৃক্ষের প্রেস্টিজ বলে কথা।

সেই প্রেস্টিজ পাংচার করতে একটু পরিশ্রমই হল। অত ছোটাছুটিতে পরিশ্রম তো হবেই।

শীতের শেষে হিসেব করে দেখা গেল, আমরা মোট সতেরো জায়গায় দৌড় কম্পিটিশনে যোগ দিয়েছি। ফার্স্ট হওয়া তো দূরের কথা, কোথাও সেকেন্ড বা থার্ডও হতে পারিনি। সব থেকে ভালো রেজাল্ট হয়েছে ‘সাত নম্বর’ পজিশন। আমাদের রবি করল। খয়েরাপোশা গ্রামের তিনদিনব্যাপী ক্রীড়া উৎসবে তিনশো মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় সে সাত নম্বরে আসতে পেরেছে। সেখানে প্রতিযোগীর সংখ্যা ছিল দশ। একজন গোড়াতেই পা মচকে বসে যায়। অর্থাৎ ন’জনে সাত। সব থেকে খারাপ রেজাল্ট হল জেলা ম্যারথনে। বটবৃক্ষের দৌড়বিদরা মাঝপথে হারিয়ে গেল। পরে জানা গেল, হারিয়ে যায়নি, ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়েছিল। সবাই চলে গেলে আস্তে ধীরে হাজির হয়েছে। উদ্যোক্তারা বললে, দৌড় শেষ করেনি। সুতরাং সার্টিফিকেটও মিলবে না। কান্তিদা খুব হম্বিতম্বি করল বটে, তাতে লাভ হল না। ফলে অবধারিত ভাবে আবার ‘সাবজেক্ট’ বদল।

সন্ধের মুখে সবাই মুখ শুকিয়ে ক্লাবের সামনের মাঠটায় বসে আছি। কান্তিদা পটাং করে একমুঠো ঘাস ছিঁড়ে বলল, ‘দুর, দুর খেলাধুলোর লাইনটাই বাজে। সবাই আমাদের হিংসে করছে। নতুন ক্লাবকে বড় হতে দেবে না। আমি ঠিক করেছি, খেলাধুলো থেকে সরে এবার অন্য সাবজেক্ট ধরব।’

শিবু মনের দু:খে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়েছিল। ধড়ফড় করে উঠে বসল। বলল, ‘অ্যাঁ! বটবৃক্ষ ক্লাবে খেলাধুলো হবে না?’

কান্তিদা বলল, ‘হবে না তো বলিনি। তবে ওসব নিয়ে আমরা বেশি মাথা ঘামাব না। পরিশ্রমও করব না। আমাদের সাবজেক্ট হবে গান।’

আমি বিষম খেতে খেতে কোনওরকমে সামলে বললাম, ‘গান!’

কান্তিদা দাঁত খিঁচিয়ে বলল, ‘কেন গান খারাপ সাবজেক্ট নাকি? ফুটবলের ক্লাব, ক্রিকেটের ক্লাব, দৌড়ের ক্লাব হতে পারে, আর গানের ক্লাবে হতে পারে না? এখানকার কোন ক্লাব গানে নাম করেছে বল দেখি? একটাও পাবি না। মাঠ একদম ফাঁকা। নো কম্পিটিটর। বটবৃক্ষের পরিচয় হবে গানে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ক্লাবের মেম্বাররা গান গেয়ে বেড়াবে। দেখবি, হুড়মুড়িয়ে ডাক পাচ্ছিস। ফুল, মালা, হাততালি…অনুষ্ঠানের তো শেষ নেই। সরস্বতী পুজো, পয়লা বৈশাখ, পঁচিশে বৈশাখ, বাইশে শ্রাবণ, বিজয়া সম্মিলনী…ইস এতদিন যে কেন সাবজেক্টেটা মাথায় আসেনি? যাক বেটার লেট দেন নেভার। আজ থেকে রিহার্সাল। যাও হারমোনিয়াম, তবলা, তানপুরা জোগাড় করো।’

রিহার্সাল ভালোই হল। আমাদের গান শেখালেন, কমলাদি। তিনি আমাদের পাড়ায় গান শেখান। কমলাদির যেমন গানের গলা ভালো, তেমন ঝগড়ার গলাও ভালো। গলাটি গেছে ভেঙে। ভাঙা গলায় দিদিমণির কাছে কে আর গান শিখবে? ফলে ছাত্রছাত্রীরা নেই বললেই চলে। কেউ তাকে ডাকেও না। ভাঙা গলার গান শোনা কঠিন। এই অবস্থায় বটবৃক্ষ ক্লাবের ছেলেরা তার কাছে গান শিখতে চায় শুনে তিনি আপ্লুত হয়ে পড়লেন। আনন্দে প্রায় কেঁদে ফেললেন। ক’দিন ধরে যত্ন নিয়ে আমাদের গান শেখালেন। আমাদের ভুল সুর, তাল কাটা, স্কেলের গোলমাল, উচ্চারণে জড়তাকে ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখলেন। তার কাছে যে গান শিখছি এটাই যেন বড় কথা, সুর, তাল, স্কেল এসব তুচ্ছ। এর ফলে যা ঘটবার তাই ঘটল।

অভয়নাথ বয়েস স্কুলের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বটবৃক্ষের সদস্যরা দুটো কোরাস গানের সুযোগ পেল। কান্তিদাই হেডমাস্টারকে ধরে কয়ে ব্যবস্থা করেছিল। আমরা একটা গানও শেষ করতে পারলাম না। প্রথম গান মাঝপথে পৌঁছোতে না পৌঁছোতে দর্শকরা হট্টগোল শুরু করে দিল। একটু পরেই কাগজের গোল্লা, ছেঁড়া হাওয়াই চটি, আধখাওয়া জিলিপি উড়ে উড়ে এল। হেডমাস্টারমশাই তাড়াতাড়ি এসে আমাদের স্টেজ থেকে নামিয়ে দিলেন। বললেন, ‘পিছনের দরজা দিয়ে পালা। নইলে এবার পিঠে কিল চড় পড়বে…ছি-ছি…এটা গান! গান এটা! এর থেকে তো শিয়ালের হুক্কাহুয়া ঢের ভালো…ছি-ছি…দাঁড়া তোদের কান্তিটাকে পাই, তাকে দেখাব মজা…।’

ক’দিনের জন্য আমরা সবাই গা ঢাকা দিলাম। খবর পেলাম, অনেকের রাগ নাকি কিছুতেই কমছে না। তারা বটবৃক্ষ সঙ্গীত ক্লাবের মেম্বারদের খুঁজে বেড়াচ্ছে। দেখা হলেই নাকি কান মুলে দেবে। সপ্তাহখানেক বাদে অবস্থা শান্ত হলে গুটিগুটি ক্লাবে এলাম। দেখি, কান্তিদা গুনগুন করে গান করছে। আমাদের দেখে বলল, ‘গানের দিদিমণি যদি বলে দিতেন তোদের গলায় সুর তাল কিস্যু নেই তাহলে আমি এই রিস্কে যেতাম না। যাক যা হবার হয়ে গেছে।’

আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, ‘কান্তিদা, ক্লাবের নাম কিন্তু খুব খারাপ হচ্ছে। এতবার সাবজেক্ট বদলেও কিছু করতে পারলাম না। বটবৃক্ষ শুনলেই সবাই এখন হাসে।’

অর্চি বলল, ‘আমার মনে হয় ক্লাবের নাম বদলানো উচিত।’

সৌম্য বলল, ‘ক্লাব ভেঙে দিলে সব থেকে ভালো হয়।’

কান্তিদা হুঙ্কার দিয়ে লাফিয়ে উঠল, ‘খবরদার ক্লাব ভাঙার কথা কেউ মুখেও আনবে না। বটবৃক্ষ কখনও ভাঙে না। সে শক্ত, সে অটল। কোনও ঝড়ঝঞ্ঝা তাকে ফেলতে পারবে না। যার ইচ্ছে সে বিদায় নিতে পারও। সেরকম হলে আমি একা থাকব। বারবার সাবজেক্ট বদলাব, কিন্তু ক্লাব ভাঙব না।’

কান্তিদার হুংকার আর আবেগ ভরা ভাষণে আমরা এতটাই ঘাবড়ে গেলাম যে আপত্তিও করতে পারলাম না।

সত্যি সত্যি বটবৃক্ষ আবার বিষয় বদলাল। এবার হল, নাটক। নাটকই আমাদের ধ্যানজ্ঞান। কান্তিদা আর ঝুঁকি নিল না। গানের অভিজ্ঞতা ভয়ংকর। এবার কান্তিদাই ডিরেক্টর। ক’দিন জোর মহড়া দিলাম। কারও সঙ্গে দেখা হলে বলি, ‘দেখবি ক’দিনের মধ্যে বটবৃক্ষ নাটকে কেমন নাম করে। তোরা যখন পাড়ার কাদা মাঠে ফুটবল পেটাবি আর এদো পুকুরে সাঁতার কাটবি, আমরা তখন দেশে-বিদেশে নাটক করতে যাব। হিংসেতে গাল লাল হয়ে যাবে।’

গাল লাল হল ঠিকই, তবে অন্যদের নয়, মুখ লাল হল আমাদের। লজ্জায় লাল।

বিজয়া দশমীর দিন পাড়ার পুজোর মণ্ডপে নাটক করতে গিয়ে পার্ট ভুলে এমন কাণ্ড হল যে দর্শকরা সবাই হেসে কুটোপাটি। অথচ নাটক ছিল দু:খের। দর্শকদের চোখে যাতে জল আসে তার জন্য আমরা সব ব্যবস্থা করেছিলাম। কান্তিদা আমাদের সেই ভাবেই শিখিয়েছিল। যেমন গল্প, তেমন ডায়লগ। সেসব উলটে গিয়ে এভাবে হাসির তুফান উঠবে আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। মুশকিলের ব্যাপার হল, দর্শকদের হাসি দেখে, আমরা অভিনেতারাও একসময়ে ভেবে বসলাম, তাহলে বোধহয় নাটকটা দু:খের নয়, হাসির। আমরা ভুল বুঝেছিলাম। আমরা তখন হাসিমুখে দু:খের ডায়ালগ বলতে শুরু করলাম। এতে অবস্থা আরও মজাদার হল। হাসি তুমুল চেহারা নিল। একসময় তো কান্তিদা স্টেজে ঢুকে সৌম্যকে তেড়ে গেল। সবাই মিলে না আটকালে মেরেই দিত হয়তো। সৌম্যর অপরাধ আগাগোড়া সে নিজের বদলে অন্যের পার্ট বলে যাচ্ছিল। উইংসের আড়ালে দাঁড়িয়ে কান্তিদা আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারেনি। আর সেই তেড়ে আসার দৃশ্য দেখে দর্শকদের অনেকেই হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে পড়ে গেল।

এর পরেও বটবৃক্ষ ক্লাবের অভিনেতাদের মুখ লজ্জায় লাল হবে না?

কান্তিদা থামল না। তার জেদ বেড়ে গেল। একেই বোধহয় বলে ‘ভাঙব তবু মচকাব না’। এদিকে আমরা গিয়েছি হাঁপিয়ে। বিরক্তি, রাগ সবই হচ্ছে। কিন্তু ক্যাপ্টেনকে ছেড়ে পালাই কী করে? এই সময় কান্তিদা নাটকের পাততাড়ি গুটিয়ে ক্লাবকে ‘জনসেবা’র দিকে নিয়ে গেল। ঘোষণা করল, ‘আমরা এতদিনে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছি। খেলাধুলো, গান নাটকে কারও উপকার হয় না। উপকার হয় সেবায়। আমরা তাই নিজেদের বদলে ফেলতে চাই। বটবৃক্ষ ক্লাব এবার থেকে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবে।’

পাড়ার জঞ্জাল পরিষ্কার, রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটা, গরমে ঠান্ডা জল, বর্ষায় ছাতা আর শীতে কম্বল বিতরণ দিয়ে আমাদের জনসেবা শুরু হল। মোটামুটি চলছিল মন্দ নয়। সেবা করে বটবৃক্ষ ক্লাব পরজয়ের অপমান আর হাসি-ঠাট্টা থেকে খানিকটা বেরিয়ে আসছিল। গড়বড় করে ফেলল ‘নাইট গার্ড’। যাকে বলে রাতপাহারা। সেবার তালিকায় এই বিষয়টা জোর করে ঢোকাল কান্তিদা। চুপিচুপি বলল, ‘বটবৃক্ষের সুনাম বাড়চ্ছে। এখন কাজ বাড়াতে হবে। রাতে পাহারা দিতে গিয়ে যদি একটা চোর-ডাকাত ধরে ফেলি তাহলে আমরা হিরো হয়ে যাব। বটবৃক্ষকে সবাই মাথায় তুলে রাখবে। বুঝলি গাধার দল?’

আমরা বুঝলাম। আর কথা না বাড়িয়ে পরদিন থেকে হাতে লাঠি, লম্বা টর্চ, মুখে হুইশল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। সঙ্গে রাত জাগার জন্য ফ্লাস্কে চা। অন্ধকার অলিতে গলিতে টহল মারতে লাগলাম গোটা রাত। চোর-ডাকাত দেখলেই পাকড়াতে হবে। কিন্তু কোথায় তারা? তাদের টিকির দেখাও নেই যে! কেলেঙ্কারি করল কান্তিদা নিজেই। একদিন বেশি রাতে ‘চোর’ পাকড়াল। বৃষ্টির রাত। ‘চোর’কে দেখা গেল শম্ভুদার বাড়ির সামনে। হাতে বড় সুটকেস। গায়ে রেনকোট, ছাতায় মুখ ঢাকা। বেটা সুটকেস নিয়ে পালাচ্ছে। কান্তিদা দেরি করেনি। হুইশল বাজিয়ে ছুটে গিয়ে ‘চোর’কে জাপটে ধরেছে। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে ‘চোর’, ‘চোর’,। তারপর দুজনে মিলে ঝটাপতি করে কাদায় আছাড় খেয়ে পড়ে। চেঁচামেচিতে শম্ভুদা আলো হাতে বেরিয়ে আসে। সেই আলোয় দেখা যায় ‘চোর’ আর কেউ নয়, শম্ভুদার পিসেমশাই। বিদেশে থাকেন। কলকাতা হয়ে এসেছেন। পথে ট্রেন খারাপ। তাই স্টেশনে নামতে অনেক রাত। কোনও গাড়ি-টাড়ি না পেয়ে গ্রামে এসেছেন হেঁটে। আসবার আগে কাউকে বলেননি। ভেবেছিলেন শম্ভুদাদের চমকে দেবেন। তিনি বাড়ি থেকে বেরোচ্ছিলেন না, বাড়িতে ঢুকছিলেন। কান্তিদা এটাই ভুল করেছে। বটবৃক্ষ ক্লাবের জন্য ‘গ্রেট মিসটেক।’ খুব স্বাভাবিক ভাবেই পরদিন থেকে আমাদের জনসেবা বন্ধ।

ফুটবল, ক্রিকেট, দৌড়, গান, নাটক, জনসেবা—কোনওটাইতে বটবৃক্ষ ক্লাবের লাভ হল না। তাবলে আমাদের ক্যাপ্টেন কিন্তু হাল ছাড়েনি। আমরাও ক্যাপ্টেনকে ছাড়িনি। আবার আমাদের সাবজেক্ট বদল হয়েছে। এবারের সাবজেক্ট হল ‘যা ইচ্ছে তাই’। যখন যা ইচ্ছে হবে আমরা তাই করব। যেটায় মজা, যেটায় খুশি, যেটায় আনন্দ। ফুটবল খেলতে ইচ্ছে করলে খেলা হবে। হারলে সমস্যা কী? খেলায় তো হারজিত দুটোই আছে। দুটোতেই মজা। গান গাইতে ইচ্ছে হলে গানও গাওয়া যাবে মাঝেমাঝে। খানিকটা বেসুরো হলে ক্ষতি নেই। স্টেজে তো উঠছি না। গান তো মনের আনন্দে গাইব। যদি কখনও মনে হয়, প্রাণ ভরে ছুটব, তাহলে ছোটা যাবে’খন। কে আটকাচ্ছে? মেডেলের লোভ না থাকলেই হল। তার পরেও মেডেল জুটলে জুটবে। আর যদি কখনও মানুষের উপকার করতে ইচ্ছে করে, করবই করব। তাতে একটু-আধটু ভুল হলে হবে। উপকারটা বড়, ভুলটা ছোট।

কান্তিদার এই সাত নম্বর সাবজেক্টের কথা শুনে আমরা খুশি হলাম। দিঘির পাড়ের বট গাছের ছায়ায় বসে ‘বটবৃক্ষ’ ক্লাবের মেম্বাররা নিশ্চিন্ত হলাম। এবার আমরা জিতবই। ট্রফি, শিল্ড, মেডেলে নয়, খুশিতে জিতব।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *