যন্ত্রপাতি
প্রদীপ আর পৃথার দারুণ মিল।আশ্চর্য সমঝোতা, সংসারের যাবতীয় কাজকর্ম ওরা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছে। বউ বলেই স্বামীকে চা খাইয়ে জাগাতে হবে প্রদীপ সেটা বিশ্বাস করে না। পৃথা সপ্তাহে চারদিন সকালে উঠে চা বানিয়ে প্রদীপের মাথার কাছে ছোট টেবিলটায় আলতো রেখে, প্রদীপের প্রায় টাক-পড়া মাথায় আঙুলের নরম চিরুনি বুলিয়ে বলে, ওগো, চা। আবার প্রদীপও সপ্তাহে তিন দিন সকালে উঠে চা বানিয়ে পৃথার মাথার কাছের ছোট টেবিলটায় প্লেট সমেত ঠক করে রাখে এবং ঠক্ শব্দেই পৃথা উঠে যায়। বউ বলেই স্বামীর গেঞ্জি-জাঙ্গিয়া-আণ্ডারওয়ার-রুমাল ইত্যাদি কাচাকুচি করে দিতে হবে এরকম সূত্রে প্রদীপের বিশ্বাস নেই। কই, প্রদীপ তো পৃথার সায়া-ব্লাউজ-ব্রা কেচে-টেচে দেয় না। এ জন্য ওরা একটা ওয়াশিং মেশিন কিনেছে। সেমি অটোমেটিক। ওর মধ্যে গেঞ্জি-ব্রা-জামা-শাড়ি একই সঙ্গে বেশ ঘোরে। মেশিনটা অবশ্য পৃথাই হ্যাণ্ডেল করে, অপারেট করে, যত্ন করে।
ওদের শিশু সন্তানটি ঘন ঘন হিসি করে বিছানায়। বারবার ন্যাপকিন পাল্টাতে হয়। ফলে রাতে ঘুম হয় না ভাল। প্রদীপ ও পৃথা রাত জাগা ভাগ করে নিয়েছিল, ভুল বলা হল, প্রদীপ ভাগ করে দিয়েছিল। তোমার চার, আমার তিন। মানে প্রদীপ সপ্তাহে তিন দিন রাত্রে বাচ্চার ভিজে কাঁথা পাল্টানোর দায়িত্ব নেবে, এ ব্যাপারে পৃথার কোনও হেডেক্ থাকবে না। আর বাকি চারদিন ওইসব পৃথাই করবে। এই তিন দিন চার দিন ভাগটা প্রদীপ ঠিক করার সময় শনিবার রাতের ঘুমটা নিজের ভাগেই রেখেছে এবং রবিবার সকালের চা-টা পৃথার। এইসব ভাগাভাগির জন্য একটা গর্ব প্রদীপের বুকের মধ্যে সেকালের পকেট ঘড়ির মতো টিকটিক করে বাজে। এ নিয়ে ঘরে কোনোও ঝামেলা হয়নি। মানে সাংসারিক ঝামেলা। সংসারে ওরা খুব ডিসিপ্লিন্ড্। যন্ত্রের মতো। খুচরো ঝামেলাটা হয়েছিল অফিসে।
প্রদীপের শিফ্ট ডিউটি। বাচ্চাটা হবার পর বস্কে বলে-করে নাইট ডিউটিটা অ্যাভয়েড করছে ও। তা একদিন এমারজেন্সি নাইট ডিউটি পড়ে গেল। রাত দুটো আড়াইটা নাগাদ ওদের কাজ শেষ হয়ে গেলে ওরা শুয়ে পড়ে। কিন্তু বাচ্চা হিসি করেছে কিনা দেখার অভ্যেস ইতিমধ্যেই রিফ্লেকস্ হয়ে গেছে। প্রদীপের ঠিক পাশেই শুয়েছিল ওর সিনিয়ার সহকর্মী দ্বিজেনদা। দ্বিজেনের সঙ্গে প্রদীপের আবার খারাখারি। দ্বিজেনদা সেই রাতে অন্তত তিনবার এই, এ সব কী হচ্ছে বলেছিলেন। অফিসে চাউর হয়ে গিয়েছিল প্রদীপ পারভারটেড হয়ে গেছে, প্রদীপকে ফিস ফিস করে অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছিল, কী, ঘটনাটা কি সত্যি? শেষ পর্যন্ত প্রদীপকে প্রকৃত ঘটনার বিবরণ হেডিং দিয়ে কুড়ি কপি স্টেটমেন্ট জেরক্স করতে হয়েছিল।
এই ঘটনার পর বেশ বিচলিত হয়ে পড়েছিল প্রদীপ। পর পর কদিন ভীষণ মাথা ধরেছিল। পৃথা কোলের উপর প্রদীপের মাথাটা নিয়ে টিপে দিতে দিতে বলেছিল, থাক বরং আমাদের সোনার কাঁথা-টাথা আমিই পালটাব। আবার হঠাৎ হঠাৎ কখন নাইট ডিউটি পড়ে যাবে তখন আবার বিচ্ছিরি ব্যাপার হবে। তুমি বরং ঘুমিও। প্রদীপ বলল, তা কি হয় নাকি। দু-জনের মেয়ে। যা কিছু কষ্ট-টষ্ট ফিফ্টি ফিফ্টি ভাগাভাগি করে নিতে হবে। এ কথা ভাবতে ভাবতে প্রদীপের মনে হল পৃথার কোলে মাথা রেখে ওকে দিয়ে এভাবে মাথা টেপানোটা কি ঠিক হচ্ছে? এবং মাথা যখন আছে যখন-তখন ধরতেই পারে। প্রদীপ পরদিনই একটা মাথা টেপার মেশিন কিনে নিয়ে এসেছিল। ভাইব্রেটার। প্লাগে লাগিয়ে দিলেই কাঁপতে থাকে, কাঁপতেই থাকে। একটু চায়ের জল চাপিয়ে আসি কিংবা গ্যাসটা অফ করে আসি বলে থেমে যায় না। কাঁপতেই থাকে। রেগুলেটার আছে। বাড়ানো যায়, কমানো যায়…।
পৃথা বলেছিল, কার কাছে ভাল লাগে তোমার? নিশ্চই পৃথার কোলে মাথা রেখে পৃথার কাছেই প্রদীপের বেশি ভাল লাগে। কিন্তু প্রদীপের মনে হল মেশিন কী ভাববে। প্রদীপ মেশিনটার দিকে দৃষ্টি বুলিয়ে মৃদু বলেছিল। পৃথা একবার তীব্র তাকাল মেশিনটার দিকে। জটিল ভুরু ভঙ্গি। এবার প্রদীপের দিকে তাকিয়ে বলল, আচ্ছা, ঠিক আছে, দেখা যাবে। এটাকে কি অভিমান বলা যায়? সেদিন কী হয়েছিল, ছুটির সকালে ধোসা করেছিল পৃথা। প্রদীপের একজন বন্ধুও এসে গিয়েছিল। মিক্সিটা নতুন কেনা হয়েছে বলা যায়। মিক্সিতে বাটা হয়েছিল ধোসার জিনিসপত্তর। প্রদীপের বন্ধু বলেছিল দারুণ হাত পৃথার। খুব ভাল হয়েছে। প্রদীপ বলেছিল, হাত নয়, হাত নয়, মেশিনে, মেশিনে, মানে মিক্সিতে বাটা হয়েছে। প্রদীপ তখন পৃথাকে বলেছিল, হাতে বাটলে এত মিহি হত না, বল।
পৃথা নতমুখে বলেছিল, হুঁ।
তখন কি পৃথার কণ্ঠস্বরে পরাজয় ছিল? হেরে যাওয়া ছিল? প্রদীপ বোঝেনি। প্রদীপ এর কিছুদিন পরে এক গ্রীষ্মের বিকেলে মিক্সিটার মধ্যে ঘুটিয়ে ওঠা ঘুরে যাওয়া দই ঘোলের ক্রমশ লস্যি হয়ে যাওয়া লাস্যময় হ্লাদিত ফেনিল তীব্র বুটবুটির দিকে তাকিয়ে বলেছিল, পারতে পারতে তুমি এরকম? পৃথা তখন কেন যে হঠাৎ সুইচ অফ করে দিয়ে মুখ ঢেকেছিল দু-হাতে, প্রদীপ বোঝেনি। মিক্সি মেশিনটা নিয়ে আরও কথা আছে। অনেক কথা আছে। অবশ্য মিক্সি মেশিনটারও কিছু নিজস্ব কথা আছে। সব মেশিনেরই কথা থাকে। যারা মেশিনের ভাষা বোঝে তারা ওইসব কথা মানুষের ভাষায় অনুবাদ করে নিতে পারে। পৃথাও ক্রমশ মেশিনের ভাষা বুঝতে পারছে, বুঝতে শিখছে। পৃথা তাই মেশিনের সঙ্গে কথা বলে। মিক্সি চালাতে চালাতে পৃথার মাঝে মাঝে কপালে সরু রেখার ভাজ পড়ে। ছদ্ম হাসির দাগ পড়ে। প্রদীপ লক্ষ করে, আজকাল ঠিক লক্ষ করে। কখনও দেখে দাঁতে চাপা ঠোট, কপালের ঘাম, ঘামের অভিমান।
এরকম ছদ্ম হাসির রেখা, কপাল ও কপালের ঢেউ, ঘাম বিন্দু তৈরি হয় পৃথার শরীরে যখন চৈতালী আসে।
চৈতালীর খবর হঠাৎই পেয়েছিল প্রদীপ অন্য এক বন্ধু মারফত। এই মাইরি, চৈতালী না, ডাক্তার হয়েছে, হোমিওপ্যাথ। দমদমে বসে, হনুমান মন্দিরের উলটো দিকে… প্রদীপ মজা করবে বলে গিয়েছিল। বাইরে কম্পাউণ্ডার। ওষুধ বানায়, নাম লেখে। প্রদীপ ওর নাম লেখাল রমণীরমণ ঘোড়েল। নামটা পড়েই চৈতালী হয়তো হেসে উঠবে। খুব হাসত চৈতালী। সবসময়। প্রদীপের টোকেন নম্বর দশ। বেঞ্চিতে বাচ্চা কোলে বউ-ঝি রাই বেশি। পাঁচ নম্বর চলছে। প্রদীপ চঞ্চল। পর্দার ফাঁক দিয়ে চৈতালীকে একবার দেখল প্রদীপ পনেরো বছর পর।
সাদা শাড়ি পরে এসেছিল সেদিন। টিকিট ও কেটে রেখেছিল। শেষ মুহূর্তে প্রদীপ বলেছিল, যাব না। থিয়েটারের বেল পড়ে গেল দমকল ঘণ্টার মতো। টিকিট দুটো ছিড়ে ফেলে দিয়েছিল চৈতালী। পনেরো বছর আগে। কখনও বলতে পারেনি সুযোগ হয়নি বলার, প্রদীপ কেন সেদিন থিয়েটারে যায়নি। পনেরো বছর হয়ে গেল। এর মধ্যে প্রদীপ মোটা হয়েছে, ভুড়ি হয়েছে, টাক হয়েছে, কাচাপাকা ফ্রেঞ্চকাট হয়েছে। প্রদীপ ভাবছিল ওকে হয়ত চিনতে পারবে না চৈতালী। যখন জিজ্ঞেস করবে, কী হয়েছে আপনার, প্রদীপ বলবে, গোপন রোগ। কিন্তু সব ভেস্তে গেল। ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই চৈতালী চিৎকার করল; ডাক্তার-টাক্তাররা এরকম চিৎকার করে না। বলল, আরিব্বাস। কীরে প্রদীপ, তুই?
তারপর কী খবর কেমন আছিস কবে বিয়ে করেছিস ইত্যাদি থোরবড়ি, এবং শেষকালে ঠিকানা দেওয়া নেওয়া। যাব তার বাড়ি যাব। তোর বউকে দেখে আসব।
প্রদীপ চৈতালীর হাত এবং মাথার দিকে লক্ষ করেছিল কয়েকবার। বিয়ে করিসনি?
না।
কেন?
এমনি।
তা হলে নতুন ঠিকানা কেন!
পালটেছি।
দু-তিনবার এসেছে চৈতালী। পৃথা ওর সঙ্গে কথা বলেছে, চা করেছে, আবার আসবেন বলেছে, হাসির রেখা এঁকেছে এবং আশ্চর্য ভুরু বক্ররেখা।
মিক্সি মেশিনের সঙ্গে পৃথা এরকমই কথা বলে, এরকমই ভুরু কুঞ্চিত হয় ওর। হাসির রেখাও এরকমই।
সে দিন এক অদ্ভুত ব্যাপার হল। পৃথা রান্নাঘর থেকে ডাকল, এই, এদিকে দেখে যাও। বেশ উচ্ছ্বাস, বেশ আহ্লাদ। প্রদীপ গেল রান্নাঘরে। পৃথা বলল, এই দেখো। ওর মুখে যেন প্রেশারকুকারের পুলক শব্দ। মিক্সির সুইচটা অন করল পৃথা টক্ করে একট শব্দমাত্র হল। তারপর শূন্যতা। স্টিলের চক্রকাঁটা স্থির। পৃথার মুখ স্থির এবং মুখের মধ্যে স্থির পাতলা হাসির প্রলেপ।
প্রদীপ মিক্সির শরীর থেকে পৃথার সরিয়ে দিয়ে নিজে সুইচ ঘোরালো। ওয়ান-টু-থ্রি। লো-মিডিয়াম হাই। মিক্সি স্থির। হাসপাতালের বিছানায় অসুস্থ বন্ধুর কপালে হাত রাখার মতো মিক্সির শরীরে হাত রেখে প্রদীপ পৃথার চোখে চোখ রাখল। আর তক্ষুনি পৃথার চোখের রঙ পালটে গেল। হাসির রেখা পালটে গেল। কপালের ভাঁজ পালটে গেল।
পৃথা বলল, ইশশ্…জিনিসটা।
প্রদীপের তক্ষুনি মনে হল- আটশো পঞ্চাশ টাকা। মনে হল গ্যারান্টি পিরিওড এক্সপায়ার্ড। মনে হল ভোগে।
প্রদীপ বলল, উল্টো-পাল্টা চালিয়েছিলে?
পৃথা বলল, উল্টো-পাল্টা চালাবার কী আছে?
প্রদীপ বলল, না না এসব খুব ডেলিকেট।
পৃথা বলল, আমি আরও ডেলিকেট জিনিস হ্যাণ্ডেল করেছি।
প্রদীপ বলল, তা হলে হঠাৎ থেমে গেল কেন?
পৃথা – এদের কিছু বিশ্বাস নেই।
এভাবেই প্রাণ আরোপ হয়ে যায় মেশিনে। প্রদীপ বলে, ওকে তাহলে গজেনের দোকানে নিয়ে যাই?
গজেনের ইলেকট্রিক জিনিসপত্রের সারাইয়ের দোকান আছে।
প্রদীপের পরিচিত। আবার ওর বন্ধু শিবব্রতর হোমিওপ্যাথি চেম্বার আছে। ও ডাক্তার। কাশতে থাকা সন্তানটিকে তা হলে শিবব্রতর কাছে নিয়ে যাই? বলার মধ্যে যে অন্তরঙ্গতা থাকে প্রদীপের, প্রায় ততটাই যেন ঘনত্ব প্রদীপের গলায়।
নেবার ইচ্ছে হলে নাও…।
প্রদীপ পৃথার এই অদ্ভুত ঔদাসীন্য লক্ষ করল। ও তো পৃথার কাছেই থাকে।ওকে পৃথাইতো স্নান করায়, তেল মাখায়, গ্রিজ মাখায়, পরিষ্কার করে, মোছে। ওর কিছু হলে পৃথারই তো মন খারাপ হবার কথা। তা ছাড়া ও তো পৃথার কাজগুলোই করে দেয়। সংসারের কাজকর্মের যে সব ভাগাভাগি হয়েছে, বরং বলা ভাল যে ভাগাভাগি প্রদীপ করে দিয়েছে তার মধ্যে রান্না করা, মশলা বাটা পৃথার ভাগেই ছিল, ন্যাচারালি। সুতরাং সারাই করতে নেবার প্রস্তাবে পৃথার কি উচ্ছসিত হয়ে উঠবার কথা ছিল না? ওর কি বলা উচিত ছিল না এক্ষুনি যাও! এবং তখন কি পৃথার ঘাড়ের কাছের চুলপুঞ্জ খলবল করে ওঠার কথা ছিল না? তা হলে পৃথার মধ্যে এতটাই নিরুদ্দেশ কেন! মেশিনটার সঙ্গে এতদিন থেকেও কি বন্ধুত্ব সম্পর্ক তৈরি হয়নি?
অথচ অন্য মেশিনগুলোর সঙ্গে পৃথার তো ভালই বন্ধুত্ব। গ্যাসের সঙ্গে, ওভেনের সঙ্গে, ফ্যানের সঙ্গে। ফ্রিজের সঙ্গে পৃথার বন্ধুত্বের তো জবাব নেই। প্রতি রবিবার ওর সঙ্গে অনেকটা সময় কাটায় পৃথা। সখীভাবে থাকে বেশ। ওয়াশিং মেশিনের সঙ্গেও ভাল সম্পর্ক পৃথার। যেন কিছুটা বয়ফ্রেণ্ড। টিন এজার। সিনেমার টিকিট কেটে দেয়, ট্যাক্সি ডেকে দেয়। টিভি, ভি সি পি-ও সম্ভবত বয়ফ্রেণ্ড। একটু বয়স্ক। ফ্রিজ ট্রিজ সবই বান্ধব! স্টিরিও সিস্টেমটাও বোধ হয় তাই। ওলো সখীর সঙ্গে কিছুটা কুচুটেপনা। ঈর্ষা। কিন্তু সবচেয়ে জটিল সম্পর্ক মিক্সি মেশিনটার সঙ্গে। পৃথা টিভি কিংবা ভিসিপির নির্জন সঙ্গ চায় মনে মনে প্রদীপ কি বোঝে না : চৈতালী যেমন বলে থাকে আসিস রে প্রদীপ তোর বউকে নিয়ে…। ‘বউ’ শব্দটা যে এখানে আবরণ মাত্র প্রদীপ কি সেটা বোঝে না? পৃথার সঙ্গে যন্ত্রপাতিগুলোর সব অদ্ভুত অদ্ভুত সম্পর্ক। বাৎসল্য ভাব আছে অদ্ভুত একটা যন্ত্রের সঙ্গে। কলিং বেল। এই কলিং বেলটা কিন্তু সাধারণ কলিং বেল নয়। সেই যে ওদের বাচ্চাটার কথা বলা হয়েছিল, ওর কাঁথা ভেজানো এবং আনুষঙ্গিক সমস্যার কথা। এর ক-দিন পর একটা অদ্ভুত যন্ত্র কিনে এনেছিল প্রদীপ। প্রদীপের অফিসের এক মহিলা সহকর্মী ওই যন্ত্রটির হদিশ দিয়েছিল। একটি প্লাস্টিকের চাদরের গায়ে সূক্ষ্ম তারের কারুজাল লাগানো। এক পাশে ব্যাটারি। বাচ্চার কাঁথার তলায় প্লাস্টিকের মায়াজাল ঢুকিয়ে দিতে হয়। কাঁথা ভিজে গেলেই বেল বাজবে। প্রদীপ বেল সিস্টেম কেনেনি। বেল বাজলে দু-জনেরই ঘুম ভেঙে যাবে। ওদের তো দিন ভাগ আছে, সপ্তাহে চারদিন-তিনদিন। তাই স্পিকার সিসটেম কিনেছিল। স্পিকারের সঙ্গে একটা ছোট্ট ছিপি হেডফোন কানে গোঁজা থাকে। কাঁথা ভিজে গেলেই পিঁপিঁ শব্দ কানের ভিতর দিয়ে মরমে পশে। পৃথার যে একে খুব ভাল লাগ প্রদীপ বুঝতে পারে। পৃথা ওকে গুটিয়ে রাখে। গায়ে হাত বুলোয়, আদর করে। প্রদীপেরও ভাল লাগে ওকে। প্রদীপরা যখন বাচ্চাকে বেড়াতে নিয়ে যায়, যন্ত্রটাকেও নিয়ে যায়। প্যারাম্বুলেটারে বাচ্চাটার তলায় যন্ত্রটা থাকে। কানে ছিপি থাকে না তখন। হিসি হলেই স্পিকারে পিঁপিঁ শব্দ হয়।
পৃথার একটা হেয়ার ড্রায়ার আছে। ওর সঙ্গে পৃথার এরকম কথাবার্তা হয়।
এই হচ্ছেটা কী, পাজি কোথাকার।
সই, কী আবার হচ্ছে।
কোনও কম্মের না। একদম জানলা দিয়ে ফেলে দেবো।
ফেলুন, দেখিতো…
যেন পার্বতী। কাজের বাচ্চা মেয়েটা। বাচ্চার দুধ গরম করতে বললে একা একা লুডো খেলে। তখন –
এই হচ্ছে কী, পাজি কোথাকার।
কী আবার হচ্ছে –
একদম অবাধ্য তুই। একদম তাড়িয়ে দেবো বলেছিলাম –
দিন না দেখি…
হেয়ার ড্রায়ারটা এরকমই করে। সুইচ অন করলে কখনও চলে, কখনও চলে না। কখনও গরম হাওয়া বয়, কখনও ঠাণ্ডা। অথচ ওকে ফেলে দিতে পারে না। ফ্রিজের সঙ্গে একেবারে দাস্য ভাব।
সখীভাবের সঙ্গে দাস্য ভাব মিশে গেলে কী একটা হয়। বৈষ্ণব কাব্যে আছে। এর সঙ্গে একেবারে বিগলিত থাকে পৃথা। কখনও তর্ক করে না। কটু কথা বলে না। ওর দিকে অপলক চেয়ে থাকে। চেয়ে চেয়ে হাসে। করস্পর্শ দেয়। আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দেয়। যত্ন করে ডি-ফ্রস্ট করে দেয়। যত রকমের সেবা আছে পৃথা করে যাবে।
কিন্তু স্টিরিওটার সঙ্গে একটু কেমন যেন। যদিও ওটার ঢাকনি বানিয়ে দিয়েছে পৃথা, ঢাকনিতে ফুল, ধুলোও ঝাড়ে, মাঝে মাঝে ওর দিকে চেয়েও থাকে, কিন্তু ওর প্রশংসা খুব একটা করে না। প্রদীপ কিন্তু স্টিরিওটার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। হয়তো প্রদীপ বলল, মালটা দারুণ।
কী এমন দারুণ।
বেশ স্মার্ট, স্লিম দেখতে।
দেখতে দিয়ে কী হবে –
কালারটাও ভাল।
তোমাদের খালি ফিগার, কালার…
কেন পারফরমেন্স কি খারাপ?
এমন কিছু নয়।
কেন এমন কিছু নয়? ওর সাউণ্ড বেশ ভাল…
এমন কিছু ভাল নয়…
কেন এমন কিছু ভাল নয়?
আমি এক্সপ্লেন করতে পারব না। তবে এমন কিছু ভাল নয়, ব্যস।
সেই ঈর্ষা ভাব। পৃথাও গান করে একটু আধটু। প্রদীপ ওর প্রথম গান শুনেছিল প্রাক্-বিবাহপ্রেম চলাকালীন। আউটরাম ঘাটের সিমেন্টের চেয়ারে মস্তান আসার আগের মুহূর্তে ‘সখি ভাবনা কাহারে বলে’র ভালবাসার ভা’তে এসে থেমে যেতে হয়েছিল। এরপর হনিমুনে অনেক গানের হাফ শুনেছে পুরীতে। হাফ এর পর পৃথা হয় ভুলে গেছি বলে থেমে গেছে, আর যে গান পৃথা পুরো করতে পারত, প্রদীপ এমন কাণ্ড-কারখানা করছিল যে, গান থামিয়ে দিতে হয়েছিল। ও, হ্যাঁ। বিয়ের পর বাথরুম বা রান্নাঘর থেকে ভেসে আসা হামিং শুনেছে প্রদীপ। লাস্ট শুনেছে সেই মাথা ধরার সময়। যখন পৃথা মাথা টিপে দিচ্ছিল।
তারপর তো বলাই হয়ে গেছে যে প্রদীপ একটা মাথা টেপার যন্ত্র কিনে নিয়ে এসেছিল। টেপার যন্ত্রটা টিপে ও পৃথার প্রিয় গান কুমকুম চট্টোপাধ্যায়ের গলায় ‘সখি ভাবনা কাহারে বলে’র ক্যাসেটটা চালিয়ে দিয়েছিল লো ভল্যুমে। প্রদীপের মানে ফানের দরকার নেই, গান হলেই হল: পৃথা এসে একবার ব্যাপারটা দেখে গিয়েছিল। হেসেছিল। ঘাড়ের ঝটকায় চুল নড়ে উঠেছিল। কোনোও কথা বলেনি। একটু পরেই লোডশেডিং হলে পৃথা বলেছিল, বেশ হয়েছে। সঙ্গে একটি হাততালি ছিল। মিক্সিটা খারাপ হয়ে যাবার পর প্রদীপ বলেছিল, ওকে তা হলে গজেনের কাছে নিয়ে যাই।
পৃথা বলেছিল, তোমার ইচ্ছে হলে নাও…।
প্রদীপ মিক্সিটা থেকে হাত সরিয়ে নিয়েছিল। সামান্য ধাক্কা দিয়ে বলেছিল, থাক। যন্ত্রটা নড়ে উঠেছিল। আর তখন কী আশ্চর্য পৃথা হামিং শুরু করেছিল শ্যামল মিত্রের ওই গানটা… ‘যাক্, যা গেছে তা যাক’।
সেই থেকে মিক্সির দেহখণ্ডগুলি রান্নাঘরের উঁচু তাকটায় পড়ে আছে। মেশিনটা, পাশে দুটো জার। ধুলো পড়ছে। আজ রবিবার। রবিবার পৃথা ও প্রদীপ খুব ব্যস্ত। ওরা খুব ব্যস্ত বলেই ওদের অনেক মেশিন। আর মেশিনের জন্যও ওরা ব্যস্ত। সকালবেলা উঠে চা খেয়েই কাজে লেগে পড়তে হয়। আগেই তো বলেছি ওদের দারুণ মিল। আশ্চর্য সমঝোতা। তাই ওরা সব যন্ত্রপাতিগুলি ভাগাভাগি করে যত্ন করে। অডিও সিস্টেমটাকে প্রদীপই দেখে। হেড পরিষ্কার করে। বই আলমারির ব্যাপারটাও প্রদীপের। বইগুলোকে একবার চোখে দেখা, এই একটু আধটু নাড়িয়ে চাড়িয়ে দেয়, দু-চারবার ফুঁ দেয়া, এইসব। ওয়াশিং মেশিনটা পৃথা দেখে। তেল দেয়। কোনাটোনায় লেগে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে দেয়। ফ্রিজটাও পৃথার। ওর জন্য অনেকটা সময় রেখে দেয়। সাপ্তাহিক আলাপ।
টিভি, ভিসিপিও পৃথার। সেলাই মেশিন আছে একটা, ব্যবহার হয় না, তবু আছে। মাঝে মাঝে তেল-টেল দিতে হয়, চাকা-টাকা একটু ঘুরিয়ে দিতে হয়। ওরাও তো ব্যবহার চায়। পৃথাই করে এটা। ওদের বাচ্চাটার কানের ফুটোয় জমে থাকা নরম তুলোয় পরিষ্কার করতে হয়, পৃথাই করে। বাচ্চাটার কানের লতির পিছনে কিংবা ঊরুসন্ধিতে লেগে থাকা হালকা ময়লা পরিষ্কার করতে হয়, পৃথাই করে। এছাড়া গ্যাসের বার্নারের ছিদ্রগুলিকে পরিষ্কার করা, ব্যাটারি চার্জারে ব্যাটারি ঢুকিয়ে চার্জ করে রাখা, প্রদীপের পিঠে পাউডার মাখিয়ে দেয়া, একটু আধটু খুনসুটি, চুম্বন-টুম্বন বা আরও…। টোস্টারের কয়েলের ওপর কার্বনের গুঁড়ো ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করা, অ্যাস্ট্রে পরিষ্কার করা, এরকম কত শত কাজ। এগুলো পৃথার।
শহরে শহরে রবিবারের সকালের একটি পৃথক শব্দ লহরী থাকে। টিভি সিরিয়ালের শব্দ, প্রেশার কুকারের ফস্ শব্দ, মিক্সির ভোঁ শব্দ… পাশের ফ্লাটে মিক্সির একটানা ভোঁ শব্দ শুনতে লাগল প্রদীপ।
প্রদীপ বলল, বাগচীদের ধোসা টোসা হচ্ছে।
পৃথা বলল, ইচ্ছে করছে? ভেজাব?
প্রদীপ বলল, মিক্সি?
পৃথা বলল, হাত নেই!
মাঝে মাঝে হাতের কথা ভুলেই যায় প্রদীপ। প্রদীপরা। লিফটা বন্ধ হলে পায়ের কথা মনে পড়ে। চোদ্দর সঙ্গে বারো যোগ করার সময় ড্রয়ারের ক্যালকুলেটার হাতড়ায় প্রদীপ, প্রদীপরা। মাঝে মাঝে যেন কীরকম ভুল হয়ে যায়, ভুলে যায় হাত থাকার কথা, পা থাকার কথা, মাথা থাকার কথা।
তবু পাশের বাড়ির একটানা যান্ত্রিক শব্দ প্রদীপকে ক্রমাগত আহত করতে থাকে। আওয়াজটা প্রদীপের বুকের গভীরে ধাক্কা মারতে থাকে। প্রদীপ রান্নাঘরে ঢুকে যায়। হাত বাড়িয়ে মিক্সির হলুদ শরীরটা আঁকড়ে ধরে। শরীরটাকে পলিথিন প্যাকেটে জড়িয়ে নেয়, এবং বলে আমি গজেনের কাছে চললাম।
গজেনের দোকানটা ভারি অদ্ভুত। ও সব কিছু সারাই করে। রেডিও, টেপ রেকর্ড, হিটার, টোস্টার, মিক্সি সব। সোয়া ন-টার খবর হচ্ছে। বিহারে হরিজন খুন।
দেখুন দেখুন কেমন গাঁক গাঁক করে বাজছে। তিনটি গ্রাম পুড়ে ছাই। গাঁক গাঁক করে বাজছে। গাঁক গাঁক করে বাজছে আবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। খদ্দের বলল, ভেরি গুড। ভালো সাউণ্ড হচ্ছে। গজেন ধরে আছে রেডিওটা। কাঁটা ঘোরায়। জিস্কি বিবি মোটি।
প্রদীপ মিক্সিটাকে ঠক করে টেবিলের উপর রাখে। পলিথিনের চাদর সরিয়ে দেয়। চৈতালীর কথা মনে হয়।কেন যে মনে হয়। চৈতালী খুব হাসে, পৃথা হাসে না। চৈতালী খুব কথা বলে, পৃথা গম্ভীর। পৃথার যা নেই, তা চৈতালীর আছে। প্রদীপ বলে, একে ঠিক করে দিন। গজেন একবার দেখল ওটাকে। কীরকম তাচ্ছিল্য। সে রকম বড় কোম্পানির ছাপ নেই এর শরীরে। বলল, রেখে যান। দেখি কী হয়েছে। এসব মালের কোনও গ্যারান্টি নেই।
মেশিনরাও কি মানুষদের মাল বলে?
পৃথা জিজ্ঞাসা করল, কী খবর?
প্রদীপ বলল, দিন সাতেক পর যেতে বলেছে।
ঠিক হবে?
হতে পারে।
যদি না হয়?
তবে আবার কো-অপারেটিভ থেকে টাকা তুলতে হবে।
টাকা তুলে?
আর একটা নতুন কিনতে হবে।
নতুন কেনার কথা শুনে খুব কিছু খুশি হল না পৃথা। অথচ নতুন মেশিন এলে পৃথা তো খুশিই হয়। এই তো, গত রবিবারই তো যন্ত্র যত্ন করার সময় সমবেত যন্ত্র সম্ভারের মধ্যে উৎফুল্ল বসে ছিল পৃথা। সোফার চারিপাশে তা তা থই থই। পৃথা বলেছিল এরা সব আমার। প্রদীপ বলেছিল, আমাদের। পৃথা বলেছিল, সরি, সরি, আমাদের। পৃথা তখন বই আলমারির দ্বিতীয় তাকের দিকে তাকিয়ে ছিল। চাইলড্ কেয়ার। মেনটেনেন্স্ অফ ইলেকট্রিকাল গ্যাজেটস…। পৃথা বলেছিল, এদের না, এ রকম বিচ্ছিরি বিচ্ছিরি নামে ডাকতে ইচ্ছে করে না। একটা করে ডাকনাম দিলে কেমন হয়!
প্রদীপ বলেছিল, যেমন!
ওয়াশিং মেশিনটার নাম চাংকি।
প্রেশার কুকারটা?
ফচকে।
ওভেন?
অগ্নিভ।
বড্ড ভারি।
তাহলে দাহ।
যাঃ এ নামে ডাকা যায় নাকি?
তা হলে তুমি বল।
হিটু।
যাঃ, টিভিটা?
ফিলিপস্।
তা তো জানি।
একটু ছোট করে ফিলিপ?
বাঃ।
ভি সি পি?
অঞ্জন।
কেন?
এমনি।
স্টিরিও?
সোহাগী।
হেয়ার ড্রায়ার?
পার্বতী, না পারুল… পরু, পারু।
আমাদের ভ্যাকুয়াম ক্লিনার নেই।
ইশ্ নেই।
প্রদীপ তখন বলল, মিক্সি? ওটার নাম?
ওটাতো হ্যানডিক্যাপড। বিকলাঙ্গ।
তবুতো আছে, আমাদেরই আছে।
ওটার নাম তুমিই দিও।
প্রদীপ বলল, চৈ চৈ চৈ…
কবে কোন্ পাড়াগাঁয়ে ধূসর সন্ধ্যায় প্রদীপ দেখেছিল জলের ধারে দাঁড়িয়ে এক গ্রাম্য কিশোরী জলভরা হাঁসদের ঘরে ডাকছে, আয় আয় আয় চৈ চৈ…।
প্রদীপ ডাকে। মনে মনে ডাকে।
জন্মদিন। বন্ধুবান্ধবরা খাবে। পৃথা চিংড়ির মালাইকারি খুব ভাল রাঁধে। নারকোল চাই। তারপর নারকোল থেকে নারকোল দুধ। এ জন্য মিক্সি চাই।
গজেন বড্ড ঘোরাচ্ছে। কেবলই হয়নি হয়নি। প্রদীপ বলেছিল, অন্তত বলে দিন ওটা রিপেয়ার হবে কিনা। গজেন বলেছিল, আমি কি যন্তর? প্রদীপ বলেছিল, আমার মেয়ের জন্মদিন। আমায় ডিসিশন নিতে হবে। ঠিক না হলে নতুন কিনতে হবে। এই আমি দাঁড়ালুম। আপনি ওটা খুলুন।
অগত্যা খোলে। গজেন যন্তরের মতোই যন্তুরটা খোলে।
বলে কয়েলটা পুড়ে গেস্ল। কয়েলটা ঠিক করে দিলুম। একবারে দু-মিনিটের বেশি চালাবেন না। চালিয়ে দেখিয়ে দিল গজেন, ঘুরছে।
প্রদীপ বলল, ঘুরছে ঠিকই, কিন্তু…
গজেন বলল, দেখে নিতে চান তো? ঠিক আছে। গজেন ওর স্টিলের টিফিন বাক্সো খুলে একটা রুটি ছিড়ে দিল মিক্সির জার-এ। একটা কলা, একটু তরকারি। চালিয়ে দিল। এবং কয়েক সেকেণ্ডেই পুরো জিনিসটা মণ্ড হয়ে গেল।
ঠিক আছে?
মাথা নাড়ল প্রদীপ।
আপনার কাছে কিছু আছে? দেবেন?
প্রদীপ বলল, উঁহু।
প্রদীপের হঠাৎ মনে হল ওর কাছে এখন কিছুই নেই।ভালবাসা, শোক, অভিমান কিছুই আর তেমনভাবে গোটা গোটা নেই। মণ্ড হয়ে গেছে।
মেশিনটা নিয়ে বাড়ি ফিরল প্রদীপ।
পৃথা! পৃথা! ঠিক হয়ে গেছে।
পৃথা বলল, যাক্!
তারপর ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস।
ফ্রিজ থেকে বার করা হল চিংড়ি।
কোরানো হল নারকোল।
নারকোল ঢোকানো হল মিক্সিতে। ঘুরতে লাগল চাকা। চলতে লাগল শব্দ।
প্রদীপ বলল, চলছে চলছে।
কয়েক মুহূর্ত পরই একটা নীল স্ফুলিঙ্গ।
সাদা ধোঁয়া। থেমে গেল।
পৃথা বলল, থেমে গেছে।
প্রদীপ বলল, গজেনটা একটা মাল। ও একটা যন্তর। পুরো টুপি দিল। এখন কী হবে?
পৃথা হাসছে। নারকোল দুধ কীভাবে হবে!
কেন হাত?
দুটো হাত ছড়িয়ে দিল পৃথা।
আলিঙ্গন?
প্রদীপ যন্ত্রের মতো এগিয়ে গেল পৃথার দিকে।