কোন্ হাটে তুই বিকোতে চাস ওরে আমার গান , কোন্খানে তোর স্থান ? পন্ডিতেরা থাকেন যেথায় বিদ্যেরত্ন - পাড়ায়— নস্য উড়ে আকাশ জুড়ে কাহার সাধ্য দাঁড়ায় , চলছে সেথায় সূক্ষ্ম তর্ক সদাই দিবারাত্র ‘ পাত্রাধার কি তৈল কিম্বা তৈলাধার কি পাত্র' । পুঁথিপত্র মেলাই আছে মোহধ্বান্তনাশন , তারি মধ্যে একটি প্রান্তে পেতে চাস কি আসন ? গান তা শুনি গুঞ্জরিয়া গুঞ্জরিয়া কহে— নহে নহে নহে । কোন্ হাটে তুই বিকোতে চাস ওরে আমার গান , কোন্ দিকে তোর টান ? পাষাণ - গাঁথা প্রাসাদ -' পরে আছেন ভাগ্যবন্ত , মেহাগিনির মঞ্চ জুড়ি পঞ্চ হাজার গ্রন্থ— সোনার জলে দাগ পড়ে না , খোলে না কেউ পাতা , অ - স্বাদিতমধু যেমন যূথী অনাঘ্রাতা । ভৃত্য নিত্য ধুলা ঝাড়ে যত্ন পুরা মাত্রা , ওরে আমার ছন্দোময়ী , সেথায় করবি যাত্রা ? গান তা শুনি কর্ণমূলে মর্মরিয়া কহে— নহে নহে নহে । কোন্ হাটে তুই বিকোতে চাস ওরে আমার গান , কোথায় পাবি মান ? নবীন ছাত্র ঝুঁকে আছে এক্জামিনের পড়ায় , মনটা কিন্তু কোথা থেকে কোন্ দিকে যে গড়ায় , অপাঠ্য সব পাঠ্য কেতাব সামনে আছে খোলা , কর্তৃজনের ভয়ে কাব্য কুলুঙ্গিতে তোলা— সেইখানেতে ছেঁড়াছড়া এলোমোলোর মেলা , তারি মধ্যে ওরে চপল , করবি কি তুই খেলা ? গান তা শুনে মৌনমুখে রহে দ্বিধার ভরে— যাব - যাব করে । কোন্ হাটে তুই বিকোতে চাস ওরে আমার গান , কোথায় পাবি ত্রাণ ? ভান্ডারেতে লক্ষ্মী বধূ যেথায় আছে কাজে , ঘরে ধায় সে ছুটি পায় সে যখন মাঝে মাঝে , বালিশ - তলে বইটি চাপা টানিয়া লয় তারে , পাতাগুলিন ছেঁড়াখোঁড়া শিশুর অত্যাচারে— কাজল - আঁকা সিঁদুরমাখা চুলের - গন্ধে - ভরা শয্যাপ্রান্তে ছিন্ন বেশে চাস কি যেতে ত্বরা ? বুকের ‘পরে নিশ্বসিয়া স্তব্ধ রহে গান— লোভে কম্পমান । কোন্ হাটে তুই বিকোতে চাস ওরে আমার গান , কোথায় পাবি প্রাণ ? যেথায় সুখে তরুণ যুগল পাগল হয়ে বেড়ায় , আড়াল বুঝে আঁধার খুঁজে সবার আঁখি এড়ায় , পাখি তোদের শোনায় গীতি , নদী শোনায় গাথা , কত রকম ছন্দ শোনায় পুষ্প লতা পাতা— সেইখানেতে সরল হাসি সজল চোখের কাছে বিশ্ববাঁশির ধ্বনির মাঝে যেতে কি সাধ আছে ? হঠাৎ উঠে উচ্ছ্বসিয়া কহে আমার গান— সেইখানে মোর স্থান ।