তৃতীয় খণ্ড (স্নেহের চুমকিকে)
3 of 6

যার চোখে যে যেমন

যার চোখে যে যেমন

স্ত্রীর চোখে স্বামী : এমন এক প্রাণী, যার হাতে পড়ে জীবনটা বরবাদ হয়ে গেল। ভাজা-ভাজা করে ছেড়ে দিলে। মিচকে পটাশ।

স্বামীর চোখে স্ত্রী : যার পাল্লায় পড়ে জীবনটা ‘হেল’ হয়ে গেল। স্ত্রী হল অসংখ্য অভিযোগের কাঁটা খোঁচা এক সজারু বিশেষ।

পিতার চোখে পুত্র : অপদার্থ, অকর্মা এক চুঁচড়োর কার্তিক।

পুত্রের চোখে পিতা : ওল্ড ফুল। সর্বক্ষণ ব্যাকর ব্যাকর।

নাতির চোখে দিদা : বাতের ব্যথা। বসলে আর উঠতে পারে না। হাঁটু ধরে বাবারে, মারে।

নাতির চোখে দাদু : ফাইটার। সারাদিন দিদার সঙ্গে লড়ে যাচ্ছে আর থেকে-থেকে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।

দাদু-দিদার চোখে নাতি : বিচ্চু শয়তান।

মায়ের চোখে ছেলে : বাপকা বেটা।

ছেলের চোখে মা : নারী পুলিশ।

গৃহিণীর চোখে কাজের মহিলা : এই বুঝি এল না।

কাজের মহিলার চোখে গৃহিণী : খিটখিটে মাগি।

কাজের মহিলার চোখে গৃহকর্তা : বউয়ের ভেড়া।

পিতামাতার চোখে সদ্য-বিবাহিত সন্তান : জরুকা গোলাম। শ্বশুর-শাশুড়ির পাঁঠা।

সদ্য-বিবাহিতের চোখে স্ত্রী : যাকে ছাড়া দুনিয়া অন্ধকার।

স্ত্রীর চোখে সদ্য-বিবাহিত : ভাল্লুক-উল্লুকের আগের অবস্থা।

শাশুড়ির চোখে জামাই : মাথায় হাত বোলাবার জিনিস।

জামাইয়ের চোখে শাশুড়ি : উপদেশামৃত।

জামাইয়ের চোখে শ্বশুর : চালুপরিয়া। ওয়ান পাইস ফাদার-মাদার।

ননদের চোখে ভাজ : আতুরি সোনা, ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যান।

ভাজের চোখে ননদ : কুঁদুলে কড়াইশুঁটি। কবে বিদায় হবে।

বউদির চোখে বেকার ঠাকুরপো : ধর্মের ষাঁড়।

বউদির চোখে চাকুরে ঠাকুরপো : দেবর লক্ষ্মণ।

ভাইয়ের চোখে বেকার ভাই : ফুটবল।

ভাইয়ের চোখে সাকার ভাই : স্বার্থপর শয়তান।

প্রতিবেশীর চোখে প্রতিবেশী : যেমন দেবা তেমনি দেবী।

উকিলের চোখে মক্কেল : জাওলা মাছ।

ডাক্তারের চোখে রুগি : বড় মিষ্টি উৎপাত। টাকার ভাইরাস।

ড্রাইভারের চোখে পথচারী : শুয়োরের বাচ্চা।

গৃহস্থের চোখে অসময়ের অতিথি : জ্বালাতন।

মায়ের চোখে বিবাহযোগ্য মেয়ে : পেটের শত্রু।

জামাইবাবুর চোখে শ্যালিকা : সোনামণি।

শ্যালিকার চোখে জামাইবাবু : সোনার মাছি।

মেয়ের বাপের চোখে ছেলের বাপ : চোখের চামড়া নেই।

অর্থমন্ত্রীর চোখে জনসাধারণ : সরষে। ট্যাকস দিয়ে যত রগড়াবে তত তেল বেরবে।

প্রেমিকের চোখে আর এক প্রেমিক : চরিত্রহীন লম্পট।

বাসের আসনে বসে-থাকা এক সহযাত্রীর চোখে আর এক সহযাত্রী : বেশি জায়গা নিচ্ছে।

বাসে দাঁড়িয়ে-থাকা যেকোনও মহিলার চোখে পাশের পুরুষ যাত্রী : শয়তানের বাচ্চা।

এক গায়কের চোখে আর এক গায়ক : বেসুরো, বেতাল।

এক লেখকের চোখে আর এক লেখক : কপালের জোরে করে খাচ্ছে।

পাঠকের চোখে লেখক : বাশঁবনে শেয়ালরাজা।

সহকর্মীর চোখে সহকর্মী : তেলবাজ।

বিক্রেতার চোখে ক্রেতা : যেন ক্ষুর আর দাড়ি। ক্ষুরের চোখে সাবান মাখানো এক গাল দাড়ি।

ভাড়াটের চোখে বাড়িওয়ালা : ভিখারি ভিক্ষা চাইতে এসেছে।

বাড়িওয়ালার চোখে ভাড়াটে : এ ডগ ইন দি ম্যানজার।

নেতার চোখে জনসাধারণ : ভোট। অসংখ্য ব্যালটপেপার।

জনসাধারণের চোখে নেতা : বক্তৃতা। লাউড স্পিকার।

লেখকের চোখে প্রকাশক : লেখক যদি নবীন হন, আর তার বইটি যদি প্রথম প্রকাশ হয়, তাহলে প্রকাশক হলেন ভগীরথ। সেই ক্যালেন্ডারের ছবির মতো। শাঁখ বাজাতে-বাজাতে মর্তে গঙ্গাবতরণ করাচ্ছেন। আর লেখক যদি ঝানু প্রবীণ হন তাহলে প্রকাশককে দেখে মনে-মনে বলতে থাকবেন, আসুন-আসুন। অনেকেই কামিয়ে গেছে; আপনি কীভাবে কামাবেন, দেখি।

প্রকাশকের চোখে লেখক : এখন হাসিমুখ দ্যাখো, পরে বিশ্বরূপ দেখাব।

জনসাধারণের চোখে পুলিশ : আর বলবেন না। ইউনিফর্ম আর হেলমেট।

পুলিশের চোখে জনসাধারণ : নান অফ আওয়ার কনসার্ন। লরিড্রাইভার ছাড়া এই দুনিয়া শূন্য।

প্রবীণ মানুষের চোখে অন্যের পুত্রবধূ : আহা! মা লক্ষ্মী।

প্রবীণ মানুষের চোখে নিজের পুত্রবধূ : লেডি বুলডগ।

নিজের চোখে নিজে : কেউ চিনল না, কেউ বুঝল না। এক পিস এর আর কোনও জুড়ি নেই।

এক এক চোখে, এক এক মানুষের এক এক রূপ। বন্ধুর চোখে বন্ধুপত্নী, অতুলনীয়া আর স্ত্রীর চোখে অন্যের স্বামী, দ্যাখো-দ্যাখো, দেখে শেখো। ওই রকমটি হতে তোমায় আবার জন্ম নিয়ে আসতে হবে। ছেলের ঘর থেকে একান্ত কথা বলে বেরিয়ে এলেন মা। ছেলের বউ ভাবছেন—সাতসকালেই আমার নামে কান ভারী করে এলেন। বুড়ির তো ওই এক কাজ। বড় কর্তার ঘরে ঢুকলেন সহকর্মী। অন্যান্যরা ভাবতে লাগলেন—গেল চুকলি কাটতে। বড়কর্তা কারোকে ডেকে পাঠালেন। সঙ্গে-সঙ্গে অন্যান্যরা মনে-মনে বললেন—যাও, একটু ঝাড় খেয়ে এসো। যুবক ভাই আর যুবতী বোন অচেনা পাড়ায় পাশাপাশি হাঁটছে। রক থেকে মন্তব্য ভেসে এল—খুব হচ্ছে। চৌরঙ্গির রাস্তা দিয়ে স্বামী-স্ত্রী গায়ে গা লাগিয়ে হাঁটছেন। মিনিবাস থেকে দেখলেন স্বামীর বন্ধু। পরের দিন অফিসে আর একজনকে বললেন খুব ঢলাঢলি চলেছে। খবরটা সাত কান হতে-হতে শেষে ভদ্রলোকের স্ত্রীর কানে এল এইভাবে—খুব উড়ছে। সেদিন দেখি নিউমার্কেটের সামনে একজনের কোমর জড়িয়ে ধরে, একেবারে পল্লবিনী লতেব হয়ে চলেছে। স্বামী-স্ত্রীর কথা বন্ধ হয়ে গেল। আরে, সেই মহিলাটি যে তুমি, এ কথা আর বলা গেল না।

ঠাকুর রামকৃষ্ণের সেই গল্প—যে যে, চোখে দেখে। মাঠের মাঝখানে এক ঢিবি। অন্ধকার রাত। প্রথম রাতে আসছে এক মাতাল। ঢিবিটা দেখে বললে, বা:, ভাই, এত টানলি যে নেশায় কাত, আর আমার শালা কিছুই হল না। মাঝরাতে এল চোর—বা:, সব শেষ করে এখন এখানে ঘাপটি মেরে বসে থাকা হয়েছে; আর আমার এখনও কিছুই হল না। শেষ রাতে এলেন সাধু—বা:, ধ্যান লেগে গেছে। এরই মধ্যে সমাধিস্থ। আর আমি এখনও বসতেই পারলুম না।

এই আপেক্ষিক দৃষ্টির সামনে ঘুরছে জগৎ। যে যে-ভাবে দ্যাখে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *